ইচ্ছের_উল্টোপিঠ #পর্ব_১৫,১৬,১৭

0
528

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_১৫,১৬,১৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
১৫

মেয়েটা জুভানের কাছে এসে বসলে জুভান ঐশীকে দেখিয়ে বলে,

” মিট। শি ইজ জেনিফার। মাই কল গার্ল। ”

ঐশী লজ্জায় , ঘোর অপমানে মাথা নিচু করে নিল। সাইড ব্যাগ শক্ত হাতে খামচে ধরে কাঁপা গলায় বললো,

” সরি ফর ডিস্টার্বিং। আপনি রেডি হয়ে আসুন। আমি নিচে ওয়েট করছি। ”

ঐশী আর মুখ তুলে তাকানোর সাহস পেলো না। জুভানের উত্তরের অপেক্ষা না করে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো। দরজার কাছে যেতেই পিছন থেকে জুভান ডাক দিল। ঐশী ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো। অতঃপর এক ঢোক গিলে মাথা নিচু করে পিছন ফিরলো । জুভান আড়মোড়া ভাঙলো। জেনিফারের চুল এক হাত দিয়ে পেচাতে পেচাতে বললো,

” জাস্ট ফাইভ মিনিট অপেক্ষা করো। আই অ্যাম কামিং। ”

ঐশী মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিল। তারপর দরজা ধুম করে খুলে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। জুভানের সেদিকে তাকানোর সময় নেই। সে কিছুসময় জেনিফারকে নিয়ে মত্ত থেকে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো।

ঐশী রুম থেকে বেরিয়ে এক দৌড়ে বসার ঘরে সোফায় এসে বসলো। ব্যাগটা ঝট করে সোফায় রেখে দিয়ে সোফায় গা এলালো। চোখ বন্ধ করে লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। বারবার বন্ধ চোখের পাতায় ভাসছে,

” মিট। শি ইজ জেনিফার। মাই কল গার্ল। ”

কানে ঝংকার করে বাজতে লাগলো এই শব্দগুলো। বিষাক্ত শব্দ শুনে ঐশীর বন্ধ চোখের কার্নিশ ঘেঁষে গড়িয়ে পড়লো এক রঙহীন মুক্ত অশ্রু। ইশ! ভালোবাসা কি যন্ত্রণাদায়ক !

________________________

জায়গাটার নাম বান্দরবান। বাংলাদেশের বিখ্যাত পর্যটন জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। আজ এখানেই শুটিং করা হবে জুভানের মিউজিক ভিডিওর। জুভান একদিকে দাঁড়িয়ে মেকাপ নিচ্ছে। আর একটু দূরে ঐশী এক হাতে জুভানের স্ক্রিপ্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোদের তীব্র ঝাঁজালো আলোতে চোখ মুখ বারবার কুচকে আসছে ওর। কপালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘামের ফোঁটা চকচক করছে।

শুটিং শুরু হবে আর কিছুক্ষণ পর। জুভান রেডি হয়ে ঐশীর পাশে এসে বসলো। ঐশীর হাত থেকে স্ক্রিপ্ট নিয়ে সেটায় একবার চোখ বুলালো। ঐশী ঠায় বসে রইলো চেয়ারে। দৃষ্টি অতলে , সুদূরে। একটু দূরে একটা হিজল ফুলের গাছ বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাশি রাশি ফুল ছড়িয়ে পড়েছে ধুলোবালি জমা মাটিতে। ঐশীর লোভ লাগলো। ফুল কানে গুজার লোভ। সে সবাইকে ব্যস্ত দেখে চেয়ার থেকে উঠে এগিয়ে গেলো হিজল ফুলের গাছের দিকে।

সামনে লতানো গাছ , ডানে বামে ফুলের সাম্রাজ্য। ঐশী মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো। এত বিমোহিত সে আগে কখনো হয়নি। এত সুন্দর ! ঐশী এগিয়ে গিয়ে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসলো। মাটি থেকে একটা ফুল হাতে নিয়ে আলতো হাতে কানে গুজে নিল। ঐশী একবার দুবার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিল সেই কানে গুজা অসম্ভব সুন্দর ফুলদুটো। আর এদিকে জুভান স্ক্রিপ্ট পড়তে পড়তে চোখ গেলো মোহিত হওয়া এক নারীর দিকে। কানে লাল ফুল গুঁজে রাখা মোহময় সেই নারী। জুভান স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে আনমনে তাকিয়ে রইলো ঐশীর দিকে।

