#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_১২( বোনাস পার্ট ),১৩,১৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
১২
জুভান ঐশীকে কাচুমাচু করতে দেখে মৃদু হাসলো। নিজের প্রশস্ত বুকে দু হাত গুটিয়ে বললো,
” বি নরমাল। আমি কিছু মনে করি নি। ”
ঐশী নিরুত্তর। তাকিয়ে রইল ঈষৎ লালাভ আকাশের দিকে। হঠাৎ করে ও বলে উঠলো,
” বাবা মাঝেমধ্যে আমাকে টং দোকানে চা খেতে নিয়ে যেতেন। ভালো লাগতো এই ম্যাজিক চা। ”
জুভান ঐশীর মুখশ্রীর দিকে তাকালো। অন্ধকারে বিষাক্ত কালো রং মেয়েটার মুখখানা আরো , আরো স্নিগ্ধ করে তুলেছে। জুভান মুগ্ধ হলো। একজন শ্যাম বর্ণের মেয়ের রূপের মাধুর্য দেখে বিমোহিত হলো।তবে প্রেমে পড়লো না। হুটহাট কি প্রেমে পড়া যায় ? উহু। প্রেম তো গভীর অনুধাবনের ব্যাপার। মন ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠে এই প্রেম নামক ছন্দে। কিন্তু জুভানের মন তো কাপল না। তবে কি সে এক অনুভূতিহীন জীব। হবে হয়তো।
চা পর্ব শেষ হলো অনেকক্ষণ। জুভান গাড়িতে উঠে বসেছে। আর ঐশী একটা কথা বলবে বলে কাচুমাচু করছে। জুভান গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে ঐশীর নাম ধরে ডাকলো। গাড়িতে উঠার তাগাদা দিয়ে বললো,
” উঠো। দাঁড়িয়ে আছো কেনো ? ”
ঐশী গাড়ি থেকে সাইড ব্যাগ নিজের হাতে নিয়ে জুভানের দিকে তাকালো। কৃতজ্ঞতা চোখে বললো,
” এতদিন আমার পাশে ছিলেন এই জন্যে ধন্যবাদ।আর না। রাস্তায় একটা বাসায় দেখেছিলাম। ভাড়া যাবে । আমি একটি খোঁজ নিয়ে দেখি। ভাড়া পাই কিনা। আপনাকে অনেক জ্বালিয়েছি। তাই জন্যে আই এম এক্সট্রিমলি সরি। ”
জুভান একটু অবাক হলো। তবে দ্বিমত করলো না। মাথা নেড়ে হতে জানিয়ে বললো,
” আমি সেই বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি ? ”
ঐশী তাৎক্ষণিক বলে উঠলো,
” না। লাগবে না। আমি একাই যেতে পারবো। বেশি দূর না। জাস্ট দশ মিনিটের রাস্তা হবে হয়তো। ”
জুভান কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে মানিব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে ঐশীর দিকে এগিয়ে দিল। বললো,
” আমার কার্ড। যদি কখনো দরকার পড়ে নিঃসংকোচে আমাকে জানাবে। আই অ্যাম অলয়েজ দেয়ার ফর ইউ। ”
ঐশী আলতো হেসে জুভানের থেকে কার্ডটা নিয়ে ব্যাগে পুড়ল।
____________________
ঐশী বাসা পেয়ে গেছে। সম্পূর্ণ বাসা গোছগাছ করা শেষ। রাত প্রায় বারোটা বাজে। এখনো অনেক জিনিস কেনা বাকি। আস্তে আস্তে কিনে বাসা সাজাবে ও। কিন্তু তাঁর আগে ওর একবার নিজের বাড়িতে যাওয়া উচিত। কি থেকে কি হলো তা একবার খোঁজ নেওয়া দরকার। ঐশী শোবার ঘরে এলো। মাটিতে মাদুর পাতা আছে। ঐশী আজ থেকে সেথায় ঘুমাবে। ঐশী মাদুরটাতে বসলো। