তিমিরে ফোটা গোলাপ পর্বঃ ০৮

0
427

তিমিরে ফোটা গোলাপ
পর্বঃ ০৮
Writer Taniya Sheikh

শীতকে বিদায় দিতে এবং বসন্তকে সাদরে বরণ করে নিতে প্রতি বছর শীতের শেষ সময়ে পালিত হয় মাসলেনিৎসা উৎসব। ঐতিহ্য অনুসারে রাশিয়ার ঘরে ঘরে প্যানকেন তৈরি করা হয়। বাতাসে সেই মিষ্টি গন্ধ ভাসে। অতিথিদের আগমনে বাড়িতে বাড়িতে জমে ওঠে খুশির আমেজ। ইরুম (কাল্পনিক) গ্রামে এবার সেই আনন্দের ছিটেফোঁটাও নেই। গাঁয়ের লোকদের আতঙ্কে কেটেছে পুরো শীতের সময়টা। ফাদার জালোনভ তাদের কথা দিয়েছিলেন মাসলেনিৎসার আগেই সব ঠিক হয়ে যাবে। স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরবে সবাই। ফাদার জালোনভ সে কথা রাখতে পারলেন না। তাঁর সামনে এখন যেই গ্রামটির চিত্র- এ কোনো গ্রাম নয়, মৃত্যুপুরি। একে একে গায়ের লোকদের ওরা শেষ করে ফেলেছে। শয়তানের লালসায় গ্রামকে গ্রাম উজাড় হলো। ফাদার চেষ্টা করেও গ্রামের লোকদের বাঁচাতে পারলেন না। নিজেকে দোষারোপ করলেন ওদের করুন পরিণতির জন্য। নিজের ক্ষত-বিক্ষত শরীরের ব্যথা থেকে ওই নিরপরাধ মানুষগুলোর মৃত্যু তাঁকে বেশি পীড়িত করে। ওদের মৃত্যুর প্রতিশোধটুকুও বুঝি আর নেওয়া হলো না! এই অক্ষমতা, অসহায়ত্বের যন্ত্রণায় কাতর হলেন। অদূরে চার্চের উপর ক্রুশটার দিকে চোখ পড়তে উঠে বসতে চেষ্টা করলেন। পা দুটো অসাড়। প্রায় রক্তশূণ্য শরীরটা কনুয়ে হেঁচড়ে সামনে এগোতে চান। কিন্তু পারেন না। তাঁর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। পৃথিবীতে তাঁর জন্য বরাদ্দ অক্সিজেন কী তবে ফুরাল? কিন্তু এখনও কত কাজ বাকি। মাথা তুলে আকাশে চেয়ে বিড়বিড় করলেন,

“সাহায্য করো প্রভু, সাহায্য করো আমাদের।”

“ফাদার!”

ভ্যালেরিয়া অশ্রুসজল চোখে ফাদারের সামনে এসে হাঁটু ভেঙে বসল। মেয়েটার পরনের হ্যাবিট জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া, রক্তে রঞ্জিত। ডান বাহুতে গভীর তাজা ক্ষত। ঘাড়ের ওপাশটা থেকেও তাজা রক্ত পড়ছে। হাতের তলওয়ার ফেলে ফাদারের মাথাটা কোলে তুলে নিলো ভ্যালেরিয়া। গলা শুকিয়ে আসে ফাদারের। বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে। শ্বাস- প্রশ্বাসের গতি অস্বাভাবিক হতে লাগল। ফাদারকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখে ভ্যালেরিয়া কাঁদছে।

“ফাদার, কথা বলুন, ফাদার।”

“আমরা বাঁচাতে পারলাম না কাওকে সিস্টার। ওরা নিরীহ মানুষগুলোকে শেষ করে ফেললো। সব দোষ আমার। আমার ভুলে ওরা মারা গেল।” ভগ্নকণ্ঠে বললেন ফাদার। ভ্যালেরিয়া তাকে বুঝাতে চেষ্টা করে,

“আপনার কোনো দোষ নেই ফাদার।”

“আমারই দোষ সিস্টার, আমারই দোষ। আমার অক্ষমতায় ওরা মারা পড়ল। এরচেয়ে শয়তানের বশ্যতাও বুঝি__”

বুকে ক্রুশ আঁকে ভ্যালেরিয়া।

“ফাদার! ও কথা মুখে আনবেন না। ঈশ্বর নারাজ হবে।”

“আমি জানি!” গলার স্বর ভাঙে ফাদারের। আকাশের দিকে মুখ তুলে কাতর কণ্ঠে বলেন,

“প্রভু, এই নিষ্ঠুরতা কী করে দেখলে? কী করে সইছ এখনও?”

