বসন্তের_ফুল🌺 #তারিন_জান্নাত #পার্ট৩১

0
432

#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৩১

মুখ ভাড় করে বিছানায় হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে প্রেমা। রাগে শরীর কাঁপছে তার।একটু আগেই নাতাশা ওকে রেডি করে দিয়ে চলে গিয়েছে। রেডি বলতে শুধু গাউনটা পড়েছে।কৃত্রিম কোনো সাজ মুখে স্পর্শ করতে দেয়নি। নাতাশা বারবার জোর করেও সাজাতে পারেনি।অভ্র সাজ পছন্দ করেনা এ কথাটায় বারবার প্রেমার মাথায় এসে ঘুরপাক খাচ্ছিলো।

হার মেনে নেয় নাতাশা।সাজায়নি আর প্রেমাকে।নাতাশার যাওয়ার পর পিয়াস আর প্রেমার বাবা আলফাজ সাহেব রুমে প্রবেশ করেন।
বেশ হাসিখুশী দেখাচ্ছিলো তাদের।যা প্রেমাকে আরো বিরক্ত করে তুলেছিলো। পিয়াসের মুখ থেকে জানতে পারে আজ ওকে দেখতে আসছে। কিন্তু কারা আসছেন সেটা জানায়নি।জানতে চাইলেও জানায়নি।তাই রাগে ক্ষোভে বিছানায় বসে অপেক্ষা করতে শুরু করে দিয়েছে।

“এবার যদি বিয়ে ভাঙে, তাহলে চারবার হবে।কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসে না। প্লিজ অভ্র এবারের বিয়েটাও তুমি আটকাও,” (প্রেমা)

বাইকে বসে আছে অভ্র।রয়েল ব্লু কালারের পাঞ্জাবিতে দেখতে বেশ ভালো দেখাচ্ছে। পাঞ্জাবির হাত গুটানো। ফ্রেস মুখ। সব মিলিয়ে প্রেমাকে আকৃষ্ট করতে বেশ সক্ষম অভ্রের এই রুপ।
পাশে সাইকান অভ্রকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আধ ঘন্টা যাবৎ অভ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। তাও আবার সাইকানের ফোনে।যার ফলে সাইকান আরো বেশি ভয়ে আছে।কারন অভ্রকে কিছু বলা মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা।তারপরেও কিছুটা সাহস জুগিয়ে মিনমিনিয়ে বলে উঠে,

“ইয়ে মানে অভ্র অনেক্ষণ হলো,ফোনটা এবার দিয়ে দে না ভাই। ” (সাইকান)

সাইকানের গলার স্বর শুনে মৃদু হাসি থামিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় অভ্র।ফলস্বরূপ সাইকান ভয় পেয়ে যায়।

“বলছি আমার ফোন দিয়ে তোর কাজ কী? যেখানে তোর নিজেরও ফোন আছে। ‘(সাইকান)

সাইকানের কথায় অভ্র ফোনের দিকে নিজের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবারও। সাথে সেই মৃদু হাসি।যেটা দেখে সাইকানের কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।

” বলবি না, বলনা?” (সাইকান)

সাইকানের ঘ্যানঘ্যনানি এবার সহ্যের বাইরে।তাই ফোন থেকে চোখ সরিয়ে অভ্র সামনের দিকে তাকায় একবার।এরপর ফোনের দিকে তাকায়। হাত তুলে ফোনটা দূরে ছুড়ে মারতে গিয়েও সাইকানের গায়ের দিকে ছুড়ে।সাইকান ভয় পেয়ে চিৎকার করতে গিয়ে একপ্রকার থেমে ফোনটা ক্যাচ ধরে ফেলে।এবং জোরে শ্বাস নিতে শুরু করে।শ্বাস নেওয়ার মাঝে ভাঙা স্বরে বলে উঠে,

“শালা তোর ভালো হবে না। (সাইকান)

” না হোক,তবুও আমি ভালো আছি। “(অভ্র)

বাইকে উঠে সাইকানকে উঠতে ইশারা করে অভ্র। তাই সাইকান দ্রুত পায়ে অভ্রের পেঁছনে গিয়ে বসে। বাইক স্টার্ট দিয়ে নিজেদের গন্তব্যে চলে যায়।
__________________

ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে থাকা অভ্রকে দেখে প্রেমার ভাই রীতিমতো অবাক।পরিচয় পাওয়ার পর আরো দ্বিগুন অবাক হয় সে। আরিয়ানের ভাই যে অভ্র হতে পারে সেটা পিয়াস কল্পনাও করতে পারেনি। সবশেষে যার কাছ থেকে নিজের বোনকে দূর রাখতে চেয়েছে।আজ ভাগ্য সে ছেলেটাকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।এখন পিয়াস চাইলেও বিয়েটা আটকাতে পারবে না।তার চিন্তা হচ্ছে অভ্রকে নিয়ে।
একজন কৃষকের সাথে তার বোন বিয়ে দিবে,তারপরেও অভ্রের সাথে প্রেমার বিয়ে দিবেনা।যা পিয়াস আগেই অভ্রকে বলেছিলো। কিন্তু এখন পিয়াসের ভয় হচ্ছে এবং শ্বাস আটকে যেতে চাইছে।তার কারন অভ্রের ঠোঁটের মিটিমিটি হাসি।যা পিয়াসের একদম সহ্য হচ্ছেনা।

” এ ছেলেটা আসলে কী জিনিস? তা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না।নাহ যত তাড়াতাড়িই হোক আরিয়ানের সাথে প্রেমার বিয়ে ঠিক করতে হবে।নিজের ভাইয়ের ক্ষতি তো অন্তত করবেনা।”

