#রোদ্দুরের_বৃষ্টি
#পর্ব_২১_ও_২২
#পর্ব_২১
লীনা ম্যাম রিমিকে একটি ছোট্ট চিঠি পাঠিয়েছেন।
হেই রিমি,
কথাগুলো আপনাকে সামনাসামনি বললে আমি নিজেই বেশি বিব্রত হতাম, তাই লিখছি।
শোয়েব ছোটবেলা থেকেই সব ধরনের অন্যরকম জিনিসগুলোই পছন্দ করে। খাবার অন্যরকম, পোশাক অন্যরকম, গেইমস অন্যরকম, প্রফেশন অন্যরকম। একজন সফল আর্কিটেক্ট হয়েও সারাক্ষণ স্বপ্ন দেখে দেয়ালের রংমিস্ত্রি হবে। হি5হি.. কি হাসির না? সহজ স্বাভাবিক জিনিস কোনোকালেই সে পছন্দ করেনি। যেমন, বুয়েটে পড়াকালে অনেক সুন্দরী মেয়ে তাঁর পেছন ঘুড়লো, সে পাত্তা দিলো না। পৃথিলাকে আমি নিয়ে এলাম। চমৎকার মেয়ে, বুদ্ধিমতি, ভালো ছাত্রী! তাঁর পছন্দ হলোনা। সে পছন্দ করলো আপনাকে। দরিদ্র বাবাহীনা ব্রোকেন ফ্যামিলির একটি মেয়ে নিজের অভাবের সংসার টানতে সর্বস্ব দিয়ে দিচ্ছে। এই জিনিসটাই তাকে মুগ্ধ করলো। যে আপনার দুর্বল অভাবের দিকটাকেই পছন্দ করলো। আপনার কি মনে হয়না, সেই পছন্দে ভালোবাসার উপস্থিতি নাও থাকতে পারে? আপনার কি মনে হয়না, শোয়েব এর থেকেও অনেক উপরের কিছু ডিজার্ভ করে? এটা হয়তো তাঁর করুণা মেশানো স্নিগ্ধ কোনো অনুভূতি? ভালোবাসার সংজ্ঞায় তো করুণার কোনো জায়গাই নেই। এই যে, পৃথিলা আপনার বোন জেনেও আপনি তাকে এলাউ করলেন, শোয়েব কি ভাবলো? নিজেকে এত সহজলভ্য করে দেওয়ায় হয়তো আপনার দুঃখ দারিদ্র্য সে আরও কাছ থেকে দেখেছে। মনে করুণার আরও উদয় হয়েছে তাই।
রিংকু ঝিংকুর টিচার হিসেবে আপনি সফল! আমি আপনাকে পছন্দ করিও খুব। তাই বলছি, শোয়েবের ভ্রমকে যদি নিজের জীবন ধরে নিতে হয়, একটু যাচাই কি করে নেওয়া ভালো না? হয়তো পরে দেখা গেল, ও নামেই আপনার ভালোবাসার তালপুকুর অথচ ঘটিই ডুবছে না। তখন? কথায় আছে, অতিথি, দয়া আর করুণা দু-রাত পেরোলেই বিষ।
জীবন কিন্তু দু-রাত না….
