#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৮
অনুভবের কন্ঠ চিনতে ভুল হয় না মাধুর্যের। এই কন্ঠ যেন কত বছরের চেনা। ফিরে তাকায় সে এবং কবিতা। ছাইরঙা শার্টের ওপর কালো রঙের ব্লেজার, কালো জিন্স, হাতে মোটা চেইনের ঘড়ি এবং পায়ে কালো কেটস। তার চুলগুলো এক সাইডে করা। কিছু চুল মাঝে মাঝে দমকা হাওয়ায় কপালের বামপাশে ভ্রুর একটু ওপরে পড়ছে। মিটমিটে আলোতে নীল চোখের উজ্জ্বলতা বেড়েছে দ্বিগুন। ঠিক কিভাবে বা কোন শব্দ বললে লোকটার সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে তা ঠিক জানা নেই মাধুর্যের। ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কাঁপতে থাকে তার। সে বিরাজ করছে অন্য দুনিয়ায়। অন্যপাশে কবিতা নিখুঁত ভাবে একবার অনুভব আর একবার মাধুর্যকে দেখতে থাকে। মাধুর্যের ভাবসাব দেখে হচ্ছে এই সেই মোহময় ব্যক্তি।
চোখটা ঝলমলিয়ে ওঠে কবিতার। তার সামনে যেন মস্তবড় একটা চকলেটের বক্স রাখা আছে। অনুভব চকলেটের থেকে কম কিসে? নিজেকে সামলিয়ে মাধুর্যকে হালকা ধাক্কা দেয় কবিতা। নিজের জগত থেকে বেরিয়ে এসে লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে মাধুর্য। বেহায়ায় মতো কি করে এতোক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল সে? আমতা আমতা করে বলে ওঠে….
–“ও…ওয়েলকাম স্যার।”
–“হোয়াট ডিড ইউ সে?”
ঘাড় বাঁকা করে কান এগিয়ে বলে অনুভব। মাধুর্য একটু ঘাবড়ে যায়। ও কি ভয়ে উল্টোপাল্টা কিছু বলছে? অনুভব এক পকেটে হাত দিয়ে অন্যহাতে চুটকি বাজিয়ে বলে….
–“আই এম নট ইউর স্যার মিস. মাধুর্য। আমার ড্যাড হবে তোমার স্যার। তুমি আমাকে আমার নাম ধরেই ডাকতে পারো।”
–“না….নাম ধরে?”
–“হ্যাঁ নাম ধরে। ভেবে দেখো। আমার নাম ধরে ডাকার চান্স আমি যাকে তাকে দিই না। তোমাকে দিয়েছি। আই থিংক তোমাকে সেটা সাদরে গ্রহণ করা উচিত।”
মাধুর্য এক হাতে ট্রে ধরে হঠাৎ গলায় হাত দেয়। তার তৃষ্ণা লাগতে শুরু করেছে হুট করেই। তারপর হাত সরিয়ে নিজের কানের পিঠে চুল গুঁজে দেয় সে। কানের দুলটা চিকচিক করে ওঠে। সেটা খেয়াল করে অনুভব। সে পকেট থেকে কিছু একটা বের করে এগিয়ে দেয় মাধুর্যের সামনে। অনুভবের হাতে মাধুর্যের ফোন আর পার্স। জিনিস দুটো হাতে নেয় মাধুর্য। তখনই হাজির হন রেনুকা। অনুভবের দিকে সন্দেহি দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাধুর্যকে বলে….
–“ইনি কে? কাকে ইনভাইট করেছিস?”
মাধুর্য মিনমিনিয়ে বলে…..
–“মামি মা, উনি আজ আমার ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। অফিসের এমডির ছেলে হন। আর মি. সিনহা, উনি আমার মামি মা। আমার সামিহা আপুর মা। উনার কাছেই থাকি আমি।”
রেনুকার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। উনি যেন প্রাণপণে এমন ছেলেই চান নিজের মেয়েদের জন্য। যথেষ্ট বড়লোক। আর কি চাই? তিনি মাধুর্যের দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে বলেন….
