নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ১৭

0
889

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৭

আব্রাহাম রেডি হচ্ছে। আজ সকালেই তাকে বের হয়ে যেতে হবে। সেখানে রাশেদও যাচ্ছে তাকে আগে থেকেই সব বলে দেওয়া হয়েছে। ফাইল & আদার ডকুমেন্টস সব রেডি। সেখানে মিটিংস হবে, পার্টিস হবে। আবার এখানে অফিস আছে এখানের কাজ গুলো সামলাতে হবে। যদিও মেনেজার কে সব বলা আছে। অর্থাৎ এখান থেকে সব ঠিকঠাক করে তবেই তাদের বাইরে যেতে হচ্ছে। গার্ড দের কড়া ভাবে বলে রেখে গেছে। বাড়িতেও ক্যামেরা আছে। বাসায় যেহেতু বয়স্ক একটা মানুষ কে রেখে যাচ্ছে তাই এতো কিছু করা। আব্রাহামের দাদির শরীর বেশি একটা ভালো যায় না তাই বাসায় রেখে যাচ্ছে। আর এছাড়াও তার দাদি ইলা একটু শান্ত পরিবেশ পছন্দ করেন।

আব্রাহাম রেডি হচ্ছে কোন সুট বুট পরছে না। যেন নিজে কোমফর্ট থাকে সেভাবেই যাচ্ছে। ডার্ক ব্লেক ডেনিম পেন্ট, ওপরে সাদা ধবধবে শার্ট আর তার ওপর এশ কালারের জেকেট। হাতে গোল্ডেন কালারের ওয়াচ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বডি তে পারফিউম দিচ্ছিলো আব্রাহাম তখনই তার ফোন বেজে ওঠে। আব্রাহাম গিয়ে তা হাতে তুলে নেয়। আননোন নাম্বার থেকে কল।

আব্রাহাম;; হ্যালো…(গম্ভীর কন্ঠে)

রায়হান;; হেই স্টেপ ব্রাদার। হুয়াট”স আপ..!

আব্রাহামের তো পায়ের রক্ত সোজা মাথায় চড়ে বসলো এই সকাল সকাল রায়হানের ফোন পেয়ে। আজকের সকাল টাই বরবাদ।

আব্রাহাম;; ওহ তুই, শয়তানের নাম নিয়েছি আর শয়তান হাজির।

রায়হান;; হুম হুম হয়েছে।

আব্রাহাম;; কেন ফোন করেছিস?

রায়হান;; আরে ভাই হোস তুই আমার যদিও সৎ বাট ভাই তো। ভাই কি আরেক ভাইয়ের খোঁজ নিতে পারে না নাকি।

আব্রাহাম;; বাকওয়াস বন্ধ করে কি বলবি জলদি বল। কি চাস?

রায়হান চেয়ারে বসে বসে কথা বলছিলো এবার আব্রাহামের কথা শুনে সে চোখ মুখ শক্ত করে নেয়।

রায়হান;; কি চাই আমি। যা চেয়েছি তাই তো পাই নি। যা আমি চাই তাতেই তোর চোখ আর তুই দুটোই আগে থেকেই থাকিস।

আব্রাহাম;; বিকজ ইউ ডোন্ট ডিজার্ভ দ্যাট ম্যান। আমাকে বলে লাভ নেই। তুই যা চাস তা তুই পাস না এতে তোর ব্যার্থতা।

রায়হান;; তুই ছিনিয়ে নিস তা।

আব্রাহাম;; আহা, তোর লজিকে কথা যদি ধরি তাহলে নিজের মাঝে যদি জেদ থাকে তাহলে অন্যের নাম করা জিনিসও নিজের করে পাওয়া যায়। সেই এ্যাবিলিটি টা থাকতে হবে যা তোর মাঝে নেই।

রায়হান;; হাহ।

আব্রাহাম;; ওহহ হ্যাঁ বাই দি ওয়ে আজ পর্যন্ত কি কি ছিনিয়ে নিয়েছি আমি তোর থেকে বল তো। কিছুই না। তুই আমার বাবা কেড়েছিস। আমার ছোটবেলা কেড়েছিস। আমার খুশি, আমার খেলনা আমার কাপড়চোপড় পর্যন্ত কেড়েছিস 😅। তাও এই কথা বলছিস।

রায়হান;; কিন্তু সবকিছুর থেকে এগিয়ে তুই আছিস।

আব্রাহাম;; Ohh i see… এখন বুঝলাম তোর থেকে টাকা-পয়সায়, পাওয়ারে এগিয়ে আছি দেখে এই কথা। যাহ বাবা আমি তো আরো পুরোনা ঘা গুলো কাচা করছিলাম।

রায়হান;; এবার দেখবি নতুন ঘা গুলো আমি কি করে দেই।

আব্রাহাম;; যা করার কর। দুই চোখ যেদিকে যায় সেখানে যা। In the end আমি তোর ওপরেই থাকবো বাচ্চু।

রায়হান;; কিন্তু আমি একটা জিনিস জেনে গেছি। মানে তোর প্রাণভোমরার খবর আমি পেয়ে গেছি।

আব্রাহাম;; মানে?

