নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ১২

0
856

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১২

আইরাত মাত্রই কি দেখলো তা ভেবে পায় না। এটা সত্যি নাকি ভূল। বিভ্রান্ত দূর করার জন্য চোখ দুটো হাতের তালু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে পিটপিট করে চোখ মেলে আবার সামনের দিকে তাকায়। কিন্তু না এবারও একদম পরিষ্কার। কিছুই নেই। সামনে কেউ নেই। তাহলে কাকে দেখলো আইরাত। আসলে রুম টাও অন্ধকার। আলো নেই। বাইরে থেকে জোছনা আলো আর ল্যাম্প পোস্টের কিছুটা আলো এসে ঘর টা কে আবছা আলোকিত করে রেখেছে। আলো-আঁধারের এক অপরুম মিলন। ভালো লাগার মতো একটা পরিবেশ। তবে এই পরিবেশে আইরাতের এখন যেন এক প্রকার ভয়ই লাগছে। আইরাতের প্রচুর মাথা ব্যাথা করছিলো তাই সে মাথায় পানি দিয়ে এসেছে। যার ফলে তার চুল গুলোও ভিজা। নিজের হাত থেকে টাওয়াল টা রেখে দিয়ে কপাল কুচকে ধীর পায়ে সামনে দিয়ে হাটা ধরে আইরাত। তার কেন যেন মনে হচ্ছে যে এখানে কেউ আছে। আইরাতের চোখ গুলো যেন সামনে কাউকে খুঁজে চলেছে। তবে আইরাত আসলে যাকে খুজছে সে আইরাতের সামনে না বরং ঠিক তার পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে। হ্যাঁ আব্রাহাম আইরাতের পেছনেই চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত যেদিকে যাচ্ছে আব্রাহামও তার পেছন পেছন সেদিকে যাচ্ছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে৷ আইরাত ভয় পেয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবেই কিছুক্ষন থাকার পর আব্রাহাম আইরাতের কানের কাছে গিয়ে “ভুউউউউউ” করে উঠে। এতে আইরাত চমকে গিয়ে চিৎকার করে উঠে। বেশ ভয় পেয়ে গেছে। সাথে সাথে পেছনে তাকিয়ে আব্রাহামকে দেখে আরেক দফা চমক খেয়ে পরে যেতে ধরলে আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে। আইরাত চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম তার দিকে কিছুটা ঝুকে তাকিয়ে আছে। এই মূহুর্তে যে এমন কিছু একটা হবে আইরাত তা ভাবেই নি। পরে যেতে ধরলে আইরাতের হাত টা আপনা আপনিই আব্রাহামের কাধের ওপর চলে যায়। বর্তমানে আব্রাহামের এক হাত আইরাতের কোমড়ে আরকটা হাত আইরাতের হাতের ভাজে। আইরাত ভয় পেয়ে থাকলেও আব্রাহাম যেন এই মূহুর্ত টাকে বেশ উপভোগ করছে। তার খানিক পর আইরাতের খেয়াল আসে যে সে এখন আব্রাহামের বাহুতে ঝুলছে। কথা টা মনে পরতেই আইরাত দ্রুত উঠে পরে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে, আব্রাহামের কাছ থেকে সরে আসতে চাইলে আব্রাহাম যেন আরো একটু আকড়ে ধরে তকে। আইরাত যেন আব্রাহামের সাথে নিজের চোখ গুলোই মেলাতে পারছে না। আব্রাহামের ওই চোখ দুটো তে তাকালে আইরাতের কেমন যেন লাগে। ওই চোখ গুলোতে তাকিয়ে থাকার সাধ্য আইরাতের নেয়। আইরাত নিজেকে ছাড়িয়ে এসে পরে। আব্রাহামও ছেড়ে দেয়। তবে এবার আইরাতের মাথায় খেয়াল আসে যে এতো রাতে এই আব্রাহাম এখানে কি করছে। তখনই আইরাত রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আব্রাহামের দিকে।

আইরাত;; এই আপনি এখানে কি করছেন? কি করে এলেন? কীভাবে এলেন? কোথা দিয়ে এলেন? এতো রাতে কেন এলেন?

