#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_35
মায়ের চিৎকার শুনে সেদিন দৃশ্য ছুটে গেছিলো মায়ের রুমে।দরজার সামনে এসে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। তার মা ফ্লোরে পড়ে কাতরাচ্ছে।চারপাশে রক্ত। কয়েকটা ভাঙ্গা কাচের টুকরো পড়ে আছে।মায়ের হাত পা কেটে রক্ত বের হচ্ছে।মায়ের কপাল আর নাক বেয়ে রক্ত ঝরছে।কিন্তু এই বীভৎস অবস্থার পর ও তার বাবা মাকে মেরেই চলছে।মুহূর্তেই দৃশ্যর পুরো শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে কেপে উঠলো।বাবার এই রূপ তার কাছে ভীষণ অপরিচিত।সে বরাবর দেখে এসেছে তার বাবা গম্ভীর,রাগী,স্বল্পভাষী মানুষ।কিন্তু বাবার এই নিকৃষ্ট রূপ সে কখনো দেখেনি।
দৃশ্য দৌড়ে মায়ের কাছে যেয়ে ঝাপটে ধরলো মাকে।দৃশ্যকে দেখে আশরাফ হুসাইন থামলেন।দৃশ্য মাকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো
-“বাবা প্লিজ মাকে আর মেরো না।মা মরে যাবে।মাকে কেনো মারছো তুমি?এমন নিকৃষ্ট কাজ কেমন করে করতে পারো?”
আনিকা কবির ফ্লোরে পড়ে কাতরাচ্ছেন।দৃশ্যর বাবার প্রতি ভীষণ রাগ হচ্ছে।একজন মানুষ অন্য মানুষকে এই ভাবে মারতে পারে?
দৃশ্যকে দেখে আশরাফ হুসেনের রাগ যেনো তর তর করে বেড়ে গেলো।তিনি হুংকার ছেড়ে বললেন
-“তুই হচ্ছিস নাটের গুরু।তোর জন্য! হে সব তোর জন্য হয়েছে।আজ তোর জন্য ওই আরিফ আমাকে অপমান করে গেলো।ভাইয়ের ক্ষমতার জোর দেখিয়ে গেলো।আর তোর মাও তাদের জন্য আমাকে অপমান করে?এতো বড়ো সাহস ওর?”
কথাটা বলে আনিকা কবির কে আবার মারতে গেলে দৃশ্য রেগে বললো
-“খবরদার বাবা মায়ের গায়ে আর একটা আঘাতও করবে না।এই সবে মায়ের কোনো দোষ নেই।ক্ষমতার জোর তো তুমিও দেখিয়েছো।তাদের অপমান করে বাড়ি থেকে বের করেছো।তোমাদের জন্য আমি ফুপিকে হারিয়েছি।”
আশরাফ হুসেনের দুচোখ দিয়ে যেনো রক্ত ঝরছে।যে পরিবারকে তিনি কন্ট্রোলে রেখেছেন।নিজের আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন সব যেনো বিফলে যাচ্ছে।তার স্ত্রী সন্তান যারা ভয়ে তার দিকে তাকাতে অব্দি পারতো না,তারা তার মুখে মুখে তর্ক করছে?তার সাথে গলা উচু করে কথা বলছে? এইসব তিনি কিছুতেই মানবেনা।এতদিনে দৃশ্যর প্রতি জমানো রাগটা যেনো উপচে পড়লো।
তিনি হাতের মোট কালো লাঠিটা দিয়ে দৃশ্যর পিঠে একটা আঘাত বসলো।মুহূর্তেই দৃশ্যর কাছে মনে হলো