ভ্যালেরিয়া ফাদারকে সান্ত্বনা দেয়,

“ফাদার, আপনিই বলেছিলেন প্রভু যা করে তাতেই মঙ্গল নিহিত। প্রভুর উপর বিশ্বাস হারাতে নেই। হয়তো ওদের মৃত্যুর মধ্যেই কল্যাণ নিহিত ছিল। এই বিপৎসংকুল পৃথিবী ছেড়ে ওরা প্রভুর কাছে ফিরে গেছে। এখন ওদের আর ভয় কী? শান্তিতে আছে ওরা সব।”

ফাদারের শ্বাসে টান ওঠে। শরীরের অঙ্গ প্রসঙ্গ বলহীন হয়ে পড়ে। দেহ রক্তশূণ্য ফ্যাকাশে। চোখ দু’টো বির্বণ, মৃত্যু যন্ত্রণায় অশ্রুসিক্ত। ভ্যালেরিয়া শঙ্কিত হয়। ফাদার বুকের বা’পাশ চেপে ধরে বলেন,

“সিস্টার, আমার সময় বুঝি শেষ হয়ে এলো। এবার আমাকেও ঈশ্বরের কাছে ফিরতে হবে।”

ভ্যালেরিয়া কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়ায়,

“না, ফাদার__” অতি ক্রন্দনে কণ্ঠরোধ হয়ে আসে ভ্যালেরিয়ার। ফাদার শুকনো হেসে বলেন,

“আপনাকে এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না সিস্টার। অনেক দায়িত্ব আপনার। শক্ত হোন। শয়তানগুলোকে শেষ করার দায়িত্ব এবার আপনি নেবেন। আমার উত্তরসূরি হবেন আপনি।”

কাঁপা কাঁপা দূর্বল হাতে পকেট থেকে ছোট্ট একটা গোল বাক্স বের করলেন। বাক্সটি দেখতে বেশ রাজকীয়। চারপাশে লাল মখমল কাপড়ের লেছ আর সুন্দর জরি দেওয়া। বাক্সটির উপরে নীল জ্বলজ্বলে পাথর। ভ্যালেরিয়ার হাতে তুলে দিয়ে বললেন,

“এই বাক্সটা যেভাবেই হোক ফাদার কাজিমির পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে আপনাকে। এখন থেকে তিনিই আপনাকে দিকনির্দেশনা দেবেন। আর হ্যাঁ, ঘুণাক্ষরেও ওরা যেন বাক্সটা সম্পর্কে জানতে না পারে। এক্ষুনি রওনা দিন।”

ফাদারকে মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে কী করে যাবে ভ্যালেরিয়া? সে যেতে রাজি নয়।

“আপনাকে এই অবস্থায় ফেলে কোথাও যাব না আমি।”

“বোকামির সময় নয় এখন সিস্টার। যা বলছি শুনুন। ওরা এখানে পুনরায় ফিরে আসার আগে প্রস্থান করুন। যান বলছি।”

