#হলুদ_খামে
#পর্ব_১৫
𝘼𝙙𝙝𝙖𝙧𝙚𝙧 𝙈𝙪𝙨𝙖𝙛𝙞𝙧 (ইফ্ফাত)
ইয়ু নো তানহা, তুমি একটু দ্রুতই রেগে যাও।
চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটি বললো তামিম। এই মুহূর্তে তাকে মোটেও বাঁজে ছেলে বলে মনে হচ্ছে না। আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে আমি কোনো গোলক ধাঁধাঁয় আটকে আছি। কি নির্মল হাসি তার, যে কোনো মেয়েই ঐ হাসির প্রেমে পড়তে বাধ্য; তবে আমার তার প্রেমে পড়া বারন। আমার কল্পনার মাঝেই তামিম ছেলেটি এমন একটা কাজ করে বসলো আমি চিৎকার না করে থাকতে পারলাম না, তামিমের হাত শক্ত করে ধরে আমি চিৎকার করে উঠলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে তামিম আমার মচকে যাওয়া পা ধরে হেঁচকা টান দিলো।
দু’হাত দিয়ে আমার পা ধরে নাড়াতে লাগলো।
এদিকে আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। তামিমের হাত আমার পা থেকে সরাতে নিলেই সে রাগি দৃষ্টি দিলো।
একটা সময় আমি আর আমার পায়ে ব্যাথা অনুভব করছি না। চোখ বন্ধ করে মাথাটা হেলে গাছের সাথে ভর দিয়ে বসে আছি।
তামিমের দৃষ্টি আমার দিকে, তবে দু’জনেই চুপ করে আছি। কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম–
এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
— নির্লজ্জ তো.. তাই!
আসলেই ছেলেটা নির্লজ্জ।
এভাবে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে একটুও লজ্জা পাচ্ছে না, উল্টো মুচকি মুচকি হাসছে।
তবে মুখ দেখে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
চোখ সরিয়ে নিলাম আমি, ঐ দৃষ্টি আমাকে বশ করে নিচ্ছে। শরীরটা কেমন যেনো দূর্বল লাগছে; আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে, ঘুম পাচ্ছে খুব।
আস্তে আস্তে তামিমের ঘাড়ে মাথা রেখলাম।
চোখ বুজে ফেলার আগে মনে হলো, ছেলেটা রহসজনক ভাবে হাসছে।
কিন্তু আমার ঐ হাসির রহস্য খুঁজে বের করার চিন্তাটাও এই মুহূর্তে ঘুমিয়ে আছে।
🍁
🍁
🍁
আমার সামনে হাতে পেয়ারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তামিম। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার পড়নে যেই কাপড় ছিলো তার চেয়ে একটা কাপড় বেশিই আছে।
তামিমের গলার ছোট্ট মাফলারটা দিয়ে আমার গাঁয়ে যতটুকু সম্ভব ঢেকে দিয়েছে।
শীত নিবারনের জন্য?
অবশ্য প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে, এই পাহাড়ী পরিবেশে শীতটাও একটু একটু বাড়ছে।
মাফলারটা তেমন একটা শীত নিবারন না করলেও কাজে এসেছে।
তবে রাতে কি হবে কে জানে?
শীতল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তামিম। চোখ দিয়ে ইশারা করে কিছু একটা দেখানোর চেষ্টা করছে।
তার দৃষ্টি অনুসরন করে তাকিয়ে দেখলাম আমার দিকে হাত দিয়ে পেয়ারা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কোথায় পেলেন?
— তোমার কি মনেহয়! এই জঙ্গলের একটা গাছও আমাদের কাজে আসবে না?
মানে?
— মানে ওদিকটায় একটা পেয়ারা গাছ দেখলাম। এখন পেটকে শান্ত রাখতে কষ্ট তো করতেই হবে। তাই গাছে উঠে পেয়ারা পেরে আনলাম।
বলে সে নিজেও খেতে লাগলো।
কিন্তু এটা দিয়ে কি আর ক্ষুধা মিটবে?
কে জানে এখানে কতদিন থাকা লাগে, প্রতিদিন কি আর….. মনটাই খারাপ আমার; খেতে না পারার জন্য নয়, এখানে আটকে থাকার কারনে।
তামিমের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আনার সময় দেখলাম, হাতের পেছনের একটা অংশে কোনো কিছুর সাথে ঘষা লেগে প্রায় ছিলে গেছে। আমি তাকিয়ে আছি দেখে সে আমার দিকে তাকিয়ে বড় একটা হাসি দিলো। আমিও আর কিছু বলিনি, তবে ছেলেটার জন্য খারাপ লাগছে খুব।
🍁
রাতটা গাছের নিচেই কোনোরকম পার করলাম আমরা দু’জন।
মশা আর পোকামাকড়ের যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে ঘুমই আসছিলো না।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার গায়ের উপর তামিমের শার্ট।
পাশেই গাছের সাথে গা এলিয়ে দিয়ে বসে বসেই ঘুমোচ্ছে তামিম।
একটা পাতলা গেঞ্জি পরেই সারাটা রাত কাটিয়ে দিলো? আর আমি কিনা তার ঘাড়ে মাথা রেখেই সারা রাত ঘুমিয়ে কাটালাম!
