তোমার_আমার_প্রণয় #israt_jahan_arina #part_50

0
970

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_50

ধরণীর বুকে জুড়ে নেমে এসেছে আঁধার।সেই আঁধারের মাঝে বারান্দার বেতের চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে গিটারে সুর তুলছে মাহাদ।মনের অস্থিরতা কমানোর চেষ্টা করছে সে।এতদিন পর তার মা এতোটা স্বাভাবিক আচরণ করেছে তার সাথে।মা যখন সোফায় বসে মুচকি হাসছিলো মাহাদ তখন মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখেছে।বহু দিন পর মাকে এইভাবে হাসতে দেখেছে।বাবা তো যাবার আগে মায়ের মুখের এই হাসি রক্ষার দায়িত্ব দিয়ে গেছিলো।বাবার শেষ ইচ্ছে কি করে অপূর্ণ রাখবে?

অপরদিকে দৃশ্য।এতদিন মাহাদ নিজেকে সামলে নিলেও দৃশ্যকে দেখার পর থেকে সে আবার নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।তার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে গেছে।দৃশ্যকে তীব্র ভাবে নিজের কাছে চাইছে।কিন্তু কি করে রাখবে দৃশ্যকে পাশে?কি করে মায়ের মুখোমুখি দারাবে?ভীষণ দোটানায় কাটছে তার সময়।

মাহিম রাতের ডিনারে বসেছে মা আর দাদীর সাথে।শামসুন্নাহার বেগম বলে উঠলেন

-“এইযে ছোডো রাজপুত্তুর, এমনে টই টই কইরা ঘুরলে হইবো?কয়দিন পরে পরীক্ষা শেষ হইলে কাম কাজ কিছু করা লাগবো না?তোর ভাই গান বাজনা করে আবার ব্যাবসা সামলায়।ভাইয়ের কামে একটু হাত দেওন যায়না?”

-“উফফ দাদী!আগে পরীক্ষা শেষ হোক তারপর যাবো।এতো তাড়া কিসের?”

শামসুন্নাহার বেগম আড়চোখে মাহিম কে দেখে বললো
-“তোর ভাই তো দিন দিন রসাতলে যাইতাছে।আজ কাল বাইত আহে না।ওই মাইয়া আবার তোর ভাইয়ের মাথা খারাপ করতে উইঠা পইড়া লাগছে। তোর ভাইয়ের অফিসে কাম করার বাহানায় মাথা চিবায়া খাইতাছে।”

মাহিম খাবার মুখে তুলে নিয়ে গিলে পানি পান করে বললো
-“ভাবী মোটেও তোমার নাতির মাথা নষ্ট করছে না।বরং তোমার নাতি ভাবির পিছে পড়ে আছে।তাছাড়া ভাবী তোমার নাতির অফিস সেই কবেই ছেড়ে দিয়েছে।”

শামসুন্নাহার বেগম চমকে গেলেন।আসলেই কি মেয়েটা জব ছেড়ে দিয়েছে?তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো

-“ভালোই হইছে।এইবার তোর ভাইরে একটু বুঝা।বিয়া সাদি করতে ক। এমনে আর কতদিন?বিয়া কইরা সংসার পাতলে আগের সব ভুইলা যাইবো।”

আখি রহমান বাঁকা চোখে শাশুড়ির দিকে তাকালেন।কিন্তু কিছুই বললেন না।মাহিম মুচকি হেসে বললো

-“আমাদের বংশে একাধিক বিয়ের ট্রেন্ড আছে নাকি দাদী? দাদাজান কয়টা বিয়ে করেছিলো?”

শামসুন্নাহার বেগম বেশ ক্ষেপে গেলেন।এই বাঁদর ছেলে তার প্রাণের স্বামীকে নিয়ে মজা করে?তিনি রেগে বললেন

-“মুখ সামলায়া কথা কবি।তোর চৌদ্দগুষ্টির কেউ দুই বিয়া করেনাই।আর আমার সোয়ামি আমারে মেলা ভালা পাইতো।আমার লাইগা পাগল আছিলো।তোর দাদার যন্ত্রণায় আমার ভাইয়ের বাড়িত যাইতে পারতাম না।গেলেও পিছে পিছে আইসা পড়তো।আমার সোয়ামি আমারে কতো ভালোবাসতো যানোস?আরেক বিয়া করার কতা সপ্নেও ভাবে নাই।”

