নিনীকা #পর্ব_৯_ও_১০

0
280

#নিনীকা
#পর্ব_৯_ও_১০

#পর্ব_৯

রওনকের ফোনটা কেটেই নিনীকা বড় ফুফুকে ফোন করলো,
—হ্যালো ফুফু,
—-এত রাতে ফোন কেন নিনী?
—ফুফু তুমি এক্ষুণি চলে আসো তো! খুব দরকার।
—ঢং করবি না, রাত কয়টা বাজে দেখেছিস?
—আমার এত বড় একজন হিরোর সাথে বিয়ে, আর তুমি অামায় ধমকাচ্ছো? পাপা সামনেই আছে বলবো?
ফুফু হেসে ফেললেন,
—সকালে আসি?
—না ফুফু। এখনি আসো। আমরা রাতভর হিরোসাহেবের মুভি দেখবো।
মুখের উপর হাত রেখে ফিসফিস করে নিনীকা বললো,
—ফুফু তাঁর নাকি একটা দোষ আছে সেটাও দেখবো। তোমার ড্রাইভার কি জেগে? নাহলে আমি গাড়ি নিয়ে আসি?
—তোর আসতে হবে না, আমি দেখছি।

ফোন রেখে জুঁতোটা হাতে নিতে নিতে নিনীকা বললো,
—-ছাদে শুবো না পাপা, ফুফুর সাথে সারারাত তোমাদের জামাইর মুভি দেখবো।
নিনীকার পাপা বিস্মিতভাবে বললেন,
—জামাইটা কে?
নিনীকা হাই তুলতে তুলতে বললো,
—রওনক রাজ!
পাপা হেসে ফেললেন। নিনীকার গাল টিপে দিয়ে বললেন,
—তুমি যে একটা পাগলী, সেটা কি জানো মামণি?
নিনীকাও তাঁর পাপার গাল টিপে দিয়ে বললো,
—বিসিএস এবার আমি দিচ্ছি না পাপা। মন দিয়ে, সময় নিয়ে বিয়েটা করবো। তাকেও বলো, শ্যূটিং থেকে যাতে ছুটি টুটি নেয়। জীবনের সবথেকে সুন্দর অধ্যায়ের নাম বিয়ে। সো নো হেলাফেলা।
পাপা হাসলেন।
—আমি যাই পাপা। তুমি কি নামবে এখন?
পাপা ঘড়ি দেখতে দেখতে বললেন,
—আরও কিছুক্ষণ থাকবো মামণি। গুড নাইট!
নিনীকা অনুরোধের গলায় বললো,
—মা’কে পাঠিয়ে দিই? শি ইজ ভেরি লোনলি পাপা!
নিনীকার পাপা দৃঢ়কণ্ঠে বললেন,
—নো।
নিনীকা যেতে যেতে বললো,
—আমার বিয়ের পর যদি এভাবে মায়ের উপর রাগ করে থাকো তখন আমি কঠিন অভিমান করবো।কঠিন! তোমাদের জামাইকেও আসতে দিবো না।