রায়হান;; আইরাত।

আব্রাহাম এতোক্ষন খুব লাইটলি রায়হানের কথা গুলো নিচ্ছিলো আর তাকেও। তবে এবার যেন আব্রাহামের মাথা সত্যি গরম হয়ে যায়।

রায়হান;; আরে তোর পিএ। ভাইরে কি যে সুন্দর আর হট।

আব্রাহাম;; জানোয়ারের বাচ্চা মুখ সামলে কথা বল। তোকে মারতে আমার দুই মিনিটও লাগবে না। নিজে যদি রাস্তার কুকুরদের খাবার না হতে চাস তাহলে সুধরে যা। কারণ দ্বিতীয় চান্স আমি কাউকে দেই না।

রায়হান;; না এবার আমি হাল ছাড়ছি না। এবার আদা লবণ খেয়ে নামবো। বলা যায় আমার নজর শকুনের। যাতে একবার পরে তো পরেই।

আব্রাহাম;; Opps sry sry sry, my mistake buddy… আমিও যে কাকে সুধরানোর কথা বলছি। যার বাপ নিজেই ঘরে একটা বউ আর বাচ্চা কে রেখে দুই বছর যাবৎ আরেকটা মহিলার সাথে সম্পর্ক করে বিয়ে করে নিয়ে আসতে পারে। সেই তার ঘরের ছেলের চরিত্র ই এর বেশি বেশি ভালো আর কি করে আশা করা যায়।

রায়হান;; আব্রাহাম মুখ সামলে (চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে)

আব্রাহাম;; আব্বে ওও আওয়াজ নিচে। গলা নামা নয়তো পরেরদিন এই গলা দিয়ে কথা বের করার মতো অবস্থা আমি রাখবো না। আর তুই আমার খবর জানিস বেশ ভালো করেই।

রায়হান;; হাহ

আব্রাহাম;; লজ্জা থাকলে আমাকে আর ফোন দিস না। আল্লাহ হাফেজ।

এই বলেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। তবে ওইদিকে রায়হানের তো রাগ লাগছে। আব্রাহাম উলটো তাকে কত্তো কথা শুনিয়ে দিলো। রায়হান রাগের বসে জোরে চিল্লিয়ে হাতে থাকা ফোন টা ফ্লোরে ছুড়ে মারে। ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তা। আর এদিকে আব্রাহাম আগের মতোই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করছে। এখন যাওয়ার আগে সে কোন ভেজাল করতে চাচ্ছে না, ভাংচুর তো অবশ্যই না। তাই নিজেকে শান্ত রাখছে। রাগে ফুসছে। ভেতর থেকে জোরে জোরে দম ছাড়ছে। বডির সাথে সাদা শার্ট টা একদম লেগে ধরেছে যেন। আব্রাহামের মাথায় এখন একটা কথাই ঘুড়ছে যে রায়হানের নজর আইরাতের ওপর পরেছে। রায়হান আইরাতের ব্যাপারে কীভাবে জানতে পারলো। আর না পেরে আব্রাহাম তার হাতের দুই আঙুল দিয়ে কপাল স্লাইভ করতে লাগলো। তখনই আব্রাহামের দাদির ডাক পরে। আব্রাহাম পেছনে তাকিয়ে দেখে তার দাদি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে তার কিছু একটা আছে। আব্রাহামের মুখে হাসি এসে পরে আপনা আপনিই।

ইলা;; আব্রাহাম সোনা।

আব্রাহাম;; দাদি এসো ভেতরে এসো।

ইলা ভেতরে এসে পরে। এসেই আব্রাহামের মাথায় হাত রাখে। আব্রাহাম তো অনেক বেশি লম্বাচওড়া আর তার দাদি আব্রাহামের থেকে বেশ খাটো। তাই যখনই ইলা আব্রাহামের মাথায় হাত রাখে তখনই আব্রাহামকে ঝুকে যেতে হয়।

ইলা;; এই নে। হা কর।

আব্রাহাম;; এটা কি দাদি?