এসব সম্পর্কে অজ্ঞাত ঐশী ভাবছে, এখন একটা আয়না দেখলে ভালো লাগতো।
কিন্তু এখন আয়না কোথায় পাবে ? ঐশী খুব দুঃখ পেলো এতে। মন খারাপ করে হেঁটে আবার নিজের জায়গায় চলে যেতে নিলে ডিরেক্টর কাউকে ডাক দিয়ে আয়না নিয়ে আসতে বললেন। তবে ঐশী সেটা শুনতে পায়নি। সে তো আনমনে পা চালাতে লাগলো। হঠাৎ ঐশীর সামনে দিয়ে দুজন লোক নিয়ে গেলো এক বিরাট আয়না। খুব বিরাট। ঐশীর সম্পূর্ণ শরীর এই আয়নায় আটকে গেলো। ঐশী বিস্মিত হলো। উজ্জ্বল চোখে চেয়ে রইলো আকস্মিক আসা এই আয়নার দিকে। নিজের প্রতিরূপ কে এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করায় ঐশী মোহিত হলো। আয়নায় দিকে চেয়ে ঠায় দাড়িয়ে রইলো।

কিন্তু এই এত সুন্দর মুহূর্তে কি থেকে কি হয়ে গেল ! আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পেল ওর বাবার একজন খুনিকে। কার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছে। ঐশী তন্ময়কে দেখে অবাক হয়ে পিছন ফিরে তাকালো। তন্ময়কে চলে যেতে দেখে ঐশী খুব সন্তর্পনে ওর পিছু নিল। তন্ময় এগিয়ে যাচ্ছে । আর ঐশী তাকে ফলো করছে। আজ কিছু একটা ক্লু তো পাবেই ও।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একটু পর তন্ময় কিছু একটা টের পেলো। ফোন কেটে দিয়ে পিছন ফিরলো। সঙ্গেসঙ্গে ঐশী একটা কাপড়ের দোকানের ভিতর ঢুকে গেল। মাথা নিচু করে কাপড় দেখতে দেখতে আড়চোখে আবারও একবার তন্ময়কে দেখে নিল। তন্ময় ভ্রু কুঁচকে তাকালো আশেপাশে। কিন্তু সন্দেহজনক কাউকে নজরে পড়লো না। তন্ময় মনের ভুল ভেবে উড়িয়ে দিল ব্যাপারটা। ফোন আবারও কানে লাগিয়ে হাঁটা ধরলো ও। এবার ঐশীও তন্ময়ের পিছন পিছন হাটা ধরলো। তবে এবার আরো সাবধানে।
একটা দোকান পার করার সময় ঐশী একটা পুতুলের মাথায় একটা লাল ক্যাপ দেখলো। ঐশী তন্ময়কে অনুসরণ করতে করতে হাত বাড়িয়ে সেই ক্যাপটা পুতুলের মাথা থেকে খুলে নিজের মাথায় ভালো করে পড়ে নিলো। এবার ঐশীকে চেনা একটু দায় হয়ে পড়েছে। ক্যাপের কারণে অর্ধেক মুখ ঢাকা পড়েছে ওর ।

পিছু নিতে নিতে ঐশী একটা বাংলোতে গিয়ে থামলো। তন্ময় ফোন পকেটে রেখে বাংলোর তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। তন্ময় দরজা বন্ধ করার পর ঐশী খুব সন্তর্পনে এগিয়ে গেলো দরজার কাছে। দরজার কাছে লিফলেট টাঙানো দেখলো। ফট করে নিজের মোবাইল বের করে লিফলেট এর একটা ছবি তুলে নিলো। এবার এই বিশাল বান্দরবানে এই খুনিকে খুঁজতে সুবিধা হবে ওর। ঐশী বেরিয়ে গেলো বাংলো থেকে। বাঁকা হেসে আবারও হাঁটা ধরলো শুটিং স্পটের দিকে। এবার সর্বপ্রথম খেলা শুরু। গেম নাম্বার ওয়ান।

__________________________

শুটিং স্পটে পৌঁছাতে দেখলো জুভান কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে আশেপাশে কিছু একটা দেখছে। ঐশী এগিয়ে গেলো জুভানের কাছে। জুভান ঐশীকে দেখে ভ্রু সোজা করে ফেললো। লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে ঐশীর দিকে রাগী চোখে তাকালো। নিচের ঠোঁট দাঁত দিয়ে কামড়ে প্রশ্ন করলো,

” কই ছিলে ? ”

