#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_45
জেম আর ঢাকার রাস্তার মাঝে এক গভীর সম্পর্ক। এদের সহজে আলাদা করা যায়না।এই অসহ্য গরমে বাসে দাড়িয়ে দৃশ্য অতিষ্ট হয়ে পড়েছে।একটু পর পর বাস থামছে আর যাত্রী উঠা নামা করছে।ভিড়ের চাপে দৃশ্যর দম আটকে যাবার দশা।বাস তার গন্তব্য স্থলে পৌঁছালে দৃশ্য দ্রুত বাস থেকে নেমে পড়লো।আজ সে অলরেডি দেরি করে ফেলেছে।দ্রুত অফিসে ঢুকে লিফটে উঠলো।ঘেমে একদম বাজে অবস্থা।ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছে নিলো।
লিফটের দরজা বন্ধ হবার আগেই কেউ থামিয়ে দিলো।দৃশ্য সামনে তাকিয়ে একটু চমকে গেলো। মাহাদ তার সামনে দাড়িয়ে।গায়ে কালো ব্লেজার।চুল জেল দিয়ে পেছনে হেলানো। হাতে ব্র্যান্ডেড ঘড়ি।দৃশ্যর যেনো দম বন্ধ হবার দশা।অফিসে এতো সেজে গুজে আসার মানে কি?মেয়েদের ইমপ্রেস করতে চায়?সত্যি মিডিয়া মানেই খারাপ। এখনে ভালো মানুষ খারাপ হয়ে যায়। এর জলজ্যান্ত উদাহরণ তো তার সামনে দাড়ানো।
মাহাদ ভেতরে ঢুকেই লিফটের দরজা বন্ধ করলো।দৃশ্য এক পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। মাহাদ দৃশ্যর দিকে ফিরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।দৃশ্যর ভীষণ অসস্তি লাগতে শুরু করলো।ধূসর চোখ জোড়ার ভাষা সে পড়তে চায়না।
মাহাদ এক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে তার প্রিয়তমাকে।মেকাপ বিহীন মুখটায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।কোমর অব্দি চুল গুলি মাথার উপরে খোঁপা করা।ছোট চুল গুলো কপাল ও কান ঘেঁষে পড়ে আছে।খোঁপাতে একটা কাঠি গোঁজা।ব্রাউন কলারের জামাটা দারুন মানিয়েছে। এই অফিসে মনে হয় দৃশ্যই এক মাত্র এম্প্লয় যে বিনা মেকাপে আসে।যার মধ্যে নেই কোনো কৃত্রিমতা।মিডিয়া জগতে আসার পর থেকে মেকাপে আচ্ছন্ন নারী মুখ দেখতে দেখতে সে অভ্যস্থ হয়ে গেছে।বহুদিন পর এই নেচারাল বিউটি দেখে সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।আর সেটা যদি হয় নিজের প্রিয়তমা তাহলে তো কথাই নেই।চোখ তো বেহায়া হবেই।
মাহাদ দৃশ্যর দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলো।দৃশ্য চমকে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলো।এই মাহাদের কোনো বিশ্বাস নেই।যখন তখন যা তা কান্ড ঘটিয়ে দিতে পারে। ভয়ে দৃশ্য চোখ বন্ধ করে রইলো।
মাহাদ পকেট থেকে টিসু বের করে দৃশ্যর নাক মুছে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো
-“শুনেছি মেয়েদের নাক ঘামলে নাকি স্বামী সোহাগী হয়।আজ সেটা বিশ্বাস করে নিলাম।”
দৃশ্য ফট করে চোখ খুলে মাহাদের দিকে তাকালো।কেমন মিষ্টি গন্ধ নাকে আসছে দৃশ্যর।নিশ্চয়ই মাহাদ দামী কোনো ব্র্যান্ডের পারফিউম ইউজ করেছে।দৃশ্য আগে বিশ্বাস না করলেও আজ বিশ্বাস হচ্ছে দামী পারফিউমের মিষ্টি ঘ্রাণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে।দৃশ্য নিজেকে সামলে নিয়ে কড়া চোখে তাকিয়ে বললো
-“কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনা।”