আব্রাহাম;; আরে বাবা আস্তে আস্তে। একটু দম তো ছাড়ো।

আইরাত;; আপনি কাজই করেছেন দম বন্ধের মতো।

আব্রাহাম;; এখনো এমন কিছুই করি নি।

আইরাত;; আজাইরা কথা বন্ধ করুন। এখানে কি করছেন আপনি?

আব্রাহাম;; আরে তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই এসে পরেছি ব্যাস।

আইরাত;; আমি কোন শো-পিছ না যে বার বার দেখবেন।

আব্রাহাম;; রাগি চেহারা, ভেজা চুল, স্নিগ্ধ মুখস্রী। বেইব আমি মরেই যাবো। হায়য়য়য়য়…

আইরাত;; স্টপ ননসেন্স। আপনি যান এখান থেকে। চাচ্চু যদি একবার আপনাকে দেখে ফেলে কি যে হবে আল্লাহ। আপনি যান এখান থেকে।

আব্রাহাম;; ও হ্যালো মিস। আমি কি কাউকে দেখে ভয় পাই নাকি। কারো বাপও আমার কিছুই করতে পারবে না।

আব্রাহামের কথা শনে আইরাত দুই হাত ভাজ করে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে ওঠে…

আইরাত;; এতো রাতে একটা মেয়ের ঘরে আসা অবশ্যই কোন ভালো ঘরের ছেলের লক্ষণ নয় মিস্টার আব্রাহাম চৌধুরী।

আব্রাহাম;; ঘর তো আমার অনেক ভালো তবে আমি ছেলে হিসেবে বেশি একটা সুবিধের না। তা আমি নিজেও জানি। আমি যতো টা ভালো তার থেকে দ্বীগুণ বেশি খারাপ।

আইরাত;; হয়েছে আপনার এবার প্লিজ যান এখান থেকে।

আব্রাহাম;; মেনার্স নামক জিনিস মোটেও নেই তোমার মাঝে। আরে বেইব বাসায় কেউ আসলে তাকে খাতির যত্ন করতে হয় আর এই তুমি কি বলছো?

আইরাত;; মেনার্স আপনি যদি এই মেনার্সের কথা না বলেন তাহলেই ভালো হবে।

আব্রাহাম এবার গিয়ে সোজা বিছানাতে বসে পরে। তা দেখে আইরাত আরো অবাক। আব্রাহামের কাছে তেড়ে গিয়ে বলে ওঠে…

আইরাত;; এই এখনে বসছেন কেন আপনি। যান এখান থেকে।

আব্রাহাম;; আহা, এভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছো কেন?

আইরাত;; ওকে আমাকে দেখতে এসেছিলেন তাই না, দেখেছেন তো। শেষ, এবার যান প্লিজ। আমাকে রেহায় দিন দয়া করে।

আব্রাহাম;; হুমম।

এই কথা বলেই আব্রাহাম উঠে পরে। আইরাত তার চোখে মুখে রাগ আর চমক নিয়েই তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম ঘুড়ে গিয়ে আইরাতের পেছনে দাঁড়ায়। তারপর আইরাতকে পেছন থেকেই হেচকা এক টান দেয় নিজের দিকে। যার ফলে আইরাতের পিঠ আব্রাহামের বডির সাথে ঠেকে যায়। আব্রাহাম আইরাতকে নিজের সাথে চেপে ধরেই তার ভেজা চুল গুলোতে নাক ডুবিয়ে দেয়। আইরাতের খুব বেশি নারভাস লাগছে এখন। কিছু বলতেও পারছে না। এই ছেলের কোন বিশ্বাস নেই কখন কি করে বসে বলা বড়ো দায়। আইরাতের হাত কাপছে। আব্রাহাম তার চুলে নিজের নাক মুখ ডুবিয়ে রেখেই বলে…