****নেক্সট পড়াতে এলে দেখা করে যাবেন। আপনার জন্য সুন্দর একটি শাড়ি কিনে রেখেছি।
***অফিশিয়াল একটা ওয়ার্কশপে শোয়েব টু মান্থসের জন্য ইউ.এস. এ তে যাচ্ছে। পৃথি নিজের পোস্ট গ্রাজুয়েশনটা ওখানেই করতে চায়। তাই আমি পৃথিকে সাথে পাঠাতে চাই। এই সুযোগে পৃথি পড়াশোনার ব্যাপারে ওখানের ইউনিভার্সিটিগুলোর সাথে কথা বলে এলো। আর সেটা সম্ভব আপনি যদি শোয়েবকে বলেন। একবার পরীক্ষা করে দেখেনই না, অনুভূতিটার নাম কি? আপনার ভালোবাসার জোর আমি দেখতে চাই। যদি আপনি জিতেন, আমাদের ফ্যামিলিতে আপনাকে সবথেকে বেশি ওয়েলকাম করবো আমি। এন্ড দিস ইজ এ প্রমিজ।
বাই।
আপনার গুণমুগ্ধ
লীনা আহমেদ।
অত্যন্ত অপমানজনক শক্ত কিছু কথা লীনা ম্যাম সহজ করে লিখেছেন। রিমি যে সস্তা আর লোভী একটা মেয়ে সেটা অত্যন্ত গুছিয়ে লিখেছেন। তবে শোয়েবের ব্যাপারেও ভুল কিছু বলেননি। রিমি চিঠিটা পড়ে মনের অজান্তেই বললো, বাহ্ শিক্ষিত মানুষের ব্যাপারই আলাদা। এদের বকাতেও জ্ঞান থাকে। বুদ্ধির যে খেলাটা লীনা ম্যাম শুরু করেছেন, রিমি সেটা সানন্দেই খেলবে। এ জীবনে সে অনেকবারই হেরেছে। হারবার ভয় তাই তার কাছে কিছু নয়। জিততে তো তার বরং খুব ভয় করে।
খেলাটা রিমি খুব মন দিয়েই শুরু করলো।
শোয়েবকে সে সাথে সাথেই মেসেজ পাঠিয়েছে,
“আপনি যদি ইউ.এস.এ তে পৃথিলাকে সাথে নিয়ে যেতে না চান, আমি ভাববো আপনার নিজের অনুভূতির উপর আপনার কোনো ভরসাই নেই!
কিন্তু আমি জানি আমার আছে।”
মেসেজ পাঠানোর পর মোবাইল সে ড্রয়ারেই ফেলে রেখেছে। রিমি খুব ভালো করেই জানে তুফান হবে ওদিকে।
শোয়েব সিলেট চলে গেল রোববারেই। যাবার আগে ফোন করেছে অনেকবার, ধরেনি রিমি। টেক্সট করেছে, রিমি জবাব দেয়নি। শেষমেশ বুটিকে এসে অপেক্ষা করে চলে গেছে। রিমিও দেখতে চায় এটা কি করুণা নাকি?
ইন্টারনেটের যুগে চিঠি পাঠানোর এই অভিনব পদ্ধতিটা রিমির বেশ ভালো লেগেছে। সে নিজেও সিমি আপাকে একটা নোট লিখেছে,
“সিমি আপা,
তুই চলে যাওয়ার আগে আমার সব টাকা শোধ করে যাবি। যদি না পারিস, তোর বাবুকে রেখে যাবি।আমি ওকে নিঃসন্তান বড়লোক দম্পতির কাছে বেচে দিবো।দিয়ে আমার টাকা উসুল করবো। আর শোন, তুই আমাকে কষ্ট দিয়ে যা যা কথা বলেছিস সবকিছুর জন্য কান ধরে আমাকে সরি বলে যাবি।
ইতি,
রিমি সুলতানা।
প্রোপাইটার: রিশি বুটিক।
মোবাইল : ০১২৩৪৫৬৭৮৯০
এই চিঠিটা সে আপাকে বাবুর আকীকার দিন দেবে।চিঠি পড়ে আপার চোখমুখের অবস্থা কেমন হবে, সেটা ভেবেই রিমির রাজ্যের আনন্দ হলো।
#পর্ব_২২
পরের দু-সপ্তাহে রিমি একটা জিনিসে বেশ অবাক হলো কারণ শোয়েব তাকে এরমধ্যে একটাও ফোন করেনি। এমনকি শোয়েবের ইউ.এস.এ তে যাওয়ার ডেইট ফিক্স হওয়া অবধি রিমি তো জানলোই না। রিমির রাগ, দুঃখ, কিছুই হলো না। কিন্তু ভয় করতে লাগলো; ভীষণ ভয়! সিমির বাবুর অনুষ্ঠানে দাওয়াতের সময় রিমির দেখা হয়েছিলো লীনার সাথে। লীনা হেসে বললো,
-আপনিতো দেখতে দেখতে সত্যিই বিজনেসটা দাঁড় করিয়ে ফেললেন। এত অল্প সময়েই তো দেখলাম বেশ পরিচিতি এসে গেছে ঢাকায়।
রিমিও জবাবে ভদ্রতার হাসি হেসেছিলো। কিন্তু তারপর যখন লীনা বললো, আপনি আমার কথা রেখেছেন, এজন্য অবশ্যই আমি দাওয়াতে আসবো। আপনার সাহসকে এপ্রিশিয়েট করছি আমি!
