তোমার_আমার_প্রণয় #israt_jahan_arina #part_29

0
1314

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_29

কোলাহল পূর্ণ শহরে রাত বাড়ার সাথে সাথে নিস্তব্ধতায় ছেয়ে যেতে শুরু করে।চারপাশ হয়ে উঠে শান্ত।তবে এই নিস্তব্ধতা মাহাদের মনকে কোনো ভাবে শান্ত করতে পারছে না।বিকেলের দিকে লাস্ট কথা হয়েছে দৃশ্যর সাথে।তার পর থেকে আর কল রিসিভ করছেনা।

এই মেয়েটা কি জানেনা তার সাথে কথা না হলে আমি রাতে ঘুমাতে পারিনা?প্রতিদিন কয়েকবার ভিডিও কলে দেখতে না পারলে বুকে চিন চিন ব্যাথা করে।তবুও তাকে ইচ্ছা করে এই মেয়েটা কষ্ট দেয়।দৃশ্যর কণ্ঠ না শুনলে তার মন অস্থির হয়ে উঠে।যত দিন গড়াচ্ছে সে এই মেয়েটার প্রতি ডেসপারেট হয়ে পড়ছে।কি মায়া আছে তার মাঝে যা আমাকে এই ভাবে ঘায়েল করে?

আরিফ রহমান বেশ কিছুক্ষন ধরে মাহাদকে লক্ষ করছেন।ভীষণ অস্থির দেখাচ্ছে মাহাদকে।সে মাহাদের মাঝে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পারছে।সেও ঠিক এই ভাবে অস্থির হয়ে পড়তো দিশার জন্য।

মাহাদ কে নিয়ে তার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। মাহাদের আর দৃশ্যর ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে তিনি সংকীর্ণ।তিনি যেনো কোনো ঝড়ের আভাস পাচ্ছেন। সে সব মুখবুজে সহ্য করলেও মাহাদ যে করবেনা তা তিনি নিশ্চিত। মাহাদ যা পাগলাটে সভাবের, সে সব কিছু ধ্বংস করে দিবে তবুও নিজের ভালোবাসার হাত সহজে ছাড়বে না।

এটা সত্যি সে তার বাবার প্রতি ভীষণ দুর্বল।বাবার জন্য সে সব করতে পারে।তবে আরিফ জানে হয়তো আমজাদ ভাই মাহাদের মুখ দেখে রাজি হলেও আশরাফ হুসাইন কিছুতেই মানবেনা এটা সিওর।

আরিফ রহমান বারান্দায় এসে মাহাদের পাশে দাড়ালেন। মাহাদ চাচু কে দেখে জোর পূর্বক হাসলো।আরিফ রহমান মাহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন

-“তোকে এতো অস্থির দেখাচ্ছে কেনো?”

মাহাদ মুখ গোমড়া করে বললো
-“দৃশ্য কল ধরছেনা চাচু।”

মাহাদের কথা বলার ধরন দেখে আরিফের মনে হলো কোনো ছোট বাচ্চা তার প্রিয় কোনো খেলনা হারিয়ে ফেলেছে।এই ছেলেটার ধূসর চোখে এতো মায়া কেনো?এই মায়াবী ছেলেটির পৃথিবীর সব সুখ পাওয়া উচিত।আচ্ছা! দিশা তার জীবনে থাকলে তারও কি মাহাদের মতো এতো সুদর্শন একটা ছেলে হতো?হত নাইবা কেনো?দিশা ছিলো আগুন সুন্দরী আর সবাই তাকে সুপুরুষ বলে।তাহলে নিশ্চয়ই তাদের কম্বিনেশনে মাহাদের মতো কেউ আসতো।
আরিফ ভাবনা থেকে বেরিয়ে বললো

-“হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।”

মাহাদ অশান্ত হয়ে বললো
-“দৃশ্য আমার সাথে কথা না বলে ঘুমাতে পারেনা।তার কিছুতেই ঘুম হয় না।আমার মনটা ভীষণ অস্থির হয়ে আছে চাচু।দৃশ্য ঠিক আছে তো?”

