#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৭
–“জানেন আপনার সঙ্গে কাটানো প্রত্যেকটা মূহুর্ত আমার কাছে বিশেষ মনে হয়? মনে হয়, এই মূহুর্ত এই সময় এখানেই থেমে যাক।”
ফার্মহাউজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনুভবের গাড়ি। অনুভব গাড়ি থেকে নামতে উদ্যত হতেই মাধুর্যের মুখে এমন কথা শুনে ও শান্ত চোখে তাকায়। স্মিত হেসে বলে…..
–“মূহুর্ত কখনো থামানো যায় না। বহমান থাকে সব সময়। তবে মানুষ যদি কখনো চায় সে তার পছন্দের মানুষের সঙ্গে নিজের প্রত্যেকটা মূহুর্ত কাটিয়ে দিতে পারে। তুমি কি চাও সেটা?”
লাজুক চোখে তাকায় মাধুর্য। কি বলবে ভেবেও পায় না সে। শুধু তাকিয়ে থাকে স্থির চোখে। এক মূহুর্তে সরিয়ে নেয় চোখ। শান্ত সুরে বলে ওঠে….
–“আপনাকে দেখে একটা জিনিস বুঝেছি। সব বড়লোকের ছেলেরা খারাপ হয় না। আপনার মতো কিছু মানুষ আজও পৃথিবীতে আছে বলেই হয়ত পৃথিবীটা সুন্দর।”
অনুভবের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে। মাধুর্যের কথা ওকে দুর্বল করে তুলছে। সে মাধুর্যের মনের বিশ্বাসের অনেকাংশে জুড়ে আছে সেটা বুঝে ফেলেছে অনুভব। কিন্তু সেদিন কি হবে যেদিন মাধুর্যের সবটা মনে পড়বে? ও তো সবটা অবিশ্বাস করবে। মাধুর্যের ডাগরডোগর চোখে ভাসতে থাকা ভালোবাসা নিমিষেই ঘৃণাতে পরিণত হবে। দাঁত শিরশির করে ওঠে অনুভবের। ও মাধুর্যের ভালোবাসা না নিয়ে বাঁচতে পারলেও ঘৃণা নিয়ে বাঁচতে পারবে না। ভয়ে নিজের অজান্তে আচমকা ঘুরে পাশের সিটে বসে থাকা মাধুর্যকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে সে। মূহুর্তের মাঝে এমন ঘটনাতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে মাধুর্য। তবে অনুভবের স্পর্শ উতলা করে তোলে তাকে। এই স্পর্শে কেন মিশে আছে এতো ভালো লাগা? সে মনে মনে বলে ওঠে….
–“কি আছে আপনার স্পর্শে? কেন উতলা হয়ে পড়ি আমি এভাবে এই স্পর্শে? যেন আপনার ছোঁয়া এর আগেও পেয়েছি আমি।”
মাধুর্যের সেসব কথাগুলো মনেই থেকে গেল। মুখ বাইরে আর বের হলো না। হাত আস্তে আস্তে উঠিয়ে অনুভবের পিঠে হাত রাখতেই অনুভব ছেড়ে দেয় তাকে। অস্পষ্ট কন্ঠে বলে ওঠে….
–“সরি। আই এম সরি।”
অনুভব এতো দ্রুত বেরিয়ে চলে যায় যে মাধুর্যের মনে হলো মানুষটি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। কিছুক্ষণ বসে বসে নানান ভাবনায় মেতে থাকল সে।
–“কি আপনার এই অদ্ভুত ব্যবহারের কারণ? আপনি কি আমায় ভালোবাসেন? তাহলে কেন স্বীকার করেন না? কেন এতোটা রহস্যময় করে রাখেন নিজেকে?”
বাইরের দিকে তাকিয়ে আনমনে কথাগুলো বলে ওঠে মাধুর্য। কিন্তু উত্তরগুলো পাবে কোথায়? নেই উত্তর। বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘ নিশ্বাস। বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায় সে।
দরজা পেরিয়ে ঢুকতেই এলিনাকে হাসি হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু ভ্রু কুঁচকে নিজেও প্রতিত্তোরে মুচকি হাসলো মাধুর্য। কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে বলল…..