তার পিঠে কেউ গরম কিছু ঢেলে দিয়েছে।জায়গাটা সাথে সাথে জ্বলে উঠলো।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মস্তিষ্ক ব্যাথার তীব্রতার জানান দিচ্ছে।দৃশ্য ‘ ও মাগো ‘ বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।সেই ব্যাথা লাঘব করার আগেই তার পুরো শরীরে একের পর এক আঘাত পড়তে শুরু করলো।এই মুহূর্তে তার সামনের মানুষটিকে আজরাইল মনে হচ্ছে।যে তার জান কবজ করেই দম নিবে।মারের প্রকোপে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।তার পুরো শরীর জ্বলতে লাগলো।পুরো শরীর ব্যাথায় অসাড় হতে শুরু করলো।
আশরাফ হুসাইন প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে দৃশ্যকে মারতে লাগলো।আর চিৎকার করে বলতে লাগলো
-“নষ্টা মেয়ে কোথাকার।তোর মত নষ্টা মেয়ে আমার লাগবে না।ওই আমজাদের পোলার সাথে নষ্টামি করিস?আর তোর জন্য ওরা আমাকে কথা শুনায়?তোকে আজ শেষ করে ফেলবো।তোরে জিন্দা কবর দিবো তবুও ওই পোলার কাছে দিবো না।আমার মান সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছিস।তোর আর ওই পোলার রঙ্গ লীলা এখন পুরো এলাকা জেনে গেছে।আর যদি কোনোদিন ওই ছেলের সাথে তোরে দেখি তাইলে তোর মাকে আমি সোজা উপরে পাঠাবো।”
কথা গুলো বলছে আর দৃশ্যকে আঘাত করছে।দৃশ্যর আর্তনাদ তার কানে গেলো না।এক সময় দৃশ্য জ্ঞান হারালো। তার এই ছোট্ট শরীরটা এর চেয়ে বেশি মার সহ্য করতে পারছিল না। আনিকা কবির অনেক কষ্টে উঠে স্বামীর পায়ে ধরলেন আর কেঁদে কেঁদে বললেন
-“আল্লাহর দোহায় লাগে আমার মেয়েটাকে আর মাইরেন না।মেয়েটা আমার মরে যাবে।আমি ওকে বুঝাবো।আপনি আর মাইরেন না।”
আশরাফ হুসাইন ঘেমে অস্থির হয়ে গেছেন।হাতের লাঠিটা আছাড় মেরে ফেলে বললেন
-“তোর মেয়েকে বলে দিস ওই ছেলের কাছ থেকে দূরে থাকতে।আমি বেচে থাকতে ওই বাড়িতে ওরে দিমু না।আমার কথার অমান্য করলে তোদের মা মেয়েকে কবর দিব।”
কথাটা বলেই আশরাফ হোসাইন বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন। এই মুহূর্তে বাসায় তার অসহ্য লাগছে। বাহিরের হাওয়া খেলে মাথাটা হয়তো ঠান্ডা হবে।
আনিকা কবির অনেক কষ্টে সেছরে সেছরে দৃশ্যর কাছে গেলেন।পুরো শরীর তার ব্যাথায় টন টন করছে।হাতের গ্লাস ভেঙ্গে কাচ তার হাত ও পায়ে বিধে কেটে গেছে।ফ্লোর সেই রক্তে ভিজে উঠেছে।তিনি কাপা কাপা হাতে মেয়ের মাথাটা কোলে তুলে নিলেন।পরম আদরে মাথায় হাত বুলিয়ে অস্থির হয়ে ডাকতে লাগলেন দৃশ্যকে।
-“দৃশ্য!মা আমার।কথা বল মা।চোখ খোল মা।”
কথাটা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।তিনি দ্রুত হাত বাড়িয়ে ফোন হতে নিয়ে বড়ো জা কে কল করলেন।কয়েক মিনিট পর নিচতলা থেকে তার বড়ো জা আসমা আর নাবিলা দৌড়ে আসলো।মা মেয়ের এই অবস্থা দেখে নাবিলা অনেকটা চমকে গেলেও আসমা চমকালো না।যেনো আগেও এমন বহুবার দেখেছে সে।তবে দৃশ্যর অবস্থা দেখে তিনি একটু চমকালো।
