নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ১৩

0
847

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৩

আইরাত কে তার চাকরি থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছে বলে অবনির মন-মেজাজ সব খারাপ। আইরাতকে ছাড়া কেমন একা একা লাগে। অবনি তার মুখ টাকে বাংলার পাচ বানিয়ে দিয়ে কাজ করছিলো কিন্তু তখনই কারো ভেতরে আসাও আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকায়। দেখে যে আব্রাহাম। এই কয়েকদিনে অবনি এই টুকু তো বুঝেই গেছে যে আব্রাহাম এখানে আইরাতের জন্যই আসে। তবে এখন তো আইরাত নেই। অবনি তাকিয়ে আছে আব্রাহামের দিকে। আজ তার হাব ভাব কেমন একটু আলাদা লাগছে। অবনি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আব্রাহাম সোজা তার কাছে চলে যায়।

আব্রাহাম;; অবনি, আইরাত এসেছিলো এখানে?

অবনি;; জ্ব জ্বি স্যার, কিন্তু

আব্রাহাম;; ওকে এখান থেকে কে বের করেছে?

অবনি;; স স স্যার আসলে মানে…

আব্রাহাম;; বলো (কড়া গলায়)

অবনি;; আসলে দিয়ার চাচ্চু আফজাল আংকেল কিছু কাজের জন্যে বাইরে গিয়েছেন। কিন্তু আইরাত তো অসুস্থ ছিলো সে এখানে আসতে পারে নি দুই দিন। আর এই কথা টা আমি আংকেল কে বলতে পারি নি। তো লতিফ স্যার যে ছিলো উনি আজ কোন কথা না শুনেই আইরাতের চাকরি খেয়ে দিয়েছেন।

আব্রাহাম;; এখন শালাকে আমি না কাচা খেয়ে ফেলি।

অবনি;; মা মা মানে…

আব্রাহাম;; কোথায় এই লতিফ না কি যেন, কোথায় এই?

অবনি;; ওইদিকে।

অবনি তার হাতের ইশারাতে আব্রাহাম কে দেখিয়ে দেয়। আব্রাহাম কিছু না বলেই ভারি ভারি কয়েক কদম ফেলে সেদিকে চলে যায়। আব্রাহামের যেতেই অবনি দেয় এক ভেটকি, তারপর আবার কাজে চলে যায়। আর আব্রাহাম কোন প্রকার কোন কথা না বলেই সোজা এই লতিফের কেবিনে যায়। লতিফ একজন লোকের সাথে কথা বলছিলো। এভাবে বিনা পারমিশনেই কারো ভেতরে আসাতে তিনি ক্ষেপে যান। রেগে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আব্রাহাম দ্রুত গিয়ে লতিফের কলার খামছে ধরে তাকে এক টানে চেয়ারে বসা থেকে দাড় করিয়ে ফেলে। এতোক্ষণে লতিফ বুঝলো যে এটা আব্রাহাম। সে তো একদম ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।

লতিফ;; স স স্যার আপ আপনি এ এখানে…

আব্রাহাম;; হ্যাঁ এখানে তোর কলিজা টা মাপতে এসেছিলাম। তোর সাহস হয় কি করে আইরাত কে চাকরি থেকে বের করার।

লতিফ;; স্যার সে সে আমাদের হ হোটেলের নিয়ম মান মানে ন নি।

লতিফের এই কথা বলায় আব্রাহাম তার গাল বরাবর সজোরে দেয় এক ঘুষি। এতে লতিফ বর্তমানে চোখে সরষেফুল দেখছে।

আব্রাহাম;; এই রইলো তোর নিয়ম। তুই কি বুঝবি যে একটা মেয়ে কম কষ্টে পরে হোটেলে বা বাইরে কাজ করতে যায় না। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের এক আনা খরচ করবার আগে হাজার বার ভাবতে হয়। সিক ছিলো আইরাত তাই আসে নি। ওকে এক্সপ্লেইন করার সুযোগ টা তো দিতি। তোকে আমি এখন এই মূহুর্তে পথে নামিয়ে দিতে পারি তোর কোন ধারনা আছে।

লতিফ;; স্যার স্যার আমাকে মাফ করে দিন। আমার বাসায় বউ বাচ্চা আছে। স্যার আর এমন হবে না। কি করতে হবে আমাকে শুধু একবার বলেন স্যার কি করতে হবে।

আব্রাহাম;; এখন এসেছিস লাইনে। শোন বে আইরাতকে এই মূহুর্তে ফোন দিবি। পুরো হোটেলের মানুষের সামনে তার কাছে ক্ষমা চাইবি। ক্লিয়ার? (কলার ধরেই)

