বৃষ্টির_রাতে #রূবাইবা_মেহউইশ (৭)

0
351

#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(৭)

কলমির লতায় জড়ানো বালুর ওপর চিন্তিত মুখে বসে আছে তাসিনরা সবাই। রোদ কমে এসেছে দুপুর গড়াতেই কিন্তু সামুদ্রিক নোনা হাওয়ায় গা বিছিয়ে চিন্তামুক্ত হওয়ার চেয়ে চিন্তাতেই বেশি জর্জরিত হচ্ছে তারা। সুপ্রভা মুখ গোমড়া করে বসে আছে টিয়ার পিঠে হেলান দিয়ে। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছে আজ দুদিনও হয়নি আর আজই মাথায় বিপদ খু/ন হয়ে ঘুরছে সবার ওপর শুধু তাসিন ব্যতিক্রম। তার ভাগ্য ভালো সে চট্টগ্রামে থাকে তাই তাকে কেউ খুব একটা জড়াচ্ছে না পালানোর ব্যপারে। তবে সবার ধারণা হয়েই গেছে তারা পালিয়ে তাসিনের কাছে এসেছে৷ মুরাদ আর টিয়া পালিয়েছে তাদের দুই পরিবারে খুব একটা ঝামেলা হচ্ছে না। যা হচ্ছে সবটা নাকি সুপ্রভার বাড়িতে। বিয়ে থেকে পালিয়েছে টিয়া কিন্তু সুপ্রভা কেন গায়েব হলো! এদিকে নয়া গঞ্জে একসাথে তিনজন ছেলে উধাও তারমধ্যে টিয়া, মুরাদকে কেউ একজন দেখেছিল একসাথে দাঁড়ানো। তাতে ধারণা করা যায় টিয়া হয়ত মুরাদের সাথেই পালিয়েছে কিন্তু বাকি দুই ছেলে! কারোই মাথায় ঠিকঠাক কিছু আসছে না। কিন্তু সুপ্রভার পরিবার অনেকটা ভারতীয় তেলেগু ছবির নায়িকার পরিবারের মত। বোন গায়েব তো চার ভাই দাঁড়ি গোফ নাচাতে নাচাতে বোনকে খুঁজতে বেরিয়েছে আর তাদের ভাব এমন, যেন যাকেই সামনে পাবে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলবে। আর এসব ঘটনাই একটু আগে পটল ফোন করে বলেছে তাসিনকে। তাসিন ফোন রিসিভ করতেই পটল বলেছিল, “বস আপনের তিন বন্ধু দুই মাইয়া লইয়া ভাগছে। দুই মাইয়ার মইধ্যে একটা তো হেই মাইয়া যারে আমার ধর্মের বইন বানাইছেন। বস জানেন না তো হেই ধর্মের বইনের ভাইয়েরা চাইরডা এক লগে আইয়া কি যে করছে! কইছে আজকার মইধ্যে বইনের খোঁজ না পাইলে আমগো এলাকা জ্বালাইয়া দিব।”

পটল সকল কথা খুব এক্সপ্রেশনের সাথে বলছে তা তার কণ্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছিল।আর সেই থেকেই সবাই চিন্তিত৷ তারওপর সকালে রিমন যা করলো তাতে ভয় রিশাদ না আবার কখন হোটেল থেকে বের করে দেয় আর তাসিনের পরিচয়টা তো পেয়েই গেছে। যদি ভুল করেও ছোট মামাকে জানিয়ে দেয় তবে বড় একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে৷ সকালে যখন রিমন একটা দুটো করে মেহউইশকে প্রশ্ন করছিল তখনই রিশাদ সেখানেই আসে নির্জনকে নিয়ে। রিশাদকে খুব একটা পাত্তা না দিয়েই রিমন অনেক কথা বলে তারমধ্যে কিছু কথা এমনও ছিল, ” এই সমুদ্রের মতোই আপনার মধ্যে একটা গভীর সৌন্দর্য আছে তা কি আপনি জানেন?”

রিমনের প্রশ্নে তাসিন, সুপ্রভা আর রিশাদও ক্ষেপে গেলেও মেহউইশ মুচকি হেসে বলেছিল, “ফ্ল্যার্ট করছেন?”

“আরেহ না, আপনি সত্যিই গভীর সৌন্দর্যের অধিকারী সেই সাথে আপনার মে হ উইশ নামটাও। আচ্ছা আপনি কোন ক্লাসে পড়েন?

