তিমিরে_ফোটা_গোলাপ পর্ব–৬৮

0
386

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৬৮
Writer তানিয়া শেখ

মহল কাঁপানো শব্দ করে রুমের দরজা খুলে যেতে চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে নোভা। গভীর মনোযোগ দিয়ে জার্নাল লিখছিল। হাতে কলমটা এখনও রয়ে গেছে। মুখের চমকটা মুছে একরাশ ক্ষুব্ধতা প্রকাশ পেল। রাগে ফুঁসে উঠে বলল,

“এত দুঃসাহস তোমার! আমার কক্ষে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করো? এবং এমন অশিষ্টের মতো?”

পল অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বলল,
“মাফ করবেন রাজকু_”

“তোমার জিহ্বা টেনে ছিঁড়ে ফেলব ফের ওভাবে সম্বোধন করেছ যদি। বেরিয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে, বেরিয়ে যাও বলছি।”

পল একচুল নড়ল না দেখে নোভা ওর কলার চেপে ধরে। লম্বায় ও পলের চেয়ে কয়েক ইঞ্চি ছোটো। ঝুঁকতে হয় পলকে। নোভার এই আচরণে বিস্মিত না হয়ে পারে না। আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে। ওর হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়। মনে হয় এখনই হৃদপিণ্ড ফেটে যাবে। নোভার দৃষ্টির তাপে ভেতরটা শুকিয়ে আসে। চোখ নামাতে গেলে কলার ধরে রাখা মুষ্টির চাপ দৃঢ় হয়। আড়ষ্ট হয়ে আসা জিহ্বা বহু কষ্টে নড়ে।

“এ কী করছেন? ছাড়ুন আমাকে।”

পল বাঁচতে চায়। নোভা ছাড়লেই ও বাঁচবে। নয়তো লক্ষণ ভালো নয় বেশি। হঠাৎই নোভার রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ঠোঁটের কোণে ক্ষীণ সম্মোহনী হাসি৷ এই হাসির অর্থ পল বোঝে। চট করে চোখ বুজে ফেললো। কী চাইছে এই মেয়ে? পলকে এভাবে নাজেহাল না করলে কী চলছে না ওর? ওই’ই বা সেই সুযোগ দেয় কেন নোভাকে? পল নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারপর ছাড়িয়ে নিতে চায় নোভার মুষ্টি থেকে শার্টের কলার। নোভা ছাড়ছেই না। পল আরও জোর দিতে নোভা ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দেয়। তারপর বিড়বিড় করে কিছু যেন বলে। পল নিজেকে সামলাতে এত ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে খেয়াল করে না।

“বেরিয়ে যাও। শীঘ্রই আমার সামনে আসবে না। যদি আসো তো তোমায় আমি শাস্তি দেবো। এমন শাস্তি যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। যাও।” আবার ওর গলা কর্কশ হয়ে উঠল। মুখটা কঠিন। পল মনে মনে ওর বলা কথায় বার বার ভাবে। শাস্তি দেবে! কেন পলকে ওর এত অপছন্দ? ওর কারণে পল বহুদিন কোনো নারীসঙ্গ উপভোগ করেনি। ওর কারণে পল কোনো মেয়েকে বিছানায় কামনা করতে পারে না। আর কী বাকি আছে যা করলে পলকে নোভার পছন্দ হবে? কী সেটা? কী? ভেতরে ভেতরে চাপা ক্ষোভে ফুঁসতে লাগল। পরক্ষণেই অবাক হলো নিজের প্রশ্নে। কবে থেকে নিজেকে নোভার পছন্দ অপছন্দের ছাঁচে ফেলতে শুরু করল ও? মন জবাব দিলো, অনেক আগে থেকেই। উপলব্ধি আজ হলো। চোখ তুলে দেখল একবার নোভাকে। বদরাগী, অহংকারী ডাইনি নয় আজ নোভা ওর চোখে। নোভা সুদর্শনা এবং খানিকটা অন্যরকম। যা হৃদয় তোলপাড় করে।
কবি সাহিত্যিক হলে পল ওকে হয়তো এই মুহূর্তে তুলনা করত, ভোরের শিশিরবিন্দু আবার গহীন অরণ্যে ফোটা ভীষণ সুগন্ধি মনোমুগ্ধকর এক জংলি ফুলের সাথে। এই জংলি ফুলকে পল ঘৃণা করে না, পছন্দ করে। তাই তো নিজেও চায় নোভার পছন্দ হতে। কিন্তু তা কী সম্ভব?