লতিফ;; জ জ্ব জ্বি স্যার জ্বি।

আব্রাহাম;; ফোন কর, ফোন কর এক্ষন করবি কর।

আব্রাহাম লতিফের কলার ছেড়ে দেয়। লতিফ প্রচুর ঘাবড়ে আছে। ফোন হাতে নিয়েই বারবার কাপছে। খুব কষ্টে হাতে ফোন ধরে আইরাতের নাম্বারে ফোন দেয়।

আইরাত তো পার্কে নদীর পাশে বসে রয়েছে মন মরা হয়ে। বাড়ি গিয়ে যদি তার চাচিকে বলেছে যে চাকরি আর নেই তাহলে ইন্না-লিল্লাহ। আইরাত চিন্তায় দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে রেখে দিয়েছে। তখনই আইরাতের ফোনে ফোন আসে। সে কিছুটা চমকে গিয়ে পাশে থাকা ফোনের স্ক্রিনে তাকায়। দেখে লতিফের নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। আইরাত কপাল কুচকে সেদিকে তাকায়। এই লতিফ এখন ফোন দিচ্ছে কেন। এগুলো ভাবতে ভাবতেই আইরাত ফোন রিসিভ করে।

আইরাত;; হ্যালো…

লতিফ;; হ্য হ হ্যালো হ্যালো আইরাত।

আইরাত;; জ্বি

লতিফের ভয়ে গলা দিয়ে ঠিক ঠাক ভাবে আওয়াজই আসছে না। আব্রাহাম লতিফের সামনে দুই হাত ভাজ করে রাগি চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ফোনের স্পিকার লাউডে রাখা।

লতিফ;; আই আইরাত ত তুমি হোটেলে এসো তো এখনই জলদি।

আইরাত;; কিন্তু কেন?

লতিফ;; না মানে একটু কাজ ছিলো তো, তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো।

আইরাত;; আব..এখনই আসতে হবে?

লতিফ;; আমি বাচতে চাই মা। জলদি আসো।

আইরাত;; বাচতে চাই মানে! আচ্ছা আমি আসছি।

এই বলেই আইরাত ফোন কেটে দেয়। তবে সে ভাবছে যে এই লতিফের আবার কি হলো। যাই হোক আইরাত উঠে গিয়ে হোটেলের দিকে হাটা ধরে। আর ওইদিকে আব্রাহাম লতিফ কে বলে…

আব্রাহাম;; হুম তো আইরাত আসলে কি কি বলবি জানিস তো?

লতিফ;; জ্বি জ্বি স্যার জানি জানি।

আব্রাহাম;; হুম। শুধু মাফ চাবি আর কিছু বলতে হবে না তোকে।

লতিফ;; মানে স্যার?

আব্রাহাম;; মানে এই যে তোকে শুধু সবার সামনে আইরাতের কাছে মাফ চেতে হবে। চাকরি ফেরত দিতে হবে না। বাকি টা আমি বুঝবো।

লতিফ;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম বের হয়ে পরে। আব্রাহামের যেতেই লতিফ ধপ করে চেয়ারে বসে পরে। লতিফের কোট-টাই সব এলোমেলো হয়ে গেছে। চোখে থাকা চশমা টা খুলে টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেলে। আব্রাহাম বাইরে বের হয়ে পরে। আর অবনি শুধু একটু উঁকি দিয়ে দেখে। আব্রাহামের যাওয়ার প্রায় পনেরো মিনিট পর আইরাত আসে। আইরাতের আসতেই সবাই একদম চুপ মেরে যায়। আইরাত ব্যাপার টা খেয়াল করে। কেন এমন হলো। আইরাত ভেতরে এসে একটা টেবিলে বসে। তখনই অবনি গিয়ে ধপ করে আইরাতের পাশে বসে পরে।

আইরাত;; এই তুই কিছু জানিস মানে আমাকে আবার কেন ডাকলো?

অবনি;; কেন ডেকেছে তা তো জানি না। উনার কাছ থেকেই জেনে নে।

আইরাত আর অবনি কথা বলছিলো তখনই লতিফ হুমড়ি খেয়ে আইরাতের সামনে আসে। মানে একটা মাছ কে পানি থেকে বের করে মাটির ওপর রেখে দিলে যেমন ছটফট করে ঠিক তেমন অবস্থা এখন এই লতিফের।

লতিফ;; আইরাত, এসেছো?