” অনার্স ফাইনাল ইয়ার।”

“ওহ আমার চেয়ে এক বছরের জুনিয়র। আমি মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি। আচ্ছা আপনার ফেবু একাউন্টটা যদি…”

“রিশাদ রায়হান। তার সকল একাউন্টের নাম রিশাদ রায়হান। সার্চ করো শুরুতেই পেয়ে যাবে। তুমি করেই বলছি কারণ আমি এক বছরের জুনিয়র নই কয়েক বছরের সিনিয়র।”

দাঁতে দাঁত চেপে চোয়াল শক্ত করে রিশাদ কথাটা বলতেই থতমত খেয়ে গেল রিমন। তার আর বুঝতে একটুও বাকি নেই যে, মেহউইশ রিশাদের স্ত্রী। রিশাদ রায়হান আর মেয়ে কি বলল মেহউইশ রায়হান! হাস্যজ্জ্বল মুখটা রিমনের তৎক্ষনাৎ অমাবস্যার রাতের মত ঘোর অন্ধকারে কালো হয়ে গেল। মনে মনে বলল, নামটা আমারও তো তিন অক্ষরের ওই রিশাদের মত। আমার কপালেও একটা মে হ উইশ আসুক। রিমনও পারলো না মেহউইশের নামটা একবারে উচ্চারণ করতে। কিন্তু বন্ধুরা খুব হাসাহাসি করলো রিশাদ মেহউইশ চলে যেতেই। সুপ্রভা তো বলল, “শেষ পর্যন্ত চার মাসের প্রেগন্যান্ট এক মহিলার প্রেমে পড়ে গেলেন!”

চমকে গিয়েছিল সবাই এ কথা শুনে। মেহউইশ প্রেগন্যান্সির কথা সকালেই সুপ্রভার সামনে বলেছিল। মেহউইশের গাল আর শরীর দেখলে মনে হয় মেয়েটা বুঝি এমনই হেলদি আর তাই কেউ খুব একটা ধরতে পারে না প্রেগন্যান্সির কথাটা। তাসিন আর মুরাদ তো চিন্তামুখেও হো হো করে হেসেছিল। কিন্তু কথা হলো সুপ্রভাকে নিয়ে কি করা যায় তার ভাইরা যেভাবে খুঁজছে শুনলো তাতে যার সাথেই পাবে তাকেই খু/ন করবে। অযথা সবার কাঁধে বিপদ ঝুলিয়ে রাখার মানে হয় না। তাই তাসিন বলল, “সুপ্রভা তুমি তোমার হোস্টেলে খোঁজ নাও। সেখানে তোমার ভাইরা কেউ খোঁজ নিয়েছে কিনা? কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করেছে কিনা!”

তাসিনের কথাটা সবারই হাস্যকর লাগল।মেয়ে পালিয়েছে জেনে তারা এখনো বসে আছে খোঁজ করা বাকি রেখে? হোস্টেলে নিশ্চয়ই প্রথমেই খোঁজ নিয়েছে। তাসিন বিরক্ত হলো তাদের কথায়। সে কলমির লতায় গা এলিয়ে দিতেই মেঘলা আকাশের দিকে ছোট ছোট করে তাকালো। অনেকটা ব্যঙ্গ করেই বলল, “হয়তো খোঁজটা কালই নিয়েছে আবার এও তো হতে পারে মেয়ে পালিয়েছে ভেবে আর সেখানে খোঁজ নেয়নি। ধরে নিয়েছে কোন ছেলের সাথে অন্য কোথাও আছে। এখন কাউকে ফোন করে একটু খোঁজ নিতে তো সমস্যা নেই।”

সুপ্রভা বলল, “কিন্তু আমার ফোন তো বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরপরই বন্ধ করে রেখেছি। সেজদা ভাই খুব স্মার্ট লোক শুরুতেই সে আমার লোকেশন সার্চ করাবে জানি তাই ফোন আর চালু করিনি।”