আব্রাহাম;; এতো কেপো না এখনো তেমন কিছুই হয় নি। কিন্তু পরবর্তীতে যা ই হবে বা আমি করবো সব কিছুর জন্যে তুমিই দায়ি। কেননা প্রত্যেক বার তুমি নিজেই আমাকে নেশা ধরিয়ে দাও। মদ্যপানেও এতো টা তীব্র মাদকতা কাজ করে না যতো টা তুমি আশে পাশে থাকলে কাজ করে আমার মাঝে। আমার নেশা তুমি আইরাত।

আব্রাহামের কণ্ঠে এক ঘোর লাগানো ব্যাপার আছে। আইরাতের পক্ষে আর সম্ভব না এভাবে থাকা। বারবার শিউরে উঠছে সে। আইরাতের ব্যাপার টা আব্রাহাম বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে তাই মুচকি হেসে সে নিজেই আইরাত কে ছেড়ে দেয়। ছাড়া পাবার সাথে সাথে আইরাত বেশ দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। ঘন ঘন দম ছাড়ছে যেন এতোক্ষণ ভরা তার দম কেউ আটকে রেখেছিলো। আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে আর বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে।

আব্রাহাম;; শরীর অনেক গরম তোমার। জ্বর অনেক এসেছে।

আইরাত;; আব.. না আসলে তেমন কিছুনা ঠিক হয়ে যাবে।

আব্রাহাম এগিয়ে গিয়ে আইরাতের গালে কপালে হাত দিয়ে দেখে। না, এখনো শরীরের তাপমাত্রা বেশ চড়া।

আইরাত;; ব্যাপার না রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।

আব্রাহাম;; হুম।

আইরাত;; আপনি যাবেন এখন?

আব্রাহাম;; আরে বাবা কিছু তো রেস্পেক্ট দাও।

আইরাত;; কেন দিবো?

আব্রাহাম;; কেন দিবে? মানে যেখানে মানুষ আমাকে দেখার জন্য লাইন ধরে থাকে। এতো বড়ো বিজনেস সামলাই সেখানে তুমি আমাকে চলে যেতে বলছো। আর এখন বলছো যে কেন রেস্পেক্ট দিবে?

আইরাত;; মাফিয়া।

আইরাতের কথায় আব্রাহাম অন্যদিকে চোখ ঘুড়িয়ে তাকায়। ভেবে লাভ নেই কারণ এটা তো সত্যিই তাই না।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো?!

আইরাত;; কিছু না।

আব্রাহাম;; হুম

আইরাত;; ওয়েট ওয়েট আপনি আমার রুমে এসেছেন সোজা। কিন্তু আপনি কোন দিক দিয়ে এসেছেন বলুন তো?

আব্রাহাম;; দেওয়াল টপকে।

আইরাত;; কিইই। হেহেহেহেহেহেহেহে 😅😆।

আইরাত হেসেই খুন। আব্রাহাম তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; এভাবে হাসছো কেন?

আইরাত;; আচ্ছা জ্বি তো এই মাফিয়ারা দেওয়ালও টপকায় নাকি। আমার তা সত্যিই জানা ছিলো না 😆।

আব্রাহাম;; মুখ বন্ধ করো৷ যা করেছি বাধ্য হয়ে তোমার জন্যই করতে হয়েছে।

আইরাত;; আপনি যদি এবার আমার রুম থেকে দয়া করে বাইরে চলে যান তাহলে আমার খুব উপকার হবে 🙂।

আব্রাহাম;; ওকে দ্যান। আমি চলি, নিজের খেয়াল রেখো।

এই বলেই আব্রাহাম তার বাইকের চাবি টা হাতের আঙুলে ঘুড়িয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে আইরাতের রুমের দরজা খুলে বাইরে চলে গেলো। আব্রাহাম চলে গেতেই আইরাত বুক ভরে একটা দম ছাড়ে কিন্তু পরক্ষণেই আইরাতের মনে পরে যে আব্রাহাম দরজা দিয়ে বাইরে বের হয়েছে। কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ।

আইরাত;; এই এই দাড়ান। এইই দাড়ান আপনি।

আইরাত দ্রুত তার রুম থেকে বাইরে বের হয়ে পরে। দেখে আব্রাহাম সামনে এগিয়েই যাচ্ছে। আইরাত দ্রুত গিয়ে আব্রাহামের হাত খামছে ধরে।

আইরাত;; এই আপনি পাগল। এখান দিয়ে কেন যাচ্ছেন। কেউ দেখলে সব শে…..