“এখনও যাওনি?”
নোভার কর্কশ গলা পলকে মলিন করে দেয়। নিজের প্রশ্নের জবাবে নিজেই যেন মনে মনে বলে,
“এই জনমে তোমার পছন্দ হয়ে ওঠা হবে না, জংলী ফুল। এই ভাবনা কেন যেন বিবশ করে তুলছে!”

“পল!”

“মনিব আপনাকে সাথে নিয়ে যেতে বলেছেন।” পলের নিস্পৃহ গলার স্বরে গাঢ় চোখে তাকায় নোভা। পল দরজার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। কেন যেন নোভার দৃষ্টির তাপ অসহ্য হয়ে ওঠে। তখনই টেবিলের ওপরে রাখা নোভার জার্নালটাতে চোখ পড়ল। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করতে নোভা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি জার্নালটা বন্ধ করে ড্রয়ারে লুকিয়ে ফেললো। পল এবার ভুরু কুঁচকায়। এত দূরে দাঁড়িয়ে জার্নাল পড়া অসম্ভব ওর জন্য। নোভা কী বোঝেনি সেটা? না কি পল তাকাল বলে এমন করল। নোভা যে জার্নাল লেখে তা জেনেই অবাক হয় পল। কী লেখে ওতে? ওর মনের কথা, মনের মানুষের কথা? মনের মানুষ! নোভা কী কাওকে পছন্দ করে? পল অনুভব করল ঈর্ষার একটা সূক্ষ্ম সূচ ওর মনে বিধঁল। ও ড্রয়ারের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে দেখে ড্রয়ার শরীরে পেছনে আড়াল করে দাঁড়ায় নোভা। আঙুল চোখের সামনে ধরে বলল,

“আমার চোখ ওপরে পল।”

“ওই চোখেই তো তাকাতে ভয় করে আমার।” ওর বিড়বিড়ানি স্পষ্ট শুনতে পায় না নোভা। বিরক্তি ঝেড়ে বলে,

“কী বললে?”

মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

“চলুন।”

“কোথায়?”

“মনিবের জলসা ঘরে।”

“তুমি যাও। আমি একটু পরে আসছি।”

“মনিব আমাকে আদেশ করেছেন আপনাকে সাথে নিতে যেতে।”

“যদি না যাই। জোর করবে?”

“আপনি ভালো করেই জানেন সেই দুঃসাহস আমার নেই।”

“কী করে জানব? বাড়ি কাঁপিয়ে আমার দরজা খোলার তো সাহস দেখিয়েছ আজ।” নোভা টেবিলের পাশ থেকে বিছানার দিকে হেঁটে এলো। পলের পিঠ ওর দিকে। পল বলল,

“ক্ষমা করবেন বেয়াদবির জন্য। আমি অনেকক্ষণ ধরে দরজায় কড়া নাড়ছিলাম। আপনি জার্নাল লেখায় এত মগ্ন ছিলেন যে টের পাননি।”

“তার জন্য ওমন করে দরজা খুলবে?” অভিযোগ করল নোভা। পল কী করে বোঝাবে এতবার কড়া নেড়ে ওর সাড়াশব্দ না পেয়ে চিন্তা হচ্ছিল। দরজাটাতে জোর সেই কারণেই পড়েছে।

“ভুল হয়েছে। আবারও ক্ষমা চাচ্ছি। এবার প্লিজ চলুন আমার সাথে।”

