স্বপ্ন_কেনার_দামে #পর্ব১

0
707

নতুন ধারাবাহিক, ছোটছোট পর্ব হবে। একসাথে বেশি লেখার সুযোগ হয় না। সবার ভালোমন্দ রেসপন্স আশা করছি ❤️
#স্বপ্ন_কেনার_দামে
#পর্ব১

“বুকের বা পাশে ব্যথা হচ্ছে, তেরো ঘন্টা পয়তাল্লিশ মিনিটের বিচ্ছেদ আর সহ্য হচ্ছে না। আমার এনরিল স্প্রে, তোমার ঠান্ডা ছোঁয়া না পেলে আজ এখানেই না বুকের ব্যথায় প্রাণ হারাই।”

সাতটা বেজে পয়তাল্লিশ, পাখির ডাকের শব্দ করে ফোনটা জানিয়ে দেয় একটা এসএমস এসেছে অরণীর জন্য। দ্রুত হাতে রুটি সেঁকে নেওয়ার মাঝেও এসএমসের শব্দ অরণীর মনোযোগ কেড়ে নেয়। না দেখেও অবশ্য অরণী বলতে পারবে ম্যাসেজটা রিদমের। সাতটা চল্লিশে বাস স্ট্যান্ডে দেখা করার কথা, আর এখন বাজে সাতটা পয়তাল্লিশ। রিদম যে পাগল, প্রতি মিনিট লেটের জন্য একের পর এক এসএমএস দিতে থাকবে, বাবা এত ম্যাসেজের শব্দ শুনলে রাগ করবে, প্রশ্ন করবে, এখুনি ফোন সাইলেন্ট করতে হবে। অরণী ফোনটা হাতে নিয়ে দ্রুত টাইপ করে, “আমি এনরিল স্প্রে না যে সাময়িক ব্যথা কমাবো। আমি ইকোস্প্রিন, তোমার হৃদয়ে রক্তপ্রবাহের ঘাটতি হবে না। আমি আসছি, একটু অপেক্ষা।”

“অরু, রুটি কয়টা সেঁকছিস?” অরণীকে হুমায়রা বেগম ঘরে অরু বলেই ডাকে, এজমার সমস্যা এত তীব্র যে বেশি কথা বললেও ক্লান্ত হয়ে যান। সবকিছু তাই সংক্ষিপ্ত করে ফেলেছেন।

“এই তো, আটটা রুটি সেঁকা শেষ মা। আর লাগবে না। দাদীর দুধ গরম করে রেখেছি। খাওয়ার আগে রুটি দুধে ভিজিয়ে দিলেই হবে।”

“তুই খাবি না?”

“না এখন সময় নেই। দেরি হয়ে গেল।”

“হুম, দেরি তো হবেই, দুইটা রুটি সেঁকতে তিনবার ফোন টিপিস।”

“মা, আমি ক্যান্টিনে খাব। সত্যি ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। দীপন স্যার আটটা ত্রিশে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেয়। আর রান্না কী করবা জমিলা খালাকে বের করে দিও। চুলার কাছে আজ যেও না। যে গরম, ঘাম থেকে আবার টান উঠবে তোমার। ইনহেলার হাতের কাছে রেখো। বাবা নাস্তা টেবিলে, ঐ অমিয় ঘুম থেকে উঠ এবার। দাদী আসি আমি। আচ্ছা মা আমি গেলাম….।”

চুলের উপর চিরুনি বুলিয়ে দ্রুত পায়ের স্যান্ডেল পরে নেয়। দরজা খুলে বের হতে হতে মাকে আরেকবার বিদায় জানিয়ে বের হয় অরণী। ‘মেয়েটা একটা তুফান মেইল’ মনে মনেই হাসেন হুমায়রা। আসলে ওনার দীর্ঘদিনের অসুস্থতা অরণীকে পরিণত করেছে সময়ের আগেই। সংসারের কর্ত্রী তিনি হলেও, সংসার দেখে রাখে যেন অরণী। এত গুছিয়ে মায়ের সংসার করে যে কে বলবে এখনো পড়াশোনা করছে অরণী, বিডিএস ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী, ভবিষ্যতের দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ। মেয়ের গুণে এখানেই ভয়, ‘অতি ঘরণী নাকি ঘর পায় না’ ভেবে নিজেই জিহ্ব কাটেন। অরণী ঘর বর সবই পাবে ইনশাআল্লাহ, খারাপ ভাবার জন্য মনে মনে নিজেকে বকেও দেন।

