তোমার_আমার_প্রণয় #israt_jahan_arina #part_48

0
949

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_48

আখি রহমান গভীর চিন্তায় মগ্ন।সেদিন ছেলের জন্য তার প্রিয় মাংস আর ভুনা খিচুড়ি রান্না করে বসে ছিলেন।কিন্তু ছেলে আর বাসায় ফেরেনি।মনে মনে কষ্ট পেলেও পরে নিজেকে সামলে নিলেন।ছেলে তার কোনো সাধারণ মানুষ না। বিখ্যাত গায়ক সে। ব্যাস্ত থাকাটাই স্বাভাবিক।তিনি রবিনকে কল করে জেনে নিলেন মাহাদ কোথায়।

শামসুন্নাহার বেগম লিভিং রুমে আসতেই রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়লো।আখি রহমান কোমরে কাপড় গুজে মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে।আজ হঠাৎ ছেলের কথা ভীষণ মনে পড়ে গেলো।ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার পর তিনি ছেলে আর ছেলের বউকে দেখে ভীষণ শান্তি পেতেন।আখি যখন রান্না করতো তখন তার ছেলেও চুপি চুপি এসে কতো খুনসুটিতে লিপ্ত হতো।মাঝে মাঝে তার সামনে ধরা পড়লে দুইজনই বেশ লজ্জা পেতো।আখিকে সবসময়ই চোখে হারাতো ছেলেটা।এতো অল্প বয়সেই মেয়েটা স্বামী হারা হয়ে গেলো।কতই বা বয়স হয়েছিলো?শামসুন্নাহার বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে আখি রহমানের দিকে এগিয়ে গেলেন।আর বললেন

-“কি করো বউ?”

আখি রহমান মুচকি হেসে বললেন
-“আম্মা মাহাদের জন্য মাংস আর ভুনা খিচুড়ি রান্না করছি।”

-“ঐদিন ও না রানলা।তোমার পোলায় তো বাইত আইলো না।আইজ আবার কষ্ট করতাছো কেন?”

-“আম্মা ছেলে ব্যাস্ততার জন্য না আসতে পারলে কি হয়েছে? আমি যাবো ছেলের কাছে।”

শামসুন্নাহার বেগম বেশ অবাক হলেন।পরমুহুর্তেই তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।আখির ছেলের প্রতি জমা অভিমান ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করেছে।বুকটা তার প্রশান্তিতে ভরে গেলো।তার পরিবারটা আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।আবার যেনো করো নজর না পড়ে এই পরিবারে। ওই মেয়েকে তো তিনি আর কিছুতেই তার পরিবারের সুখ নষ্ট করতে দিবে না।কিছুতেই না।

চা বাগানের পাশেই অবস্থিত রিসোর্টে করিডোরের টেবিলে বসে কফি খাচ্ছে মাহিম, রণিত,সিয়াম আর আরিফিন।আজ তারা আশেপাশের চা বাগান গুলি ঘুরে দেখবে। মনোমুগ্ধ পরিবেশে বসে কফিতে চুমুক দেওয়ার মজাই আলাদা।বর্ষা আর পূজা বিগত দুই ঘন্টা ধরে রেডি হচ্ছে।অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে তারা কফি অর্ডার করেছে।আরিফিন বিরক্ত হয়ে বললো

-“ঠিক এই কারণেই আমি বিয়ে করবো না।মেয়ে মানুষদের কমনসেন্স অনেক কম।ঘুরতে এসে এরা যদি রেডি হতেই সময় শেষ করে দেয় তাইলে ঘুরতে যাবে কখন?”

রণিত বললো
-“আরে শালা মেয়ের পাল্লায় পড়লে সব সয়ে যাবে।কোথাও বের হলে পূজা ম্যাডাম আমাকে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা রাস্তায় অপেক্ষা করাবে।”

সিয়াম হেসে বললো
-“বর্ষা তো এতো সময় নেয় না।ওই বান্দর তো তেমন সাজেও না।একটা প্যান্ট আর টপস পরেই বেরিয়ে যায়।এই পূজার পাল্লায় পড়ে বর্সাও শেষ।”

মাহিম গম্ভীর সুরে বলে
-“আরে বর্ষার মধ্যে তো মেয়েদের মতো কোনো আচরণই আমি দেখি না।দাদী ওকে দেখলে বলবে
-“কীরে এই বেডা মাইয়া কৈ থেকে ধইরা আনসোস?দুনিয়াতে আর মাইয়া ছিলো না?”