মাহিমের মুখের হাসি আরো প্রশস্ত হলো।সে বললো

-“তোমার সোয়ামি কে নিয়ে কিছু বললে এতো জ্বলে কেনো?তোমার সোয়ামি তোমাকে ভালোবাসতো বলে আরেক বিয়ের কথা ভাবেনি।তাহলে আমার ভাই,যে কিনা নিজের বউকে পাগলের মতো ভালোবাসে সে আরেক বিয়ে করবে ভাবলে কি করে?ভাইয়াকে দিয়ে নিউ ট্রেন্ড শুরু করবে নাকি? তাহলে আমি কিন্তু তিনটা করবো।ইসলামে কিন্তু চার বিয়ের পারমিশন আছে।আমার জন্য দুইটা খুজে দাও।”

-“ওই শয়তান পোলা।আজাইরা কথা কবিনা।তোর ভাই এক শয়তানের রক্তরে এই বাড়ির বউ বানায়ছে।যে এই বাড়িত ঢুকতে না ঢুকতেই আমার পোলারে খাইছে।আমার সংসারে সুখ শান্তি নষ্ট করছে।ওই মাইয়ারে আমি বাইচা থাকতে এই বাড়িত ঢুকতে দিমু না।”

আখি রহমান টেবিল ছেড়ে উঠে গেলেন।এই মুহূর্তে তার কিছুই ভালো লাগছে না।নিজের স্বামীকে ভীষণ মনে পড়ছে।মানুষটা মৃত্যুর আগেও তার সাথে রসিকতা করে গেছে।হসপিটালে থাকা অবস্থায় যখন তার হাত ধরে কাদছিলো তখন বলেছিলেন

-“এই কান্না বন্ধ করো।বিয়ের আগে থেকেই দেখেছি কাদলে নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলো। ছি!! কি বিচ্ছিরি লাগে তখন।”

আখি রহমান হিচকী তুলতে তুলতে বলেছিলেন
-“বিয়ের আগেই যখন জেনেছো তাহলে বিয়ে কেনো করেছো?”

-“ঐযে আমার কপালে লেখা ছিল আমি তোমার বাচ্চাদের বাবা হবো তাই।আমি বিয়ে না করলে এমন হীরের টুকরা দুইটা কই পাইতা?”

-“মজা করেন আমার সাথে? এই অবস্থায় ও আপনার মজা করা শেষ হয় না?”

-“কি করবো বলো।যদি পড়ে সময় না পাই?”

সেই কথাটা আখি রহমানের হৃদয়টাকে কপিয়ে তুলেছিল।এক রাশ বেদনা তাকে ঘিরে ধরেছিলো।
মাহিম গম্ভীর হয়ে বললো
-“বাবার মৃত্যুর সাথে ভাবীর কোনো সম্পর্ক নেই।আর সে আশরাফ হোসাইনের মেয়ে হলেও তার পার্সোনালিটি সম্পূর্ণ আলাদা।ওই মানুষটার ওরসে জন্ম নেয়াটা তার দোষ না।বাবা দোষ করলে তার সন্তানেরা কেনো শাস্তি ভোগ করবে?এই সবে ভাবির কোনো অপরাধ ছিল না।আর ভাবী এই বাড়ির বউ।তোমার ঠিক যতটুকু অধিকার আছে এই বাড়িতে।ঠিক ততটুকু অধিকার তার ও আছে।”

-“আমার লাগে ওই মাইয়ার তুলনা দেস?”

-“তুলনা করছি না দাদী। জাস্ট তার অধিকারে কথা জানাচ্ছি।সে চাইলে পারতো এই বাড়িতে এসে নিজের অধিকার বুঝে নিতে।তোমার নাতি বাধা অব্দি দিতে পারতো না।ওই মেয়ের এক ফোঁটা চোখের জলেই তোমার নাতি কুপোকাত হয়ে যেতো।এই দুইটা মানুষ কেনো দূরে আছে জানো? আমার মায়ের কষ্টের জন্য।মা মুখ ফুটে একবার কিছু বললে তোমার নাতি উড়াল দিয়ে ভাবিকে নিয়ে আসবে।ভাবী না আসতে চাইলেও তোমার নাতি হাত পা বেঁধে নিয়ে আসবে।শুধু মাত্র আমার মায়ের চোখের জল ভাইয়াকে আটকে রেখেছে।”