ইলা;; এটা ক্ষীর। ভালো কাজের আগে সবসময় মিষ্টি মুখ করে যেতে হয়। আজ তো বাইরে যাচ্ছিস তুই কয়েক দিনের জন্য তাই ভাবলাম এটা বানাই। খেয়ে দেখ তো কেমন হয়েছে।

আব্রাহাম;; আরে কেমন হবে মানে ফাটাফাটি হয়েছে। আর তুমি বানিয়েছো না তাহলে কিছু লাগে নাকি। অনেক মজা হয়েছে। এদিকে আসো দেখি।

আব্রাহাম তার দাদির গালে এক চুমু দিয়ে দেয়। জীবন টা যেন এখানেই আটকে রেখেছে দাদির ওপর। আরেকটা জীবন একটু পর আসবে অফিসে।

আব্রাহাম;; তুমি সবসময় এমন করেই মিষ্টি জিনিস বানাও।

ইলা;; হ্যাঁ জানিস যখন তোর বাবা বাইরে যেতো বা কোন ভালো কিছু করতে যেত তখনও আমি এভাবে তোর বাবা কে খাইয়ে দিতাম। আর সে তো….

আব্রাহাম;; দাদি প্লিজ স্টোপ।

আব্রাহামের দাদি তো বলেই যাচ্ছিলো একটুও খেয়াল ছিলো না তার। কিন্তু এবার আব্রাহামের কথায় তার মনে পরে যে অজান্তেই হোক সে তার ছেলের কথা বলে ফেলেছে। যে ছেলে দ্বিতীয় বিয়ের পর তাকে মা বলেও কখনো ডাক দেয় নি। যাজ্ঞে বাদ সবকিছু। আব্রাহাম সব কিছু নিয়ে ওপরে জেকেট টা পরতে পরতে বাইরে বের হয়ে পরে। নিজের ফোনের সাথে ঘরের সব ক্যামেরা গুলো কানেক্ট করে নেয়। পায়ে সাদা কালারের সু পরে তার দাদি কে বিদায় জানিয়ে এসে পরে। বাইরে গাড়ি তে ওঠে ড্রাইভিং সীটে বসে সাই করে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। আব্রাহাম যাচ্ছিলো তবে তার কানে এয়ার পড আছে। রাশেদ তাকে কল দিলে আব্রাহাম রিসিভ করে৷

আব্রাহাম;; কোথায় তোমরা?

রাশেদ;; স্যার আমরা অফিসে। মেনেজার কে আরো একটু বুঝাচ্ছি৷ বাকি সব ঠিক আছে।

আব্রাহাম;; আমার পিএ কোথায়, এসেছে?

রাশেদ;; আব.. মানে না স্যার উনি তো এখনো আসে নি।

আব্রাহাম;; হুয়াট, আইরাত আসে নি এখনো?!

রাশেদ;; না স্যার।

আব্রাহাম;; আচ্ছা রাখো।

আব্রাহাম কল কেটে দেয়। আজ যে কি হচ্ছে তার বুঝতে পারছে না। সকালে এতো ভালো মুডে ছিলো ওই রায়হানের বাচ্চা কল করে দিলো মুড টা নষ্ট করে তারপর তার দাদি এসে মুড ভালো করে দিলো এখন আবার এই আইরাত। ধুরু। আব্রাহাম রাগে অফিসে যেতে ধরে। আইরাত কে আজ আগে ভাগেই আসতে বলেছিলো যদিও এখনো টাইম আছে। তবে আইরাত আজ যদি এক সেকেন্ড দেরিও করে তাহলে তার খবর বেশি একটা ভালো রাখবে না আব্রাহাম। এই ভেবেই আব্রাহাম চোখে সানগ্লাস পরে গাড়ি ড্রাইভ করছে।


আইরাত;; আল্লাহ, আমি শেষ আমি শেষ। আমার চাকরি গেছে। খাইছে আমারে।

আইরাত অফিস টাইমের বিশ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠেছে। গতকাল রাতে পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে সে নিজেও জানে না। এলার্ম দিয়েও ঘুমায় নি যার ফলে সকালে দেরি তে উঠেছে। আর এখন তো দৌড়ের ওপর রয়েছে। ব্রাশ আর গোছল এক সাথে করেছে। অফিসের ফাইল চেক করছে আর রান্নাঘরে গিয়ে স্যান্ডউইচ বানাচ্ছে। সব ঠিক করে এবার খাচ্ছে আর চেঞ্জ করছে। ভাগ্যিস কাল রাতেই ব্যাগ টা প্যাক করে রেখেছিলো। আইরাতের এভাবে দৌড়ানো দেখে ইকবাল সাহেব বোকার মতো তাকিয়ে আছে৷

ইকবাল;; হয়েছে কি মা?