রিমি এতে আরও অবাক হলো, কথা রেখেছেন মানে কি? শোয়েবের সাথে তো রিমির কোনো কথাই হয়নি। তাহলে? পৃথিকে কিছু জিজ্ঞেস করবে? কি হলো?
উফ্… রিমির হাত-পা ঝিমঝিম করতে লাগলো। কিছুই ভালো লাগছে না। তাহলে কি স্বপ্নটা সে মিথ্যে দেখেছে? শোয়েব ভাই পৃথিকে সাথে করেই যাচ্ছে? সে কেন এরকম বলতে গেল শুধু শুধু? রিমির ভেতরটা দুমরে মুচরে গেল গাঢ় কষ্টে। কেন এত যন্ত্রণা হচ্ছে তাঁর? কেন? শোয়েব ভাই তাহলে পৃথিকেই বেছে নিলো? এজন্যই কি যোগাযোগ অফ করে দিয়েছে?এজন্যই কি পৃথিলা বাড়িতে এখন খুব কম যায়? এই এতটা দিনে পৃথিলা তো বাড়ির কাউকে বলেনি যে, সে ইউ.এস.এ তে যাচ্ছে? পৃথিবীটা এত স্বার্থপর! জীবনে স্বচ্ছলতা এলো বলে ভালোবাসা হারিয়ে গেল?
রিমি আর কিচ্ছু ভাবতে পারছে না। কিচ্ছু না।
বাড়ি এসে রিমি ঘরের ভেতর পর্যন্তও এলো না, দরজায় বসেই কাঁদতে থাকলো ব্যাকুল হয়ে। সিমি এগিয়ে এলো, মা এগিয়ে এলো।
-রিমি রিমি কি হলো তোর? রিমি…
-মা আমি আর কিছুই করতে পারবো না মা, কিছুই না। এতসব আর সামলাতে পারবো না।মা… মাগো… আমাকে নিয়ে একটু বিছানায় শুইয়ে দাও। শরীর অবশ হয়ে গেছে আমার…
সেইরাতে রিমি এক ফোটাও ঘুমালো না। কেঁদে গেল অনবরত। নাসিমা অস্থির হয়ে ভীতমুখে মেয়ের মাথার ধারে বসে রইলেন। এমন কি হয়েছে মেয়েটার? একরত্তি বোধের তাঁর এই মেয়েটার কিসের এত কষ্ট?
সিমির বাবুর অনুষ্ঠানের দিন রাতে সবাই যখন শুয়ে পড়েছে। রিমি সারাদিনের কাজ গুছিয়ে ক্লান্ত! চেঞ্জ করে যাস্ট শুতে যাবে, শোয়েব এসে হাজির।
ডার্ক ইয়েলো সূট্যের সাথে ভেতরে সাদা শার্ট! ক্লিন শেভড! ফুরফুরে চেহারা! গায়ের রং যেন ঝকঝক করছে লাইটের মত। মনে হচ্ছে, এইমাত্র রেডী হয়ে এসেছে…. সেজেগুজে একদম…. রিমির তাকিয়েই কান্না পেয়ে গেল। মানুষটা এত ভালো আছে অথচ রিমি এই এতদিনে একবেলার খাবার কি ঠিক করে খেতে পেরেছে?