নাবিলা দৃশ্যর পাশে বসে কাদতে লাগলো আর দৃশ্যের সারা গায়ে হাত বুলাতে লাগলো।ফর্সা শরীরটা কালো মোটা মোটা মারের দাগ পড়ে গেছে।এই কাজ কে করতে পারে সেটা বুঝতে তার সময় লাগলো না।তাদের দুইজন কে অনেক কষ্টে বিছানায় তুলে দৃশ্যর মুখে পানির ছিটা দিলো।প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দৃশ্যর জ্ঞান ফিরলো। কিন্তু পুরো শরীরে শুরু হলো অসহ্য ব্যাথা।সেই ব্যাথায় দৃশ্য চিৎকার করে কাদতে শুরু করলো।দৃশ্যকে পেইন কিলার আর ঘুমের ঔষদ খাইয়ে দিলো আসমা।আনিকা কেও ড্রেসিং করে ঔষধ দিলো।
আনিকা বিছানায় পরে চোখের জল ফেলছে।আসমা তার জল মুছে বললো
-“ওই জানোয়ার টা এখনো মানুষ হইলো না।আমি ভাবছি বউ পিটানোর অভ্যাস তার। এখন দেখি মেয়ে পটানোরও অভ্যাস আছে?অমানুষ একটা। এমনে জুয়ান মাইয়ারে মারে?”
নাবিলা ভীষণ অবাক হলো মায়ের কথায়।তার মানে ছোট চাচা চাচীকে এর আগেও মারত?
আনিকা কবির ভাঙ্গা গলায় বললেন
-“আপা আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো?”
-“তুই চিন্তা করিস না।দৃশ্য ঠিক আছে।ওকে ব্যাথার আর ঘুমের ঔষধ দিয়েছি। তবে শরীর গরম হচ্ছে।মনে হয় রাতে জ্বর হবে। তুই চিন্তা করিস না।আমি আছি।”
আনিকা কবির ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।আর বললেন
-“আপা আমার মেয়েটাকে ও শেষ করে দিবে।বাপ হয়ে কেমন করে মেয়েটাকে এমন করে মারতে পারলো?এই মানুষটার মধ্যে কি কোনো মায়া দয়া নাই।জানো আপা আমার ভয় হয়।ও আমার মেয়েটাকে ও যদি কোনো জানোয়ারের হাতে তুলে দেয়।আমার বাচ্চা মেয়েটা একটুও কষ্ট সহ্য করতে পারবে না।ওর পরিণতি আবার দিশার মত না হয়?”
আসমার চোখে জল।সে জানে এই কষ্ট।নিজের মেয়েকে ধুকে ধুকে মরতে দেখছে।নার্গিস যে সংসার জীবনে অনেক কষ্টে আছে।টাকা দেখে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে ওর বাবা চাচা।মেয়ের সুখ দেখেনি।আজকাল নাবিলার জন্য ভীষণ ভয় হয় তার।না জানি এই মেয়েটার কপালেও কোন কষ্ট লেখা আছে।এই বংশে কোনো মেয়েই সুখী হতে পারেনি।না পেরেছে দিশা।না নার্গিস।আর এখন দৃশ্য।
আসমা আর নাবিলা মিলে সারা রাত মা মেয়ের পাশে বসে রইলো।দৃশ্যর ভীষণ জ্বর উঠেছে।দুইবার মাথায় পানি ডেলেছে। আর পট্টি তো চলছেই।নাবিলা হটাৎ তার মাকে প্রশ্ন করলো
-“মা বাবাও কি তোমার গায়ে হাত তুলেছে?”
আসমা একটু চমকালো মেয়ের প্রশ্নে।কিন্তু কিছু না বলে দৃশ্যর মাথায় জল পট্টি দিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।নাবিলার দু চোখ ভিজে উঠল। এ কোন পরিবারে জন্ম নিলো সে?