ফাদার আদেশ করলেন। তাঁর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না। নিস্তেজ হয়ে আসছে শরীর। ভ্যালেরিয়াকে ইশারায় যেতে বলার পরও ভ্যালেরিয়া বসে রইল। শব্দ করে কাঁদছে সে। ফাদার মুখ হা করেন কিন্তু শব্দ বেরোয় না। প্রাণটা মুক্ত হতেও কী পীড়া! হঠাৎ দুজনের কানে এলো নেকড়ের হিংস্র গর্জন। ওরা এদিকেই আসছে। আকাশে অমাবস্যার চাঁদ। অশুভ শক্তির উন্মত্ত নৃত্যে প্রকৃতি গম্ভীর।
ফাদার ঝাপসা চোখে পুবের জঙ্গলের দিকে তাকালেন। পরিচিত গলার আর্তচিৎকার ভেসে এলো। ফাদার আর্ত চোখে ভ্যালেরিয়ার দিকে তাকালেন। আঙুলে ইশারা করলেন মনুষ্য গলায় ভেসে আসা চিৎকার যেদিক থেকে আসছে সেদিকে। পুবের জঙ্গলের পরেই বরফে ঢাকা সমতল। লোকালয়ের সামনের দিকটাতে জায়গাটা। ফাদার আর ভ্যালেরিয়া পরিত্যক্ত বাড়ির লনে এমুহূর্তে। সামনের ঝোপঝাড় খানিকটা আড়াল করেছে দুজনকে। তিনটে মানুষ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ছুটে আসছে লোকালয়ের দিকে। ভ্যালেরিয়া ওদেরকে চেনে। ফাদার অগাস্টাস, ডক্টর বরিস আর নীনা। ভ্যালেরিয়ার দৃষ্টি গেল ওদের পেছনে। একদল হিংস্র নেকড়ে ছুটে আসছে। হঠাৎ ম্যাথিউ আর টনির কথা মনে পড়ল। ওরা কোথায়? ভ্যালেরিয়ার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল ছুটে আসা তিনজনের আর্তনাদে। নেকড়েগুলো শিকার ধরতে পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েছে। ওরা তো শুধু শিকার নয়, শত্রুও ছিল। শয়তানগুলোর বিজয় গর্জন, আর মানুষ তিনজনের মৃত্যু যন্ত্রণার গগনবিদারী আর্তনাদে উজাড় হওয়া এই গাঁ কেঁপে ওঠে। সাথীদের বাঁচাতে যাবে তখনই ফাদার ওর হাত চেপে ধরলেন। ওদের যন্ত্রণাকাতর চিৎকার থেমে গেছে। শয়তানগুলো লাশ তিনটে নিয়ে উল্লাস করছে। ভ্যালেরিয়ার বুকে ক্রুশ আঁকে আর কাঁদে। ফাদার অস্ফুট গোঙানির স্বরে আদেশ করলেন পালাতে। ভ্যালেরিয়া অশ্রুসিক্ত চোখে ফের মাথা নাড়ায়। ফাদারকে ছেড়ে, সাথীদের ছেড়ে একা পালাবে না সে। ম্যাথিউ আর টনিকেও খুঁজে বের করতে হবে। হয়তো ওরা বেঁচে আছে। নেকড়ের গর্জন আস্তে আস্তে এগোচ্ছে। লাশগুলোকে নখরাঘাতে খন্ড বিখন্ড করে ছুঁড়ে ফেলল পাশে। ফাদার ভ্যালেরিয়ার কর্তব্য মনে করিয়ে দিলেন। কর্তব্যের কাছে কোনো মায়ার স্থান নেই। এই মুহূর্তে পালানোর আদেশ করলেন। মুখ হা করে শ্বাস টানছেন ফাদার। কথা বন্ধ হয়ে গেল হঠাৎ৷ দূর্বল হাতে শেষবার বুকে ক্রুশ এঁকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পারি জমালেন। ভ্যালেরিয়া এর পূর্বেও মৃত্যু দেখেছে। কিন্তু ফাদার আর সাথীদের এই নির্মম মৃত্যুতে মুষড়ে পড়ল আজ। লড়াই করার শক্তি হারিয়ে ফেলল। উঠে দাঁড়াবে সেই সময় দৃষ্টি গেল জঙ্গলে উপর। একটা বাদুর উড়ছে সদর্পে। তারপর আরেকটা, তারপর আরেকটা। শয়তানগুলো বিজয়ের আনন্দে মেতেছে। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। বিজয় নিশ্চিত ছিল তাদের। তবে কোথায় ভুল হলো? কোন ভুলে হলো এই অপূরণীয় ক্ষতি? ফাদারের লাশের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ভ্যালেরিয়া। শয়তানগুলো টের পাওয়ার আগেই তাকে পালাতে হবে। ফাদারের মুখটা শেষবার দেখে নিলো। মানুষটা তাকে স্নেহ করত খুব। সামনে নেকড়েগুলোকে ওর সাথীদের ছিন্ন ভিন্ন লাশ নিয়ে আনন্দ করতে দেখে ডুকরে ডুকরে কাঁদে। ফাদার অগাস্টাসের হাসি, ডক্টর বরিসের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, নীনার চঞ্চলতা স্মরণে করে চোখের জল থামল না। ভগ্ন হৃদয়ে কোনোমতে সামনের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতরে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। এত মৃত্যুতে ও হতবিহ্বল, স্তব্ধ। ভ্যালেরিয়া ভয় পায় মৃত্যুকে, ভীষণ ভয় পায়। হাঁটু মুড়ে ক্রুশটা মুঠোবন্দি করে নীরবে কাঁদতে লাগল। কান্না গলায় আঁটকে যায় কাছাকাছি বাদুরের ডানা ঝাপটানোর শব্দে। সমস্ত শরীর ভয়ে কাটা দিয়ে ওঠে। লড়াই করার মতো শক্তি ভ্যালেরিয়ার এই মুহূর্তে নেই। মনে মনে বিধাতাকে স্মরণ করল। এখন তিনিই ওর ভরসা। ইসাবেলার মুখটা মনে পড়ে। তিন দিনের স্থানে পাঁচদিন হয়ে গেল মাদামের বাড়িতে যেতে পারেনি ভ্যালেরিয়া। মেয়েটি হয়তো এখনো ওর পথ চেয়ে বসে আছে। হঠাৎ বাড়ির সামনে দরজা সশব্দে খুলে যায়। বুটের জুতার ভারী শব্দ এগোতে লাগল। ভ্যালেরিয়া দুচোখ বন্ধ করে। বন্ধ নেত্র দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। ঝাপসা চোখে ভেসে ওঠে ইসাবেলার মুখ। ভ্যালেরিয়া মনে মনে ওকেই স্মরণ করে।