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কল দিল তাদের বাড়ির কেয়ারটেকারকে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে একটা পুরুষালি কণ্ঠ ভেসে আসলো। ওপাশের মানুষটা ” হ্যালো” বলতেই ঐশী গুমরে কেঁদে উঠলো। নাক টানতে লাগলো অনবরত। পুরুষটা নিমিষেই চিনে গেলো ঐশীকে। আর চিনবেই না কেনো ? ঐশীকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে যে । হাসান আকবর উদ্বেগ গলায় বললেন,
” ঐশী মা …. ”
ঐশী নিরুত্তর। তবে কান্নার আওয়াজ ধিমে কণ্ঠে ভেসে আসছে ফোন জুড়ে। হাসান আকবর আবারও বললেন,
” ঐশী মা , কেমন আছো ? ”
ঐশী কাদতে কাদতে হাপিয়ে উঠলো। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
” চাচ্চু , ম. মা , বা.বাবা ? ওরা , ওরা …. ”
হাসান আকবর এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
” হ্যা রে মা। আজ ওদের কবর দিয়ে এলাম। ”
” কবর” শব্দ শুনে ঐশী আবারও ডুকরে কেঁদে উঠলো। কান্নার ফোয়ারা বইয়ে গেলো দুনো চোখ জুড়ে। ঐশী নিজেকে খুব কষ্ট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে বললো,
” ক. কিভাবে হ. হলো এসব ? ”
” মিডিয়া তো বললো আগুনে পুড়ে। তবে আমার মনে হয় এর পিছনে আগুন নয় কোনো ব্যক্তি আছে। ”
ঐশী চমকে উঠলো। ” ব্যক্তি ” ! ঐশীর কান্না থেমে গেলো। চকিত গলায় বললো,
” ব্যাক্তি ? কি বলতে চাইছো চাচ্চু ? ”
” হ্যা। কাল আমাকে বড় সাব একটু বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আমি বাইরে যাওয়ার সময় একটা বড় নোহা গাড়ি তোদের বাসার সামনে রাখা দেখেছি। ওই গাড়ি থেকে অনেক দামড়া ছেলে বের হচ্ছিল। ছেলেগুলো কেমন যেনো ছিল। ওই গগুন্ডা , বেয়াদব এরকম। তবে আমি পাত্তা দেয়নি। পুলিশের বাড়িতে এসব তো আসেই। আমি বাজারের থলি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এসে দেখি…. ঘ. ঘর আগুন. আগুনে পুড়ে ঝলসে গেছে। আর বড় সাব…… ”
হাসান আকবর আর বলতে পারলেন না। শব্দের অভাব হতে লাগলো তার ঝুলিতে। কষ্ট হতে লাগলো। জ্বালা ধরলো বুকের চারপাশটায়। ঐশী যেনো হতবাক। মুখে ” রা” কাটার জো নেই তার। কি শুনছে ও ? ওর বাবা , মা খুন হয়েছেন ? ঐশী চোখের জল লেপ্টে আছে পলকের ভাজে ভাজে। পলক ফেললেই গড়িয়ে পড়বে দ্বিধাহীন।
” মা , ”
ঐশী সম্বিত পেলো। থমকে কাপা কণ্ঠে বললো,
” তুমি দেখেছো ওই ছেলেদের চেহারা ? ”
” নারে মা। দেখেনি। মাস্ক পড়া ছিল । ”
ঐশী হুড়মুড়িয়ে মাদুর থেকে উঠে দাড়ালো। ব্যাগে কাপড় ঢুকাতে ঢোকাতে বলল,
” চাচ্চু , আমি আসছি। এখনই আসছি বাড়িতে। তুমি থেকো ওখানে । ”
হাসান আকবর ঐশীর আসার কথা শুনে তাড়াহুড়ো করে বললেন,
” না না , মা । এসো না এখানে। বড় সাব তোমাকে একা ঢাকা শহরে পাঠিয়েছেন যাতে তুমি সুরক্ষিত থাকো। এখানে এসে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিও না। ”
