তোমার_আমার_প্রণয় #israt_jahan_arina #part_49

0
958

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_49

পরদিন সন্ধ্যার দিকে মাহিমরা ঢাকায় ফিরলো।বাকি বন্ধুদের কাছথেকে বিদায় নিয়ে মাহিম বর্ষাকে নিয়ে বর্ষার বাড়ির দিকে রওনা দিলো।গাড়িতে বর্ষা মাহিমের কাধে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।মাহিম মুচকি হেসে বর্ষার কপালে আসা অবাধ্য চুল গুলো কানে গুজে দিলো।

বর্ষাকে কখনো ঘটা করে ভালোবাসি বলা হয়নি।সময়ের সাথে সাথে দুজনই নিজেদের অনুভূতির গভীরতাকে মেপে নিয়েছে।বর্ষা তাকে বহুবার নাটকীয় ভাবে প্রপোজ করেছে।কিন্তু সে তেমন পাত্তা দেয়নি।অথচ এখন বর্ষার মুখে কিছু বলার প্রয়োজন হয় না।মাহিম এমনি তার মনের কথা বুঝতে পারে।কাউকে ভালবাসার মত সুন্দর অনুভূতি আর কিছুতেই হয় না।

বর্ষা ফ্রেশ হয়ে লিভিং রুমে আসতেই দেখলো তার বাবা আর মাহিম দাবা খেলায় ব্যস্ত।বাবার এই এক সভাব।বাসায় যেই আসুক দাবা নিয়ে বসবে।তবে তার বাবা মাহিমের সাথে খেলতে বেশি পছন্দ করে। এর একটা অন্যতম কারণ হলো মাহিম দাবা খেলা পারে না।সামনের প্রতিদ্বন্দ্বী দুর্বল থাকলে জিত নিশ্চিত থাকে।যার ফলে বাবা বুদ্ধি খরচ না করেও জিতে যায়।

মাহিম বর্ষাকে দেখে ইশারা করলো তাকে এই টর্চার থেকে বাঁচাতে।যে খেলা সে পারেনা সেই খেলা খেলে কি আদো কোনো আনন্দ পাওয়া যায়?বর্ষা ফিক করে হেসে দিলো।এই রাম ছাগলকে একমাত্র তার বাবাই পারবে শিক্ষা দিতে।

দৃশ্য আজ ভার্সিটিতে এসেছে।সব গুলি ক্লাস কমপ্লিট করে দৃশ্য আর সোমা মাঠের এক সাইডে বসে পড়লো।ভার্সিটিতে বেশি একটা সময় কাটানোর সুযোগ পায়না দৃশ্য।আজ জিনিয়া আসেনি।তার অফিসের পিকনিকে গেছে। সোমা দৃশ্যকে উদ্দেশ্য করে বললো

-“দৃশ্য আমি তোমার সব গুলি নোটস রেডি করে দিয়েছি।এক্সামের আগে আরো কিছু নোটস দিতে পারে।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে। থ্যাংক ইউ সো মাচ আমাকে হেল্প করার জন্য। তুমি না থাকলে তো আমি পরীক্ষাগুলোতে নিশ্চয়ই ডাব্বা মারতাম।”

সোমা মুচকি হেসে বললো
-“তুমি নাকি আগের জব ছেড়ে দিয়েছো?এতো ভালো জব কেনো ছাড়লে?”

দৃশ্য জোরপূর্বক হেসে বললো
-“এমনি সেখানে কাজ করতে ভালো লাগছিলো না তাই।আচ্ছা সোমা আমাকে দু একটা টিউশনি জোগাড় করে দিতে পারবে?”

সোমা কিছুক্ষণ দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে বললো
-“দৃশ্য তুমি ঠিক আছো?না মানে এতো ভালো জব ছেড়ে এখন টিউশনি করাবে?”

