রোদ্দুরের_বৃষ্টি #পর্ব_৩৮

0
328

#রোদ্দুরের_বৃষ্টি
#পর্ব_৩৮

রিমিকে দেখেই শোয়েব একটা মৃদু চিৎকার দিলো,
-ও মাই গড রিমি! তোমার পেট তো অনেক ফুলে গেছে! পেট কি আরো বড় হবে? আমার তো খুব ভয় লাগছে দেখে। উহুউহুউহুহুহুহু…. ব্যথা করে রিমি?
শোয়েবের মুখভাবটা ভয়ার্ত দেখাচ্ছে।
রিমি দাঁড়ানো ছিল, ডেস্কের পিছনে গিয়ে বসলো! শোয়েব তখনো মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। শোয়েবের এমন আচমকা আসাতে রিমি মোটেও চমকায়নি। সে জানতো মানুষটা হুট করেই আসবে।
-কি কান্ড ঘটালে বলো তো? কত ধরনের কনট্রাসেপটিভ পাওয়া যায় এখন। তুমি কি একটাও নিতে পারলে না? তোমার কি হবে বলো তো?

রিমি লজ্জায় লাল নীল হতে লাগলো। এই মানুষটার এমন মাথা ঠিক নেই কেন? দোকানে লোকজন কাজ করছে, কাস্টমারও আছে। কথাগুলো যে বলছে, শুনতে পেলে! এরকম বলার কি আছে? রিমির এটা ছ-মাস শেষের দিকে। পেট তো বড় দেখাবেই! কথার কি ছিরি! পেট ফুলেছে…
শোয়েব মাথা থেকে হাত নামিয়ে ডেস্কে হাত রেখে দাঁড়ালো! রিমি মাথা নিচু করে নোটপ্যাডে হিসেব দেখছে। নিজেকে সামলাচ্ছে। শোয়েব ভাইকে দেখেই এত মাথা ঘুরছে তাঁর!
-এটা তুমি কেন করলে রিমি? আমরা দুজনে কোথাও বেড়াতে যেতে পারলাম না। ইভেন ভালো করে এক বিছানায় ঘুমানোও হলো না। তুমি মেহমান নিয়ে এলে এর মাঝে? আমার সব বন্ধুরা চুটিয়ে প্রেম করলো, এখন প্ল্যান করে বিয়ে করছে। হানিমুনের বিশাল প্লান। আর আমার কপাল দেখো… প্রেম হলো ভাল্লুকের সাথে, বিয়ে হলো হুট করে, বাচ্চা… কত স্বপ্ন ছিল… ঘন সন্ধ্যার বাতাসে বিচের বালিতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে দুজনে গড়াগড়ি করবো। তুমি পরবে লাল জামা.. আমি লাল শার্ট….
-প্লিজ একটু আস্তে বলুন।
শোয়েব গলার স্বর নামালো,
-আমার বৌ দেখো এখন তুমুল অসুস্থ। সেবা যত্ন তো কিছুই পেলাম না! বরং বৌয়ের জীবন নিয়েই টানাটানি।
শোয়েবের মুখের ভাবটা অটোমেটিকেলি করুণ হয়ে এলো। কেঁদেই না ফেলে…. কর্মচারী মেয়েগুলো আড়চোখে ব্যাপারটা দেখে মজা পাচ্ছে। রিমি বিব্রতভাবটা এড়াতে এবার কথার প্রসঙ্গ পাল্টালো!
-আপনি হঠাৎ এলেন যে? আসার কথা ছিল?
-হুট করে আসা ছাড়া কি, উপায় আছে? কোনো ছুটি ফুটি নেই, এখন বলছে আমায় অধিদপ্তরে ডাকবে!এতগুলো কাজ আর কাজ! আরো দুটো ফরেন ওয়ার্কশপে ডেকেছে নেক্সট ইয়ারে!
-মাঝে মাঝে দেখছি পেপারেও ছবি আসছে আপনার! কদিন পর তো মনে হয়, আপনাকে টেলিভিশনের নিউজেই দেখতে হবে, যা ব্যস্ততা বাড়াচ্ছেন।
-আমি ব্যস্ততা বাড়াচ্ছি?
রিমি সহজভাবে বললো,
-হ্যাঁ, কাজ করলেই কাজ। কাজ না করলেই নেই। আপনার মত আরো অনেকেই তো এই জব করছে। নিজের উপজেলা উপজেলা করে করে তো আর মরে যাচ্ছে না!