ঐশীও নাছোড়বান্দা। সে জেদি গলায় বলল,
” আমি আসবো চাচ্চু। আমার বাবা , মা এর মৃত্যু সম্পর্কে জানার অধিকার আছে আমার । ”
” ঐশী , আমি কিন্তু মানা করেছি তোমায়। বড় সাবের কথা অমান্য করতে পারো না তুমি। ”
চাচ্চুর মুখে নিজের নাম শুনে ঐশীর হাত থেমে গেলো। হাসান চাচ্চু কখনোই ওর নাম ধরে ডাকেন না। কিন্তু যখন ঐশী কথা শুনে না তখনই তিনি নাম নেন ঐশীর। ঐশী রাগে কাপড়ের ব্যাগ দূরে ছুড়ে ফেলে দিল। ফোন কেটে দিয়ে চিৎকার করে ,” বাবা ” বলে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। কান্না করতে করতে চুল ছিড়ে ফেলবে এমন ইচ্ছে হচ্ছে ওর। বুক ফেটে যাচ্ছে। কান্না গুলো দলা বেধে গলায় সূচের মত বিধে আছে। এত কষ্ট হচ্ছে কেনো ওর ? ঐশী নিজেকে সামলাতে না পেরে গলায় থাকা লকেট গলা থেকে খামচে ছিঁড়ে ফেলে মাটিতে ছুড়ে ফেললো। মাথা নুইয়ে কেঁদে উঠলো চিৎকার করে। আচমকা ওর চোখ গেলো মাটিতে এলোমেলো পড়ে থাকা লকেটটার দিকে। মনে পড়লো বাবার সেই কথা ,
” যখন তুমি তোমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলবে তখন এই লকেট খুলে দেখবে। ”
ঐশীর সূক্ষ্ম মস্তিষ্ক কাজ করা শুরু করলো। ভাবলো , পরিবারের চেয়ে মূল্যবান কিছু ওর জীবনে আর কি আছে ? ঐশী উৎসুক হয়ে চেয়ে রইলো লকেটটার দিকে। ওর কি খুলে দেখা উচিত এই লকেট ?
#চলবে..
#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_১৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
ভোর হলো প্রায় অনেকক্ষণ। জানালার পাশটায় কৃষ্ণচূড়ার গাছটায় দুটো কাক বসে আছে। প্রেমিক জোড়া কি ? ঐশী জানে না। ঐশী বারান্দায় মাটিতে বসে আছে। হাঁটু গেড়ে “দ” আকৃতিতে। চুল এলোমেলো। সাথে ছোট্ট মনটাও। শরীরে জ্বালা ধরেছে। এই জ্বালা কি কোনো ধ্বংসের ? নাকি কোনো দমকা প্রতিশোধের ? ঐশী সেটাও জানেনা। তবে কিছু না একটা তো আছে। কিছু একটা ! ছোট্ট শরীরে নিশ্বাসের বেগ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। একসময় ঐশী চিৎকার করে বলে উঠে, ” তোমরা যা করলে তা একদম ভালো করলে না। এর জন্যে পস্তাবে। বহুৎ পস্তাবে তোমরা।”
ঐশী বারান্দা থেকে রুমে চলে এলো। কিছু কি চলছে ওর মাথায় ? চোখ মুখ এমন হয়ে আছে কেনো ? চোখ থেকে আগুন ঝরছে ওর। মুখ কটমট করছে। ঐশী মেয়েতো এমন নয় ? তবে কে এই মেয়ে ? নাকি ঐশীর কোনো হিংস্র প্রতিরূপ ? ঐশী দেয়ালের লোহায় লটকানো ব্যাগ টা নিজের হাতে নিল। ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে প্রয়োজনীয় সব কিছু ব্যাগে পুরে নিল। ওড়না গায়ে দিয়ে ঝটপট বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। উদ্দেশ্য জুভানের অফিস।