সিয়াম হো হো করে হেসে বললো
-“তোর দাদীকে আমার সেই পছন্দ।তার বয়সটা একটু কম হলে বিয়ে করে নিতাম।”

-“আমার দাদী তোর জীবন তেজপাতা করে দিতো।”

তাদের কথার মাঝেই বর্ষা আর পূজা সেখানে উপস্থিত হলো। রনিত হা করে দুইজনকে দেখছে।মাহিম মাত্রই কফিতে চুমুক দিয়েছিলো।বর্ষার দিকে চোখ পড়তেই গরম কফিতে তার ঠোঁট পুড়ে গেলো।সে দ্রুত কফি মগ টেবিলে রেখে আবার বর্ষার দিকে চেয়ে রইলো।সে যেনো চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে।তার সামনে একটা হুর পরই দাড়িয়ে।কালো জর্জেট শাড়ীটা বর্ষার উজ্জ্বল আর মেদহীন শরীরের সৌন্দর্য যেনো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। চোখের মোটা কাজল যেনো মাহিমের ছোট হৃদয়কে বার বার কাপিয়ে তুলছে।
এতো বছরে আজ প্রথম সে বর্ষাকে শাড়িতে দেখলো।এই মেয়েটা শাড়ি পরলে কেমন লাগতে পারে সেটা মাহিম ভাবতেও পারতো না।শাড়িতে এতো সুন্দর লাগবে জানলে প্রতিদিন শাড়ি পরিয়ে বসিয়ে রাখতো।সবসময় ছেলেদের বেশে ঘুরে বেড়ায় মেয়েটা।আসলে মায়ের ছায়া ছাড়া বাবার অতি আদরে বড়ো হওয়া বর্ষাকে মেয়েলি ভাবে চলা কেউ শেখায়নি।আজ পূজার জোরাজুরিতে শাড়ি পরে সেজেছে।মাহিম নেশা ভরা দৃষ্টিতে বর্ষাকে দেখে যাচ্ছে।

আরিফিন একবার বর্ষার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।নিষিদ্ধ জিনিসে বেশি তাকানো ঠিক না।মনের ক্ষতটা আর বাড়িয়ে লাভ নেই।বর্ষা একান্ত মাহিমের।নিজেকে শক্ত করে আরিফিন ফোনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু বেহায়া মন বার বার বর্ষার দিকে তাকাতে চাইছে।সে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো।
সিয়াম হা করে তাকিয়ে বললো

-“ওই পূজা আমিকি সত্যি দেখতেসি?এটা আমাদের বর্ষা?ওই বর্ষা তোরে এমন সন্দুরী মাইয়া কে বানাইলো?”

বর্ষা লাজুক হেসে বললো
-“আমি জন্মগত ভাবেই সুন্দরী।তোদেরই চোখে পড়েনি।”

-“ওই পূজা এইটা তোর কাজ তাইনা?এক কাজ করবি?আমাদের ক্লাসের চশমিশ তানি মেয়েটাকে এমন আইটেম বানায় দিতে পারবি?তাইলে ঐ বলদির লগে রিলেশনে চলে যেতাম। গফ যতো বোকা হবে ততই ভালো।”

পূজা বললো
-“ধুর!সবাই কি আমাদের বর্ষার মতো সুন্দরী নাকি?”

বর্ষার আড়চোখে তাকায় মাহিমের দিকে।মাহিম হেবলার মতো তাকে দেখে যাচ্ছে।বর্ষা মুচকি হাসলো। যাক মাহিমকে বেশ চমকে দিতে পেরেছে।এই ছেলে এবার যদি একটু রোমান্টিক হয়?