রিমির সাথে যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে শোয়েব হেসে বললো,
-বাড়ি এসে শুনি, দাওয়াতে মা নাকি আসতে পারেননি? আমায় পাঠালেন.. খাবার-দাবার কিছু আছে?
রিমি স্পষ্টস্বরে বললো,
-নেই।
শোয়েব আরও স্বাভাবিকভাবে বললো,
-ওকে; কোনো সমস্যা নেই বসছি আমি। কিছু একটা রান্না করে দিলেই হবে…
শোয়েব খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিছানায় বসলো। একটা র্যাপিং পেপারে মুড়ানো প্যাকেট টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বললো,
-এটা, বাবুর জন্য! সবাই কি ঘুমে?
রিমি মাথা নাড়লো। অস্ফুট স্বরে বললো,
-এতরাতে আসাটা কি ঠিক হলো? মা বা আপা কেউ জাগলে?
শোয়েব রিমির দিকে না তাকিয়েই বললো,
-আন্টি জাগলে জাগবে, আমি কি চুরি করতে এসেছি? ইনভাইটেশন ছিল, এসেছি। নাকি এখন দাওয়াত রক্ষা করাটাও অভদ্রতা?
তারপর মনোযোগী ভঙ্গিতে মোবাইল স্ক্রল করতে লাগলো।
রিমি শরীরটা প্রায় টেনে হেঁচরে রান্নাঘরের দিকে গেল। পা চলছে না তাঁর। এতদিন পর মানুষটা ইনভাইটেশন বলেই এলো? মানুষটা এত কেন নিষ্ঠুর? এত কেন যন্ত্রণা দেয় রিমিকে?
রিমি চলে যেতেই শোয়েব জুতোটা খুলে বিছানায় বসলো, রিমি শাড়ি পরেছে আজ। বাহ্! বোনে আর বাবুতে মিলে তো বেশ মজায়ই আছে। শোয়েব আজ সবকিছুর শেষ দেখে ছাড়বে। আজ সে সব মিটমাট করতেই যে এসেছে….. অনেক হয়েছে, আর না।
খাবার দাবার গরম করে রিমি এসে দেখে শোয়েব শুয়ে আছে লম্বা হয়ে।
-উঠুন। এনেছি।
-পার্টিশানের দরজা আটকে আসো রিমি।
-কেন?
-তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে এখন। হুট করে জেগে যদি তোমার মা- আপা কেউ দেখে ফেলে?
-আমি আপনাকে খাইয়ে দিবো?
-হু দিবে; আমি তোমার কথায় রাজি হয়ে তোমার বোনকে দেখাশোনা করতে বিদেশ বিভুইয়ে নিয়ে যেতে পারি, আর তুমি সামান্য ভাত মুখে তুলে দিতে পারবেনা? নাকি ডাকবো আন্টিকে? সত্যিটা বলবো? বলবো যে, তুমি আমার প্রথম বৌ হয়ে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য ইনসিস্ট করছো আমায়…..
রিমির শরীর রাগে থরথর করে কাঁপছে। মানুষটার এত অবনতি হয়েছে। এত? যখন যা খুশি করবে! এত কষ্ট দেবার জন্যই কি রিমির জীবনে এসেছিলো?
রিমি ভাতের পাতে তরকারি নিয়ে মাখাতে লাগলো, শোয়েব মুখ বাড়িয়ে হা করলো….
-একটু কাঁচামরিচ ভেঙ্গে দিও তো সাথে রিমি..
-খাওয়া শেষ করেই আপনি চলে যাবেন। পায়ে ধরি আপনার।
শোয়েবের খাওয়ার শেষে রিমি সব গুছিয়ে রেখে এসে দেখে শোয়েব আরাম করে কাঁথা জড়িয়ে বিছানায় শুয়েছে। আঁচলের কোণে হাত মুছতে মুছতে রিমি বললো,
-আপনি যাননি এখনো?
-ওহ, চলেই যেতাম। বললে পায়ে ধরবে, পায়ে ধরোনি যে তাই যাই নি……
শোয়েব পা শোয়া থেকেই পা উচিয়ে ধরলো রিমির দিকে!