পলের এমন অনুনয়ে নোভা আর তর্ক করতে পারল না। দুজনে হেঁটে চললো কড়িডোর ধরে। নিকোলাসের জলসাঘর নিচতলার হলঘরের পুবের দিকে। পল আগে আগে হাঁটছে। নোভা পেছনে। পলের কেন মনে হচ্ছে নোভা ওর দিকে চেয়ে আছে? মনের কৌতূহল দমাতে না পেরে ঘাড়ের ওপর দিয়ে পেছনে ফিরল। নোভা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। হতাশ মুখে সামনে মুখ ঘুরায় পল। জলসা ঘরের কাছাকাছি আসতে উগ্র, অশ্লীল সংগীত শুনতে পায় নোভা। একটু যেন ধীর হয় ওর চলার গতি। সাথে পলেরও। জলসা ঘরের দরজার কাছে যেতে যে দৃশ্য দেখে তাতে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় নোভা। দশ বারোটা অর্ধ বসনা ডাইনি নিকোলাসের চারপাশে। নোভা এদের চেনে। কমিউনিটির পতিতালয়ে এদের বাস। আগে এই মহলে বেশ আসা-যাওয়া ছিল ওদের। না, আন্দ্রেই আনত না। আন্দ্রেই ক্যাসানোভা হলেও ওর কিছু নীতি আছে। নিজ মহলে কোনোদিন কোনো মেয়েকে আনেনি। পতিতাগুলো আসত নিকোলাসের জন্য। দৈহিক প্রয়োজনে খুব কম ডাইনিগুলোকে ব্যবহার করেছে। জলসাঘর বসতোই মূলত বিভিন্ন কুটনৈতিক প্রয়োজনে। গত এক বছর কিন্তু কোনো প্রয়োজনেই নিকোলাস জলসার আসর বসায়নি, ডাকেনি ওই কামুক ডাইনিগুলোকেও। কেন তার জবাবও নোভা জানে। ইসাবেলার কারণে। ওর ভালোবাসা বদলে দিয়েছিল নিকোলাসকে। কিন্তু আজ যেন সেই পুরোনো নিকোলাসকে দেখছে ও। আন্দ্রেইর ধারণা তবে ঠিক ছিল। নিকোলাস অবশেষে ভুলে গেছে ইসাবেলাকে! আন্দ্রেইর অপরাধ ঢাকতে সত্য গোপন করলেও মনে মনে ও চেয়েছিল নিকোলাসের মন থেকে ইসাবেলার প্রতি ভালোবাসা কোনোদিন না যাক। ভালোবাসা ওর দুর্বলতা না হোক, শক্তি হোক। আন্দ্রেইকে সাপোর্ট করলেও ওর মনোভাবকে কোনোদিন নোভা সাপোর্ট করে না। ভালোবাসার পক্ষে ও। তবে সেটা কেবলই মনে মনে। প্রকাশ্যে আনলে কমিউনিটির সকলে হাসবে৷ এমনিতেই তো সবার নজরে দুর্বল ও। আজ নিকোলাসকে এই রূপে দেখে খারাপ লাগল। রাগ হলো ওই ডাইনিগুলোর ওপর। একজন দরজায় দাঁড়ানো সুঠামদেহি পলের দিকে এগিয়ে এলো। গলা জড়িয়ে ধরল কাছে এসে। পল মানুষ হলেও এরা ওর ক্ষমতা জানে। নিকোলাসের ডান হাতের ক্ষতির চিন্তা ভুলেও করবে না। কিন্তু একটু আনন্দ উপভোগ তো দোষের না৷ ডাইনিটা ঠোঁট এগিয়ে আনতে পল নোভার দিকে তাকায়। রক্তচক্ষু নিয়ে ওদেরকেই দেখছে নোভা। এই আগুন দেখতে এত কেন ভালো লাগছে পলের? ডাইনি ঠোঁট বসিয়ে দেওয়ার আগেই ঠেলে ফেলে দিলো পল। মুহূর্তে ওটা দাঁত খিঁচিয়ে গালাগাল দিয়ে ওঠে। পল কিন্তু তখনও আড়চোখে নোভাকেই দেখছিল। নোভা সুন্দর। রাগলে আরও সুন্দর দেখায়। হাসল পল। পলকে গালাগাল দিয়ে ডাইনিটা সুরা হাতে নিকোলাসের পাশে বসল। নোভার দৃষ্টি ফের গেল ভাইয়ের দিকে। ওরই দিকে অনিমেষ চেয়ে আছে নিকোলাস। কয়েকজন ডাইনি যেন গায়ে মিশে যেতে চাচ্ছে। নিকোলাসের সেদিকে কোনো হুঁশ নেই। আগের ডাইনিটা হাতের সুরাপাত্র একটু পর পর নিকোলাসের ঠোঁটের কাছে নেয়। ইচ্ছে করে পাত্রটা নাড়িয়ে দেয় যেন। সুরা নিকোলাসের থুতনি বেয়ে গলা দিয়ে নামতে নামতে অর্ধখোলা বুকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ডাইনিগুলো ঠোঁট নামিয়ে আনতে চায়। কিন্তু বাধা পায়। এক একটার চুলের মুঠি টেনে সরিয়ে দেয় নিকোলাস। বাধা পেয়ে রূপের আড়ালের হিংস্র পিশাচিনী হিসহিসিয়ে ওঠে। আবার শান্ত হয়ে কাছে আসে। লজ্জায় চোখ সরিয়ে নেয় নোভা। ভাইয়ের এই নির্লজ্জতা দেখে মনে মনে ভীষণ কষ্ট পায়। নোভার মনে পড়ে না পূর্বে কখনও এমন নির্লজ্জতা দেখিয়েছে ওর ভাই। মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে ওর?