নিচের ঘরে এসেই নিনীকা দেখলো, দাদীমা ডাইনিং টেবিলে; মা’ও সাথে! নাসিদা খালা ধমক খাচ্ছেন।
নিনীকা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
—ব্যাপার কি মা? কি হয়েছে?
—নাসিদার চাকরি নট। একে এক্ষুণি বিদায় করে দেয়া হচ্ছে।
—তাই নাকি? নাসিদা খালা, এতোদিনে তুমি মুক্তি পেলে তাহলে! কনগ্র্যাচুলেশনস!
দাদীমা ধমকের গলায় বললেন,
—এর পেটে কোনো কথা থাকে না। আমরা সারাদিন পরিকল্পনা করে তোকে চমকে দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম আর সে কিনা তোকে বলে দিলো!
—কি বলে দিলো?
—তোর বিয়ের কথা! তোর মা ১৫পদ রান্না করলো।তোকে খেতে দিয়ে চমকে দিবে। অর্ডার দিয়ে কেক আনা হলো, এই দ্যাখ কেক খেয়ে কি অবস্থা করেছে?
—কেক কি আমি একলা খাইছি? সোলায়মান ভাইও খাইছে। হেরে ডাকেন।
নিনীকা অবাক হয়ে বললো,
—বিয়ে মানে? কার বিয়ে?
মা আর দাদীমা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন।
—বলছো না কেন? কার বিয়ে?
—তোকে নাসিদা বলেনি কিছু?
—নাসিদা খালার সাথে তো আমার দেখাই হয়নি।এসেইতো আমি উপরে চলে গেলাম। কি নাসিদা খালা, দেখা হয়েছে?
নাসিদা খালা রাগী রাগী গলায় বললেন,
—এই মরা মাডির উপ্রে দাঁড়াইয়া কইতাছি, ছুডু মেডামরে আমি কিছু কইনাই।
—বিয়ে কার দাদীমা? প্লিজ কুইকলি বলো।
দাদীমা হাঁফ ছাড়লেন,
—যাক বাবা কেক খেয়ে ফেললে ফেলুক, বিয়ের কথা তো আর বলেনি।
মা উৎসাহী ভাবে বললেন,
—তোর বিয়ে, নায়ক রওনক রাজের সাথে। তাঁর মা নাকি তোকে সেদিন দেখতেই ক্লিনিকে আসলেন। জানিস নিনী, আমি তো ভাবছি বিয়ের সব শপিং ইন্ডিয়া থেকে করবো। বেনারসীর কিছু কালেকশন আমি ওয়েবসাইটে দেখলাম। গয়নার জন্য সাউথ…
দাদীমা বিরক্ত হয়ে গেলেন,
—ঢং! ইন্ডিয়া থেকে করবে। ব্লাউজের গলা দেয় নাকি ওরা? সারা পিঠ উদাম! নাসিদা তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তুইও ইন্ডিয়া যাবি নাকি? যা ছুড়ি নিয়ে আয়, আধখাওয়া কেক কাটুক।
নাসিদা খালা মুখ কুচকে বললেন,
—এখন পারমু না। আগে বিয়ার কথা শুনমু! ও ছুডু মেডাম, নায়ক বেডারে আপনার কেমুন পছন্দ?
—একদম পছন্দ নয়। তাঁর চুমুর দোষ আছে খালা! সে হলো চুমু দূষিত নায়ক।
নাসিদা খালা জিভ কাটলেন।
মা বিরক্ত হয়ে বললেন,
—এসব কি অসভ্যতা নিনী? একজন নামী দামী হিরো আর দুদিন বাদে বর হবে তোর!
দাদীমা বললেন,
—চুমু খেলে কি হয়? ঠোঁট কি চলে যায় নাকি? জায়গার ঠোঁট তো জায়গাতেই আছে, নাকি?
—তাহলে তুমি বিয়ে করে ফেলো দাদীমা। জায়গার জিনিস তো জায়গাতেই আছে!
—নিনী চুপ কর তো, ঠিক করে কথা বল। রেসপেক্ট হার। ডিনারে বস। শপিং এর প্ল্যানিংটা করে ফেলি খেতে খেতে।
নিনীকা মোবাইল হাতে নিয়ে একটু কেক মুখে পুড়তে পুড়তে বললো,
—মজা করছি মা। বড় ফুফু আসছে, আমি ওয়েট করবো। তোমরা ডিনার করে নাও। মা তোমায় কি মিষ্টি দেখাচ্ছে! সেজেছো নাকি পাপার জন্য?
বড় ফুফুর কথা শুনতেই দাদীমা ক্ষেপে গেলেন,
—ভুতের ম্যানেজার কি এখন বিয়ের ম্যানেজার হয়েছে নাকি। মাঝরাতেও বাপের বাড়ি। বান্দর মাইয়া। তাঁর ধমকের গুষ্টিকিলাই আমি। চুল পাকনা সরদারনী একটা। মুখপটরনি সাইল।
—দাদীমা, আজ এলে তুমি কিন্তু শক্ত করে ফুফুকে বলে দিবে আর যেন বিয়ের দাওয়াত ছাড়া না আসে।
—আমি কেন বলবো? তোর পিয়ারের ফুফু, তুই বলবি।
—আচ্ছা বলবো। মা একটু এদিকে আসো তো, আদর করবো।
মা আর দাদীমাকে একসাথে জড়িয়ে ধরে নিনীকা বললো,
—বিয়ের খবরে আমি খুব খুশি। নাসিদা খালা তুমিও বুকে আসো তো!
—না গো আপা। আমার গতরে জিরার গন্ধ। জিরা বাটছিলাম একটু আগে।
—জিরার গন্ধ নিয়েই আসো। তুমি বরং জিরার গন্ধওয়ালা হাতদুটো দিয়ে আমার গাল চেপে ধরো।