আখি রহমান ধানমন্ডির ফ্ল্যাটের লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেন। মাহাদের রুমে ঢুকে দেখলেন ছেলে উপুর হয়ে শুয়ে আছে।পাশের ছোট টেবিলের এস্ট্রে ভর্তি সিগারেটের ছোট অংশ পড়ে আছে।রুমে এখনো সিগারেটের ভেপসা গন্ধ।আখি রহমান পাশের জানালা খুলে দিলেন। ছেলের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে রবিনকে বললেন

-“তোমার স্যারকে এখনই ডেকে তোলো।”

রবিন দ্রুত মাহাদকে ডেকে দিলো। মাহাদ মায়ের কথা শুনে দ্রুত সোফার রুমে দৌড়ে আসলো।দেখলো তার মা ডাইনিং টেবিলে প্লেটে খাবার বাড়ছে। মাহাদ মায়ের পাশে এসে বললো

-“মা তুমি হটাৎ এখানে?তোমার শরীর ঠিক আছে তো?”

কথাটা বলেই মায়ের কপালে হাত রাখলো।আখি রহমান রবিনকে উদ্দেশ্য করে বললো

-“রবিন আমি ঠিক আছি।কেউ আমার হাতের রান্না মাংস খেতে চেয়েছিলো।সেদিন রান্না করে ফেলে দিতে হয়েছে।আজ ও যেনো এইগুলা নষ্ট না হয়।”

বলেই তিনি সোফায় বসে টিভি ছেড়ে দিলেন। মাহাদ বোকার মতো কয়েক সেকেড তাকিয়ে রইলো।পড়ে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ঠোঁটের কোণে হাসি এনে জলদি খেতে বসে গেলো।কতো দিন পর পছন্দের খাবার খাবে।ডায়েট এর জন্য কিছুই খেতে পারেনা।

রবিন একবার খেতে মানা করতে চাইলো।কিন্তু পরে মাহাদের তৃপ্তি ভরে খাওয়া দেখে মানা করলো না।আখি রহমান আড়চোখে দেখলো ছেলে তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে।তার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো।খাওয়া শেষ হলে মাহাদ মায়ের পাশে বসে মায়ের কাধে মাথা রাখলো।মায়ের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো

-“রান্নাটা দারুন হয়েছে মা।আমার তো তোমার আঙুল চেটে খেতে মন চাইছে।”

বলেই মায়ের হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেলো।আখি রহমান কিছুই বললেন না।কয়েকমিনিট সে ভাবেই বসে থেকে উঠে দাড়িয়ে রবিনকে গাড়ি বের করতে বললেন। মাহাদ নরম সুরে বললো

-“বাসায় আসিনি বলে রাগ করেছো মা?আসলে ব্যাস্ত ছিলাম।আর একা কিছুদিন থাকতে চেয়েছি তাই।নিজেকে ভীষণ এলোমেলো লাগছে।একটু সামলে নেই তার পর আসবো?আর মাহিম আজই চলে আসবে।তুমি চিন্তা করো না।”

আখি রহমান কিছুই বললেন না। মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“তোমার ছোট ছেলে কি করেছে জানো?”

আখি রহমান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালেন।
-“একটা মিষ্টি মেয়ে পটিয়ে ফেলেছে।অথচ আমাদের কাউকে জানায়নি পর্যন্ত।ভেবেছে আমি জানবো না। এবার আসলে ওর খবর আছে। দাড়াও মেয়েটার পিক দেখাই।”

মাহাদ তার ফোনটা মায়ের সামনে ধরলো।আখি রহমান দেখলেন ব্ল্যাক জিন্স আর টপস পরা হাস্য উজ্জ্বল একটা মিষ্টি মেয়ে মাহিমের কাঁধে মাথা রেখে হাসছে। মাহিমের চেহারায় তৃপ্তির হাসি। আখি রহমান মুচকি হাসলেন। এই মেয়েটাকে তিনি আগেও দেখেছেন। মাহিম তখন তাকে ফ্রেন্ড বলে পরিচয় দিয়েছিল। আখি রহমানের কেন যেন একটু সন্দেহ হয়েছিল। প্রায় সময়ই মাহিমের ছেলে ফ্রেন্ড বাসায় এসে হাজির হয়। একদিন এই মেয়েটাও বাসায় এসেছিল। ভারী মিষ্টি আর মিশুক মেয়েটা। মনে মনে বেশ স্বস্তি পেলেন আখি রহমান। মেয়েটাকে তার আগে থেকেই মাহিমের জন্য বেশ পছন্দ হয়েছিল। আর ছেলের চোখে ও মেয়েটার জন্য কিছু একটা তিনি দেখেছিলেন। যাই হোক মায়ের চোখে ছেলে কিছুতেই ফাঁকি দিতে পারেনি তার সন্দেহ টাই সঠিক।
মাহাদ হেসে বললো