রিমির জমে থাকা অভিমান ভেতর থেকে আগুন হয়ে বেড়িয়ে এলো এবার।
শোয়েবের হাত ধরে টেনে বললো,
-এক্ষুণি যাবেন আপনি, এক্ষুণি। কোনো কথা নেই আমার, আপনার সাথে!
রিমির টানে শোয়েব একচুলও নড়লো না।
-কথা তো তোমার সাথে আমারও নেই রিমি। যেদিন থেকে তুমি তোমার বোনকে নিয়ে ভাবছো, সেদিনই ফুড়িয়ে গেছে। আজ তো আমি হিসেব চুকাতেই এসেছি। হয় চাকরি করবো, নয় জেলের ঘানি টানবো।
-মানে?
-মানে হলো…
শোয়েব উঠে দাঁড়ালো। আরও দ্বিগুণ রাগে হেঁচকা টানে রিমির পিঠের দিকে কোমড়ের কাছে বাঁ-হাতটা দিয়ে ধরে টেবিলের ধার ঘেঁষে রিমিকে শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
-কি চাই তোমার? অশান্তি? তাই তো? অশান্তি করতেই তো এসেছি। সহজভাবে তো তোমার কিছুই ভালো লাগেনা….. এই এতটা দিনে আমি কি একমুহূর্ত চাকরি করতে পেরেছি? নিজে তো দিব্যি… এই বোনদের নিয়ে এতসব আইডিয়া তোমার মাথায় আসে কোথা থেকে? বলোতো?
শোয়েব, রিমির ঠোঁটের কাছটায় ঠোঁট এগিয়ে নিলো। রাগে ঠোট কাঁপছে শোয়েবের। রিমি মুখটা একটু এপাশ করে বাঁ-হাতটা নিজের ঠোঁটের উপর রেখে চোখ বন্ধ করলো। শোয়েব ডানহাতে রিমির গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
-ঠিক কোন কাজটা করলে তুমি শুধু আমার কথাই ভাববে আর পৃথিবীর কারো কথা ভাববেনা বলোতো? ঠিক কিভাবে তোমাকে মার্ক করলে, তুমি…..
রিমির চোখের কোণে পানি। অভিমানে আর প্রচন্ড অনুরাগে মিশে বিধ্বস্ত সে। এই মানুষটা তাকে কেন এত তোলপাড় করে দেয়? কেন? নিজেকে যে ধরে রাখা যায় না?
শোয়েবের হাতঘড়িটায় রিমির বিণুনি আটকে গেছে পিঠে। ব্যাথা লাগছে। টেবিলে রাখা স্টীলের পেনস্ট্যান্ডের ধারটায় লাগছে রিমির কোমড়ের কোণটা। রিমির দু-পায়ের পাতার উপর ভর করে শোয়েব দাঁড়িয়েছে। পেছন দিকে বাঁকা হতে হতে রিমি ব্যাথায় কুঁকড়ে গিয়ে বললো,
-লাগছে খুব… কোমড়ের কাছটা কেটে গেছে বোধহয়।
-তুমি দাওয়াত করবে, রিজওয়ান আসবে, শাড়ি পরে সেজেগুজে ভাত বেড়ে খাওয়াবে, ব্লাউজের হুক খুলে রাখবে…. তাহলে আমি কে? আমি কে?
শোয়েবের নিঃশ্বাসে যেন আগুন বেরোচ্ছে। চোখ লাল টকটকে হয়ে গেছে।
রিমির চোখের পানি এবার গাল গড়িয়ে পড়লো।শোয়েবের কপাল ঘেমে একাকার। ঠোঁটের উপর থেকে হাত সরিয়ে রিমি কোমড়ে হাত দিলো। কেটেই গেছে বোধহয় কোমড়ের কাছটায় একটুখানি…..