দৃশ্য আর কিছুই বললো না।এই বিষয়ে কথা বলতে তার একদম ভালো লাগছে না।
____________
মাহাদ এসেছে আজ একটা রেকর্ডিংয়ে।কয়েক ঘন্টা যাবত বার বার কয়েকটা লাইনে সুর ভুল করছে। মাহাদ নিজের উপরই বেশ বিরক্ত হচ্ছে।জহির বললো

-“মাহাদ একটা ব্রেক নাও।ঘন্টা খানি পর আবার ট্রাই করি।”

মাহাদ সম্মতি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।জহির বললো
-“চলো করিডোরে বসি।এক কাপ কফি খাও ফ্রেশ লাগবে।”

-“জি ভাইয়া।”

তারা দুইজনই করিডোরে রাখা চেয়ারে বসে পড়লো।জহির মাহাদকে বেশ কয়দিন যাবত খেয়াল করছে।লাস্ট কয়েক দিনে মাহাদ গান রেকর্ডিংয়ে বেশ সময় নিয়েছে।যেটা আগে হতো না। মাহাদ বেশিরভাগ ওয়ান টেকে গান রেকর্ড করে ফেলে।জহির কফিতে চুমুক দিয়ে বললো

-“মাহাদ তুমি এই কয়েক বছর ধরে কাজের মধ্যে অনেক বেশি ডুবে আছো। আই থিঙ্ক ইউ নিড এ ব্রেক।কাজ একটু কমিয়ে নিজেকে একটু সময় দাও।বেশ কিছুদিন যাবত দেখছি বেশ ডিস্টার্ব হয়ে আছো।ঠিক মতো কাজে মনোযোগ দিতে পারছো না।একটা ব্রেক নাও।দেখবে কাজের মধ্যে উৎসাহ ফিরে পাবে।আমার মনে হয় তুমি পার্সোনাল লাইফ নিয়ে ডিস্টার্ব।তাই একটু ব্রেক নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করো।”

মাহাদ মনোযোগ দিয়ে এতক্ষণ সবটাই শুনলো।জহির ভাই একদম ঠিক বলেছে।কিন্তু তার সমস্যার আদো কোনো সমাধান আছে কিনা সেটা জানা নেই।

দৃশ্য শপ থেকে বেরিয়ে বাসের উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলো।বাস স্টপে এসে পাঁচ মিনিট দাড়াতেই বাস চলে আসলো। আজ সিটে বসতে পেরে দৃশ্য শান্তি পেলো।সারাদিন শপে দাড়িয়ে থেকে আর এনার্জি নেই দাড়িয়ে থাকার।প্রায় প্রতিদিনই পা ব্যাথায় ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনা।জানালার পাশে সাইডে আরাম করে বসলো দৃশ্য।বাইরের কিছু একটা মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো।আজ বাস কিছুটা ফাঁকা।তার পাশের সিটে হটাৎ কেউ বসায় দৃশ্য ফিরে তাকালো।সাথে সাথে বেশ চমকে গেলো।মুখে মাস্ক আর মাথায় ক্যাপ পড়ে একজন বসে আছে।মানুষটার শরীরের কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ দৃশ্যর নাকে আসছে।দৃশ্য অবাক হলো।কারণ এতক্ষণ জানালার বাইরে রাস্তার ওপারে মাহাদের গাড়িটাকে আড়চোখে দেখছিলো সে। সে ভেবেছে আজ মাহাদকে ফাঁকি দিয়ে আসতে পেরেছে।কিন্তু মানুষটা গাড়িতে নেই।বরং তার পাশে বসে আছে।দৃশ্য চোখ ফিরিয়ে নিলো।এই পাগল তার পিছু সহজে ছাড়বে না। দৃশ্যর ভীষণ রাগ হলো।বাসে না থাকলে কিছু কথা শুনিয়ে দিতো।

বাস চলছে আপন গতিতে।দৃশ্য বাইরে তাকিয়ে শহর দেখছে।আর মাহাদ দেখছে তার জেদী বউকে।এতো বলার পরও দৃশ্য জবটা ছাড়েনি।একটা গাড়ি সামনে চলে আসায় হঠাৎ বাসটা ব্রেক কসলো।দৃশ্য ভাবনার মাঝে ডুবে থাকায় তাল সামলাতে না পেরে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তে নিলেই মাহাদ দৃশ্যকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো।দৃশ্যর ভয়ে শরীর কাপছে।আজ একটুর জন্য তার মাথা ফাটলো না। মাহাদ নিজেও ভয় পেয়েছে।দৃশ্যকে বুক থেকে তুলে অস্থির হয়ে বললো

-“তুমি ঠিক আছো?কোথাও ব্যাথা পায়নি তো?”