___________________________
জুভান অফিসে বসে একজন পরিচালকের সাথে মিটিং করছে। সবসময় ও গান গেয়ে এসেছে । তবে আজ একটা মিউজিক ভিডিওর শুটিং আছে ওর। চেহারা সুরত ভালো হওয়ায় পরিচালক নিজে এসে কথা বলছেন ওর সাথে। জুভানের হাতে সাদা কাগজের স্ক্রিপ্ট। ভ্রু কুচকে চোখ এলোমেলো ঘুরছে সেই স্ক্রিপ্টে। সেইসময় ঐশী জুভানের অফিসের সামনে এসে দাড়ালো। কোনো কথা না বলে সোজা অফিসে প্রবেশ করতে চাইলে জুভানের অ্যাসিসট্যান্ট সাহাদাত ওকে আটকে ফেলে। ঐশী বিরক্ত হয়। কটমট চোখে তাকাল শাহাদাতের দিকে। কন্ঠে ক্ষোভ প্রকাশ করে বললো,
” হোয়াট ? আটকালে কেনো ? ”
সাহাদাত কপাল ভাজ করে বললো,
” কে আপনি ? হুট করে স্যারের অফিসে চলে যাচ্ছেন। কোনো অপরিচিত কারো সাথে স্যার মিট করেন না। সো ইউ মে লিভ নাও। ”
ঐশী সব শুনেও ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। সোজা হয়ে দাড়িয়ে বুকে দু হাত গুটিয়ে বললো,
” আপনার স্যার আমাকে চিনেন। উনাকে গিয়ে বলো ঐশী এসেছে। গো। ”
শাহাদাত সব শুনে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো ঐশীর দিকে। স্যার ওই এখন কাজের জায়গায় মেয়ে আনা শুরু করেছেন ? হ্যা খোদা ! আর কত অধঃপতন হবে উনার ? সাহাদাত কোনো প্রত্যুত্তর না করে ঐশীকে অপেক্ষা করতে বলে জুভানের কেবিনের দিকে এগিয়ে গেলো। চোখে মুখে রাজ্যের বিরক্তি। আর নেওয়া যাচ্ছে না এসব। এত মেয়ে না ভোগ করে এবার বিয়ে করে নিলেই তো হয়। শাহাদাত বিড়বিড় করে এসব বলতে বলতে কেবিনের সামনে এসে দাড়ালো। কেবিনের দরজা একটু খুলে মোলায়েম সুরে বলল,
” স্যার ? ”
জুভান স্ক্রিপ্ট থেকে মুখ তুলে তাকালো শাহাদাতের দিকে। পরিচালকও তাকিয়েছেন। শাহাদাত এক ঢোক গিলে বললো,
” একজন এসেছেন আপনার সাথে দেখা করতে। নাম বললো “ঐশী” । ”
ঐশী ! জুভান একটু অবাক হলো। ঐশী কেনো এসেছে ? জুভান সব শুনে শাহাদাত কে বললো,
” একটু অপেক্ষা করতে বলো। আমি উনার কাজ শেষ করে ডেকে নিবো। ”
শাহাদাত মাথা নেড়ে সম্মান জানিয়ে দরজা লাগিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।
জুভান মিউজিক ভিডিওর কাজটা গ্রহণ করে পরিচালকের সাথে হ্যান্ডশেক করলো। পরিচালক খুশিমনে জুভানের থেকে বিদায় নিলেন। অতঃপর জুভান শাহাদাতকে বলে ঐশীকে কেবিনে আসতে বললো।
জুভান কফি হাতে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল। একটু পর ঐশী কেবিনে নক দিল। জুভান কফি নিয়ে চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
” কাম ইন। ”
ঐশী ভিতরে প্রবেশ করলো। জুভান ঐশীর দিকে একঝলক তাকিয়ে হতবাক হলো। কি হাল করেছে ? চোখের নিচে এক ইঞ্চি জুড়ে কালো কালি পড়েছে। মুখ শকনো। গরমকালেও ঠোঁট ফেটে কতক টুকরো হয়েছে। জুভান ঐশীর দিকে বিমর্ষ হলো। কিন্তু সেসব পাত্তা না দিয়ে ঐশীকে চেয়ারে বসতে বললো। ঐশী ব্যাগ আঁকড়ে ধরে চুপচাপ জুভানের সামনে চেয়ারে এসে বসলো।