শোয়েব রেগে গেল। রিমির ভালো লাগতে শুরু হলো। মানুষটা রাগলে কেমন লাল হয়ে যায়। নরমাল শোয়েব ভাই থেকে এই রাগী শোয়েব ভাই রিমির বেশি পছন্দের।
-তুমি আমায় যা বলছো তা যে এথিকেল্লী ঠিক না জানো তো? আমি আমার দায়িত্বে নিষ্ঠাবান। ভালো করে শুনে রাখো, ফিউচারে এমন কথা বললে তোমায় খেয়ে নেবো আমি! মাইন্ড ইট.. বাওঠা মেয়ে…
-এত কাজ করে লাভটা কি?
-লাভটা কি মানে? দেশের আর দশটা মানুষ আমায় দেখে বদলাচ্ছে। দুদক আমায় অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। মিনিস্ট্রি থেকে এত এত শুভেচ্ছা! সিনিয়র অফিসাররা পিঠ চাপড়ে বলে, ‘ইউ আর এ জেম শোয়েব। তোমার কাজ করা দেখলে, জীবনটা ব্যাকওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে আবার কাজ শুরু করতে মন চায়, বুঝলে?’ কতবড় কমপ্লিমেন্ট এটা আমার জন্য ভাবতে পারছো? তুমি জানো, আমায় এ বছরের “উন্নয়নের ফেরিওয়ালা” এওয়ার্ডটা দিচ্ছে। এ বছরের ডিসেম্বরে দিবে। কত ইচ্ছে ছিল তোমায় সাথে নিয়ে যাবো। প্রাইম মিনিস্টার নিজে থাকবেন! আচ্ছা, ডিসেম্বর নাগাদ কি বাবু হয়ে যাবে? এত পেট ফোলা নিয়ে যাওয়া তো রিস্ক।
-আমি কি করে বলবো শোয়েব ভাই?
-ডেট কবে তোমার?
রিমি জবাব দিলোনা। শোয়েব শার্টের বুকের বোতামটা খুলে কলারটা পেছন টেনে দিলো। চেয়ারটা টেনে ফ্যানের সোজাসুজি বসলো।
-রিমি, একটা এসি লাগাও তো দোকানে। বড্ড গরম!
-লোক বলা হয়ে গেছে, নেক্সট উইকে লাগিয়ে দিবে। আপনি হঠাৎ এলেন যে? কেন?
-বাবা জরুরী করে কি পার্টি অর্গানাইজ করবেন বললেন। লীনা ভাবি ফোন করে অস্থির করে তুললেন, তাই… আমি অবশ্য উইথাউট এনি নোটিশে এসেছি।
-এই পার্টির কথাতো আমায়ও বললেন, আমি তো এখনো জানাইনি কিছু।
-মানে?
-মানে হলো, তিনি তো নতুন বাবা-মাকে কনগ্রাচুলেট করতে চাইছেন। আমার তো মনে হয়, তা সবচেয়ে ভালো হয় বাবু হয়ে যাবার পর করলে। একসাথে সবার ওয়েলকাম হয়ে গেল। তাছাড়া আমার শারীরিক যা অবস্থা… পার্টি বমি করে ডুবিয়ে দিবে মনে হচ্ছে।
-সেটাও তো করা যায়.. বাবার পাগলামি শুধু শুধু।
না করলেও হয়! তুমি লাঞ্চে যাবে না?
রিমি ব্যাগ কাঁধে নিতে নিতে বললো,
-বাসায় চলুন। এখনি যাবো।
শোয়েব বসা থেকে না উঠেই বললো,
-এখন তোমাদের বাসায় যাবো না রিমি। আমি ঢাকায় এসে সোজা তোমার বুটিকে এলাম, বাসায় যাইনি এখনো। আগে বাসায় যাবো, ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো, সন্ধ্যায় আসবো। তুমি বরং আমার সাথে চলো।
রিমি ব্যাগটা কাঁধ থেকে আবার নামিয়ে রাখলো!
শোয়েব রিমির হাত ধরলো হঠাৎ!
-কাউকে কিছু না বলে আজকের রাতটা ম্যানেজ করতে পারবে? আমি যে এসেছি, বাসায় কেউ জানে না… দারুণ একটা রিসোর্ট আছে ঢাকার একদম কাছেই। প্লিজজ রিমি…
রিমি না করতে যাচ্ছিলো শোয়েব মুখের ভাবটা আরো নরম করে বললো,
-পায়ে ধরি রিমি। বাবুকে বলবার জন্যও তো হানিমুনের একটা গল্প দরকার! আমি প্রাইমারী কথাবার্তা বলে ঠিক করে এসেছি। দারুণ জায়গা! ঘন সবুজের মাঝে বিশাল ঝিলের মত। তার উপরেই ছোট্ট ঘর। কি যে ঠান্ডা ঠান্ডা ভালোলাগা!
