তিমিরে ফোটা গোলাপ পর্বঃ ১৩

0
425

তিমিরে ফোটা গোলাপ
পর্বঃ ১৩
Writer Taniya Sheikh

সারারাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করে ভোরের দিকে চোখজোড়া লেগে এসেছিল ইসাবেলার। অদূরে বন মোরগের ডাকে কাঁচা ঘুম ভাঙল। তড়িঘড়ি নেমে এলো বিছানা ছেড়ে। চুল আচরে, কাপড় পালটে তৈরি হলো প্রাসাদের রহস্য ভেদের মিশনে। কিন্তু এখনই বের হওয়া রিস্ক। ভৃত্য নাস্তা নিয়ে আসবে ঠিক সাতটার দিকে। ইসাবেলা ঘড়ি ধরে সময়টা খেয়াল রেখেছে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট ওই টাইমেই ভৃত্যটির আগমন ঘটে। সুতরাং, অপেক্ষা করতে হলো সাতটা বাজার। ততক্ষণে প্লান কষে নিলো। নিকোলাস দুপুরের আগে জাগবে না। এর মধ্যেই যা করার করতে হবে। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নিলো সাথে করে। সুযোগ পেলে পালিয়ে যাবে আজই। ঘড়িতে সাতটা বাজতে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়। ইসাবেলা ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিতে ভৃত্যটি প্রবেশ করল। ট্রেতে আজ শুকনো রুটি, মাখন, চিজ আর টমেটো স্যালাড। ইসাবেলা অপেক্ষা করে ভৃত্যটির প্রস্থানের। সে চলে যেতে ইসাবেলা গাপুসগুপুস রুটি আর চিজ মুখে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আরেকটু বিলম্ব করে বাইরে বেরোতে। ভৃত্যের পায়ের শব্দ আর পাওয়া যাচ্ছে না। আস্তে করে দরজাটা ফাঁক করে মুখটা বের করে এদিক ওদিক দেখে নিলো। দোতলার মার্বেল পাথরের করিডোর। ভৃত্যের পদচিহ্ন ছাড়া আর কিছু পেল না সেখানে। সতর্কে পা বাড়াল কড়িডোরে। পা টিপে টিপে এগিয়ে কড়িডোরের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নিচে তাকাল। গুমোট অন্ধকার পুরো প্রাসাদ জুড়ে। এখানে ওখানে মাকড়সার জাল জড়ানো। হলঘরে কাওকে দেখতে পেল না। ইসাবেলা ধীর পায়ে করিডোর ধরে এগোতে লাগল। বুক ঢিপঢিপ করছে ভয়ে। চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নেয়। বাইরের মতো এই প্রাসাদের ভেতরের সৌন্দর্য ততটা ম্লান হয়নি। এর আভিজাত্য, রাজকীয় জৌলুশ প্রাসাদের দেয়ালে দেয়ালে এখনো খানিকটা উজ্জ্বল। কিন্তু বহু বছরের অযত্নে ধুলোর পুরু আস্তরণ পড়েছে। মাকড়সার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে যতদূর চোখ যায়। দিনের বেলাতেও সূর্যের আলো পুরোপুরি পৌঁছায়নি। প্রাসাদের ভেতরটা বেশ শীতল। কেমন ধোঁয়াটে ভাব সর্বত্র জুড়ে। গা ছম ছম করছে ইসাবেলার। গোলাকৃতির কড়িডোর পুরো দোতলায়। ইসাবেলার রুমটি পশ্চিমের দিকে। সামনে আরো দুটো বন্ধ দরজা পেল। ওদিকে আরো অনেকগুলো আছে। জং ধরা, মাকড়সার জালে আবদ্ধ তালা দেখলে বোঝা যায় বহুবছর তালাবন্ধ রুমগুলো। জানালা খোলার চেষ্টা করল একটার, কিন্তু বন্ধ সেটা। হাত দিয়ে জানালার কাঁচের ময়লা মুছে ঘরের ভেতরটা দেখতে চায়। স্পষ্ট করে কিছু দেখা যাচ্ছে না। কেবল কিছু আসবাবপত্র চোখে পড়ল। সামনের সবকটা রুমেরই একই অবস্থা। সিঁড়ির মুখে এসে থামল ও। ধাপে ধাপে সিঁড়ি নিচের হলঘরে গিয়ে মিশেছে। ইসাবেলা একবার ভাবল পুরো দোতলা ঘুরে দেখা যাক। যদি কোনো তালা খোলা যায় কোনো রুমের? যদি নিকোলাসকে পাওয়া যায়? সে জানে নিকোলাসকে মারার এই উপযুক্ত সময়। কিন্তু যদি অন্য কেউ সেখানে থাকে? মৃত্যু এই প্রাসাদের দেয়ালের ইটের ভাঁজে ভাঁজে ওঁৎ পেতে আছে। প্রতি মুহূর্তে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তাকে। নিকোলাসকে শেষ করার আগে এখান থেকে বেরোনোর পথটা আগে দেখে নিলে ভালো হয়। এই