বসন্তের_ফুল🌺 #তারিন_জান্নাত #পার্ট২৩

0
467

🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট২৩

বিছানার মাঝামাঝি অবস্থায় নতজানু হয়ে বসে আছেন আয়শা আহমেদ।চোখের কর্ণিশ ভেদ করে পড়ছে চোখের নোনাজল। জীবণের এমন এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি এসে পড়েছেন চাইলেও অতীতে ফিরে যেতে পারছেন না,আর না পারছেন ভবিষ্যতে আগাতে।

শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা।একটু আগেই তার স্বামী রুপে এক পশু ভয়ংকরভাবে মেরেছেন।কিসের রাগ কিসে এসে ঝেড়েছেন তিনিই জানেন।

বিয়ের পর থেকে শুধু অমানবিক অত্যাচারওই করে গেছেন।অথচ এক সময় ভালোবাসা নামক এক বন্ধনে নিবন্ধন হয়ে লোকটির হাত ধরে এসেছিলো।

করিমা বেগম আয়শা আহমেদের রুমে প্রবেশ করেন।কিছু খাবার এবং ঔষধ নিয়ে। সেগুলো পাশের টেবিলে রেখে দেয়।

” ওই কু** আবারও মারলো তাই না??
” ছলছল চোখে কারিমার দিকে তাঁকিয়ে আবারও নত হয়ে যান আয়শা। কিসের উত্তর দিবে সে।নিজ হাতেই তো নিজের সর্বনাস ডেকে এনেছেন।
” কিসের এতো আক্ষেপ বুঝিনা আমি।(কারিমা)
“প্রতিশোধ নিচ্ছে।(নিভু স্বরে বললেন)

” কিসের?? (কারিমা)
কারিমার কথার উত্তর দেয়নি আয়শা।খাবারের থালা হাতে নিয়ে খেতে লাগলেন।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কারিমা বেগম আয়শার দিকে তাঁকিয়ে মনেমনে ভাবতে লাগলেন।এতো বছরেও সৌন্দর্যের একটু অংশ ও কমেনি।সেই আগের মতোই রুপটা রয়েছে। কেন যে এতো অত্যাচার করে আল্লাহয় জানে।

_______

বেল চাপার পর মধ্যবয়স্ক একজন লোক দরজাটা খুললেন। লোকটিকে দেখার সাথে সাথেই প্রেমা বিষম খায়। অভ্র তার কারনটা আঁচ করতে পারে।আঁড়চোখে প্রেমাকে দেখে নেয় একবার। প্রেমার হাত না ছেড়েই লোকটিকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।

“আরে আমার নাতিটা এতোদিন পর কেমনে মনে পড়লো আমাদের কথা?
” তোমাকে না,আমার নানিকে মিস করছিলাম তাই আসছি।(অভ্র)
প্রেমা মাথাট ঝাঁকা মেরে উঠে,অভ্রের নানা তার কলেজের প্রিন্সিপ্যাল স্যারটা।কেমনে সম্ভব?

শাহিদ সাহেবের দৃষ্টি প্রেমার দিকে পরতেই, মুচকি হেসে বলেন,
“আরে প্রেমা কেমন আছো?? (অভ্রের নানা)
” আসসালামু আলাইকুম স্যার।(আমতা-আমতা করে)
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।এসো তোমরা।

প্রেমা হাত ছাড়াতে চাইলে অভ্র রক্তিম চোখে তাঁকায়।সাথে সাথে প্রেমা চুপসে যায়। অভ্র প্রেমাকে সহ টেনে তার নানির রুমে চলে যায়। উনি বিছানায় বসা অবস্থায় ছিলেন। ধপ করে উনার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে অভ্র। আর প্রেমাকে বিছানায় বসিয়ে দেয়।

এমন একটা পরিস্থিতিতে প্রেমা আগে পড়েনি।বিষণ অস্থির লাগছে তার।

” আরে প্রেমা যে? কেমন আছো??(দিলশান বেগম)
উনার কথায় প্রেমা অবাক দৃষ্টিতে তাঁকায়।নাম জানলো কিভাবে?? অভ্র প্রেমার দিকে চোখ দিতেই দেখে কপালে ভাঁজ।
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,আপনি?(প্রেমা)

” তা এতোদিন পর মনে পড়লো আমার কথা তাই না অভ্র??(অভিমানী সূরে)
“আমি আগেই আসতে চেয়েছিলাম,বিয়ের জন্য আসতে পারিনি,তাই আজ বিয়ে শেষ হতেই বাবাকে বলে চলে এসেছি,সাথে প্রেমাকেও এনেছি।(অভ্র)
” ভালো করেছিস।
“অভ্র তোমার হাতে ব্যান্ডেজ করতে হবে,নাহলে ইনফেকশন হবে। আর দয়া করে আমার হাতটা ছাড়ো।(প্রেমা)
” হাত কেটেছে মানে?কোথায় কেটেছে? দেখি অভ্র হাত দেখায়। (অভ্রের নানি)
অভ্র উঠে বসে,প্রেমার হাতটা আলগা করে দেয়।নিজের কাটা হাতটা তার নানির দিকে এগিয়ে দেয়।হাত দেখতেই উনি আতকে উঠেন।
“আল্লাহ! এতো বেশি কাটা গেছে,তোর তো জ্বর চলে আসবে। স্বপ্না, এ স্বপ্না ফাস্টেড বক্সটা আন তাড়াতাড়ি (উত্তেজিত হয়ে)

