লীলাবালি🌺 #পর্ব_৬২ আফনান লারা

0
460

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৬২
আফনান লারা
.
‘আমি উঠে চলে যাব?ছাদে?শেয়ালের মাঝে?’

কুসুম এবার কান্না থামিয়েছে সাথে সাথে।এরপর অভিমানী সুরে বললো,’চলুন খাবেন।আর না না করবেন না’

কথাটা বলেই সে নেমে চলে গেলো বাহিরে। অর্ণব ওর চলে যাওয়া দেখছিল মশারির ভেতর বসে বসে।
‘মেয়েটা একেবারে অন্যরকম।মাঝে মাঝে এমন ব্যবহার করে তার ব্যবহারের কারণ জানা মুশকিল হয়ে যায়।কখনও কারণ খুঁজে পাই না আমি। সে আসলে কি চায়?’

কুুসুমের ফের ডাকে বিছানা ছাড়তে হলো তাকে।সে খাবার সাজিয়ে বসে আছে।অর্ণব নিজের হাত ধুয়ে এসে পাতে হাত রেখে বললো,’চলো আমি খাইয়ে দিই তোমায়’

‘আমার তো খিধে নেই।আপনাকে খাওয়াতে এত কিছু করলাম এই এত রাতে’

অর্ণব লোকমা সাজাতে সাজাতে বলেছে কথা যেন না বাড়ায়।নাহলে আগের ধমক কাজে লাগাবে।কুসুম যেন ভয়ই পেলোনা।টেবিল ছেড়ে সোজা চলে গেছে সামনের বারান্দাটাতে।
অর্ণবের এখন খুব রাগ হলো।এতটাই রাগ হলো যে সে খাবার রেখে চলে গেছে ঘুমাতে।কুসুম আড়ালে থেকে সব দেখছিল।ওর এমন রাগ সে আশা করেনি।ভেবেছে উপায় না পেয়ে খাবে কিন্তু এ তো দেখি পরিস্থিতি বুঝে রাগ দেখায়!

প্লেটটা নিয়ে এবার সে রুম এসে আলো জ্বালালো।অর্ণব মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়েছে।কাছে এসে সে বললো,’আমার হাতে খাবেন?’

অর্ণব কথার উত্তর দিচ্ছেনা।কুসুম একটু এগিয়ে খাটের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে বললো,’মাফ করে দিন।আচ্ছা আমিও খাব আপনার সাথে’

কথাটা শুনেই অর্ণব এক লাফে উঠে বসে পড়েছে।মুখে হাসি ফুটিয়ে চেয়ে আছে কুসুমের দিকে।কুসুম হার মেনে ওর পাশে বসে লোকমা তুলে দিলো।
অর্ণবের ধমকে সে নিজেও খেলো ওর সাথে।
—–
পরেরদিন ভোরে কারোর ওঠা হয়নি।ভোরের বিন্দু সমেত যেসময়ে উধাও হয় সেসময়টা হলো সকাল আটটা।এ সময়ে কেউ বলবেনা এখন ভোর।
তো ঐ সময়টাতে কুসুমের চোখ খুলেছে।দুচোখে মাথার উপরের ছাদের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর বিছানায় হাত রেখে উঠলো সে।বারান্দার দিকে চেয়ে রোদের কড়া রঙ দেখে সে বুঝতে পারলো অনেক বেলা হয়ে গেছে।তাড়াহুড়ো করে উঠতে যেতে খেয়াল করলো অর্ণব ও ওঠেনি।উপুড় হয়ে গভীর নিদ্রায় সে।
ওকে আর জাগালো না কুসুম।আস্তে করে নেমে বের হয়ে গেছে রুম থেকে।কাছাকাছি আসার পর বুঝতে পারলো দরজায় কেউ ধাক্কাচ্ছে অনেকক্ষণ যাবত।কলিংবেলে কেন চাপলো না সেটা ভাবতে ভাবতে কুসুম দরজা খুলে দিয়েছে।

‘সকাল হলো বুঝি তোমাদের?কলিংবেলটাক নষ্ট কইরা রাখছে!’

কুসুম মুখ মুছে শাড়ীর আঁচল ধরে বললো,’জানিনা আজ এত বেলা করে কেন ঘুমালাম।কোনো দরকার বুঝি জাহান?’

‘মিজুয়ানা নানি ডাকছে আপনারে।জলদি আসেন।আজ বাড়িত অনেক মেহমান আইবো’

জাহান ছুটে চলে গেলো।তারপর কি ভেবে অর্ধেক সিড়ি অবধি গিয়ে থেমে পেছনে তাকিয়ে বললো,’আপনারে কইছে নাস্তা এখানে এসে করে যাইতে।ভাইয়েরেও কইয়েন’

কুসুম মাথা নাড়িয়ে দরজা লাগিয়েছে।অর্ণবের সাড়া নেই।ওকে জাগিয়ে তুলতে ইচ্ছে আসলোনা বলে কুসুম নিজের মত করে তৈরি হয়ে মৃদুলদের বাসায় গেলো।সেখানে মিজুয়ানা আন্টি জানালেন আজ মম আসবে।বিকেলে নাকি ওকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসার কথা।খাবারের বিশাল আয়োজন করেছেন সুলতান শাহ।ওদের দুজনের দাওয়াত।সকালে একা একা নাস্তা করে সবাই।তাই ভাবলেন আজ ওদের সঙ্গে করবেন।
কুুসুম নিজে উনাদের সাথে খেয়ে অর্ণবের জন্য আলাদা করে নিয়ে এসেছে উপরে।সে তে এখনও ঘুমায়।
তাই খাবার ঢেকে রেখে বইখাতা নিয়ে কুসুম পড়তে বসেছে।
অর্ণব মাথা তুলে হাতের ঘড়িটা বালিশের তলা থেকে বের করে টাইমটা দেখার পর তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে ধপাস করে বিছানা থেকে নেচে পড়ে গেছে।আওয়াজ পেয়ে কুসুম ছুটে আসলো ওখানে।এসে দেখলো অর্ণব কোমড়ে হাত রেখে বিছানাকে বকাবকি করতেছে।

‘পড়লেন কিভাবে?’

