লীলাবালি🌺 #পর্ব_৬৬ আফনান লারা .

0
440

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৬৬
আফনান লারা
.
খান্দানি বংশের ছেলে জিসান রহমান দেখতে এসেছে মমকে।শুধু দেখতে আসবে বলে এত্ত এত্ত ডালা সাথে করে নিয়ে এসেছে তারা।ছেলে,ছেলের মা- বাবা আর দাদি,ফুফু এসেছেন।কুসুমকে মিজুয়ানা আন্টি দায়িত্ব দিয়ে গেলেন মমকে শাড়ীটা সুন্দর করে পরিয়ে দিতে।কুসুম পড়লো মহা বিপদে।
সে তো নিজেই নিজের শাড়ীটুকু পরতে জানেনা,কোনোমতে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে নিজেরটা পরে।মমকে শাড়ী পরাতে গিয়ে ভুল হলে মান ইজ্জত আর থাকবেনা কারোর।সাহস করে সে মমকে বলে দিলো সে শাড়ী পরাতে জানেনা।মম ওর কথা শুনে হপসে বললো,’আমি নিজের শাড়ী নিজেই পরতে জানি।মা তারপরেও তোমায় দায়িত্ব দিয়ে গেলো।ভেবোনা,আমি পরে ফেলছি।তুমি বরং বসে বসে দেখো’

কুসুম মাথা নাড়িয়ে বিছানায় বসে থাকলো।মমর রুমের বারান্দা দিয়ে বাগানের জবা ফুল গাছটা একদম কাছ থেকে দেখা যায়।কুুসুম উঠে বারান্দায় এসে গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে জবা গাছটা দেখছিল অন্ধকারের মাঝে।অবশ্য বাগানে একটা আলো জ্বলছিল গাছের ঢালে ঝুলানো।
সেটা থেকে চাঁদের আলোর মতন আলো আসছে।
হঠাৎ গ্রিলের সামনে অর্ণব এসে দাঁড়াতেই কুসুম ভয় পেয়ে দূরে সরতে গেলো তখনই সে কুসুমের হাত ধরে বললো,’আরে আমি আমি’

‘আপনি এখানে কি করেন?’

‘দেখতে এলাম তুমি সত্যি মমকে সাজাচ্ছিলা নাকি আমার সাথে রাগ করে বসে আছো,আমার থেকে দূরে থাকতে হয়ত এখানে আসলে।সেসব দেখতে এলাম’

‘হাত ছাড়ুন।মম আপু দেখলে কি বলবে?’

“অন্ধকারে ও তোমাকে দেখলেও আমার মতন কালো মানুষকে দেখবেনা।শোনো!যদি পিঠা খেতে দেয় আমার জন্য দুইটা রেখে দিও।অনেকদিন ধরে পিঠা খেতে ইচ্ছে হয়,তুমি তো বানাতে পারোনা,আর আমিও পারিনা।তাছাড়া পিঠা বানাতে কতশত উপকরণ লাগে,আসবাব লাগে।’

কুসুম তখন নিজের আঁচলের গিট্টু খুলে তিনটে শুকনো পিঠা বাড়িয়ে দিলো ওর দিকে।
অর্ণব চমকে ছোঁ মেরে পিঠাগুলো হাতে নিয়ে বললো,’আমার জন্য রেখেছো?’

কুসুম মাথা নাড়ালো।মুখে পিঠা দিয়ে খেতে খেতে চলে গেছে অর্ণব।কুসুম আবারও মমর কাছে এসে বসে আছে।সে খুব সাদামাটা সেজে পাত্র পক্ষের সামনে গেছে।
এখানে কুসুমের একটুও ভাল লাগছিলনা।ইচ্ছে করে বাসায় ফিরে যেতে।অর্ণবকে ছাড়া থাকতে নিজেকে কেমন একলা একলা মনে হয়।বেশি করে একাকিনী লাগে।
দরজার ফাঁক দিয়ে একবার তাকিয়ে খেয়াল করলো সবাই গল্পগুজবে মেতে আছে।
তাই মাথায় বড় করে ঘোমটা টেনে সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলে সে।অর্ণব বাগানে হেঁটে হেঁটে পিঠা খাচ্ছিল।কয়েকটা সিঁড়ি উঠে আবারও নেমে গেলো কুসুম।বাগানে এসে অর্ণবের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।অর্ণব এখনও ওকে খেয়াল করেনি।গাপুসগুপুস করে পিঠা খেতে ব্যস্ত।
অর্ণবের হাতের ঘড়িটা লাইটের আলোয় ঝিলিক মারছিল বারবার।কুসুম এক চাহনিতে সেই ঝলকানোটা দেখছে চুপ করে।
অর্ণব মুখ মুছে পেছনে ফিরে ওকে দেখে জিজ্ঞেস করলো ও এখানে কেন।

‘ভাল লাগেনা ওখানে।চলেন বাসায় ফিরি’

‘নাহ।এখানে ভাল লাগছে।বসো চেয়ারে।’

কুসুম তাই চেয়ারে বসেছে।অর্ণব ও বসলো পাশে।দুজনে চুপ করে বাগানের নিচে বেড়ে ওঠা ঘন ঘাসের উপর পা রেখে নিরবতা পালন করছে।
কুসুম হাতে ক্যানোলার ক্ষতটা চেপে ধরে দেখলো ব্যাথা হয় কিনা তারপর অর্ণবের দিকে ফিরে বললো,’ডাক্তার বলেছিলেননা সারাদিনের ঔষুধ ধরেনি?’