ফাহিম সেদিন বিকেলে বাসায় ছিলনা।তাই মা ও বোনের সেই আর্তনাদ তার চোখে পড়েনি।আর না দেখেছে বাবার নিকৃষ্ট রূপ।ফাহিম কয়েকদিন ধরেই ভীষণ বিষণ্ণ ছিলো।নিজের আদরের বোনের সাথে ঠিক মত কথাও বলেনা।আসলে দৃশ্যর প্রতি তার মনে রাগ জমা হয়েছে।দৃশ্য কেনো দুইদিনের সম্পর্কের জন্য ভাইয়ের এতদিনের ভালোবাসা ভুলে গেলো?তার মানা কেনো শুনছে না?
রিজভী বন্ধুর মনের অবস্থা বুঝে আজ বিকেলেই তাকে নিয়ে কয়েক দিনের জন্য বেরিয়েছে।বাসা থেকে দূরে থাকলে মন ভালো হবে ভেবে তাকে নিয়ে গেছে।
টানা তিন দিন দৃশ্য জ্বরে ভুগেছে। এর মধ্যে মাহাদ মৌ এর মাধ্যমে ফোন পাঠিয়েছে দৃশ্যর কাছে।দৃশ্য একবার ভেবেছে সে ফোনটা ফিরিয়ে দিবে। মাহাদের সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিবে।তার জন্য মা আঘাত পাক সেটা চায়না।কোনো সন্তানই সেটা সহ্য করতে পারবে না।নিজেকে ভীষণ অপরাধী লাগে।বাবা এই তিন দিনে একবারও তার খবর নেয়নি।তবে দৃশ্যর তাতে আফসোস নেই।তার বাবা ঠিক কেমন সেটা তার ভালো করেই জানা হয়েগেছে।তবে বাবার প্রতি ভয়টা আরো বেড়ে গেছে।
দৃশ্য নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়েছে। মাহাদ নামক মানুষটি তার ভাগ্যে নেই সেটা মেনে নিয়েছে।তবে মাহাদ এতো সহজে মানবে না।সে যদি হটাৎ করে মাহাদের সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তবে মাহাদ সোজা তার বাসায় চলে আসবে।তাই দৃশ্য ধীরে ধীরে মাহাদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করেছে।ঠিক মতো মাহাদের কল রিসিভ করতো না।তার পর যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
সেই সময়টা দৃশ্যর ঠিক কেমন কেটেছে তা সেই জানে।প্রতিটা রাত যেনো বছরের মতো কেটেছে। মাহাদ যেনো তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে।এই মানুষটার শূন্যতা তাকে গভীর ভাবে পুড়িয়েছে।মায়ের কোলে শুয়ে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছে অনেক বার। মাহাদের কল এবইড করা যেনো তার কাছে পরীক্ষার মতো ছিলো। যতবার ফোনের স্ক্রিনে হার্টবিট লেখাটা সে দেখেছে,ঠিক ততবার সে নিজের হার্টবিট মিস করেছে।
সেদিন যখন কলেজে যাওয়ার সময় গেটের পাশে মাহাদকে দেখেছিল,তখন মনে হয়েছে এতো দিনে সে নিজেকে যা শক্ত করেছে সেটা নিমিষেই ভেঙে গুড়িয়ে গেছে।মানুষটার মলিন মুখটা দেখে বুকে তীব্র ব্যাথা হয়েছে।দৃশ্যর মন চাইছিলো মাহাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে।ওই বুকে কয়েকটা চুমু খেতে।তাহলে হয়তো তার বুকের যন্ত্রণা টা কিছুটা কমবে।
কিন্তু মায়ের সেই দিনের চেহারাটা তার সামনে ভেসে উঠলো। মাহাদের দিকে এগিয়ে যাওয়া মানে মাকে আবার সেই পরিস্থিতিতে ফেলা।যেটা সে কোনোদিন ও পারবে না।তাই নিজেকে পুনরায় শক্ত করে মাহাদকে এড়িয়ে গেছে।
সেদিন অনেক কষ্টে সে মাহাদ কে বলেছিল সম্পর্ক শেষ করতে।তার কাছ থেকে দূরে থাকতে।বাসায় এসে সেদিন দৃশ্য হাউ মাউ করে কেঁদেছে। মাহাদ যে তার প্রাণ।সেই প্রাণকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে সে কি করে ভালো থাকবে?
