রংধনুর_আকাশ #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ পর্ব-১৫

0
507

#রংধনুর_আকাশ
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-১৫

২৮।
একটা রেস্টুরেন্টে স্বস্তিকার মুখোমুখি বসে আছে মাফিন। তাদের দুজনের দৃষ্টি নিচের দিকে। কেউ কোনো কথায় বলছে না। মাফিনের পরিবেশটা গুমোট মনে হচ্ছে, তবে স্বস্তিকার মনে উত্তেজনা। বিয়ে নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এতোদিন শুধু শুনে এসেছে তাকে একদিন বিয়ে করতে হবে। আর আজ সত্যি সত্যিই তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। স্বস্তিকা সেখানে বসেই শাড়ি বা চুড়ি, কি কি কিনবে? কিভাবে বিয়ে করবে? বিয়ের স্টেজ কিভাবে সাজালে ভালো দেখাবে এসব নিয়েই ভাবছিলো।
অন্যদিকে মাফিনের প্রথম দেখায় স্বস্তিকাকে মোটেও পছন্দ হয় নি। এমনকি স্বস্তিকার মায়াবী চেহারা দেখেও যেন মাফিনের বিরক্ত লাগছে। মা যে তাকে এই মেয়েটির সাথেই বিয়ে দেবে তা সে নিশ্চিত। কারণ সব বায়োডাটার মধ্যে স্বস্তিকাকেই মায়ের পছন্দ হয়েছে। আর তার বিশেষ আরেকটা কারণ স্বস্তিকার মা ফাতেমা জান্নাত, আরিয়ার ফেরদৌসের কলেজের বান্ধবী।

আরিয়া ফেরদৌস বায়োডাটা দেখার সময় স্বস্তিকার মায়ের নাম ও পরিচয় দেখেই কিছুটা ভাবনায় পড়ে যান। তারপর ছবি দেখার পরই তিনি নিশ্চিত হলেন এই সেই ফাতেমা, যে তাকে পড়াশুনায় অনেক সহযোগিতা করেছিল। কলেজে পড়াকালীন সময়ে আরিয়া ফেরদৌসের বাবার ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। যার ফলে আরিয়া বাসায় থেকেই পড়াশোনা করতেন। কলেজটা তাদের মফস্বল থেকে দূরে হওয়ায় প্রতিদিন যাওয়া-আসা করা বা আলাদা হোস্টেলে থাকার মতো সামর্থ্য তার ছিলো না। তাই আরিয়া ফেরদৌসের জন্য কলেজের পরিবর্তে বাসায় শিক্ষক হিসেবে মিরাজকে রাখা হয়, যার সাথে পরবর্তীতে তার প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়ে যায়। আর ফাতেমা জান্নাতও আরিয়াকে কলেজের স্যারদের নোট সংগ্রহ করে এনে দিতেন। কিন্তু কলেজের পর তাদের আর দেখায় হয় নি৷ এদিকে আরিয়া ফেরদৌসও বিয়ের পর স্বামী, মিরাজের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হোন। আর বর্তমানে দুই বান্ধবী একে অপরকে পেয়ে তাদের বন্ধুত্ব আত্মীয়তায় রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন।

এদিকে মাফিন এখনো টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে। এবার স্বস্তিকা মাফিনের মুখের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
“আম্মিজানের বান্ধবীর ছেলে কি এমন দেখছে এই টেবিলে? আমার দিকে তো তাকাচ্ছেই না।”

স্বস্তিকা এবার গলা ঝেড়ে বলল,
“আসসালামু আলাইকুম।”

মাফিন স্বস্তিকার কন্ঠের স্বর শুনে অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো। মেয়েটাকে তার প্রথম দেখায় অপছন্দ হওয়ার কারণ মেয়েটা তার চেয়ে অনেক খাটো। আর খাটো মেয়ে মাফিন একদমই পছন্দ করে না। তার উপর মেয়েটা যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান। গোলগাল চেহারাও মাফিনের পছন্দ না। সে চায় তার বউ দেখতে নায়িকাদের মতো ছিপছাম গড়নের হবে। কিন্তু বাঙালী মেয়েদের তো বেশিরভাগ সময় কাটে ঘরে। পড়াশোনা বা কাজের তাগিদেই তাদের বের হওয়া হয়। আর সেখানেও তাদের বসে বসেই সময় পার করতে হয়। আর তার উপর স্বস্তিকা অসম্ভব আলসে একটা মেয়ে। তাই তার শরীর-স্বাস্থ্যের গঠনও তার আলসে হওয়ার খবরটাই জানান দিচ্ছে। তাই মাফিনের এইরূপ নায়িকার মতো বউ পাওয়াটা অসম্ভব কল্পনা ছাড়া কিছুই না।
আর মেয়েদের একটা অদ্ভুত স্বভাব আছে। তারা টাকা থাকলে রেস্টুরেন্টে যাবে, সুগন্ধি মাখবে, প্রসাধনী বা শখের জিনিসে ঘরভর্তি করবে, তবুও নিজের চেহারার পরিচর্যা বা শারিরীক সুস্থতার জন্য কিছুই করবে না। গুটিকয়েক মেয়েরাই হয়তো খুব স্বাস্থ্য সচেতন হয়।

স্বস্তিকা এবার ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা, আপনি কি সালামের উত্তর দিতে হয়, তা জানেন না?”