–“কি ব্যাপার এতো হাসি কেন মুখে? কোনো খুশির খবর আছে মনে হচ্ছে।”
–“হুমম আছে তো তোমার জন্য। ঘরে যাও দেখতে পাবে।”
–“কি আছে ঘরে?”
এলিনা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ঘরের দিকে ঠেলে দেয় মাধুর্যকে। মাথা নাড়িয়ে ঘরে ঢোকে মাধুর্য। বেডের কোণে বসে থাকা মানুষটিকে দেখে খুশিতে ঝলমল করে ওঠে তার মুখ।
দৌড়ে গিয়ে হামলে পড়ে সামিহার ওপর। সামিহা মাধুর্যের এমন কান্ড দেখে খিলখিল করে হেসে দেয়। তা আড়াল থেকে দেখে অনুভব। মাধুর্যের বাচ্চামি দেখে মনে পড়ে ভাবনার কথা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মাধুর্যের দিকে।
–“তোমাকে দেখে বছরের পর বছর পার করে দিতে পারি। তুমি সাধারণের মাঝে অসাধারণ। তুমি আমার হৃদয়ে এমনভাবে গেঁড়ে বসলে যে এই ৪৯ বছর পাড়ি দিয়েও ভুলতে পারলাম না তোমায়। তোমার হাসি আমাকে হাসায়। তোমার কান্না আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করে। এ কেমন কঠিনতম অনুভূতি? আমার নাম অনুভব। অথচ দুনিয়ার সব থেকে কঠিন অনুভূতির স্বীকার আমি। শুধু তোমার জন্য!”
মাধুর্য সামিহাকে ছেড়ে এক্সাইটেড হয়ে গালে গাল লাগিয়ে বলে…..
–“সামিহা আপু, কখন এলে?”
–“এইতো কিছুক্ষণই হলো মাত্র। কেমন আছিস? এখানে তোর কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো?”
মাধুর্য ডানে-বামে মাথা নাড়ায়। প্রশান্তির সুরে বলে….
–“না। আমার এখানে কোনোরকম অসুবিধে হয় না। অনুভব আমার কোনো অসুবিধে হতেই দেয় না। তবে তোমাদের ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হয়।”
সামিহা মাধুর্যের গাল টেনে দিয়ে বলে….
–“প্রথমেই বুঝেছিলাম, অনুভব ছেলেটা বেশ ভালো। আর আমাদের ছাড়া বলিস তো তাহলে আমাদের কথা ভুলেই যা। বাড়িতে ফিরলে মায়ের কষ্টে তুই থাকতে পারবি না।”
–“মামি মা ভালো আছে তো? বিভোর ভাইয়া আর সানিয়া?”
–“মায়ের কথা বলছিস? এখন একা একা সব করে আর আমি যতটুকু হেল্প করি। নিজে নাজেহাল হয়। তার অবস্থার জন্য নিজেই দায়ি। সানিয়া তো ওই এক রুপচর্চা নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত। আর বিভোর ভাইয়া ভালোই আছে। মা মেয়ে দেখছে বিয়ে দেওয়ার জন্য।”
–“বাহ, বেশ ভালো খবর।”
মাধুর্যকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় সামিহা। চোখ ছোট ছোট করে বলে….
–“আজ এখানে আসার একটা কারণ আছে। বল কি কারণ?”
মাধুর্য ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়ে। কয়েক সেকেন্ড পরেই হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে….
–“উমম….আজ কত তারিখ? কাল আমার জন্মদিন না?”
–“ঠিক ধরেছিস। কাল তোর জন্মদিন।” (হেসে)
হাসিটা নিমিষে মিলিয়ে যায় মাধুর্যের। শুকনো হয়ে যায় তার মুখ। বেড থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। অনুভব পুরো বিষয়টাই আড়াল থেকে লক্ষ্য করে। জানালার কাছে পর্দা ধরে দাঁড়ায় মাধুর্য। বিষন্নতায় ছেয়ে যায় ওর মুখ। সামিহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রশ্ন করে…..
–“কি হয়েছে মাধুর্য? তোর মুখের হাসি হঠাৎ ফুরিয়ে গেল যে!”