অতঃপর নীরবতা। কেবিন জুড়ে ভোতা এয়ারকন্ডিশনারের ঝিমঝিম শব্দ। দুজন মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ পুরো কেবিনময়। সেই নিরবতা ভাঙলো জুভান। গলা কেশে বললো,
” ঐশী ? ”
ঐশী মুখ তুলে তাকালো জুভানের দিকে। দৃষ্টি এলোমেলো, বিধ্বস্ত। জুভান আলতো সুরে বললো,
” কোনো দরকার ? হঠাৎ আমার অফিসে ? ”
ঐশী আনমনে চেয়ে রইলো জুভানের দিকে। ঠোঁট কথা বলতে চায় , কিন্তু কণ্ঠ বাক্য সাজাতে নারাজ। ঐশী সাহস করে মুখ খুললো,
“আব. আমাকে কি একটা চ.চাকরি দেওয়া যাবে ? ”
জুভান হতবম্ব। চোখে , মুখে উদ্বেগ। যেই মেয়ে জুভানের একটা হেল্প নিতে নারাজ আজ সে তারই কাছে একটা চাকরি চাইতে এসেছে। সত্যি ! এটা কি চমকপ্রদ ব্যাপার নয় ?
জুভান কপাল ভাজ করে বললো,
” কি চাকরি করতে চাও ? ”
ঐশী এদিক ওদিক তাকিয়ে আবারও জুভানের দিকে তাকালো। জোর গলায় বললো,
” যে চাকরি আমার লাইফ চেঞ্জ করে দিবে। আমার এই মুহূর্তে একটা পার্মানেন্ট জব চাই। চাই মানে চাই। ”
জুভান বিস্ময়ের চূড়ায়। আজ ঐশীর হলো কি ? তবুও সে বাক্য ক্ষয় না করে বললো,
” হুট করে ত আর চাকরি পাওয়া যায় না। তবে এক কাজ করতে পারো। আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট রূপে আপাতত কাজ করো। পরে না হয়…”
” আমি রাজি। কি কাজ করা লাগবে ? ”
জুভান মুচকি হাসলো। বললো,
” কাজের ব্যাপারে আমি কিন্তু কোনো কম্প্রোমাইজ করিনা। কাজ কাজের জায়গায় আর বাকি কিছু আলাদা। কাজের সময় তুমি এক আর আমি অন্য। সেটাই আমার সাথে কাজ করার মেইন রুলস। ”
ঐশী চুপচাপ মাথা হেলালো। কোনো অনুভূতি প্রকাশ করলো না। আর না কোনো প্রত্যুত্তর করলো। জুভান অতঃপর বললো,
” বাকি কাজ গুলো শাহাদাতের কাছ থেকে জেনে নিও। ”
” কাজ কখন থেকে শুরু করতে হবে ? ”
” আজ তো হবে না। কাল থেকে শুরু করো। কিন্তু কাজ করতে হবে উইথ রেসপনসিবিলিটি। ”
” ওকে। আমি আসছি এবার। ”
ঐশী বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। রাস্তায় একটা রিক্সা ডেকে চরে বসলো রিক্সায়। রিক্সা চলছে ধীর গতিতে। আর ঐশী ? সেতো বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে গলায় ঝুলানো লকেট টার দিকে। এবার শুরু হবে খেল। জমবে মজা। ধীরে ধীরে নিঃশেষ হবে সকলে। নাও ইটস প্লে টাইম। ঐশী মৃদু হেসে লকেট টা হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে তাকালো নীলাভ রঙের আকাশটায়।
_________________________
” ভাই , পুলিশকে তো মেরে ফেললাম। কিন্তু প্রোভ ? সেটাতো পেলাম না। ”
তরুণ ছেলে হাতের মদের গ্লাসটা জুড়ে ছুড়ে ফেললো দেয়ালে। দেয়ালে সেই গ্লাস আঘাত পেয়ে শ টুকরো হলো। তন্ময় রেগে গড়গড় করতে করতে বলল,,
” শালা , গেম খেলেছে আমাদের সাথে। আগে ভাগেই সব লুটপাট করে দিয়েছে। শালা। মাদা**”