মাহাদ বুঝতে পারলো প্রিয়তমার অভিমান।সে কিছু বলার আগেই দৃশ্যর ফ্লোর চলে আসলো।দৃশ্য দ্রুত পাস কাটিয়ে বেরিয়ে গেলো।আর মাহাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
দৃশ্য ভয়ে জড়ো সরো হয়ে দাড়িয়ে আছে মিস লুবনার সামনে।তিনি কিছুটা রেগে বললেন
-“গতকাল ছুটি কাটিয়ে আজ লেট করে আসলে।তোমাদের মধ্যে কি কাজ করার কোনো স্পিহা নেই?যদি না থাকে তবে আর আসার দরকার নেই।তোমাদের বয়সে আমি কাজ নিয়ে কতটা সিরিয়াস ছিলাম জানো?তোমার মতো দায়িত্ব হীন ভাবে চললে আজ এই অবস্থানে আসতে পারতাম না।নেক্সট টাইম যেনো এমনটা আর না দেখি।যাও।”
দৃশ্য মন খারাপ করে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো। ঈশিতা দৃশ্যকে দেখে মুচকি হেসে বললো
-“কেমন ক্লাস নিলো মিস লুবনা বান্দরনী।?”
দৃশ্য মলিন মুখে বললো
-“সেই লেভেলের ক্লাস!”
-“এই গরমে গলায় ওড়না কেনো পেঁচিয়ে রেখেছো?”
-“তেমন কিছু না।এমনি।”
মৃদুল লেপটপে কাজ করার ফাঁকে দৃশ্যর দিকে ফিরে মুচকি হেসে বললো
-“এখন কেমন আছো দৃশ্য?শুনলাম জ্বর ছিলো।আমি কাল কল করেছিলাম।তুমি পিক করনি।”
-“সরি ভাইয়া।আমি খেয়াল করিনি।আসলে কাল শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছিলো।কিন্তু এখন ভালো আছি।”
মৃদুল ভাবছে মেয়েটা কেনো তার মনের অনুভূতি বুঝেনা?ভাইয়া ভাইয়া বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।এইযে দৃশ্যর মলিন মুখ তাকে কতটা যন্ত্রণা দেয় সেটা কি করে বুঝবে?
এমন সময় মিস লুবনা দৃশ্যকে কল করলো।দৃশ্য দ্রুত তার কেবিনে চলে গেলো।
মাহিম আজ সিলেটের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।ভাইকে বলেছিলো এইবার এক সাথে যাবে।কিন্তু তার রকস্টার ভাই ভীষণ বিজি।তাছাড়া ভাবিকে দেখার পর থেকে তার ভাই কতটা অস্থিরতায় ভুগছে সেটা তার চাইতে বেশি কে জানে?এই সময় বোমা ফাটলেও তার ভাই ভাবির থেকে দূরে এই সিলেট কিছুতেই যাবে না।তাই বলে তার ট্রিপ বন্ধ থাকবে তেমনটা নয়।সামনেই মাস্টার্স ফাইনাল এক্সাম।মাথা পুরো জ্যাম হয়ে আছে।একটা ট্যুর ভীষণ দরকার ছিলো।
বর্ষা বাস স্ট্যান্ড এসে মাত্রই পৌঁছালো।হাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একটা সস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো।যাক এবার আর দেরি হয়নি। বন্ধু মহলে তাকে সবাই লেট লতিফ বলেই ডাকে।কারণ সব সময় সে লেট করে।বর্ষা বাসে উঠে চোখ বুলালো।কাঙ্খিত মানুষটিকে দেখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।এই মানুষটির পেছন সে দুই বছর পাগলের মতো ঘুরেছে।মেয়ে হয়েও বার বার নিজের মনের অনুভূতি মানুষটির সামনে প্রকাশ করেছে।ইসস! এখন ভাবলেই লজ্জা লাগে।সে সোজা মানুষটির পাশের সিটে বসে পড়লো।
মাহিম পাশে তাকিয়ে দেখলো বর্ষা তার পাশে বসেছে।সে মুচকি হেসে বললো
-“এতো সময় লাগে আসতে? এবারো বাস মিস করলে তোকে ছাড়াই চলে যেতাম।”
পাস থেকে রণিত বলে উঠে
-“এই ধামরি সারা জীবনই লেট করে।লেট লতিফ কোথাকার।”
বর্ষা পেছন ফিরে বিরক্ত হয়ে বললো
-“এই রনিত তোর সমস্যা কি?আমার পেছনে না লাগল তোর পেটের ভাত হজম হয় না?ওই পূজা তোর বেকুব বয়ফ্রেন্ডকে বলেদে আমার পেছনে না লাগতে?”
