রংধনুর_আকাশ #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ পর্ব-১৭

0
526

#রংধনুর_আকাশ
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-১৭

৩১।
আজ সূচনা ও মাহাথির আক্দ অনুষ্ঠান। আর এর পরের সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবেই সূচনাকে পুত্রবধূ করে ঘরে তুলবেন আরিয়া ফেরদৌস। এক মাস পর স্বস্তিকার পরীক্ষা, তাই মাফিন ও স্বস্তিকার আক্দ একটু দেরীতে হবে।

লাল বেনারসি শাড়ি পরে সূচনা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে বধূ সাজে দেখে তার মনে অদ্ভুত এক অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে। মাহাথি আজ তাকে দেখে কি বলবে, তাই ভাবছে। হঠাৎ সূচনার মনে পড়লো, একদিন মাহাথি তাকে বলেছিল,
“যেদিন লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি পরে আমার বউ সাজবে, সেদিন তোমাকে দেখার প্রথম অধিকার আমার। আর তুমিই আমাকে সেই অধিকারটা দেবে।”

পুরোনো কথা মনে পড়তেই সূচনা আনমনে হাসলো। তারপর সে আশেপাশে ফোন খোঁজায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। শেষমেশ ফোনটা পেলো বালিশের নিচে। এরপর সে তাড়াতাড়ি মাহাথির নম্বরে কল দিলো। কিন্তু কল রিসিভ করলো মারিয়া।

ওপাশ থেকে মারিয়া বলে উঠলো,
“তুমি আবার কোন টুকটুকি? আজ আমার ভাইয়ের বিয়ে। আর তুমি মিয়া, আমার ভাইকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করছো? ভাবী যদি জানতে পারে কোন টুকটুকি মুকটুকি তার হবু বরকে ফোন দিয়ে জ্বালাতন করছে, তাহলে ভাবী আমার নিষ্পাপ ভাইয়ের কি অবস্থা করবে, ভাবতে পারছো? ও মাই গড। একদম জোম্বিদের মতো আক্রমণ করবে।”

সূচনা মুচকি হেসে বললো,
“তাহলে তুমি আজ জোম্বি মুভি দেখে এসেছো?”

“ভাবী!”

“জি, তোমার ভাবী।”

মারিয়া কান থেকে ফোন নামিয়ে আরেকবার নামটি দেখে নিলো। তারপর আবার কানের কাছে ফোনটা নিয়ে বলল,
“সরি ভাবী, আমি তোমাকে চিনতে পারি নি। আচ্ছা, তুমিই বলো, আমি চিনবো কিভাবে? কেউ কি এতো সুন্দর নাম বাদ দিয়ে টুকটুকি নাম রাখে।”

সূচনা মুচকি হাসলো। মাহাথি প্রতিমাসে সূচনার নম্বর ভিন্ন ভিন্ন নামে সংরক্ষণ করে। যেই মাসে তাদের ঝগড়া হবে, সেই মাসে সূচনার নম্বরে নাম থাকবে গিরগিটি, মহিলা সাপ, দেশি মুরগী, হেলেন, অ্যানাবেলা, সালফিউরিক এসিড ইত্যাদি। আর যেই মাসে তাদের জীবনে প্রেমের বাঁধ ভেঙে পড়বে, সেই মাসে গোলাপজাম, পাটিসাপটা, নারকেল নাড়ু এসব নাম রাখবে। বেশিরভাগই মাহাথি মিষ্টিজাতীয় খাবারের নামে সূচনার নামকরণ করে। কারণ সূচনা প্রতিবারই দেখা হলে কিছু না কিছু মাহাথির জন্য বানিয়ে আনবেই। আর তা বেশিরভাগই মিষ্টিজাতীয় খাবার। কারণ আরিয়া ফেরদৌস বাসায় মিষ্টিজাতীয় খাবার একদমই তৈরী করেন না। সময় পেলে তিনি শুধু ঝাল নাস্তায় তৈরি করেন। তাই বাসায় কারো অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করলে, তাকে বাইরে থেকেই কিনে আনতে হয়। আর সূচনা যখন থেকে রান্নাবান্না করা শিখেছে, তখন থেকে মাহাথিকে আর বাইরের মিষ্টি বা কেক খেতে হয় নি। কারণ সূচনা মাহাথির জন্য মাঝে মাঝেই এসব বানিয়ে আনতো। আর প্রেমিকার এই অভ্যাসটিই মাহাথির ভীষণ পছন্দের ছিলো।