‘হুম’

‘তার মানে আমার দিন গুনতে হয়’

‘তোমার সাথে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাইনা’

কুসুম মুচকি হেসে গালে হাত রেখে বললো,’আমি যদি মরে যাই মিননয়ি আপুকে বিয়ে করে নিয়েন।উনি অনেক সুন্দর আর ভাল মনের মানুষ ‘

কথাটা শুনার জন্য অর্ণব প্রস্তুত ছিলনা।এখন হা করে কুসুমের দিকে তাকিয়ে আছে শুধু।কুসুম আবার বললো,”জানেন আমি কত গুলো বর্ণ শিখে ফেলেছি।আস্তে আস্তে চিঠিও লেখা শিখে যাব।আমার লেখা প্রথম চিঠিটা হবে আপনার জন্য।আমার লেখাপড়া শিখিয়ে দিচ্ছেন তো আপনি।আপনি যখন চিঠিটা পড়বেন তখন আপনার মুখের ভাবটা দেখার খুব ইচ্ছে আমার।জানিনা পূরণ হবে কিনা তবে আমি দেখতে চাই।আমি কখনও চাইনি আমার মতন মূর্খ একটা মেয়েকে আপনি বিয়ে করেন।আপনিও হয়ত চাননি।
তবে আমি চেয়েছি আপনার স্ত্রী হয়ে থাকতে।তবে সেটা পৃথিবীর সবাইকে না জানিয়ে,আপনাকে না জানিয়ে।
কিন্তু তা আর হইলো কৈ!
একটা অশিক্ষিত মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য হলেন।আমার নিজেকে সব চাইতে বড় অপরাধী মনে হয় জানেন!
আমার দোষে আপনাকে কত কষ্ট করতে হচ্ছে। তবে আপনার কপালে নিশ্চয় সুখ আছে।আমাকে দিয়ে তো সুখ পাবেননা।আপনার সুখ অন্য কারোতে নিহিত।
আমি দোয়া করবো আপনি যেন সুখী হোন।আমার সাথে নাহোক!যার সাথেই হোক তাতেই আমি অনেক খুশি।অন্তত আপনার সুখ হবে এটা ভেবেই আমি সুখী।
মাঝে মাঝে মনে হয় এখন চোখ বুজলে আর কোনোদিন খুলবেনা।কিন্তু আমার ভুল ধারণা গুলো সকাল হলে ভেঙ্গে যায়।তবে আমার যে রোগ!একদিন হয়ত এই ভুল ধারণা বাস্তবিক রুপ নেবে।’

কথা শেষ করে কুসুম মাথা তুলে দেখলো অর্ণব নেই।দূরে জবা ফুল গাছটাকে গভীর মনযোগ দিয়ে দেখছে।কুুসুম চেয়ার থেকে উঠে ওর পাশে এসে দাঁড়াতেই সে বললো,’জবা ফুল তোমার অনেক পছন্দ?’

“হুম’

‘ওহ আচ্ছা ভাল।মৃন্ময়ী কে সেটা জানো?আমার কে হয় সেটা জানো?বউ তো তুমি’

কুসুম অর্ণবের কথায় হাসলো।হাসি থামিয়ে বললো,’বউ হলেই কি স্বামীর সব কিছু হওয়া যায়?
যায় না।একজন নারী একজন পুরুষের সবকিছু তখন হয় যখন ঐ পুরুষ তাকে পাগলের মতন ভালবাসে।এ ক্ষেত্রে আপনি আমায় পাগল তো দূর থাক স্বাভাবিক মানুষের মতন করেও ভালবাসেননা।আমি আপনার কিছু হইনা, নামে স্ত্রী এই আর কি’

‘দুনিয়ার সব কিছু মোহে ভর্তি।ভালবাসা একটা আলাদা শব্দ আর মোহ আলাদা শব্দ।অথচ আমরা মোহ আর ভালবাসার তফাৎ ভুলে দুটোকে এক ভাবি’

“মোহ হোক,অথবা ভালবাসা।যার ছোঁয়ায় শরীরের বিচরণ ঘটে সেই তো ভালবাসার মানুষ।’

অর্ণব কুসুমের দিকে ফিরে বললো,’তোমাকে এসব কে শিখিয়েছে সত্যি করে বলবে?’