ভাবনায় নিঃশব্দে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো সে। এত বড়ো হলঘর আগে কখনো দেখেনি। গল্প কাহিনিতে যেমন রাজকীয় মহলের বর্ণনা করা হয়, এটা কতটা তেমনই। একসময় হয়তো এখানে বলের আয়োজন হতো। শতশত মানুষের পদচারণা, কোলাহলে মুখর ছিল এই হলঘর। সময়ের বিবর্তনে আজ সেই মুখর হলঘর নিস্তব্ধ। ধুলো আর মাকড়সার জালে ভূতুড়ে কুয়াশাজড়ানো। বন্ধ জানালার শার্সির ফাঁক গলে আসা আলোও ভীত হয়ে গুটিশুটি মেরে এককোণে লুকিয়ে গেছে। যত সামনে এগোচ্ছে নাকে এসে লাগছে উৎকট গন্ধ। ইসাবেলা সদর দরজা খুঁজতে শুরু করে। সাবধানে পা ফেলে এগোল সামনে। ওর নিজের পায়ের শব্দও বড্ড কানে লাগছে। বাড়িয়ে দেয় বুকের ঢিপাঢিপানি। অসতর্কে সে পায়ের ছাপ ফেলে যাচ্ছে ধুলো জমা ফ্লোরের ওপর। সদর দরজা খুঁজে পায় না ইসাবেলা। এই ভ্যাপসা আঁধারে কোনটা যে দরজা তাই ঠাহর করা মুশকিল। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দে আঁতকে ওঠে। কোথায় লুকাবে এখন সে? সামনেই ধুলো পড়া, মাকড়সার জালে আবদ্ধ বড়োসড়ো কিছু একটা দেখতে পেল। লুকিয়ে পড়ল তার পাশে। আড়ালে বসে দেখল একটা মানবীয় ছায়া ওপাশ থেকে ধীরে ধীরে হলঘরের মাঝে এসে থামল। চিনতে সমস্যা হলো না ভৃত্যটিকে। এক মাথা কটা কোঁকড়া চুল আর ময়লা পোশাক পরনে। পা দুটো নগ্ন। যখনই দেখেছে চোখদুটো সবসময় মাটির দিকে থাকে। ওদিকে কোথায় গিয়েছিল সে? ভাবল ইসাবেল। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভৃত্যটি আবার এগিয়ে গেল সামনে। এরপরেই ঝপাৎ করে সূর্যালোকে আছড়ে পড়ে এই হলঘরে। সদর দরজা খুলে ভৃত্যটি বেরিয়ে যায়। দরজা আবার বন্ধ হলো। পুনরায় নেমে এলো সেই গুমোট অন্ধকার। ইসাবেলা উঠে দাঁড়ায়। পা টিপে দরজার দিকে গেল। দরজায় খিল আঁটা নেই। ইসাবেলা খুলল না দরজা। কান পেতে রইল। বাইরে ঘোড়ার নাক ছিটকানো ছাড়া আর কিছুই শুনতে পেল না। অগত্যা সরে এসে এক চিলতে আলো অনুসরণ করে জানালার শার্সি খুলে চোখ রাখল বাইরে। চোখ দুটো তৎক্ষনাৎ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বাইরে টমটমগাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এই মোক্ষম সুযোগ পালানোর। কিন্তু কোচওয়ান কোথায়? আরেকটু খেয়াল করতে ভৃত্যটিকে এদিকেই ফিরে আসতে দেখল। দ্রুত আগের স্থানে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে সে। ভৃত্যটি এবার হলঘরের অন্যদিকে হেঁটে গেল। ইসাবেলা কালক্ষেপণ না করে উঠে দাঁড়ায়। যে জিনিসটার আড়ালে লুকিয়ে ছিল তার গায়ে হাত দিতে টুং করে বেজে ওঠে। সাথে সাথে নিস্তব্ধ হলঘরের এদিকটা সরগরম হয় ইঁদুর খচখচানি আর বাদুড়ের ডানা ঝাপটানোর শব্দে। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে এলো ওর। এই বুঝি ছুটে এসে আক্রমণ করবে ইঁদুর আর বাদুড়ের দল। পাশের দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে রইল অনেক সময়। একটু পর আবার সেই নিস্তব্ধতা নেমে আসতে জিনিসটার সামনে এসে দাঁড়ায়। টুং করে বেজে ওঠা জিনিসটা ভালো করে দেখল। একটা পিয়ানো! ময়লা আর মাকড়সার জাল জড়িয়ে পিয়ানোর বেহাল দশা। চিনে ওঠায় মুশকিল। ইসাবেলার মা আন্না মেরিও চমৎকার পিয়ানো বাজাতে পারেন। মেয়েকেও শিখিয়েছেন নিজের পছন্দের বাদ্যযন্ত্রটি। পিয়ানো দেখে মায়ের কথা ভীষণ মনে পড়ল ইসাবেলার। চোখ ছলছল করে। নিজেকে সামলে নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সদর দরজার কাছে। সদর দরজা খুলবে কিন্তু থেমে গেল তখনই। ভেতরে প্রতিশোধস্পৃহা দপ করে জ্বলে ওঠে। নিকোলাসকে সহ ওই