কথাটা বলে মাহিম চলে গেলো।শামসুন্নাহার বেগম সেখানেই চুপ করে বসে রইলেন।ওই মেয়ে যে সবাইকে কি যাদু করে রেখেছে আল্লাহই জানে।তবে মাহিম ঠিক বলেছে।আখি একবার সম্মতি দিলে মাহাদ ওই মেয়েকে ধরে বেধে হলেও নিজের কাছে রাখবে।ভীষণ একরোখা জেদী ছেলেটা।
হটাৎ তার টনক নড়লো।মাহিম কি বললো?তার জন্য দুইটা মেয়ে খুঁজতে।তিনটা বিয়ে করবে বলে দুইটা কেনো খুঁজতে বললো?তার মানে এই পোলা নিজের জন্য বউ খুজে নিয়েছে?আল্লাহ!! একটা নাতিরেও মন মতো মেয়ে খুঁজে বিয়ে দিতে পারলেন না।একটা তো জল্লাদের মাইয়া বিয়া করছে। আল্লাহই জানে এইটা কোন মাইয়া পছন্দ করছে?

মাহাদ আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে।ঠিক দৃশ্য যেমনটা পছন্দ করে তেমন ভাবে।দৃশ্যর দেয়া পাঞ্জাবিটা গায়ে জড়িয়েছে।একটু টাইট মনে হচ্ছে।বডি সেইপ চেঞ্জ হয়েছে তাই পাঞ্জাবীটা কিছুটা টাইট মনে হচ্ছে।তবুও এটা গায়ে জড়িয়ে ভীষণ ভালো লাগছে।সে দ্রুত রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।আজ পুরো রেস্টুরেন্ট সে একাই বুক করেছে।সেলিব্রেটি হওয়ার দরুন তাকে বেশ সাবধানে চলতে হয়।পাবলিক প্লেসে যখন তখন বসা যায়না।মিডিয়া দেখা যাবে তিলকে তাল বানিয়ে দিবে।

রেস্টুরেন্টে পৌঁছে মাহাদ অপেক্ষা করতে লাগলো।যেই মাহাদের জন্য সবাই অপেক্ষা করে আজ সেই মাহাদ করো জন্য অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছে।সময় যেনো কাটছে না।রবিন সকাল থেকেই দেখছে মাহাদের অস্থিরতা।আজ সকালে যখন সে ঘুমিয়ে ছিলো তখন তার ফোন একটা কল আসে।কল রিসিভ করে বেশ চমকে যায়।কিছুক্ষণ কথা বলে সে দৌড়ে আসে ধানমন্ডি। মাহাদের বাসায় এসে অনবরত ডোরবেল বাজাতে থাকে। মাহাদ তখন ঘুমে ছিলো।প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে একটা ধমক দেয় রবিনকে।রবিন ধমক খেয়ে কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে উঠে

-“স্যার ম্যাম কল করেছিলো?”

মাহাদ সোফায় বসতে বসতে বললো
-“কোন ম্যাম?”

-“স্যার,মিসেস মাহাদ।”

মাহাদ চমকে তাকালো রবিনের দিকে।এতক্ষণের তন্দ্রা ভাব মুহূর্তেই গায়েব হয়ে গেলো।সে অস্থির হয়ে বললো

-“দৃশ্য?”

-“জি স্যার।”

-“কি বলেছে?”

-“আপনার সাথে ম্যাম দেখা করতে চায়।”

মাহাদ বেশ চমকে গেলো। কালই ওকে কতো রাগ দেখালো।আর আজ মিট করতে চাইছে?সে দ্রুত বললো

-“গাড়ি বের করো রবিন।”

-“স্যার…আসলে ম্যাম এখন না বিকেলে আপনার সাথে দেখা করতে চায়। প্লেস আপনাকে ঠিক করতে বলেছে।”

মাহাদ কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করলো।দৃশ্যকে নিয়ে মন চাইছে খোলা আকাশের নিচে বসতে।কিন্তু মিডিয়া টের পেলে দৃশ্যকে নিয়ে যা তা নিউজ বের করবে।তাই একটা রেস্টুরেন্টের রুফটপ বুক করতে বললো।

বাহিরে আজ বেশ বাতাস।সেই বাতাসে মাহাদের চুল গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।আর সে বার বার তা ঠিক করছে।রবিনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো

-“রবিন ড্রিংকস বা সিগারেটের কোনো গন্ধ আসছে?”

রবিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো “না”।

এই প্রশ্ন সকাল থেকে মাহাদ তাকে এই নিয়ে আটবার করলো।
রাতে সে বেশ ড্রিংকস করেছে।সাথে সিগারেট তো ছিলই।তার প্রিয়সী যে এইসবের গন্ধ একদম সহ্য করতে পারে না। এখনো দৃশ্যর বমি করার কথাটা মনে আছে তার।কতো রেগে গেছিলো দৃশ্য সিগারেট দেখে।

রবিন অবাক হয়ে মাহাদ কে দেখছে।এই কয়েক বছরে সে তার স্যারকে এত এক্সাইটেড হতে দেখেনি। কত সুন্দরী মডেলদের সাথে মিটিং করেছে। কিন্তু নিজেকে কোনদিন এতটা পরিপাটি করে তাদের সামনে যায়নি। অথচ দৃশ্যর মতো একটা সাধারণ মেয়ের জন্য এই মানুষটা নিজেকে কতভাবেই না সাজিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছে।রবিন এই প্রথম ফিল করলো তার স্যার একজন পাগল প্রেমিক। দৃশ্য কে এই মানুষটা উন্মাদের মতো ভালোবাসে। এত ভালোবাসার মাঝেও এই দুইজন মানুষ আলাদা কেনো?

দৃশ্য রিকশা থেকে নেমে লিফটে চড়ে গেলো।তার ভেতরটা কেমন হাসফাঁস করছে। ঘুছিয়ে রাখা কথা গুলি আবার মনে করে নিলো।আজ সে মাহাদের সাথে কথা বলতে চায়।মন খুলে কথা বলতে চায়।

লিফট থেকে বেরিয়েই রবিনকে চোখে পড়লো।সে দৃশ্য দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসলো।আর তাকে রুফটপে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিলো।দৃশ্য কাচুমাচু করতে করতে সেখানে পৌঁছালো।চারপাশে চোখ বুলাতেই অবাক হলো।চারপাশে কেউ নেই। ডান পাশে চোখ পড়তেই দৃশ্যর চোখ আটকে গেলো।

নীল পাঞ্জাবি পরা কেউ পেছন দিকে ঘুরে পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।দৃশ্য ব্যাক সাইড দেখেই বুঝে গেলো মানুষটা কে।তার গায়ের পাঞ্জাবিটা দেখে দৃশ্যর কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।হঠাৎ মাহাদ ঘুরে দাড়াতেই দৃশ্যর দম বন্ধ হবার জোগাড়।তার মনে হচ্ছে ঠিক যেনো আগের মাহাদ তার সামনে দাড়িয়ে আছে।দৃশ্য শুকনো ঢোক গিললো। এতক্ষণ গুছিয়ে রাখা কথা গুলি মুহূর্তেই গুলিয়ে গেলো।

মাহাদ দৃশ্যকে দেখে সামনে এগিয়ে আসলো।কাছে আসতেই তার চোখ পড়লো দৃশ্যর শুষ্ক ঠোঁটের দিকে।উপরের দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে রেখেছে।তার দিকে তাকাচ্ছে না।দৃশ্যর লম্বা কোমর অব্দি চুল গুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মাহাদ নেশা ভরা চোখে প্রিয়তমাকে দেখছে।সাদামাটা অবস্থায় ও কতো অপরূপ লাগছে। মাহাদের ভীষণ ইচ্ছে করলো দৃশ্যর সেই শুষ্ক ওষ্ঠে ঝটপট একটা চুমু খেয়ে নিতে। কিন্তু ইচ্ছাটা দমিয়ে রাখলো।

প্রায় দশ মিনিট যাবত তারা মুখোমুখি বসে আছে।কেউ কোনো কথা বলছে না।দৃশ্য মনের কথা গুলি সাজাচ্ছে।আর মাহাদ দৃশ্যকে দেখছে।নিরবতা ভেঙে দৃশ্য বললো

-“গতকালের ব্যাবহারের জন্য আমি সরি।আসলে একটা বিষয় নিয়ে ডিস্টার্ব ছিলাম।”

-“নিশ্চয়ই বিষয়টি আমার আর অরিনকে নিয়ে ছিলো?”