রিমি ভীষণ অবাক হলো। যে মানুষটা জোর করে সব আদায় করে, আজ রিমিকে অনুরোধ করছে! তাও আবার সব প্ল্যান করে এসে বলছে। এত কেন অনিভূতি মানুষটার রিমির প্রতি? এত কেন রিমিকে মাথায় করে রাখে?
রিমি হেসে বললো,
-মাকে বলে যাবো আমি। মা সিক্রেট রাখবেন। কিন্তু আপনার মা? তিনি তো…
-আমার মা যদি তোমায় একটু বকে, শুনে ফেলবে। বকা খাওয়াবাবদ টাকা দিবো আমি।
শোয়েব মানিব্যাগ বের করে দেখালো।
-যত বেশি বকবে তত বেশি পেমেন্ট পাবে।
-আপনার সমস্যা হবেনা, ছুটি আছে?
-তুমি রাজি হয়ে গেছ তার মানে আমার ছুটি হয়ে গেছে।
-শুধু এক রাত কিন্তু! আর না….
-আগে তো যাই… বাসায় ফোন করে বলে দাও। এখনি রওনা হবো। তবে রাতে একটু কষ্ট হবে তোমার। জেগে থাকতে হবে তোমাকে। আমি কিভাবে ঘুমাই না ঘুমাই এর কি কোনো ঠিক আছে? কোথায় হাত ফেলবো, কোথায় পা ফেলবো! তোমার পেটের যা অবস্থা…. উ্ফুউফুফুফু….
-আমায় রাতে জেগে থাকতে হবে?
-হু, তোমার বমি মিশন কেমন চলছে? যত্রতত্র বমি নির্গমন কি এখনো চলছে?
-কমেছে অনেকটা। খাবার সামনে আনলেই বমি, নাহলে তেমন একটা নয়!
-তুমি অনেক বেশী ফর্সা হয়ে গেছ রিমি। কেন? নাকি জন্ডিস বাঁধিয়েছো?
-রোদ বৃষ্টি পুড়ে কাজ করেছি আগে, এখন তো ছায়ায় সারাদিন….
রিমি কথার ফাঁকে সংক্ষিপ্ত একটা প্যাকিং সাড়লো।
-আপনি কি সিলেট থেকে কোনো ব্যাগ ট্যাগ ছাড়াই?
-হুট করে সুযোগ হলো, একটা ফ্লাইট নিয়ে চলে এলাম। অফিস থেকেই তো স্ট্রেইট এয়ারপোর্ট।
-বাব্বা, প্লেনে!
-প্লেনে কি আসতে পারিনা? বৌ ব্যবসায়ী। এতএত টাকা হচ্ছে তাঁর…
-দুপুরে খাবেন কোথায়?
-রেস্টুরেন্টে। কেন?
-আপনি বরং খেয়ে আসুন। ওখানে গেলেই বমি হবে আমার।
-তুমি কি খাবে তাহলে?
-আমি শুধু অরেঞ্জ জেলী খেয়ে বেঁচে আছি। এই একটা জিনিস যা আমি খেতে পারছি।
শোয়েব ভ্রু কুঁচকে তাকালো। একটা ঝিমধরা ভাব নিয়ে রিমিকে দেখলো কয়েক সেকেন্ড তারপর চূড়ান্ত অনিচ্ছা আর বিরক্তি নিয়ে বললো,
-বিশিষ্ট অরেঞ্জ জেলী খাদক সাহেবকে আনছো নাকি? বুঝে শুনে জেলীটাই বাছলো! কই জেলীর বয়াম কি আছে সাথে? দাও…
রিমি ডেস্কের নিচের ড্রয়ার থেকে জেলীর পটটা বের করে দিলো।
-চামচ নাই?
রিমি চামচও বের করে দিলো।
শোয়েব এক চামচ জেলী মুখে নিয়ে বললো,
-তোমার সাথে যতক্ষণ আছি, আমিও জেলী খেয়ে থাকবো। বাবু কেন জানবে তুমি একা কষ্ট করেছো? বাবারও অবদান আছে জানুক। দুনিয়ায় এসে শুনুক, শুধুমাত্র উনার জন্য উনার বাবা জেলী খেয়ে হানিমুন সেড়েছে!