“ক্রাসিভায়া”

অসুস্থ শরীর টেনে তুলে বিছানায় বসল ইসাবেলা। খিদে পেয়েছে খুব। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো, মাদামের খোঁজ নেই। সকালে খাবার নিয়ে আসেননি, ডাকেনওনি। ইসাবেলা দূর্বল গলায় ডাকল,

“মাদাম, মাদাম।”

না, কোনো সাড়াশব্দ নেই। গেল কোথায় মাদাম? ইসাবেলা বিছানায় ছেড়ে নামে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে মাথা ঘুরে ওঠে। দিনদিন শরীর আরো খারাপ হচ্ছে ওর। আরো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে ত্বক। অথচ, এখন ও আর সেই দুঃস্বপ্নটা দেখে না। মাদামের তৈরি ঘুমের ওষুধ রোজ রাতে খায়। এক ঘুমে সকাল। কিন্তু ঘাড়ের ক্ষত তেমনই তাজা। ভয় এখানেই ইসাবেলার। আগে যা গোচরে ঘটত এখন অগোচরে ঘটে। কাকে বলবে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া এই অদ্ভুত ঘটনার কথা? মাদামকে? কিন্তু তাঁর সময় কই? এতদিন নিকোলাসকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। গতরাতে সে বিদায় নিয়েছে। ভোরে মাদামের হা হুতাশ শুনে বুঝতে পেরেছে নিকোলাস চলে গেছে। নিকোলাসের বিদায়ের সময় অবশ্য ইসাবেলা জাগ্রত ছিল না। ওইদিন কিচেনের ঘটনার পর থেকে যথাসম্ভব নিজেকে আড়াল করেই রেখেছিল সে। শরীরটাও বেজায় অবসন্ন ছিল। বিছানা ছাড়তেই মন চায়নি। তবে মাদাম আর নিকোলাসের খোশগল্প নিজের রুমে শুয়ে একটু আধটু শুনতে পেয়েছিল। নিকোলাসের হাসির শব্দ ইসাবেলার কানে মধুর সুরের মতো বাজে। এত চমৎকার হাসি কারো হয়? পরক্ষণেই নিজেকে তিরস্কার করত। সে কেবল পিটারকে পছন্দ করে, পিটারকে ভালোবাসে। পিটারের হাসিই চমৎকার লাগবে। অন্য পুরুষের হাসি নয়। বেড়ালের গোঙানির আওয়াজে ভাবনার সুতো ছেঁড়ে। এ বাড়িতে বেড়াল কোথা থেকে এলো? মাদাম বেড়াল পছন্দ করেন না। সামনের বাড়ির ভদ্রমহিলার বেড়ালটা প্রায় উঁকিঝুঁকি দিতো। ইসাবেলা ওটাকে একবার কোলে তুলতে মাদাম চেঁচিয়ে উঠেছিলেন,