দৃশ্য অবাক হলো না।মানুষটা তার রাগের কারণ সব সময়ই ধরে ফেলে।সে মুচকি হেসে বললো

-“কিছুটা।”

-“জানি।অরিন আমার ভীষণ ভালো বন্ধু।হঠাৎ বিয়ের আগে কনসিভ করায় সে ভয় পেয়ে গেছিলো।একজন ভালো বন্ধু হিসেবে তার বিপদে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।”

-“আমার জন্য তোমার সিডিউল নিশ্চয়ই গরমিল হয়ে গেছে।”

মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“আমার বউরে জন্য এমন হাজার সিডিউল গরমিল করতে রাজি আছি।তাছাড়া আমি কিছুদিনের জন্য কাজ থেকে ব্রেক নিয়েছি।তাই কোনো সমস্যা নেই।”

আবার তারা কিছুক্ষণের জন্য নিরব হয়ে গেলো।দৃশ্য আবার বললো

-“এই ভাবে আমার পিছু কেনো নিয়েছো?কয়েক বছর আগে তো সবটাই শেষ হয়ে গেছিলো।তবে কেনো আবার এই পাগলামো করছো?আসলে কি চাইছো তুমি?”

মাহাদ নিজেকে প্রশ্ন করলো সে কি চায়।কিন্তু কোনো জবাব পেলো না।না সে দৃশ্যকে নিজের করে নিতে পারছে আর না পারছে দৃশ্যর থেকে দূরে থাকতে।সে থমথমে গলায় বললো

-“জানিনা।”

দৃশ্য দীর্ঘশ্বাস ফেললো।জবাবটা এমন কিছু হবে দৃশ্য সেটা আগে থেকেই জানতো।তবে আজ সে মাহাদ কে তার জীবনের কঠিন বাস্তবতা গুলো বলতে চায়।দৃশ্য এবার বলতে শুরু করলো

-“আমার লাইফের সবচাইতে প্রিয় মানুষ ছিলো আমার ভাইয়া।তার পর আমার মা।বাবাকে কেনো জানি নিজের সেই লিস্টে রাখতে পারতাম না।ছোট বেলা থেকেই তাকে ভীষণ ভয় পেতাম।একটা সময় তুমি আসলে আমার জীবনে।আশ্চর্যজনক ভাবে আমার প্রিয় মানুষের লিস্টে তুমি প্রথম জায়গাটা দখল করে নিলে।আমি সেটা টেরও পেলাম না।
কষ্ট জিনিসটা আমাকে কখনো ছুঁতে পারেনি।তার একমাত্র কারণ ভাইয়া।সে আমার সব ইচ্ছা বলার আগেই পূরণ করে দিতো।কিন্তু যেই মুহুর্তে এই মানুষটাকে আমি আমার পাশে খুব করে চেয়েছি তখন পায়নি।যেই ভাইয়া আমার সামান্য চোখের জল সহ্য করতে পারতো না,সে তোমাকে ভালোবাসার অপরাধে একধিক বার আমার গায়ে হাত তুলেছে।আমি ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম তখন।আরো ভেঙে পড়েছিলাম যখন বাবা আমার চোখের সামনে মাকে বেধর মেরেছিলো।তুমি তোমার মায়ের চোখের জল সহ্য করতে পারো না।অথচ আমি আমার মায়ের সেই আর্তনাদ সহ্য করেছি।নিজের মাকে আমার জন্য রক্তাত্ব হতে দেখেছি।এতো মারের পরও সে নিজের জন্য কষ্ট পায়নি।বাবার আমাকে করা আঘাতে বেশি কষ্ট পেয়েছে।আসলেই মায়েরা এমনি হয়।সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে পারেনা।

তোমাকে ইগনোর করতে বাধ্য হয়েছিলাম তখন।কিন্তু সেদিন যখন তুমি বিয়ের কথা বললে আমি সব ভুলে স্বার্থপরের মতো রাজি হয়ে গেছিলাম।আমার মনে হয়েছিলো শুধু তুমি আমার পাশে থাকলেই চলবে।তুমি আমার হাত ধরলেন আর কোনো কষ্ট আমাকে ছুঁতে পারবে না।”

মাহাদ এক দৃষ্টিতে দৃশকে দেখছে।দৃশ্য আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে।দৃশ্যর চোখ জোড়া চিক চিক করছে।মনে হচ্ছে যে কোনো সময় মুক্ত দানার মতো গড়িয়ে পড়বে অশ্রু।দৃশ্য আবার বলতে শুরু করলো

-“তবে আমি জীবনে সবচাইতে বড়ো ধাক্কাটা খেয়েছি সেদিন,যেদিন তুমি আমার হাত ছেড়ে দিলে।আমি না এইটা বিশ্বাস করতে পারিনি।এই ব্যাপারটা আমার কিছুতেই হজম হয়নি।আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আমাকে ফিরিয়ে নিতে আসবে।আমি তোমার পথ চেয়ে বসে ছিলাম।”