পূজা বললো
-“যা বাবা! এখন সব দোষ আমার রণিতের?তুই লেট করিস কেন?”
-“যা ফালতু মহিলা।অভিশাপ দিলাম বছরে বছরে তোর বেবি হবে।শালী রোমাঞ্চ করার সময় পাবি না।বাচ্চারা মা মা করে খালি কাদবে।”
মাহিম বর্ষার মাথায় টোকা মেরে বললো
-“গাঁধী একটা।রোমাঞ্চ করার সময় না পেলে বছরে বছরে বাচ্চা হবে কিভাবে?'”
বর্ষা জিব্বায় কামড় দিয়ে চুপ করে রইলো।মাঝে মাঝেই সে এমন বোকার মত কথা বলে। বাস ছাড়তে শুরু করে।সবাই চুপ করে বসে থাকে।মাহিম বর্ষার হাতের আঙ্গুলের ভাজে নিজের আঙ্গুল মিলিয়ে দিলো।বর্ষা পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে মাহিমের কাধে মাথা রাখলো।
পাস থেকে সিয়াম আর আরিফিন দুই জোড়া পাখিদের দেখে আফসোস করে।সিয়াম বলে উঠে
-“আজ সিঙ্গেল বলে এই আবাল আরেফিনের পাশে বসতে হচ্ছে।”
-“আমি আবাল নাকি তোর চোদ্দো ঘুষ্ঠি আবাল?একটা মেয়ে পটাতে পারেনা আবার আসে কথা বলতে।”
-“আমি নাহয় পারিনা।কিন্তু তুই কোন বাল ছিরসিস?”
-“আমি কখনো বিয়ে করবো না।তাই আমার মেয়ে পটানোর ইচ্ছা নাই।”
-“শালা তোর এই সন্ন্যাস গিরি কতদিন চলে আমিও দেখবো।”
বর্ষা বিরক্ত হয়ে বললো
-“ওই চুপ যা প্লিজ।মাথা ব্যাথা ধরে গেছে।এই মাহিম মাথা টিপে দে।”
মাহিম মুচকি হেসে আসলেই মাথা টিপতে লাগলো।এই মেয়েটাকে সে প্রচন্ড ভালোবাসে।ভার্সিটি লাইফ এসেই তার বেশ কয়জন ভালো বন্ধু জুটে যায়।
রণীত,সিয়াম,আরিফিন,পূজা আর বর্ষা।বন্ধুত্বের বেশ কিছুদিন পর সে বুঝতে পারে বর্ষা তার প্রতি দূর্বল।কিন্তু সে তেমন একটা পাত্তা দিতো না।বন্ধুত্বের মাঝে অন্য কোনো সম্পর্ক সে চাইছিলো না।কিন্তু এই মেয়ে নাছোড় বান্দা।কতো শত বার তাকে প্রপোজ করেছে।কিন্তু মাহিম হেসে উড়িয়ে দিতো। এর মধ্যে রনীত আর পূজার রিলেশন শুরু হয়।মাহিমের কাছথেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে বর্ষা হাল ছাড়েনি।একটা সময় মাহিম বুঝতে পারে সেও এই মেয়েটার প্রতি ভীষণ দুর্বল।একটা দিন তাকে না দেখলে ভীষণ অস্থির হয়ে পড়তো।ভাইয়ের ভাবির প্রতি পাগলামি দেখে সে কতো হাসতো।কিন্তু সে আজ বুঝতে পরে ভালোবাসার অনুভূতিটা কতটা সুখকর হয়।এই সুখের জন্য যে কোনো পাগলামি করা যায়।
একটা বিষয় মনে হলে তার ভীষণ হাসি পায়।তার ভাই এক বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পাগল। আর সে তার চাইতে দুই মাসের বড়ো মেয়ের জন্য পাগল।বর্ষা তার চাইতে দুই মাসের বড়ো।এটা শুনে বর্ষা ভীষণ হেসেছিলো।আর বলেছিলো