আইরাত;; জ্বি স্যার, আপনি ডেকেছিলেন।

লতিফ;; আমাকে মাফ করে দাও। আই এম সরি। আসলে আমি বুঝি নি। তোমাকে বলার সুযোগ টা দেওয়া আমার উচিত ছিলো। মানুষের সুবিধা-অসুবিধা থাকতেই পারে। এটা আমার বোঝা উচিত ছিলো। সরি আইরাত। এমঅন আর হবে না।

আইরাতের বুঝে আসছে না সে এই লতিফের হলো কি দিন দুপুরে ভূতে ধরেছে নাকি। এমন প্রলাপ কেন বকছে৷

আইরাত;; আব,,না না স্যার ঠিক আছে। ব্যাপার না। আমি কিছু মনে করি নি।

লতিফ;; আল্লাহ বাইচা গেলাম।

আসলে আব্রাহাম হোটেলের বাইরে যায় নি। সে একটা কিণারের টেবিলের মুখের ওপরে নিউজ পেপার নিয়ে বসে আছে। আর লতিফের কান্ড দেখছে। নিউজ পেপার দিয়েছে যেন আইরাত দেখতে না পারে। আর কেউ জানুক বা না জানুক কিন্তু লতিফ জানে যে আব্রাহাম এখানেই রয়েছে৷ লতিফ আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম চোখ গরম করে তার দিকে তাকায়। যার মানে আর কিছু বলার দরকার নেই, বারতি প্যাচাল যেন কম পারে। তাই লতিফ মাথা নিচু করে চলে যায়। আইরাতের এই মূহুর্তে কি পরিমান হাসি যে পাচ্ছে তা একমাত্র সে আর অবনিই জানে। অবনি তো হাসি আটকাতে না পেরে অন্য দিকে ঘুড়ে মাথা চুলকাচ্ছে। আইরাত মাথা নিচু করে মিটিমিটি হাসছে। লতিফ চলে যায়।

অবনি;; যাক ব্যাটা এতো দিনে শিক্ষা হলো।

আইরাত;; হ্যাঁ তবে আমি আবার এখানে আসবো কিনা তা তো আর বললো না।

অবনি;; আরে ধুর বাদ দে তো৷

আইরাত;; আচ্ছা শোন আজ তাহলে আমি যাই৷ এখানে থাকার মুড টাও নষ্ট হয়ে গেছে। আমি গেলাম

অবনি;; আচ্ছা যা। ভালো ভাবে বাড়ি যাবি।

আইরাত অবনি কে বলে বাইরে এসে পরে। আর তখনই আব্রাহাম নিউজ পেপার টা টেবিলের ওপর রেখে দিয়ে আইরাতের পিছু পিছু চলে যায়৷ আইরাত তো নিজের মন মতো করে যাচ্ছে। তখনই আব্রাহামের ডাক পরে।

আব্রাহাম;; হেই বেবি গার্ল….

এমন ডাক গুলো আব্রাহাম ছাড়া আইরাতকে যে আর কেউ ডাকে না বা ডাকবে না তা এতোদিকে আইরাতের জানা হয়ে গিয়েছে। সে পেছনে ঘুড়ে দেখে আব্রাহাম তার দিকে আসছে।

আইরাত;; আপনি?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমি।

আইরাত;; এখানে কি করেন?

আব্রাহাম;; তুমি যেখানে আমি সেখানে।

আইরাত;; হয়েছে। এবার বলুন এখানে কি করছেন?

আব্রাহাম;; তোমার জন্য একটা অফার আছে।

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; একটা নতুন জবের।

আইরাত;; সত্যি?

আব্রাহাম;; আমি মিথ্যা বলি না।

আইরাত;; আচ্ছা কি শুনি!

আব্রাহাম;; অফিসে যাবে ‘”The industry of Abraham Ahmed Chowdhury'”…. সেখানে গিয়ে আমার পিছু পিছু ঘুড়বে, আমার ল্যাপটপ উঠাবে, আমার সকল ফাইলগুলো উঠাবে, আমি যে মিলগে কফি খাই তা উঠাবে, আমার গাড়ির চাবি রাখবে, মাঝে মাঝে আমার জন্য খাবারও বানাবে।

আব্রাহাম এগুলো বলছিলো নিজের মন মতো আর আইরাত হা করে তাকিয়ে তকিয়ে এগুলো শুনছিলো।

আইরাত;; কি এটা?

আব্রাহাম;; সহজ-সরল কথায় আমার পারসোনাল পিএ।

আইরাত;; এটা পিএ এর রুটিন ছিলো নাকি নিজের ঘরের বউ এর কোনটা?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ চাইলে তাও বানাতে পারি।

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; রাজি তুমি?