মাহাদের চোখ ভিজে উঠলো।সে নিজের মাথা নিচু করে নিলো।সে যে ভালোবাসার মানুষটির বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারেনি।দৃশ্য আবার বললো

-“তোমরা যেদিন ঢাকায় চলে আসলে আমি পাগলের মতো ছুটে গেছিলাম তোমার বাসায়।চিৎকার করে সেদিন কেদেছিলাম আমি।আমার বিশ্বাস মুহূর্তেই ভেঙে চুরে গেছিলো।তার পর থেকে না, নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।সত্যি বলতে বাঁচার ইচ্ছাটা নষ্ট হয়ে গেছিলো।দম বন্ধ হয়ে আসতো।খাবার গলা দিয়ে নামতো না।তখন সুইসাইড করার চেষ্টা করলাম।কিন্তু মরতে পারলাম না।সেদিন মরে গেলে হয়তো ভালো হতো।কারণ সামনে আমার জন্য আরো ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছিল।

বাবা আমার বিয়ে ঠিক করলো।আমিতো বিবাহিতা ছিলাম।তবুও বাবা আমার সাথে এই অন্যায় কাজটা করতে চাইলো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।আমি মানতে পারেনি বাবার ডিসিশন।আমিতো তোমার নামে কবুল বলেছি।তাহলে অন্য কাউকে কি করে মেনে নিবো?সেদিন একটা শক্ত হাতে প্রয়োজন ছিলো আমার।যে আমাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করবে।কিন্তু কেউ ছিলো না।

আমি বিয়ে করতে রাজি হয়নি বলে বাবা সেদিনও আমাকে প্রচুর মেরেছিলো।আজও সেই আঘাত গুলো আমাকে রাতে দুঃস্বপ্ন হয়ে তাড়া করে বেড়ায়।এতো কিছুর পর ও যখন আমি রাজি হলাম না তখন বাবা মাকে মেরে ফেলার হুমকি দিলো।আমি আর কিছুই বলতে পারিনি।

কিন্তু হলুদের আগে রাতের আধারে আমি সেদিন বাড়ি ছেড়েছিলাম।যেই আমি একা কোথাও যেতে পারতাম না।সেই আমি অনিশ্চিত জীবনের দিকে পা বাড়িয়ে ছিলাম। কোথায় যাবো, কি করবো কিছুই নিশ্চিত ছিলো না।সেদিন ট্রেন থেকে নেমে আমি আবিষ্কার করলাম এক নতুন দুনিয়ায় চলে এসেছি।জানো সেদিন সেই ট্রেন স্টেশনের বাইরে আমার বাবার বয়সী একটা লোক আমাকে খারাপ প্রস্তাব দিয়েছিলো।সে দিন না বুজলে ও আজ বুঝি লোকটা আমাকে প্রস্টিটিউট ভেবে একটা রাত কাটাতে চেয়েছিলো।”

মাহাদের চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো।হাত জোড়া মুষ্টি বদ্ধ করে রইলো।ইচ্ছা হলো লোকটাকে কেটে কুকুরকে খাওয়াতে।দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে দেখলো তার গাল ভেজা।দৃশ্য চোখ মুছে নিলো।আবার বললো

-“আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম।স্টেশনের এক ভিখারী দাদীর পাশে ঘুটিসুটি মেরে শুয়ে পরেছিলাম।ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম সেদিন রাতে।বার বার মনে হচ্ছিলো এই বুঝি হায়নার দল আমাকে ছিড়ে খাবে।”

মাহাদ বুকের মাঝে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছে।সে তার বউটাকে এ কোন অন্ধকারে ফেলে এসেছিলো?

-“ঢাকায় এসে প্রথম বুঝতে পারলাম জীবন সংগ্রাম কাকে বলে?এই যান্ত্রিক শহরে নিজেকে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছিলাম না।লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছিলাম।লতা আপু আমাকে বুজিয়ে শুনিয়ে নিজ খরচে ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিলো।একটা সময় ফিল করলাম অর্থ ছাড়া এই শহরে টিকে থাকা সম্ভব না।জিনিয়া আর লতা আপুর উপর বোঝা হয়ে থাকা যাবে না।তাই বেরিয়ে পড়লাম একটা চাকরির উদ্দেশ্যে।

কিন্তু জাস্ট এইচএসসি পাস করে জব পাওয়া সম্ভব ছিলো না।তবুও কয়েকটা ছোট পোস্টে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম।কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে হয়নি।আর কয়েক জায়গায় তারা আমাকে চাকরি দিতে রাজি হয়েছে কিন্তু…..”

