#রোদ্দুরের_বৃষ্টি
#পর্ব_৩০_ও_৩১
#পর্ব_৩০
এনামুল সাহেব রিমিকে দেখতে এলেন হাতে একাগাদা ফুল নিয়ে। রিমি দেখেই উঠে বসলো।
-আপনি না এলেও পারতেন। আমি অতটাও গুরুতর অসুস্থ নই কিন্তু।
এনামুল সাহেব স্নেহময় দৃষ্টিতে হাসলেন। তাঁর পরনে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী, মাথায় টুপি। বাবাদের মত দেখতে লাগছে।
-আমার সবথেকে স্পেশাল ক্লায়েন্ট তুমি, যেকিনা কেসের শুরুতেই আমার ফিস শোধ করে দিয়েছে। যার জন্য আমি একমাত্র সন্তানকে কাছে ফিরে পেয়েছি, তাঁর অসুস্থতা নিশ্চয়ই আমার কাছে অনেক বড়! এখন কেমন আছো?
-ভালো, বেশ ভালো। শরীরের দুর্বলতা কাটাতে এরা স্যালাইন নিতে বলছে। তাই….
এরপর ল্যাপটপটা বাড়িয়ে ধরে রিমি বললো,
-এই দেখুন হাসপাতালে শুয়েও আমি দিব্যি কাজ করছি।
এনামুল সাহেব হাসলেন। বেডের অন্যপাশে রাখা টেবিলটাতে ফুলগুলো রাখতে রাখতে বললেন,
-শোয়েবের ফেরার খবরটা আমি তোমায় সামনাসামনি বলতে চাইছিলাম। তুমি হাসো না কাঁদো দেখতে…. খবরটাই এমন যে, ফুল হাতে করে নিজে না এসে দিলে এই খবরের ওজন কমে যেত।
-ও’র অফিস থেকে ফোন করে জানিয়েছে আমায়।
-আমি ভাবলাম, সাররপ্রাইজ দিবো… তাছাড়া লিভ নিয়েছি কয়েকদিনের.. ফ্রি সময় ছিল, এলাম তাই।
রিমি মিষ্টি করে হাসলো, তার ইচ্ছে করছে এনামুল সাহেবের পা ছুঁয়ে সালাম করে। ধন্যবাদ কি করে সে দেয় এই বাবার বয়েসি মানুষটাকে?
-ফ্লাই করবার আগে তিনি ফোন করেছিলেন অফিসে। বাড়িতে ফোন করে নাকি বকে ধমকে একাকার… ও’র মা মেসেজ করে সরি চেয়েছেন আমার কাছে…
-এ কয়দিনে ওখানে তো একবার যাওনি? তাইনা?
-না। কারও ফোন পর্যন্ত ধরিনি। আপনার কথা টু দ্য পয়েন্টে পালন করেছি!
-গুড! শোয়েব তোমায় ফোন করেনি?
-না, তবে ফ্লাইটের টিকিটের ছবি তুলে পাঠিয়েছেন।
-হাজবেন্ড এসে দেখবে বৌ অসুস্থ!
-এর আগেই রিলিজ করে দিবে আমায়। আপনি যে কত ব্রেভলি ওখানের ব্যাপারগুলো হ্যান্ডেল করেছেন… এ বিষয়টা নাকি শোয়েব ও’র অফিসে বলেছে।
-আসলে আমায় তো বেশি কিছুই করতে হয়নি রিমি। বরং ও’র অফিস সব করেছে, শুধু ক্লেইমের পেপারস গুলো আমি রেডী করে দিয়েছিলাম। অত কষ্ট হয়নি কিন্তু… তবে লিগ্যালি একটা হ্যারাসমেন্ট কেইস কিন্তু করাই যেতো ও’র উপর। এট লিস্ট নিজের ধৃষ্টতার একটা শিক্ষার দরকার ছিল পৃথিলার।
-কেইস করে হয়তো ও’কে প্রবলেমে ফেলা যেতো, সত্যিই কি শাস্তি দেয়া যেতো ও’কে? তাছাড়া আংকেল, এখানে আমি আরেকটা থিওরিও ব্যাবহার করেছি…
-থিওরি আবার কি? বোনস্নেহে ছেড়ে দিলে, প্রুফ দিলে সে মেন্টাল পেশেন্ট! এতে করে কি লাভটা হলো?