–“আমি পরিচয় হয়ে নিচ্ছি। তুই এখানে কি করছিস? বাড়িতে এতো লোকজন। কার কি লাগবে সেটা কি আমি দেখব? যা কার কি লাগবে দেখ।”
মাধুর্য মাথা নাড়িয়ে থমথমে মুখ খানা নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। সেই সঙ্গে কবিতাও এক দৌড়ে চলে যায় মাধুর্যের কাছে।
রেনুকা দাঁত বের করে হেসে অনুভবের দিকে তাকান। অনুভবও ভদ্রতার খাতিরে একটু হেসে অন্যদিকে তাকায়।
–“তা তোমার পুরো নাম কি বাবা?”
–“অনুভব সিনহা।”
অনুভবের উত্তরে আরো নড়েচড়ে প্রশ্ন করে ওঠেন তিনি।
–“তা তোমার বাবার নিশ্চয় অনেক বড় ব্যবসা। সামলাতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তুমি সাহায্য করো না?”
অনুভবের বিরক্ত লাগছে। ও বুঝে গেছে মহিলাটি সুবিধার নয়। এমনিতে এভাবে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালো লাগে না তার। তবুও মুখে হাসি টেনে বলে….
–“না হেল্প আগে করতাম না। এখানে ছিলাম না। তাই হেল্প করা হয়ে ওঠেনি। কাল থেকে আমিও অফিসে যাব।”
–“নিশ্চয় এতোদিন বিদেশ ছিলে? থাকবেই তো। থাকবেই তো। তোমরা বড়লোকের ছেলে। বিদেশেই পড়াশোনা তো করবে। বয়সও হয়েছে তোমার। বিয়ে টিয়ে করবার জন্য দেশে এসেছো নিশ্চয়? সত্যি বলতে এখানকার মেয়েরা কিন্তু অনেক ভালো। আমার মেয়ে দুটোকেই দেখো না। ওরা কত ভদ্র। বড় মেয়েরই তো জন্মদিন। ওর নম্রতা দেখলে তোমার চোখ জুড়িয়ে যাবেই যাবে।”
কথাটা বলে হেসে দেন রেনুকা। অনুভব এখান থেকে মুক্তি পাবার ছুতো খুঁজছে। রেনুকার কথা শেষ হবার পরে সে বিরবির করে বলে….
–“বিদেশে না পাতালে ছিলাম এতোদিন….।”
–“কিছু বললে?”
অনুভব নিজের ফোন বের করে ব্যস্ত হয়ে বলে….
–“না মানে হ্যাঁ আমার একটা ইম্পরট্যান্ট ফোন করার আছে। সো এক্সকিউজ মি।”
তাড়াহুড়ো করে চলে আসে অনুভব। হাফ ছেড়ে বাঁচে সে। এই মহিলার কথা শুনে কখন যে হুটহাট করে সে উল্টোপাল্টা কিছু বলে ফেলবে। তার ঠিক নেই। এমনিতেই রক্তের পিপাসা তার বাড়ছে। এক ফোঁটা রক্তের জন্য হাসফাস করছে সে। কোথায় পাবে সে এখানে রক্ত? একহাত দিয়ে মাথার চুল হালকা টেনে ধরে অনুভব।
অনুভব যেতেই রেনুকার কাছে আসে সামিহা। অনুভবকে দেখে জিজ্ঞেস করে….
–“উনি কে ছিল মা?”
–“ওইযে মাধুর্য নাকি অফিসে চাকরি পেয়েছে সেখানকার এমডির ছেলে। একবার যদি তোর সম্মন্ধ ওর সঙ্গে করিয়ে দিতে পারি তাহলে রানীর হালে থাকবি তুই।” (কিটকিটিয়ে হেসে)
বিব্রত হয় সামিহা। ঝাঁঝালো গলায় বলে….
–“মা, তুমি নিশ্চয় এসব বিয়ে নিয়ে উনাকে বিরক্ত করছিলে? তোমার স্বভাব কখনো বদলানো সম্ভব নয়। উনি তোমার এসব কারণেই এড়িয়ে চলে গেছেন। যাকে তাকে এসব নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকো। ধ্যাত…!”