বক্তৃতার মত করে নিনীকা বললো,
—তোমরা আমায় এত চমৎকার একটা সারপ্রাইজ দিয়েছো, এজন্য তোমাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে একশোটা চুমু। আমার জীবনের সবথেকে সুন্দর খবরটা দেওয়ার জন্য আমার বিয়েতে সবথেকে দামী শাড়িগুলো তোমরা পাবে।
দাদীমার আবেগ বেশী, তিনি কেঁদে ফেললেন। মা’ও দাদীমার দেখাদেখি কেঁদে ফেললেন।
মাহবুবা মেয়েক চুমু খেয়ে বললেন,
—নিনী তোর একটুও লজ্জা নেই…
—অকারণ লজ্জা আমার কোনোকালেই ছিল না মা।
নিনীকার হাত থেকে কেক খেতে খেতে নাসিদা খালা মনে মনে বললেন, আপা গো আপনের সংসার যেন দুধ-ভাতের সংসার হয়। সাত পোলার মা হোন আপনে। সাত রাজার ধনের চাইতেও বেশি ধন যেন আল্লাহপাক আপনারে দেয়।
সিড়ির কাছে গিয়ে নিনীকা গান ধরলো,
“রোজ বিকেলে আতর ঢেলে তোকে সাজাবোই…
মেলায় যাবো, রিকশা চড়ে বসবি পাশে তুই…
সে ভাবনারা…”
মাহবুবা মেয়েকে থামাতে গিয়েও কিছু বললেন না।
গাক না মেয়েটা, ক’দিন পরেই তো পরের বাড়ি চলে যাবে।

নিনীকার হুট করে মনে হলো, তার ভীষণ ভালো লাগছে, ভীষণ।

#পর্ব_১০

রওনকের মুভি দেখতে বসেই নিনীকা বললো,
—ভালো লাগছে না ফুফু। মুভি বন্ধ! চলো ওর ইন্টারভিউস গুলো দেখি।
—কেন মুভিতে খারাপ কি?
—খারাপ না, এমনিই..
—তোর নায়ককে দেখ, দুমদাম নায়িকা কোলে নিয়ে নিচ্ছে, গুন্ডা মারছে। আমার তো দারুণই লাগছে। এই নাকটা দেখেছিস নিনী, কি খাড়া। বিয়ের পর নাকটা টিপে ধরিস তো!
—ছিঃ ফুফু!
—হিরোর ফুফুশাশুড়ি হচ্ছি। আমি তো ভাবছি, এই বুড়ো বয়সে রিবন্ডিংটা করিয়েই নিবো। ও’র চোখদুটো দেখেছিস, যেন সবসময়ই হাসছে।
—দেখাশোনাটা ভালো হওয়া কোনো ব্যাপার না ফুফু। আমারতো চিন্তা হচ্ছে লোকটার বুদ্ধি নিয়ে। এই যে ধরো আমি ফোন করলাম, সে কি বুঝতে পেরেছে? যদি বুঝেই থাকে, তাহলে সে কেন ব্যাপারটা ঘাটালো না? হোয়াই?
—দু-ঘন্টা হলো ফোন করেছিস, রাত তো আর পেড়িয়ে যায়নি।
—এটা একটা নরমাল আইকিউয়ের ব্যাপার ফুফু! এত সময় কেন লাগবে? পরে যদি দেখা যায়, বোকার হদ্দ!