“নোভালি, মাই ফাইয়ারক্রাকার। কাছে এসো।”

ছোটোবেলায় এই উপনামে ম্যাক্স বাবা ও নিকোলাস নোভাকে ডাকত। পিশাচ হওয়ার পর খুব কম ডেকেছে এই নামে। যতবার ডেকেছে আবেগতাড়িত হয়েছে নোভা। কিন্তু ওই ডাইনিগুলো ওর সকল আবেগ ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। রাগ প্রকাশে ভাই বোন কেউ কারো চেয়ে কম নয়। ভাইয়ের নির্লজ্জতাকে কটাক্ষ করে বলল,

“এখানে দাঁড়িয়েই বেশ দেখছি। বিশ্বাস করো বমির উদ্রেক হচ্ছে তোমাকে দেখে। আমাকে কি এই নোংরামি দেখানোর জন্যই এনেছ? এত অধঃপতন হয়েছে তোমার?”

“অধঃপতন? আহ! আমি আরও ভাবলাম মুভ অন করেছি দেখে খুশি হবে। এটাই তো চাচ্ছিলে তোমরা। বিশেষ করে তুমি এবং আন্দ্রেই। তাহলে রেগে যাচ্ছো কেন? খুশি হওনি ইসাবেলার মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠেছি আমি?”

শেষ কথা নোভাকে চুপ করিয়ে দেয়। ভাইয়ের দিকে ভালো করে তাকায় এবার। নিকোলাসের ঠোঁটে সেই চেনা ক্রূর হাসি। ও কি কিছু টের পেয়েছে? গলা শুকিয়ে আসে নোভার। পল চুপচাপ ভাই-বোনকে দেখছে। মনিবকে ও খুব ভালো করে চেনে। যতই নীচ করুক বোনের সামনে এমন বেলেল্লাপনা করার মতে হীন কাজ আগে করেনি। আজ কেন করল তবে? সামনা সামনি এই প্রশ্ন করার সাহস পলের নেই। কিন্তু এটা জানে যে, কারণ ছাড়া এত নীচ কাজ ওর মনিব কোনোদিন করবে না। মনিবের গত কয়েকদিনের কর্মকান্ড ভাবতে লাগল। তাতে যদি কোনো ক্লু পাওয়া যেত। রাশিয়াতে ইসাবেলাকে জীবিত পাওয়া অপ্রত্যাশিত ছিল ওদের দুইজনের জন্য। ইসাবেলা নিজের বেঁচে থাকার যে ঘটনা বলেছিল পল শুনেছে। পুরোপুরি যে বিশ্বাস করেছে তা নয়। ইসাবেলা গুছিয়ে মিথ্যা বলতে পারে না। সহজেই মিথ্যাটা ধরা যায়। নিকোলাস সেই মিথ্যার আড়ালের সত্যিটা জানতে উদগ্রীব। জার্মানি ফেরার পর পলকে নিষেধ করেছে ইসাবেলার ব্যাপারে মুখ খুলতে। তারপর ও যায় দাদোম এর কাছে। দাদোম এখানকার কালো জাদুর সম্রাজ্ঞী। নিকোলাসের সাথে ওর পুরোনো সখ্যতা। সেখানে গিয়ে দুজনের মধ্যে কী কথাবার্তা হয়েছে পল জানে না। ওই পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি ওর নেই। এখন হঠাৎ মনে হলো ইসাবেলার ওই মিথ্যার আড়ালে ঢাকা সত্যের সাথে নোভার কোনো সম্পর্ক নেই তো? উদ্বিগ্ন হয়ে তাকাল নোভার দিকে। নোভার স্নায়ুযুদ্ধ স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে ওর মুখে। পল এবার নিশ্চিত নোভা কিছু করেছে। ভীষণ চিন্তা হতে লাগল ওর জন্য।