সামিহা রেগেমেগে গিয়ে সোফায় বসে। মায়ের এসব আচরণ মোটেও ভালো লাগে না তার।
ক্লান্ত হয়ে এসে বড় জানালার কাছে দাঁড়ায় মাধুর্য। ওর হাতে এখনো সফট ড্রিংকস এর ট্রে। রেনুকা বারংবার তাকে ধমক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। একটু প্রশান্তি চায় সে। তার কাছে প্রশান্তি মানে বাইরের প্রকৃতির হাওয়া এবং এই পূর্ণিমার চাঁদের আলো। আবারও গলায় হাত দেয় মাধুর্য। অলরেডি দুই গ্লাস পানি খেয়ে ফেলেছে সে। তবুও পিপাসা কমবার নামগন্ধ নেই। চাঁদের দিকে চোখ রাখতেই মুগ্ধ হয়ে পড়ে সে। আস্তে আস্তে চোখের মনি থেকে কালো রঙটা মুছে সবুজ রঙে পরিণত হয়। তার লাল এবং সিল্কি চুল অবাধ্য হয়ে উড়তে থাকে। সম্মোহিত হয়ে পড়েছে মাধুর্য।
দূর থেকে অনুভব লক্ষ্য করে মাধুর্যকে। অন্ধকার অন্ধকার পরিবেশে কিভাবে একনাগাড়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে মেয়েটি। তাহলে ও কি সম্মোহিত হয়ে পড়েছে? অনুভবের ধারণা কি সঠিক? এই মাধুর্যই তার প্রেয়সী ভাবনা? পা চালিয়ে মাধুর্যের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় অনুভব। ততক্ষণে মাধুর্যের রেশ কেটে গেছে। এতো হইচই এ জ্ঞানে ফিরেছে সে। পাশে তাকাতেই চকিতে তাকায় সে।
–“আপনি?”
অনুভব চোখ বন্ধ করে রয়েছে। নাক টেনে কোনোকিছুর গন্ধ নিচ্ছে সে। অস্বস্তিতে পড়ে নিজের ওড়না ঠিকঠাক করে দাঁড়াতেই অনুভব চোখ বন্ধ করে বলে ওঠে….
–“সেম স্মেইল।”
মাধুর্য কিছুই বুঝতে পারে না। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকে অনুভবের দিকে। আস্তে আস্তে চোখ খোলে অনুভব। ও এই একই গন্ধ সেই সাদা ওড়নাতে পেয়েছে। যেটা পড়ে ছিল ভ্যাম্পায়ার রাজপ্রাসাদে। তাও ওর ঘরের বাইরে। আশা নিরাশাতে পরিণত হলেও মাধুর্যের প্রতি সন্দেহটা যায় না তার। কে এই সৌন্দর্যে ঘেরা মেয়ে? কি তার আসল পরিচয়?
অনুভবের ভাবনার ফোড়ন কেটে মাধুর্য অনুভবের দিকে ট্রে এগিয়ে দিয়ে বলে….
–“সফট ড্রিংকস নেবেন?”
অনুভব মাথা দুলিয়ে একটা ড্রিংকস হাতে তুলে নেয়। সেটা মাধুর্যের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে….
–“আমার নয়। তোমার ড্রিংকস এর প্রয়োজন।”
–“আমার প্রয়োজন হবে কেন?”
–“তোমার বারবার ঢোক গিলা সেসব বলে দিচ্ছে। তুমি তৃষ্ণার্ত। নাও খাও।”
মাধুর্য কথা না বাড়িয়ে গ্লাসে ঠোঁট লাগায়। তার চোখ এখনো অনুভবের দিকে। কয়েক ঢোক খেয়ে শেষ করে গ্লাসের ড্রিংকস। সেটা ট্রে তে রেখে একটু খানি হাসে মাধুর্য। সেই হাসি গিয়ে লাগে অনুভবের বুকের বাম পাশে। মূহুর্তেই যেন কয়েকটা হার্টবিট মিস করে ফেলে সে। একটু একটু করে তার হাত রাখে বুকের বামপাশের ওপর। মাধুর্য ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বুকের দিকে তাকিয়ে বলে…
–“কি হলো?”
–“নাথিং।”
–“বুকে ওভাবে হাত দিয়ে আছেন কেন?”
–“হার্ট অ্যাটাক হয়েছে মেবি।”
বিস্ফোরিত চোখে তাকায় মাধুর্য। এ কেমন কথাবার্তা? ঠোঁটজোড়া সরু করে বলে ওঠে….
–“কি বলছেন এসব।”
নিচের ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে অনুভব অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে বলেন….