দৃশ্য মাথা নেড়ে না জানায়। মাহাদ এবার সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।দৃশ্য দ্রুত মাহাদের কাছথেকে নিজেকে সরিয়ে নিলো।
দৃশ্য বাস থেকে নেমে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটছে। মাহাদ ও তার পেছনে দ্রুত এসে দৃশ্যর সামনে এসে বললো

-“তোমাকে জবটা ছাড়তে বলেছিলাম।দরকার পড়লে অফিসে আবার ব্যাক করো।”

দৃশ্য কিছুই বললো না। মাহাদ কে পাস কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে মাহাদ দৃশ্যর হাত ধরে বললো
-“আমি কিছু বলছি দৃশ্য?আমাকে ইগনোর করছো কেনো?”

দৃশ্যর ভীষণ রাগ হলো।রাগটা আজ না কাল থেকে। কাল যখন ভার্সিটিতে মাঠে বসে ছিলো দৃশ্য আর সোমা।সেখানে উপস্থিত হয় অদ্রি।কেনো যেনো দৃশ্য মেয়েটাকে পছন্দ করে না।মেয়েটা সব সময় বাবার টাকার গরম দেখায়।অহংকারী মেয়েদের দৃশ্যর একদম সহ্য হয়না।তাছাড়া এই মেয়ে এক সাথে কতগুলি bf মেনটেন করে তা হয়তো এই মেয়ে নিজেও জানেনা। সোমার সাথে তার বেশ ভালো সম্পর্ক।অদ্রি এসেই তার আলাপ শুরু করে দেয়।একসময় বলে উঠে

-“জানো মাহাদের নতুন মিউজিক ভিডিও বের হয়েছে।আমার কাজিন অরিন আপু এই ভিডিওতে কাজ করেছে।তাদের দুজনকে এক সাথে কিযে দারুন লাগে।আমার মনে হয় এরা রিলেশনে আছে।তার মানে খুব জলদি রকস্টার মাহাদ আমার জিজু হতে চলেছে।ইসস !ভাবতেই ভালো লাগছে আমার।”

সোমা অবাক হয়ে বললো
-“তারা কি আসলেই রিলেশনে আসছে?মিডিয়াতে তো তেমন কোনো নিউজ শুনলাম না।”

অদ্রি মুচকি হেসে বললো
-“আরে সেলিব্রেটিরা কি তাদের পার্সোনাল লাইফ মিডিয়ার সাথে শেয়ার করে নাকি?তোমাকে একটা সিক্রেট বলি।অরিন আপু মনে হয় প্রেগনেন্ট।আর ওই বাচ্চার বাবা মাহাদ।”

দৃশ্য খাতায় তখন কিছু লিখছিলো।কথাটা শুনেই দৃশ্যর হাত থেমে গেলো।সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না।তার হাতের কলমটা অসম্ভব কাপছে।মুহূর্তেই তার চোখ ভিজে উঠলো।
সোমা বিস্ময় নিয়ে বললো

-“আল্লাহ কি বলো?সত্যি?”

-“আরে আমি সিউর না।তবে ধারণা করছি।খালা মনিকে বলতে শুনেছি এবরশন করার কথা কিছু বলছিল।হয়তো বিয়ের আগে বেবি আসছে বলে খালা মনি বেবিটা চাইছে না।”

দৃশ্য সেখানে আর এক মিনিটও দাড়ায় নি।তার মাথা কেমন ঘুরছিলো।সে কোনো মতে বাসায় ফিরে আসে।রুমে ফিরে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়ে।কয়েক মিনিট পর তার চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরতে শুরু করে।দৃশ্যর মনে হচ্ছিলো কেউ তার বুকটা ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে।দম আটকে আসছে।সে দ্রুত পাঁচটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে নিলো। এখন না ঘুমালে বুকের এই যন্ত্রণা আরো বাড়তে থাকবে।সারা বিকেল দৃশ্য মরার মতো ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলো।কিন্তু আশ্চর্য বিষয় ঘুম থেকে উঠার পর সে ব্যাথা আরো বেড়ে গেলো।দৃশ্য এক গাদা বই নিয়ে বসে পড়লো। মনটাকে ডাইভার্ট করতে হবে।কিন্তু দৃশ্যর বিক্ষিপ্ত মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।
দৃশ্য মাহাদের হাত টা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে রক্তিম চোখে বললো

-“এই ভাবে আমার পিছু নিয়ে কি প্রমাণ করতে চাও?মস্ত বড়ো আশিক তুমি?”

