বিপরীতে_হিত #পর্ব-১০

0
182

#বিপরীতে_হিত
#পর্ব-১০

সুমনা আজকাল মন বেশ ফুরফুরে থাকে। আদি বদটাকে বেশ ভালো শায়েস্তা করা যাচ্ছে, এটা ভাবতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। পড়তে বসে আনমনে শিস বাজাচ্ছিলো সুমনা। উফফ! আদির মুখটা সেদিন দেখার মতো হয়েছিল। সবকিছুতে শুধু নিজেকে জাহির করার চেষ্টা। নোটটা যখন ফেরত দিলো তখন আদির মুখটা দেখতে সেইরকম লাগছিল। আদির মুখটা মনে পড়তেই সুমনা মন ভরে হাসলো কিছুক্ষন। মনে মনে বিরবির করে, বেশ হয়েছে বেটা বদ! সবসময় বড়াই করা খালি। আমার নোট! নোট এখন কলিজার মধ্যে পুরে রেখে দে না হয় ভেজে খা। তোর নোট নিয়ে আমি পড়বো? এই সুমনা পড়বে? নো ওয়ে!

সুমনা বসে বসে ফেসবুক ঘাটছিলো তখনই আদির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এলো। সুমনা কিছু না ভেবেই আদির রিকোয়েস্ট ডিলিট করে দিলো। মনে মনে বললো-
“শালা বদ, তোর সাথে আমার কোনো বন্ধুত্ব নেই। না ফেসবুকে না বাস্তবে।”
এদিকে মামুনও তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছে রেখেছে বেশ কিছুদিন হলো। সুমনা খুশি মনে সেটা একসেপ্ট করলো। ও জানে, আদি আজকাল মামুনকে সহ্য করতে পারছে না। সুমনা মামুনের সাথে কথা বলে, আড্ডা দেয় তাই মামুন এখন আদির বড় শত্রু। আদিকে ঘায়েল করতে মামুনের সাথে ভালো ব্যবহার ছাড়া আর কোনো বুদ্ধি নেই। সুমনা বসে বসে দাঁত কেলিয়ে শয়তানী হাসি দিচ্ছে।

এদিকে আদি রীতিমতো রাগে কাঁপছে। কিছুক্ষণ আগেই সুমনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। শয়তান মেয়ে দেখার সাথে সাথে সেটা ডিলিট দিয়েছে। কতবড় সাহস বদমেয়ের যে আদির রিকোয়েস্ট ডিলিট করে! ভার্সিটির মেয়েরা সব আদির জন্য পাগল, আদি একটু কথা বললে মেয়েরা নিজেদের কে ধন্য মনে করে! আর সেই আদিকে এই মেয়ে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না? মেয়েটা নিজেকে ভাবছেটা কি? খুব বেশি ভাব নেওয়া হচ্ছে, না? আমাকে দেখিয়ে মামুনের সাথে ঢং না? আমি সেই কবে থেকে তোকে একটু সরি বলতে চাইছি আর তুই ভাব ধরছিস? সহজ ভাবে তোর সাথে মিল করতে চাইলাম আর তুই আমার সাথে টম এন্ড জেরির খেলা খেলছিস? বেশ তবে আজ থেকে আমিও খেলায় পার্টিসিপেট করবো। এতোদিন ফাঁকা ফাঁকা খেলেছিস এখন টমকে পাবি। এই টম টিভির টমের মতো এতো বোকা না। তোকে নাকানিচুবানি খাইয়ে ছাড়বে দেখিস!

