বসন্তের_ফুল🌺 #তারিন_জান্নাত #পার্ট৪৪

0
461

#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৪৪

বৃষ্টির ধারা এখনো চলমান।
স্নিগ্ধ সাজ প্রকৃতির। মন-মাতানো সুগন্ধ। ফুলের সুগন্ধ।
বৃষ্টিতে ভিজতে পেরে যেনো খুশীতে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে ফুলেরা। মাটির গন্ধ তো আছেই। মানুষের মনকে উৎফুল্ল করার জন্য এমন একটা দিন ক্ষন ওই যথেষ্ট।

অশান্ত চোখজোড়া থেমে থেমে আরো দ্বিগুন অশান্ত হয়ে পরে অভ্রের। আগের বৃষ্টিরদিনে সময়ের পর সময় মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতো অভ্র। কিন্তু এখন ফুলের চেয়ে শতগুন মুগ্ধ করছে প্রেমার ঘুমন্ত মুখ দেখে।

বিছানায় শায়িত প্রেমা। আর তার সামনেই মিনি সোফায় বসা অভ্র। দু’গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে সে। অভ্রের দৃষ্টি বাইরের থেকে বেশি প্রেমাতে আবদ্ধ।

নিচের ঠোঁট অনবরত কামড়াচ্ছে অভ্র।অতিরিক্ত চিন্তায় এমনটা করে সে। বৃষ্টি থামার বদলে আরো দ্বিগুন বাড়ছে।প্রিয় বৃষ্টিকে এ মুহুর্তে চাইছেনা সে।

করুনদৃষ্টে বাইরের বৃষ্টির দিকে অভ্র
বিড়বিড় কন্ঠে বলে,
‘থামো। দয়া করে থামো। সন্ধ্যার সময় হতে হতে থেমে যাও। অনুরোধ। নাহলে আমি আর আমার প্রেমা একসঙ্গে বাইরে যেতে পারবোনা। আমার সাপ্রাইজটাকে মাটি করে দিও না। ‘প্লিজ’

ছোট করে শ্বাস ছাড়ে। প্রেমার দিকে আবারও দৃষ্টি ছুঁড়ে সে। মাথা ঝিমঝিমিয়ে উঠে। অদ্ভুদ অনুভূতিরা আহ্বান জানায় তাকে। চোখ দ্রুত সরিয়ে নিজের চুলে দু’হাত গুঁজে।
আংশিক টান দেয়।তাতেও অতৃপ্ত। একটু জোরে টান দিয়ে চোখ মেলে পুনরায়। প্রেমার দিকে তাকাল গভীর শ্বাস নিয়ে। নেশা ধরে যায় তাঁর।
‘মোহনীয়-রুপ।’
নিজের মনকে বলে অভ্র।

হাতের কালো ঘড়িটির দিকে তাকাল। পাঁচটা পঞ্চাস। ছয়টা বাজবে একটু বাদেই। সন্ধ্যাবেলার ঘুমটা মাথা ধরে। তাই প্রেমাকে জাগানোটা শ্রেয় বলে মনে হয় অভ্রের। ফোন হাতে নিয়ে প্রেমার ফোনে কল দেয় সে।
প্রথম কলে প্রেমা নড়েচড়ে উঠে। দ্বিতীয় কলে একপ্রকার লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে ছুঁড়ে মারতে নিবে,চোখ যায় অভ্রের দিকে।

ওষ্টজোড়ায় মিটিমিটি হাসি বিদ্যমান। প্রেমা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাল। অভ্রের নামটা ভাসছে।
‘ফুস’ শব্দ করে শ্বাস ছাড়ে।

প্রেমা কোমল স্বরে বলে,
‘উফ্ অভ্র ঘুম ভেঙে দিলে কেন? আমার আরো ঘুমের দরকার। ‘আমি ঘুমাবো।’

বসা থেকে অভ্র উঠে দাঁড়ায়। শার্টের হাতা উপরে তুলতে তুলতে প্রেমার সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রেমা কপাল কুঁচকে ফেলে অভ্রের আগমনে। অভ্র মুচকি হেসে বাইরের দিকে তাকাল।পরবর্তী দৃষ্টি প্রেমার দিকে ছুঁড়ে। নরম স্বরে বলে,
‘সি…বৃষ্টি পড়ছে। ঠান্ডাও খুব।
আমি আসি,নিশ্চয় তোমার উষ্ণ পরশের
প্রয়োজন।ট্রাস্ট মি!একসাথে শুলে সব শীতলতা কেটে যাবে। ‘আসবো’!