“হুমায়রা আর কতক্ষণ দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে? দয়া করে দুটো রুটি খেতে দিয়েছ, এখন চা কী পাব? না অফিসে গিয়ে খেতে হবে? সময় নাই আমার।”

“আনছি। অরণী বোধহয় চায়ের ফ্লাক্স রান্নাঘরে রেখেছে।” জামিল সাহেবের মেজাজ অল্পতেই খারাপ হয়, তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে যান হুমায়রা। চড়া মেজাজের লোক জামিল সাহেব এটা বিয়ের পর থেকেই বুঝেছে হুমায়রা, তার উপর ইদানীং ওনার এজমার সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় যে তারউপর এত বিরক্ত, সেটা তিনি বেশ ভালোই বুঝতে পারেন। দিনের পর দিন অসুস্থ স্ত্রী কারও ভালো লাগে না। তা সে যেই বয়সের মহিলাই হোক না কেন। ছোটবেলায় হুমায়রার এজমার সমস্যা থাকলেও যুবতী বয়সে অনেকটা সময় ভালো ছিলেন, এমনকি নিয়মিত ইনহেলারও আর নিতে হতো না। বিয়ের পর ছোট ছেলে অমিয়ের জন্মের পর থেকে অবশ্য শ্বাসকষ্টের সমস্যা আবার দেখা দেয়। তারপরও স্বামী, সন্তান, সংসার সবকিছুর দায়িত্ব পালন করেছেন। শাশুড়ি ভীষণ বিরক্ত হতেন যখন এজমার টান উঠতো। অসুস্থ মেয়েকে গছিয়ে দিয়েছে তার ছেলের কাঁধে, এই ছিল ওনার বিরক্তর কারণ, স্বামীকেও বকাঝকা করতেন, ভালোমতো খোঁজ না নিয়ে ছেলের বৌ আনলো কেন সেই রাগে।

এখন শ্বশুর জীবিত নেই, তারপরও শাপশাপান্ত থেকে মুক্তি পাননি শ্বশুর। গত কয়েকবছর ধরে শীতকালের পাশাপাশি অতিরিক্ত গরমেও শরীর খারাপ হয়ে যায় হুমায়রার। চুলার পাশে বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না, ঘেমে গেলে ঠান্ডা লেগে শ্বাসকষ্ট হয়। গত পরশুদিন দুপুরে হঠাৎ ননাস সাথে করে তিনজনকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন, বুয়াও ততক্ষণে চলে গিয়েছিল, অরণীর পরীক্ষা ছিল,আসতে দেরি হবে বলেছিল। ভরদুপুরে হঠাৎ রান্নাবান্না করে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন হুমায়রা, কাল থেকে বলতে গেলে বিছানায়।

****
“কয় কাপ খেলে চা?”

“বেশি না, তিনকাপ। সিগারেট টেনে নিজেকে পুড়িয়ে দেব ভেবেছিলাম, কিন্তু তোমার কথা ভেবে পারলাম না, তুমি তো গন্ধ সইতে পারো না। আপাততঃ তাই চা খেয়ে কাটালাম।”

“ইয়াল্লাহ। চা! আমি তোমার কথা ভাবতে ভাবতে চা বানানোর কথা ভুলেই গিয়েছি। বাবা চা না পেলে মায়ের সাথে মেজাজ খারাপ করবে নিশ্চিত।”

“আরে এত এত চায়ের দোকান রাস্তায় রাস্তায়। আঙ্কেল এককাপ চায়ের জন্য রাগ কেন করবেন। আর আজ না হয় আন্টির হাতে খাবে।”

“মায়ের শরীর ভালো না। খুব হাঁপানির টান উঠেছিল গতকাল। আজ চুলার কাছে যেতে নিষেধ করছিলাম।”

“তাহলে আঙ্কেল রাগ করবে না বোকা। প্রিয়তম স্ত্রী অসুস্থ, আর আঙ্কেল চা নিয়ে রাগ করবে, কী ভাবো পুরুষদের তোমরা। তোমার একটু জ্বর শুনলে আমি নাপা খাই তিনবার, এইটা জানো।”

রিদমের কথা বলার ঢঙ্গে হেসে দিলেও অরণীর মনটা ভালো হয় না। রিদমকে বলা হয় না, সবার কাছে প্রিয়তমের অসুখ শুধু চিন্তা না, কারও কাছে বিরক্তির কারণও হতে পারে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here