-লাভ কিছু নেই হয়তো, কিন্তু উপলব্ধি আছে একটা। এই যেমন পৃথি যে ড্রামাটা করলো এতে কষ্ট পেলাম; আমি বিরক্ত আর রাগান্বিত হলো শোয়েব। এই যে, পৃথিকে আমি বিনাসাজায় মুক্তি দিলাম শোয়েবের রাগ হয়তো বাড়লো কিন্তু ডিসিশানটা সে এখন এক্যুরেট নিতে পারবে। পৃথির সে ভালো করবে নাকি চূড়ান্ত মন্দ করবে তা ও নিজেই ঠিক করবে। একজন ক্রিমিনাল মাথার ভেতর ক্রাইম প্ল্যান করলেই তাঁর পুরো শাস্তি হয়না, বরং ক্রাইমটা করা অবধি ল’ কে ওয়েট করতে হয় দন্ড ওয়ার জন্য! আপনার ল’কিন্তু তাই বলে….
-তাও হালকা পাতলা শাস্তি কিন্তু হতো মামণি…. আমার লজিক বলছে ঠিক হয়নি এটা…
-অল্প শাস্তির কি দরকার আংকেল। আর এখন যে সার্টিফিকেটে সে মেন্টালি সিক… এটাও তো কম সাজা নয়। পৃথিলাকে পানিশ করলে তাঁর বাবাও কষ্ট পেতো! অজানা এই মানুষটিকে যাকে বলা হচ্ছে আমার… তাকে কষ্টে ফেলাটা কি ঠিক হতো?
-তোমাকে আগেই বলেছিলাম ‘ল’ পড়লে যাস্ট ম্যাজিক্যালি পারফরমেন্স দিতে পারতে…. তোমার থিওরিগুলো শুনতে অসাধারণ লাগে…. সুস্থ হয়ে বাসায় আসো একদিন মা’মণি সারাদিনের জন্য।
রিমি হেসে মাথা নাড়লো।
-তুমি যে হাসপাতালে সে জানে?
রিমি না সূচক মাথা নাড়লো।
-বলো কি? কালই তো আসছে?
-এর আগেই আমায় রিলিজ করে দেবে।
-একা একাই ভর্তি হলে?
-হুঁ, ডক্টর দেখাতে এলাম। খাওয়া দাওয়া একদম করতে পারছিনা। ডক্টর বললেন, ১২ঘন্টা এনবিএম করে স্যালাইন নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। ভাবলাম আর কাউকে না জানাই। মাকেও বলিনি, শুধু শুধু চিন্তা করবে। আমি তো আর অসুস্থ নই…
-আমাকে জানালে কেন?
রিমি অন্যদিকে তাকালো। চোখ ভিজে আসছে কেন তার? শোয়েবকে ফিরিয়ে আনতে উনার চেষ্টা, ছুটোছুটি, একাগ্রতা…হা হুতাশ… এই যে শোয়েব খুব ইজিলি আর অল্প সময়েই ফিরছে, এটা তো সম্পূর্ণ তাঁরই ক্রেডিট! রিমির বাবা হলে কি এমন করতো?
