তোমার_আমার_প্রণয় #israt_jahan_arina #part_46

0
958

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_46

আজকাল শামসুন্নাহার বেগমের পায়ের ব্যাথা বেড়েছে।কিছুক্ষণ আগেই ডক্টর এসে দেখে গেছে তাকে।আর সাথে দিয়ে গেছে এক গাধা মেডিসিন।কিন্তু তিনি কিছুতেই মেডিসিন নিতে চাইছেন না।আখি রহমান অনেক বুজিয়ে শুনিয়ে ঔষধ খাওয়ালেন।তারপর তেল গরম করে এনে শাশুড়ির পাশে বসলেন।
পরম যত্নে শাশুড়ির পায়ে তেল মালিশ করতে করতে বললেন

-“আম্মা মেডিসিন না নিলে ব্যাথা কমবে কি করে?আমি প্রতিদিন তেল মালিশ করে দিবো।কিন্তু মেডিসিন ও সাথে খেতে হবে।”

-“আর খাইয়া কি হইবো।আল্লাহর ডাক আসলে তো যাইতেই হইবো।ওই ওষুধ খাইয়া কিছু হইবো না।”

-“আম্মা এইসব বইলেন না। আমার শুনতে ভালো লাগে না।আপনার ছেলে থাকলে কি বলতে পারতেন?”

-“যাও কমু না।শুনলাম তুমি রান্না ঘরে গেছো। এতো টেকা পয়সা দিয়া আমার নাতি লোক রাখছে।তাইলে তুমি রানতে গেছো কেন?”

-“আম্মা ছেলে আমার হাতের মাংস রান্না খেতে চেয়েছে তাই।”

-“পোলারে এতো মোহাব্বত করো তাইলে কষ্ট কেন দিতাছো?কথা কও না কে আমার নাতির লগে?”

-“কে বলেছে আমি বলিনা?আমার সাথে তো মাহাদের প্রতিদিন কথা হয়।আম্মা শব্দ করলেই কথা হয় কে বলেছে।আমার মনের সব কথাই সে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে।”

শামসুন্নাহার বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তারপর কঠিন সুরে বলেন
-“ওই মাইয়া তোমার পোলার অফিসে চাকরি করে।এই মাইয়ার ধান্দা আমি বুঝতে পারছি।সে আবার আমার নাতির মাথা খারাপ করার লাইগা আসছে।রূপ দেখাইয়া আমার নাতিরে ভুলাইতে আসছে।ওই আশরাফের রক্ত আর কতো ভালো হইবো?”

আখি রহমান পা মালিশ করতে করতে বললো
-“আম্মা আপনার নাতি মেয়েটাকে ভুলেছে কবে?আর সে কোনো বাচ্চা না,আপনার নাতির মাথা আগে থেকেই নষ্ট।নতুন করে কিছু করার প্রয়োজন নেই।”

শামসুন্নাহার বেগম আখি রহমানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।ছেলের বউকে তিনি ঠিক বুঝতে পারেন না।দৃশ্যকে সে পছন্দ করেনা।আবার তার সম্পর্কে কিছু বললে সহ্যও করতে পারে না।

মাহিমরা সিলেটের জাফলং এ এসেছে। কাল তারা যাবে বিছনাকান্দি।পূজা আর রণিত বিভিন্ন পোজে কাপল পিক তুলছে।আরিফিন তাদের পিক তুলে দিচ্ছে।সিয়াম চারপাশের দৃশ্য গুলি কেমেরা বন্ধী করছে।বর্ষা এক পাথর থেকে অন্য পাথরে লাফিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।তার হাত ধরে রেখেছে মাহিম।মাহিম বিরক্ত হয়ে বললো

-“বর্ষা নাম।নাহলে এক্ষনি পড়ে মাথা ফাটাবি।আমি কিন্তু হসপিটালে দৌড়াতে পারবো না।”

-“আরে পড়বো না।তুই আমাকে ধরে রেখেছিস না।”

-“নাম নাহলে একটা লাথি দিয়ে আমি ফেলে দিবো।”

বর্ষা বিরক্ত হয়ে বললো
-“তুই একটা আনরোমান্টিক ছাগল।তোর জন্য আমার জীবনে রোমেঞ্চ এর ছিটেফোটাও নাই।ওই গর্ধব রণিত কে দেখেও তো কিছু শিখতে পারিস?”