–“তুমি বুঝবে না।”
.
রক্তের বড় পাত্র সামনে নিয়ে বসে আছেন প্রলয়। তার চোখেমুখে রাগের ছাপ। আজ পূর্ণিমার রাত। এই রাতে চাঁদের দিকে তাকালে আসল রুপ বেরিয়ে আসে ভ্যাম্পায়ারের। সেই বিষয় নিয়েই চিন্তিত উনি। জোরে বলে উঠলেন…..
–“রায়মা, তোমাকে বলেছিলাম অনুভবের ওপর নজর রাখতে। ও যেন কোথাও না যায়। তুমি কি করলে?”
–“আমি তো চেষ্টা করেছিলাম প্রলয় ভাই। এখন অনুভবকে তো আপনি চেনেন বলুন। ও কারো কথা মানে? আর অতিরিক্ত রাগলে যে কি হতে পারে সেটা আপনিও জানেন।”
চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান প্রলয়। মেজাজ বিগরে যাচ্ছে তার। নিজের ছেলের বিষয় নিয়ে এতো চিন্তিত আগে কখনো হন নি। ছেলেটা ফোনও ধরে না। নিজেকে সংযত রাখতে চেষ্টা করেন উনি। কারণ রাগ ভালো নয়। রাগ সংযত রাখাও ধর্মের কাজ।
–“হ্যাঁ হ্যাঁ জানি। ও রাগলে ভয়ানক হয়ে ওঠে। কারণ ওর সত্তা ও হারিয়ে ফেলছে। শয়তান সত্তা বিরাজ করছে ওর মধ্যে। এই শয়তান সত্তা কেন বিরাজ করছে তাও জানি। আমার ছেলেকে ওই ওয়ারওল্ফ এর বংশ শয়তান বানিয়ে দিয়েছিল একসময়। যার রেশ ও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। একমাত্র ভাবনা ছিল। যে ওর এই সত্তাকে বের করতে পারত। কিন্তু আমার ছেলে যে ওকেও মেরে ফেলল।”
–“ভাবনার তো আবারও ফিরে আসবার কথা বলা হয়েছে প্রলয় ভাই। আমরা তো ভাবনাকে খুঁজতে পারি। ও নিশ্চয় আশেপাশেই আছে। নয়ত আমাদের অনুভব অভিশাপ মুক্ত হতো না। ওকে যদি আবারও অনুভবের পাশে….”
কথাটা শেষ হতে দিলেন না প্রলয়। গম্ভীর মুখভঙ্গি এবং চোখে ভয় নিয়ে বললেন….
–“না। ভাবনা আমাদের জন্য যেমন ভালো। তেমনই ভয়ানক। তুমি ভুলে যাচ্ছো রায়মা। যতই হক ভাবনাকে মেরেছে অনুভব। ওর মন, ওর আত্না সব খুন করে দিয়েছে অনুভব। ও ফিরে এলে এবং সব মনে পড়লে আমার ছেলের থেকে যদি প্রতিশোধ নিতে চায়? তখন আমি কি করব? অনুভব আমার ছেলে। আমি ওর কোনো ক্ষতি হতে দিতে পারি না।
–“তবে কি করবে তুমি ভাই?”
প্রনয়ের আগ্রহী মন। ওর মাথাতেও কিছু আসছে না। একদিকে যেমন প্রলয়ের কথা ঠিক। বংশধর হিসেবে অনুভবই এখনো জীবিত। প্রনয়ের দুটো ছেলে ছিল। যাদের মৃত্যু হয়েছে ওয়ারওল্ফদের হাতে। এই শোক এখনো প্রনয় এবং রায়মার মাঝে রয়ে গিয়েছে। প্রলয় চিন্তিত হয়ে পড়েন। যেকোনো বিষয় নাকি ঠান্ডা মাথায় ভাবা উচিত। কিন্তু এই মূহুর্তে উনার মাথা কিছুতেই ঠান্ডা হচ্ছে না। অজস্র ভয় দখল করে নিচ্ছে উনার মস্তিষ্ক। দিশেহারা হয়ে পড়েন উনি।
———————–
গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাধুর্য। তার দিকে অগ্নিঝরা দৃষ্টিপাত করছেন রেনুকা। পানিতে ভরে ওঠে মাধুর্যের ভয়ানক সুন্দর বড় আঁখি জোড়া। অপমান এবং অসম্মানে কাঁপতে শুরু করে সেখানেই। রেনুকা ঘরভর্তি লোকের সামনে থাপ্পড় মেরেছেন মাধুর্যকে। তার অপরাধ সে ভুল করে বেখেয়ালি হয়ে খাবার ফেলে দিয়েছিল। খানিকটা খাবার রেনুকার শাড়িতে লেগে গিয়েছে। এতেই অগ্নিশর্মা হয়ে গিয়েছেন উনি। সামিহা দ্রুত এসে মাধুর্যের পাশে দাঁড়ায়। মাধুর্যকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হতভম্ব সুরে বলে ওঠে….