-“এই তোর ভাবীর চাইতে বয়সে আমি কিন্তু বড়ো। অথচ কপাল দেখো সে আমার বড়ো জা হবে।বিষয়টা ভীষণ ইন্টারেস্টিং।আচ্ছা আমিকি তাকে নাম ধরে ডাকবো নাকি ভাবী বলে?”
-“অবশ্যই ভাবী।সম্পর্কে তো সে তোর বড়ো।আর ভাবী কিন্তু ভীষণ বাচ্চা।আর আমার দাদী সেই জিনিস।তাকে কিন্তু তোর হ্যান্ডেল করতে হবে।”
-“আরে ব্যাপার না।দাদী নাতি দুটোকেই হ্যান্ডেল করবো।”
মাহিম জানালার বাইরে তাকিয়ে ভাবলো সত্যি যদি সব ঠিক হয়ে যেতো।ভাই আর ভাবির মাঝের দূরত্বটা যদি কমে যেতো।তাহলে তার পরিবারটা কতই না সুখী পরিবার হতো।
অফিস শেষ করে দৃশ্য বেরিয়ে পড়লো বাসার উদ্দেশে। বাসে উঠে আজও কোনো সিট খালি পেলো না।কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাসে ভিড় বাড়তে লাগলো।দৃশ্য শক্ত করে কাধের ব্যাগ ধরে দাড়িয়ে রইলো।এই ভিড়ের মাঝেই একদল নর পিশাচ মেয়েদের গা ছুয়ে আনন্দ পায়।হঠাৎ দৃশ্য খেয়াল করলো এতো ভিড়ের মাঝে তার করো সাথেই ধাক্কা লাগছে না।সে ভীষণ অবাক হলো।পেছন ফিরে দেখলো এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত তাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে।যার কারণে করো সাথেই তার শরীর স্পর্শ করছে না।সে এই হাতের মালিকের দিকে তাকিয়ে চমকালো।মুখে মাস্ক,মাথায় টুপি আর চোখে সানগ্লাস পরিহিত একজন দাড়িয়ে আছে।মানুষটার নজর জানালার বাইরে।
তীব্র করা পারফিউমের গ্রান দৃশ্যর নাকে আসছে।মানুষটাকে চিনতে তার সময় লাগলো না।মহাদ এখানে কি করছে?সে তো অনেক আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে।সে কি পাগল?কোনো সিকিউরিটি ছাড়া এই ভাবে পাবলিক প্লেসে কি করছে?যদি ভুল করে কেউ চিনে ফেলে তাহলে কি অবস্থা হবে?দৃশ্য বিরক্ত হয়ে সরে যেতে চাইলে মাহাদ তার হাত টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।দৃশ্যর পিঠ থেকেছে মাহাদের বুকে।দৃশ্যর সারা শরীর বেয়ে শীতল অনুভূতি ছেয়ে গেলো।হৃদস্পন্দন কয়েক গুণ বেড়ে গেলো।সে আবার ছাড়াতে চাইলে মাহাদ তার কানে ফিসফিসিয়ে বললো
-“আর একবার নড়লে আমি মুখের খুলে ফেলবো।”
দৃশ্য স্থির হয়ে রইলো।এই ছেলের কোনো বিশ্বাস নেই।সত্যি যদি এমন করে তবে মাহাদকে এই ভিড়ে বিপদে পড়তে হবে।
বাস থামলে দৃশ্য দ্রুত বের হয়ে হাঁটতে থাকে।কি মনে করে একবার পেছনে ফিরে দেখে মাহাদ প্যান্টের পকেটে হাত গুজে তার পেছন পেছন হাঁটছে।দৃশ্য ভীষণ বিরক্ত হলো।সে রেগে বললো
-” পেছন পেছন কেনো আসছেন?সমস্যা কি?”
