তোমার_আমার_প্রণয় #israt_jahan_arina #part_28

0
849

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_28

আকাশের রক্তিম সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে।চারিদিকে নেমে এসেছে সন্ধ্যা।আরিফ রহমান আর মাহাদ বেরিয়েছে আজ এলাকায় ঘুরতে।অনেক বছর পর বাংলাদেশে এসেছেন।সব কিছু অনেক বদলে গেছে।তবে স্মৃতিগুলো এখনো তাজা আছে।যেমন সামনের ওই পার্কের তিন নম্বর বেঞ্চটাতে সে আর দিশা সব সময় বসত।দিশা আইসক্রিম খুব পছন্দ করত।

মাহাদ এই কথা শুনে হেসে দিল।আরিফ রহমান বললেন
-“কিরে হাসছিস কেনো?”

-“আমার পিচ্ছি টা তার ফুপির স্বভাব পেয়েছে।তার সাথে আমার দেখাও এই আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে।জানো চাচু পিচ্ছিটা প্রথম দেখায় আমাকে বোকা বানিয়েছিলো।”

-“খুব ভালবাসিস?”

মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“তোমার চাইতে বেশি।তুমি নিজের ভালোবাসাকে ছাড়লেও আমি আমার ভালোবাসাকে কিছুতেই ছাড়বো না।”

-“তোর বাবাকে দেখলাম দৃশ্যকে খুব পছন্দ করে।কিন্তু তার পরিচয় জানলে যদি রাজি না হয়?আমার জন্য ওই ফ্যামিলির কাউকেই পছন্দ করে না।”

মাহাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
-“আমি জানি বাবা আমার সুখের জন্য সব করতে পারে।”

-“দোয়া করি তোর ভালোবাসা সফল হোক।”

-“দৃশ্যকে দেখবে?”

আরিফ রহমান মলিন মুখে বললেন
-“এখন না পরে দেখবো। ওকে দেখলে দিশার কথা মনে পড়বে।”

-“কতদিন আছো এখানে?”

-“দেখি কতদিন থাকা যায়।তবে রাজশাহীতে থাকবো না। এখানে আমি ঠিক মত শ্বাস নিতে পারি না। প্রতিমুহূর্তে স্মৃতিরা ঘেরাও করে। তাই ঢাকায় থাকবো।”

-“তাহলে কাল আমার সাথে চলো।”

-“দেখি।”

দৃশ্য আজ বাসায় একা।মা একটু শপিংয়ে গেছে আর বাবা তো রাতে বাড়ি ফিরবে।আর ফাহিম ভাইয়া সন্ধায় বাড়ি থাকে না।নিশ্চয়ই কোথাও আড্ডা দিচ্ছে।

দৃশ্য আলমারির ড্রয়ারে চেইন আর বালা জোড়া যত্ন করে রেখে দিল।তার অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।মুহূর্তেই নিজেকে অনেক বড় মনে হচ্ছে।কেমন বউ বউ ফিল।সত্যি ভাবতেই শরীর শিউরে উঠছে সে মাহাদের বউ হবে।আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো।এক রাশ লজ্জা তাকে ঝাপটে ধরেছে।

তমা দৃশ্যর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পেয়ারা খাচ্ছে আর দৃশ্যকে পর্যবেক্ষণ করছে।হটাৎ দৃশ্যর চোখ দরজার দিকে পড়তেই দৃশ্য ভয় পেয়ে গেলো।বুকে কয়েকবার থুতু দিয়ে বললো

-“ইসস!তমা আপু ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।কখন এসেছ?”

-“যখন তুই আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখে লজ্জা পাচ্ছিলি।”

-“তেমন কিছু না।”

-“আহারে!আমাদের পিচ্ছি দৃশ্যটা সত্যি বড়ো হয়ে গেছে।কেমন প্রেমের সাগরে ভাসছে।আচ্ছা ওই ফাহিম গুন্ডাটা সত্যি তোর ভাইতো?”

দৃশ্য কপাল কুঁচকে বললো
-“এমন কথা কেনো বলছো?”