-“সবার সামনে ধরে চুমু খেলে বুঝি রোমান্টিক হওয়া যায়?”

-“তুই খাবি চুমু?আচ্ছা তোর ভাই ও কি এমন আনরোমান্টিক?”

-“ভাইয়া কেমন রোমান্টিক সেটা তো ভাবি বলতে পারবে। আমি শুধু এটা জানি ভাই ভাবিকে প্রচন্ড ভালোবাসে।”

-“আমার না সেই লাকী গার্লকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।সুপার হট রকস্টার মাহাদ এর হার্টবিট যাকে দেখলে থমকে যায় সেই মেয়েটাকে দেখার খুব ইচ্ছা।”

মাহিম কপাল কুঁচকে বললো
-“ভাসুর সম্পর্কে এমন কথা বলতে লজ্জা লাগেনা? আমি কি কম হট নাকি?”

-“তুই আর হট?হা হা হা মজা পেলাম।”

মাহিমের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।এই নির্লজ্জ মেয়ের প্রেমের জালে কেমনে ফেঁসে গেলো সে?শশুর ভাসুর কিছুই মানেনা।আল্লাহ একে দাদীর সামনে নিলে কি যে হবে?
আরিফিন মাহিম কে বললো

-“কীরে তোদের কাপল পিক তুলে দিবো?”

মাহিম রেগে বললো
-“এই কুত্তির সাথে পিক তুই তোল।আমার ইচ্ছে নাই।”

-“একটা কথা বলতো।তোরা কি আসলেই রিলেশনে আছিস?তোদের মধ্যে তো কোনো বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড ফ্লেভার নাই। বছরের ছয় মাস তোকে ঝগড়া করেই কাটে। তোরা সংসার করবি কেমনে?”

বর্ষা রেগে বললো
-“এই কুত্তার সাথে আমি কোনো সংসার করবো না।”

-“আমি মরে যাচ্ছি সংসার করতে?”

-“মরবি কেন? তোর ভাই ও বিয়ে করে সংসার করতে পারে নাই তুই ও করতে পারবি না। আনরোমান্টিক ছাগলের সাথে আর কথা বলার ইচ্ছাই নাই আমার।”

কথাটা বলেই বর্ষা চলে গেলো।আরিফিন হেসে বললো
-“তোদের ভবিষ্যৎ বাচ্চাকাচ্চাদের জন্য আমার ভীষণ মায়া হচ্ছে রে।”

মাহিম ধমক দিয়ে বললো
-“যা তো।মেজাজ খারাপ হচ্ছে।”

বর্ষা আর মাহিম আর কথা বললো না। এদের এমন ঝগড়া সারাদিন লেগে থাকে।তবে সরি সবসময় মাহিম কে বলতে হয়।বর্ষার এক কথা আমি তোর চাইতে বড়ো।সো আমাকে সম্মান দেখবি।তাই ওই সরি টরি আমি বলতে পারবো না।
দৃশ্য একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।সামনের টেবিলে মিস লুবনা আর মডেল ইতির মিটিং চলছে। সিক্রেট মিটিং।আসলে মডেল ইতি তার বিয়ে সম্পর্কে মিডিয়াকে এখন কিছু জানাতে চাচ্ছে না। তাই ড্রেস ডিজাইনের জন্য মিস লুবনার সাথে মিটিং চলছে।দৃশ্যর সেখানে তেমন কোনো কাজ নেই।পাশের টেবিলে বসে আছে।এই গরমে সে হাতের কোলড্রিংস এ চুমুক দিচ্ছে আর আশেপাশের চোখ বুলাচ্ছে।হঠাৎ দেখলো একটা কালো গাড়ি রেস্টুরেন্টের সামনে থামলো।গাড়িটা দৃশ্যর পরিচিত।দৃশ্য ভাবছে মাহাদ এখানে কি করছে?