সূচনা মায়ের কাছে শুনেছে, পুরুষ মানুষের হৃদয়ে জায়গা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো ভালো রান্না করতে জানা। যদিও মাহাথির হৃদয়ে আগেই সূচনার জন্য জায়গা হয়ে গেছে, তবুও সেই জায়গা আরো শক্তপোক্ত করার লোভেই সে কম বয়সে রান্নাবান্না শিখেছে। রান্না শিখতে গিয়ে তার হাত পুড়েছে, আঙ্গুল কেটেছে, নখ কালো হয়ে গিয়েছে, তবুও সে রান্নাবান্না শেখা ছাড়ে নি। আর আজ এতোকিছুর পর সে সম্পূর্ণরূপে মাহাথির চিরস্থায়ী মিষ্টি বউ হতে যাচ্ছে।

এদিকে মারিয়া মাহাথিকে পুরো ঘর খুঁজে ছাদে পেলো। সে ফোন ভাইয়ের হাত ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“ভাইয়া তোমার টিকটক কল দিয়েছে।”

মারিয়ার কথা শুনে মাহাথি ও মাফিন ভ্রূ কুঁচকে তার দিকে তাকালো।

মাহাথি বিষ্ময়সূচক কন্ঠে বলল, “টিকটক!”

মারিয়া দেঁতো হেসে বলল,
“সরি, টুকটুকি।”

মাহাথি চোখ বড় বড় করে মারিয়ার দিকে তাকালো। মারিয়া এক হাত দিয়ে কান ধরে ইশারায় সরি বলতে বলতে নিচে নেমে গেলো। এদিকে মাহাথি মাফিন থেকে কিছু দূর সরে এসে ফোনটা কানের কাছে নিয়ে বলল,
“সূচনা তুমি?”

সূচনা মুচকি হেসে বললো, “তোমার টুকটুকিটা লাল শাড়ি পরেছে। দেখবে না?”

“ভিডিও কল দেবে?”

“হুম।”

“কিন্তু মাফিন যে আমার পাশে আছে। আর আমার ইয়ার ফোনটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

“সমস্যা নেই তো। আমি কোনো কথা বলবো না। তুমি কল রিসিভ করে আমাকে দেখবে, তারপর কেটে দেবে।”

মাহাথি আমতা-আমতা করে বলল,
“না। তোমাকে তো একটু পরে এমনিতেই দেখবো। এখন রাখি। বাসায় অনেক মানুষ।”

সূচনা দাঁতে দাঁত চেপে রাগী কন্ঠে বললো,
“আমার কোনো শখ নেই তোমাকে আমার বউ সাজ দেখানোর। তুমিই বলেছিলে এই সাজে দেখার প্রথম অধিকার তোমাকে দিতে। ওহ হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, এসব তো তোমার বাচ্চা বয়সের স্বপ্ন ছিল। এখন তো তোমার মধ্যে বিয়ে নিয়ে কোনো ফ্যান্টাসিই নেই। মনে হচ্ছে বিয়ে করতে হবে, তাই বাধ্য হয়ে আমাকে বিয়ে করছো।”

“সূচনা তুমি বাচ্চাদের মতো আমার সাথে ঝগড়া করছো। এইটা ঝগড়া করার কোনো বিষয়ই না।”

“হ্যাঁ, এখন তো বলবে এই বয়সে এসব কি বলছি। যখন বয়স ছিল, তখন তো আমাকে বিয়ে করো নি। এখন আসছো চল্লিশ বছর বয়সে আমাকে বিয়ে করতে।”

“দেখো আমার মোটেও চল্লিশ হয় নি।”

“তুমি বরং আরো দশ বছর পর আমাকে বিয়ে করতে এসো।”

“আমার তো সমস্যা ছিল না। আরো দশ বছর পরও আমি এই মাহাথিই থাকবো। শুধু তোমারই চুল পাকবে। তুমিই বুড়ি হয়ে যাবে।”

সূচনা কথাটি শুনে রাগ দেখিয়ে কল কেটে দিল। আর মাহাথি মনে মনে হাসলো। তারপর মাফিনকে এসে বলল,
“আমাকে কিছুক্ষণের জন্য বের হতে হবে। একটু এই দিকটা সামলে নিস।”

মাফিন বলল,
“ভাই, তুমি আবার কোথায় যাচ্ছো?”