মাহাদ কিছুটা অবাক হলো।এতো রেগে আছে কেনো দৃশ্য?সে শান্ত সরে বললো
-“দৃশ্য একটু শান্ত হও।”

-“শান্ত হবো কেনো?তুমি যা খুশি করে বেড়াবে আর আমি শান্ত থাকবো?কি চাও তুমি?আমাকে নিজের লাইফ ব্যাক চাও?”

দৃশ্য নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো
-“পারবে আমার এই হাত শক্ত করে ধরে তোমার পরিবারের সামনে নিয়ে যেতে?পারবে তোমার মায়ের মুখোমুখি হতে?”

মাহাদ ছল ছল চোখে তাকিয়ে রইলো।দৃশ্যর চোখ ও ভিজে উঠলো।সে আবার বললো

-“জানি পারবে না।তাছাড়া তুমি চাইলেও আমি আর এটা চাইনা।তাই আমার কাছ থেকে দূরে থাকো।বার বার আমার সামনে এসে ক্ষতটা বাড়িয়ে কেনো দাও?নাকি আমাকে দেখে করুণা হচ্ছে?লিসেন আগের দৃশ্য আর এই দৃশ্যের মধ্যে অনেক পার্থক্য।আগের দৃশ্য ইমোশনাল ফুল ছিলো।কিন্তু এই দৃশ্য কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসেছে।সময় এই দৃশ্যকে বাস্তবিক করে দিয়েছে।আমি সাবলম্বী না হলেও দুর্বল নই।তাই নিজেকে সামলানোর ক্ষমতা আমার আছে।কাউকে আমার প্রয়োজন নেই।তোমাকেও না।আর আসবেনা আমার পেছনে।”

কথাটা বলতে বলতে দৃশ্যর গলা কেপে উঠলো।সে দ্রুত হেঁটে বাসার দিকে এগিয়ে আসলো।আর মাহাদ সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলো।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার।

দৃশ্য কাদতে কাদতে অবস্থায় বাসায় ফিরলো।ডোরবেল বাজাতেই লতা আপু দরজা খুলে দিলো।দৃশ্যকে দেখে বেশ চমকে গেল লতা। চোখ নাক লাল হয়ে আছে দৃশ্যর।দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেঁদেছে মেয়েটা।লতা অস্থির হয়ে বললো

-“কি হয়েছে তোর?চোখ এমন লাল হয়ে আছে কেনো?”

দৃশ্য আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।সবার সামনে নিজেকে শক্ত রাখলেও ভেতরে ভেতরে সে ভীষণ দুর্বল।সে লতাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।লতা দৃশ্যকে দ্রুত চেয়ারে বসিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখলো।দৃশ্য কাদতে কাদতে বললো

-“আমি আর এই যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিনা আপু।নিজের সাথে আর যুদ্ধ করতে পারছিনা। এতদিন বহু কষ্টে নিজেকে সামলে রেখে ছিলাম। তাহলে হঠাৎ করে কেন সে আবার আমার জীবনে আসলো? মানুষটা মেযত বার আমার সামনে আসে আমি ভেঙেচুরে যাই। সে নিজেও যানে আমাকে তার জীবনে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব না তবে কেন এভাবে আমাকে দুর্বল করে দিচ্ছে? সে সামনে আসলে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনা। কি করবো আমি আপু বলে দাও?”

লতার নিজেও চোখ ভিজে উঠলো।এই মেয়েটাকে কি বলবে বুঝতে পারছে না।সে দৃশ্য চোখের জল মুছে দিয়ে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো।দৃশ্য পানিটা খেয়ে একটু শান্ত হলো।লতা কিছুটা সময় নিয়ে ভেবে শান্ত স্বরে বললো

-“সে কি চায় বলেছে কিছু?”