আব্রাহাম;; এই চুপ করো তো। এতো ভয় পাও কেন ভীতুর ডিম একটা। আমি এখান দিয়েই যাবো গেলাম আমি। বায়

আইরাতের কথা না শুনেই আব্রাহাম চলে যায়। আইরাত ওপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। দেখছে যে আব্রাহাম হলরুমে গিয়ে আশে পাশে না তাকিয়েই নিজের মন মতো করে বাইরে চলে গেলো মেইন দরজা খুলে। ভাগ্য ভালো যে সবাই ঘুমিয়ে আছে নয়তো আল্লাহ মালুম কি হতো। আব্রাহাম বাসা থেকে চলে গেলে আইরাত যেন এক শান্তির শ্বাস ছাড়ে। এই আসলেই পাগল। তবে এখন আইরাতের মাথা ব্যাথা আরো বেড়ে গেলো। সে ভেতরে নিজের রুমে চলে যায়। গিয়েই মাথা চেপে ধরে। বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পরে। জ্বর নামার নাম নিচ্ছে না।


দুই দিন ধরে আইরাত না ভার্সিটি যাচ্ছে আর না হোটেলে। কারণ সে ইদানীং বেশ অসুস্থ ছিলো। গতো দুই দিন যায় নি। তবে আজ ভেবেছে যে যাবে। ভার্সিটি নেই দিয়া ফোন করে বলে দিয়েছে। তাই আইরাত ভাবলো যে আজ যেহেতু শরীর টা ভালো আর আর জ্বর নেই তাই হোটেল যাওয়া যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। আইরাত রেডি হয়ে তার চাচ্চু কে বলে হোটেলে চলে যায়। এশ কালারের লং টপস্ আর ব্লেক কালারের পেন্ট পরেই আইরাত বের হয়ে পরে। হোটেলে যেতেই অবনি দ্রুত আইরাতের কাছে আসে।

অবনি;; এসেছিস তুই?

আইরাত;; হ্যাঁ কিন্তু কেন কি হয়েছে?

অবনি;; বল কি হয় নি!

আইরাত;; মানে?

অবনি;; মানে এই যে দিয়ার চাচা এখনো বাইরে থেকে আসে নি উনি অনেক ব্যাস্ত ছিলো আর আমি তাকে তোর ব্যাপারে বলার সুযোগ টাই পাই নি।

আইরাত;; কি?

অবনি;; হ্যাঁ আর ওই যে লেট লতিফ আছে না ও তোকে ডেকেছে। দুই দিন ধরে কাজে আসছিস না তাই৷

আইরাত;; কিন্তু।

অবনি;; ওই দেখ ওই লতিফ বেটা এদিকেই আসছে।

অবনি আইরাতকে ইশারা দেয়, আইরাত তার পেছনে তাকিয়ে দেখে লতিফ শেখ এদিকেই আসছে। আইরাত ঠিক হয়ে দাঁড়ায়।

লতিফ;; আইরাত..!

আইরাত;; জ্বি

লতিফ;; দুই দিন ধরে কাজ আসছো না ব্যাপার কি। এখান কার নিয়ম সব জানো তো?

আইরাত;; আসলে আমি একটু অসুস্থ ছিলাম।

লিতিফ;; তার জন্য ছুটি নেওয়া যেতো।

আইরাত;; জ্বি আসলে আমি ভেবেছি যে দিয়ার চাচ্চু কে বলে দিবো কিন্তু…

লতিফ;; উনি ব্যাস্ত। তুমি জানো না যে এই দুই দিনের মাঝেই তিন তিন টা পার্টি আমাদের হাত থেকে চলে গেছে৷ সব তোমার জন্য। হোটেলের ক্ষতি টাও তোমার জন্যই হয়েছে।

আইরাত;; কিন্তু আমি…..