–“কাল আমার জন্মদিন। অথচ যারা জন্ম দিয়েছে তারা আমার জীবনে নেই। ২২ টা বছর পার করলাম তাদের ছাড়া। কিন্তু মনটা এখনো কোথাও না কোথাও বিশ্বাস করে আমার মা-বাবা আজও আছে। কোথাও একটা আছে।”
সামিহা মাধুর্যকে কি বলে শান্তনা দেবে খুঁজে পায় না। মাধুর্যের মলিন হয়ে যাওয়া চোখমুখের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে সে।
নিজের বাড়িতে চেয়ারের ওপরে পা তুলে ডান হাতটা থুঁতনিতে রেখে বসে আছে অরুণ। ও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনি আজ। মুখটা জড়িয়ে গ্লাসে থাকা পানীয় এক ঢোকে শেষ করে মাথা হেলে বসে থাকে সে। ভার কন্ঠস্বরে বলে ওঠে….
–“তাহলে কি কবিতায় ভাবনা? নাকি আমার কোথাও ভুল হচ্ছে?”
নিজের চোখ কচলে আয়নার দিকে লক্ষ্য করে সে। পাগলের মতো মাথার চুল এলেমেলো করে বলে….
–“না না। আমি নিজের চোখকে অবিশ্বাস করছি। মাধুর্য তাহলে সাধারণ মানুষ। আর কবিতা ভাবনা। কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে এই মেয়েটার। আর ওই অনুভবেরও। ওর থেকে মাধুর্যকে দূরে সরাতে হবে। যেকোনো উপায়ে আর যেকোনো ভাবে।”
আরো বিভিন্ন বিষয় ভাবতে ভাবতে তার ঘরে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে পড়ে কেউ। এমন কান্ড দেখে অরুণ চোখ লাল করে বলে….
–“কি হলো? ঘরে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয় জানিস না? ভুলে গেছিস নিয়মকানুন?”
ছেলেটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ওঠে….
–“না প্রিন্স। তবে খবরটাই এমন যে দ্রুত আসতে হলো।”
–“কি খবর বল। বিদায় হ। আমার ভালো লাগছে না।”
তিক্ততার সুরে কথাটি বলে ওঠে অরুণ। ছেলেটি ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে…..
–“আমাদের দলের আরেকজন মরে গেছে প্রিন্স।”
চকিতে তাকায় অরুণ। দাঁড়িয়ে পরে চেয়ার থেকে। ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে এসে চোখ গরম করে জানতে চায়….
–“কে মারা গেছে?”
–“ওইযে, সেদিন ওই সুন্দর মেয়ে ভ্যাম্পায়ারের শিকার যে হয়েছিল না? আর ওই সুন্দর মেয়েকে যে দেখেছিল সে মরে গেছে।”
পুরোটা শুনেই রাগে বড় বড় নিশ্বাস ফেলতে থাকে অরুণ। নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে নিজের আসল রুপ ধারণ করতে সময় নেয় না অরুণ। হুংকার দিয়ে ওঠে বলে….
–“চলে যা চোখের সামনে থেকে নয়ত….”
কথাটা ছেলেটার দিকে ছুঁড়ে দেয় অরুণ নিজের হাতের কাছে যা পায়। ছেলেটি ভয়ে দৌড়ে পালায়। অরুণ ভেবেছিল কবিতায় ভাবনা কি না নিশ্চিত হতে ওই ওয়ারওল্ফটা কাজে লাগবে। কিন্তু পারল না। রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ল সে।
সন্ধ্যায়….
সামিহা চলে গিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। রুেনুকা বার বার ফোন দিয়ে চলেছিল ওকে। তাই যেতে হয়েছে তাকে। আজ অফিসেও যায়নি মাধুর্য। অনুভবই যেতে বারণ করেছে। সামিহা এসেছিল তাকেই সময় দিতে বলেছিল। তাই এখন ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে মাধুর্য। ছাঁদটা খুব একটা বড় নয়। মাঝারি আকারের ছাঁদ। ছাঁদে অনেক দিন আসা-যাওয়া করা হয় না। সেটা ছাঁদ দেখলেই বোঝা যায়।
–“কেন গিয়েছিলে আজকে হসপিটালে?”