মাহাদ গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো।হোয়াইট শার্টে মাহাদ কে দেখে দৃশ্য যেনো চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেলো।এই অসভ্য টা দিন দিন এতো হ্যান্ডসাম কেনো হচ্ছে?দৃশ্যর ভাবনায় ছেদ ঘটলো গাড়ি থেকে দ্বিতীয় কাউকে নামতে দেখে।মডেল অরিন।কিন্তু সে মাহাদের গাড়িতে করে কেনো আসলো?অজানা ভয়ে দৃশ্যর বুকটা ধ্বক করে উঠলো।আজকাল প্রায়ই তাদের এক সাথে দেখা যায়।বেশ কয়েকটা নতুন মিউজিক ভিডিওতে তাদের এক সাথে সাইন করা হয়েছে।অনেক গুলো কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তারা।
দৃশ্যর চোখ গেলো অরিনের ড্রেসে দিকে।হাঁটুর উপর অব্দি একটা ছোট ফিটিং টপস পরা।দেখতে খারাপ লাগছে তেমন না? বেশ আকর্ষণীয় লাগছে।ফর্সা পায়ে হাই হিল বেশ মানিয়েছে।তবে মাহাদের সাথে এই ভাবে অরিনকে দেখে দৃশ্যর অস্থির লাগছে।ভীষণ অস্থির।

মাহাদ আর অরিন কথা বলতে বলতে রেস্টুরেন্টের দোতলায় চলে গেলো।দৃশ্যর অস্থিরতা আরো বাড়তে লাগলো।অনেকক্ষণ বসে থেকে হটাৎ উঠে দাড়ালো।একবার লুবনার দিকে তাকালো।তিনি মিটিংয়ে ব্যাস্ত।দৃশ্যর পা ধীরে ধীরে দোতলার দিকে চলতে লাগলো।দৃশ্য কেনো এমন করছে নিজেও জানে না।

দোতলায় উঠেই পুরো ফ্লোরে চোখ বুলালো।পুরো ফ্লোরই ফাঁকা।কর্নারের একটা টেবিলে তারা বসে কথা বলছে।মুখে আছে স্নিগ্ধ হাসি।অরিন হটাৎ টেবিলে রাখা মাহাদের হাতে হাত রাখলো। মাহাদ ও তার অন্য হাত অরিনের হাতের উপর রেখে মুচকি হাসলো। দৃশ্য আর দেখতে পারলনা।চোখ বন্ধ করে নিলো। দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকালো।বুকের বা পাশে কেমন ব্যাথা হচ্ছে।বার কয়েক ঢোক গিললো।গলা কেমন শুকিয়ে আসছে।অথচ মাত্রই সে এক বোতল ঠান্ডা কোলড্রিংস শেষ করলো।দৃশ্য দ্রুত নিচে নেমে গেলো।ততক্ষণে লুবনার মিটিং শেষ।দৃশ্য আর লুবনা গাড়িতে যেয়ে বসলো।

দৃশ্য জানার বাইরে তাকিয়ে আছে।বার বার তার চোখ ভিজে আসছে।সে দ্রুতই সেই জল আড়াল করে ফেলছে।লুবনা বিষয়টা খেয়াল করে বললো

-“এনি প্রবলেম দৃশ্য?তোমাকে কেমন অস্থির দেখাচ্ছে?”

দৃশ্য মুচকি হেসে বললো
-“নো ম্যাম,আই অ্যাম ফাইন।”

দৃশ্য আবার বাইরে তাকালো।তার এতো খারাপ কেনো লাগছে? এর আগেও এদের এক সাথে অনেকবার দেখেছে।মিউজিক ভিডিও তে কতবার এদের আরো ঘনিষ্ট ভাবে দেখেছে।তবে আজ অস্থিরতা এতো বেশি কেনো?তবে মানতে হবে তাদের দুজনকে এক সাথে বেশ মানায়।সুদর্শন যুবকদের পাশে অতি সুন্দরী রমণীদেরই মানায়।

দৃশ্য হন্যে হয়ে আরেকটা চাকরী খুঁজছে।এই অফিসে তার দম বন্ধ হয় আসে। মাহাদকে দেখে মানুষিক অস্থিরতায় ভুগে।এমন টা কিছুতেই চলতে পারে না।