এতো কিছুর পরও মাহাদ তার পিছু ছাড়ছে না।আর দৃশ্য নিজেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।তাই কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিলো।মানুষটার মলিন মুখ দেখলে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে।এই মানুষটিকে কষ্ট দিতে তার বুকটা ফেটে যায়।
সে জানতো মাহাদ ওকে না পেলে নাবিলাকে খুঁজবে।তাই সে নাবিলাকে ও কলেজে যেতে দেয়নি। আর আজ যখন মাহাদের চোখে পানি দেখলো সে আর নিজেকে আটকাতে পারেনি।ঝাঁপিয়ে পড়েছে মানুষটার বুকে।আহা!কি শান্তি এই বুকে।ভীষণ নিরাপদ এই বুকটা।এই বুকে থাকলে কেউকে তার চুলটাও বাঁকা করতে পারবে না সেটা দৃশ্যর জানা।
সব শুনে মাহাদ থমকে গেলো।মানুষ এতটা খারাপ হতে পারে?ওই লোকটা কি আসলেই মানুষ নাকি পশু।আর সে ভাবছিল দৃশ্যর বাবার কাছে আবার যাবে।দৃশ্যর বাবার হাত পা ধরে রাজি করবে।যে মানুষটার নিজের স্ত্রীর প্রতি কোনো সম্মান নেই,মেয়ের জন্য সামান্য তম মায়া নেই সে লোক মেয়ের সুখের কথা ভাববে সেটা আদো সম্ভব?যেখানে সে দুই পরিবারের সম্মতি আসায় বসে আছে।দৃশ্যর বাবা যে কোনোদিন মেয়েকে তার হাতে তুলে দিবেনা সেটা মাহাদের বুঝা হয়ে গেছে।ওই রকম একটা মানুষের জন্য সে নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছথেকে মোটেই দূরে থাকবে না।
দৃশ্য তখনও মাহাদের বুকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদঁছে। মাহাদ দৃশ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।সে দৃশ্য কে বুক থেকে সরিয়ে তার চিবুকে হাত রেখে মুখটা উচু করে ধরলো।বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে দৃশ্যর অশ্রুধারা মুছে কপালে চুমু খেলো।তারপর বললো
-“বিয়ে করবে পিচ্ছি?”
দৃশ্য চমকে তাকালো মাহাদের দিকে। নাবিলাও চমকালো। মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“তোমাকে কিছু চিন্তা করতে হবে না।একবার বিয়ে হয়ে গেলে তোমার বাবার সাধ্য হবে না আমার কাছ থেকে তোমাকে দূরে রাখতে।আর আন্টির গায়ে যদি উনি আর হাত তুলে তবে তার জেলে যাবার বেবস্থা আমি করবো।”
দৃশ্যর চোখ বেয়ে আবার অশ্রু ঝরলো।সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
-“তোমার বাসার সবাই যদি..?”
-“আমার বাসায় আমি ম্যানেজ করে নিবো।তুমি বলো বিয়ে করবে?”