নিনীকা গভীর চিন্তায় পড়লো। টিভিটা অফ করে ফুফুর মুখোমুখি হয়ে বসে বললো,
—ও ফুফু, সত্যিই যদি এরকম হয়? সে কি ধরতে পারেনি? এত বড় হিরো, দেখা গেল মাথার ভেতরে বুদ্ধি শূন্য!
লম্বা হয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়তে পড়তে ফুফু বললেন,
—গরু টাইপ হলে খারাপ কি? যখনি হাম্বা হাম্বা করবে, মুখে ঘাস ঢুকিয়ে দিবি। ব্যস হাম্বা বন্ধ! তোর রান্নাবান্নার ঝামেলা ঘুঁচলো। গুড নাইট নিনী। বাতি নেভা তো!
এবং প্রায় সাথেই সাথেই পাশ ফিরে বললেন,
—তুই আসলে রওনকের ফোনের অপেক্ষায় অস্থির হয়ে আছিস নিনী। তোর মন চাচ্ছে, রওনক ফোন করুক। জিজ্ঞেস করুক, কৌতুহল দেখাক। কিন্তু তোর আত্ম-অহংকার সেটা স্বীকার করতে চাচ্ছে না। এইজন্য তোর সাব-কনসাশ মাইন্ড যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে সে বোকা। এখন ঘুমো তো।
নিনীকা শকডভাবে হাসলো। সত্যিই কি ফুফুর কথা ঠিক? না না এরকম হতেই পারে না! চেনা নেই, জানা নেই, দেখা নেই, কথা নেই এরকম একজনের জন্য তার মন কেমন করবে কেন? আশ্চর্য!
বাতিটা নিভিয়ে এসে অন্ধকার বারান্দার রেলিং ধরে নিনীকা স্টাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আগে কি কখনো তার এমন ভেতরে ভেঙ্গেছিলো? কই নাতো!

সোহেল ব্যস্তভঙ্গিতে এসে বললো,
—স্যার, কনফার্ম হয়েছে। আপনার ধারণাই ঠিক।মোবাইল নাম্বারটা নিনীকা ম্যামের। স্যার ভাবিকে কি ফোন করে বলবো, আপনি উনাকে চিনতে পেরেছেন?
রওনক পানি খাচ্ছিলো, হাত থেকে পানি ছলকে পড়ে গেল।
—তুমি এর মধ্যে ভাবি ডাকাডাকিও শুরু করে দিয়েছো নাকি?
—ইয়ে মানে স্যার…..
—আমরা দেশে ফিরছি কবে?
—ডে আফটার টুমোরো স্যার।
—তাঁর সাথে একটা ভেরি পার্সোনাল মিটিং ফিক্স করো। একদমই ব্যক্তিগত এবং সিক্রেট। বলবে, উনি চাইলে সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত ২জনকে রাখতে পারে, এর বেশি না। আর মিডিয়া থেকে সেইফ প্লেসটা নিশ্চিত করো।
মা’কে দিয়ে কথা বলাও দরকার হলে।
—আচ্ছা! ডিজাইনার পাঠানোর কথা ছিল স্যার। এনগেজমেন্টের পার্টির ড্রেস এর মধ্যে করে ফেলতে হবে। আমি কি এটাও কানফার্ম করবো?
—বাকি যা খুশি করো সোহেল শুধু মিটিংটা ফিক্স করে নাও আগে। এখনি একটা ফোন করে দেখো। ক’টা বাজে… ওহ্ একটা বাজতে পাঁচ। না থাক কাল করো। এত রাতে জেগে না থাকে যদি?