“হু?” নিকোলাসের গলা শুনে দুজনেই চমকে তাকায়। উঠে দাঁড়িয়েছে নিকোলাস। এখনও দৃষ্টি নোভার দিকে স্থির। ওর অন্তর্ভেদী দৃষ্টি যেন বোনের সবটা পড়ে নিয়েছে। ডাইনিগুলোকে ইশারা করল রুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে। ক্ষোভ নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল ওরা। নোভা বার বার ঢোক গিলছে। নিকোলাস বেশ স্বাভাবিক ছন্দে বোনের সামনে এসে দাঁড়ায়। ওর সারা গা দিয়ে মদের বিদঘুটে গন্ধ। নাক কুঁচকে ফেলে নোভা। মদকে ও ঘৃণা করে।

“খুশি হওনি ফায়ারক্রাকার?” আবারও বলল নিকোলাস। নোভা হাসার চেষ্টা করে বলল,

“তোমার খুশিতেই আমার খুশি।”

“আমার খুশিতেই তোমার খুশি?”

“হ্যাঁ।”

“মিথ্যা বলছ তুমি ফায়ারক্রাকার।” নিকোলাসের আকস্মিক গর্জনে কেঁপে ওঠে নোভা। পল করুণ চোখে তাকায়। কী করবে এখন ও? নিকোলাসকে শান্ত করা ওর পক্ষে অসম্ভব।

“আ…মি_”

নোভার তোতলানো বন্ধ হয় নিকোলাসের হিংস্র গর্জনে। ওর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলে,

“তুমি আমার খুশিতে কোনোদিন খুশি হওনি। দেখেছিলে না বেলাকে ছাড়া কেমন কষ্টে দিনাতিপাত করেছিলাম আমি? প্রতিনিয়ত মরেছি তোমাদের সামনে। আর তোমরা সব জেনেও দিনের পর দিন, মাসের পর মাস মিথ্যা বলেছ। কষ্ট, যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখেও সত্যিটা বলোনি। বলোনি আমার বেলা জীবিত। বলোনি ওকে আন্দ্রেই ভয় দেখিয়ে বাধ্য করেছে আমাকে ত্যাগ করতে। একটুও দয়া হয়নি আমাকে দেখে তোমাদের নোভা? একটুও করুণা হলো না? লোকে বলে আমার চেয়ে নির্মম পৃথিবীতে দুটো নেই। আমি তো দেখি তোমরা এখন আমাকেও ছাড়িয়ে গেছ। এই তুমি আমার বোন নোভালি? বোনেরা এমন করে আঘাত করে ভাইকে? তবে প্রয়োজন নেই তোমার মতো প্রতারক, মিথ্যাবাদী বোনকে আমার।”

নোভার ঠোঁট কাঁপতে লাগল। মাথা নুয়ে পড়েছে। কম্পিত গলায় উচ্চারণ করল,

“ভাই।”

“ভাই ডাকবে না।” চেঁচিয়ে ওঠে নিকোলাস। নোভা ওর সামনে হাঁটু ভেঙে বসে দুহাত জোড় করে বলে,

“আমাদের ভুল হয়েছে ভাই। ক্ষমা করো। আন্দ্রেইকে ক্ষমা করো ভাই। তোমাকে হারানোর ভয়ে ভুল করে বসেছে ও। শুরুতেই ব্যাপারটা জানলে ওকে আমি বাধা দিতাম। বিশ্বাস করো আমাকে। আমাদের অপরাধ মার্জনা করো।”

নিকোলাস ওকে উপেক্ষা করে সরে দাঁড়ায়। রাগে কাঁপছে রীতিমতো। পলকে বলল,

“ধরে নিয়ে আয় ওই প্রতারককে। ও আমার বিশ্বাস ভেঙেছে। আমাকে আঘাত করেছে। যার শাস্তি ওকে পেতেই হবে।”

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here