ঐশী রাস্তায় সাজানো মিথ্যে ফটাফট বলে দিলো,

” ওয়াশরুমে। ”

জুভান কোমর ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ভ্রু আঁকাবাঁকা করে বললো,

” ওয়াশরুমে ছিলে ? আর ইউ সিওর ? ”

ঐশী থতমত খেয়ে বললো,

” হুম। তো ? ”

জুভান একটা হাফ ছেড়ে দিয়ে ঐশীর থেকে মনোযোগ সরিয়ে সামনে তাকালো। সূর্যের তীব্র আলোর কারণে চোখ বেটে নিয়ে বললো,

” না কিছু না। যাও বাকি কাজ দেখে নাও। একটু পর বেরোতে হবে। ”

ঐশী মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।
আর জুভান ঐশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে, ঐশী মিথ্যা কথা বললো কেনো ? জুভান ঐশীকে ওয়াশরুমে খুঁজেছে। কিন্তু ওখানে ঐশী তো ছিল না। তাহলে ? কোথায় ছিল ঐশী ? জুভান ভাবলো। কিন্তু এই ভাবনার সমাধান স্বরূপ এক আকাশ শূন্যতা পেলো। শুধু এবং শুধুই শূন্যতা।

#চলবে

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_১৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

বান্দরবানের এক নামকরা ক্যাফে ” পিংক মাসালা “। ঐশী সেই ক্যাফের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সাইড ব্যাগ আকড়ে ধরে কপালের মুক্ত ঘামটুকু মুছে নিলো। বুকের ভিতর জানা শঙ্কায় টিপটপ করছে। কিন্তু ভয় পেলে তো চলবে না। তাই ঐশী দোয়া দুরুদ পড়ে ক্যাফের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। চারিদিকে শুধু কাপল দেখা যাচ্ছে। একপাশে একটা সেলফি স্টেজও আছে। ঐশী আশপাশে একবার চোখ বুলালো। যে যার মতো ব্যাস্ত। ঐশী নিজের ধুকপুক মন সামলে কাউন্টারের দিকে গেল। কাউন্টারে একজন তরুণ ছেলে টাকা সামলাচ্ছে। ঐশী তার কাছে গিয়ে বলল,

” এক্সকিউজ মি। ”

ছেলেটার কপালে ভাজ পরলো। মুখ থেকে থুথু নিয়ে টাকা গুনতে গুনতে বললো,

” জায়গায় গিয়ে বসে খাবার অর্ডার করুন। চলে আসবে। ”

ঐশী মাথা নিচু করে লম্বা উষ্ণ নিঃশ্বাস নিল। মনের ভিতরের কথাগুলো ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে কথার পসরা বানালো। তারপর সাহস জুটিয়ে বললো,

” ক্যান আই গেট এ পার্ট টাইম জব ? ”

ছেলেটার হাত থেমে গেলো। টাকা গুনা বাদ দিয়ে ঐশীর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কন্ঠে তুচ্ছতা ঢেলে বললো,

” মেয়ে মানুষ , এইখানে পার্ট টাইম জব দিয়ে কি করবেন ? চল ফুটেন। দয়া ভান্ডার খোলা হয়নি এখানে। যান যান। ”

ঐশী ছেলেটার কঠিন কথা শুনে তীক্ষ্ম চোখে তাকালো। রাগ লাগছে ওর। এভাবে অপমান করলো কেনো ? কিন্তু এখন তো রাগলে চলবে না। তাই ঐশী ভ্রু সোজা করে বললো,

” প্লিজ প্লিজ। আমার টাকার খুব দরকার। একটা চাকরি হলেই হবে। বেশি বেতন দিতে হবে না। প্লিজ। প্লিজ। একটু ভেবে দেখেন। আমার চাকরিটা খুব দরকার। আমি…”

ছেলেটা ঐশীর কথার পিঠে রাগী চোখে তাকালো ওর দিকে। মুখ থেকে গালি বের করতে করতে থেমে গেলো। নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,

” আপনি যাবেন ? চাকরি নেই কতবার বলবো। যান এখন। আপনি যাবেন নাকি আমি…”

” আরে রাতুল , একটা চাকরিই তো। দিয়ে দে না এই সুন্দরীকে । ”

একটা মাতাল কণ্ঠ শুনে ঐশী পিছন ফিরল। হুম। যাকে ভেবেছে সেই। এবার তো কাজ করা আরো সহজ হবে। ঐশী কাজ শুরু করে দিলো। চোখে রাজ্যের কৃতজ্ঞতা নিয়ে তাকালো তন্ময়ের দিকে। আদুরে গলায় বলল,