রাতে ডিনারে খেতে বসেছে দৃশ্য।লতা আর চোখে দৃশ্যকে দেখছে।মেয়েটা কেমন মন মরা হয়ে থাকে।অতীত যখন চোখের সামনে ঘোরে তখন আসলেই কি ভালো থাকা যায়?লতা ভয় পাচ্ছে মেয়েটা আবার ডিপ্রেশনের না চলে যায়?অনেক কষ্টে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিলো। এখন আবার মন মরা হয়ে যাচ্ছে।খাওয়া শেষে দৃশ্যর রুমে গেলো লতা।জিনিয়া তখন টেবিলে বসে পড়ছিলো।সে দৃশ্য উদ্দেশ্যে বললো

-“জব টা সত্যিই সত্যি ছেড়ে দিবি?সেলারি কিন্তু ভালোই ছিলো তোর।অন্য কোথাও কিন্তু এতো পাবিনা?”

দৃশ্য লতার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।এই মানুষটার কোলে শুলে মনে হয় মায়ের কোলে শুয়েছে।মন কিছুটা সস্তি পায়।লতা দৃশ্যর লম্বা চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।দৃশ্য চোখ বন্ধ রেখেই বললো

-“সেখানে জব করা আমার পক্ষে সম্ভব না।কারণটা তুমি ভালো করেই জানো।তাছাড়া কম সেলারি হলেও আমি অন্য যেকোনো জব করবো।কিন্তু এখানে সম্ভব না।”

জিনিয়া বললো
-“সে তোর কাছে কি চায় এখন?”

-“জানিনা।”

দৃশ্য আর কথা বললো না।একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলো।দুইটা স্লোপিং পিল খেয়েছে।তাই কেমন ঝিমুনি আসছে।একটু পর সে লতার কোলেই ঘুমিয়ে পড়লো।

সিলেটের একটা রিসোর্টে উঠেছে মাহিম আর ওর বন্ধুরা।তিনটা রুম নিয়েছে তারা।একটায় সিয়াম আর আরিফিন।আরেকটায় বর্ষা আর পূজা।অন্যটায় মাহিম আর রণীত।সারাদিন ঘুরে বর্ষা ভীষণ ক্লান্ত।সে বিছানায় শুয়ে পড়েছে।পূজা গেছে রণীতের সাথে কথা বলতে।একটু পর দরজা খোলার শব্দে বর্ষা সেদিকে তাকায়।মাহিম কে দেখে চমকে যায়।একপ্রকার চিৎকার করে বলে উঠে

-“এই এতো রাতে এই রুমে কি?পূজা কই?”

মাহিম বিছানায় বসে গায়ের টিশার্ট খুলে বলে
-“আমি এই রুমে ঘুমাবো?”

বর্ষা বড়ো বড়ো চোখ করে বললো
-“কি?”

-“হুম।তুই না বললি আমি আনরোমান্টিক।তাই আজ তোকে আমার রোমান্টিক রূপ দেখাবো।আর আমি হট কিনা সেটা ও বুঝে যাবি।”

বর্ষা কয়েক সেকেন্ড মাহিমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো
-“সত্যি?আয় তারাতারিই আয়।আমিও দেখবো তুই কেমন হট?”

মাহিম বেকুব বণে গেলো।সে এসেছে এই মেয়েকে শিক্ষা দিতে।কিন্তু এই মেয়ে উল্টো তাকেই জব্দ করছে।মাহিম দ্রুত টি শার্ট পরে নিলো।ততক্ষণে বর্ষা তার অনেক কাছে চলে এসেছে।মাহিম কিছু বুঝে উঠার আগেই বর্ষা তাকে ধাক্কা মারে বিছানায় ফেলে তার উপর উঠে গেলো।আর মুহূর্তেই মাহিমের ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো।মাহিম প্রথম একটু চমকে গেলেও পরে বর্ষার কোমর দুই হাতে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।কয়েক মিনিট পর দুজন ওষ্ঠ ছেড়ে হাপাতে লাগলো।মাহিম হাপাতে হাপাতে বললো

-“বিয়ে করবি?”