-গার্ডিয়ান ছাড়াই বেঁচে আছি তো… এই এতটা দিনে আপনি একজন, যিনি দায়িত্ব নিয়ে উজার করে খেটেছেন, আপন মনে হলো খুব…. সেজন্য। আমি সুখের অসুস্থতায় অসুস্থ কাউকে বলতে মন চাইছিলো।
-আমি যেটা করেছি, তা কিন্তু রিজওয়ানের জন্য শুধু।
শোয়েবের জন্যও… বলতে পারো। আমি যতবার ওকে কানেক্ট করছিলাম, ও’ব্যাকুল হয়েছিলো তোমার জন্য। শুধু মাত্র তোমার বোন বলে লিগ্যালি পৃথিলাকে ও শোকজ করেনি। শোয়েবের ব্রডমাইন্ডনেস মুগ্ধ করেছে আমায়।
-আমার কিন্তু সেটা মনে হয়নি একটুও। মনে হচ্ছিলো, আপনি আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছেন, চিন্তা করছেন, নিজের মেয়ের মত…
এনামুল সাহেব এগিয়ে এসে রিমির মাথায় হাত রাখলেন।
-যেদিন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়, আমি সেদিনই বুঝেছিলাম তুমি মা হচ্ছো। ও জন্যই কাঁদছিলে তুমি! শোয়েবের জন্য টেনশানের চেয়ে কষ্ট পাচ্ছিলে বেশি…
রিমি মাথা নিচু করে ফেললো,
-দারুণ অনুভূতি নাকি মা হওয়া… অথচ আংকেল, আমি তো মরেই যাচ্ছি অসুস্থতায়। খেতে পারছিনা, ঘুমোতে পারছি না, পরিচিত প্রিয় জিনিস, খাবার দুর্গন্ধময় ঠেকছে….
-তুমি সবকথা কত সহজভাবে বলে ফেলতে পারো মা, আমি কেন পারিনা?
এনামুল সাহেব ছোট্ট একটা বক্স বের করলেন পকেট থেকে। রিমির হাতে দিয়ে বললেন,
-এটা আমার তরফ থেকে মামণি…
রিমি সানন্দে হাত বাড়িয়ে বক্সটা নিলো।
-সরি, বাঁ হাতে নিলাম। কি এটা? বাহ্ কি সুন্দর চামচ! স্বর্ণের? আমার জন্য? কার জন্য?
-তোমার মধ্য করে যিনি আসছেন, যাকে সাথে করে তুমি এই লড়াইটা একা করেছো, তাঁর জন্য। সে প্রথম যে খাবারটা মুখে তুলবে, এটা দিয়ে যাতে হয়।
রিমি চোখের পানি এবার ধারা হয়ে নামলো।
-রিমি-মা জানো, পরশ পাথরের মত তুমি? কাছে আসলেই ভালো হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। রাগ নেই, ক্ষোভ নেই সব স্বাভাবিক। তুমি কিন্তু বিরাট বড় উকিল হতে পারতে…
-উকিল? গ্রাজুয়েশনই হলো না…. আপনি আবার বলে দেননি তো শোয়েবকে?
এনামুল সাহেব না বোধক হাসলেন।
-কাউকে বলিনি আমি। মা কেও না… কেউ বুঝেওনি, আপনিই কেমন করে জানি বুঝে ফেললেন……
-আর কে বুঝবে বলো? বাকিগুলো তো সব গাঁধা?
-আপারা কেমন আছে?
-সিমি তো মাশাআলাহ, বিরাট মাপের অলস!
সকালে বের হবার আগে দেখলাম, সিমি শুয়ে শুয়ে ব্রাশ করছে। রিজওয়ানকে দেখলাম পানির মগহাতে পাশে দাঁড়িয়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে গেলে নাকি বাবুর ঠান্ডা লাগবে! অথচ শুভ’র যত্নে এদের ধ্যানই নেই….