অনুভবের কন্ঠ শুনে পেছন ফিরে তাকায় মাধুর্য। অনুভবের প্রশ্নের জবাব দিতে নেয় সে। কিন্তু তার আগেই থামিয়ে দেয় অনুভব। সে এগুতে এগুতে বলে….
–“একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো। আমাকে না বলে কোথাও যাবে না তুমি। এটা আমার রিকুয়েষ্ট নয়। অর্ডার। আর আমার অর্ডার কেউ অমান্য করুক সেটা আমি মোটেই পছন্দ করি না।”
সবটা শোনার পর এবার মাধুর্য সাহস করে বলে ওঠে….
–“আপনি ব্যাপারটা একটু বেশি সিরিয়াসলি নিচ্ছেন। অরুণ বিপদে ছিল তাই….”
মাধুর্যকে থামিয়ে দিয়ে অনুভব জোর গলায় বলে ওঠে….
–“যাকে তাকে নিয়ে এতো চিন্তা কীসের তোমার? তোমার এটাই সমস্যা কারো বিপদ দেখলে তুমি ঠিক থাকতে পারো না। তবে এর জন্য নিজের কত বড় বিপদ হতে পারে জানো তুমি? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া? লিসেন, ইউ আর মাই রেসপন্সিবিলিটি। তোমাকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব আমার। সো এবার থেকে যেখানে যাবে এবং যা করবে সব আমাকে বলে করতে হবে তোমায়। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার মাধুর্য?”
কথা বলা শেষে অনুভবের মাধুর্যের দিকে খেয়াল করে। মাধুর্য মলিন মুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এবার মুখে লাগাম দেওয়া উচিত অনুভবের। তাই করে সে। রাগে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল সে। তবে মাধুর্যের মুখ মলিন হওয়ার পেছনে অনুভবের রাগের কথাগুলো জড়িয়ে নেই। তার খারাপ লাগাটা অন্যখানে। সে মনে মনে ভাবতে থাকে, সে অনুভবের দায়িত্ব মাত্র! সেকারণেই অনুভব এতো কেয়ার করে ওর প্রতি। এসব ভেবে হৃদয়ের মাঝে ভাঙচুর সৃষ্টি হয়। মাধুর্য ভেবেছিল অনুভবের তার প্রতি কোনো অনুভূতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু সে ভুল ছিল। মাধুর্য মিনমিন করে বলে ওঠে….
–“হুমম। আর এমন হবে না।”
ছাঁদ থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে নেয় মাধুর্য। দুই ধাপ পা ফেলতেই একটি হাত শক্ত করে আবদ্ধ করে নেয় তাকে।
পিছন ফেরার সময়টাও পায় না। তার আগেই কেউ তার সঙ্গে মিশিয়ে নেয়। আর মানুষটি কে সেটা মাধুর্যের বেশ ভালোভাবে জানা। পিটপিট করে তাকাতে গিয়েও লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে।
–“রাগটা বেশি দেখিয়ে ফেলেছি? সরি। ভেরি ভেরি সরি।”
মাধুর্যের মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। অনুভব হাতের বাঁধন আলগা করে। গম্ভীর গলায় বলে উঠল….
–“আমি কিন্তু সরি সবসময় সবাইকে বলি না। তোমার এক্সেপ্ট করে নেওয়া উচিত আমার সরি।”
এবার বাঁকা চোখে তাকায় মাধুর্য। দূরে সরতেই ওর হাতের সাথে অনুভব নিজের হাত আবদ্ধ করে নেয়।
–“ইউ আর নট অনলি মাই রেসপন্সিবিলিটি। তুমি আমার কাছে এমন কেউ যার সঙ্গে আমার ভালো লাগা খারাপ লাগা সবটা জুড়ে আছে। তুমি এমন কেউ যাকে নিয়ে ভাবতে আমার ভালো লাগে। শুধু আমার দায়িত্ব নও তুমি।”
মাধুর্যের প্রাণে পানি আসে। ঠান্ডা হয়ে যায় তার পুরো শরীর। অন্ধকার চারিদিকে। এই ঝাপসা আলোয় দুটো মানুষ একে ওপরকে তাকিয়ে নিজের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। এ যেন হাজার বছরের তৃষ্ণা!