বর্ষা চোখ বড় বড় করে তাকালো।তারপর মাহিমের চুল জোরে টানতে লাগলো।আর বললো
-“ছেচরা বাঁদর।এই ভাবে কেউ বিয়ের প্রপোজ করে?”

-“আমি করি।করবি কিনা বল?”

বর্ষা আরো জোরে তার চুল টেনে ধরলো।মাহিম আহহ! বলে চিৎকার করে বললো
-“চুল ছার বাঁদর।”

-“এই ষ্টাডি শেষ না করে কিসের বিয়ে?আর আমাকে বিয়ে করে খাওয়াবি কি?জানি শশুরের অনেক সম্পদ আছে।কিন্তু তুই নিজে কিছু না করা অব্দি বিয়ে ভুলে যা।বেকার ছেলে বিয়ে করবো না।”

মাহিম ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠলো
-“আই নীড ইউ বর্ষা।তোকে আমার বউ রূপে চাই।”

-“ইসস! ভালোবাস উতলে পড়ছে?আমি যখন প্রপোজ করতাম তখন তো ভাব দেখাতি?”

-“তখনতো বুঝতে পারিনি কতটা ভালোবাসি তোকে?”

-“এই তোর দাদী আবার ঘাপলা করবে নাতো?আমি যে তোর বড়ো এটা জানলে বেকে বসবে নাতো?”

-“আরে না।আমার দাদী কিন্তু ভীষণ মজার মানুষ।তবে ভাবির সাথে দাদী ভীষণ খারাপ আচরণ করেছে। এর জন্য দাদীর প্রতি আমার ক্ষোভ জমা আছে।ওই বাচ্চাটা বিনা দোষে শাস্তি পাচ্ছে।”

-“তোর দাদী আমার সাথে এমন করতে আসলে বুড়িকে আমি ছেড়ে কথা বলবো না।বর্ষা কি জিনিস জানেনা।”

-“আমিতো জানি তুই কি জিনিস।”

তখনই দরজায় কেউ নক করলো।মাহিম বর্ষা কে সরিয়ে উঠে বসলো।তারপর দরজা খুলে দিলো।পূজা মুচকি হেসে বললো

-“রোমাঞ্চ ক্লাস শেষ?”

মাহিম মুখ গোমড়া করে বললো
-“শেষ হলো কই।তুইতো ডিস্টার্ব করলি?”

-“শালা বিয়ে করে যতো খুশি রোমাঞ্চ করিস। এখন যা।ঘুমাবো।”

মাহিম বর্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো।
পূজা বিছানায় শুয়ে বললো
-“এই ছেলে নাকি আনরোমান্টিক?হা হা হা।ভালোই জোকস মারিস?”

বর্ষা বিরক্ত হয়ে বললো
-“আমি টায়ার্ড সো গুড নাইট।”

বর্ষা চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলো।পাপা ঠিক বলে।মাহিম একটা আধা পাগল।আর এই পাগলই আমাকে সবচাইতে বেশি খুশি রাখবে?

মাহিম আর বর্ষার রিলেশন সম্পর্কে বর্ষার বাবা সবই জানে।তার মা নেই।বাবা একজন সিনিয়র জার্নালিস্ট। মাহিমের সাথে তার বাবার বেশ বন্ধুত্ব পূর্ন সম্পর্ক।বাবা মাহিম কে ভীষণ পছন্দ করে।

দৃশ্য কয়দিন যাবত ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।আজ সকালে ব্রেকফাস্ট করার সময় ও পায়নি।তাই এখন লাঞ্চ করতে কেন্টিনে এসেছে।ঈশিতা আর মৃদুল ও আছে।ঈশিতা বললো

-“একটা জিনিষ খেয়াল করেছো তোমরা মাহাদ স্যার আগে দুই তিন দিন অফিসে আসলেও বেশ কয়দিন যাবত প্রায় প্রতিদিনই আসে?”

মৃদুল বললো
-“হুম বিষয়টা আমিও খেয়াল করেছি।”

দৃশ্য কিছুই বললো না।কারণ তার খেয়াল পাশের টেবিলের মেয়েদের দিকে।তারা বলছে

-“এই মাহাদ স্যার আর অরিন এর মধ্যে কি কিছু চলে?তারা এক সাথে অনেক কাজ করছে।প্রায় সময়ই এক সাথে তাদের দেখা যায়।”

-“তাদের একসাথে কিন্তু দেখতে ভালই লাগে।একদম পারফেক্ট।”

-“হুমম।তারা বিয়ে করবে কবে?নাকি লিভ ইন এ থাকছে?”

