রংধনুর_আকাশ #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ পর্ব-১৮ (মাহাথি-সূচনা স্পেশাল)

0
535

#রংধনুর_আকাশ
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-১৮ (মাহাথি-সূচনা স্পেশাল)

৩৪।
সূচনা ও মাহাথিকে পাশাপাশি বসানো হলো। কিছুক্ষণ আগেই তাদের আক্দ সম্পন্ন হয়েছে। আরিয়া ফেরদৌস মাহাথির মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। ছেলের মুখে আজ খুশির আমেজ। তিনি ছেলেকে এর আগে কখনো প্রাণ খুলে হাসতে দেখেন নি।
তাই এখন ছেলের হাসি দেখে তিনি মনে মনে ভাবছেন,
“আমার ছেলের ভালো থাকার একমাত্র কারণ সূচনা। অথচ আমি তাদের বিয়েতে রাজী ছিলাম না। আর আমার ছেলেটাও আমার হৃদয় জুড়িয়ে দিয়েছে। সে আমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কখনোই সূচনাকে বিয়ে করতো না। যেই মেয়েটি তার ভালো থাকার কারণ, মাহাথি সেই মেয়েকেই আমার খুশির জন্য ছাড়তে প্রস্তুত ছিল। এই ছেলে আমার মনের মতো হয়েছে। মাহাথির মাঝে মিরাজের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। আজ আমি মাহাথির জন্য সেই মানুষগুলোর সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছি, যারা বলতো আমার ছেলেরা তার বাবার মতো হবে। যারা বলতো স্বামী ছাড়া সন্তান মানুষ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আজ তাদের কাছেই মাহাথি প্রমাণ করে দিয়েছে আমার সন্তানরা আমার বাধ্য। তারা কখনোই তাদের মায়ের মতের বিরুদ্ধে যাবে না।”

আরিয়া এবার মাফিনের দিকে তাকালেন আর মনে মনে বললেন,
“মাফিনও আমার খুশির জন্য স্বস্তিকাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে। এবার শুধু আমার মেয়ে দু’টিকে ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে পারলেই আমি সন্তুষ্ট।”

এদিকে মাফিন ফোনে ব্যস্ত। আর স্বস্তিকা তার সাথে অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছে। কিন্তু মাফিন একটা কথাও শুনছে না। স্বস্তিকা এবার বিরক্তির সুরে বলে উঠলো,
“আপনি কি আমাকে ইগনোর করছেন?”

মাফিন আড়চোখে একবার স্বস্তিকার দিকে তাকিয়ে আবার ফোনে মনোযোগ দিলো।

স্বস্তিকা আবার বলল,
“কি হলো? উত্তর দিন।”

মাফিন তার ফোনটি পকেটে ঢুকিয়ে স্বস্তিকার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। এরপর তাকে একবার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলল,
“তুমি সেই কখন থেকে হাঁসের মতো প্যাক প্যাক করেই যাচ্ছো। তোমার কি ক্ষিধে পায় নি? শুনো, এটা তোমার বাসা নয়। তাই এখানে কেউ তোমার জন্য আলাদা ভাবে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে না। তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।”

“আপনিও চলুন।”

“না, আমি যাবো না। আমি খেয়ে নিয়েছি।”

“আমার জন্য একটু অপেক্ষা করলেন না?”

“আমি আবার কেন তোমার জন্য অপেক্ষা করবো?”

স্বস্তিকা মাফিনের কথায় দমে গেল। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আচ্ছা, খেতে হবে না। তবুও তো যাওয়া যায় আমার সাথে! আর আমি তো এখানে কাউকেই চিনি না। কার পাশে বসবো?”

মাফিন স্বস্তিকার হাত ধরে তাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলল,
“এখন খেয়ে নাও।”

স্বস্তিকা নিজের হাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার মাফিনের দিকে তাকালো। মাফিন এবার ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“এভাবে বসে থাকলে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামবে!”

স্বস্তিকা মুচকি হেসে বলল,
“এই প্রথম কোনো ছেলে আমার হাত ধরেছে।”

“এক্সকিউজ মি!”

স্বস্তিকা কপাল কুঁচকে বললো,
“আপনি এতো রুড কেন? একটু মিষ্টি ভাষী হওয়া যায় না? বড় ভাইয়া দেখলাম অনেক মিষ্টি সুরে ভাবীর সাথে কথা বলেন।”

“হেই ডোরেমন, আমি মাফিন, বুঝেছো? আমার মাঝে তুমি ভাইয়াকে খোঁজার চেষ্টা করো না।”

“আপনি ভুল ভাবছেন। আমি ওভাবে কথাটা বোঝায় নি!”