আইরাত;; চাচ্চু গো তোমার মেয়ের চাকরি চইলা যাবো অফিসে যেতে দেরি হলে। ওই যে বললাম না বাইরে যেতে হবে চারদিনের জন্য কাজের ফলে। তাই আজ চলে যাচ্ছি।

ইকবাল;; হ্যাঁ তা তো জানি। আচ্ছা সব রেডি করেছিস।?

আইরাত;; হ্যাঁ সব ঠিক এখন বের হবো। শুনো ফোন তো আছে তাই না যদি কিছু হয় সাথে সাথে ফোন দিবে আমায়। আর তোমার বউ কিছু বললে বলবা ওই যেন ওর বাপের বাড়ি যাইয়া চিল্লা পাল্লা করে। রনিত কে দেখে রেখো। নিজের খেয়াল রেখো আর প্লিজ টাইমলি মেডিসিন গুলো খেয়ো। আমি যাচ্ছি দেখে মিষ্টি জিনিসের ওপর হামলা করে বসো না।

ইকবাল;; আরে মেরি মা কিছুই করবো না তুই সাবধানে যা তো। চিন্তা করিস না।

আইরাত;; চাচি মনে হয় ঘুম থেকেই উঠে নি। শুনো চা টেবিলের ওপর রাখা আছে খেয়ে নাও। আর আমি যাই ভালো থেকো। চাচি কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে দিও।

ইকবাল;; আচ্ছা মা যা। আল্লাহ হাফেজ।

আইরাত একটা সাদা আর আকাশি কালারের কম্বিনেশনে গোল জামা পরেছে। হাতে একটা ঘড়ি, চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। একদম সাধারণের মাঝেও অসাধারণ।

রিকশা ওয়ালা মামা কে উড়িয়ে নিয়ে যেতে বলেছে আইরাত। আর রিকশা ওয়ালা মামা এতোই জোরে এসেছে যে সত্যি উড়ার মতোই। অফিসের সামনে এসে দেখে আব্রাহামের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত তা দেখে একটু দম ছাড়ে।

আইরাত;; উফফফফফফফফফ যাক বাবা, আমাকে ফেলে রেখে এরা যায় নি। যাই এবার আমি ভেতরে।

আইরাত রিকশা ওয়ালা মামার ভাড়া মিটিয়ে এসে পরে। অফিসে একটা মেয়ে আছে রোদেলা নাম। ভালোই মিশুক আইরাতের সাথে ভালোই মানিয়ে গেছে। ইন ফ্যাক্ট আইরাত কিছু না বুঝলে এই রোদেলাই বুঝিয়ে দেয়। ভাগ্যিস বাইরে সবার সাথে রোদেলাও যাচ্ছে নয়তো আইরাতের যে কি হতো। আইরাত অফিসে যেতেই রোদেলা এসে পরে।

রোদেলা;; এসেছো তুমি। আরে ভেতরে যাও আব্রাহাম স্যার অনেক আগে এসেছেন। জানি না কি হবে। ভেতরে যাও জলদি।

আইরাত;; শালার আমার জীবন টাই তেজপাতা 🙂৷

রোদেলা;; যাও৷ এগুলো আমাকে দাও আমি বাকি দের বলে গাড়িতে রেখে দেবো।

রোদেলা আইরাতের কাছ থেকে ব্যাগ আর বাকি ফাইল গুলো নিয়ে নেয়। আইরাত ফটাফট এক কাপ গরম কফি বানিয়ে নিয়ে আব্রাহামের কেবিনে যায়। কফির মগ হাতে নিয়ে আগে পেচার মতো এক চোখ বের করে কেবিনে উঁকি ঝুকি মেরে নেয়। আব্রাহাম কে দেখা যাচ্ছে না। আইরাত মেকি হেসে ভেতরে যায়।

আইরাত;; May i come in sir..!