মাফিন মাথা নেড়ে বললো,
“দুঃখিত। অন্যমনস্ক ছিলাম। ওয়ালাইকুম আসসালাম।”

“অন্যমনস্ক থাকার কারণটা কি জানতে পারি?”

“না, এতোকিছু তো আপনি জানতে পারবেন না।”

স্বস্তিকা কিছুটা দমে গেল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এবার ফিসফিস করে বলল,
“আপনাকে কি জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে? আপনার কি কোনো প্রেমিকা আছে?”

মাফিন চোখ বড় বড় করে স্বস্তিকার দিকে তাকালো। স্বস্তিকা মুচকি হেসে বললো,
“বিয়ের আগে অনেকেই প্রেম করে। যারা বলে, প্রেম করেনি আমার তাদেরই সন্দেহ হয়। তাই আপনার প্রেমিকা থাকতেই পারে। কিন্তু বিয়ের পর এসব প্রেমিকার সাথে পুতুপুতু করা আমি মেনে নেবো না।”

মাফিন গালে হাত দিয়ে স্বস্তিকার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলল,
“প্রেমিকার সাথে পুতুপুতুটা কিভাবে করে শুনি!”

“এটা তো কথার কথা৷ সাধারণত সবাই লুতুপুতু বলে। কিন্তু আমার শব্দটা শুনতে ভালো লাগে না। তাই আমি বলি পুতুপুতু। আর “ল” দিয়ে যতো শব্দ আছে সবগুলোই অদ্ভুত। যেমন লুচু, লাফাঙ্গা। আর “প” দিয়ে যেই শব্দগুলো আছে তা খুব সুন্দর। যেমন, প্রিয়, প্রেম আর পুতুল। আপনি জানেন আমার পুতুল খুব প্রিয়। আমার বাসায় অনেক বড়ো বড়ো পুতুল আছে। সবাই বলে আমি দেখতে পুতুলের মতো, তাই আমার পুতুল প্রিয়।”

স্বস্তিকার কথাগুলো শুনে মাফিন অট্টহাসি হাসতে লাগলো। মাফিনের হাসি দেখে পাশের টেবিলে বসে থাকা আরিয়া ফেরদৌস, স্বস্তিকার বাবা-মা রিয়াজ তালুকদার ও ফাতেমা জান্নাত আর মাফিনের মামা ফায়াজ আলম অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। স্বস্তিকা কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেল। কারণ মাঝে মাঝে সে এমন কিছু ছেলেমানুষী কথাবার্তা বলে ফেলে যার জন্য তার আশেপাশের মানুষরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। আর এখন মাফিনও যেহেতু হাসছে, তাহলে তো স্বস্তিকা অবশ্যই খুব উদ্ভট কথা বলে ফেলেছে।

স্বস্তিকা মনে মনে বলল,
“এই জন্যই আম্মিজান বলেন, ভাবিয়া বলিও কথা। বলিয়া ভাবিও না। আর আব্বাজান বলেন, আমার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয় নি। এখন কি তাহলে আমার সামনে বসা ছেলেটাকে নিয়ে যে আমি এতো স্বপ্ন দেখছিলাম, সেটা কি আমার একটা কথায় মিথ্যে হয়ে যাবে?”

এদিকে আরিয়ার দিকে চোখ পড়তেই মাফিন তার হাসি আটকে আবার মুখটা মলিন করে ফেললো। তারপর গম্ভীরমুখে স্বস্তিকাকে বলল,
“তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?”