এনামুল সাহেবের মুখে মিথ্যা বিরক্তির হাসি। তাঁর চোখ বলছে ছেলে, বৌমা নাতি নিয়ে তিনি মহাখুশিতে আছেন।
এনামুল সাহেব চিন্তিত মুখে ঘড়ি দেখলেন।
-খোদা হাফেজ আপাতত। শোয়েব আসুক ডিনারে বলবো একদিন।
এনামুল সাহেব চলে গেলেন।
দরজার কাছে গিয়ে ফিরে তাকালেন। স্মীত হাসলেন।
রিমি একদৃষ্টিতে কাতর নয়নে তাকিয়ে আছে।
-রিমি, আমার জীবনের সবথেকে ইন্টারেস্টিং কেইস ছিল এটা। কোনো অপরাধের তর্ক বিতর্ক নয়, একজন স্ত্রী তাঁর স্বামীকে মুক্ত করার চেষ্টা… তাও এমন একজন ক্রিমিনালের কাছ থেকে যে কিনা তাঁর বোন।
এনামুল সাহেব হাত নেড়ে বেড়িয়ে গেলেন।
রিমি ফিসফিস করে বললো,
-আপনার মত একটা বাবা যদি সত্যিই থাকতো আমার! বুঝিইনি এই এতটা দিনে অভিভাবক শূণ্য আমি… সিমি সত্যিই লাকি, যে আপনাকে শ্বশুর হিসেবে পেয়েছে।
#পর্ব_৩১
শোয়েব ফিরলো যেদিন, রিমি সেদিনকে বুটিকে যায়নি। বাড়িতেই ছিল সারাদিন। কি এক অজানা অনুভূতি হচ্ছিলো…. অজানা আনন্দ আর ঘরছাড়া ভাব।
শোয়েব ফিরে অবশ্য কল দেয়নি রিমিকে। এই কতকটা দিনে কথা হয়নি দুজনের। নীরব যুদ্ধ চলছে।ভালোবাসার অভিমানের যুদ্ধ।
শোয়েব ফেরার পর ওদের বাড়িতে কি হলো রিমি জানেনা। কিন্তু লীনা এলো সন্ধ্যার দিকে রিমিদের বাড়িতে। রিমি শুয়েছিলো।
রিমির বিছানার পাশেই বসলেন। হাসিমুখে বললেন,
-তোমার অনারে ছোট্ট একটা পার্টির মত করেছি, খুব কাছের কিছু রিলেটিভের সাথে মিট করিয়ে দিবো তোমায়। এখন তো তাদের সাথে একটা অফিশিয়াল ইনট্রোডিউস তো মাস্ট হয়ে গেছে। সবাই তো জেনেছে…
রিমি উঠে বসলো।
-চা খাবেন?
-নো থ্যাংকস… বাড়িটা তো বেশ গুছিয়ে নিয়েছো! রুম এড করেছো নাকি?
-হু এ পাশে….
লীনা চোখ ঘুড়িয়ে চারদিক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলো!
-তুমি রেডী হয়ে নাও রিমি, আমি বসছি…
রিমি ওড়নাটা ভালো করে মুড়িয়ে নিলো গায়ে।
-আমি যেতে পারবোনা ম্যাম। আজ সন্ধ্যায় আমার একটা হিউজ ডেলিভারি আছে। শরীরটাও খারাপ খুব। বুটিকেও যাইনি।
লীনা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। রিমি তাকে জেনেবুঝেই ইগনোর করছে। হ্যান্ডব্যাগটা হাতে নিয়ে লীনা উঠে এসে রিমির হাতদুটো চেপে ধরলো,
-মন থেকে সরি বলছি। রিয়েলি। আমি শুধু পৃথিকে সুযোগটা দিয়েছি হয়তো। কিন্তু পৃথি যে এত ডেসপারেট হয়ে যাবে হু নোওস? দেখো, তুমি যদি লজিক্যালি চিন্তা করো, এত অপরাধী লাগবেনা আমায়। শোয়েব কিন্তু ফিরতোই। হয়তো সময় লাগতো। তুমি তাড়াহুড়ো করেছো এত… আই এম হার্টিলি সরি রিমি….
রিমি জবাব দিলোনা।
-আমি কিন্তু পার্টিতে ওয়েট করে থাকবো তোমার জন্য। আমি আমার কথা রাখতে চাই, সবার আগে তোমাকে ওয়েলকাম করতে চাই! শোয়েবও ওয়েট করে আছে।
লীনা বেড়িয়ে যেতেই রিমি ফোন করলো শোয়েবকে।
এবার অন্ততপক্ষে কথা হোক। আর কত অপেক্ষা?
শোয়েব ফোন কেটে দিলো। কথা বলবে না সে! কোনো কথা নেই। রিমির জন্যই সে পৃথিলাকে কিছু করতে পারেনি… কি অস্বাভাবিক মানসিক চাপটাই না সৃষ্টি করেছিলো… ছিঃ… অথচ রিমি? রিমি ক্লেইম করলো, তাঁর পাগল বোন, তাঁর স্বামীকে কিডন্যাপের মত…. এটা কিছু হলো?
রেহেনা চুপচাপ ছেলের পাশে এসে দাঁড়ালেন।
-তুই কি নিচে যাবি না একবারও? গেস্টরা জিজ্ঞেস করছে বারবার!