-“কোনো সমস্যা নেই।এই রাস্তা দিয়ে আমার বউও হাটে।তাই আমিও হাঁটছি।তোমার কোনো সমস্যা?”
দৃশ্য রেগে দাত কটমট করে তাকালো। মাহাদ বললো
-“রাগলে তোমাকে পাকা টমেটো লাগে।মন চায় টুপ করে খেয়ে ফেলি। ইউ নো টমেটো আমার ভীষণ পছন্দ।”
দৃশ্য আর একটা কথাও বললো না।দ্রুত হাঁটতে লাগলো।রাগে তার গা জ্বলে যাচ্ছে।এক্ষনি বাসায় যেয়ে গোসল না করলে মাথা ঠান্ডা হবে না।
দৃশ্যকে রেগে বাসায় ঢুকতে দেখে জিনিয়া বললো
-“কীরে তোকে এতো হট লাগতেছে কেনো?”
দৃশ্য রাগী চোখে তাকালে জিনিয়া বললো
-“মানে তোর মাথা হট মনে হচ্ছে।”
দৃশ্য কিছু না বলে রুমে চলে গেলো।সব কিছুই তার কাছে বিরক্ত লাগছে। মাহাদ আবার এমন পাগলামি কেনো শুরু করেছে?সেতো সবটাই মেনে নিয়েছে।তাহলে তাকে দুর্বল কেনো করতে চাইছে?
মাহাদ বাসায় পৌঁছাতেই শামসুন্নাহার বেগম বললেন
-“মাহাদ তুই ওই পাহাড়ি বেডাগ ছাড়া কই গেছিলি?”
-“দাদী ওদের বডিগার্ড বলে।তোমার ভাষা আর ঠিক হলো না।”
-“আর ঠিক কইরা কেরমু? দুই দিন পর এমনি কবরে জামুগা।”
-“দাদী প্লিজ এসব বলো না।মা খেয়েছে?”
-“তোর মারে তুই জিগা।আমি পারুম না।”
-“আচ্ছা।”
মাহাদ সোজা তার মায়ের রুমে চলে গেলো।শামসুন্নাহার বেগম খেয়াল করলেন আজ মাহাদকে অন্যরকম লাগছে।মন খারাপের ছাপটা তেমন নেই।তাহলে কি আবার ওই মেয়েটা মাহাদের জীবনে ফিরে এসেছে?কিন্তু এটা হোক তিনি চাননা।ওই মেয়েকে তিনি কিছুতেই মেনে নিবে না।
মাহাদ মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে বললো
-“মা তোমার হাতের গরুর মাংসটা ভীষণ মিস করছি।”
আখি রহমান একটু অবাক হলেন।ছেলে নিজের ডায়েট ভুলে মাংস খেতে চাইছে?তিনি কিছুই বললেন না।তবে মনে মনে বেশ খুশি হলেন।মনে মনে ঠিক করলেন কালই মাহাদ বাসায় আসার আগে রান্না করে ফেলবেন।তবে মাহাদ প্রায় সময়ই বাসায় আসে না।তাদের ধানমন্ডির বাসায় থাকে।তিনিও কিছু বলে না।ছেলে একাকী সময় কাটালে তার সমস্যা নেই।তিনিতো জানেন ছেলেটার মুখের এই হাসি কতটা নকল।একটু নিজের মত থাকলে তিনি কেনো বাধা দিবেন?থাকুক না নিজের মতো।
কয়েক দিনে দৃশ্য মাহাদের আচরণে বেশ বিরক্ত।প্রতিদিন তার পেছন পেছন বাসা অবধি যাবে।আসে পাশের মানুষজন দেখলে কি বলবে আল্লাহই জানে।আজ নিউজও শুনলো মাহাদ নাকি দেশের বাইরের কনসার্ট গুলো মানা করে দিচ্ছে।এরকম চললে ক্যারিয়ার যে রসাতলে যাবে।সব ফেলে তার পেছন পেছন ঘুরে কি প্রমাণ করতে চাইছে?