হাসিব তন্ময়ের দিকে তাকালো ভয়ে ভয়ে। ভাই তার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না। যেকোনো সময় কাউকে খুন করে ফেলতে পারে। বিষয়টা খুব স্বাভাবিক ওর জন্যে।
হঠাৎ একজন লোক তন্ময়ের কাছে আসলো। মাথা নিচু করে বললো,
” ভাই, একটা ছেলে এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে। ”
#চলবে…
#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_১৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
হঠাৎ একজন লোক তন্ময়ের কাছে আসলো। মাথা নিচু করে বললো,
” ভাই, একটা ছেলে এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে। ”
তন্ময় রাগী চোখে চেয়ে রইলো ছেলেটার দিকে। হুংকার ছেড়ে বললো,
” আমি এদিকে চিন্তায় মরছি। আর তুই এখানে বা* শুনাইতে আসছস। গিয়ে বল আমি ব্যস্ত। যা। ”
ছেলেটা তটস্থ হলো। মুখের লালা দিয়ে গলা ভিজানোর চেষ্টা করে বললো,
” ভাই , ওই পুলিশের সম্পর্কে কি জানাবে বলেছে আপনাকে। ”
তন্ময় শুনে দু চোখ বুজলো জোরালো ভাবে। নিজেকে শান্ত করে হেঁটে গেলো ড্রিংকস সেকশনের দিকে । গ্লাসে মদ ঢালতে ঢালতে বললো,
” পাঠিয়ে দে। ”
ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে সম্মান জানিয়ে বেরিয়ে গেলো।
একটু পর একটা পুলিশ অফিসার ভিতরে এলো। তন্ময়ের পিছনে দাড়িয়ে অতি নরম গলায় বললো,
” ভাই ”
তন্ময় হাতে ড্রিংকস নিয়ে পিছন ফিরলো। পুলিশকে দেখে বাঁকা হেসে পুলিশের কাছে এসে দাড়ালো। কাঁধে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো,
” আরে , নিমকহারাম। তুই ? ”
পুলিশ ” নিমকহারাম ” শব্দটা শুনে কিছুটা গুটিয়ে গেল। অপমানে মুখশ্রী লাল হলো। তবুও কিছু করার নেই। বেঁচে থাকাটায় এখন মুখ্য তার কাছে। পুলিশ মাথা নিচু করে বলল,
” ভাই , আশরাফুল স্যারের মেয়ের খোঁজ পেয়েছি। উনার মেয়ের নাম ঐশী। মেয়ে ছোটবেলা থেকে দেশের বাইরে ছিল। অস্ট্রেলিয়া। এখনো দেশে এসেছে কিনা বলা যাচ্ছে না। আমরা এলাকায় খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কোনো খবর পাইনি। ”
তন্ময় রেগে তাকালো পুলিশের দিকে। দাঁত চেপে বললো,
” তোমার ব্যর্থতার খবর এভাবে নাচতে নাচতে দিতে এসেছ ? হাও ফানি ! ”
পুলিশ মাথা নেড়ে বললো,
” ভাই, আপনি চাইলে আ… ”
” মেয়েটার ছবি আছে ? ”
পুলিশ নিজের কাধ ব্যাগ থেকে একটা জঙ্কার পড়া ছবি বের করে তন্ময়ের দিকে এগিয়ে দিল। তন্ময় ছবিটা হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে চেয়ে রইলো ছবিটার দিকে। তারপর তেজ নিয়ে তাকালো পুলিশটার দিকে। কাধ চাপড়ে বললো,
” আমাকে ওই মাইয়ার ছোট বেলার ছবি দিয়ে কি বুঝাতে চাইছো, পুলিশ ? বড় বেলার ছবি দেও। দেইখা আমার পরান জুড়াই।”
পুলিশ মাথা নিচু করে বললো,
