হলুদ_খামে #পর্ব_১৬ 𝘼𝙙𝙝𝙖𝙧𝙚𝙧 𝙈𝙪𝙨𝙖𝙛𝙞𝙧 (ইফ্ফাত)

0
315

#হলুদ_খামে
#পর্ব_১৬
𝘼𝙙𝙝𝙖𝙧𝙚𝙧 𝙈𝙪𝙨𝙖𝙛𝙞𝙧 (ইফ্ফাত)

শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে প্রায় মিনিট পাঁচে’ক তাকিয়ে রইলো।
মনে হয়না আমার কোনো কথা তার কানে গেছে। আমার কথার পাত্তা না দিয়েই সে আমার হাত ধরে সামনে হাটতে লাগলো।
বুঝিনা আমি কি কোনো মানুষের সাথে কথা বলি না কোনো রোবটের সাথে?

🍁

পাথরের উপর বসে পানির তীব্র শ্রোতের ধারা দেখছি। পানির শ্রোতেরা কত দ্রুত বয়ে যাচ্ছে, থামার নামই নেই।

জঙ্গলের এদিকটায় ছোট্ট একটা জলাশয় দেখে মনটাই ভালো হয়ে গেলো।
পাথরের উপর বসে তামিমের কাজে চুপি চুপি হাসছি আমি।
ছেলেটা আমার হাত ধরে জোড় করে আমাকে এখানে নিয়ে এলো।
আর আমি কি-না কি ভাবছিলাম।
চারিদিকে বড় বড় সবুজ গাছপালা আর ঝোপঝাড়ের মধ্যে পরিষ্কার জলাশয়টা দেখতে খারাপ লাগছে না। আমাকে এখানে বসিয়ে রেখে তামিম জলাশয়ের কাছে গিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছে।
বলছি যে মাছ ধরলে রান্নাটা করবে কিভাবে?
আগুন জ্বালানোর কোনো উপায়ও নেই।
আমাকে হাসতে দেখে তামিম দূর থেকেই বললো–

— হাসছো যে?

তামিমের কথায় আমার হাসির পরিমানটা আরও বেড়ে গেলো।
হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আছি তবুও হাসি থামাতে পারছি না।
আমাকে এভাবে হাসতে দেখে তামিম একটু কাছে এসে বললো–

— কি হলো? হাসছো কেনো?
নিজে তো বসে আছো এখানে আরাম করে, আর আমি কষ্ট করছি।
কোনো মাধ্যম ছাড়া মাছ ধরতে কষ্ট আছে ম্যাডাম।

এবার শব্দ করে হেসে দিলাম আমি।
কোনোরকম হাসি থামিয়ে তামিমকে বললাম–

মাছ যে ধরার চেষ্টা করছেন, ধরার পর কিভাবে রান্না করবেন?
নাকি বিড়ালের মতো কাঁচা খাওয়ার ইচ্ছে আছে আপনার?
আমি কিন্তু কাঁচা মাছ খেতে পারবো না।

আমার কথা শুনে তামিমের মুখ এইটুকু হয়ে গেলো। চুপষে যাওয়া ঐ মুখ দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছিলো।
মাথার পেছনটা চুলকে আমাকে বললো–

— ইয়ে… না মানে দেখছিলাম খালি হাতে মাছ ধরা যায় কিনা।
আর হ্যাঁ, মাছ রান্না করতে পারলেও তোমাকে খেতে দিতাম না।

আপনার হাতের মাছ খাওয়ার কোনো ইচ্ছেও নেই আমার।

— তাই নাকি! তা শুনি কি খাওয়ার ইচ্ছে আছে এই জঙ্গলে?

কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তামিম আমার অনেকট কাছে এসে পড়লো।
জলাশয়ের একেবারে কিনারটায় এসে দু’জন কথা কাটাকাটি করছি।
এক সময় বেখায়ালি হয়ে তামিম আমার কাছে আসতেই আমি পা পিছলে পানিতে পড়ে গেলাম।

আমাকে পড়ে যেতে দেখে তামিমের সে কি হাসি!
ছোটবেলা থেকেই আমি পানি ভয় পাই।
তাই গ্রামে গিয়েও কখনও পুকুরে নামিনি।
জোয়ার ভাটা স্রোত দেখতে ভালো লাগলেও কাছে যাওয়ার সাহস ছিলোনা কখনও।
সেই হিসেবে এখনও সাতাড় শেখা হয়নি।

প্রায় ঘাড় সমান পানির স্রোতের সাথে কোনো ভাবেই পেরে উঠতে পারছিলাম না আমি।
টাল সামলাতে না পেরে পানির স্রোতের সাথেই ভেসে যাচ্ছিলাম।
নাকে মুখেও পানি ঢুকে যাচ্ছিলো আমার।
তামিমকে যে বাঁচাতে বলব সে অবস্থাটুকুও আমার নেই।

আমার এই করুন অবস্থা দেখে তামিম হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে আমি অভিনয় করছি কিনা।
কিছুক্ষন চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকার পর তামিম নিজেও পানিতে ঝাপ দেয়।
আমার কাছে এসে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

নিচের কাদামাটিতে পা রাখতে আমার সব থেকে বেশি ভয় হয়।
মনে হয় কোনো সাপ বিচ্ছু কিংবা কাঁকড়া আমায় কামড়ে দেবে।
ভয়ের চোটে আমি মাটিতে পা রাখতে পারছি না।
আমাকে ছোটাছুটি করতে দেখে তামিম আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

— আমি আছি তো জান, আমি আছি তোমার কাছে।
কোনো ভয় নেই, কিছু হবে না তোমার।

ভয়ে আর নাকে মুখে পানি চলে যাওয়াতে আমি ভালোভাবে কথাই বলতে পারছি না।
তবুও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে তামিমকে বললাম–

— মা..মাটি ক..কাম..ড়ে দেবে পা..নি পানি

তামিমের গলা জড়িয়ে ধরে আছি আমি।
আমার মাটি পানির রসায়নিক কথা সে কি বুঝলো জানিনা, আমাকে পা ছোটাছুটি করতে দেখে তামিম আমার দু’বাহু শক্ত করে ধরে বললো–

— তানহা জান… আমার পায়ে তোমার দু’পা রাখো। ট্রাস্ট মি কিছুই হবে না।

তামিমের বলতে দেরি তার পায়ের উপর আমার পা তুলে দিতে দেরি হয়নি।
বলার সঙ্গে সঙ্গেই আমি তামিমের গলা দু’হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার পায়ের উপর আমার পা তুলে দিলাম।

🍁
🍁
🍁

গলার উড়নাটা বড্ড ঝামেলা করছে।
পানির স্রোতে একবার গলায় পেঁচিয়ে যাচ্ছে তো আরেকবার পানিতে ভেসে যাচ্ছে।
বার বার উড়না ঠিক করতে করতে আমি বিরক্ত।
তখনই একহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে তামিম আমার উড়না গলা থেকে নিয়ে নিজের হাতে পেঁচিয়ে ফেলে।

দ্বিতীয়বারের মতো লজ্জায় আমি তামিমের দিকে তাকাতে পারছি না।
ভেজা চুলগুলি আমার মুখের সামনে এসে আমাকে বিরক্ত করছে।
বুক সমান পানিতে সাদা কামিজটা সম্পূর্ন ভিজে গেছে।
তখন আমি আর তামিম শুকনো মাটি থেকে অনেকটা দূরে এসে পরেছি।
তামিম একটু একটু করে…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here