-“না আসলে আমি কনফিউজড।একজন বাচ্চা বয়সে প্রেমের সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে আর অন্য জন এই দামড়া বয়সেও প্রেম কি সেটাই বুজলো না।”

-“প্রেমের আবার বয়স আছে নাকি?”

-“না নাই।কিন্তু সেটা তোর ভাইকে কে বুঝাবে?”

দৃশ্য হাসতে হাসতে বললো
-“আমার গুন্ডা ভাইটা কিন্তু রোমান্টিক বর হবে মনে হয়।”

তমার মুখ ভেংচি কেটে বললো
-“কচু হবে তোর ভাই। ব্যাটা খবিশ।”

দৃশ্য খিল খিল করে হেসে দিল।আর তমা মুখ ভার করে বসে রইল।
দৃশ্য এতক্ষণে খেয়াল করলো তমা একটা সবুজ শাড়ী পরে আছে।দৃশ্য হেসে বললো

-“তোমাকে তো ভীষণ সুন্দর লাগছে আপু।আজ তোমার গুন্ডা দেখলে ফিট খেয়ে যাবে।”

-“তোর ভাই একটা নিরামিশ।দেখবি আমাকে খেয়ালই করবে না।”

-“আমার মনে হয় ভাইয়াও তোমাকে পছন্দ করে।কিন্তু বলে না।”

-“নারে সে আমাকে একদম দেখতে পারে না।তবে তোর ভাইকে আজ আমি দেখে নিবো।”

ফাহিম বাসায় ঢুকতেই তমার দেখা পেলো।তমা লাজুক ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে।এক মুহূর্তের জন্য ফাহিমের মনে হলো সে কোনো সবুজ পরীকে দেখছে।কাজল কালো চোখ,খোলা চুল আর ফর্সা গায়ে সবুজ শাড়ি।সব মিলিয়ে ফাহিমের বুকে ধক ধক করে উঠল। এক দৃষ্টিতে তমার দিকে তাকিয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর নিজেকে সংযত করে সে বলে উঠলো

-“এই রকম সং সেজে আমাদের বাসায় কি করিস?”

মুহূর্তেই তমার মনটা ভেঙে গেলো।এত সুন্দর করে যার জন্য সেজেছে সেই কিনা বলছে সং সেজেছে?একবারও কি তার প্রশংসা করা যায় না?এই রূপ সৌন্দর্য সে শুধু এই মানুষটিকে বিলিয়ে দিতে চায়।আর সেই মানুষটি কিনা প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে তাকে ক্ষত বিক্ষত করছে?আরে ব্যাটা চোখ মেলে দেখ আমার মত সুন্দরী মেয়ে জীবনে দেখেছিস?এলাকার ছেলেরা দিন রাত আমার বাসার সামনে ঘুর ঘুর করে একবার আমাকে দেখার জন্য।আমাকে পাওয়ার জন্য সবাই আন্দোলন করতো যদি না তুই এই এলাকায় থাকতি।নেহাত ছেলে পেলেরা তোকে ভয় পায়।তাই এলাকার মেয়েদের সাথে ইভটিজিং করতে ভয় পায়।ফাজিল ব্যাটা বাপের ক্ষমতার দাপট দেখায়। তমা মলিন হেসে বললো

-“ফাহিম ভাই আপনার চোখে কি সমস্যা?”

ফাহিম কপট রাগ দেখিয়ে বললো
-“আমার চোখে সমস্যা হবে কেনো?”

-“তাহলে আমার এই সুন্দর সাজকে আপনার সং কেনো মনে হলো।বাসা থেকে বের হওয়ার পর কত ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল জানেন?”

-“শোন তোর এই সং সাজ অন্য মানুষের ভালো লাগতে পারে কিন্তু আমার না।”

-“সময় হলে আপনারও লাগবে।”

-“এই তোর একটু লজ্জা বলতে কিছু নাই? বের হ বাসা থেকে। যখন তখন আমাদের বাসায় তোর কি কাজ?”