লতিফ;; You are fired….

আইরাত;; কি কিন্তু আমার কথা টা…..

লতিফ;; I said you are fired Airat….

এই সামান্য কথায় আইরাতকে তার চাকরি থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়। আইরাত আর কিছুই বলে না চলে আসে সোজা সেখান থেকে। রাগ লাগছে তার অনেক। অবনি আইরাতকে অনেক ডাক দেয় কিন্তু আইরাত এসে পরে। অবনির মন চাইছে এই লতিফের মাথা ফাটাতে। আইরাত বাইরে এসে পরে। তার মাথায় চিন্তা ভর করে বসেছে। চাকরি টাই আইরাতের চলার একমাত্র পন্থা ছিলো। এখন এটাও চলে গেলো তাহলে এখন সে কি করে চলবে। নিজের পড়াশোনার খরচ টা কি করে চালাবে। তার চাচি তো তাকে বাসা থেকেই এবার বেরই করে দিবে। একটা কানা কড়িও তার পেছনে দিবে না। এখন কি করবে সে। আইরাতের এখন কান্না পাচ্ছে। এই জব টা যে তার জন্য ঠিক কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তা বলার বাইরে। আইরাত এগুলো চিন্তা করছে আর এক মনে হেটে চলেছে। কোথায় যে যাচ্ছে তার খেয়াল নেই।

অন্যদিকে এখন আব্রাহাম আর রাশেদ একটা খোলা মেলা জায়গায় বসে আছে। আসলে একটা লোকের সাথে আব্রাহামের দেখা করবার কথা। এই সেই লোক যার সাথে আব্রাহাম সেইদিন বারে দেখা করেছিলো। গানের ব্যাপারে কথা হয়েছিলো তার সাথে। কবির নাম। এই কবির বেশিই বারাবারি করছে তাই আজ আব্রাহামের সাথে দেখা করা। এটার কিছুটা দূরেই আইরাতের হোটেল টা রয়েছে। আব্রাহামের ধারণা আজ হয়তো আইরাত কাজে গিয়েছে তাই এখান থেকে সোজা হোটেলে চলে যাবে। এখন আব্রাহাম আর কবির একটা টেবিলে বসে আছে আর রাশেদ আব্রাহামের পেছনে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।

কবির;; স্যার, দেখুন আসলে…

আব্রাহাম;; দেখ মানলাম খুন-খারাবা করি। এগুলো ঝামেলার সাথে জড়িত আছি কিন্তু তাই বলে যে কোন বেআইনি কাজের সাথে জড়িয়ে থাকবো এটা কি করে ভাবলি তুই।

কবির;; স্যার, আমি

আব্রাহাম;; কোন কৈফিয়ত শুনবো না আমি। তুই ভাবলি কি করে যে তুই আমার কাছে লাইসেন্স ছাড়া রিভলবার সাপ্লাই করবি আর আমি টের পাবো না।

কবির;; স্যার মাফ চাইছি।

আব্রাহাম;; আমাকে ফাসাতে চেয়েছিলি। কতো টাকা খেয়েছিস?

কবির;; ছ ছ ছয় লাক্ষ।

আব্রাহাম;; ছয় লাক্ষ, দেখ এটা একটা রিভলবার। (হাতে রিভলবার টা ঘোড়াতে ঘোড়াতে) এতে ঠিক ছয় টা গুলি থাকে। তুই ছয় লাক্ষ টাকা খেয়েছিস এখন যদি এই ছয় টা গুলির সব গুলো আমি তোর ওই গবর ভরা মাথায় ঢুকিয়ে দেয় তাহলে।

কবির;; স্যার স্যার আর হবে না স্যার। আমি এই ব্যাবসাই ছেড়ে দেবো৷ স্যার মাফ করে দিন।