আব্রাহাম;; এসো।

আইরাত কফি নিয়ে ভেতরে তো যায় কিন্তু ভেতরে আব্রাহাম নেই। তাহলে সে কোথা থেকে কথা বললো। আইরাত কফির মগ টা টেবিলের ওপর রেখে দেয়। রেখে দিয়ে পেছনে ঘুড়ে তাকাতেই চমকে গিয়ে পরে যেতে ধরে। তবে টেবিলের সাথে আটকে যায়। পেছনে আব্রাহাম এসে দাড়িয়ে ছিলো। এভাবে হুট করেই নিজের সামনে এসে পরাতে আইরাতের আত্না পর্যন্ত চমকে গিয়েছিলো। আইরাত তার দুই হাত বুকে জোর করে ফাটা চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে ঝুকে টেবিলের দুই পাশে হাত রেখে দেয়।

আব্রাহাম;; এতো দেরি কেন হুমমম?

আইরাত;; কক কই আ আম আমি ত তো এ এখ

আব্রাহাম;; তোতলাচ্ছো কেন বেবিগার্ল। বলো দেরি কেন করলে?

আইরাত;; আ আপনি কি ন নরম স সুরে আমাকে ভ ভয় দেখাচ্ছেন?

আব্রাহাম;; ধরে নাও তাই।

আইরাত;; আসলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে সরি আর হবে না।

আব্রাহাম;; হুমম আর নিজে যে এইদিকে আমার ঘুম হারাম করে রেখেছ তার বেলায় কি হুম?

আইরাত;; কিন্তু আমি তো কিছুই করি নি। আপনি কখন ঘুমান তাও তো আমি জানি না।

আব্রাহাম;; 😑😑।

আইরাত;; 😒

আব্রাহাম;; কিছু না চলো।

আব্রাহাম সরে গিয়ে আইরাতের হাত ধরে দেয় এক টান আইরাত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। তারপর শুরু হয় অর্ডার দেওয়া।

আব্রাহাম;; এই নাও আমার ডকুমেন্টস, আমার ল্যাপটপ, আমার কফির মগ, আমার ব্যাগ, আর আমার গাড়ির চাবি। নাও ফলো মি।

আব্রাহাম এত্তো গুলো জিনিস আইরাতকে দিয়ে দিলো। আর আইরাত এগুলো সামলাতে না পেরে হিমশিম খাচ্ছে। জিনিস এতোই যে আইরাতের মুখ অব্দি ঢেকে গেছে। আইরাত আস্তে আস্তে আব্রাহামের পেছনে যাচ্ছে। আর আব্রাহাম খুব কুল একটা ভাব নিয়ে জেকেট ঠিক করতে করতে চোখে গ্লাস পরে বাইরে এসে পরে। সিড়ি দিয়ে নামছে আর চুল গুলো দুলছে আব্রাহামের। কিন্তু এদিকে আইরাতের অবস্থা খারাপ। আব্রাহামের পিছু পিছু যাচ্ছে। আব্রাহাম বাইরে এসে অন্য দিকে চলে যায়। আইরাত যেন এই পরে গেলো পরে গেলো এমন ভাব। তা দেখে রোদেলা এগিয়ে গিয়ে কিছু জিনিস ধরে।

রোদেলা;; এতো গুলো জিনিস কেউ এক সাথে আনে?

আইরাত;; সাধে এনেছি নাকি। আমাকে ধরিয়ে দিয়েছে।

রোদেলা;; আচ্ছা চলো।

অফিসের সিনিয়র রা যাবে এক গাড়ি দিয়ে আর জুনিয়র রা যাবে এক গাড়ি দিয়ে। আব্রাহাম তো এসেই গাড়িতে বসেছে। সে গাড়ির উইন্ড গ্লাস নামিয়ে দেখে আইরাত রোদেলার সাথে কথা বলতে বলতে তার সাথে যাচ্ছে। আব্রাহামের মেজাজ গেলো আবার চটে। এই মেয়ে কি বুঝে না নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকে তাই আব্রাহাম বুঝে না। আব্রাহাম দ্রুত আইরাতকে ফোন দেয়। এই অসময়ে আবার ফোন পেয়ে আইরাত বেশ বিরক্তি হলো।

আইরাত;; হ্যালো। এই কাজের সময়ে কে রে?