স্বস্তিকা এবার মাথা ঝুঁকিয়ে জিভ কামড়ে মনে মনে বলল,
“হায় আল্লাহ, আমি তো সত্যিই আমার কথায় ফেঁসে গিয়েছি। ছেলেটা সত্যিই ভাবছে আমি এখনো স্কুলে পড়ি। আল্লাহ আপনি তো জানেন আমি প্রত্যাখ্যাত হতে চাই নি। এখন এই ছেলে আমাকে অপছন্দ করলে আমি অনেক অপমানিত হবো। আমি আমার সব বান্ধবীদের বলে এসেছি আজ আমি আমার রাজকুমারের সাথে দেখা করতে যাবো। এখন এই ছেলে আমাকে বিয়ের করার জন্য যদি হ্যাঁ না বলে, তাহলে সবাই আমার উপর হাসাহাসি করবে। আপনি তো জানেন আল্লাহ, আমি আলসে হলেও ভালো মনের মানুষ।”

মাফিন এবার বিরক্তির সুরে বলল,
“এস এস সি পাশ করেছো? নাকি এখনো করো নি! আর পড়াশোনা শেষ না করেই বিয়ের জন্য এতো লাফালাফি কেন করছো?”

স্বস্তিকা নিচু স্বরে বলল,
“আমি এখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে। তিন মাস পর তৃতীয় বর্ষে উঠবো।”

মাফিন চোখ ছোট করে বলল,
“তাহলে তো তুমি বয়সে বুড়ি। কিন্তু স্বভাব দেখে মনেই হবে না কুড়ি পার করেছো।”

স্বস্তিকা এবার দৃঢ় কন্ঠে বলল,
“কেন?”

“ছোটবেলায় হরলিক্স খাও নি?”

স্বস্তিকা এবার হাত মুঠো করে বলল,
“আমি মোটেও খাটো না।”

মাফিন মুচকি হেসে বলল,
“তাহলে আমি কি বোঝাতে চেয়েছি তা তুমি বুঝেই ফেলেছো। অনেকেই নিশ্চয় এই কথা বলেছে।”

স্বস্তিকা হিজাব ঠিক করে বলল,
“আপনি আমার কথায় কিছু মনে করবেন না। আমি একটু মিশুক তো।”

মাফিন আবার হাসলো। স্বস্তিকা ভ্রূ কুঁচকে ভাবতে লাগলো, এবার কি সে ভুল কিছু বলেছে?

২৯।
কয়েক সপ্তাহ আগেই মাফিন আরিয়াকে উল্টোপাল্টা অনেক কিছুই বলে ফেলেছিল। যার ফলে আরিয়া মানসিকভাবে খুব আঘাত পায়। এরপর শুরু হয় আরিয়ার নতুন নীতি, চুপ করে থাকা আর খাওয়া-দাওয়া না করা। আরিয়ার এমন ব্যবহারে মাফিন বাধ্য হয়ে বিয়েতে রাজী হয়। যদিও মাকে কষ্ট দিয়ে সে মনে মনে অনুতপ্ত ছিল। কিন্তু বিয়ের শর্তটা তার যুক্তিযুক্ত মনে হয় নি। মাফিন চেয়েছে, মাহাথি বিয়ে করার দুই-তিন বছর পর সে বিয়ে করবে। কিন্তু এখন তো তাকে বিয়ে করার জন্য একপ্রকার বাধ্য করা হচ্ছে। এরপর যদিও মাফিন হ্যাঁ বলেছিল, তবুও মন থেকে সন্তুষ্ট ছিল না। আর বাসায়ও খুব চুপচাপ থাকতো। তবে আরিয়া ছেলের ব্যবহারে মোটেও বিচলিত নন। তিনি ছেলের জন্য ভালো মেয়ে খুঁজে পেয়েছেন, তাতেই সন্তুষ্ট।

এদিকে বাসায় আসার পর আরিয়া ফেরদৌস মাফিনকে জিজ্ঞেস করলেন,
“মেয়ে কি পছন্দ হয়েছে?”

মাফিন বলল,
“বাসায় একটা কার্টুন থাকলে ফ্রিতে বিনোদন দেবে। বাসায় তো একটা না একটা ঝামেলা লেগেই থাকে। কার্টুনটা আসলে হয়তো অন্তত আমি কিছুটা হাসতে পারবো।”

মাফিনের কথায় আরিয়ার পাশাপাশি মাহাথি, মারিয়া ও মহুয়াও অবাক হলো।
মাফিন বলল,
“এভাবে তাকানোর কিছু নেই। মেয়েটা একটা কার্টুনই। দেখলেই মনে হবে একটা ডোরেমন দাঁড়িয়ে আছে। শুধু কথাবার্তাগুলো নবিতার মতো।”

মারিয়া বলে উঠলো,
“তাহলে বড় ভাবীকে ডাকবো মিষ্টি ভাবী, আর ছোট ভাবীকে ডাকবো ডোরেমন ভাবী।”

মহুয়া মারিয়ার হাত টেনে বলল,
“মায়ের দিকে তাকিয়ে এই বাক্যটি আরেকবার বল।”