মাহাথি বলল,
“সূচনার সাথে দেখা করবো।”

“কিন্তু কয়েক ঘন্টা পর তো এমনিতেই দেখা হবে।”

“ওই দেখা আর এই দেখা আলাদা। তুই শুধু এই দিকটা সামলা।”

মাহাথি বাসা থেকে বের হয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। আর যেতে যেতে ভাবতে লাগলো,
“সূচনা, আমি তো তোমাকে কথা দিয়েছিলাম, ষাটের পরও আমাদের বাচ্চা বয়সে দেখা সব স্বপ্ন জীবন্ত থাকবে। অন্যদের কাছে আমাদের ভালোবাসা যতোই ফ্যান্টাসি মনে হোক, আমার কাছে এই ভালোবাসা রংধনুর মতো। যেই রংধনুর সাতটি রঙ প্রকাশ করে, আমাদের জীবনে আসা সব ধরণের প্রতিকূলতা কাটানোর পর তোমাকে নিজের করে পাওয়া। সূচনা, তুমি আজীবন আমার রূপাঞ্জেল হয়েই থাকবে। আর আমি রাজকুমারের বেশে সাত সমুদ্র পার হয়ে তোমায় নিয়ে যাবো আমার রাজ্যে।”

মাহাথি মনে মনে এসব ভাবছে আর আনমনে হাসছে।

৩২।

স্বস্তিকা চুপচাপ বসে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। এককথায় সে অপেক্ষায় আছে কখন মাফিন তাকে কল দেবে। কিন্তু না, সে তো এক অদ্ভুত ছেলে! মানুষ হবু বউকে ফোন দিয়ে কতো কথা বলে। কিন্তু এই ছেলে কথা বলা তো বহুদূর একটা মেসেজও দেয় না। স্বস্তিকা কতো সুন্দর করেই না তার নম্বরটি মাফিনকে দিয়েছিল। কিন্তু মাফিন তাকে একটা ফোনও দিলো না?
এদিকে মাফিন ব্যস্ত সূচনা ও মাহাথির আক্দ অনুষ্ঠানের কাজে। জুমার নামাজের পর আক্দ হবে। এরপর ক্লাবে ছোটখাটো খাবারের আয়োজন করা হবে। আর এসবই দেখছে মাফিন। হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ডোরেমনের কল এসেছে। কল রিসিভ করে মাফিন বলল,
“ডোরেমন, আমি একটু ব্যস্ত আছি। পরে কথা হবে।”

স্বস্তিকা ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“রাখবেন না। একটু কথা আছে।”

“হুম বলো।”

“একটা প্রশ্ন ছিল।”

“হুম।”

“করবো প্রশ্নটা?”

“অদ্ভুত তো! তাড়াতাড়ি করো। কাজ আছে।”

“কি কাজ করছেন?”

“আজ ভাইয়ার আক্দ। তুমি জানো না? নাকি দাওয়াত দেয় নি?”

স্বস্তিকা গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“ওহ, তা আপনি কেন কাজ করছেন? কাজের লোক নেই?”

“উফ! ভাইরে ভাই। তাড়াতাড়ি কিছু বলার থাকলে বলো।”

“বলবো তো। আগে বলেন, আপনি কেন কাজ করছেন? কাজের লোক নেই?”

“ওহ আল্লাহ! এসব কাজ কাজের লোকেদের নয়। এগুলো আমার দায়িত্ব, আর আমি সেই দায়িত্ব পালন করছি।”

“কাজ করা আপনার দায়িত্ব?”

মাফিন বিরক্তির সুরে বলল,
“তোমার না একজন সায়কাইট্রিস্ট দেখানো উচিত। তোমার মাথার কিছু স্ক্রু খুলে নিচে পড়ে গেছে।”

কথাটি বলে মাফিন কল কেটে দিলো। এবার স্বস্তিকার খুব রাগ হলো। সে আবার মাফিনকে কল করলো। বারাবার কল দেওয়ায় মাফিন এবার বিরক্ত হয়ে বলল,
“ও আল্লাহ, মা আমার গলায় এ কাকে ঝুলিয়ে দিয়েছে! জোঁক একটা!”