দৃশ্য ঢোক গিললো।কান্না গুলো দলা পাকিয়ে আসতে চাইছিলো।দৃশ্য নিজেকে সামলে বললো

-“সমাজে এতো নিকৃষ্ট মানুষ আছে আমার জানা ছিলো না।আমি ভাবতাম আমার বাবাই হয়তো সব চাইতে নিকৃষ্ট।কিন্তু এই শহরে এসে জানতে পারলাম পদে পদে এই মুখোশ ধারি মানুষ গুলি আছে। পৃথিবীর এই অন্ধকার জগৎ সম্পর্কে জানতে শুরু করলাম।

এই শহরের রাস্তায় চলতে গিয়ে কতবার হচোট খেয়েছি তার হিসেব নেই।ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়তাম।পড়ে লতা আপু আর জিনিয়া আমায় আবার পথ চলতে সাহায্য করতো।পাবলিক বাস গুলিতে কতো বার মানুষ রুপি পশুদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে।আমার জীবনে বাবা,ভাইয়া আর তুমি ছাড়া কোনো পুরুষ ছিলো না।তোমাদের স্পর্শে আমি অভ্যস্থ ছিলাম।কিন্তু এই শহরে মানুষের ভীড়ে কতো বার নোংরা স্পর্শের শিকার হয়েছি জানা নেই।প্রথম বাসে উঠে এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম।সেদিন বাস থেকে নেমে রাস্তায় বসে চিৎকার করে কেদেছিলাম।তুমি ছাড়া অন্য কারো সামান্য স্পর্শ আমাকে ভেতর থেকে ভেঙে দিতো।কিন্তু নিজেকে এই শহরে মানিয়ে নিতে শিখলাম।কি করে নিজেকে সেভ করতে হয় তা অটোমেটিক্যালি শিখে গেলাম।আসলে পরিস্থিতি সব শিখিয়ে দেয়।”

মাহাদের নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইছে।দৃশ্যকে এই পরিস্থিতিতে তার জন্যই পড়তে হয়েছে।সে দুই হাতে নিজের চুল খামচে ধরলো।যারা যারা তার বউয়ের দিকে বাজে নজরে তাকিয়েছে প্রত্যেকে শেষ করে দিতে পারলে মনটা শান্ত হতো।

-“জানো আমার মন মতো খাবার রান্না না হলে আমি খেতাম না।মা আমার পেছনে ঘুরে ঘুরে আদর করে খাইয়ে দিতো।কিন্তু এই শহরে এসে আমি বাস্তবতার মুখোমুখি হলাম।এমন অনেক বেলা গেছে আমি না খেয়ে ছিলাম।সারাদিন না খেয়ে ক্লাস করতাম।বেশি খিদে পেলে পানি দিয়ে খিদা মিটাতাম।”

মাহাদ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।সে যে আর শুনতে পারছে না।যেই মেয়েটাকে সে পরম আদর যত্নে আগলে রাখতে চেয়েছিলো।অথচ সেই মানুষটাকেই এতো কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে।দৃশ্য মাহাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে আবার দূরের অট্টালিকা গুলিতে মনোযোগ দিলো।আর বললো

-“এই কষ্ট গুলি বেশি দিন করতে হয়নি।লতা আপু আর জিনিয়া এই মানুষ দুটো আমার জন্য অনেক করেছে।তারা না থাকলে হয়তো আমি আজ তোমার সামনে এই ভাবে বসে থাকতে পারতাম না।কবেই ঝরে পড়তাম।লতা আপু আমাকে কয়েকটা টিউশনি জোগাড় করে দিলো।আমি নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে লাগলাম।তবুও কেনো যেনো যন্ত্রণা গুলি কিছুতেই কমছিলো না।তোমার উপর তখন ভীষণ রাগ হতো।”

দৃশ্য এবার আর নিজেকে সামলাতে পারেনি।ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।কাপা গলায় বললো