“ফেলো ওটাকে, ফেলো এক্ষুনি।”

যেন কোনো নোংরা বস্তু ইসাবেলা কোলে তুলেছে। মাদামের মুখ ঘৃণায় বিকৃত হয়ে উঠল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেড়ালটাকে কোল থেকে নামিয়েছিল সেদিন। বেড়ালটা মাদামকে দেখে ভীত চোখে ম্যাঁও ম্যাঁও করে ইসাবেলার পা ঘেঁষে দাঁড়ায়। মাদাম ওটাকে লক্ষ্য করে জুতো ছুঁড়ে মারতে পালিয়ে যায়। এরপর ইসাবেলাকে মাদাম সতর্ক করেছেন ওসব থেকে দূরে থাকার জন্য। অন্তত তাঁর বাড়িতে যতদিন আছে ততদিন। ইসাবেলার ভীষণ খারাপ লেগেছিল মাদামের ওই ব্যবহার। ওমন তুলতুলে, নিষ্পাপ প্রাণীর উপর মাদামের এহেন নিষ্ঠুরতা কষ্ট দিয়েছিল। আজ আবার বেড়ালটা এলো ভেবে আনন্দ হলো। মাদাম দেখার আগেই ওটাকে লুকিয়ে কোলে তুলে একটু আদর করবে বলে ভাবল। দেয়াল ধরে চলে এলো বসার ঘরে। সদর দরজা বন্ধ। বেড়ালটা কোথায়? এদিক ওদিক তাকাল। না, নেই। কিচেন থেকে ছুড়ি চালানোর শব্দ আসছে। মাদাম তাহলে ঘরেই আছে? ইসাবেলার ডাক কী তিনি শুনতে পাননি? ইসাবেলা কিচেনের দিকে পা বাড়ায়। দরজার কাছাকাছি যেতে মাদামকে দেখল। হাতে ধারালো রক্তাক্ত চ্যাপ্টা ছুড়ি। দরজার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছেন। কিছু একটা কাটছেন তিনি। আরেকটু এগিয়ে যেতে থমকে দাঁড়ায় ইসাবেলা। বেড়ালটার দ্বিখণ্ডিত দেহ পড়ে আছে মাদামের সামনে। গা শিউরে উঠল এ দৃশ্য দেখে। বজ্রাহতের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল। মাদাম ঘুরে দাঁড়ালেন তখনই। তাঁর মুখে লেগে আছে তাজা রক্ত। কী বিভৎস, ভয়ংকর তাঁর মুখ! চিৎকার দিয়ে ছিটকে সরে দাঁড়াতে গিয়ে নিচে পড়ে গেল ইসাবেলা। মাদামের ঠোঁটে পৈশাচিক হাসি। ছুড়ি হাতে কয়েক কদম এগিয়ে এসে বললেন,

“ও ঠিকই বলেছিল। গরম রক্ত ভারী মজার। এই নচ্ছার বেড়ালটার রক্তও কম স্বাদের না। দারুন সুস্বাদু। একটু চেকে দেখবে না কি ইসাবেলা? নাও।”

রক্তমাখা হাতটা মুখের সামনে ধরতে ইসাবেলা ফের ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এক দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে। কিচেন থেকে ভেসে আসছে মাদামের অট্টহাসি। ভয়ে, আতঙ্কে ইসাবেলার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মাদামের একি হলো হঠাৎ! ইসাবেলা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে তাঁর দৃষ্টির অস্বাভাবিকতা। কী ভয়ংকর, নিষ্ঠুর চাহনী! সেই মমতাময়ী মাদাম আর এই মাদামে আকাশ পাতাল ফারাক। এই ফারাক কীভাবে হলো? কোন অশুভ ছায়া নেমে এলো তাদের জীবনে? কাঁপতে কাঁপতে বিছানার কাছাকাছি যেতে অচেতন হয়ে পড়ে ইসাবেলা।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here