“শাট আপ। খেয়ে নাও।”

স্বস্তিকা মাথা নিচু করে চুপচাপ খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষ করে স্বস্তিকা চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে তখনই মাফিন তার পাশে বসে বলল,
“ডোরেমন, এই পায়েসটা খেয়ে দেখো। ভীষণ মজা হয়েছে।”

স্বস্তিকা মলিন মুখে মাফিনের দিকে তাকিয়ে পায়েসের বাটিটা হাতে নিলো। মাফিন আশেপাশে ভালোভাবে তাকিয়ে স্বস্তিকার দিকে ঝুঁকে বলল,
“রাগ করেছো?”

স্বস্তিকা এবার মাফিনের দিকে তাকালো। মাফিন বলল,
“আমি অনেক রুড। তাই না?”

স্বস্তিকা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। মাফিন স্বস্তিকার গাল টেনে ধরে বলল,
“আর তুমি এখনো বাচ্চা একটা মেয়ে।”

“আমি মোটেও বাচ্চা মেয়ে নয়।”

“তা তো তোমার কথাবার্তায় বোঝা যায়।”

“আপনি আমাকে বুঝতে পারছেন না।”

মাফিন মুচকি হেসে বললো,
“আমি আপনাকে ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। শুধু আপনার উড বি মাদার-ইন-ল আপনাকে বুঝতে পারছে না।”

“মানে?”

“এই যে আমার জন্য কোথা থেকে একটা বাচ্চা মেয়ে খুঁজে এনেছে!”

স্বস্তিকা ছলছল চোখে মাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনি আমাকে অপমান করছেন।”

মাফিন এবার গালে হাত দিয়ে স্বস্তিকার দিকে তাকিয়ে রইলো। স্বস্তিকা আবার বলল,
“আপনি আমাকে পছন্দ করেন না, তাই না?”

মাফিন বলল,
“তোমার আপনি করে বলাটা আমার খুব পছন্দের। অনেক টান আছে এই আপনি ডাকে। তুমি এভাবে আমাকে আপনি করে ডাকলে আমি আপনা-আপনিই তোমাকে পছন্দ করতে শুরু করবো।”

“মানে?”

মাফিন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“মানে তুমি একটা টিউব লাইট।”

৩৫।
দেখতে দেখতেই বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। সূচনাদের বাড়ি মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিকেলে হলুদ আর রাতে মেহেদী অনুষ্ঠান। সূচনার বান্ধবী ও কলিগরা এসে বিকেলে তাকে সাজিয়ে দিয়ে হলুদ পর্ব শেষ করেছে।
বিয়ে উপলক্ষে তাদের বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। তবে সূচনার ঘরটি ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে তার বান্ধবীরা। আর সেই ঘরেই মেহেদী অনুষ্ঠান হবে। তবে বাড়ির ছাদে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সূচনার বাবার দুই-দুইবার কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠান করার মতো সামর্থ্য ছিল না। তাই মেহেদী অনুষ্ঠানটি খুব সাদামাটাভাবেই হচ্ছে।
কিন্তু মারিয়া মনে মনে ভাবলো, এই দিনটিকে সে স্মরণীয় করে রাখবে। তাই মারিয়া ও মহুয়া তাদের কাজিন আফরা আর তুশিকে নিয়ে সূচনাদের বাসায় চলে এলো। তারা আসার পরই ঘরটিতে আমেজ ফুটে উঠলো। এতোক্ষণ তো মনেই হচ্ছিলো না, এই বাড়িতে কারো বিয়ে হচ্ছে।

মারিয়া ছোট একটা সাউন্ড বক্স ঘরের বাইরে রেখে গান চালিয়ে দিলো। তারপর শুরু হলো নাচ-গান। এদিকে মহুয়া বসে বসে সূচনার হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর মারিয়া বলে উঠলো,
“মিষ্টি ভাবী, আজ কিন্তু আমরা একটা আবদার করতেই পারি।”

সূচনা বলল, “কি আবদার?”

“হুম, এতোদিন তো ভাইয়াকে ভয়েস দিয়ে গান শুনিয়েছিলে। আজ আমাদেরকেই শুনিয়ে দাও।”

কথাটি শুনে সবাই সূচনার দিকে তাকালো। আর সূচনা লজ্জায় মাথা ঝুঁকালো।

মারিয়া আবার বলল,
“ভাবী, একটা গান গাইবে না? ভাইয়ার জন্য হলেও একটা গান গাও, প্লিজ। চোখ বন্ধ করে ভাইয়াকে ভাবতে ভাবতেই গাইতে পারো।”

সূচনা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। আর বাকীরা সূচনার কন্ঠে গান শুনার জন্য মনোযোগ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।