তখনি একটি মেয়ে দ্রুত পায়ে ফাস্টেড বক্স নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। এবং অভ্রের নানির হাতে এগিয়ে দেয়।
অভ্র উঠে বসে বাক্সটা হাতে নিয়ে তার নানিকে চোখের পলক নাড়িয়ে ইশারা করে।কিছুক্ষন কপাল কুঁচকে তাঁকানোর পর উনি বুঝে যান আসল ব্যাপার।

” প্রেমা তুমি অভ্রের হাতটা ব্যান্ডেজ করে দাও,আমি ওর জন্য গরম দুধ নিয়ে আসছি। (নানি)

উনি কথাটা বলেই মুচকি হেসে স্বপ্নাকে নিয়ে চলে যান।
অভ্র কাটা হাতটা প্রেমার দিকে এগিয়ে দেয়।

“ব্যান্ডেজ করে দাও,(অভ্র)
প্রেমা আলতো করে অভ্রের হাত ধরে রক্ত মুছে ব্যান্ডেজ করে দেয়। পুরোটা সময় অভ্র প্রেমাকেই দেখেছিলো।
কেটেছে তবে কম নয় একটু বেশিই কেটেছে। রক্ত ক্ষরনও হয়েছে বেশি। দুজনের সাদা কাপড়ে লাল রক্তের চাপ।

” আচ্ছা ওই ছেলে দু’টো কে চিনো তুমি?(প্রেমা)
“নাহ, চিনি না। (অভ্র)
” চিনো না অথচ তোমাকে মারতে এসেছে,এই তুমি কারো সাথে মারপিট করো নি তো আগে??(সন্দেহের দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে)
প্রেমার কথায় অভ্র চোখ ছোটছোট করো তাঁকায়।
“না,তেমন কিছু না,বাদ দাও।(অভ্র)

তখনি অভ্রের নানি দুধ নিয়ে প্রবেশ করেন।অভ্রের হাতে দুধের গ্লাসটা দিয়ে,প্রেমার দিকে তাঁকায়।

” প্রেমা তুমি স্বপ্নার সাথে গিয়ে কাপড় পাল্টে ফেলো।ওর জামা তোমার হবে।(নানি)

প্রেমা একবার স্বপ্নার দিকে তাঁকায়।এরপর নিজের দিকে তাঁকায়।আসলেই কাপড় পাল্টাতে হবে ওর।তাই মৃদু হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।

“আপু আসেন,(স্বপ্না)।
দুজনে রুম ত্যাগ করতেই অভ্র তার হাতের দিকে তাঁকায়। বিষণ ভালো লাগছে তার।প্রেমা যদি এভাবে ওকে ব্যান্ডেজ করে দেয়।তাহলে সে রোজ এভাবে হাত কাটতে পারে।কিন্তু সমস্যা একটাই।অভ্রের কেটে গেলে, জ্বর চলে আসে৷ আর জ্বর আসলেই অভ্র পাগল হয়ে যায়। উল্টাপাল্টা বকে।তবে তা অতিরিক্ত জ্বর আসলে।

” রাতে কি করবি,যদি জ্বর চলে আসে।(নানি)
“কন্ট্রোল করে নিবো,আমি সেই ছোটবেলার অভ্র নয়, যে একটু কেটে গেলেই জ্বর চলে আসবে।আর পাগলের মতো করবে।আমি এখন বড়।(অভ্র)
” হ্যাঁ দেখছিই তো তুই কতো বড় হয়ে গিয়েছিস।প্রমাণ তো চোখের সামনেই।(মজা করে)
নানির কথায় অভ্র শুধু হাসে। মনেমনে দোয়া করছে যাতে নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারে।

” যাহ রুমে যা,কাপড় পাল্টে নে।(নানি)

কাপড় পাল্টানোর পর অভ্র ড্রয়িংরুমে আসে।সেখানে স্বপ্নার সাথে প্রেমাও বসা। অভ্র গিয়ে প্রেমার সোজাসুজি বসে পড়ে।

“কেমন আছো অভ্র ভাইয়া? (স্বপ্না)
” ভালো, তুই?
“আমিও ভালো।

অভ্রের কথা বলার সীমান্ত এতুটুকুই।বেশি বলে না অন্য কারো সাথে,তবে প্রেমা হলে সেটা অন্য কথা।এরপর স্বপ্না চলে যায়।প্রেমা তখনও ফোনের দিকে তাঁকিয়ে মিটিমিটি হাসছিলো। যা বারবার অভ্রের চোখে এসে আটকাচ্ছে। কেমন অস্থির লাগছিলো,তাই প্রেমাকে জিজ্ঞেস করে ফেলে,