দৃশ্য মাথা নেড়ে না জানায়।লতা আবার বললো
-“তুই কি তার কাছে ফিরে যেতে চাস?”

-“সেটা সম্ভব না আপু।আন্টির মুখোমুখি আমি হতে পারবো না।সে আমাকে ঘৃণা করে।আঙ্কেলের মৃত্যুর জন্য আমাকে দোষী মনে করে। এই মানুষটা ঘৃণা নিয়ে আমি মাহাদের সংসার করতে পারবও না।”

-“আমার মনে হয় তোর মাহাদের সাথে শান্ত ভাবে কথা বলা উচিৎ।এই ভাবে ইগনোর করে কিছু হবে না। মাহাদকে তোর কথা গুলো বুজিয়ে বল।তুই কি তাকে বিশ্বাস করিস?”

দৃশ্য চমকে লতার দিকে তাকালো।সেতো মানুষটাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে।অরিনকে নিয়ে যা শুনেছে তার কিছুই দৃশ্য বিশ্বাস করেনি।তবে তার রাগ হয়েছে।হয়তো ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে এমন কিছু শুনলে রাগ করাটা স্বাভাবিক।সে লতাকে মাথা নেড়ে হে জানালো। লতা বললো

-“আমার মনে হয় তার মধ্যেও অপরাধ বোধ কাজ করছে।আর তোকে দেখার পর হয়তো সেই অপরাধবোধ এর মাত্রা বেড়ে গেছে। যার জন্য সে লাইফ মুভ অন করতে পারছে না।”

দৃশ্য লতার কথা গুলো ভাবছে।সে মাহাদের চোখে অপরাধ বোধ দেখেছে।মানুষটাকে সেই গিলটি থেকে বের করতে পারলে হয়তো সবটা ঠিক হবে।তাছাড়া তার আর মাহাদের মধ্যে একটা বিশাল দেয়াল তৈরি হয়েছে।যেটা ভেদ করা সম্ভব না। মাহাদ আরো ভালো কিছু ডিজার্ভ করে।সে মাহাদের যোগ্য না।

পরদিন সকালেই দৃশ্য ঘুম থেকে উঠে একটা নিউজ শুনলো।অরিন আর ক্রিকেটার সাদমান সামনের সপ্তাহেই বিয়ে করছে।তাদের নাকি দের বছর যাবত প্রেম চলছে যা মিডিয়া জানতে পারেনি।তার কিছুক্ষণ পর তাকে সোমা কাল করে আর কথায় কথায় বলে

-“দৃশ্য জানো মডেল অরিন সত্যি সত্যি প্রেগনেন্ট।আর বাচ্চার বাবা রকস্টার মাহাদ না।বরং ক্রিকেটার সাদমান।তাইতো জলদি বিয়ের প্ল্যান করেছে আমার ভীষণ মজা লাগছে একটা বিষয় মনে করে।”

দৃশ্য চিন্তিত হয়ে বললো
-“কি?”

-“আরে ঐদিন অদ্রি মাহাদকে জিজু বানিয়ে দিলো।অথচ দেখো তার কাজিন তার ক্রাশ বয় সাদমানের সাথে প্রেম করছিলো।সকালে আমাকে কল করে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিল। প্রথমে একটু খারাপ লাগলেও পরে ভীষণ হাসি পাচ্ছিলো।এই মেয়ের ক্রেশের শেষ নেই।”

দৃশ্য কল কেটে চুপচাপ বসে রইলো। মাহাদের উপর তার বিশ্বাস ছিলো।বিয়ের আগে কোনো মেয়ের সাথে যে মাহাদ গভীর ভাবে জড়াবে না সেটা দৃশ্য জানে।আচ্ছা মাহাদ কি তাদের বিয়ের কারণেই লাইফের মুভ অন করতে পারছেনা?এই সম্পর্কটা কি তাকে আটকে রেখেছে?যদি এমন হয় তাহলে তাকে মুক্তি দেওয়া উচিৎ।কথাটা ভেবেই দৃশ্যর বুকটা কেপে উঠলো।সে কি পারবে এই পবিত্র সম্পর্ক টা শেষ করে ফেলতে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here