তমা কয়েক কদম এগিয়ে এসে ফাহিম এর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বললো
-“আমার সব কাজ তো আপনাকে ঘিরে ফাহিম ভাই।আমাকে দেখে যে আপনার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে সেটাকী আপনি জানেন?”

কথাটা বলেই ফাহিমের ঠোঁটে টুপ করে ঠোঁট ছুয়ে দৌড়ে পালালো।ফাহিম সেখানেই ঠোঁটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলো।ঠিক কি ঘটলো সে বুঝে উঠতে পারল না। তার বুকের ভেতর কেমন টিপটিপ শব্দ করছে। মনে হয় নিঃশ্বাস নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে। এই বেয়াদব মেয়েটা কি করে গেল।সত্যিই কি তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছিল?

তমা একদৌড়ে দৃশ্য দের বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজের বাড়ির গেটে ঢুকে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিলো।দুই হাতে মুখ ঢেকে নিলো।ইসস! কি কাজটা করলো সে।লজ্জায় এখন তাকাতে পারছেনা।ফাহিম ভাইয়ের সামনে কি করে যাবে?এই গুন্ডাটা কি তার অনুভূতি বুঝতে পারবে?
তার ঠিক কয়েকদিন পরের কথা।সন্ধায় দৃশ্য বসে টিভি দেখছিল। হাতে তার পাকোড়ার বাটি।সবজি পাকোড়া তার ভীষণ পছন্দের।বাবা কোন মিটিংয়ের জন্য গেছেন।আগেও বাবা সব সময় ব্যাস্ত থাকতেন।আর জবে থেকে মেয়র হয়েছেন তখন থেকে আরো বেস্ত হয়ে পড়েছেন।মাঝে মাঝে তার মনে প্রশ্ন জাগে তার মা কি বাবার সাথে সুখে আছে?সে কোনো দিন মা বাবার কোনো সুন্দর মুহূর্ত দেখেনি।বাবা সব সময় গম্ভীর।আর মা যে বাবাকে ভীষণ ভয় পায় সেটা দৃশ্য বুঝতে পারে।

তার বড়ো জেঠু সেই একই অবস্থা।ঠিক বাবার মত গম্ভীর। জেঠি ও জেঠু কে ভয় পায়।নাবিলা তো তার বাবাকে যমের মত ভয় পায়।আর নার্গিস আপু!

নার্গিস আপুর জন্য দৃশ্যর খুব কষ্ট হয়।আগে দৃশ্য ছোট ছিল।কিন্তু এখন দৃশ্য বুঝে ভালোবাসার মানুষকে হারাবার কষ্ট কত তীব্র হয়।নার্গিস আপু এই বাসায় খুব কম আসে।দৃশ্য যখনই নার্গিস আপুকে দেখেছে তখনই তার মুখটা মলিন দেখেছে।আসলেই মনে একজনকে রেখে অন্য জনের সাথে ঘর করা ভীষণ কষ্টের।দৃশ্য হলে কখনোই পারতো না।
মাহাদের মতো এতো আদুরে গলায় আদো কেউ তার সাথে কথা বলতে পারবে? মাহাদের মতো এত কেয়ার কেউ করতে পারবে না।দৃশ্যর ছোট খাটো বিষয়ে কেউ এতো খেয়াল করতে পারবে না।আর সবচাইতে বড়ো বিষয় কেউ মাহাদের মতো ভালোবাসতে পারবে না।তবে দৃশ্য ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ভয় পাচ্ছে।

ফাহিম ভাইয়াও অনেক রাগী আর গম্ভীর।আচ্ছা তাদের বংশের সব ছেলেদের সমস্যা কি?সে শুনেছে তার দাদাজান ও ঠিক এমন গম্ভীর আর ইগোস্টিক পার্সন ছিলো।এটা বোধয় তাদের বংশের জীন গত সমস্যা।তবে এই রীতি ভেঙে একমাত্র নাবিল ভাইয়া হয়েছেন জেঠির মতো।জেঠি ভীষণ শান্ত মেজাজের মহিলা।

দৃশ্য প্রথমে ভাবতো সবার পরিবারই মনে হয় এমন হয়।তবে তার ধারণা বদলে গেছে মাহাদের পরিবার দেখে। মাহাদের বাবার সাথে মাহাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখে দৃশ্য অবাক হয়েছিলো।তার পর তার মা,ভাই,দাদী আর বাকি সবাই তাকে কত আপন করে নিলো। মাহাদ আসলেই ভীষণ লাকী এতো সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছে।তার পরিবার কেনো এমন হলো না?