আব্রাহাম;; এই মেয়ে..(রেগে)

আইরাত;; আব আব স্যার। জ্বি বলুন।

আব্রাহাম;; কোথায় তুমি। অন্য গাড়ি তে কেন গেলে। এক মিনিটের মধ্যে ওই গাড়ি থেকে নেমে এসে আমার গাড়িতে বসো। রাইট নাও।

আইরাত;; আসছি৷

যে চিল্লিয়ে কথা গুলো বলেছে এখন যদি আইরাত আব্রাহামের গাড়িতে গিয়ে না বসে তাইলে শেষ। আইরাত গাড়ি থেকে নেমে চলে আসতে ধরলে রোদেলা বলে ওঠে…

রোদেলা;; আইরাত কোথায় যাচ্ছো?

আইরাত;; যমদূতের ডাক পরেছে তো তাই যেতে হচ্ছে। উপায় নেই।

রোদেলা বুঝলো যে আইরাত আব্রাহামের কথা বলছে তাই রোদেলা ফিক করে হেসে দেয়। আর আইরাত অসহায় মুখ নিয়ে এসে পরে।

গাড়ির ভেতরে একটু গরমই লাগছিলো যদিও ভেতরে এসি আছে। আব্রাহাম বাইরে বের হয়ে পরে। আইরাত এখনও আসছে না কেন। আব্রাহাম দুই হাত ভাজ করে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার কিছুক্ষন পর আব্রাহাম আইরাতকে দেখে যে সে এদিকেই আসছে। আব্রাহাম সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আইরাত মুখ টা লটকিয়ে এদিকেই আসছিল তখন নিজের হাতে হেচকা টান অনুভব করে সে ভরকে যায়। আব্রাহাম আইরাতকে গাড়ির সাথে চেপে ধরে । আইরাত অবাক। আব্রাহাম তার ঘাড় টা হাল্কা বাকিয়ে মুচকি হাসে। হায় কি কাতিলানা হাসি। কিন্তু আইরাত তো হা করে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; বলেছি না রাত দিন ২৪ ঘন্টা আঠার মতো চিপকে থাকতে।

আইরাত;; _____________

বরাবরই আইরাতের গাল গুলো একটু ফোলা ফোলা টাইপের। আব্রাহাম এই যে আইরাতকে চেপে ধরেছে। একদম নিজের সাথে মিশিয়ে আর ছাড়ছে না। আইরাত মাথা নিচু করে ছিলো এই সময়৷ চোখ গুলো একটু ওপরে তুলে দেখে আব্রাহাম এখনো তার দিকে তাকিয়েই আছে। আইরাত আবার চোখ গুলো নামিয়ে ফেলে। সূর্যের আভা এসে আব্রাহামের মুখের ওপর পরেছে। অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। আর আইরাতের চুল গুলো সামনে এসে পরেছে। সূর্যের আলো এসে কালো চুল গুলোর ওপর প্রখর ভাবে পরেছে তাই সেগুলো জ্বলজ্বল করছে। এভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আব্রাহাম কি যেন মনে করে আইরাতের গোলুমোলু গালে টুক করে একটা চুমু বসিয়ে দেয়। আইরাত এবার অবাক হয়ে ফট করে চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আইরাতের এমন বাচ্চা ফেইস দেখে আব্রাহাম অন্য দিকে মুখ করে হেসেই দেয়। এবার আব্রাহাম ছেড়ে দেয় তাকে। দুজনেই গিয়ে গাড়িতে বসে। গাড়িতেই যার্নি করতে হয়েছে টানা দুই ঘন্টা। এক সময় তিন টে গাড়ি এসে থামে একটা হোটেলের কাছে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরে। হোটেলের যে ওনার ছিলো তিনি অতি আন্তরিক ভাবে আব্রাহামকে ভেতরে আসতে বলে। সবাই এসে পরে। আফ কোর্স আব্রাহাম কে সব থেকে দামি আর হাই ফাই ওয়ালা রুম টাই দিবে। ভি.আই.পি. বলে কথা। আব্রাহামের রুমের পাশের রুম টাই আইরাতের। বাকি যেই যেই কোম্পানি গুলো ছিলো তারা আগেই এসেছে। আব্রাহাম রাই সবার পরে। এবং তারা আব্রাহাম দের জন্য সবাই অধির আগ্রহে বসে ছিলো। আজ কোন মিটিংস বা কাজ নেই। কেননা আজই এসেছে, রেস্ট নিক সবাই তারপর।

আইরাত তো তার রুমে গিয়েই আগে বিছানাতে লাফাচ্ছে। এত্তো নরম আর ফোলা। আইরাত লাফাচ্ছিলো তখনই আইরাতের রুমে আব্রাহাম এসে পরে। এসেই দেখে আইরাত পাগলের মতো বিছানার ওপর লাফাচ্ছে। আইরাত আব্রাহামকে দেখে থেমে যায় আসলে লজ্জা পেয়েছে। ধুরু কিছু করেও শান্তি নেই। আইরাত মুখ টা কাচুমাচু করে নিচে নেমে পরে।

আব্রাহাম;; শেষ না আরো বাকি আছে?