এবার আর বিরক্তি আটকে রাখতে পারলো না তাসিন। রাগ চড়ে গেল তার। সে বালু থেকে উঠে রাগী কণ্ঠেই বলল, ” তো চাইছোটা কি সারাজীবন এখানে থাকবে? ওই হোটেল ওনার রিশাদকে খুব পছন্দ হয়েছে না তাকে গিয়ে অনুরোধ করতে পারো বিয়ে করে তোমাকে রেখে দিক। লোকটার অনেক টাকা সমস্যা হবে না দুই বউ পালতে। আর তুমি অনেক সুন্দরী যদিও উনার স্ত্রীর মত না তবুও রাজী হয়ে যাবে বলে মনে হয়।”

এক নাগাড়ে এতগুলো লজিকলেস কথা বলে গটগট করে চলে গেল তাসিন। তার রাগ হচ্ছে সুপ্রভার ওপর। তার বন্ধুরা না হয় ছেলে পালিয়ে গেছে রটনা হলেও সমস্যা নেই। টিয়ারও এমন ঘটনায় এখন আর ভাববার কিছু নেই সে তার পছন্দের মানুষকে পেয়ে গেছে কিন্তু এই মেয়েটার একটা ভবিষ্যৎ আছে তা কেন বোঝে না। এখানে ক্ষণিকের জন্য প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের লোভে পড়ে থাকলে গ্রামে তা অন্য প্রভাব ফেলবে তা বোঝে না। এই মেয়েটার সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে পারে ছোট্ট একটা কুৎসা রটলেই সেই কুৎসা বাপ, ভাইয়ের টাকায়ও মোচন করা অসম্ভব৷ তাসিনের প্রতিক্রিয়ায় সকলেই যেন এবার ভাবতে শুরু করলো। সন্ধ্যের আকাশ মেঘে ঢেকে গেছে। আজ রাতে খুব করে চট্টগ্রাম শহরটা ভিজবে তাতে সন্দেহ নেই সেই সাথে এবার সুপ্রভাও কান্নায় ভিজতে চাইছে। সারা বিকেল ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যায় ঠিক হলো সে ঢাকা চলে যাবে। সেখানে গিয়েই বাড়িতে ফোন করে কিছু একটা বলবে। এখন সে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। ব্যাগ গোছানোই ছিল রিসেপশনে গিয়ে নিজের রুমের বিল পে করতে চায়। তাসিন তাকে ব্যাগ হাতে রিসেপশনে যেতে দেখে এগিয়ে যায়।

“এ্যাই মেয়ে ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?”

“ঢাকা।”

“বললেই হলো নাকি? সময় দেখেছো কয়টা বাজে আর একা কি করে যাবে?” কিছুটা চেঁচিয়েই বলল তাসিন। সে ফোন বের করে মুরাদকে কল দিতে দিতে সুপ্রভার ব্যাগ টেনে ধরলো। রিসেপশনে থাকা শায়খ তা আড়দৃষ্টিতে দেখেই রিশাদের নাম্বার ডায়াল করলো। কক্সবাজারে নেই সে এই মুহুর্তে হতে পারে কাজেও ব্যস্ত তাই ফোন রিসিভ হলো না। বাধ্য হয়েই শায়খ মেহউইশকে খবর দিল। সুপ্রভা কথা শুনছে না তাসিনের মুরাদ আর টিয়াও এসে হাজির হলো সেখানে। তারা নিজেদের মধ্যে কথা শুরু করার আগেই মেহউইশও এলো নির্জনকে নিয়ে।

“কি ব্যাপার শায়খ, কি হয়েছে বললে?”

“ম্যাম এনাদের মধ্যে কোনরকম ঝামেলা সম্ভবত। মেয়েটা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এসেছে কিন্তু ছেলেটা ব্যাগ ধরে টানাটানি করছে।”

” তেমন কিছু নেই। তুমি ভুল ভাবছো আমি শুধু তাকে…”

তাসিনকে থামিয়ে মেহউইশ সুপ্রভার দিকে তাকালো।

“তুমি বলো সমস্যা কি?”

“তেমন কিছু নয় আপু আমি একাই ঢাকা যেতে চাচ্ছি কিন্তু উনি চাইছেন না আমাকে একা ছাড়তে।”

“এমনটাই তো হওয়া উচিত। তুমি একা একটা মেয়ে রাত বিরাতে যাবে তা নিয়ে তাদের চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তার চেয়ে ভালো হয় সাথে কাউকে নিয়ে যাও।” মেহউইশ সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে গম্ভীর হয়েই বলল কথাগুলো। সত্যি বলতে তার এদেরকে এমনিতেও একটু অপছন্দ হয়েছে এভাবে দুটো মেয়ে সাথে আসায়। একজনের না হয় বর আছে সাথে কিন্তু ওই মেয়েটা বয়স কত হবে একুশ, বাইশ আর এ বয়সে একা ছেলেদের সাথে ঘুরতে আসাটাই বা কেন!