অথচ নিনীকা কিন্তু সেই সারারাত ফোনের অপেক্ষায় জেগেই ছিল

রওনক স্যার আর নিনীকা ম্যামের দ্য ভেরি পার্সোনাল মিটিং ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে সোহেল পড়েছে বিরাট সমস্যায়। নিনীকা ম্যামের একজন জাঁদরেল ফুফু খুবই ঝামেলা করছেন। ফার্স্টে তিনি বললেন, সাথে শুধু তিনি আ সবেন। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল কিন্তু ঘন্টাখানেক পরেই ফোন দিয়ে বললেন, গেস্ট সেভেনটি থ্রি। সবাই নিনীকা ম্যামের ক্লোজ। বাদ দেয়া যাচ্ছে না। আরো বাড়তে পারে।
এক ঘন্টার মধ্যে এত লোক জেনে গেছে? এই কথা শোনাবার পর থেকেই ক্ষনে ক্ষণে সোহেলের পেট পাঁক দিয়ে উঠছে। সে দৌড়ে বাথরুমে যাচ্ছে, দরজার কাছে যাওয়া মাত্রই মোচড় শেষ! স্যারকে সে কি বলবে?কিভাবে বলবে? এই প্রথম সোহেলের নিজের চাকরিটাকে ভীষণ কঠিন মনে হচ্ছে। এতোদিন সিংগেল রওনক রাজকে ম্যানেজ করতে তাকে মোটেও বেগ পেতে হয়নি কিন্তু নিনীকা ম্যাম আসতে না আসতেই সে কুপোকাত! সোহেল বিড়বিড় করে বললো, “উইমেন আর ভেরি ডেঞ্জারাস ডিজাস্টার”

সোহেলের ভাবনা থামাতে হলো। রওনক স্যার ডাকছেন। এবার তার পেটের সাথে মাথাও পাক দিয়ে উঠছে।
—মিটিং কখন কনফার্ম করেছো? প্রেস যে নট এলাউ ব্যাপারটা কি এনশিওর হয়েছে?
ঢোঁক গিলে আমতা আমতা করে সোহেল বললো,
—একটু প্রবলেম হয়ে গেছে স্যার। গেস্ট একটু বেশি।
—তুমি বলোনি খুবই পার্সোনাল দেখা!
—আসলে স্যার, ম্যামের কিছু ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি মেম্বারও আপনাকে মিট করতে চাচ্ছেন। এরকম হিরো আত্মীয় হচ্ছে, ক্রেজ তো থাকবেই! উনারা একটা ওয়েলকাম পার্টির মতো করতে চাচ্ছেন। এ অবস্থায় “না” করলে তো আনফেয়ার দেখায়।
—গেস্ট বেশি মানে? ক’জন?
সোহেল চোখ বন্ধ করে রোবটের মতো বললো,
—মে বি সেভেন্টি আপ। স্যার তারা ম্যামের কাছের খুব। একচুয়েলি আপনি এত ফেমাস ম্যান, রিলেটিভরা সব এক্সাইটেড। প্রেস্টিজ ইস্যু! এমন অবস্থায় মিটিং ক্যানসেল করলে পুরো ব্যাপারটাই আনফেয়ার হয়ে যায়। অফারটা কিন্তু আমরাই ফার্স্ট করেছি।
—তোমার নিনীকা ম্যাম তো দেখছি, জননেত্রী! তাঁর তো দেখছি বিশাল ভক্তকুল। মা’কে বলেছো এই গুণী জননেত্রীর কথা?
দু হাত কচলে আসামীর মত গলায় সোহেল বললো,
—বলেছি স্যার! তিনি বললেন, আমার পুত্রবধূ সে। দরকার হলে একহাজার লোক আসবে সাথে। সব এরেঞ্জ করো।
রওনক হতাশভাবে বললো,
—কি মেয়েরে বাবা! একটা পার্সোনাল মিটিংকে পুরো জনসভা বানিয়ে ফেললো! দেখি ফোন করো, আমি কথা বলবো।