আব্রাহামের মেজাজ টা এতো পরিমানে খারাপ যে সে কবিরের কোন আকুতিই আর শুনলো না। কবিরের কাছে গিয়ে তার কলার ধরে তুলে তার গলায় নিজের হাত দিয়ে পেচিয়ে ধরে। আরেক হাতে রিভলবার নিয়ে সব গুলো গুলিই কবিরের ভেজার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো। নীরবতার মাঝে আওয়াজ তার স্পষ্ট। গাছে থাকা পাখি গুলোও যেন ভয় পেয়ে তাদের পাখা গুলো দ্রুত গতীতে ঝাপটে দূরে উড়ে গেলো। রাশেদ এতোক্ষন মাথা নিচু করে ছিলো তবে কি যেন একটা মনে করে পাশে তাকায় দেখে যে আইরাত আসছে এদিকেই। রাশেদ আইরাতকে চিনে আব্রাহামের মুখে অনেক কথা শুনেছে। রাশেদ আব্রাহাম কে দ্রুত বলে ওঠে……

রাশেদ;; স্যার স্যার, আইরাত ম্যাম আসছে এদিকেই। স্যার ম্যাম আসছে।

আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে আইরাত আসলেই এদিকেই আসছে। আব্রাহাম কবিরের নিথর দেহ টা রাশেদের দিকে ছুড়ে মারে। রাশেদ তা ধরে ফেলে।

আব্রাহাম;; এই কীট কে দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আসো।

আব্রাহামের হাতে রক্তের কিছু ছিটেফোঁটা লেগেছিলো টেবিলের ওপর থেকে টিস্যু নিয়ে হাত ভালোভাবে মুছে এমন একটা ভাব ধরলো যেন এখানে এখন এই মূহুর্তে কিছুই হয় নি। আব্রাহাম নিজের জেকেট ঠিক করতে করতে আইরাতের দিকে পা বাড়ায়। আর রাশেদ দ্রুত কবিরের লাশ টাকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে চলে যায়। আইরাত এতোক্ষণ এক ধ্যানে সামনে হাটতে থাকলেও এবার তার খেয়াল আসে। সামনে আব্রাহাম তার দিকেই হেটে আসছে। তবে এই সময় আইরাতের মেজাজ ভালো না। রাগও লাগছে তার সাথে খারাপও।

আব্রাহাম;; হেই বেইব তুমি এখানে। আর কেমন আছো?

আইরাত;; _____________________

আব্রাহাম;; হুয়াট হ্যাপেন্ড?

আইরাত;; কিছু না সরুন সামনে থেকে।

আব্রাহাম;; বলবে তো কি হয়েছে!

আইরাত কিছু না বলে চলে যাবে কিন্তু আব্রাহাম আবার আইরাতের হাত ধরে টেনে এনে নিজের সামনে দাড় করিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; সেই প্রথম দিন কার মতো বোবা হলে নাকি বলবে তো কি হয়েছে?

আইরাত;; I am fired,, চাকরি থেকে বের করে দিয়েছে আমায়। হয়েছে এবার (চিল্লিয়ে)। এবার সরুন তো। ভালো লাগছে না আমার৷ চিন্তায় মরে যাচ্ছি। সরুন।

আইরাত এই বলেই রাগে সেখান থেকে চলে আসে। আব্রাহাম আর তাকে আটকায় না। তবে আব্রাহামের মাথা রাগে তো আগুন হয়ে ছিলো আগেই আর এখন যেন রক্ত চড়ে গেলো। মানে আইরাত কে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছে, এতো বড়ো সাহস। কলিজা টা ঠিক কতো বড়ো হয়েছে তা মাপতে হবে। আব্রাহাম চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে। গ্লাস টা চোখে দিয়ে আইরাতের হোটেলের দিকে যাওয়া ধরে। যে আইরাতকে চাকরি থেকে বের করেছে তাকে যে আব্রাহাম কি করে বসবে এখন। খুনই না করে ফেলে তাকে। এতোই রাগ লাগছে আব্রাহামের যে সে নিজের চারদিকের কিছুই খেয়াল করছে না। শুধু নিজের মতো করে যাচ্ছে। আর চারদিকের মানুষ তাকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here