-“দিন শেষে আমি কিছুই পায়নি জানো?না পেয়েছি পরিবার,আর না পেয়েছি ভালোবাসার মানুষটিকে।সব হারিয়ে আমি ভীষণ নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার কি অপরাধ ছিলো মাহাদ?কেনো মাঝ পথে এসে আমার হাত ছেড়ে দিয়েছিলে?কেনো দিন শেষে সব চাইতে বেশি শাস্তি আমাকে পেতে হলো?আমার বাবার করা অন্যায়ের শাস্তি আমাকে পেতে হলো কেনো?আঙ্কেলের মৃত্যুর পর নিজেকে আসলেই ভীষণ অপরাধী মনে হয়েছিলো।আমি তোমার জীবনে না আসলে হয়তো এমন হতো না।”

মাহাদ দৃশ্যর হাতে হাত রেখে ভাঙ্গা গলায় বললো
-“তোমার কোনো অপরাধ ছিল না পিচ্ছি।সবটাই আমার দোষ ছিলো।এই পরিস্থিতিতে আমি তোমাকে ফেলেছি।আমি তো তোমার ক্ষমা পাওয়ারও যোগ্য না।”

দৃশ্য নিজের হাত ছড়িয়ে নিয়ে নিজেকে সামলে বললো

-“প্রথম দিকে তোমার উপর ভীষণ রাগ হলেও তা এক সময়ে শেষ হয়ে গেছে।আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার ছিলাম।আঙ্কেলের মৃত্যু একটা এক্সিডেন্ট ছিল। সেখানে তোমার বা আমার কারোরই হাত ছিলো না।তাই তোমার গিলটি ফিল করার প্রয়োজন নেই।সেই পরিস্থিতিতে থাকলে যে কেউ এটাই করতো।তাই তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।

এখন তোমার সামনে বসা মেয়েটা আর আগের দৃশ্য নেই।এই দৃশ্য কঠিন বাস্তবতা দেখে বেশ শক্ত হয়ে গেছে।আমি আর আগের আমি নেই।সেই স্বপ্নের দুনিয়া থেকে অনেক আগেই বেরিয়ে এসেছি।এই শহরে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে শিখে গেছি।”

দৃশ্য একটু থামলো। ঢোক গিলে আবার বললো
-“তোমার আর আমার মধ্যে একটা শক্ত দেয়াল তৈরি হয়ে গেছে।যেটা এতো সহজে ভাঙ্গা সম্ভব না।তাছাড়া আমি তোমার যোগ্য নই।তোমার পাশে এই আমাকে কিছুতেই মানায় না।তোমার স্ট্যাটাসের সাথে আমার মতো পরিবারহীন সাধারণ কাউকে একদম যায় না।তোমার উচিৎ একটা ভালো পরিবারের সুন্দরী,শিক্ষিত আর স্মার্ট মেয়েকে বিয়ে করা।
এই কয়েক বছরে আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি।কিন্তু এখন তুমি আবার আমাকে দুর্বল করে দিচ্ছ। মাহাদ সব সম্পর্ক পূর্ণতা পায় না।আন্টিকে কষ্ট দিয়ে তুমি আমি কখনোই সুখী হতে পারব না।তোমার পরিবার কখনোই আমাকে মেনে নিবে না।আমাকে দেখলেই আন্টি আর দাদীর আঙ্কেলের কথা মনে হবে।মন থেকে আমাকে মানতে পারবে না।তাদের কষ্ট দিয়ে আমি তোমার সাথে থাকতে পারবো না। আমাদের সংসার করাটা আসলে ভাগ্যে নেই। এইযে আমাকে দেখে তুমি কষ্ট পাচ্ছ, তোমাকে দেখে আমি কষ্ট পাচ্ছি। এমনটা চলতে দেয়া ঠিক না।পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন আমি সারা জীবন তোমাকে ভালবেসে যাবো। দূরে থেকে ভালোবাসা যাবে না এমন তো নয়?

আমি চাই তুমি লাইফে মুভ অন করো। এই অনিশ্চিত সম্পর্ককে ধরে রেখে কষ্ট পেওনা। আমি চাই তুমি সুখে থাকো। সে ক্ষেত্রে আমাদের বিয়ের সম্পর্কটা যদি বাধা সৃষ্টি করে থাকে তবে সেটা থেকে তোমাকে আমি মুক্তি দিতে রাজি আছি। তুমি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিও আমি সাইন করে দেবো।”

মাহাদ মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছে।ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।নিজের মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না।তবে ডিভোর্স শব্দটা শুনে তার বুক ধক করে উঠলো।এই শব্দটা তার বুকে তীব্র যন্ত্রণার সৃষ্টি করলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here