অভ্রের কথা প্রেমার কানে পৌঁছালেও,উক্ত কথার অর্থ বুুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লেগে যায়।
বুঝার সঙ্গে সঙ্গে প্রেমার চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জোগাড়। আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে একপ্রকার দৌড়ে ওয়াসরুমে ঢোকে।
পেঁছন থেকে অভ্রের কন্ঠস্বর শুনে,
‘প্রেমা আস্তে পড়ে যাবে।’

হাসছে অভ্র। প্রেমা ওর কথাটা সত্যি ভেবে নিয়েছে।
_________________ _

সন্ধ্যা সাতটা। বাইকের সাথে ঠেসে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র।
প্রেমাকে রেডি হওয়ার জন্য দশমিনিট সময় দিয়েছে। অলরেডি আট মিনিট হয়ে গিয়েছে। মাথা তুললেই দেখে প্রেমা লম্বা পায়ে হেঁটে এসে অভ্রের সামনে দাঁড়ায়। বড় করে নিঃশ্বাস নেয়,
-‘কোথায় যাচ্ছি আমরা,’
অভ্র মৃদু হেসে বলে,
‘হোটেল বুক করেছি,দু’ঘন্টার জন্য।’
অভ্রের কথায় প্রেম নাক ফুঁলিয়ে বলে,
‘ধুর….

অভ্র নিঃশব্দে হেসে বাইকে উঠে। প্রেমাকে উঠতে ইশারা করলেই প্রেমা উঠে পড়ে।
‘শক্তকরে জড়িয়ে ধরো ‘ডিয়ার,আজ স্পিডে চালাবো।

প্রেমা জড়িয়ে না ধরলেও আলতো করে অভ্রের হুডিটা হাত মুঠো করে ধরে। অভ্র দেড়ি না করে জঙ্গলের মধ্যে রাস্তা দিয়ে বাইক চালিয়ে চলে যায়।

প্রেমা অভ্রের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।
আজ অভ্র স্পিডে চালাচ্ছে। যার ফলে প্রেমার ভয়ে মরিমরি অবস্থা। আশেপাশে তাকানোর সাহসটুকুও ওর মধ্যে উপস্থিত নেই।

দীর্ঘ এক ঘন্টা পর একটা খালি মাঠে এসে বাইক থামে।
হেঁটে তারা মাঠ পাড় করে। সামনে একটা সিঁড়ি বেঁয়ে উঠে, এরপর আবারও সিঁড়ি বেঁয়ে নামে।

আরেকটু দূর যেতেই প্রেমা বিস্মিত চাহনিতে আকাশের দিকে তাকাল। উফ্ ‘ফানুস বাতি’
মুখ থেকে উত্তেজিত কন্ঠে উচ্চারিত কথা অভ্র শুনে,
‘সামনে চলো আরো দেখতে পাবে।’

আরো দূর হাঁটতেই বিশাল এক নদীর সামনে এসে দাঁড়ায় দুজনে।আশেপাশে অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা,স্বামী-স্ত্রী একে অপরের হাত জড়িয়ে মুগ্ধকর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আকাশ পানে।

নদীর কোল ঘেঁষে রয়েছে ছোটছোট কড়ের ঘর। যেখানে বসার জন্য ব্যাঞ্চ রয়েছে।প্রেমাকে নিয়ে লম্বা পায়ে হেঁটে সে কড়ের ভেতরে গিয়ে প্রবেশ করে।এবং পাশাপাশি ব্যাঞ্চিতে বসে পড়ে।