আইরাত;; কখনোই না।

এই বলেই আইরাত এক ঝটকা মেরে সেখান থেকে চলে আসতে নেয় আর আব্রাহাম হাত ধরে ফেলে।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল লিসেন আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করি নি, আমি তোমাকে বলছি৷ আর তুমি করবেই।

আইরাত;; করবো না আমি৷

আব্রাহাম;; ওহ তাই না তো যখন তোমার বাড়িতে জানবে যে তোমার চাকরি আর নেই তোমার তখন কি হবে?

আইরাত হেটে সেখান থেকে চলে আসছিলো কিন্তু আব্রাহামের কথা শুনে আবার থেমে যায়। আসলেই তো তার চাচি তো তার খরচ চালাবে না। এখন?
আইরাত মাথা ঘুড়িয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তার চুল গুলোতে হাত বুলাচ্ছে। আইরাতের এখন মন টা চাইছে যে তার এই অতি সুন্দর সিল্কি সিল্কি চুল গুলো টেনে ছিড়ে দিতে।

আব্রাহাম;; দেখো এভাবে তাকিয়ে থেকো না প্রেমে পরে যাবে।

আইরাত;; হয়েছে থামুন।

আব্রাহাম;; শুনো এখানে তো আর চাকরি তুমি করবে না তো ভেবে নাও।

আইরাত;; ওয়েট আমি তো ভাবিই নি। আচ্ছা আপনি এখানে কি করছেন আর কেন এসেছেন?

আব্রাহাম;; তোমাকে খুজতে।

আইরাত;; উহু, মতি গতি ভালো না আপনার৷

আব্রাহাম;; আমি আবার কি করলাম?

আইরাত;; এই লতিফ ব্যাটা যে ঘাড় ত্যাড়া। আর এক মিনিট এই যে মাত্রই লতিফ আমাকে সরি বললো কোন না কোন ভাবে এটার পিছনে আপনার হাত নয় তো।

আব্রাহাম;; না না একদম না। আমি খুব সোজা একটা মানুষ আমি এমন করি না।

আইরাত;; এটা শোনার আগে আই উইশ আমি বয়রা হয়ে গেতাম। আপনি আর সোজা। ইয়া খোদা কই তুমি। (আকাশের দিকে তাকিয়ে)

আব্রাহাম;; অফার খালি নেই বেশি সময় অব্দি কিন্তু। কারণ আমার পিএ হবার জন্য হাজারও মেয়ে আছে। সো ভাবতে পারো।

আইরাত;; তো আপনি ওই হাজারো মেয়ের কাছে যান না। এখানে কি?

আব্রাহাম;; এখানেই আমার সব। আর আমার হাজার লাগবে না একটাই যথেষ্ট।

আইরাত;; সরি আমি পিএ হবো না।

আব্রাহাম;; আজ বাড়ি যাও তারপরের দিন এমনিতেই এসে পরবে আমার কাছে। (ফিসফিস করে)

আইরাত;; কিছু বললেন?

আব্রাহাম;; না।

এই বলেই আইরাত সেখান থেকে চলে যায়। আর আব্রাহামও গাড়ি তে করে চলে যায়। আইরাত যাচ্ছে আর আব্রাহামের বলা কথা গুলো ভাবছে আসলেই তো বাড়িতে অনেক সমস্যা হবে এই চাকরি হারিয়ে ফেলার খবর জানলে। আচ্ছা যাই হোক পরের টা পরে দেখা যাবে। এই ভেবেই আইরাত বাড়ি চলে যায়।

আইরাত বাড়ি যেতেই তার চাচি তার দিকে কড়া নজর ফেলে। এখন বাড়িতে ইকবাল সাহেব নেই। কাজে গিয়েছেন। আইরাত ভেবেছে যে যাই হোক সে সব বলে দিবে তার চাচি কে। পরে কি হয় তা দেখা যাবে। আইরাতের মুখ টা শুকনো দেখে তার চাচি বলে

কলি;; কিরে মুখ এমন শুকনো কেন, কি হয়েছে?

আইরাত;; চাচি আসলে

কলি;; কি?

আইরাত;; চাচি আমার চাকরি টা চলে গিয়েছে।

কলি;; হ্যাঁএএএএএএএ,, কীভাবে গেলো। কেনো গেলো। এমন কি করছোস যে চাকরিই চইলা গেলো?

আইরাত;; ওইতো আমি দুই দিন যাই নি তাই।

কলি;; ঢং করস, কি এমন হয়েছিলো যে যাস নি। সামান্য জ্বরই তো এসেছিলো। তাই দুই দিন যাবি না। এখন, এখন কি হবে। তোর যে খরচ এগুলা কে চালাবে?