পিশাচগুলোকে এভাবেই ছেড়ে যাবে? ভ্যালেরিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে না? কেবল নিজের কথায় ভাবছে? নিজের এই স্বার্থপরতায় মনে মনে নিজেকে তিরস্কার করে। ফিরে এলো সদর দরজা থেকে। সে আজই পালাবে কিন্তু নিকোলাসকে মেরে। যদি না পারে তবে আবার ফিরে আসবে উপযুক্ত হাতিয়ার সমেত। তার আগে শেষ চেষ্টা করা যাক। কোথায় পাবে নিকোলাসকে এই মুহূর্তে? দোতলার সব রুম তালাবন্ধ। আগে নিচে খুঁজে দেখা যাক। একটু আগে ভৃত্যটি যেদিক থেকে এসেছে, সেদিকেই গেল। দরজাটা ভেজানো ছিল। ইসাবেলা দরজাটা ঠেলতে একটা সিঁড়ি দেখতে পেল। সিঁড়িটা এঁকেবেঁকে নিচে নেমে গেছে। ইসাবেলা আস্তে আস্তে নেমে এলো। যত নামছে সামনের অন্ধকার ঘন হচ্ছে। শেষের সিঁড়িতে পা দিয়ে বিস্ময়াহত। প্রাসাদের এই স্থানটি হলো কবরস্থান। স্যাঁতসেঁতে মাটির গন্ধে নাক কুঁচকে ফেলে ইসাবেলা। হঠাৎ ওর একটা ব্যাপার খেয়াল হলো। এই গন্ধটা ওর চেনা। নিকোলাসের সান্নিধ্যে এলেই গন্ধটা টের পেত। শুধু নিকোলাস নয়, আন্দ্রেই এবং ইভারলির গা থেকেও এই একই গন্ধ পেয়েছিল। তবে কী এখানেই আছে ওরা? মনের ভয়টা আরো গাঢ় হলো ওর। কী করবে? ফিরে যাবে? ঘুরে দাঁড়ায় সিঁড়ি ওপরের দিকে। এক পা ওপরে দিতে থেমে গেল। এককোণে ল্যাম্পের বাতি জ্বলছে। ওই টিমটিমে আলো কিছুটা যেন দূর করেছে কবরস্থানের আঁধার। ইসাবেলা ওটা হাতে তুলে নেয়। নরম মাটিতে পা ফেলে আলোটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগল চারপাশটা। দৃষ্টি স্থির হয় দেয়ালের কোন ঘেঁষা বস্তুর ওপর। তিনটে কফিন! ইসাবেলা শুকনো ঢোক গিলে ভয়টাকে একপাশে সরিয়ে কফিন তিনটের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। হাত কাঁপছে ওর। চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিলো। ঈশ্বরের নাম জপল কয়েকবার। তারপর চোখ মেলে তাকায় কফিন তিনটের দিকে। বার্নিশ করা কাঠের চকচকে কফিন তিনটে। হাতের আলোটা একটার উপর রেখে প্রথম কফিনটা খুলল। হতাশ হলো ইসাবেলা। কিছুই নেই ভেতরে। তারপর আরেকটার পাল্লা সরাতেই চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এই তো নিকোলাস! আলোটা হাতে নিয়ে ঝুঁকে দেখল ওর মুখ। নিকোলাস ওর কাছে ভয়ের, আতঙ্কের আরেক নাম। কিন্তু আজ ওকে দেখে ইসাবেলার আনন্দই হলো। প্রথমদিন দেখা নিকোলাসের চেয়ে এই ঘুমন্ত নিকোলাস যেন আরো সুদর্শন। ঘুমন্ত অবস্থা ভারী নিষ্পাপ দেখাচ্ছে তাকে। কে বলবে এই নিদ্রারত নিষ্পাপ মানবীয় দেহের মধ্যে লুকিয়ে আছে একটা হিংস্র, নিষ্ঠুর পিশাচ। নিকোলাসের লাল টুকটুকে ঠোঁটে স্মিত হাসি দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইসাবেলা। সে কি টের পেয়েছে ইসাবেলার উপস্থিতি? ভীত হয় ইসাবেলা। সেধে সিংহের গুহায় ঢুকে পড়ল না তো? এখন যদি জেগে ওঠে শয়তানটা? এখান থেকে সিঁড়ির দূরত্ব আরেকবার দেখে নিলো। নিকোলাস জেগে উঠলে ভোঁ দৌড় লাগাবে। কিন্তু সে জানে, তাতে খুব একটা সফল হবে না। শয়তানটা জাগলে মৃত্যু নিশ্চিত আজ ওর। নিকোলাসের মুখের দিকে তাকায় ফের। ওর ঠোঁটের স্মিত হাসি আরো দীর্ঘায়িত হয়েছে। ইসাবেলার ভয় পাওয়া মুখটা দেখেই বুঝি মজা পাচ্ছে সে। রাগে পায়ের তলা জ্বলছে ইসাবেলার। মুখ কঠিন করে আলোটা হাতে তুলে পরের কফিনটা খুললো। একটা অপরিচিত সুন্দরী যুবতি শুয়ে আছে সেখানে। তাকে আগে কখনও দেখেনি ইসাবেলা। মেয়েটার মুখটা ভালো করে দেখল। নিকোলাসের সাথে বেশ মিল আছে ওর। তবে কী নিকোলাসের বোন মেয়েটি? সে সরে এলো নিকোলাসের কফিনের কাছে। জোর করা মুচকি হাসি হেসে বলল,