মেহউইশের কথা শুনে সুপ্রভা বলল, “আমার একা চলাফেরা করার অভ্যাস আছে আপু৷ এর আগে হোস্টেল থেকে দু বার আমি একা বাড়ি গিয়েছিলাম।”

সুপ্রভার দিকে এবার বিরক্তি মিশ্টিত চাহনি দিলো মেহউইশ। মেয়েটা বড্ড বেশিই পাকামি করে৷ সে জানতে চাইলো, “তোমরা তো কেউ কারো বন্ধু নও ঢ়তটুকু আমাকে নির্জনের বাবা বলেছে তাতে এই মনে হয়। অথচ একসাথে আজ দুদিন হয় এখানে আছো। আর ছেলেটা তোমাকে একা ছাড়তে চাইছে না তার মানে সে তার দ্বায়িত্ববোধ থেকেই চাইছে না। সে হিসেবে তোমার একা যাওয়ার চেয়ে উত্তম হয় তার সাথে যাওয়া। আর যদি তাকে ভরসা করতে না পারো আমাকে বলো আমি ব্যবস্থা করিয়ে দিতে পারবো।”

মেহউইশের কথায় এবার দমলো সুপ্রভা। সত্যিই তো বাড়াবাড়ি করে ফেলছে না সে এটা! ঢাকা থেকে সে একা মাত্র দু বার বাড়ি গিয়েছে তারমধ্যে দুবারই তাদের হোস্টেলের দারোয়ান মামা বাসে তুলে দিয়েছে আর এলাকার স্ট্যান্ড থেকে ভাইয়েরা এসে নিয়ে গেছে। সে আর বাড়াবাড়ি না করে বলল, “আমি একটু আমার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলবো।”

“ঠিক আছে বলো। যাই সিদ্ধান্ত নাও আমাকে না বলে হোটেলের বাইরে এক পাও বের হবে না তুমি।” কণ্ঠস্বর খুব ভারী করে বলল মেহউইশ প্রতিটা কথা। তার রাগ হলো মেয়েটির এমন আচরণে। মেয়েটির বয়স তার থেকে চার কি পাঁচ বছর কম হবে তাই বলে এত ইমম্যাচিউর হওয়াটা কি স্বাভাবিক!

সুপ্রভার দিকে তাকিয়ে টিয়া বলল, “তোকে একা ছাড়তে আমিও চাই না প্রভা। প্লিজ তুই এমন জেদ করিস না আমি আর উনি মিলে তোকে দিয়ে আসব।”

টিয়ার কথা শুনছে তাসিন আর মুরাদ। আপাতত তারা চুপ থেকে শুনতে চায় মেয়ে দুটোর সিদ্ধান্ত। রিমন আর সুমন দুজনেই ঘুরতে বেরিয়েছিল আর ফেরেনি৷ সুপ্রভা একবার আঁড়চোখে তাসিনের দিকে তাকালো। যতই হোক লোকটা বাজে চরিত্রের হবে না বলেই মন সায় দেয়। নইলে কি অমন বৃষ্টির রাতে যেচে পড়ে একটা মেয়েকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। তার কি দায় পড়েছে। কুমতলব থাকলে সেদিনই আসল রুপ দেখাতে পারত। টিয়া আর মুরাদকে আর ঘাটাতে চাইছে না বলেই সুপ্রভা বলল, “আপনি কি আরেকবার জোরজবরদস্তি আমাকে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা করতে পারবেন?”

তাসিন অবাক হয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তা দেখে সুপ্রভা আঙ্গুল তুলে সতর্ক করার মত করে বলল, “ভুলেও ভাববেন না আমি আপনার কাছে সাহায্য চাইছি। আপনার তো রোগ আছে জোর করে অন্যের সাহায্য করা তাই সুযোগ দিচ্ছি।” সুপ্রভার কথা শুনে টিয়া ভ্যাবাচেকা খেলেও মুরাদ বুঝতে পারলো কথার অর্থ। তাসিন বলেছিল সেই বৃষ্টির রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা। টিয়া জিজ্ঞেস করলো, “কিসের সাহায্য?”