দৃশ্য কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব কিছুই ফিকে লাগছে।শুধু এই মুহুর্তটা মধুর মনে হচ্ছে।সময়টা এইখানে থমকে গেলে ভালো হবে।দৃশ্য হঠাৎ খেয়াল করলো তার ভীষণ লজ্জা লাগছে। সে মাহাদের বউ হবে ভাবতেই কেমন যেনো অনুভূতি হচ্ছে।মাহাদের ধূসর চোখের দিকে তাকাতে পারছে না।নিজের চোখ নামিয়ে মাহাদের বুকে আবার মুখ গুঁজে রইলো। মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“নিরবতা কিন্তু সম্মতির লক্ষণ।পড়ে কিন্তু বলতে পারবে না জোর করে বিয়ে করেছি।অবশ্য না বললে জোর করেই করতাম।আমি আবার মহৎ প্রেমিক না।নিজের ভালোবাসা কে নিজের করে নিতে সব করতে পারি।”
দৃশ্য মাহাদের বুকে কিল বসিয়ে বললো
-“থ্রেট দিচ্ছ?”
-“অবশ্যই দিচ্ছি।আর আমাকে যে এতো দিন কষ্ট দিয়েছো তার শোধ বিয়ের পরে তুলবো।”
দৃশ্য মুচকি হাসলো। নাবিলা হা করে তাকিয়ে আছে।তার চোখের সামনে এরা পালিয়ে বিয়ে করার সব প্ল্যান করে ফেলেছে।এমনকি রোমান্স করা শুরু করেছে। আল্লাহ এদের কি লজ্জা নাই।এই দৃশ্য প্রেম করে নির্লজ্জ হয়ে গেছে।আল্লাই জানে এইগুলা আর কি কি করছে।নির্ঘাত এইখানে লিপ কিস করেনি।নাহলে নাবিলা এইখানেই অজ্ঞান হয়ে যেতো।নাবিলা গলা খকিয়ে বললো
-“সিরিয়াসলি ভাইয়া আপনারা পালিয়ে বিয়ে করছেন?”
দৃশ্যর এবার হুস ফিরলো।সে দ্রুত মাহাদের বুক থেকে সরে গেলো। মাহাদ মুচকি হেসে নাবিলাকে বললো
-“এক্সাইটিং হবে বিষয়টা তাইনা শালীকা?আর তুমি হবে বউ পক্ষের সাক্ষী।”
নাবিলা কপাল কুঁচকে ভাবলো
-এরা নিজেরা ডুববে আর আমাকে নিয়ে ডুববে।বাবা আর ছোট চাচা জানলে দেখা যাবে দৃশ্য বাসর করছে আর আমি বাঁশ খাচ্ছি।
নাবিলা চিন্তিত হয়ে বললো
-“কিন্তু ভাইয়া এমন করলে দুই পরিবারে আরো ঝামেলা বাড়বে।”
-“আমি সব ঝামেলা পোহাতে রাজি আছি।কিন্তু তোমার বোনকে আর দূরে রাখতে রাজি না।আমার ফ্যামিলিতে কোনো প্রবলেম হবে না।সবাই দৃশ্যকে ভীষণ পছন্দ করে।”
নাবিলা তবুও নিশ্চিত হতে পড়ছে না।সামনে আরো বেশি প্রবলেম হবে সেটা সে বুজলেও এই দুই পাগল প্রেমিক যুগল বুঝতে পারছে না।তাদের চোখে নেশা।একে অন্যকে পাওয়ার নেশা।
মাহাদ দৃশ্যকে বললো
-“কাল সকালে আমি তোমাকে কলেজ থেকে নিয়ে যাবো।আজ রাতটা শুধু কষ্ট করো। কাল থেকে তুমি শুধু আমার।করো সাধ্য নেই আমাদের আলাদা করার।”
দৃশ্য মাথা নেড়ে হে জানালো।সেই রাতটা দৃশ্যর দুই চোখে আর ঘুম আসলো না।এই এক সমস্যা।সে কষ্টে থাকলে ঘুম হয়না।আবার বেশি খুশি হলেও ঘুম হয়না।কিন্তু মনে মনে সে ভয় পাচ্ছে।ভীষণ ভয়।বুকের বা পাশে অচেনা বেথা হচ্ছে। মাহাদকে পাবে তো?বাবা সব জানতে পারলে কি রিয়্যাক্ট করবে?সব ঠিক হবে তো?নাকি সব শেষ হয়ে যাবে?