নদীর ওপার থেকে উড়াচ্ছ ফানুস। আর এ পাড়ে জোড়া জোড়া প্রিয়জনরা মিলে প্রলুদ্ধনয়নে চেয়ে থাকছে সে দৃশ্য।

খোঁপা চুল খুলে দেয় অভ্র,নাক ডুবিয়ে আবছা কন্ঠে বলে,-‘ এই লম্বা কালো বস্তুু,কী বলে?চুল! কিন্তু আমার জন্য একঝাঁক বাঁধন। মায়াতে ভরপুর এ চুলে,আর ঘ্রাণটা? বিষণ পাগল করে,মাতাল উন্মাদ যায় বলো সব করে। আমার স্ট্রং হার্টটাকেও উইক করে দেয়।’

এতোক্ষণ প্রেমা চোখ নিভিয়ে অভ্রের কথা শুনে,কথা থামতেই ধুম করে চোখ মেলে।লজ্জায় মিঁইয়ে যায়।সরতে নিলে,অভ্র নিজে সরে যায়। আজ সত্যিই সে দিশাহীন হয়ে পড়েছে,সে বিকেল থেকেই।

অভ্র প্রেমার হাত ধরে বলে, ‘চলো!
প্রেমা কিছু বলবে তার আগেই সে হাঁটতে শুরু করে দেয়। নদীর কিনারে বসে,প্রেমার চুলে বিনি করে দেয় অভ্র।প্রেমার নিশ্চুপ চাহনি আকাশের দিকেই স্থির।

‘আশেপাশে যাদের দেখছো? তাদের মধ্যে অনেকেই রাতে এখানে থেকে যায়।
অভ্রের কথায় প্রেমা তাকাল,অভ্রের দিকে,
-কীভাবে?
অভ্র হেসে বলে, ‘থাকলে দেখতে পাবে,থাকবে?

অভ্রের কথা শেষ হতেই প্রেমা আশেপাশে তাকাল।অভ্রকে সে সম্পূর্ন বিশ্বাস করে।তবে এখানে কীভাবে থাকবে ভাবে। তেমন কিছু দেখতে পায়নি তাই চুপ মেরে হাতের দিকে তাকাল।
তখনি অভ্র বলে, ‘তোমার থাকার ইচ্ছে আছে বুঝলাম।তবে ভয় পেওনা।
একটু থেমে অভ্র বলে,
নির্ঘুমে! হঠাৎ একরাতে বাইরে নদীর তীরে সবুজ কড়ের উপরে শায়িত হয়ে,আসমানের দিকে তাকিয়ে থাকাতে যে আনন্দ এবং অনুভুতি জাগ্রত হবে তা অন্য সব অনুভুতির চেয়েও অন্যতম।

প্রেমা মিনমিনিয়ে বলে,
বালিশ কই পাবো? আমি বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারিনা,

অভ্র হেসে বলে,
-ব্যবস্থা হয়ে যাবে ‘ডি..য়ার!

প্রেমার শরীর শিউরে উঠে, ‘ডিয়ার’ শব্দটা শুনলেই সে হারিয়ে যায়।নিজেকে স্পেশাল কেউ মনে হয় তার।আসলেই তো সে অভ্রের জন্য স্পেশাল।
নীরবতাকে সঙ্গী করে নেয়,একে-অপরের হাত শক্ত করে ধরে রাখে। নির্বিকার চাহনি ছুঁড়ে সাদা মেঘে ঢাকা সেই আসমানের দিকে। যার বক্ষে উড়ে চলেছে শত ‘ফানুস’ রক্তিম আভা ফুঁটিয়ে।
_____________________________

রাত বারোটা পনেরো মিনিট। সুনসান নীরবতা চারিদিক। কিছু সময় অন্তর অন্তর মেয়ে বা ছেলে কন্ঠ ভেসে আসছে কানে।