“আমাদের গল্পগুলো- অল্প সময় ঘর পাতালো
তারপর পথ হারালো- তোমায় আমায় নিয়ে
আগে যদি বুঝতো তারা- মনের নদীর তল পাবে না
বেহায়া মুখ পোড়াতো- অন্য কোথাও গিয়ে
আমাদের গল্পগুলো- অল্প সময় ঘর পাতালো
তারপর পথ হারালো- তোমায় আমায় নিয়ে
আগে যদি বুঝতো তারা- মনের নদীর তল পাবে না
বেহায়া মুখ পোড়াতো- অন্য কোথাও গিয়ে
আমাদের গল্পগুলো…
.
আমাদের গল্পগুলো- এক লাফেতেই আকাশ ছোঁয়া
আসমানী রঙ মাখতো- জাদুর ছড়ি দিয়ে
বোবা সব মুহূর্তদের- শুনতো কথা চুপটি করে
বলে নাকি ঘর বানাবে- রামধনুদের নিয়ে
আমাদের গল্পগুলো..
.
আমাদের গল্পগুলোর- লাগাম ছাড়া স্বপ্ন ছিল
ভোরে তার চকচকে রোদ- বৃষ্টি ছিল রাতে
একখানা জাহাজ বাড়ি- সেখান থেকেই ঝর্ণা শুরু
কথা ছিল দু’জন মিলেই- স্বপ্ন দেখবো তাতে
আমাদের ইচ্ছে ছিল- হারিয়ে যাবো ইচ্ছে করেই
নিজেদের মন ভাঙবো- নিজেই নেবো জুড়ে
জীবনের নতুন বানান- লিখবো দু’জন আজীবনে
প্রেমে রোজ শব্দ বসুক- খামখেয়ালের সুরে
আমাদের গল্পগুলো…
.
আমাদের গল্পগুলো- অল্প সময় ঘর পাতালো
তারপর হারিয়ে গেল- তোমায় আমায় নিয়ে
আগে যদি বুঝতো তারা- মনের নদীর তল পাবে না
বেহায়া মুখ পোড়াতো- অন্য কোথাও গিয়ে
বেহায়া মুখ পোড়াতো- অন্য কোথাও গিয়ে
বেহায়া মুখ পোড়াতো- অন্য কোথাও গিয়ে..”

পরের দিন রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে মাহাথি ও সূচনার বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হলো। এদিকে সূচনা বউ সেজে স্টেজে বসে আছে। একটু পর মাহাথি আসবে। মারিয়া ও মহুয়া ক্লাবেই আছে। হঠাৎ মারিয়ার ফোনে মাফিনের কল এলো। মারিয়া ক্লাব থেকে বের হয়ে কল রিসিভ করতেই মাফিন বলল,
“মারু, একটা দুঃসংবাদ আছে।”

মারিয়া মাফিনের কথাটি শুনে ভয়ে আঁতকে উঠলো। কাঁপা কন্ঠে বললো,
“কি হয়েছে, ভাইয়া? মা আবার উলটে যায় নি তো?”

“দূর পাগল! ভাইয়া-ভাবীর তো আক্দ হয়েই গেছে। মা আবার উলটে যাবে কেন?”

“তাহলে কি হয়েছে?”

ফোনের ওপাশে মাফিনের মুখে দুঃসংবাদটি শুনে মারিয়া স্তব্ধ হয়ে গেলো। আজ এতো আনন্দের দিনে এমন সংবাদ সে আশা করে নি। তার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, এই সংবাদটি তার জীবনের গতিপথ পালটে দেবে। কিন্তু মারিয়ার কেন এমন মনে হচ্ছে?

হঠাৎ এক বিষ্ময়কর সাহস মারিয়ার মনে ভর করলো। সে মহুয়ার কাছে এসে বলল,
“মহু, তুই এদিকটা সামলা। মা একটু পর আসবেন। আর ভাইয়াদের আসতে একটু দেরী হবে। আর আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।”

“কোথায় যাচ্ছিস?”

“হসপিটালে।”

“কিন্তু কেন? কি হয়েছে?”

মারিয়া মহুয়ার কথার কোনো উত্তর না দিয়েই বেরিয়ে পড়লো। এদিকে দূর থেকে মারিয়ার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত চেহারা দেখে সূচনার মনে ভয় ভীড় করতে লাগলো। সে মনে মনে বললো,
“মাহার ক্লাবে আসতে দেরী হচ্ছে কেন?”

সূচনা এসব ভাবতে ভাবতেই মাহাথিকে কল করলো। কিন্তু মাহাথির ফোনে কল যাচ্ছে না। সূচনা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে আছে। তার চোখ দুটি তার ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজছে।

চলবে-

(🥤গল্পের মূল প্লট আগামী পর্ব থেকেই শুরু হবে। এখন দুঃসংবাদটি নিয়ে ভাবতে ভাবতেই সবার দুই দিন পার হয়ে যাবে। লেখিকা যা স্লো, দুইদিন পরও গল্প দিতে পারে কিনা সন্দেহ।😬)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here