আরিফ রহমান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মাহাদের দিকে।এই মুহূর্তে মাহাদকে অশান্ত প্রেমিক লাগছে।যে তার প্রিয়সীর এক ঝলক পাওয়ার জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে।
আরিফ রহমান গম্ভীর কন্ঠে বললো

-“তোর সাথে আশরাফ হুসেনের ছেলের ঝামেলা কি নিয়ে?”

মাহাদ মাথার চুলে এলোমেলো ভাবে হাত চালিয়ে ভাবতে লাগলো আগের কথা।
মাহাদ তখন পড়তো ক্লাস টেনে।তখন তারা স্কুলের মাঠে বসে আড্ডা দিত। একদিন তাদের আড্ডার মাঝে হঠাৎ একটা মেয়েকে কাঁদতে কাঁদতে তাদের সামনে আসতে দেখল। মাহাদ খেয়াল করল এটা তারই বন্ধু রাফসান এর ছোট বোন। রাফসান তখন তাদের পাশেই বসা। ছোট বোনকে এভাবে কাঁদতে দেখে সে দৌড়ে তার পাশে এগিয়ে গেল। মাহাদরাও ততক্ষণে মেয়েটির পাশে এসে দাঁড়াল। মেয়েটির নাম রুনা। রাফসান তার বোনকে কাঁদতে দেখে অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছে?

রুনা ততক্ষণে কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে উঠেছে। সে কোনমতে নিজের কান্না থামিয়ে জানালো কিছুদিন যাবৎ একটা ছেলে তাকে প্রচন্ড ডিস্টার্ব করছে রাস্তায়।আজেবাজে কথা বলে। সাথে তার আরও কয়েকজন বন্ধু আছে। কিন্তু আজ ছেলেটা তার হাত ধরেছে। বাজে ইঙ্গিত করেছে।ক্লাস সেভেনে পড়া কিশোরী রুনার মধ্যে তখন বইছিল তুমুল ঝড়। ভয় আর অস্থিরতায় সে জমে গিয়েছিল। ছেলেটার হাত থেকে কোনমতে নিজেকে ছাড়িয়ে সে দৌড়ে নিজের ভাইয়ের কাছে চলে এসেছে।

এসব বিষয়ে জেনে মাহাদের রক্ত মাথায় উঠে গেছে। এরকম একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে এ ধরনের অসভতামি কি করে করতে পারে? আজ এদেরকে মাহাদের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। মাহাদ পরম আদরে রুনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল

-“কেদনা বোন।আজ ওই স্কাউন্ড্রেল গুলোকে তোমার এই ভাই উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে। জীবনে আর দ্বিতীয়বার কখনো কোন মেয়ের সাথে অসভ্যতামি করার সাহস পাবে না।”

রাফসান কৃতজ্ঞতার চোখে তাকায়।রুনাকে বাড়িতে যেতে বলে মাহাদ আর এক মুহূর্ত দেরি না করে তার বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সকলের হাতেই একটা করে হকিস্টিক। রুনা তাদের বলেছিলো সেখানের ব্লু টি-শার্ট পরা ছেলেটাই তার হাত ধরেছে। মাহাদ কাছে যেতেই তার মেজাজ যেন আরো গরম হয়ে গেল। কারণ সেখানে একমাত্র ব্লু টি-শার্ট পরা যে ছেলেটা আছে সে আর কেউ না ফাহিম ছিল। তার সাথে আরও তিনটা ছেলে বসে আছে।

ফাহিমদের পরিবারকে মাহাদ পছন্দ না করলেও সে ভাবতো ফাহিম অন্তত ইফটিজার না।মেয়েদের সম্মান করতে জানে।কিন্তু আজ তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো।রাগে মাহাদের শরীর কাঁপতে লাগলো।ফাহিম মাহাদকে দেখে মনে হয় কিছুটা চমকে গেছিল। ফাহিম কপট রাগ দেখিয়ে বলেছিলো

-“তোরা আমাদের আড্ডা খানায় কেন এসেছিস?”