আইরাত;; আমি কিছু না কিছু একটা ব্যাবস্থা করেই নিবো। তোমাদের ভাবতে হবে না।

কলি;; হ্যাঁ তাই যেন হয়। আর বোঝা বয়ে বেড়াতে পারবো না।

আইরাত;; __________________

আইরাত রুমে চলে যায়। আর চাচি রান্নাঘরে। আইরাত যে এগুলো শুনবে তা তার আগে থেকেই জানা ছিলো। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। একদিকে তার চাচির এই কথা গুলো আরেক দিকে আব্রাহামের কথা। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আইরাত তো কিছু সময়ের জন্য ভেবেই নিলো যে সে কি আসলেই আব্রাহামের পিএ হবে। যদি না হয় তাহলে এখানে তার চাচি তার জীবন তেজপাতা বানিয়ে ফেলবে আর যদি হয় তাহলে আব্রাহাম তার মাথা খেয়ে ফেলবে। কি যে করবে। এগুলোই ভাবছিলো তখনই দিয়ার ফোন আসে।

আইরাত;; হ্যালো

দিয়া;; কিরে শুনলাম হোটেলে নাকি কি ঝামেলা হয়েছে?

আইরাত;; আরে না কোন ঝামেলা হয় নি। শুধু আমাকে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছে।

দিয়া;; কি কিন্তু কেন? আর কে দিলো?

আইরাত;; লতিফ

দিয়া;; এই শালা উগান্ডা৷ চাচ্চু যাবে পরশু দিন হোটেলে তখন এইটার খবর করমু দাড়া।

আইরাত;; না বইন থাক এমনিতেও অনেক বাশ খাইছে ওই।

দিয়া;; মানে?

আইরাত;; আব্রাহাম কিছু একটা করেছে হয়তো আমার ওর ওপরেই সন্দেহ হয়।

দিয়া;; আয় হায় কুছ কুছ হ্যা।

আইরাত;; এই চুপ কর তো। এমনিতেই কি করবো কি না করবো ভেবেই পাচ্ছি না। আর উনি আসছেন কুছ কুছ হ্যা নিয়ে।

দিয়া;; হুম শোন কাল ভার্সিটি আছে। আসিস।

আইরাত;; আচ্ছা।


আব্রাহাম;; এই এইদিকে হ্যাঁ এইদিকে রাখো। কেউ পর্দা সরাবে না। সাবধানে এখানে রাখো তারপরে আমি করে নিতে পারবো।

ইলা;; কিরে এটা কি?

আব্রাহাম;; দাদি তা পরেই বুঝবে যে এটা কি। এখন না। এখন আগে আমাকে সব ঠিক করতে দাও।

আব্রাহাম আজ অফিসে যায় নি। বাড়িতেই রয়েছে। একদম সিম্পল গেটাপে। মানে সচারাচর যেমন সবাই বাসায় থাকে আর কি। পেন্ট, টি-শার্ট। তবুও কম হ্যান্ডসাম লাগছে না। হাতের মাসেলস্ গুলো বেশ ফুলে ফুলে রয়েছে। আর এখন এনেছে ইয়ায়ায়া বড়ো একটা জিনিস যা পর্দা দিয়ে ঢাকা রয়েছে। বাড়ির কিছু স্টাফদের সাহায্যে সেটা আব্রাহাম তার রুমে নিয়ে এসেছে। সাদা ধবধবে পর্দা দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। কাউকে এক ফোটাও দেখতে দিচ্ছে না। আব্রাহামের দাদি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের নাতির কান্ড দেখছে। কাজ শেষে সব স্টাফরা বাইরে চলে যায়।

ইলা;; আচ্ছা এখন তো বলবি যে এতে কি রয়েছে । দেখতে তো দিবি?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ দিবো তো। (তার দাদি কে জড়িয়ে ধরে)

ইলা;; তাহলে দেখা।

আব্রাহাম পর্দার সাইডে একটা সুতা বাধা ছিলো তা ধরে টান দেয়। আর সাদা পর্দা টা ঢেউয়ের ন্যায় দোলা খেতে খেতে নিচে নেমে আসে। আর যা দেখা যায় অবশ্যই তাতে ইলা অবাক হয়। কিন্তু আব্রাহাম তীর্যক নয়নে তাকিয়ে আছে।





চলবে~

[এটা একটা ধারাবাহিক বড়ো আকাড়ের গল্প হবে। গল্পের মেইন ক্লাইমেক্স এখনো শুরু হয় নি। আস্তে আস্তে গল্প এগোচ্ছে। সামনে কাহিনী অনেক বাকি। ধৈর্য ধরে পড়ুন, আশা করি গল্পের থিম ভালো লাগবে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here