আইরাত;; আরে না এখন শেষ রাতে আবার লাফাবো।

আব্রাহাম;; কি?

আইরাত;; কিছু না৷

আব্রাহাম;; রেডি থেকো কিছু ক্লাইন্ট দের সাথে শুধু দেখা করবো বিকেলে।

আইরাত;; ওকে।


বিকেল বেলা~~

আইরাত বিকেল বেলা একটু হোটেলের বাইরে আসে। আসলে এখানে অনেক বড়ো একটা খোলা জায়গা আছে পাশেই সুইমিং পুল সব আছে। আইরাত নিজের ফোন টা এনে সবকিছুর ছবি তুলছিলো। তবে এখানে তো রায়হান আব্রাহামের আরো আগেই এসেছে। সে আইরাত কে দেখেছে। মানে যখন আব্রাহাম আর আইরাত হোটেলের ভেতরে আসছিলো তখন ওপরের তালা থেকে হাতে মদের গ্লাস নিয়ে সে তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো৷ রায়হান আছে শুধু সুযোগের অপেক্ষায়। আইরাত ফোন নিয়ে ছবি তোলা তে ব্যাস্ত ছিলো। আস্তে আস্তে আইরাত পেছাচ্ছে আর ছবি তুলছে ওপরের দিকে তাকিয়ে। পেছাতে পেছাতে হঠাৎ আইরাতের পিঠ ঠেকে যায়। মানে কারো সাথে ধাক্কা যায় আর কি। আইরাত চমকে গিয়ে ঘুড়ে তাকায়। দেখে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত তাকে চিনে না। সে রায়হান। আইরাত তাকে না চিনলেও সে আইরাতকে বেশ ভালোই চিনে।

আইরাত;; সরি আমি খেয়াল করিনি।

রায়হান;; ইট”স ওকে৷ আপনি এখানে…!

আইরাত;; জ্বি আসলে আমি আব্রাহাম চৌধুরীর কোম্পানি থেকে এসেছি ওনাদের সাথেই।

রায়হান;; আব্রাহামের পিএ রাইট?

আইরাত;; জ্বি। আপনি চিনেন তাকে?

রায়হান;; হাহ আব্রাহাম কে চিনবে না এমন মানুষ আদৌ পাওয়া যাবে নাকি। তাকে কেই বা না চিনে৷

আইরাত;; জ্বি।

আইরাত তো আর জানে না যে রায়হান কেমন। সে কিছুটা হাসি হাসি মুখেই রায়হানের সাথে কথা বলছিলো। আর ওদিকে আব্রাহাম আইরাতকে হোটেলের ভেতিরে না পেয়ে পাগল প্রায়৷ আব্রাহাম তাকে খুজতে খুজতে বাইরে এসে পরে। আর বাইরে এসেই দেখে আইরাত রায়হানের সাথে কথা বলছে তাও হেসে। আব্রাহামের মন চাইলো এখনই নিজের পকেট থেকে রিভলবার টা বের করে আগে এই রায়হান কে মারুক তারপর এই আইরাতকে। আব্রাহাম ভারি ভারি কদম ফেলে তেড়ে আইরাতের দিকে যায়। কোন কথা না বলেই আইরাতের হাত ধরে এক টান মেরে নিয়ে এসে পরে। আইরাত কি থেকে কি হলো কিছুই বুঝলো না। আব্রাহাম যেখানে হাটছে সেখানে আইরাতের তার পিছু পিছু দৌড়াতে হচ্ছে। আর রায়হান তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; আরে কি করছেন টা কি আপনি। হাত ছাড়ুন।

আব্রাহাম;; চলো এখান থেকে।

আইরাত;; আরে কিন্তু কিছু ক্লাইন্ট দের সাথে যে দেখা করবার কথা ছিলো তারা…!!