“কি রে পিয়াস? কী বিড়বিড় করছিস? (প্রেমার বাবা)

তখনি পিয়াসের ধ্যান ভাঙে।সবার দিকে দৃষ্টি দেয়। তখনি দেখে সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।তাই পিয়াস লজ্জায় পড়ে যায়। নাতাশার দিকে তাকিয়ে প্রেমাকে নিয়ে আসতে বলে।

ড্রয়িংরুমে আসতেই প্রেমা বিস্মিত চাহনি নিয়ে সবার দিকে তাকায়।সেই চেনা মুখগুলো।এরা কেউ অপরিচিত নয়।মুহুর্তে মনটা উতলা হয়ে উঠে একজনকে দেখার জন্য।সবখানে তাকিয়ে তার শূন্যতা অনুভব করে প্রেমা। একরাশ অভিমান এসে ঝেঁকে ধরে প্রেমাকে। শরীরের কাঁপুনি অনুভব করছে সে।অথচ কিছুদন আগে মানুষগুলোর সামনে স্বাভাবিক ভাবেই ছিলো।কিন্তু আজ হঠাৎ এতো অস্থিরতা কেন?
এতো কিছুর মাঝে প্রেমা প্রায় ভুলতে বসেছে যে বিয়ের কথাটা আরিয়ানের সাথেই চলছে।সাথে সাথে হাত মুঠো করে আরিয়ানের দিকে তাকায়। আরিয়ান পিয়াসের সাথে হেসে কথা বলছে এবং বারবার ওর দিকে তাকাচ্ছে।প্রেমা মনেমনে বলে ফেলে ” নির্লজ্জ,বেহায়া,ছাগল কোথাকার!”

মুখ দিয়ে শব্দ করে উচ্চারণ করার প্রবল ইচ্ছে নিমিষেই মাটিতে মিশে যায়।চমৎকার এক হাসির ঝংকার শুনে। চট করে প্রেমা সেদিকে তাকায়। মুহুর্তেই ধম আটকে আসে প্রেমার। অভ্রকে দেখে। আজ বেশিই বিমোহিত হয় প্রেমা অভ্রকে দেখে। এবারের অস্থিরতা এবং কাঁপুনি দু’টোই প্রচন্ড জ্বালাচ্ছে প্রেমাকে। প্রেমার ইচ্ছে করছিলো ছুটে গিয়ে অভ্রের কাছে গিয়ে বলতে ;
প্লিজ অভ্র তোমার হাসিটা থামাও। আমার সহ্য হয়না।চাই না আমি তুমি এতো সুন্দর করে হাসো।প্লিজ হেসো না অভ্র।”

মনের কথা মনেই পুষে রেখে দেয়।মাথা নিচু করে হাতের নখের দিকে প্রেমার তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।আরো একবার মাথা তুলে অভ্রের দিকে তাকাতে মন চাইছিলো প্রেমার। এতো সবকিছুর মাঝে প্রেমা নিজেও বুঝতে পারছেনা কেন তার সাথে এমন হচ্ছে। কেন অভ্র ওর আশেপাশে আসলেই অস্থিরতা বেড়ে যায়? কেন?

নেই কোনো উত্তর প্রেমার কাছে।নিস্তব্ধতাকে নিজের মধ্যে নিয়ে নিয়েছে পুরোপুরি। কারণ প্রেমা কারো কথার উত্তর দিচ্ছেনা। চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

“প্রেমা মা! (প্রেমার বাবা)

সাথে সাথে প্রেমা মাথা তুলে তাকায়।এবং চোখ যায় অভ্রের দিকে।দ্রুত চোখ সরিয়ে বাবার দিকে তাকায়। উনি ইশারা করেন।তখনি প্রেমা পাশে তাকায়।দেখে আরিয়ান বসে আছে।হাত বাড়িয়ে দিয়ে।অন্যহাতে রিং। এবার প্রেমা আরো দ্বিগুন আঘাত পাই।দেখতে আসবে বলেছিলো কিন্তু এনগেজমেন্ট এর কথা কেউ বলেনি।লোক সম্মুখে কিছু বলার সাহস ও নেই প্রেমা।ছলছল দৃষ্টিতে একবার অভ্রের দিকে তাকায় প্রেমা। অভ্রের চোখেমুখে অন্যদিনের তুলনায় হাসির চাপটা আজ বেশি। যার অর্থ প্রেমা আবিষ্কার করে ফেলে।অভ্রও খুশী এ সম্মন্ধে তাই বাঁধা দিচ্ছেনা। মায়ের গলার স্বর কানে আসতেই প্রেমা হাত এগিয়ে দেয় আরিয়ানের দিকে।অবশেষে তাদের এনগেজমেন্ট হয়ে যায়।সামনের শুক্রবারে আরিয়ান আর প্রেমার বিয়ের দিন-ক্ষণ ঠিক করে সকলে মিলে।

প্রেমা শক্ত হয়ে বসে থাকে সবার মাঝে।সবার মধ্যে নানা রকমের হাসির কথা বার্তা হচ্ছে।কিন্তু প্রেমার কোনো কিছুতেই সামিল নেই।নাতাশা বুঝতো পেরে প্রেমার নিয়ে সবার মাঝখান থেকে চলে যায়।

যাওয়ার বেলায় প্রেমা অনেক বার চেষ্টা করেছে অভ্রের সাথে কথা বলার।কেউ না কেউ এসে বাঁধা দেয়।যার ফলে কথা বলতে পারেনি প্রেমা।হতাশা এসে আঁকড়ে ধরে।

(চলবে)
Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here