” ভাই , আমি পাইনি। সেদিন তো আপনারা স্যারের ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। সব ছবি আগুনে পুড়ে গেছে। খুব কষ্ট করে এই ছবি জোগাড় করেছি, ভাই। ”
তন্ময় মুখ হিংস্র করে এগিয়ে গেলো ড্রিংকস সেকশনের দিকে। মদের গ্লাস থেকে এক ঢোকে সমস্ত পানীয় পান করে অপলক তাকিয়ে রইলো সামনে বসে থাকা প্রভুভক্ত কুকুরের দিকে। যার ঘেউ ঘেউ শব্দে মুখরিত হলো গ্যারাজের চারপাশ।
__________________________
ঘড়ির কাঁটা ” আট ” । এলার্ম বাজছে ” টিংটিং” “টিংটিং”। ঐশী হাত দিয়ে হাতড়ে এলার্ম বন্ধ করার চেষ্টা করলো। কিন্তু সফল বিশেষ হলো না। বরং এলার্ম ঘড়িটা ঐশীর হাত লেগে আরো দূরে সরে গেলো। ঐশী ঘুমের মধ্যেই বিরক্তিতে মুখ কুচকে ফেললো। কোলবালিশ দিয়ে শটান করে নিজের চোখ , কান বন্ধ করলো। কিন্তু এই এলার্ম ঘড়িটা বড্ড বিরক্তিকর। কারো কথাই শুনে না। শেষ পর্যন্ত এলার্ম ঘড়ির উদ্দেশ্য জয় হলো। ঐশী শরীর থেকে কাথা সরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। চোখ বেটে নিয়ে ঘড়িটার দিকে তাকালো। একটু এগিয়ে গিয়ে ঘড়িটা নিজের কাছে এনে বন্ধ করলো প্রচন্ড জেদে। চোখ কচলে ভাবলো কিছু হৃদয় বিদারক স্মৃতির কথা। প্রতিদিন মা ওকে জাগাতে কি কষ্টটাই না করতো। আর আজ ? এখন থেকে তো যা করার ওর নিজেরই করতে হবে। কপাল ! ঐশী মুখ ভার করে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো। অতঃপর নাকে মুখে নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো জুভানের অফিসের উদ্দেশ্যে।
তাড়াহুড়ো করে অফিসে গিয়ে ঐশী দেখে শাহাদাত ফোন হাতে নিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে। ঐশী ব্যাগ আকড়ে ধরে এগিয়ে গেলো শাহাদাতের দিকে। সোফায় বসে থাকা শাহাদাতের দিকে চেয়ে ভাবলো এই মধ্যবযস্কা লোককে কি সম্বোধন করা যায় ? চাচা নাকি অন্যকিছু ? ঐশী এগিয়ে গেলো। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” চ আব চাচা ? ”
শাহাদাত তাকালেন ঐশীর দিকে। দৃষ্টি অসহায়। ঐশী ভ্রু উচু করে জিজ্ঞেস করলো,
” কিছু কি হয়েছে ? এমন হয়ে আছেন কেনো ? ”
শাহাদাত ফোনটা ঐশীকে দেখিয়ে বললো,
” স্যারকে সেই কখন থেকে ফোনে ট্রাই করছি। কিন্তু রিসিভ করছেন না। আর এদিকে মিউজিক প্রোডিউসার আমার মাথা খাচ্ছে। স্যারের সাথে কাজ শুরু করবে বলে। এখন আমি কি করি ? ”
ঐশী উত্তরে কিছুই বললো না। বরং নিজের ফোন থেকে জুভানের নাম্বার বের করে দু একবার কল দিল। কিন্তু বন্ধ। ঐশী নিজেও এতে বিরক্ত। শাহাদাত বারবার কল করছে। ঐশী সেদিকে একবার তাকিয়ে ভাবলো ” বন্ধ ফোনে বারবার কল করা কি বোকামি নয় ? ” শেষ পর্যন্ত ঐশী সিদ্ধান্ত নিলো। সে বাসায় যাবে। জুভানের। শাহাদাত এতে সম্মতি দেওয়ায় ঐশী রিক্সা ভাড়া করে জুভানের বাসার দিকে এগিয়ে গেলো।