দৃশ্য আর কিছুই শুনতে চাইলো না।খাবার তার গলা দিয়ে নামছে না।সে উঠে চলে গেলো।ঈশিতা আর মৃদুর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

দৃশ্য দাড়িয়ে আছে মাহাদের কেবিনের সামনে।তার হাতে বেশ কিছু ফাইল।যাতে মাহাদের সাইন লাগবে।তাই মিস লুবনা তাকে পাঠিয়েছে।দৃশ্য এতো চিন্তার মাঝে ডুবে ছিলো যে দরজা নক করতেই ভুলে গেলো।সে দরজা খুলেই থমকে গেলো।দু চোখ বড় হয়ে গেলো।এমন কিছুর জন্য সে হয়তো প্রস্তুত ছিলো না।

অরিন মাহাকে জড়িয়ে ধরে আছে।আর মাহাদের তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।হঠাৎ দরজা খুলে যাওয়ায় তারা ফিরে তাকালো। মাহাদ দৃশ্যকে দেখে অরিন কে ছেড়ে দিলো।সে খেয়াল করলো দৃশ্যর চোখ লাল হয়ে আছে।হটাৎ এমন করায় অরিন বেশ বিরক্ত হলো।কিছুটা রাগ দেখিয়ে বললো

-“এই মেয়ে কে তুমি? তোমার মধ্যে কি কোনো মেনার্স নেই।করো রুমে ঢুকলে নক করে ঢুকতে হয় জানো না?”

দৃশ্য কয়েক সেকেন্ড নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো।তারপর গম্ভীর হয়ে বললো
-“সসরি ম্যাম।আপনাদের প্রাইভেসি নষ্ট করার জন্য।লুবনা ম্যাম এই ফাইল স্যারের সাইন চেয়েছেন।তাই…।

দৃশ্য মাহাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।হাতের ফাইল গুলি পাশের ছোট টেবিলে রেখে দ্রুত বেরিয়ে আসলো।বাইরে আসতেই তার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।তার পুরো শরীর কাপছে। বক্ষস্থল প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে।যেই বুকে একটা সময় সে মাথা রাখতো আজ সেখানে অন্য কেউ আছে।এটা হজম করা তার জন্য কি সহজ হবে?

হটাৎ পেছন থেকে মাহাদ ডেকে উঠলো।দৃশ্য দ্রুত হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে নিলো।কিন্তু হাটা থামলো না। মাহাদ প্রায় দৌড়ে এসে দৃশ্যর হাত ধরে থামালো।দৃশ্য তাকাতেই মাহাদ দেখলো তার চোখ ভেজা এর লাল।দৃশ্যর দৃষ্টিতে আছে অবিশ্বাস। মাহাদ বললো

-“তুমি আমাকে ভুল বুঝছো পিচ্ছি।অরিনের সাথে আমার তেমন কিছুই নেই যা তুমি ভাবছো।আসলে ও….”

মাহাদ আর বলতে পারলো না।দৃশ্য তাকে থামিয়ে হাত ছাড়িয়ে শক্ত হয়ে বললো

-“আমি কিছুই ভাবছিনা।এটা আপনাদের পার্সোনাল মেটার।আমার কাছে এক্সপ্লেইন করার কিছু নেই।আসি।”

কথাটা বলেই দৃশ্য চলে আসলো।তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে।চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে

-“ওই বুকটা শুধু মাত্র আমার।অন্য কেউ কেনো সেখানে থাকবে?তুমি কেনো অন্য কাউকে বুকে রাখবে?তোমার ওই বুক আমি ছুরি দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে দিবো।”

কিন্তু দৃশ্য কিছুই বলতে পারলো না। একটু পর অফিস থেকে বেরিয়ে আসলো।মাহাদ অফিসে খুঁজেও দৃশ্যকে পেলো না।হয়তো বাসায় চলে গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here