শোয়েব জবাব না দিয়ে তাকালো শুধু। বড় কাকুতির সে চাহনি। তাঁর দৃষ্টি বলছে, মা তুমি তো অন্ততপক্ষে রিমির পাশে থাকতে পারতে সে সময়ে?
রেহেনা নিজেকে সামলালেন। ছেলের কাছে গিয়ে পিঠে হাত রাখলেন।
-সেই ভোররাতে এলি, তখন থেকে এক ফোটা পানিও খাসনি। খাবার কি দোষ করলো?
শোয়েব এবার মায়ের দিকে ফিরেও তাকালোনা।
রেহেনা গভীর ব্যাথায় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। দুনিয়া ভেঙ্গে কান্না পাচ্ছে তাঁর। তাঁর দুটোছেলেই তাকে বুঝলো না? হুহ…
-জানিস শোয়েব? এ বাড়িতে যেদিন বিয়ে হয়ে এলাম, সেদিন রাতে তোরা যেটাকে বাসর রাত বলিস.. তোর বাবা বিছানায় শুতে এসে বললেন,
মাথায় উকুন টুকুন নেই তো? থাকলে আলাদা শুতে হবে! উকুনে আমার অস্বস্তি…. উকুন যদি মাথায় চলে আসে? নতুন বৌ আমি ভয়ে কাঁপতে থাকলাম।
সেদিন রাতে আমি শুলাম আমার নানিশাশুড়ির সাথে। সেদিনই আমি বুঝে গেলাম আমার জায়গা কোথায়?
-মা প্লিজজজজ, কনভিন্সের একদম চেষ্টা করবে না।
রেহেনা তাও বলতে থাকলেন, ছেলেকে তাঁর অপারগতা বলতে চান তিনি আজ…
-আমি হলাম পুতুল মানুষ! ওই যে পুতুল নাচে যে খেলা দেখায়না, আমি তা! এই বাড়িতে আমি শুধু পুতুলের মত সবার কথায় নাচি। কেউ আমার কথা শুনে না। বলতে পারিস, নিরাপদ আশ্রয় ভালোবাসি বলে কোনোদিন প্রতিবাদ করিনি। রিমি সাহসী মেয়ে, আমি জানতাম সব সামলে নেবে…..
-তবুও তো মা, তুমি তো ওকে ইনফর্ম করতে পারতে যে তুমি আছো… শুধু সিচুয়েশান তোমার হাতে নেই… ছোট্ট একটা কেইস.. কিন্তু রিমি তো একা ছিল….
রেহেনা ছেলের কাঁধে মাথা রাখলেন। কান্নাজড়িত ব্যাকুল গলায় বললেন,
-রিমির বিজনেসে কাজ করতে দেবে আমায়? আমি একাউন্টস দেখবো। হিসাবে যে আমি খুব পাকা, এর প্রমাণ তোর বাবার সংসারে তো বারবার পেয়েছিস, তাইনা?
রেহেনা কেঁদে যাচ্ছেন.. মুক্তি চান তিনি, সবার কাছের জবাবদিহিতার যুদ্ধ থেকে মুক্তি। ছেলের যুদ্ধ, ছেলের বাবার যুদ্ধ, ছেলের বৌদের যুদ্ধ, সবথেকে মুক্তি চান তিনি। সব তুফানে তাল মিলিয়ে ছাতা ধরেও তিনি কেন সবার কাছে দোষী? এই সংসার কি দিলো তাকে? খালি জবাবদিহিতা?
শোয়েব মায়ের মুখটা তুলে ধরলো দু-হাতে,
-রিমি অসাধারন মেয়ে মা। আমি সত্যিই ওকে সারাজীবন ভালোবাসতে চাই। আর সেটা তোমাদের সাথে নিয়ে। বাবা আনতে না গেলে ও’ আসবে না মা! ও পরিস্থিতি সামলাতে জানে… বাবাকে বলো মা… ও’ অনেক যোগ্য মা….
শোয়েব এবার শব্দ করে কাঁদতে লাগলো! নাসিমা অস্থির হয়ে ছেলের মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।
(চলবে)
#তৃধা_আনিকা