তানিম রেগে বললো
-“তোরা আজ কাল যেই লেভেলের সুন্নতি কাজ করছিস তাতে তোদের আড্ডাখানা না এসে পারলামনা।”

রাহুল রাগী কন্ঠে বলে উঠলো
-“ফাইজলামি করছিস? বেশি বাড়লে এখান থেকে হেঁটে বাসায় ফিরতে পারবি না।”

রাফসান চিৎকার দিয়ে বললো
-“সেটা পরে দেখা যাবে কারা বাসায় ফিরতে পারে আর কারা না পারে।”

ফাহিম এবার মাহাদের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের টি শার্টের কলার টেনে উচু করে বললো
-“তোরা এখানে কোন মতলবে এসেছিস সেটা সাফ করে বল।”

মাহাদ নিজের চুলে এলোমেলো হাত বুলিয়ে বললো
-“তোর দিন দিন এত অধঃপতন হচ্ছে সেটা তো জানতাম না। আজকাল মেয়ে দেখলে বুঝি গায়ের চুলকানি বেড়ে যায়?”

মাহাদির কথায় ফাহিম ভীষণ রেগে মাহাদের শার্টের কলার টেনে বললো
-“একদম ফালতু কথা বলবি না শালা। তোর চৌদ্দগুষ্টি কে আমার ভালই জানা আছে। মেয়ে দেখলে চুলকানি তোদের বাপ চাচাদের হয়।”

মাহাদ বাঁকা হেসে ফাহিম এর হাত থেকে কলার ছাড়িয়ে বললো
-“আমার কোন বোন নাই তাই তোর শালা হওয়ার কোন চান্স নাই। তবে শুনেছি তোর নাকি বোন আছে। তাহলে শালা হয়তোবা তুই হবি আমার।”

ফাহিম রেগে মাহাদের নাক বরাবর একটা ঘুসি মেরে বসলো। মুহূর্তেই মাহাদের নাক ফেটে রক্ত বেরুতে লাগল। এবার মাহাদের রাগ দেখে কে? প্রচন্ড রেগে হাতের হকি স্টিক দিয়ে ইচ্ছামত ফাহিম কে পেটাতে লাগলো।আর বলতে লাগলো

-“শালা মেয়েদের দেখলেই গায়ে হাত দিতে মন চায় তাই না। আজ তোর সব চুলকানি শেষ করব।”

তারপর শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। কোথা থেকে ফাহিমের আরও দুই তিন জন বন্ধু যুক্ত হয়। তবে মাহাদ দের সাথে ওরা ঠিক পেরে উঠতে পারেনি। সেদিন ফাহিম ভীষণভাবে আহত হয়। মাহাদ ও অনেক জায়গায় আঘাত পায়। মোট কথা দুই পক্ষই অনেক আহত হয়।

মাহাদকে টানা এক দিন হসপিটালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। আর রাফসানকে থাকতে হয়েছিল দুইদিন। তানিম কিছুটা কম আঘাত পেয়েছিল তাই শুধু ড্রেসিং করা হয়েছিল।
আরিফ রহমান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আশরাফ হোসাইন তার ছেলের আঘাতের কথা কখনোই ভূলবে না।যে মানুষ নিজের বোনের মৃত্যুর পরও শুধরাও নি সে কখনো শোধরাবে না। মাহাদের জন্য যে সবকিছু অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠেছে সেটা আরিফ খুব ভালোই বুঝতে পারছে। মাহাদ কি করে সব সামাল দিবে?

ফাহিম গলির মোড়ের দোকানে বসে নিকোটিনের ধোঁয়া ছাড়ছে।তার পাশে বসে রিজভী ফাহিমের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে।রিজভী দেখলো ফাহিমের চোখ দুটি লাল হয়ে আছে।রিজভী দীর্ঘশ্বাস ফেললো।কিছুক্ষণ আগে ফাহিম এখানে এসেই পাশের দেয়ালে অনবরত ঘুষি দিতে লাগলো।রিজভী দেখেই তাকে জলদি আটকালো।কিন্তু ফাহিম তবুও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর হু হু করে কেঁদে উঠলো। আর চিৎকার করে বলতে লাগলো