–“মা, তুমি এটা কি করলে? ওকে থাপ্পড় মারলে কেন?”
–“হ্যাঁ মা। এতোদিন তুমি মাধুর্যের সঙ্গে যা যা ব্যবহার করেছো আমরা মেনে নিয়েছি। মাধুর্যও মেনে নিয়েছে। সবকিছুর একটা সীমা থাকে মা।”
বিভোর থমথমে গলায় কথাটা বলতেই আগুনের মতোই দপ করে জ্বলে ওঠেন রেনুকা।
–“আচ্ছা? তোরা আমাকে সীমা শিখাবি? মাধুর্য ভুল করেছে। আমি শাসন করেছি। ও বেয়াদবি করেছে। দেখছিস না? আমার শাড়ির কি অবস্থা করেছে? আমার মতো মনে হয় ও ইচ্ছে করে এসব করেছে। যাতে সামিহার জন্মদিন ঠিকঠাক করে না হয়।”
ছলছল চোখে তাকায় মাধুর্য। মা-বাবা না থাকলে বোধহয় এমনই কষ্ট অপমান সহ্য করতে হয়? বিভোরও দমে গেছে। মায়ের কথার প্রতিত্তোরে কি জবাব দেবে জানা নেই তার। মুখ ফিরিয়ে নেয় সে। মাধুর্য দুর্বল গলায় বলার চেষ্টা করে….
–“মামি মা। বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে এম….”
কথাটা শেষ না হতেই গর্জে ওঠেন রেনুকা। ধেয়ে আসে মাধুর্যের দিকে। তৎক্ষনাৎ কারো ভয়ানক চিৎকারে স্তব্ধ হয়ে যায় আশপাশটা।
–“চুপ করুন। ইনাফ ইজ ইনাফ।”
পেছন থেকে অনুভব নিজের হিংস্র চাহনি নিয়ে সামনে আসে। তার চাহনির দিকে তাকানোর সাহস নেই কারোর। থতমত খেয়ে যান রেনুকা।
ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায় মাধুর্য। চোখের পলক ফেলতেই গাল বেয়ে নোনাপানি গড়িয়ে পড়ে। থুঁতনিতে এসে থেমে পানির ফোঁটা নিচে পড়তেই নিজের হাতে পানির ফোঁটা নেয় অনুভব। তা দেখে মাধুর্য গোলগাল দৃষ্টিতে তাকায়।
–“তোমার চোখের পানি অনেক দামি মাধুর্য। এই পানি জিনিস যার তার জন্য মাটিতে পড়তে দিও না।”
অনুভবের কথায় কেঁপে ওঠে মাধুর্য। লোকটা নিজের হাতের মুঠোয় বন্দি করে মাধুর্যের কোমল হাত। ওর ভেতরটা জ্বলছে শুধু মাধুর্যের অপমানের কারণে। শক্ত গলায় রেনুকার উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন…..
–“আসার পর থেকে দেখছি এই মেয়েটাকে একা পেয়ে কতটা পরিশ্রম করিয়ে যাচ্ছেন। কারণ কি তাও জানি। ও আপনার নিজের মেয়ে নয়। ফ্রীতে ফাইফরমাশ খাটার লোক পেয়েছিলেন না? কিন্তু আফসোস। আজ থেকে আর এই মেয়েটাকে ফাইফরমাশ খাটাতে পারবেন না। আমি দেব না।”
মাধুর্যের হাত ধরে দ্রুত বেরিয়ে আসে অনুভব।
চলবে……
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।