এতো সব ভাবনার মাঝে বাসার ডোরবেল বেজে উঠলো।কিন্তু দৃশ্যর কোনো হেলদোল নেই।সে আরামসে টিভিতে ডরিমন দেখতে বেস্ত।দৃশ্যর মা দ্রুত দরজা খুলে দিলেন।ছেলেকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলেন।ছেলের ফর্সা মুখটা একদম লাল হয়ে আছে।ছেলের মেজাজ ঠিক বাপের মতো।একটুতেই রেগে যায়।ছেলের হাতের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলেন।কারণ হতে রক্ত লেগে আছে।তিনি চিন্তিত হয়ে বললেন

-“কীরে ফাহিম কি হয়েছে? তোর চোখ-মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?আজ আবার মারামারি করেছিস?”

ফাহিম কিছু না বলে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ভেতরে চলে গেল।সোফার রুমে আসতেই দেখতে পেলো দৃশ্য টিভি দেখছে।দৃশ্য ভাইকে দেখেই বুঝতে পারলো তার ভাইয়ের মেজাজ অত্যাধিক খারাপ।সে বললো

-“কি ব্যাপার ভাইয়া তোমার মুখ এমন বাংলার পাঁচ করে রেখেছো কেনো?আজ আবার মারামারি করেছো?”

ফাহিম গম্ভীর স্বরে বললো
-“মাহাদের সাথে তোর কি সম্পর্ক?”

কথাটা শুনেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো। হাতে থাকা বাটিটা কাপতে শুরু করলো। পরক্ষণেই দৃশ্য বুঝতে পারল তার পুরো শরীর কাঁপছে। ফাহিম ভাইয়া মাহাদের সম্পর্কে কি করে জানলো? ভাইয়া কি কোনভাবে তার আর মাহাদের বিষয়টা জেনে গেছে? ভাইয়ের রক্তিম চোখ দেখে দৃশ্য কয়েকবার শুকনো ঢোক গিললো। এটা সত্যি যে ফাহিম তাকে ভীষন আদর করে। কিন্তু তার ভাই রেগে গেলে ঠিক কতটা কঠোর হতে পারে দৃশ্য সেটা ভাবতেও পারছে না।
অন্য দিকে রাগে ফাহিমের মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগের কথা। ফাহিম, রিজভী আর তার ভার্সিটির কয়কজন বন্ধু বসে গলির মোড়ে আড্ডা দিচ্ছিল। কোথা থেকে রকি, রাহুল আর অমিত এসে তাদের পাশে বসলো।তাদের দেখেই ফাহিমের কপাল কুঁচকে গেল।রকির সাথে তার অনেকদিন ধরে কোনো সম্পর্ক নেই।আর যাই হোক একজন রেপিস্টের সাথে তার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।সেদিন সে না আসলে আজ তমার জীবনটা শেষ হয়ে যেতো।

রাহুল আর অমিতও তার সাথে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করেছে।হয়তো তাদের জন্য রকি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।রকি আয়েশ করে চেয়ারে বসে বাঁকা হেসে বললো

-“কিরে কি খবর তোদের?”

ফাহিম রেগে বললো
-“তুই এখানে কেনো?তোকে না আমার এলাকায় আসতে নিষেধ করেছি?তোর সাহস তো কম না?আমি ফাহিম কি জিনিষ সেটা ভুলে গেছিস?”

রকি খিল খিল করে হেসে বললো
-“আরে ভাই মাথা ঠান্ডা কর। এতো চেতার কি আছে?আমি জানি এই এলাকায় তোর অনেক ক্ষমতা।আবার ছাত্রলীগ করছিস।তোর নাগালে কি আমরা আছি?তবে তোর মনটা অনেক বড়ো তা এখন বুজলাম।অত বছরের শত্রুতা ভুলতে পারলি আর আমাকে মাফ করতে পারলি না?”