-“আমাকে ছাড় রিজভী।এই হাত আমি শেষ করে ফেলবো।আমার কলিজাটাকে আজ আমি কি করে মারতে পারলাম।ছোট থেকে ওকে আমি পুতুলের মতো আগলে রেখেছি।আর আজ!! জানিস ও জন্মের পর প্রথম আমি কোলে নিয়েছিলাম।নরম তুলতুলে দৃশ্যকে নিয়ে কতবার চুমু খেয়েছি তার হিসাব নেই।চার বছরের হয়েও সেদিন নিজেকে অনেক বড় মনে হচ্ছিলো।কেউ আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে এটা ভেবেই আমার কিযে আনন্দ হয়েছিলো তোকে বলে বুঝাতে পারবো না।দৃশ্য সব আবদার শুধু আমার কাছে ছিলো।
আমি দেখেছি বাবা দৃশ্যর প্রতি কিছুটা অবহেলা করতো।তার কারনটা তখন না বুজলেও একটু বড়ো হওয়ার পর বুঝতে পেরেছি।দৃশ্য দেখতে ফুপির মতো।আর বাবার ফুপির উপর অনেক রাগ জমে আছে।কারণ ফুপির সুইসাইডের পর বাবা আর জেঠু কে অনেকের কটু কথা শুনতে হয়েছে।সমাজে তারা ছোটো হয়েছে।তাই বাবা দৃশ্যর প্রতি অনেকটা অবহেলা করে।
ঠিক এই কারণেই আমি দৃশ্যকে বেশি ভালোবাসা দিয়েছি।আমার বোনটাকে বাবার আদর দিয়েছি।যাতে তার কষ্ট না হয়।জানিস আমার কলিজাটা পুড়ে যাচ্ছে।জীবনে প্রথম আমি বোনটাকে এই ভাবে মারলাম।কি করে পারলাম আমি?”

রিজভী ফাহিমকে শান্ত হতে বলে।ফাহিমকে এই প্রথম সে কাদতে দেখছে।ভীষণ কঠিন প্রকৃতির ছেলে ফাহিম।আর তার মেজাজ ও বেশ চওড়া।ভীষণ কঠিন ছেলেটাকে এই ভাবে ভেঙে পড়তে দেখে তার খারাপ লাগছে।এই ছেলেটা আসলেই নিজের বোনটাকে খুব ভালোবাসে।তবে রিজভী জানে ফাহিম তার ইগোকে কখনো ছাড়তে পারবে না।
সিগারেট মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিসে ফেলছে ফাহিম।এই মুহূর্তে রাগে তার শরীর শির শির করছে।প্রচন্ড রেগে বললো

-“ওই মাহাদকে আমি ছাড়বো না।ও আমার বোনকে টার্গেট করে নিজের চাচার প্রতিশোধ নিচ্ছে।আমার বোনকে বলির পাঁঠা কিছুতেই হতে দিবো না।সে আমার বোনকে নিয়ে খেলতে চাইছে।ওর মতো বাস্টার্ডকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না।”

আজ প্রায় দুদিন হলো দৃশ্য বিছানায় পড়ে আছে।সেদিন রাতেই হাড় কাপানো জ্বর উঠেছে তার।কিছুতেই মাথা তুলতে পারছে না।সারা রাত নাবিলা আর আনিকা কবির মিলে দৃশ্য মাথায় পানি ঢেলেছে।একটু পর পর জল পট্টি দিয়েছে।নাবিলা তো দৃশ্যকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছে।নাবিলা ঠিক এই ভয়টাই পেতো।নিজের বড়ো বোনের কষ্ট গুলি সে খুব কাছে থেকে দেখেছে।দৃশ্যকে সেই একই কষ্টে দেখে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।দৃশ্যকে সে ভীষণ ভালোবাসে।চাচাতো বোন হলেও সে দৃশ্যকে আপন বোন ভাবে।