মহুয়ার কথায় মারিয়া মায়ের দিকে তাকিয়ে চুপসে গেল। কারণ আরিয়া ফেরদৌস রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন মারিয়ার দিকে।
কিছুক্ষণ পর ঘর নিস্তব্ধ হয়ে পড়লো। আরিয়া ফেরদৌস নিজের ঘরে গিয়ে ফাতেমা জান্নাতকে ফোন করে বললেন, মাফিনের বিয়েতে আপত্তি নেই। এদিকে মাহাথিও সূচনাকে ফোন করে আশ্বস্ত করলো, কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হবে। আর মাফিন নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করতেই তার সামনে ভেসে উঠলো স্বস্তিকার চেহারা। মেয়েটির গোল গোল চোখে তার দিকে তাকানো ও তার কন্ঠের মায়া জড়ানো স্বর তাকে প্রেমে পড়তে বাধ্য করছে। আবার তার করা উদ্ভট সব প্রশ্ন মনে পড়তেই মাফিনের হাসি পাচ্ছে। হঠাৎ মাফিনের মনে পড়লো, সে তো কার্টুনটার নম্বরও নেই নি। আরো অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সে কার্টুনটার নামই জানতে পারলো না। তারপর বিড়বিড় করে বললো,
“থাক ওর নাম আজ থেকে ডোরেমন।”

পরের দিন বিকেলে আরিয়া সূচনাদের বাড়ি গিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে এলেন। আর সেদিন রাতেই ফোন করে ফাতেমা জান্নাত ও তার স্বামী রিয়াজ তালুকদারকে বাসায় দাওয়াত করলেন। আর এই সুযোগে তারাও মেয়ের শ্বশুড় বাড়ি দেখে নেবে।

দুই সপ্তাহ পর-
মাহাথি ও সূচনার বিয়ের কার্ড ছাপানো শেষ। ঘরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেয়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কেনাকাটায়, আর ছেলেদের উপর দায়িত্ব এসেছে বিয়ের আয়োজনের। বিয়ের ক্লাব ও ফটোগ্রাফার নির্ধারণসহ খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ও ডেকোরেশনের সবকিছু দেখছেন রিদ্ধ, মাহাথির মামা ও দুই খালু। পাশাপাশি নাহিদও যতোটুকু পারছেন সাহায্য করছেন। অন্যদিকে বিয়ের কার্ড আত্মীয় স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব মাফিনের উপর পড়েছে। শুধুমাত্র মিরাজের কাছেই পৌঁছে নি ছেলের বিয়ের বার্তা।
অনেক বছর আগেই এক্সিডেন্টে মিরাজ তার দুই হাত হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি অনেক মাস পঙ্গু হাসপাতালে ছিলেন। বর্তমানে একটা আশ্রমে তার দিন কাটছে। একটা রুমে হুইলচেয়ারে বসে তিনি জানালার বাইরে তাকিয়ে থেকেই ভাবছেন, তিনি কতোটাই না হিংস্র মানুষ ছিলেন। যেই মেয়েটিকে ভালোবেসেছিলেন, তার উপরই অত্যাচার করেছেন। তিনি কখনোই সন্তানের বাবা হতে চান নি। তিনি চেয়েছিলেন শুধু আরিয়াকে নিয়ে একা থাকতে। চেয়েছিলেন আরিয়ার সম্পূর্ণ মনোযোগ যাতে একমাত্র তিনিই পান। কিন্তু আরিয়া চেয়েছিল সন্তানদের। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে মাহাথি ও মাফিনকে জন্ম দিয়েছিলো আরিয়া। যখন তার দুই মেয়ে আরিয়ার গর্ভে এসেছিল, তখনই তিনি স্ত্রীর উপর ক্ষোভ দেখিয়ে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কখনোই তিনি মারিয়া ও মহুয়াকে কোলে নিয়ে আদর করেন নি। মাফিনকে সবসময় বকাঝকা করতেন। আর ছোটখাটো ভুলের শাস্তি দেওয়ার জন্য মাহাথিকে মারধোর করতেন। আর আরিয়া যখন সন্তানদের বাবার হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতো, তখন মিরাজ এর চেয়ে হিংস্রভাবে আরিয়াকে মারধোর করেছিলেন। কতো সপ্তাহ আরিয়া ও তার সন্তানদের এক রুমে বন্দি করে রেখেছিলেন তার হিসেব নেই। আজ সৃষ্টিকর্তা তার অন্যায়ের শাস্তি দিচ্ছেন। সুস্থ থাকতে তিনি তেমন এবাদত বন্দেগী করেন নি। সপ্তাহে একবারই সেজদা দিয়েছিলেন। আর এখন চাইলেও তো পারছেন না। মিরাজ অনুশোচনার যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তার ইচ্ছে করছে একটাবার তার সন্তানদের দেখতে, একটাবার আরিয়ার কোলে মাথা রেখে ঘুমোতে।

চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here