আজও মাহাদ দৃশ্যর পেছন পেছন আসছে।কিছুদূর আসতেই বাড়িওলার ছোট ছেলেকে দেখতে পেলো।পাশের টং দোকানে বসে চা খাচ্ছে।এই ছেলেকে দেখলে দৃশ্যর অস্থির লাগে। পড়ুয়া মানুষ দেখলে সল্প পড়ুয়া মানুষের যেমন অস্থির লাগে ঠিক তেমন।অতিরিক্ত পড়ুয়া মানুষদের আবার জ্ঞান দেওয়ার অভ্যাস থাকে। এই ছেলেটার ঠিক তেমনই অবস্থা। সে মানুষকে জ্ঞান দিতে প্রচন্ড ভালোবাসা।তবে ছেলেটা ভালো।দৃশ্যকে সারাক্ষণ পড়ালেখা নিয়ে জ্ঞান দিতে থাকে।মাঝে মাঝে ভালো লাগলেও অনেক সময় দৃশ্য বিরক্ত হয়।
তবে দৃশ্য কিছুটা ভয় পাচ্ছে।এই ছেলে যদি আজও তাকে জ্ঞান দেওয়ার উদ্দেশ্যে আসে তবে তার খবরই আছে। তার পিছনে যমরাজ মাহাদ দাঁড়িয়ে। তার সাথে কথা বলতে দেখলে নির্ঘাত চারপাচটা থাপ্পর ছেলের গালে পড়বে।ঠিক তখনই নিবিড় তার সামনে এসে দাড়ালো।
-“কি ব্যাপার দৃশ্য আজ এতো দেরি করে ফিরলে?আরো জলদি ফিরে আসবে বুজলে? তুমি তো ঠিক মতো ভার্সিটিতেও যাওনা।তার উপর বাড়িতে ঠিক মতো না পড়লে যা তা রেজাল্ট আসবে।তখন এই চাকরিও থাকবে না।”
দৃশ্য আড়চোখে একবার মাহাদ কে দেখলো।সে কপাল কুচকে দাড়িয়ে আছে।দৃশ্য ভয়ে একটা ঢোক গিললো।আর বললো
-“আসলে ভাইয়া অফিসে একটু চাপ বেশি।আর আমি রাতে ঠিক পরা শেষ করে রাখি।আপনি চিন্তা করবেননা রেজাল্ট খারাপ হবেনা।”
-“হে বুজলাম। তবে সাইন্সে পড়ে কেনো যে ফ্যাশন হাউসে জব করছো বুঝিনা।তোমার উচিৎ ল্যাবে বসে এক্সপেরিমেন্ট করা।তোমরা ইয়াং জেনারেশন যদি নতুন কিছু আবিস্কারে মন না দাও তাহলে যুগ বদলাবে কি করে? আজকালকের ছেলে মেয়েরা শুধু প্রেম করে বেড়ায়। প্রেমের পেছনে ঘুরে সময় নষ্ট করে।আরে যতো সময়,শক্তি প্রেমের পেছনে খরচ করে তাক যদি কিছু আবিস্কার করতে ব্যয় করত তাহলে এতদিনে আমরা দ্বিতীয় আইনস্টাইন পেয়ে যেতাম।”
পেছন থেকে মাহাদ আসে বললো
-“হ্যালো ব্রাদার!আপনার কি রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবলেম আছে? জ্ঞান দিতে ইচ্ছে করলে একটা কোচিং সেন্টার খুলে বসুন। রাস্তাঘাটে মেয়েদের দাঁড় করিয়ে জ্ঞান দেওয়ার কোন মানে হয় না।”
-“আপনি কে ভাই? লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছিলেন? এক মিনিট আপনি ইভটিজার না তো? দৃশ্য কে ইফটিজিং করছিলেন না তো?আল্লাহ আপনিতো বডিবিল্ডার ইভটিজার!”