বিশাল বাড়িটায় কলিং বেল বাজালো ঐশী। একবার বাজাতেই একজন ছেলে সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিল। ঐশী জিজ্ঞেস করলো জুভানের কথা। জেনে নেওয়া শেষ হলে সিড়ি বেয়ে দুই তলায় জুভানের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।
দরজার নক দিল ঐশী। কিন্তু ভিতরের মানুষটা নিরুত্তর। ঐশী পুনরায় নক করলো। এবারও কেউ সাড়া দিল না। আর কোনো উপায় না পেয়ে ধুকধুক মন নিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো ঐশী।
বেডের উপর জুভান চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। একটা ট্রাউজার পড়া উদোম শরীর। ঐশীর অবাধ্য মন জুভানকে এভাবে দেখে ধুক করে উঠলো। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো হাজারবার। ঐশী মাথা নেড়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। তবে লাভ বিশেষ হলো বলে মনে হলো না। ঐশী দুরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ডাক দিল আলতো করে ,
” স্যার ,, স্যার,”
জুভানের কোনো হেলদুল নেই। ঐশী কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কাছে গিয়ে ডাক দিবে ? ঐশী পড়লো এক মহা ফ্যাসাদে। চোখ মুখ খিচে এগিয়ে গেলো জুভানের বেডের দিকে। একটু কাছ থেকেই ডাক দিল ,
” স্যার , স্যার। আপনার একটা শুটিং আছে আজ। প্লিজ উঠুন। স্যার। ”
আচমকা জুভান ঘুমের ঘোরেই এক অবিশ্বাস্য কাজ করে বসলো। ঘুমের ঘোরেই হাত উঠিয়ে ঐশীকে হেচকা টান দিয়ে নিজের বিছানায় নিয়ে এল। ঐশীকে নিচে রেখে জুভান ওর উপরে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলো। ঐশী তো কিংকর্ত্যবিমূঢ়। কি হলো ! ঐশী ভেবে কুল পাচ্ছে না। মুখের আকৃতি ” হা ” ধরনের হয়ে গেছে। যখনই পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো তখনই জুভানকে নিজের থেকে সরানোর জন্য উঠেপড়ে লাগলো। কিন্তু এত শক্তপোক্ত নিজের উপর থেকে সরাতে খুব একটা সফল হলো না ঐশী। তবে ঘুম ভাঙলো জুভানের। চোখ আদো খুলে ঐশীকে এই অবস্থায় দেখে খানিক ভরকে গেল ও।নিজের দোষ বুঝতে পারে জলদি সরে উঠলো ঐশীর থেকে। জুভান সরতেই ঐশী এক ঝটকায় উঠে দাড়ালো। মুখ এখনো তার স্বাভাবিক হয়নি। জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে অপরাধবোধ নিয়ে বললো,
” আব, আই অ্যাম সরি। আমি ভেবেছি জেনিফার। আই অ্যাম রিয়েলি সরি। ”
ঐশী মুখ কুচকে তাকালো জুভানের দিকে। জেনিফার ? আজও কি মেয়ে নিয়ে এসেছে জুভান ? ঠিক তখনই ওয়াশুরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো। শুধু একটা টাওয়েল জড়িয়ে বের হলো সাদা ধবধবে এক মেয়ে। ঐশী হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো সেই মেয়ের দিকে।মেয়েটা জুভানের কাছে এসে বসলে জুভান ঐশীকে দেখিয়ে বলে,
” মিট। শি ইজ জেনিফার। মাই কল গার্ল। ”
#চলবে