প্রচুর শীত। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ।
প্রেমার শীত লাগার কারনে অভ্র গায়ের হুডিটা প্রেমাকে পড়িয়ে দেয়। অভ্রের গায়ে কালো একটা টি-শার্ট।
অভ্র প্রেমার উরনটা মাথায় দিয়ে শুয়েছে,আর প্রেমা শুয়েছে অভ্রের হাতে।
এতোসময় ধরে চুপটি মেরে ছিলো। এমন পরিবেশে অন্য কথা বলার ইচ্ছে হয়না,বরং নিশি রাতটা মুগ্ধতাকে জড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগ অবধি ঘুমানোর পরেও প্রেমার ঘুমের শিষ আসার কারনে আলুথালু অবস্থা। অভ্র অবাক হয়।সে নিজে কি করে না ঘুমিয়ে রাত পার করে। তার তো সহজে ঘুম আসে না।
-প্রেমা?
-হুও, কী..?
-উঠো.. গল্প করি!
-তুমি বলো আমি শুনছি।
-মানে উঠবে না তাইতো?
-“প্রেমা চুপ থাকে।
-ঠিক আছে চলে যাচ্ছি তুমি থাকো,ঘুমাও!
– আরে না না উঠছি,
প্রেমা ধড়ফড়িয়ে উঠে অভ্রের হাত ধরে বলে, ‘সরি’

অভ্র চুপ থাকে। অভ্রের কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে।কলিজাটা কেঁপে উঠছে বার বার। শ্বাস নিতেও কেমন যেনো অদ্ভুদ লাগছে। তবুও নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আচমকা প্রেমার দিকে তাকিয়ে অভ্র বলে উঠে..
– প্রেমা আমার কেমন জানি খারাপ লাগছে,আমি মনে হয় বাঁচবো না। দেখো আমি কিন্তু একা মরতে চাইনা। মরলে তোমাকে সহ সাথে নিয়ে মরবো। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতো পারবো না, না এখানে, না ওখানে ‘প্লিজ।

অভ্রের কথাগুলো খুব দ্রুত বলে ফেলে। তাতে প্রেমার বুক কেঁপে উঠে, চোখে পানি আসতেও সময় নেয়নি। অভ্রকে এতোটা দুর্বল সে আগে দেখেনি। সব সময় স্ট্রংলি কথা বলে।
কিন্তু আজ হঠাৎ..

-অভ অভ্র শান্ত হও, কী হয়েছে এমন করছো কেন?
দেখো এসব উল্টা পাল্টা কথা বলোনা প্লিজ আমার খারাপ লাগে।

প্রেমা নিজ থেকে অভ্রকে জড়িয়ে ধরে। ততক্ষণে সে শান্ত হয়ে যায়। ভীষণ ভয় পেয়েছে। উভয়ে।
মস্তিষ্ককে সবসময় জাগিয়ে রাখা ভালো নয়।মাঝে মাঝে তার ও বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।কিন্তু গভীর ঘুমেও সে মস্তিস্ককে কাটায়।

অভ্র প্রেমাকে সরিয়ে দেয়, মৃদু স্বরে বলে ‘ চলো,আমার থাকতে ইচ্ছে করছেনা। ‘
উরনাটা প্রেমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে হাঁটা দেয় তারা।
মৃত্যুকে অনেক কাছে থেকে দেখেছি আমি,যার কিঞ্চিৎ ভয় এখনো আমার শরীরে বিদ্যমান।
নিজ খেয়ালে কথাটা বলে অভ্র দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।এরপর প্রেমার দিকে তাকাল। খারাপ লাগছে এখন অভ্রের।
ওর জন্য প্রেমার মনটাও খারাপ হয়ে গিয়েছে।

(চলবে)

আমি আজকের দিনটার জন্য গল্প দেয়নি।আমার ইচ্ছে ছিলো উরন্ত ফানুস দেখে গল্প দিবো। আর সেটাই করলাম।😴😴😴😴
Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here