রিমি হাত সড়িয়ে নিতেই শোয়েব গভীর আবেগে আর তীব্র জেদের চুমু খেলো… চুমুতে রিমির ব্যাথা আর অনুরাগ যেন শতগুণ হয়ে গেল! আর কাছে থাকা যাবে না মানুষটার, ভেসে যাবে সে একদম…
রিমি পা ছাড়িয়ে নিয়ে কোনোমতে নিজেকে সরিয়ে নিলো একটু। অনেকটা কেটে গেছে তার….. রক্ত…..
শোয়েবের সেদিকে ভ্রুক্ষেপও নেই। রাগী চোখে একদৃষ্টিতে রিমির দিকে তাকিয়ে সে…….
-আমি মোটেও সেরকম করিনি, শোয়েব ভাই। চেঞ্জ করতে নিচ্ছিলাম। আপনি এলেন, ভুলে গেলাম…
শোয়েব রিমির পেছনের হুকটা টেনে ধরে বললো,
-এটা? এটা কি? আমি কিছুই বুঝি না ভাবছো? তোমার আসলে টার্গেট হলো, পৃথির সাথে আমাকে বাইরে পাঠিয়ে রিজওয়ানকে বিয়ে করা… দুই বোনের দুই গতি হলো….. নাহলে এতদিনেও কেন রিজওয়ান এ বাড়িতে ঘটা করে দাওয়াতে আসে?
রিমি অধৈর্য্যভাবে এবার শোয়েবকে দু-হাতে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে বিছানায় এসে বসলো,
-ওহ্! তার মানে এতদিন পরে রিজওয়ান সাহেবের ব্যাপারেই আসা হয়েছে? তাইতো বলি, বন্ধ যোগাযোগ……
শোয়েব ঘেমে চুপচুপা। স্যূটটা খুলে ছুঁড়ে ফেললো।
-ফ্যান ছাড়ো, রিমি।
পেছনে হাত দিয়ে ব্লাউজের হুকটা রিমি আটকে নিলো নিজেই। আঁচলে গাল মুছতে মুছতে বললো,
-পারবোনা।
শোয়েব এসে রিমির গা ঘেঁষে বসলো। রিমির বাঁ হাতটা পেছন মুড়িয়ে অন্য হাতে শাড়ির কুচিটা টেনে ধরলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
-অই হেইট শাড়ি। সমস্ত বেয়াদব পোশাক…. আমায় একরকম দমবন্ধ করে মারবে, আর নিজে? তুমি কেন এরকম করছো রিমি? বুঝতে পারছোনা কেন? সব পানির মত সহজ। আমায় কেন এমন পরীক্ষা করছো?
শোয়েব রিমিকে ধরে দু-হাতে ঝাঁকি দিলো। তুমিই আমার সব, কেন বুঝোনা? পৃথি কেউ নয়, সে ছিলোই না কখনো……
রিমি নির্লিপ্ত।
শোয়েব এবার জোড়ালো চিৎকারে ডাকলো,
-আন্টি, আন্টি আন্টি, আমি শোয়েব। একটু আসবেন…..
রিমি দু-হাতে শোয়েবের মুখ চেপে ধরেছে ততক্ষণে…
নাসিমা বিব্রত ভঙ্গিতে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে এলেন।
রিমি শোয়েবের কাছ থেকে সড়ে দাঁড়ালো।
শোয়েব হাত জোড় করে কাতর ভাবে বললো,
-আন্টি, একটা হুজুর আনিয়ে এখনি এই পাগলিটার সাথে বিয়ে পড়িয়ে দিন না… এ আমাকে মেরে ফেলবে নাহলে। আপনার মনে আছে আন্টি, ওই যে এক রাত্তির রিমি বাড়ি ফেরেনি, সে রাতেই গো ধরে পড়েছিলো বিয়ে করতে। আজ আবার ফোন করে আমাকে…. এই দেখুন কোমড় কেটে ফেলেছে নিজেই… বলছে, আমি বিয়ে না করলে কেটে নিজেকে দু-ভাগ করে ফেলবে।
নাসিমা হতভম্ব দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়েই রইলেন।
(চলবে)
#তৃধা_আনিকা