অপরাধবোধ কাজ করছে খুব।
কিন্তু তাই বলে তাকে বিশ্বাস করা যায়না।
তামিমের গায়ের উপর তার শার্ট রেখে আমি সেখান থেকে উঠে পড়লাম।
অনেক হয়েছে আর না, এবার এখান থেকে আমাকে বের হতেই হবে।
কিন্তু কোন দিকে যাবো আমি?
চারদিকের পরিবেশ একই রকম।
কোনদিক থেকে এসেছিলাম আমি?
🍁
তিন থেকে চারটা অপরাজিতা ফুল গাছের পাশে হাটু গেড়ে বসে আছি আমি।
নীল রঙয়ের এই ছোট্ট ফুলটা আমার বরাবরই দারুন লাগে।
কবিতা উপন্যাসেও এই ফুলের বেশ প্রশংসা।
ফুল দেখতে দেখতে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম ঠিক তখনই আমার ঘাড়ে ঠান্ডা কোনো কিছুর অস্তিত্ত অনুভব করলাম।
এক মুহূর্তের জন্য ভয় পেলেও সাথে সাথেই পেছনে ফিরে তামিমের রক্তচক্ষু দেখতে পেলাম।
বুকে হাত দিয়ে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে পুনরায় তামিমের দিকে তাকালাম।
কিন্তু তার এভাবে রেগে থাকার কারন মোটেও আমার মাথায় আসছে না।
চোয়াল শক্ত করে সে আমাকে বললো–
— কোথায় গিয়েছিলে?
তার প্রশ্ন শুনে আমি ক্ষানিক অবাক হলেও আমলে নিলাম না। সামনে থেকে চলে আসবো তখনই সে আমার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
একে তো ঘুম থেকে উঠেছি, শরীরের পেশীগুলো এখনও নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা শুরু করেনি।
তার উপর আচমকা এভাবে হেঁচকা টান দেয়াতে আমি তামিমের বুকের উপর গিয়ে পড়লাম।
আমার দু’হাত পেছনে নিয়ে আমাকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
তার এমন কাজে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।
বিরক্ত হয়ে তাকে বললাম–
কি করছেন আপনি! ছাড়ুন আমাকে…
— আমি জিজ্ঞেস করেছি কোথায় গিয়েছিলে!
আপনি সকাল বেলা উঠে প্রথমে কোথায় যান?
— সকাল বেলা উঠে…. মানে?
আমার কাট কাট কথায় জনাব আমাকে ছেড়ে দিলেন।
এই বাঁজে ছেলেটা বোধহয় কথায় কথায় আমাকে শুধু আঘাত করতেই জানে।
এমন উগ্র স্বভাবের মানুষ আমি তৃতীয়টি দেখিনি। এক এই ছেলে আর আমার মানা….. হাত ডলতে ডলতে তামিমকে বললাম–
কি হলো বলুন? সকাল বেলা উঠে সবাইকে ঢোল পিটিয়ে বলে যান! সবাইকে জানিয়ে আপনি ঐ কাজ করেন?
আমার কথায় তামিমের চেহারার রং পরিবর্তন হলো। শান্ত কণ্ঠে নিচের দিকে তাকিয়ে আমাকে বললো–
— সরি, আসলে ঘুম থেকে উঠে তোমাকে না দেখতে পেয়ে খুব ভয় পেয়েছিলাম তাই…
আর কিছু না বলেই আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। তামিমের হাত ছাড়িয়ে বললাম–
আপনার সাথে আমি আর কোথাও যাবো না।
— তোমাকে কোলে নিতে আমার কোনো সমস্যা নেই মিস তানহা। বরং আরো মজা লাগবে।
কথাটা বলেই সে আমাকে কোলে নিতে আসলে আমি পিছিয়ে গেলাম। এ কেমন ছেলে, কথায় কথায় গাঁয়ে হাত দেয়! ভারি গলায় বললাম–
“কোলে নিতে হবে না আমি যাচ্ছি” ।
শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে প্রায় মিনিট পাঁচে’ক তাকিয়ে রইলো।
মনে হয়না আমার কোনো কথা তার কানে গেছে। আমার কথার পাত্তা না দিয়েই সে আমার…
চলবে…
(রিচেক দেয়া হয়নি, বানানে ভুল হলে ক্ষমা করবেন)