‘এত সময় হলো তুমি আমায় উঠালেনা কেন?’

‘আপনি তো কাজের জন্য ঘুমাতে পারেননা তাই আর জাগাইনি।হাত মুখ ধুয়ে আসুন।মৃদুল ভাইয়ার মা খাবার দিয়েছেন আপনার জন্য’

‘ওহ!তুমি খেয়েছো?’

‘হুম’

‘জলদি তৈরি হয়ে নাও তাহলে।তোমাকে আজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে’

‘কেন?’

‘পরে জানাবো।এখন আর সময় নেই।এমনিতেও অনেক দেরি হয়ে গেছে।

কথা মতন তৈরি হয়ে হাসপাতালেও চলে এসেছে তারা দুজন।কুসুম এখন অবধি জানেনা তার আসলে কি হয়েছে।এসব ভাববার সময়কালীন হঠাৎ একটা নার্স এসে ওকে ধরে সিটে বসিয়ে দিলো।সে জিজ্ঞেস করেছে সুই ফোটাবে কিনা।নার্স যখন বললো ফুটাবে তখন সে নার্সকে রেখে এক ছুটে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়া ধরতেই অর্ণবের সাথে ধাক্কা খেয়ে গেলো।অর্ণব ওর হাত ধরে বললো ‘সুইয়ে কোনো ব্যাথা নেই।পিঁপড়ার কামড়ের মতন।চলো’

‘না আমি জানি।ঐ ব্যাথা মোটেও পিঁপড়া কামড়ানোর মতন নয়।আরও বেশি ব্যাথা’

‘আরেহ একই রকম।’

অর্ণব কুসুমকে জোর করে সিটে এনে বসিয়ে নার্সকে ইশারা করে কুসুমের পা ও তুলে দিলো সিটের উপর।তারপর ওকে শুইয়ে দিয়ে বললো,’তোমার ছোট্ট একটা অসুখ হয়েছে।শিগগির ভাল হয়ে যাবে।এই
সুই না ফোটালে ভাল হবেনা।’

‘ছোট্ট অসুখে আবার সুই লাগে নাকি?’

অর্ণব হঠাৎ হাত ছেড়ে দিয়েছে ওর।তারপর হেসে বললো,’সুই ফোটানো শেষ।চুপচাপ শুয়ে থাকো এবার’

‘ভাইয়া ইনজেকশানটা দেওয়া হয়েছে ব্যাথা কমানোর জন্য।হাতে ক্যানোলা লাগাতে হবে’

অর্ণব কপাল কুঁচকে তাকালো নার্সের দিকে।সুই ফুটিয়েছে কত কষ্ট করে,এখন আবার ক্যানোলা!’

কুসুম অর্ণবের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।ক্যানোলো কি জিনিস সে জানেনা তাই চুপ করে দেখছিল নার্সকে আর অর্ণবকে একসাথে।
চিৎকার চেঁচামেচির কোলাহলে তার হাতে ক্যানোলা লাগানোর পর্ব শেষ হলো।বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে সে এখন।অর্ণব ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারলো আজকের পর থেকে টাকার উপর টাকা খরচ হবে সব কিছুতেই।মোটা অংকের টাকা হাতে রাখতে পরামর্শ দিলেন তিনি।অর্ণবের কাছে সেটা চিন্তার বিষয় ছিলনা।তার কাছে একমাত্র চিন্তার হলো কুসুমকে সুস্থ জীবন উপহার দেওয়া।
যে মেয়েটা সুইয়ে এত ভয় পায় সে তো জানেওনা আজকের পর থেকে তাকে প্রতিদিন এই সুইয়ের খোঁচা খেতে হবে,আরও কত কষ্ট!
এই বয়সে কেন তার এমন একটা রোগ হতে গেলো!!
যাই হোক না কেন!শেষে যেন তাকে সুস্থ দেখি।

কুসুম কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে একটা সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।অর্ণব ছোটাছুটিতে মহাব্যস্ত।মৃদুল আর তমাল আজ কুসুমকে দেখতে এসেছিল
মৃদুলকে দেখে অর্ণব কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না।
তার মুখের হাল এমন হলো ঠিক অনামিকা ধোকা দেওয়ার পর যেমন হয়েছিল তেমন।মনমরা।যেন এখনই ঢলে পড়বে।
অর্ণব হাসপাতালের কাজ ফেলে ওকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে বললো,’কিরে?মদ খেয়েছিস বুঝি?’

‘নাহ’

তমাল হাত ভাঁজ করে গাল ফুলিয়ে বললো,’খেয়েছে জিজ্ঞেস করতেছো ভাইয়া?অনেক খেয়েছে।পুরা বার খালি’

‘কিন্তু কেন?অনামিকা আবার কি করেছে?’

‘ভাইয়া এবার অন্য গ্রহের জায়গা পরিবর্তনে মৃদুল ভাইয়ার এই হাল।সেই গ্রহের নাম জানো??
জুপিটারের মতন।জ তে জুপিটার,জ তে জুথি।’

চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/676436250036874/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here