আজ দৃশ্যর জ্বর অনেকটা কমেছে।এই দুইদিন তার বাবা ভাই কেউ তাকে একটাবার দেখতে আসেনি।বাবাকে নিয়ে তার আফসোস নেই।তবে ভাইয়া না আসাতে দৃশ্যর খুব কষ্ট হচ্ছে।

হটাৎ সন্ধ্যার দিকে নাবিলা এসে খুব সাবধানে দৃশ্যকে জানায় মাহাদ তাকে কল করছে।দৃশ্যর মনে পড়লো গত পরশু সে তার ফোনটা টেবিলে রেখেছিলো।তার পর ওই ঘটনা।নিশ্চয়ই মাহাদ তাকে পাগলের মতো কল করে যাচ্ছে।এই দুই দিন বিছানা ছেড়ে টেবিল অব্দি যাওয়ার শক্তিটুকু তার শরীরে ছিলো না।

নাবিলাকে বলে ফোন এনে দেখতে পেলো ফোনটা বন্ধ।দৃশ্য ফোন চার্জ দিয়ে ওপেন করতেই মেসেজের বর্ষণ হতে শুরু করলো।দৃশ্য বুঝে গেছে মাহাদ এই দুই দিন তাকে পাগলের মত কল মেসেজ করে গেছে।ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠলো।’হার্টবিট’ নামটা দেখে আবারো তার হার্টবিট বাড়তে শুরু করলো।কল রিসিভ করতেই মাহাদ অস্থির হয়ে বলতে লাগলো

-“দৃশ্যপাখী তুমি ঠিক আছো?তোমার কিছু হয়নি তো? দুই দিন কোথায় ছিলে?কল পিক করছিলেনা কেনো?তুমিকি বুঝনা আমার কষ্ট হয়।ইচ্ছা করে কষ্ট দিতে চাইছো?কল রিসিভ না করলে আমার মাথা গরম হয়ে যায় জানোনা?”

মাহাদের এতো এতো প্রশ্ন শুনে তার চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা করছে।মুখে হাত দিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।নিজেকে সামলিয়ে দৃশ্য বললো

-“আ..আমার ফোনে সমস্যা হয়েছে তাই।”

দৃশ্যর কণ্ঠ শুনে মাহাদের ভেতরটা ধক করে উঠল।সে বুঝতে পারছে তার দৃশ্য ভালো নেই। মাহাদ অস্থির হয়ে বললো

-“পিচ্ছি তুমি কাদঁছিলে?কিছু তো হয়েছে।প্লিজ বলো জান।”

-“কিছু হয় নি।এমনি ঠান্ডা লেগেছে।”

-“ভিডিও কলে আসো।”

দৃশ্য কিছুটা ঘাবড়ে গেল।কারণ তার গালে এখনো আঙ্গুলের চাপ পড়ে আছে। মাহাদ দেখলে কি তুলকালাম বাঁধবে আল্লাহ জানে।দৃশ্য তুতলিয়ে বললো

-“এখন না প্লিজ।পড়ে দেই।”

মাহাদ রাগী কন্ঠে বললো
-“এক্ষনি আসবে।রাইট নাও।”

দৃশ্যর ভেতরটা কেপে উঠলো।সে অনেক কষ্টে উঠে বসলো।মাথায় ঘোমটা দিয়ে গাল ঢাকার চেষ্টা করলো।কল রিসিভ হতেই মাহাদের কপাল কুচকে গেলো।দৃশ্য মুখে ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে।মুখটা ভীষণ মলিন দেখাচ্ছে। মাহাদ বললো

-“ঘোমটা সরাও।”

দৃশ্য মাথা নেড়ে না জানালো। মাহাদ কপট রাগ দেখিয়ে বললো
-“আমি কি বলেছি?”

দৃশ্য ভয়ে ভয়ে ওড়না সরিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে রাখলো। মাহাদের চোয়াল মুহূর্তেই শক্ত হয়ে গেলো।দুই চোখে ভিড় করেছে অশ্রু।তার প্রিয়সীর অবস্থা দেখে তার বুকের বা পাশে বেথা হচ্ছে।দৃশ্যর দুই গালে অসংখ্য আঙ্গুলের ছাপ।পুরো মুখ লাল হয়ে আছে।যেই মেয়েটাকে সে ছোট বাচ্চার মতো আগলে রাখে,সহজে উচু গলায় কথা বলেনা।অতি আদুরে গলায় কথা বলে সেই মেয়ের কিনা এই অবস্থা? মাহাদ গম্ভীর স্বরে বললো

-“কে তোমার গায়ে হাত তুলেছে?”