রিমি নিজের দিকে তাকিয়ে হতাশভাবে বললো,
-এই বৌ নিয়ে হানিমুন?
শোয়েব মলিন মুখ করে চামচের পর চামচ জেলী খেতে থাকলো। রিমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। শোয়েব একটা ডার্ক ভায়োলেট প্লেইন শার্টের সাথে অফ হোয়াইট প্যান্ট পরে আছে। শার্টের সিলভার বোতামগুলোকে মুক্তোদানার মত দেখাচ্ছে। মানুষটার চয়েস এতো ভালো কেন? এবার চুলটাও খুব সুন্দর ছেঁটেছেন। মাথার এলোমেলো চুলোগুলো ফর্সা কপালের উপর নড়াচড়ার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে কাঁপছে। লম্বা ঘন ভ্রু যুগলের উপরে ছোট ছোট বিন্দুর ঘাম জমে আছে। রিমির খুব ইচ্ছে করলো চুলগুলো নেড়েচেড়ে ঘাম মুছে দেয়। কিন্তু এখানে তা সম্ভব নয়!
শোয়েব পটের পুরো জেলীটা শেষ করে নিয়ে বললো,
-আই এম ডান রিমি। টিস্যু হবে? হাত মুছবো।
রিমি টিস্যু বক্সটা সামনে ঠেলে দিলো।
-চাবি নিয়েছো গাড়ির? তোমার ড্রাইভারকে বলে দাও তুমি ফোন না দেওয়া অবধি ছুটি।
-গাড়ি হবে না শোয়েব ভাই, ডেলিভারি আছে অনেকগুলো। একটু এদিক সেদিক হলে বিজনেস খতম। বাকির আর কথার উপর বিজনেস চলে আমার।
শোয়েব রিমির হ্যান্ড ব্যাগটা হাতে নিতে নিতে বললো,
-আমার কিনে দেওয়া গাড়ি আর তুমি আমাকেই দিচ্ছো না। এর কঠিন শাস্তি কিন্তু তুমি পাবে!
রিমি হেসে বললো,
-কি ব্যাপার বলুন তো? আজ আপনি এত নরম স্বরে কেন কথা বলছেন? একবারও যে বকলেন না!
আপনি বাইরে গিয়ে ট্যাক্সি ডাকুন, আমি যাস্ট আসছি।
শোয়েব মনে মনে বললো, “আর বকা, শরীরের কি যে হাল করেছো তুমি! একটা মানুষ এই শারীরিক অবস্থায় কি করে এত পরিশ্রম করতে পারে কে জানে? দুটো দিন তোমায় নিয়ে গিয়ে একটু রেস্ট না দিলে হচ্ছে না”
শোয়েব লজ্জিতভঙ্গিতে পকেটে হাত দিলো। রিমিকে কনগ্রাচুলেট করতে সে রিমির জন্য ছোট্ট উপহার এনেছে, একটা ছোট্ট সোনার লকেট। লকেটে খোদাই করে সে বাবুর নাম ডিজাইন করিয়ে এনেছে। ছেলেমেয়ে যাই হোক শোয়েব তাঁর নাম রাখবে ‘মিশু’! রিমির ‘মি’ আর শোয়েবের “শো”।
কিন্তু সমস্যা হলো, রিমিকে হাতে হাতে এটি দিতে লজ্জা করছে শোয়েবের। রিমি এসেই বললো,
-ট্যাক্সি পাননি? তাই বলে এত রোদে দাঁড়িয়ে?আপনি ভেতরে গিয়ে বসুন শোয়েব ভাই। আমি ট্যাক্সি ডেকে ফোন দিচ্ছি! উফ্ ঘেমে তো পুরো শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছেন!