মুরাদ হাসতে হাসতে বলল, “ও তোমাকে পরে বলছি চলো আগে শালিকার যাওয়ার ব্যবস্থা করি।”

রিসেপশনে সুপ্রভার রুমের বিল তাসিনই পে করে দিল। যাওয়ার আগে রিশাদকে না পেলেও তাসিন মেহউইশকে ডেকে বিদায় নিলো সাথে এও বলে গেল রিশাদ যেন তার ছোট মামাকে কিছু না জানায়। সে কোন বাজে নিয়তে কিছুই করেনি শুধু বন্ধুর বিপদ বলেই এসেছে। মেহউইশ আশ্বস্ত করলো নিশ্চিত থাকতে আর সুপ্রভার সাথেও যেন খারাপ কিছু না ঘটে৷ তাসিন যাওয়ার আগে লুকিয়ে রিমন আর সুমনকে বলে গেল আজ যেন কিছু একটা স্পেশাল করা হয় তাদের রুমে বাসর বলে কথা! টাকা সপ নিজেই কিছু দিয়ে গেল সুমনের হাতে।

রাত দশটার টিকিট কেটে বাসে উঠলো তাসিন, সুপ্রভা। বাসে একসাথে সিট নেই দুটো কোথাও আবার তাসিনের সাথে বসতেও সংকোচ হচ্ছে সুপ্রভার। কিন্তু তবুও অন্য এক অপরিচিত পুরুষ বসবে তার চেয়ে বেশি সুবিধাজনক মনে হলো তাসিনের পাশে বসাটা। সব সিটে তাকিয়ে সুপ্রভা বলল এখানে তো দুটো সিট নেই একসাথে। সুপ্রভার এ কথায় ভারী চমকে গেল তাসিন৷ তারমানে কি সুপ্রভা নিঃসংকোচে তার পাশেই বসতে চায় বলল! মনে মনে কুটিল হেসে তাসিন বলল, “কেন আমার পাশে বসতেই হবে?”

সুপ্রভা মজা করাটা বুঝলো না। সে রেগে তাকালো তাসিনের দিকে৷

“এই ফালতু কথা বলার হলে নেমে পরুন৷ আপনার যেতে হবে না আমার সাথে।”

“আরেহ ধ্যাত, মজাও বোঝে না মাইয়া। যাও বসো গিয়ে ওই সিট খালি।”
সামনের দিকেই একজন পুরুষের সাথে সিট খালি আছে দেখালো তাসিন৷ সুপ্রভা নড়লো না তা দেখে তাসিন বুঝলো মেয়েটা মজা না বুঝলেও অন্য পুরুষের সঙ্গে বসে জার্নিটা করবে না। সে বাসের ড্রাইভারের কাছে গিয়ে দুটো সিট একসাথে চাই বলতেই হেলপারটা বলল, “দুই মিনিট খাঁড়ান আমি ব্যবস্থা করতাসি।”

দু মিনিটও লাগেনি ছেলেটা তাসিনকে ডাকলো সিট পাওয়া গেছে৷ সুপ্রভাকে নিয়ে সেই সিটে বসতেই আজব এক কান্ড করলো মেয়েটা। তার সাথে যে কাঁধের ব্যাগটা ছিল সেটা ধপাস করে দুই সিটের মাঝে রেখে দিল। দূরের পথের বড় বাস৷ এমনিতেই সিটগুলো খুব বড় আর তারা দুজন মানুষ খুব একটা মোটা নয়। বিশেষ করে সুপ্রভা হ্যাংলা, পাতলা মেয়ে তার অল্পতেই জায়গা হয়ে গেছে৷ ব্যাগটা রাখায় জায়গার সমস্যা না হলেও তাসিন বেশ বিরক্ত হলো মেয়েটির ভাবনার ওপর। কি ভেবে রেখেছে এখানে ব্যাগটা! তাসিন তার গায়ে পড়বে? এতোটাই কুৎসিত মনের সে! ফালতু মেয়ে একটা! বিড়বিড় করে বলতে লাগল তাসিন।

চলবে

(আগামী পর্বে আসবে ক্যাটক্যাটে লাল পান্জাবী পরা তৌফিক ভাই আর তার মিনি প্যাকেট রজনীগন্ধা। সবাই কি আগ্রহী তাদের পড়ার জন্য?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here