দৃশ্য হু হু করে কেঁদে উঠলো।বুকের জমানো কষ্ট গুলি মাহাদের সামনে অশ্রু হয়ে বিসর্জন হচ্ছে। মাহাদ অনেকবার জিজ্ঞাসা করার পরও দৃশ্য কিছুই বললো না।শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। মাহাদ নাবিলাকে ফোন দিতে বলে।নাবিলা মাহাদকে সব বলতেই মাহাদ প্রচন্ড রেগে যায়।রাগে চিৎকার দিয়ে বলে

-“ফাহিমের এতো বড়ো সাহস আমার কলিজার গায়ে হাত তুলে।ওর ওই হাত যদি না ভাঙছি তো আমি মাহাদ না।”

দৃশ্য ভয় পেয়ে গেলো।দৃশ্য এই দুইজনের রাগ সম্পর্কে ভালো করে জানে। একজন সিডর হলে অন্যজন সুনামি।দৃশ্য কাপা কাপা। গলায় বললো

-“প্লিজ মাহাদ।তুমি ভাইয়ার সাথে কিছু করবে না।”

-“ওই ফাহিমকে আমি টুকরা টুকরা করবো।তোমার গায়ে হাত দেয়ার সাহস পায় কথায়?”

-“মাহাদ সে আমার ভাই হয়।তার কোনো ক্ষতি আমি কিছুতেই মানবো না।প্লিজ আমার কসম লাগে।”

-“কান্না বন্ধ করো। জ্বর কমেছে?”

-“হুঁমম!”

-“দৃশ্য পাখি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে?”

-“না আমি ঠিক আছি।”

-“ভালোবাসি।”

মাহাদের ভালোবাসি শুনে দৃশ্যর মনে শিহরণ বয়ে গেলো।এই দুই দিনের কষ্ট যেনো মুহূর্তেই গায়েব হয়ে গেছে।এই কথাটি কি এন্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে?নাহলে নিমিষেই তার শরীর থেকে জ্বর ছেড়ে গেলো কি করে?

আরিফ রহমান রাতের ডিনারের জন্য ডাকতে এসেছে।এই দুই দিন মাহাদের অস্থিরতা দেখেছে তিনি।মেয়েটা যে তার প্রাণভোমরা হয়ে উঠেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মাহাদ বিছানার এক কোণে মাথা নিচু করে বসে আছে।আরিফ ডাক দিতেই মাহাদ মাথা তুলে তাকালো।তার চোখ লাল হয়ে আছে।আরিফ রহমান অস্থির হয়ে বললো

-“কীরে কি হয়েছে?দৃশ্যর সাথে কথা হয়নি?”

মাহাদ আরিফকে আচমকা জড়িয়ে ধরে।নিরবে কাদঁছে সে।আরিফ মাহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। মাহাদ বলতে লাগলো

-“চাচু ওরা আমার দৃশ্যকে আঘাত করেছে।ওই বাচ্চা মেয়েকে কি করে মারতে পারলো?আমি কিছু করতেও পারছি না।কারণ ফাহিমকে কিছু করলে আমার পিচ্ছিটা অনেক কষ্ট পাবে।”

আরিফের দুই চোখ ভিজে উঠলো।পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলছে তা বুঝতে পারছে। তার দিশা কেও তো তারা এভাবে আঘাত করেছে। মেয়েটা মুখ বুজে সব আঘাত সহ্য করত। তবে এবার সে মাহাদের সাথে এমন কিছু ঘটছে দিবে না। তাই সে চিন্তা করেছে আজি বড় ভাইয়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবে। আর যাই হোক এই ছেলে মেয়ে দুটোকে সে কিছুতেই তার মত কষ্ট থাকতে দেবেনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here