-“মাস্টার্স শেষ করুক তোমার ছেলেকে ধরে বিয়ে দিয়ে দিব। তখন দেখবে নিজ তাগিদেই ব্যবসার হাল ধরেছে।এখনতো হাজার বললেও একটা দিন যায় না ফ্যাশন হাউসে।”

আখি রহমান মুচকি হাসলেন।তারপর বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলেন। গাড়িতে উঠতেই রবিনকে বললেন

-“দৃশ্য কোথায় জব করে জানো?”

রবিন বেশ চমকে গেলো।সে তো ভেবেছিলো দৃশ্য আর স্যার হয়তো কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে।তাই আলাদা থাকছেন।কিন্তু এখন তো দেখা যায় পরিবারের সবাই জানে।

-“জি ম্যাম।”

আজ শপে বেশ ভিড়।দৃশ্য কাস্টমারদের অ্যাটেন্ড করতে বেশ ব্যাস্ত। ভিড় কিছুটা কমলে দৃশ্য আবার স্টোরে চলে গেলো। ফ্রুটস সেকশন অনেকটাই ফাঁকা হয়ে আছে। স্টোর থেকে এনে তা আবার ফিলাপ করতে হবে। দৃশ্য একে একে ফ্রুটস কার্টুন আনতে লাগলো। ভুলবশত হঠাৎ একটা কার্টুন তার হাত থেকে পড়ে গেল। কার্টুনে থাকা আপেল গুলো চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো।দৃশ্য ভয়ে একটা ঢোক গিললো।আজ বকা সেই লেভেলের খাবে।ঠিক তখনই তার সুপারভাইজার হামিদ সেখানে উপস্থিত হলেন। দৃশ্য ভয়ে ভয়ে তার দিকে তাকালো।হামিদ ভীষণ রেগে বললো

-“এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি?কাজ জানোনা তাহলে কাজ করতে আসো কেনো?রাস্তা ঘাট থেকে উঠে চলে এসেছে কাজ করতে। এদের বাপ মাই বা কেমন?মেয়ে কাজ জানেনা।কিন্তু ঢাকা শহরে পাঠিয়ে দিয়েছে কাজ করতে।এদের দিয়ে কোন কাজ হয় নাকি?ফালতু যতসব।”

দৃশ্যর চোখ ভিজে উঠলো।মানুষের ব্যাবহার এতো খারাপ কি করে হতে পারে?হামিদ আবার বলে উঠলো

-“এই ফ্যাসফ্যাস বন্ধ করে সব আপেল তুলো।এটা বাপের হোটেল না।কাজ ঠিক মতো না করলে বেতন কেটে রাখবো।এতো ননীর পুতুল হলে কাল থেকে আর কাজ করতে আসার দরকার নেই।”

দৃশ্য হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে আপেল গুলি তুলতে লাগলো।তার বুক ফেটে কান্না আসছে।মায়ের বুকে ঝাপটে পড়ে কাদতে ইচ্ছে করছে।লাস্ট মায়ের সাথে কথা হয়েছিলো অনেক আগে।দৃশ্য ঢাকায় পৌঁছে জিনিয়া আর লতার সাথে বাসায় উঠার পর দিন মাকে একটা ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে কল করেছিলো।সে নিরাপদে আছে এটাই জানিয়েছিলো।মা অনেক কান্না করছিলো সেদিন।তবে বেশি কথা বলতে পারেনি।তার বাবা চলে আসায় কল কেটে দিয়েছিলো।তার পর দৃশ্য ইচ্ছে করে কল করতো না।সেই সময় সে ছিলো ডিপ্রেশনে।মায়ের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলা সম্ভব ছিলো না।নিজেকে ইচ্ছে করে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে।

দৃশ্য আপেল তুলতে তুলতে একজনের পায়ের সামনে এসে পড়লো।দৃশ্য লাস্ট আপেলটি তুলে সামনের মানুষটিকে মাথা তুলে দেখলো।শাড়ি পরা একজন নারী দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।মুখে তার মাস্ক।দৃশ্য মুচকি হেসে বললো

-“হাউ কেন আই হেল্প ইউ ম্যাম?”