” হাসছো কেন?(অভ্র)
“হাসি থামিয়ে অভ্রের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
” কিছু না এমনি,
নিজের ঠোঁট কামড়ায় অভ্র,টেনশান হচ্ছে খুব অভ্রের।প্রেমা এমনি এমনি হাসছিলো না।নিশ্চয় কারো সাথে চ্যাটিং করছিলো। কেউ টা যদি অর্পণ হয়।
হাত মুঠো করে নেয়।

“এটা হতে পারে না,আমি থাকতে অন্য কারো সাথে চ্যাটিং, এটা আমি মানতে পারবো না।(মনেমনে অভ্র কথাটা বলে)
বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। পাশে ফুলেরদানি দেখতে পায়। সেটা হাতে নিয়ে খুব জোরে আছাড় মারে।কিছু ভাঙার শব্দে ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে প্রেমা।ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাঁকাতেই দেখে অভ্র চলে যাচ্ছে।ফোন রেখেই অভ্রের পেঁছনে ছুটে প্রেমা।

” অভ্র??(প্রেমা)
“অভ্র শুন,কি হয়েছে?
প্রেমার পেঁছন ডাকটা অভ্রের কান ভেদ করলেও
মস্তিষ্কে প্রবেশ করেনি,কান থেকেই ফেরত চলে যায়।

বাইরে বের হয়ে সোজা ঘাষের উপর গিয়ে বসে পড়ে অভ্র।সর্বাঙ্গ জ্বলছে তার।সে নিজেও আটকাতে পারছেনা নিজেকে।রাগটা উপচে পরছে। উপর থেকে একজন স্বাভাবিক মানুষ দেখালেও ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে তার।তা শুধু অভ্র নিজে উপলব্ধি করতে পারছে।

ততক্ষণে প্রেমা হাঁপাতে হাঁপাতে অভ্রের কাছে চলে আসে। ধপ করে অভ্রের সামনে বসে।

” কি হলো? এমন করছো কেন? ফুলদানি ভাঙলে কেন?(প্রেমা)
“নিরুত্তর। (অভ্র অন্যদিকে তাকিয়ে আছে)
” আশ্চর্য! কি হয়েছে বলবে তো??(প্রেমা)
“নিরুত্তর।
“অভ্র,
” চলে যাও,আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।

অভ্রের কথায় প্রেমা অভ্রের দিকে তাঁকায়।যাইহোক অন্যের ইচ্ছের প্রধান্য প্রেমা দেয়।তাই অভ্রের কথাও সে রাখবে। চলে যাওয়ার জন্য উঠে যাচ্ছিলো।এমন সময় অভ্র প্রেমার হাত ধরে বসিয়ে দেয়।প্রেমাও অভ্রের টানে টাল সামলাতে না পেরে বসে পড়ে।অভ্র প্রেমার চোখে চোখ রাখে। তারপর বলে,

“আমার হাতে ব্যাথা করছে খুব।(শান্ত গলায়)
” ইসস,আগে বলবা না,এতোটা কেটেছো ব্যাথাতো করবেই।ঔষুধ খেলে কমে যাবে (প্রেমা)
অভ্র আর কথা বলেনি। চুপ থাকতে ইচ্ছে করছে।ভাবছে কি ঔষুধ খেলে মনের ব্যাথাটাও কমে যায়।

উপরের দিকে তাঁকায় অভ্র।আকাশে চাঁদটা খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।হাজারো তারার মাঝে একটি চাঁদ।তাদের দিকে তাঁকিয়ে যেনো হাসছে। বলছে,চিন্তা করিস না অভ্র তোর প্রেমা তোরই থাকবে। হেসে উঠে অভ্র।সত্যিই কি চাঁদ মামা কথাটা বলেছে?

“এই তুমি হাসছো কেন এখন?? উপরে কি হচ্ছে??
প্রেমার কথায় থমথম খেয়ে যায় অভ্র।ইসস এখন যদি প্রেমা ওকে পাগল ভাবে।হ্যাঁ,পাগলই তো।শুধু প্রেমার জন্যে।
” পাগল হয়েছি তাই হাসছি।(অভ্র)
“হ্যাঁ, সেটাইতো দেখলাম। (প্রেমা)
অভ্র হেসে দেয় প্রেমার কথায়।কিছুটা হালকা লাগছে এখন।সত্যিই ওর প্রেমা ওরই আছে। চাঁদের কথাটাই সত্য হবে।
” সবদিক থেকে বেঁধে ফেলবো,আলাদা হওয়ার কোনো জায়গাও রাখবো না।সবটা জুড়েই আমিই থাকবো,”যেমন আমার সবটা জুড়ে রয়েছো তুমি।”
(অভ্র মনেমনে কথাটা বলে)

(চলবে)
Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here