“আমাকে এখানে দেখে নিশ্চয়ই খুশি হওনি তুমি, হুম? ভেবেছিলে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে রুমের এককোণে লুকিয়ে থাকব?”
ইসাবেলা আরেকটু ঝুঁকে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,

“আমি জানি তুমি শুনতে পাচ্ছ। শোনো, তোমাকে আমি ভয় পাই না নিকোলাস কুরিগিন। ওহ! আচ্ছা তোমার আসল বংশ পদবী কী? আমি নিশ্চিত সেটা কুরিগিন নয়। উম, লুসিফার? নিকোলাস লুসিফার। ওয়াও! দারুন মানিয়েছে নামটা। শয়তানে শয়তানে মাসতুতো ভাই।” নিকোলাস হাসছে নিঃশব্দে। ওর ঘুমন্ত মুখে সে হাসি স্পষ্ট দেখতে পাওয়া গেল। ইসাবেলা সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

“তুমি জানো আজ আমি পালাব তোমার এই নরক থেকে? হুম, পালিয়ে যাব। কিন্তু ভীতুর মতো নয়। তাইতো তোমাকে বিদায় জানাতে এলাম।”

এবার নিকোলাসের ঠোঁটের হাসি উবে গেল। শক্ত হয়ে উঠেছে চোয়াল। ইসাবেলা নিষ্পাপ মুখ করে বলল,

“ওমা! রাগ করলে?”