রওনকের নাম্বার থেকে ফোন দেখে নিনীকা চমকালো খুব। মনে মনে বললো, বাবু মিটিং ফিক্স করতেই পাগল হয়ে গেলে।
নিনীকা খুব মিষ্টি করে বললো,
—হ্যালো! কে বলছেন? আমি কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, নাসরিন সুলতানা বলছি।
রওনক বিব্রত অবস্থায় পড়লো। তার কি বলা উচিত জবাবে?
—আমি রওনক। একটু জরুরী কথা ছিল।
নিনীকার খুব লাগলো বুকে। এত আনন্দ তার কেন হচ্ছে? সে মনে মনে বলল, তোমার জরুরি কথা তো আমি জানি বাবু। সব খাতির জমানোর ধান্দা! ঢং!
মুখে বললো,
—আমি এখন কোনো জরুরী কথা শুনবো না নায়কসাহেব, সব জরুরি কথা জমিয়ে রাখুন। পরে বলবেন। অনেক সময় আছে বলার।
রওনক রেগে যাচ্ছিলো, নিজেকে কন্ট্রোল করলো।
—মিটিং এর ব্যাপারে কথা, এত লোক! প্রেস জেনেই যাবে। নিউজ লিক করে দিবে। আমি চাচ্ছিলাম একটা প্রাইমারী মিট হোক আগে। অফিশিয়াল নিউজটা এনগেজমেন্টের পর সবার সামনে আসুক। মানে আমার কিছু কথা বলার ছিল আপনার সাথে।
রওনককে কমপ্লিট না করতে দিয়ে নিনীকা বললো
—নিউজ হলে হবে। এমনিতেও তো জানবেই সবাই।আমি তো চাই সবাই জানুক। হিরোসাহেব আমাদের প্রথম দেখা… ইট মিনস সামথিং ভেরি স্পেশাল।
—আসলে প্রেসের লোকদের ভরসা নেই! বানিয়ে বানিয়ে এমন সব লিখে দিবে, বলবে চুটিয়ে প্রেম করছি আমরা, ঘুরে বেড়াচ্ছি। ইমেইজের ব্যাপার…
—আপনি এত প্রেস ভয় পান কেন বলুন তো?আমার তো বরং নিজেরই সবাইকে বলতে মন চাইছে।
এছাড়া আমার ফ্রেন্ডসরা পরে আমায় খুব খোঁটা দিবে। বিয়ের মতো আনন্দের একটা ব্যাপার! প্রেসকে বরং জানিয়েই দিন।
নিনীকা গান ধরলো..
“মুখে মুখে রটে যাক আমাদের প্রেমকাহিনী..
অবাক হয়ে দেখুক দুনিয়া, করুক সবাই কানাকানি…”

রওনক ভাবলেশহীনভাবে ফোন রেখে দিলো…..
জামা-কাপড় ছাড়তে ছাড়তে বললো,
—ফোন করে কোনো লাভ হয়নি সোহেল, তোমার মহানেত্রী ম্যাম তাঁর সাঙ্গ পাঙ্গ ছাড়া আসবেন না। নিউজ হবার ভীষণ শখ উনার। ডিজাইনারকে নক করো। বলো এখনি তোমার ম্যামের বাসায় কন্ট্যাক্ট করতে। প্রেস থাকবে, ফটোসহ নিউজ হবে। সো মাথায় রাখবে ডিরেকশান কি দিতে হবে। কোনো বিষয় নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না হয়।
সোহেল তড়িঘড়ি করে ডিজাইনারকে ফোন করতে করতে বেড়িয়ে গেলে

কফির মগটা হাতে করে রওনক বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। আজকের রাত এত অন্ধকার কেন? অমাবস্যা নাকি? আচ্ছা নিনীকা নামের অর্থ কি? অমাবস্যা না অন্ধকার? মেয়েটার সাথে কথা বলতেই রাত এত গাঢ় কালো হয়ে গেলো!

নিনীকা গান গাওয়া শেষ করে দেখলো, রওনক অনেক আগেই ফোন কেটে দিয়েছে অথচ সে খেয়ালই করেনি। ইশ্ বউয়ের গান শুনতে নায়কসাহেবের কি লজ্জা! বুঝি বুঝি সবই বুঝি।
জানালার ধারে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিনীকা আঁতকে উঠলো, বাবারে কি অন্ধকার! একটাও তারা নেই আকাশে। তাদের দুজনের আজ প্রথম আলাপ, রাত তো আলোকিত হয়ে যাবার কথা। অন্ধকার কেন?

(চলবে)

#তৃধা_আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here