ফাহিম রকির কথা কিছুই বুজলো না।সে রেগে বললো
-“কি বলতে চাইছিস?”

-“আরে কি আর বলবো।তুই যে মাহাদ আর তার পরিবারের সাথে সব শত্রুতা ভুলে তাকে বোন জামাই বানাতে যাচ্ছিস আগে বলিসনি কেনো?”

মুহূর্তেই ফাহিমের রাগে শরীর কাঁপতে লাগলো।এই রকিকে আজ সে মেরেই ফেলবে।তার বোনকে নিয়ে এমন কথা বলার সাহস কথায় পেলো?ফাহিম রেগে চিৎকার দিয়ে বললো

-“আর একটা ফালতু কথা শুনতে চাই না।বের হ এখান থেকে।”

রকি উচ্চ শব্দে হেসে বললো
-“তুই এমন ভাব করছিস যেনো জানিস না তোর বোন মাহাদের সাথে প্রেম করছে? তাও কয়েক বছর ধরে।”

ফাহিম রেগে রকির গেঞ্জির কলার ধরে বললো
-“আর একটা বাজে কথা বললে তোর জিব টেনে ছিড়ে ফেলবো।আমার বোনকে নিয়ে একটা বাজে কথা বলবি না।”

রকি আবারো হেসে বললো
-“আরে শালা তুই জানিস না তোর বোনের আর মাহাদের গভীর প্রেম চলে। এতো দিনে মনে হয় তোর বোনের শরীরের সব তিল অব্দি মাহাদের গোনা শেষ হয়ে গেছে। এতো হট জিনিস দেখলে কে নিজেকে সামলাবে ব…….?”

ফাহিম রকিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নাক বরাবর ঘুষি মেরে দিলো।রকি সাথে সাথে নিচে পরে গেল।ফাহিম এবার রকির বুকের উপর উঠে তাকে মারতে শুরু করলো।ফাহিম যেনো উন্মাদ হয়ে গেছে।আজ সে রকিকে মেরেই দম নিবে। রিজভী আর অন্য বন্ধুরা তাকে জোর করে উঠালো। এর মধ্যেও রকিকে বেশ কয়েকটা লাথি বসিয়ে দিলো আর বলতে লাগলো

-“আমাকে ছাড়।এই মাদার*….* কে আজ আমি মেরেই মেলবো।আমার বোনকে নিয়ে বাজে কথা বলে সাহস কত?”

এতক্ষণে রকির অবস্থা সুচনীও।রিজভী কিছুতেই ফাহিমকে থামাতে পারছে না।সে রেগে বললো

-“ফাহিম মাথা ঠান্ডা কর।আর মারলে ও মরে যাবে।”

-“যাক মরে।ওর মতো নর্দমার কিটকে বাঁচিয়ে রাখা ঠিক না।”

এবার রাহুল রেগে ফাহিমের সামনে এসে বললো
-“নিজের বোনকে ঠিক রাখতে পারিস না আবার আমাদের সামনে হিরো সাজিস?দেখ তোর বোনের কীর্তি।”

কথাটা বলেই রকির পকেট থেকে ফোন বের করে কয়েকটা ছবি বের করে দেখালো।
ছবিগুলি দেখে মাহাদের পায়ের নিচে থেকে যেনো মাটি সরে গেলো।কারণ ছবি গুলিতে দৃশ্য আর মাহাদ কোনো রেস্টুরেন্টে বসা।ফাহিম যেনো চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে।
রকি রক্তাক্ত অবস্থায় হেসে বললো

-“শালা তোর এলাকার মেয়েকে ছুঁয়েছিলাম বলে আমাকে মারলি।আর ওই দিকে তোর চিরো শত্রু মাহাদ তোর বোনকে নিয়ে কতবার বিছানায় গেছে কে জানে? মাহাদের চাইতে আমরা খারাপ কিসে?মানলাম মাহাদের মতো অত বড়লোক না আমরা কিন্তু তোর বোনকে বিছানায় সুখ ঠিক দিতে পড়তাম।”