ঠিক তখনই খুলে গেল নিকোলাসের চোখ। আগুনের শিখার ন্যায় জ্বলছে চোখ দুটো। ইসাবেলা লাফ দিয়ে উঠল ভয়ে। বুক ধড়ফড় করছে ওর। এই বুঝি উঠে এসে গলা চেপে ধরবে নিকোলাস। কিন্তু না, সে তেমনই শুয়ে আছে। ঠিক যেন প্যারালাইজড রোগী। সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে এসে ইসাবেলা বলল,

“আমার মা বলতেন অত্যাচার সহ্য করাও একপ্রকার অপরাধ। আমার সাথে যা যা করেছ আজ সুদে-আসলে ফিরিয়ে দেবো তোমাকে। না, তোমার রক্ত পান করব না। ও কাজ কেবল তোমার মতো শয়তানের।”

ইসাবেলা প্রজ্জ্বলিত ল্যাম্পটা হাতে তুলে নেয়। নিকোলাস ক্ষুব্ধ চোখে চেয়ে আছে ওর দিকে। ইসাবেলা মৃদু হেসে কটমট করে বলল,

“তোমার সেই প্রেমিকা কোথায়? হারামজাদিটা আমাকে খুব মেরেছিল। আবার এসেছিল ভাব জমিয়ে রক্ত পান করতে। আমার রক্তে মধু আছে, হ্যাঁ? যে কেউ দৌড়ে আসে রক্ত চুষবে বলে। মন তো চেয়েছিল হারামজাদিকে কেটে টুকরো টুকরো করে ওই নেকড়ে দিয়ে খাওয়ায়। আজ ওকেও শেষ করে যেতে পারলে শান্তি হতো। কিন্তু সময় নেই আজ আমার হাতে। কিছুদিন অপেক্ষা করো নরকে গিয়ে। তোমার ওই ভালোবাসায় ভরিয়ে দেওয়া প্রেমিকাকেও পাঠাব সেখানে আমি। তারপর তোমার যত জ্ঞাতিগুষ্টি আছে সব গুলোকে। তোমার সৎমার সাথে হিসেব এখনও বাকি আমার। আমার ভ্যালেরির মৃত্যু শোধ নিয়েই ছাড়ব।”

তারপর হঠাৎ ভাবনায় বুঁদ হলো সে। ভাবনা থেকে বেরিয়েই নিকোলাসের গালে কষে চড় বসিয়ে দাঁতে দাঁত কামড়ে বলল,

“কেন মারলাম জানো? এই যে ঠোঁটের কিনারে চুমু দিয়েছিলে সেদিন, সেই জন্য। আমার জীবনের প্রথম চুমু, প্রথম সবকিছু পিটারের জন্য। তোমার মতো শয়তান, পিশাচের জন্য নয়। আমি তোমাকে ঘৃণা করি নিকোলাস। সারাজীবন ঘৃণা করব।”

হাতের ল্যাম্পটা কফিনের কাঠের কাছে ধরে ইসাবেলা। একটু একটু করে আগুন জ্বলে ওঠে কফিনের কাঠে। ইসাবেলা প্রসন্ন মুখে বলল,

“আলবিদা, নিকোলাস।”

মেয়েটির কফিনে কেন যেন আগুন দিতে গিয়েও দিলো না ইসাবেলা। পুড়লে সবই পুড়বে আস্তে আস্তে। সিঁড়িতে উঠে এলো সে। দাউদাউ করে নিকোলাসের কফিনে আগুন জ্বলছে। সেই আগুনে স্পষ্ট দেখা গেল শায়িত নিকোলাসের মুখ। রাগান্বিত চাহনিতে ইসাবেলার দিকেই তাকিয়ে আছে সে।

চলবে,,,,
এই আমার প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আপনারা উপন্যাসটা পড়ে গঠনমূলক মন্তব্য কেন করেন না? এমন চুপচাপ পড়ে গেলে আমি লিখতে মজা পাই না😔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here