” স্যার। প্লিজ একটু বুঝান না উনাকে। চাকরিটা আমার খুব দরকার। প্লিজ স্যার। ”

তন্ময় মাদক চোখে আগাগোড়া নিরক্ষন করলো ঐশীকে। ঐশীর অসস্তি লাগছে। তবে বাইরে বাইরে ও নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময় ড্রিঙ্কসের বোতল নিয়ে হেলতে হেলতে এগিয়ে এলো ঐশীর ধারে। ঐশীর দিকে হেলেদুলে তাকিয়ে ছেলেটাকে বললো,

” রাতুল , এই সুন্দরীকে একটা চাকরি দিয়ে দে তো । বেতন ধর দশ হাজার টাকা। ”

ঐশী লাজুক হাসার ভান করে মাথা নিচু করল। রাতুল যেনো আকাশ থেকে পড়লো। ভ্রু উচু করে বলল,

” এই ক্যাফের কোনো চাকরির বেতন তো দশ হাজার টাকা না ভাই। এত টাকা একা এই মেয়ে নিবে ? ”

তন্ময় বিরক্ত হলো। বোতল থেকে এক ঢোক পানীয় পান করতে করতে রাতুলের দিকে তাকালো। বোতলের সিপ থেকে মুখ তুলে দাঁত চেপে বললো,

” এই ক্যাফের মালিক তুই না আমি ? এখন তুই ডিসাইড করবি আমি কাকে কত টাকা দিবো ? হ্যা ? ”

রাতুল তন্ময়ের কথা শুনে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে গেলো। সঙ্গেসঙ্গে মাথা নিচু করে অপরাধের সুরে বললো,

” ভাই , সরি ভাই। আর হবে না । আমি এক্ষুনি ওকে চাকরি দিয়ে দিচ্ছি। ”

রাতুল ড্রয়ার হাতড়ে পেপার বের করতে মশগুল হলো।
ঐশী সেদিকে একবার তাকিয়ে আবারও তন্ময়ের দিকে তাকালো। লাজুক হেসে বললো,

” ধন্যবাদ স্যার। আজ আপনি না থাকলে এতকিছু পসিবল হতো না। এগেইন থেন্কস। ”

তন্ময় মাথা চুলকালো। ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি টেনে বললো,

” প্লিজ ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না। অসহায় মেয়েদের আব আমার মতে মানুষদের হেল্প করাই আমার লক্ষ। আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি তাছাড়া আর কিছু নয়। ”

ঐশী মাথা নেড়ে লাজুক হাসলো। ইতিমধ্যে রাতুল ছেলে এসে ঐশীর পাশে দাঁড়ালো। ঐশীর দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললো,

” এই কাগজে সকল রুলস আছে। কাল থেকে চাকরি শুরু করবেন। সময় বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটা। ”

ঐশী কাগজটা নিয়ে মাথা নাড়ল। তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তন্ময়ের চোখে নজর যায়। যেই চোখ দুটি ঐশীর লতানো দেহে ঘূর্ণায়মান। ঐশী সেই নজর দেখে খুব বেশি অস্বস্থিতে পড়ে যায়। কিন্তু ঠোঁটে জোরপূর্বক হাসি টেনে বললো,

” স্যার ,,, স্যার। ”

তন্ময় ঐশীর ডাক শুনে স্তম্ভিত ফিরে পেলো। কিছুটা থতমত খেয়ে ঐশীর শরীর থেকে নজর সরিয়ে ওর চোখের দিকে তাকাল। অপ্রস্তুত কণ্ঠে বললো,

” হুম। কিছু বলেছিলে ? ”

” জ্বি স্যার। আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো আমি জানিনা। আজ তাহলে আসি। কাল দেখা হবে। ”

ঐশী চলে যেতে উদ্যত হলে তন্ময় পিছন থেকে ডাকে,

” এই মেয়ে। ”

ঐশী পিছন ফিরে। তন্ময় লাজুক হেসে বলে,

” তোমার নাম কি সেটাই তো বললে না.। ”

ঐশী ভাবাভাবি ছাড়াই বললো,

” ভূমি। ভূমি আমার নাম। ”

” ওয়াও। সাচ এ কিউট নেম। একদম তোমার মত। ”

ঐশী ভিতরে ভিতর দাত কিড়মিড় করলো। তবে বাইরে সৌজন্যমূলক হাসি হেসে বললো,

” থ্যাংক ইউ স্যার। এবার আসি। ”

তন্ময় মাদক চোখে তাকিয়ে কাউন্টার টেবিলে হেলান দিল। বললো,

” আসো তবে। কাল দেখা হচ্ছে কিন্তু। ”

ঐশী মুচকি হেসে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে গেল। আর এদিকে তন্ময়ের রাতের ঘুম হারাম হলো ঐশীর চিন্তায়।মেয়ে মানুষ!