কথাটা বলেই উচ্চ শব্দে হাসতে শুরু করলো।ফাহিমের রাগ যেনো আকাশ ছুয়ে গেল।সে দৌড়ে যেয়ে রকিকে আবার মারতে শুরু করলো। এক পর্যায়ে রকি জ্ঞান হারালো। কিন্তু ফাহিম তবুও মেরে যাচ্ছে।রিজভী অনেক কষ্টে ফাহিমকে থামালো।

দৃশ্যকে চুপ থাকতে দেখে ফাহিম রেগে চিৎকার দিয়ে বললো
-“কি জিজ্ঞাসা করলাম তোকে?”

এতক্ষণে আনিকা কবির দৃশ্যর পাশে এসে দাড়ালো আর বললো
-“কি হয়েছে ফাহিম?এমন চিৎকার করছিস কেনো?”

-“মা তোমার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করো ওই মাহাদের সাথে তার কি সম্পর্ক?”

আনিকা কবির অবাক হয়ে বললেন
-“কোন মাহাদ?”

ফাহিম রেগে বললো
-“আমজাদ রহমানের ছেলে মাহাদ।”

আনিকা কবির যেনো মুহূর্তেই জমে গেলেন।এসব তিনি কি শুনছেন?তার মেয়েও কি দিশার মতো একই ভুল করলো?”

ফাহিম দৃশ্যর হাত ধরে নিজের কাছে এনে বললো
-“তুই ওই মাহাদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিস?”

দৃশ্যর ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো।তার ভাইকে কেমন হিংস্র দেখাচ্ছে।তার দুই চোখ বেয়ে অঝোর ধারা বইতে লাগলো।দৃশ্যর চুপ থাকার কারণে ফাহিম তার উত্তর পেয়ে গেলো।রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।তার বোনের এতো অধপতন হয়েছে। রেগে সে এলোপাথাড়ি দৃশ্যকে মারতে লাগলো।দৃশ্য চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।এমন মার দৃশ্য জীবনেও খায়নি।এই মুহূর্তে তার কাছে ফাহিমকে যম মনে হচ্ছে।আজ প্রথম তার ভাই তার গায়ে হাত তুলছে।এক সময় দৃশ্য ফ্লোরে পড়ে গেলো।ফাহিম তখনও তাকে মেরে যাচ্ছে।

আনিকা কবিরের এতক্ষণে হুশ ফিরল।সে দৌড়ে দৃশ্যকে ঝাপটে ধরে ফাহিমকে থামালো।ফাহিম যেনো নিজের মধ্যে ছিলো না।রকির কথা গুলো তার মাথা খারাপ করে দিয়েছে।দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে দেখলো দৃশ্যর নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।ফাহিম রেগে আবার বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

দরজার কাছে এসে দেখলো তার বাবা আশরাফ হুসাইন
দরজায় দাড়িয়ে আছেন।তার চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে।ফাহিম দরজার কাছে আসতেই ফাহিমের গালে একটা চর বসিয়ে দিলেন তিনি।ফাহিম কয়েক মিনিট দাড়িয়ে থেকে দ্রুত পায়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো।

আশরাফ হুসাইন সোজা হেঁটে নিজের রুমে চলে গেলেন।একবারও দৃশ্যর দিকে তাকালেন না।আনিকা কবির স্বামীর গম্ভীর মুখ দেখে ভয়ে দৃশ্যকে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলেন। সামনে কি হতে চলেছে তা ভেবে তার বুক ধক ধক করছে।

দৃশ্যর মাথা ঘুরছে।আনিকা কবির দৃশ্যকে তার রুমে এনে বসিয়ে গালে ব্যাথার ঔষধ খাইয়ে দিলেন।তারপর মলম লাগিয়ে দিচ্ছেন।তার চোখ থেকে অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়ছে।তিনি নিজের মেয়েকে নিয়ে ভয়ে আছেন।তার মেয়েটার কপাল কি দিশার মতো হতে যাচ্ছে?তিনি ভীত গলায় বললেন

-“তুই এমন ভুল কিভাবে করলি দৃশ্য? নার্গিসের অবস্থা তুই দেখিস নি? তুই কি সত্যিই ওই ছেলেটার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিস?”