রাত প্রায় ১১ টা। মাধুর্য টেবিলেই মাথা রেখে পড়তে পড়তে একসময় ঘুমিয়ে পড়েছে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। এই নিস্তব্ধতার মাঝে কারো পায়ের শব্দ। পায়ের শব্দটা আস্তে আস্তে প্রখর হচ্ছে। কেউ হেঁটে আসছে মাধুর্যের ঘরের দিকে।
টেবিলে মাথা লাগিয়ে ঘুমের ঘোরে বিরবির করছে মাধুর্য। এই বাতাসের মাঝেও ও ঘামছে। ওর কপালে কয়েকটা ভাঁজ স্পষ্ট। অতি উত্তেজিত হয়ে একসময় সে বলে….
–“আমি মরতে চাইনি। মারলেন তুমি আমায়। মেরে ফেললে। বিশ্বাসঘাতকতা করে কি পেলে তুমি? কেন করলে এতোসব অভিনয়। তোমার অভিনয়ে ভুলেছি আমি। আমি তো অভিনয় করিনি। সত্যিকারের ভালোবেসেছি। এই ভালোবাসার ফল কি এতোটাই বিষাক্ত যে প্রাণটা কেঁড়ে নিল?”
বুঁজে থাকা বাম চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসে অশ্রু। পেটে হাত দিয়ে গোঙ্গাতে থাকে মাধুর্য। একসময় ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে মাধুর্য। ছটফট করতে থাকে। অনুভব এসেছিল ঘরে। মাধুর্যকে ধরে চেপে ধরে নিজের সাথে। অন্যদিকে মাধুর্য বার বার বলে চলেছে…..
–“খুনি তুমি। শুধু মানুষের নও ভালোবাসারও খুনি তুমি। মেরে ফেলেছো। মেরে ফেলেছো আমায়।”
সে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে নিজেকে। অনুভব আঁতকে ওঠে। ভেতরটা কেঁপে ওঠে তার। তাহলে কি মাধুর্যের সবটা মনে পড়ল? আর ভুল বুঝতে শুরু করল অনুভবকে। সে আলতো করে হাত রাখে মাধুর্যের গালে। অসহায় ভঙ্গিতে বসে পড়ে এক হাঁটু গেঁড়ে।
–“এটা আমি মাধুর্য। কোনো খুনি নয়।”
অনুভবকে দেখে মাধুর্যের ছটফটানি বন্ধ হয়ে যায়। থম মেরে থাকে সে। মাথায় হাত দিয়ে বলে…..
–“স্বপ্ন। আবার সেই স্বপ্ন। আমি মুক্তি এর থেকে। ওই অদ্ভুত মেয়ের মারা যাবার যন্ত্রণা আমি কেন অনুভব করি?”
–“তার মানে স্বপ্ন দেখছিলে?”
মাধুর্য মাথা দুলায়। নিশ্চিন্ত হয় অনুভব। তৎক্ষনাৎ মাধুর্য বিভ্রান্ত হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।
–“আপনি এই সময় এখানে কি করছেন?”
সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ায় অনুভব। স্মিত হেসে বলে….
–“তোমাকে ডাকতে এসেছিলাম। একটা জায়গায় নিয়ে যাব যাবে?”
–“কোথায়?”
অনুভব মাধুর্যকে হাত ধরে দাঁড় করায়।
–“না বললে যাবে না? বিশ্বাস করতে পারছো না?”
–“এভাবে বলবেন না। আপনাকে অবিশ্বাস করলে যেন নিজের ওপর থেকেই বিশ্বাস উঠে যায় আমার।”
অনুভবের হাসি প্রসারিত হয়। মাধুর্যের হাতটি ধরে বেরিয়ে আসে দুজনে।
চলবে…..🍀🍀
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং এটাকে বাস্তবতার সঙ্গে তুলনা করবেন না। গল্পটা কল্পনার ভিত্তিতে তৈরি।