__________________________

শুটিং শেষ করে জুভান শাওয়ার নিচ্ছিল। আর মাত্র সাত দিন আছে সে এই জায়গায়। জুভান শাওয়ার নিয়ে গায়ে টাওয়েল জড়িয়ে বের হলো। ফর্সা উদোম বুক থেকে টিপটপ পানি পড়ছে। জুভান হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে গেলো সোফার দিকে। সোফা থেকে একটা সাদা রঙের টিশার্ট গায়ে দিল। তার উপর নেভি ব্লু শার্ট পড়ে বোতাম খোলা রাখলো। সেই সাথে জিন্স। জুভান কাপড় পড়ে আয়নার সামনে দাড়ালো। চুল সেট করে শরীরে পারফিউম দিলো ঘনঘন। রেডি হওয়া শেষ হলে জুভান সোফায় বসে ফোন দিল ঐশীকে। কিন্তু বন্ধ দেখাচ্ছে ফোন। জুভানের রাগ লাগলো। বেশ কবার চেষ্টা করলো ফোনে। কিন্তু সফল হলো না। জুভান রাগে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে হোটেলের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রুম নম্বর ” ১০২” এ এসে ঐশীর রুমে নক করলো। বেশ কবার নক করার পরও কেউ দরজা খুললো না। জুভান বিরক্ত হলো। ঐশীর ফোনে আবার কল দিল। এবার রিং হচ্ছে। ফোন ধরতেই ঐশী কিছু বলার আগে জুভান ধমকে উঠল,

” ডাফার , কই তুমি ? ফোন দিচ্ছি , ধরছো না। দরজায় নক দিচ্ছি , খুলছো না। হোয়াই ? এক্ষুনি দরজা খুলো বলছি। ”

ঐশী মুখ ফুটে বললো,

” স্যার , আমি তো মাত্র.. ”

” আই সে ওপেন দা ডোর। ”

“কেনো ? আমি স্যার.. । ওকে , ওকে খুলছি। ”

জুভান ফোন কেটে দাঁড়িয়ে রইলো ঐশীর দরজার সামনে। ঐশী মাত্রই শাওয়ার নিল। তাই ভিজে চুল না মুছেই মাথার
তোয়ালে খুলে বেড থেকে ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিলো। ফোন বেডে রেখে রুমের দরজা খুলে দিল।

ঐশী দরজা খুলে দিলে জুভান তীক্ষ্ম চোখে ঐশীর দিকে তাকায়। রুমের ভিতরে না ঢুকেই বলে ,

” জলদি আসো। আমরা এখন বান্দরবান ঘুরবো। নাফাখুম যাওয়ার ইচ্ছে আছে। সো কুইক আসো। ”

ঐশী মাথা নাড়লো । জুভান চলে যেতে নিলে আবারও পিছু ফিরে তাকায়। ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলে,

” আমার স্ক্রিপ্টটা বোধহয় তোমার কাছে। ওটা দাও তো । ”

ঐশী মাথা নেড়ে পিছন ফিরলো। সাথেসাথে ঐশীর ভিজে চুল ঝমকে ছিটকে পড়ল জুভানের চোখেমুখে। জুভান চোখ বন্ধ করে থমকে গেলো। ভিজে চুলের মাদক গন্ধে নেশা লাগলো। শ্যাম্পুর তীব্র ঘ্রাণে মোহিত হলো। ঐশী ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ঝটপট পিছন ফিরল। জুভানকে এভাবে থমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভাবলো , হয়তো সে রাগ করেছে। তাই ঐশী অপরাধের সুরে বললো,

” আই অ্যাম রিয়েলি সরি। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি। এভাবে আমি..”

জুভান চোখ খুলে তাকালো। বললো,
.
” কি শ্যাম্পু ইউজ করো ? ”

ঐশী কথার পিঠে থেমে গেলো। হঠাৎ এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুটি করে জিজ্ঞেস করলো,

” সরি স্যার ..”