দৃশ্য কোনো জবাব দিলো না।সে কান্নায় ভেঙে পড়লো।আনিকা কবির গম্ভীর স্বরে বললেন
-“তুই ওই ছেলেকে ভুলে যা।”

দৃশ্য করুন চোখে মায়ের দিকে তাকালো। আর কাঁদতে কাঁদতে বললো
-“আমি এটা পারব না মা। আমি কিছুতেই মাহাদকে ভুলতে পারবোনা। তুমি প্লিজ ভাইয়া কে বোঝাও। ভাইয়া কি সেই ঝগড়াঝাঁটি ভুলতে পারেনা?”

আনিকা কবির দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। দৃশ্য ভাবছে ওই পরিবারের সাথে শুধু ফাহিম আর ওই ছেলেটাকে নিয়ে সমস্যা। দৃশ্য কে কখনোই দিশার কথা বলা হয়নি। সে শুধু জানে তার একটা ফুপি ছিল যে সুইসাইড করে মারা গেছে। কিন্তু কেন এমন হয়েছে আর সেটা যে আমজদ রহমানের পরিবারের সাথে সম্পর্কিত সেটা দৃশ্য জানেনা।

আচ্ছা কোন ভাবে সেই ছেলেটা তার চাচার প্রতিশোধ নিতে দৃশ্যের সাথে এমন সম্পর্কে বাধেনিতো?মেয়েটা শুধু দেখতেই ফুপির মতো হয়নি।ভাগ্য ও ফুপির মত পেয়েছে।এই একই ভুল তার মেয়েটাও করছে।তবে সে কিছুতেই নিজের মেয়ের শেষ পরিণতি দিশার মতো হতে দিবে না।তাছাড়া সেই ছেলেটা কি তার মেয়েকে নিয়ে কোনো খেলায় মেতে উঠেছে? কিছুই মাথায় আসছে না তার। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন

-“দৃশ্য তুই তো জানিস তোর ফুপি কেনো সুইসাইড করেছে তাই না?”

দৃশ্য বুঝতে পারলনা তার মা ফুপির কথা কেনো বলছে?আর না ভেবে দৃশ্য মাথা নেড়ে হে জানালো।
আনিকা কবির মাথা নিচু করে বলতে লাগলেন

-“তোর ফুপি যেই ছেলেকে ভালোবেসেছে সে আমজাদ রহমানের ছোট ভাই ছিলো।”

কথাটা শুনে দৃশ্য অবাক হয়ে গেলো।এসব কি শুনছে? মাহাদ কি সব জানতো?তাহলে দৃশ্যকে বললোনা কেনো?

দৃশ্য আর কিছুই ভাবতে পারছে না।তার পুরো শরীর ব্যাথা করছে। গালে থাপ্পরের কারণে মাথা ঘুরছে।আনিকা কবির দৃশ্যকে সব খুলে বললেন।দৃশ্য সব শুনে ভীষণ অবাক হলো।আনিকা কবির বললেন

-“তোর বাবা আর জেঠু নিজের বোনের মৃত্যুর জন্য আরিফকে দায়ী করে। তাদের ধারণা ওই ছেলে বিয়ের পরও দিশার সাথে সম্পর্ক রেখেছে।যার কারণে দিশা সংসারে মন দিতে পারেনি।যার ফলে সে সুইসাইড করেছে।”

দৃশ্যর মনে এক রাশ ঘৃণা জন্মালো নিজের বাবা আর জেঠুর উপর।তারা কেমন মানুষ? এতো কিছুর পরও তারা ওই মানুষটাকে কি করে দোষী ভাবে।কারণ মাহাদ একবার বলেছিল তার চাচু একজনকে ভালোবেসে হারিয়ে আজও বিয়ে করেনি।তখন দৃশ্য জানতো না সেই মানুষটি তার ফুপি ছিলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here