শোয়েব খুব সাবধানে লকেটের বক্সটা রিমির ব্যাগে রেখে দিলো।
রিমি ভালো করে ঘোমটা টেনে গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে নিয়েছে। প্রেগন্যান্সির জন্য মায়া মায়া ভাব চলে এসেছে চেহারায়। গাঢ় সবুজ জামার জন্য গায়ের রং আরো মিষ্টি দেখাচ্ছে। কালো বেল্টের জুতোতে পা দুটো হলুদ ফর্সা দেখাচ্ছে। চুলের বিণুনি আজও অর্ধেক খোলা। রিমিকে ঘোমটা দিলে যে এত মিষ্টি লাগে, ভাবেইনি শোয়েব। কপালের দিকটা রিমির বেশি সুন্দর। দুপাশে চুলগুলো এমনভাবে যে কপালটা দেখলেই শোয়েবের এক ঘন্টা যাবৎ চুমু খেতে ইচ্ছা করে।
রিমি ট্যাক্সি থামিয়ে শোয়েবকে ডাকলো।
শোয়েবের মুখ ফসকে অজান্তেই বেড়িয়ে এলো, “পুরাই বাচ্চা মেয়ে, বাচ্চার মা”!
-শোয়েব ভাই, আমরা প্রথমে রেস্টুরেন্টে যাবো। খিদে পেয়েছে খুব আমার। হুট করে খাসির মাংস খেতে মন চাইছে।
রেস্টুরেন্টে রিমি যাচ্ছে, শোয়েবের জন্য। মানুষটার চরম ক্ষুধা পেটে। খাওয়া দরকার।
শোয়েব আনন্দিত গলায় বললো,
-গুড। দেখেছো রিমি, আমার সাথে বেরুতে না বেরুতেই তোমার শরীর কত ইমপ্রুভ করেছে। খেতে ইচ্ছে করছে…. একটু পর দেখবে, বমিও বন্ধ হয়ে গেছে।
রিমি শান্ত ভাবে শোয়েবের দিকে তাকালো।
-আপনি যেখানেই যান, সব ইমপ্রুভ করে যায়। উন্নয়নের ফেরিওয়ালা বলে কথা!
শোয়েব রিমির গা ঘেঁষে রিমির কোমড় জড়িয়ে নিয়ে বসলো।
রিমি শোয়েবের কাঁধে মাথা রাখলো। শোয়েবের বাম হাতটা গালে ছুঁইয়ে নিয়ে বললো,
-আপনার কারো উপর রাগ হয়না?
-শুধু তোমার উপর হয়। এই যে তোমার কোনো চাওয়া নেই, জোরজারি নেই, আবদার নেই। আমি বললাম, রিসোর্ট যাবো, তুমি সাথে সাথেই চলে এলে। শপিং নেই, রেডী হওয়া নেই, চয়েস নেই, কেয়ার চাই না তোমার, কনসার্ন চাই না তোমার, এত কেন বিশ্বাস আমার কথায়? অন্য মেয়েদের মত কেন নও তুমি?
-অন্য মেয়েদের কাছে আপনার মত শোয়েব তো নেই। তাই তাদের চাইতে হয়। আপনি উজার করেই দিচ্ছেন আমায়!
শোয়েব ফট করে রিমির মুখ তুলে ধরলো,
-এই, আমাদের ছেলে হবে।
-মানে, মানে হলো। আমি এক্ষুণি শুনলাম। মানে কানে বাজলো, ছেলে গলায় কেউ আমায় বাবা বললো। সত্যি….
রিমি মিষ্টি করে হাসলো। গা গুলাচ্ছে তাঁর। রেস্টুরেন্টে গিয়ে শোয়েবের পাতে বমি না করলেই হয়।

রেহেনা রাগে নাসিমার সাথে গজগজ করছেন। অসুস্থ একটা মেয়ে, রাতে বাড়ির বাইরে থাকবে! কি দরকার এত প্রাণে মরে কাজ করবার? শোয়েবটা যদি জানতে পারে কি হবে?
রেহেনা রিমির সাথে কদিন ধরেই আছেন। নিজের চোখেই দেখছেন, রিমির শরীর অত্যধিক খারাপ।
সমস্যা হলো, রিমি রিমির মতই স্বাভাবিক কাজ করছে। টু শব্দটি নেই, কোনো রেস্ট ফেস্ট নেই। বাড়ি এসে বরং সে রেহানার জন্য মাঝে মাঝে নিজেই রান্না করে। এদিকে শোনা যাচ্ছে, পৃথিলার বিয়ের জন্য নাসিমাকেও ও’র কাছে নিয়ে যাবে। রিমি মায়ের ভিসা করতে সেই কাগজপত্র নিয়েও মহা উৎসাহে ছুটোছুটি করছে। এই মেয়েটা এত কেন অন্যের তরে… শোয়েবের জন্যও তো একটু সিনসিয়ার হবে নাকি?
কবে যে সত্যিকারের বৌমাকে তিনি কাছে পাবেন?

(চলবে)

#তৃধা_আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here