“আই সে, কি শাম্পু ইউজ করো ? ”

ঐশী মিনমিনিয়ে বললো,

“ডা-ডাভ। ”

জুভান কিছু বলতে গেলেও থেমে গেলো। ঐশীকে জলদি রেডি হতে বলে নিজের রুমে চলে গেল। আর ঐশী ! সে তো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল জুভানের পথের পানে। কি অদ্ভুত এই লোক ? বুঝা দায় !

#চলবে

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_১৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

হোটেলের রিসিপশনের দাঁড়িয়ে আছে জুভান আর ওর বন্ধু তীর্থ। তীর্থ বান্দরবানের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় ওদের গাইড করতে পারবে। জুভান তাই ওকে ওদের সাথে নিয়েছে। ওরা দুজন নিচে অপেক্ষা করছে ঐশীর জন্যে।

একটু পর ঐশী তাড়া নিয়ে নিচে নামলো। পরনে একটা বাদামী স্কার্ট আর কালো টপস। ঐশী বরাবরের মতন সাইড ব্যাগ আকড়ে ধরে জুভানদের কাছে এসে দাঁড়ালো। জুভান একটু দূরে ফোনে কথা বলছিল। ঐশীকে আসতে দেখে ফোন কেটে ঐশীর পাশে এসে দাড়ালো। ভ্রু কুঁচকে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবারও ঐশীর দিকে তাকালো। ভ্রু আড়াআড়ি বাঁকিয়ে বললো

” পাক্কা আধ ঘণ্টা লেট। নাও , টেল মি দা রিজন। ”

ঐশী কিছুটা মিহি সুরে বলল,

” শাওয়ার নিয়েছিলাম , না ? চুল ভিজে ছিল। তাই হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে রেডি হয়ে এসেছি। তাই বোধহয়…”

” লেটস গো। ”

ঐশীকে মাঝপথে থামিয়ে বললো জুভান। তীর্থ ঐশীকে দেখে যাচ্ছে সেই কতক্ষণ ধরে। এত সুন্দর মেয়ে হয় ? সাক্ষাৎ প্রতিমার মত। তীর্থ মুগ্ধ চোখে অপলক তাকিয়ে রইলো ঐশীর দিকে। জুভান ওদেরকে আসতে বলে আগে আগে হাঁটা ধরলো সামনে। একটু পর তীর্থ আর ঐশী জুভানের সাথেসাথে হাঁটা শুরু করলো।

_____________________

জীপ চলছে আপন গতিতে। বান্দরবানে বাতাসটা যেনো সজীবতায় ঘেরা। জুভান ফোন উচু করে ভিডিও করতে মগ্ন। তীর্থ ড্রাইভ করছে। আর ঐশী আঁকাবাঁকা রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। বাতাসের ঝাপটায় তার চুল উড়ছে এলোমেলো , অগোছালোভাবে। জুভান ভিডিও করতে করতে জিজ্ঞেস করলো,

” তীর্থ , এখান থেকে থানচি যেতে কতক্ষণ লাগবে ? ”

তীর্থ গাড়ি চালাতে চালাতে বললো,

” নরমালি তো বান্দরবান থেকে থানচি যেতে তিন থেকে চার ঘণ্টা লাগে। কিন্তু তোদের হোটেল তো কাছে ছিল । তাই আনুমানিক দুই ঘণ্টা লাগবে। ”

জুভান মাথা হেলালো। ফোনের ভিডিও অফ করে পকেটে পুড়ে নিল। সিটে মাথা হেলিয়ে ডান পাশের রাস্তায় তাকালো। ধু ধু বাতাসে জুভানের সিল্কি চুলগুলো কপালের উপর লেপ্টে যাচ্ছে। জুভান একসময় হাত দিয়ে চুলগুলো পিছন দিকে ঠেলে দিল।

হঠাৎ এই বাতাসের ঝাপটায় ঐশীর চুল তার অজান্তেই জুভানের মুখে ছিটকে পড়লো।আবার সেই মোহনীয় ঘ্রাণ ! সেই মাতাল করা সুগন্ধ। জুভান চোখ বুজে লম্বা নিঃশ্বাস নিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত চুলের কারণে নাকে সুরুসুরি লাগলো। সঙ্গেসঙ্গে জুভান টানা দু একটা হাঁচি দিল।

জুভানের হাঁচির শব্দে ঐশী স্তম্ভিত ফিরে পেলো। চুল সামলে জুভানের দিকে ফিরে তাকালো। জুভান আরো গুটিকয়েক হাচি দিয়ে নাক মুছে ঐশীর দিকে তাকালো। কিছুটা কড়া গলায় বললো,