‘লীলাবালি শিখিয়েছে।’

‘সে তো তুমিই।তোমায় কে শেখালো?’

“লীলাবালিকে কুসুম শিখিয়েছে।তারপর লীলাবালি কুুসুমকে শিখিয়েছে।এগুলা আবার শেখানোর কি আছে?বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনা আপনি মাথায় এসে যায়’

‘কেউ মাায় না ঢোকালে আসার কথানা।তো আমি তোমায় ছুঁইনি তাহলে কি করে জানলে তোমায় ভালবাসিনা?’

কুসুম শাড়ীর আঁচল টেনে কাঁধ ঢেকে বাসার ভেতর যেতে যেতে বললো,’ঐ তো!!ভালবাসেননা বলে ছুঁয়ে দেখেননি।’

অর্ণব বুঝতে পেরেছে কুুসুম কোনো ভাবে ওর আর মৃন্ময়ীর কথা জেনেছে।আর সেই কারণে মুখটা এমন ভার করে রেখেছে ।ও কি চায়!
কুুসুমের পিছু পিছু সিঁড়ি দিয়ে আসতে আসতে অর্ণব বললো,’কি চাও তুমি একটু বলো’

‘আমি মরতে চাই’

অর্ণবের অনেক রাগ হলো।রাগ করে কুসুমের আঁচল টান দিলো সে।কুসুম থেমে আঁচল টেনে আনতে আনতে বললো, এটা কেমন আচরণ?’

‘না বিচরণ’

‘মানেহ!’

‘তোমার আঁচল ধরেছি বলে এমন করতেছো।তোমার শরীর ছুঁলে কি করবে?’

‘ছুঁবেন ও না।জানি।তাই ভয় পাচ্ছিনা।’

অর্ণব আঁচল ছেড়ে ওর পিছু পিছু চললো।বাসায় ঢুকে কুসুম আবারও সেই রুমটাতে যাওয়া ধরছিল যেটাতে সে সারা বিকাল কাটিয়েছে।
অর্ণব চট করে এবার ওর হাতটাই ধরে ফেলেছে।

‘তুমি এই রুমে যাওয়া মানে আজকে রাতে আর কিছু খাবেনা।তোমাকে তাই যেতে দিচ্ছিনা’

‘আমাকে একা থাকতে দিচ্ছেননা কেন বলুন তো!’

‘তুমি আগে আমার কাছে কাছে থাকতে চাইতে তাহলে এখন দূরে থাকতে চাও কেন?’

‘কারণ আমি ভাবতাম…..’

‘কি ভাবতে?’

‘কিছুনা।হাত ছাড়ুন।আপনি আজ বেশি জ্বালাচ্ছেন আমায়।আপনাকে না বললাম আগে যেমন ঘৃনা করতেন তেমন ঘৃনা করুন।তাহলে এত এত কেন?”

‘আমি অভিনয় করতেছিনা।
তুমি জানো???তুমি আমায় ঘৃনা করো।আর দোষ দেও আমায়।আমি তোমায় কখনও ঘৃনা করিনি।
এটা ঠিক যে আমি পছন্দ করতাম না।কিন্তু এখন করি।
না করার করার তো পথ বাকি নেই।’

‘ওই তো!বাধ্য হয়ে করতেছেন।যেটা আমি চাইনা।হাত ছাড়েন।আমি একটু শান্তিতে ঘুমাবো এখন”

‘না আমি তোমায় ঘুমাতে দেবোনা।চলো আমার সাথে শেয়াল দেখবে’

কুসুম চোখ বড় করে বললো,’না যাবনা’

‘তোমার ভাবের ভার বেড়ে গেছে একেবারে আকাশ ছোঁয়া।
তাই একটু ভয় দেখিয়ে ভাব কমাবো’

কুসুম হাত মোচড়াতে মোচড়াতে এক পর্যায়ে ফ্লোরে বসে গেছে তাও অর্ণব ওর হাত ছাড়ছেনা।
সেসময়ে জাহান এসেছিল ওদের দুজনকে ডাকতে,সন্ধ্যার নাস্তা করতে যেতে।
এসে ওদের এমন অবস্থায় দেখে সে চোখে হাত দিয়ে বললো,’চিচিচিচি!!তোমরা দরজা খুইলা রাখি এসব কি করতাছো!’

অর্ণব কুুসুমের হাত ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।কুসুম ফ্লোর থেকে উঠে বললো, জাহান আপু!কি হয়েছে?’

‘দাদি তোমাদের ডাকে।খাইতে আহো।চিচিচিচি’

অর্ণব কুুসুমের হাত আবারও ধরে মজা করে বললো,’চিচিচিচি’

‘ওটা চিচিচি না ছিঃ ছিঃ’

‘আমি ইচ্ছে করেই ব্যঙ্গ করেছি।চলো শেয়াল দেখাবো তোমায়।আজ তোমার একদিন কি আমার সারাজীবন লাগে’

চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/676436250036874/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here