*******

দিনদুয়েক পর সুমনা আর মামুন ক্লাস শেষে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। এইসময় আদি এসে দুম করে সুমনার পাশে বসে গেলো-
“কি গল্প হচ্ছে রে? তোদের দু’জনকে দূর থেকে দেখতে বেশ লাগছে। একেবারে মেড ফর ইচ আদার জোড়া মনেহচ্ছিলো। ”
একথা শুনে মামুনের দাঁতের পাটি বেড়িয়ে গেলো আর সুমনা দাঁত কিরমির করে একবার মামুনের দিকে আর একবার আদির দিকে তাকালো-
“মানে কি এসব আজেবাজে কথা বলার? আমি এখানে বসে প্রেম করছি নাকি?”
“প্রেম করছিস না?”
আদি যেন আকাশ থেকে পরে।
“মোটেই না! আমি তো মামুন ভাইয়ার সাথে পড়ালেখা নিয়ে ডিসকাস করছিলাম। তাই না মামুন ভাই?”
সুমনা ঢং করে নাকি নাকি সুরে বলে। মামুন বের হওয়া দাঁত বন্ধ করে মিনমিন করলো-
“আবার ভাই বলছো কেন? আমরা তো সেম এজ তাইনা? নাম ধরে বললেই তো হয়?”
“ইশশশ! তাই কি বলা যায় ভাইয়া? হাজার হোক আপনারা আমার সিনিয়র। আমি তো ভাইয়াই বলবো। কি ঠিক বলেছি না আদি ভাইয়া?”
আদি মনে মনে রেগে থাকলেও মুখে মেকি হাসি ধরে রাখলো-
“শোন, তোরা যেভাবে মগ্ন হয়ে গল্প করছিস তাতে সবাই ভাববে তোরা প্রেম করছিস সেটা তোরা স্বীকার করিস বা না করিস তাতে কিছু আসে যায় না। আমি তোদের এই ব্যাপারটা সেলিবেট করতে একটা গিফট এনেছি তোদের জন্য।”
আদির উল্টো পাল্টা কথা শুনে এমনিতেই সুমনার মেজাজ চরকে গেছে তার উপর গিফট শুনেই সুমনা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো আদির দিকে। এই ছেলে নির্ঘাত উল্টো পাল্টা কিছু দেবে। আর বোকা মামুন আদির কথা শুনে যেন খুশিতে বাকবাকুম করতে লাগলো-
“কি এনেছিস দোস্ত? তাড়াতাড়ি দেখা তো?”
আদি একটা ছোট প্যাকেট বাড়িয়ে দিলো সুমনার দিকে-
“নে। তোদের দুজনার বন্ধুত্বের খাতিরে যেহেতু অস্বীকার করলি যে তোদের মাঝে কোনো প্রেম নেই।”
সুমনা হাত না বাড়িয়ে টেরা চোখে তাকিয়ে থাকলো।
“নে না?”
“আরে মোনা নাও না? আদি এতো শখ করে এনেছে আমাদের জন্য।”
“না, আমি নেবো না। আপনি নিন।”
“আদি তুই কিছু মনে করিস না। আমাকে দে, সুমনা লজ্জা পাচ্ছে তোর হাত থেকে গিফট নিতে।”
মামুন হাত বাড়িয়ে প্যাকেট টা নিলো। সুমনা ভেংচি কেটে মুখ ঘুরালো। আদি উঠে দাড়ালো-
” তোরা গিফট এনজয় কর তাহলে। আমি যাই, কাবাবে আর হাড্ডি না হই।”
আদি ওদের দিকে পিছু ফিরেই মুচকি মুচকি হাসছিলো। প্যাকেটটা খোলো বাছাধন তারপর বুঝবে কি দিয়েছি তোমাদের?
মামুন খুব খুশি হয়ে প্যাকেট খুলছিলো। সুমনা মনে মনে আদির পিন্ডি চটকাচ্ছিলো। জানে এই ছেলে প্যাকেটে উল্টো পাল্টা কিছু দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই আদি খুব শান্ত হয়ে ছিলো। সুমনার পিছু নেয়নি, ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেনি। যতবার দেখা হয়েছে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে থেকেছে। তখনই সুমনার সন্দেহ হয়েছিল, এই ছেলে ভেতরে ভেতরে খিচুড়ি পাকাচ্ছে। সুমনা মামুনকে অনুনয় করে-
“মামুন ভাই, গিফট না খুললে হয় না?”
“সেকি, কেন? আদি কি গিফট দিলো দেখবো না?”
মামুন অবাক হয়ে বলে।
“আপনি গিফট বাসায় নিয়ে যান। আমার দরকার নাই গিফটের।”
“এ তুমি কেমন কথা বললে সুমনা? দু’জনকে গিফট দিয়েছে, আমি কেন একা একা বাসায় নিয়ে যাবো? বসো, প্যাকেটটা খুলছি।”
মামুন শেষ গিট খুলে প্যাকেট ওপেন করতেই ছিটকে উঠে দাড়ালো-
“ও মাগো!”
প্যাকেটের সব টিকটিকি আর তেলাপোকা পড়লো সুমনার গায়ে। সুমনা ‘ আ আ আ য়য়য়’ চিৎকার দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। জীবনে সে একটা জিনিসই ভয় পায় সেটা হলো তেলাপোকা। সেই তেলাপোকাই চার পাঁচটা তার গায়ে লেপ্টে রয়েছে। সুমনা চোখ বুজে চিৎকার করছে আর কাপড় ঝাড়ছে। মামুনের হাত পা কাঁপছে। সে নিজেই ভয়ে একসা, সুমনাকে সাহায্য করা দূরে থাক নিজেকে সামাল দিতেই ব্যস্ত সে। এদিকে আদি দূর থেকে এসব তামাশা দেখছিল আর হা হা করে দম ফাটানো হাসি দিচ্ছিলো। সুমনা আর মামুনের অবস্থা দেখার মতো। দুজনাই তিরিং বিরিং করে লাফাচ্ছ। আদি উচ্চস্বরে বললো-
“কেমন লাগছে রে সুমনা? এবার বোঝ ঠেলা। আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়া, হুহহ!”

চলবে—–
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here