আখি রহমান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দৃশ্যর দিকে।রবিন তাকে এখানে নামালে সে কিছুটা অবাক হয়।দৃশ্য কি এই জায়গায় কাজ করে?তিনি ভেতরে আসতেই দেখতে পেলো দৃশ্যকে।এতখন দাড়িয়ে তিনি সবটাই দেখলেন।বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমজাদ রহমানের রকস্টার ছেলের বউয়ের এই অবস্থান দেখে তার ভীষণ কষ্ট হলো।জয়ের কাছে দৃশ্যের ঢাকা আসার কারণ সবটাই তিনি শুনেছেন।মেয়েটা যে তার ছেলের জায়গাটা কাউকে দিতে পারেনি।তাইতো এতো বিলাসিতার জীবন ছেড়ে এই কষ্টের জীবন বেছে নিয়েছে।আদো মেয়েটা এই জীবন ডিজার্ভ করে?

এই বাচ্চা মেয়েটার এখন সেজে গুঁজে তার পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখার কথা ছিলো। অথচ আজ এই বাচ্চা মেয়েটা স্বামীর কোটি কোটি থাকার পরও জীবিকার জন্য এতটা হার্ড ওয়ার্ক করতে হচ্ছে। এই বাচ্চা মেয়েটার কি আদো কোনো দোষ ছিলো?নিজের উপর আজ ভীষণ রাগ হচ্ছে।স্বামীকে হারিয়ে তিনি নিজের কষ্টে এতটাই বিভোর ছিলো যে তার ছেলেটার যন্ত্রণা ক্ষীণ মনে হয়েছে।আর এই বাচ্চা মেয়েটা তার ছেলেকে আজও পাগলের মতো ভালোবেসে যাচ্ছে।এই মেয়েটার মাঝে যে তার ছেলের প্রাণ লুকিয়ে আছে সেটা কি করে ভুলে গেছিলো তিনি?তাদের এই দূরত্বের এক মাত্র কারণ তিনি নিজে।
দৃশ্য আবার বললো

-“ম্যাম কি লাগবে আপনার?”

আখি রহমানের চোখ ভিজে উঠলো।বাচ্চা মেয়েটাকে এখন বেশ বড়ো মনে হচ্ছে।যে এই যান্ত্রিক শহরে নিজেকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।তিনি পরম যত্নে দৃশ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন

-“কিছু লাগবে না মা।”

দৃশ্যর বুকটা কেপে উঠলো।আজ কতদিন পর করো মুখে এতো আদরের ডাক শুনলো।মনে কেমন প্রশান্তি বয়ে গেলো।যেনো তার মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।কে উনি?চোখ জোড়া কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে।আখি রহমান আর কিছু না বলে শপ থেকে বেরিয়ে আসলেন।আসার আগে হামিদ কে বলে আসলেন

-“নিজের ব্যাবহার ঠিক করুন।নাহলে কোথাও সম্মান পাবেননা।নেক্সট টাইম এমন ব্যাবহার করতে দেখলে আপনার খবর করে ছাড়বো।আপনার ভাগ্য ভালো আজ আমার ছেলে ছিলো না।নাহলে ওই মেয়েটার সাথে এমন ব্যাবহারের জন্য আপনার সাথে ঠিক কি হতো আমি জিনেও জানিনা।”

হামিদ বিস্ময় নিয়ে আখি রহমানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।সে দেখলো মহিলাটি বেশ দামী গাড়িতে চড়ে চলে গেলো।সে কিছুটা ভয় পেলো।এতো বিত্তশালী মহিলার এই মেয়ের সাথে কি সম্পর্ক?

(সকলের রিকোয়েস্ট রাখার জন্য আজ কষ্ট হলেও গল্প দিয়েছি।তাই সকলের গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি।আমাকে সাপোর্ট করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here