” চুল সাবধানে রাখো। মানুষকে জ্বালাচ্ছে তোমার এই বাঁশের মত চুল। ডিসগাস্টিং। ”

কথাটা বলে জুভান আরো একবার হাঁচি দিল। জুভানের হাঁচির শব্দে ঐশীর কেনো যেনো হাঁসি পেলো। ফিক করে হেঁসে দিতেই জুভান ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওর দিকে। সঙ্গেসঙ্গে ঐশী চুপ। লম্বা চুলগুলো সামলে ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে আবারও রাস্তার দিকে তাকালো।

থানচি পৌঁছে গেছে ওরা। এখন আর জীপ কাজে লাগবে না। এখন নৌকা দিয়ে এখানকার সাঙ্গু নদী পাড় হতে হবে। এখানকার একজন গাইডকে বলে ওরা একটা নৌকা ভাড়া করলো।
কিন্তু বিপত্তি ঘটলো ঐশীর বেলায়। নৌকার কথা শুনে ঐশী ভয়ে ক্ষয়। যাই হয়ে যাক সে নৌকাতে উঠবে না। কোনো ক্রমেই না। জুভানের বিরক্ত লাগলো। ঐশীর দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে বললো,

” ওকে। ফাইন। তুমি এখানে একা একা বসে থাকো। আমরা সব ঘুড়ে সন্ধ্যার দিকে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো। ট্রাস্ট মি, ইউ আর জাস্ট আনবিলিভেবল। ”

ঐশীর রাগ লাগছে। নিজেকে অসহায় থেকে অসহায় মনে হচ্ছে। একা একা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে বসে থাকবে। ইমপসিবল। জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ঐশীকে একা রেখেই নৌকাতে চরে বসলো। তীর্থ জুভানের এই ভয়ঙ্কর রাগ সম্বন্ধে খুব ভালোই অবগত। তাই সে মুচকি হেসে ঐশীর পাশে এসে দাড়ালো। আশ্বস্তের সুরে বললো,

” দেখো ঐশী , একটা নৌকাই তো। এতো ভয় পাবার কি আছে ? আমাদের সাথে চলো। খুব ভালো লাগবে। ”

ঐশী পানির দিকে একঝলক তাকিয়ে করুন সুরে বললো,

” আমার তো নৌকা নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা ওই পানি নিয়ে। এত পানি। তার উপর আবার এত স্রোত। আমি সাঁতার পারিনা। মরে-টরে গেলে ? ”

তীর্থ হাসলো। ঐশীকে অপেক্ষা করতে বলে এক দৌড়ে কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো। ঐশী হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তীর্থর যাওয়ার পানে।
আর এদিকে জুভান একটু আগের ফোনে তোলা ছবিগুলো দেখছিল। ঐশী আর তীর্থকে একসাথে ফুসুরফুসুর করতে দেখে ভ্রু কুটি করে ওদের দিকে তাকালো। কি এমন কথা বলছে ওরা?

একটু পর তীর্থ হাতে করে তিনটে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে আসলো। ঐশীর দিকে একটা এগিয়ে দিয়ে বললো,

” নাও ধরো। এই জ্যাকেট সবাইকেই দেওয়া হয় সাঙ্গু নদী পাড় হওয়ার সময়। তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিলে। এখন এটা পড়ে নাও। জলদি করো। ”

ঐশী যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তীর্থের কাছ থেকে জ্যাকেট নিয়ে জামার উপরে পড়ে নিল। তীর্থ নিজেও একটা জ্যাকেট পড়ে আরেকটা জ্যাকেট জুভানের দিকে ছুঁড়ে দিলো। জুভান সঙ্গেসঙ্গে ক্যাচ করে নিল। তীর্থ খানিকটা চিৎকার করে বললো,

” ভাইইই , পড়ে নে। ”

জুভান জ্যাকেট টা গায়ে দিতে দিতে আরো একবার ঐশীর দিকে তাকালো। লাইফ জ্যাকেট গায়ে দেওয়ায় হালকা পাতলা ঐশীকে অনেক মোটা লাগছে। জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে অজান্তেই হেসে দিল। যেনো মনে হচ্ছে সবুজ বাঁশের উপর হলুদের ছন দিয়ে মোড়ানো। ঐশী জুভানকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো। মাস্ক পড়া ছিল বিধায় জুভান হাসছে কিনা সেটা বাইরে থেকে বুঝা যাচ্ছে না। তাই ঐশীও বুঝতে পারলো না।