আব্রাহাম;; জাহান্নামে যাক, চলো।

আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে সোজা হোটেলে এসে পরে। আইরাতকে তার রুমে পাঠিয়ে দিলো আর রুম থেকে বের হতে মানা করে দিলো। আর এদিকে আব্রাহাম আবার রাগে ফুলে বসে। আব্রাহাম এটা ভেবে পায় না যে আইরাতের সব ডিটেইলস রায়হান কে এনে দিলো টা কে। এটা ভাবতেই আব্রাহামের মাথায় একজনের নাম আসে। ব্যাস আব্রাহাম রিভলবারে বুলেট লোড করে রুম থেকে বের হয়ে পরে।


রুবেল;; এই মামা একটা বেনসন দেও তো।

এখন বেশ রাত হোটেলের বাইরে কেউ নেই তেমন। রায়হানের পিএ রুবেল। হোটেলের পেছনে গিয়ে সিগারেট খাচ্ছিলো। তার সাথে আরেকজন ছিলো কিন্তু কিছুক্ষন পর সেও চলে যায়। রুবেল একা দাঁড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ নিজের মাথার পেছনে ভারি কোন বস্তুর তীব্র আঘাত পেয়ে রুবেলের হাত থেকে সিগারেট টা নিচে পরে যায়। রুবেল ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে। তারপর অজ্ঞান হয়ে যায় আর কিছু মনে নেই। কিন্তু যখন রুবেলের চোখে খুলে তখন সে দেখে তাকে হাত পা বেধে একটা অন্ধকার রুমে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আলতো আলতো করে চোখ মেলে তাকায় রুবেল। তবে সামনে তাকাতেই রুবেলের আত্না কেপে ওঠে কেননা তার সামনেই এক চেয়ারে আব্রাহাম বসে আছে রক্তচক্ষু নিয়ে। এক হাত পায়ে ঠেকিয়ে দিয়ে আরেক হাতে ভারি শক্ত লোহার রড নিয়ে ঘোড়াচ্ছে। আব্রাহামের চোখ গুলোতেও রুবেল তাকাতে পারছে না। মনে হচ্ছে চোখ গুলো দিয়ে এখনোই আগুনের গোলা বের হবে। আব্রাহাম তার হাতে শক্ত রড টা ঘোড়াতে ঘোড়াতে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; কোন সাহসে তুই আইরাতের সব ইনফরমেশন রায়হান কে দিয়েছিস?

রুবেল;; স্যার স্যার আসলে রায়হান স্যার আমাকে অনেক টা টা টাকা

আব্রাহাম;; টাকার পেছনে কুকুরের মতো জিভ বের করে ঘুড়িস। ভাবতে পারবি এর পরিণাম কি হবে এখন।

রুবেল;; স্যার আ আসলে আমি স্যার

আব্রাহাম;; বাচিয়েই রাখবো না তোকে। তুই রায়হান কে আইরাতের ইনফরমেশন দিয়েছিস আর রায়হান আমার আইরাত,, ও আমার আইরাতের সব জেনে গেছে। তুই ইনফরমেশন দিয়েছিস মানে তুই আমার আইরাতের দিকে নজর দিয়েছিস ওকে ফলো করেছিস। তোর এই চোখই আমি রাখবো না।

আব্রাহাম কে এখন কোন হিংস্র প্রাণির থেকে কম লাগছে না। ভয়ংকর লাগছে তাকে। আব্রাহাম আর কিছু না বলে এক ঝটকায় উঠে তার চেয়ার টাতে দেয় এক লাথি। তারপর রুবেলের কাছে এসে তার মুখ টা হাত দিয়ে চেপে ধরে ওপরে তুলে। আব্রাহাম রডটা খানিক ওপরে তুলে তারপর আবার কেচ ধরে। নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে রুবেলের চোখের ভেতরে এক নিমিষেই ঢুকিয়ে দেয় রডটা। রুবেল এক গগন বিদারি চিৎকার দিয়ে উঠে। আব্রাহাম রিভলবার টা বের করে রুবেলের হাটু সই দুটো গুলি করে দেয়। যার ফলে হাটুর খুলি দুটো উড়ে যায়। গলগল করে রক্ত পড়ছে। রুবেল ছটফট করতে থাকে ব্যাথায়। আব্রাহাম আর কিছু না বলে রুবেল কে সেই অবস্থা তেই ঘরে লক করে দিয়ে বাইরে এসে পরে। আর সেই অন্ধকার ঘরের পাশে তিন জন গার্ড কে রেখে যায়। আব্রাহামের হাতে রক্ত লেগে ছিলো সে তা একটা টিস্যু তে মুছতে মুছতে বাইরে এসে পরে। কিন্তু বাইরে এসেই আব্রাহাম কিছুটা বিপাকে পরে যায়। এখন কি করবে আব্রাহাম তাই ভাবছে…।





চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here