মাফিন এবার কল রিসিভ করে কর্কশ কন্ঠে বলল,
“সমস্যা কি তোমার?”

“এভাবে কথা বলছেন কেন?”

মাফিন এবার শান্ত কন্ঠে বললো,
“বলো কি বলবে? আশেপাশে অনেক মানুষ। আমার এই মুহূর্তে রচনা শুনার ইচ্ছে নেই। যা বলতে চাও সারাংশ বলো।”

স্বস্তিকা মন খারাপ করে বলল,
“আপনার কি কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক চলছে?”

মাফিন এবার দাঁতে দাঁত চেপে মিনমিনিয়ে কিছু একটা বললো, তারপর কল কেটে ফোন বন্ধ করে দিলো। তারপর বিড়বিড় করে বলল,
“এই মেয়েগুলো এতো টক্সিক কেন হয়! এসব টক্সিক কথা না শোনার জন্য জীবনে প্রেম করি নি। আর আজ মা আমার জন্য সেটাই খুঁজে এনেছে। সামনে হয়তো আমার কপালে অনেক দুঃখ।”

এদিকে স্বস্তিকা যখন দেখলো মাফিন ফোন বন্ধ করে দিয়েছে, তখন সে রাগ করে ফোনটা জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। তারপর চেঁচিয়ে বললো,
“আম্মিজান, আমার জন্য এমন ছেলে কেন খুঁজে এনেছেন? বিয়ের আগেই যে এমন করছে, বিয়ের পর তো আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসবে। এই ছেলে তো ভালোই বাসতে জানে না। জন্মের পর হয়তো তাকে মধু আর মরিচ একসাথে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। কখনো মিষ্টি সুরে কথা বলবে, আবার কখনো বাঘের মতো হুংকার দিয়ে উঠবে। এই ছেলের নাম মাফিন কেক না হয়ে ড্রাই কেক হওয়া উচিত ছিল। নরমের ‘ন’ও তার মধ্যে নেই।”

৩৩।

“আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না?”

“শাট আপ, নিবিড়। তুই কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছিস।”

“মারিয়া, তুমি আমাকে এতো অবহেলা কেন করছো?”

“আমি কি তোর প্রেমিকা? আমি তোকে অবহেলা করি বা না করি, তাতে তোর কিইবা যায় আসে! দেখ, নিবিড়, প্রথমত আমার তোকে মোটেও পছন্দ না। তুই বাচ্চা একটা ছেলে! মাত্র কলেজে পড়িস! তোর সাথে প্রেম করলে আমার ভবিষ্যৎ কি? তুই কবে চাকরি করবি! আমি কি তোর আশায় বসে থাকবো? নো ওয়ে। দ্বিতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, আমার মা কখনোই এসব প্রেমের সম্পর্ক মেনে নেবে না। আর যেখানে তোর বাবাকেই আমার মা পছন্দ করে না। সেখানে তুই কে?”

নিবিড় মলিন মুখে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো আর ভাবতে লাগলো,
“এভাবেই কি আমার ভালোবাসার সমাপ্তি হয়ে যাবে? আমি কি মারিয়াকে কখনোই পাবো না?”

মারিয়া হন হন করে নিজের ঘরে গিয়ে ধড়াম করে দরজা আটকে দিলো। মহুয়া মারিয়ার দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো,
“কি হয়েছে? এভাবে দরজা বন্ধ করলি যে! বাসায় কতো মেহমান এসেছে! তারা কি মনে করবে? বলবে আরিয়া ফেরদৌসের মেয়েগুলো আদব কায়দা শেখে নি।”

মারিয়া চেঁচিয়ে বলল,
“চান্দু, আল্লাহর ওয়াস্তে তুই তোর ঘ্যানঘ্যানানি বন্ধ কর। আমার মাথাটা একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওই নিবিড়ের বাচ্চাটা নাহিদ আংকেলের ছেলে না হলে আমি এক্ষুনি গিয়ে তার..”

মারিয়া হঠাৎ থেমে যাওয়ায় মহুয়া ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“এক্ষুনি গিয়ে তার কি করবি?”