তীর্থ প্রথমে নৌকাতে উঠলো। ঐশী এগিয়ে গিয়ে নৌকাতে উঠতে গেলে জুভান হাত বাড়িয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু তার আগেই তীর্থ নিজের হাত বাড়িয়ে ঐশীর হাত স্পর্শ করলো। জুভান হাত গুটিয়ে নিয়ে ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকালো। কেনো তাকালো সে নিজেও জানেনা । ঐশী এসব ভ্রুক্ষেপ না করে তীর্থর হাত ধরে নৌকাতে উঠে বসলো।

নৌকা চলছে নদীর অঙ্গজুড়ে। নৌকায় ওরা সহ আরো একজন কাপল আছে। একে অপরের সাথে ফিসফিস করছে আর আশপাশে বারবার তাকাচ্ছে। এদিকে ঐশী একপাশে বসে আছে হাঁটু গেরে। খুব ইচ্ছে হচ্ছে পানিতে হাত দিতে। কিন্তু ভয়ের চোটে হাত দেওয়া তো দূরে থাক নৌকার পাশ গেসেও বসছে না। যদি পড়ে যায় !

তীর্থ নৌকায় গা এলিয়ে হেডফোন দিয়ে ফোনে গান শুনছে। এসব ভ্রমন-ট্রমন খুব স্বাভাবিক ওর জন্যে। প্রায় অনেকবার এসেছে এইজায়গায়। চুষে খেয়েছে বান্দরবানের প্রতিটা এলাকা। তাই এসব দেখে খুব বেশি মোহিত হলো না সে। তবে জুভান নৌকায় বসে ভিডিও করছে।

একসময় তীর্থ চোখ খুলে ঐশীর দিকে তাকালো। কেনো জানেনা ঐশীর হাবভাব সে খুব সহজেই বুঝে গেলো। নিজের জায়গা ছেড়ে ঐশীর পাশে এসে বসলো। ঐশী পানির দিকে তাকিয়ে আছে আনমনে। হঠাৎ তীর্থ বললো,

” পানিতে হাত ভেজাবে ? ”

ঐশী মন খারাপ করে বললো,

” যদি নৌকা ডুবে যায় ? ”

তীর্থ হেসে বলল,

” সে চিন্তা তোমায় করতে হবে না। চলো। হাত দাও। ”

ঐশী বসে রইলো। ভয় কাটে নি তার। তাই হাত দিল না ঠান্ডা পানির স্রোতে। তীর্থ আবার বললো,

” আমি আছি না। হাত দাও। ডুববে না নৌকা। দাও। ”

ঐশী মাথা হেলিয়ে খুব সন্তর্পনে পানিতে হাত দিল। সাথেসাথেই শিউরে উঠলো ও। এত ভালো লাগছে ! বলার অপেক্ষা রাখে না। ঐশী পানিতে হাত দিয়ে থমকে বসে রইলো। পানির ফোঁটা ছিটকে পড়ছে ওর শরীরে। ঐশী আলতো হাতে পানির মাঝে হাত ডুবিয়ে রেখেছে। ঠাণ্ডা পানির জন্যে হাত যেনো কাটা যাচ্ছে। তবুও ভালো লাগছে। খুব , খুব ভালো লাগছে ওর। তীর্থ মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইলো ঐশীর দিকে। একটু পর জিজ্ঞেস করলো,

” ভালো লাগছে ? ”

সঙ্গেসঙ্গে ঐশী উত্তর দিলো,

” খুব ভালো লাগছে। অসম্ভব ভালো লাগছে। কিন্তু পানি ঠান্ডা অনেক। হাত অবশ হয়ে যাচ্ছে। ”

” এই নদীর পানি ঠান্ডাই। গরম কালেও খুব ঠাণ্ডা থাকে। একটুসময় হাত দিয়ে রাখো। সয়ে যাবে। ”

ঐশী সব শুনে পানিতে আরো বেশি করে ডুবিয়ে দিলো নিজের হাত।

ওদের এই কথাবার্তা দেখে মাঝি হুট করেই বলে উঠলো,

” আপনারা কি স্বামী-স্ত্রী ? ”

ঐশী থমকে গেলো। সাথে চমকালো আরো দুটো চোখ। জুভান ফোন থেকে চোখ তুলে ভ্রু কুচকে তাকালো ওদের দিকে। ঐশী তীব্র অস্বস্তিতে পানি থেকে হাত উঠিয়ে নিল। তীর্থ পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে গলা কেশে বললো,

” না চাচা। আমরা শুধু ফ্রেন্ড। তাছাড়া কিছু নই। ”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here