এতক্ষণ রাগ দমিয়ে রাখলেও এবার মাহাদ রাগে ফেটে পড়লো।সে কষিয়ে দুইটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো নিবিড়ের গালে।দৃশ্য চোখ বন্ধ করে নিলো।ইসস ! যেই ভয় পেয়েছিলো তাই হলো।তাকে কোন ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলেই এই মানুষটার মাথায় রক্ত উঠে যায়।
-“আমাকে দেখে ইভটিজার মনে হয়। শালা গর্ধব একটা।”
নিবিড় ভীত কন্ঠে বললো
-“আপনি আমাকে মারলেন?জানেন এর কারণে আমার গালের পাশের রক্ত কণিকা গুলি জমাট বেধে লাল বর্ণ ধারণ করবে।আর এর করনে আপনার কতো কেলোরি বার্ন হয়েছে জানেন?”
মাহাদের মন চাইলো একে আরো দুইটা চর দিতে।তবে এর ভীত মুখ দেখে থেমে গেলো।দৃশ্যর ভীষণ রাগ হলো।এই বোকা জ্ঞানী মানুষটিকে এই ভাবে মারা একদম ঠিক হয়নি।দৃশ্য কপট রাগ দেখিয়ে বললো
-“কি সমস্যা তোমার?উনাকে মারলে কেনো?যা মন চায় তাই করবে নাকি?”
-” হে করবো।তার তোমার সাথে কিসের কথা?”
-“সে আমার ভাইয়ের মতো।সব জায়গায় বাহাদুরি দেখাও কেনো?”
-“কিসের ভাই? তোমার রক্তের ভাই তোমার জন্য কিছু করতে পারলো না আর এই গর্ধব কি করবে?”
-“একদম ফালতু বকবে না।চরম অসভ্য একটা লোক তুমি।”
-“এই!তোমার এই বলদের জন্য এতো জ্বলে কেনো?আর কখনো ছেলেদের ধরে ধরে ভাই বানালে থাপ্রিয়ে তোমার গাল লাল করে দিবো।”
দৃশ্য রেগে মাহাদের গালে একটা থাপ্পর মেরে বললো
-“আমি যা খুশি তাই করবো তোমার কি?ফালতু বিলাই।”
কথাটা বলে চলে গেলো।বেচারা নিবিড় হা করে দাড়িয়ে আছে।এই মুহূর্তে তার সামনে কি ঝড় বয়ে গেলো বোঝার ট্রাই করছে।তার জন্যই কি এরা ঝগড়া করলো?মাহাদের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে মুচকি হাসছে।নিবিড় প্রথম দেখলো থাপ্পর খেয়ে কেউ হাসে।কই তার তো থাপ্পর খেয়ে কাদতে মন চাইছে।
মাহাদের মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে।আজ বহুদিন পর দৃশ্য তার সাথে ঠিক আগের মতো ঝগড়া করলো।কয়েক মুহূর্তের জন্য তার সামনে সে সেই বাচ্চা জেদী পিচ্চিকে দেখতে পেলো।