মারিয়া দুষ্টু হাসি হেসে বলল,
“এক্ষুনি তার নাড়িভুঁড়িতে আগুন লাগিয়ে দেবো।”

“মানে? কি করবি তুই?”

“চান্দু, কত্তো সুন্দর একটা আইডিয়া আসছে মাথায়। এই জন্য বেশি বেশি মুভি দেখা উচিত। তবেই এসব শয়তানি বুদ্ধি দিয়ে শয়তানদের শায়েস্তা করা সহজ হয়।”

“ওই, তুই এমন কিছু করিস না বোন। পরে তোরই বিপদ হবে।”

মারিয়া চুলগুলো হাওয়ায় উড়িয়ে মডেলদের ভঙ্গিতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“চান্দু, তুমি চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্ত থাকতে পারো। এখানে আমার কিছুই হবে না।”

এদিকে মাহাথি সূচনার বাড়ির সামনে তার বাইকটা রেখে সোজা দেয়াল টপকে সূচনার জানালার সামনে এসে দাঁড়ালো। সূচনারা এক তলায় থাকে, যার ফলে মাহাথি খুব সহজেই সূচনার জানালার কাছে এসে তাকে দেখতে পারে।

জানালার কাছে এসে মাহাথি দেখলো, সূচনা লাল বেনারসি পরে মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে আছে। সূচনার এই অবস্থা দেখে মাহাথি আনমনে হাসলো। তারপর তার পায়ের নিচে পড়ে থাকা দুটি ছোট ছোট নুড়িপাথর নিয়ে সূচনার সামনে ছুঁড়ে মারলো। সূচনা জানালার দিকে তাকিয়ে মাহাথিকে দেখে সাথে সাথে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো।

জানালার কাছে এসে সূচনা বলল, “তুমি?”

মাহাথি হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
“অতীত তাজা করতে এলাম। মনে আছে, যেদিন তোমাকে প্রথম প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আর তুমি আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলে?”

“হুম, মনে আছে। সেদিন তুমি রাত আটটায় এভাবেই জানালার সামনে এসে একটা চিরকুট ছুঁড়ে দিয়েছিলে, আর সেখানে লিখেছিলে, ভুলেও আর কখনো ভালোবাসি বলবে না।”

“হুম।”

“মাহা, তুমি জানো, আমি সেদিন চিরকুটটি পড়ে খুব ভয় পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, তোমাকে কাছে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি। আমিও যে তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু ওই যে, আমার মাঝে জড়তা, লজ্জা আর ভয় ছিল। এসবের কারণে আমি তোমার মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছিলাম না।”

“কিন্তু শেষমেশ আমার চিরকুটটি দেখে তোমার লজ্জা, জড়তা, ভয়, সব কেটে গেলো। আর তুমি হুট করে বলে দিয়েছিলে..”

“আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি আছি। আসলে না, আমার খুব ভয় লাগছে। বাবা-মা জানতে পারলে..”

কথাটি বলেই সূচনা খিলখিল করে হেসে উঠলো। মাহাথি জানালার গ্রিলে হাত রেখে বলল,
“আর সেই ভীতু মেয়েটা দশ বছর ধরে বাবা-মার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমার সাথে এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলেছে, আর এখনো বলছে।”

“এই মুহূর্তটা কিন্তু তুমি খুব মিস করবে, মাহা। কারণ শীঘ্রই তুমি চোরের পদ থেকে প্রধান অতিথির পদে স্থানান্তর হতে যাচ্ছো। এখন আর চোরের মতো জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। তুমি এরপর থেকে প্রধান অতিথির মতো সম্মানের সাথে ঘরের দরজা দিয়েই আমার ঘরে আসতে পারবে।”

মাহাথি কিছুক্ষণ নিরবে সূচনার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর মুচকি হেসে বলল,
“টুকটুকি, তোমাকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে।”

সূচনা মুচকি হেসে মাহাথির গাল টেনে ধরে বলল,
“এবার বাসায় যাও। একটু পর আমার কবুল নিতে আসবে। আর এরপর তো আমাদের ক্লাবে দেখা হবে।”

“টুকটুকি, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আর আমি তোমাকে আমার সাধ্যমতো ভালো রাখার চেষ্টা করবো।”

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here