#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৭
আইরাত রেডি হয়ে সোজা চলে যায় আব্রাহামের অফিসে। তার মুখের মাঝে রাগ আর জেদ স্পষ্ট। আইরাত বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রায় বিশ মিনিট পর অফিসে পৌঁছায়। অফিসে গিয়েই দেখে সবাই একদম চুপচাপ শান্ত। আইরাতকে দেখে রোদেলা এগিয়ে আসে, আইরাতের সাথে কথা বলতে যাবে কিন্তু আইরাত পাশ কাটিয়ে চলে আসে। কারো সাথে কোন কথাই বলে না। সোজা এসে পরেছে। আইরাতের এমন হাবভাব দেখে রোদেলা বেশ অবাক হয়ে যায়। যাই হোক আইরাত আব্রাহামের কেবিনে চলে যায় সরাসরি। না বলে কয়েই বিনা পারমিশনে। আব্রাহাম বসে বসে ফোনে কথা বলছিলো তখনই আইরাতকে এমন তেড়ে আসতে দেখে আব্রাহাম তার দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; গুড মর্নিং বে………
আব্রাহাম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত তার কাছে এসে ঠাস করে একটা কাগজ আব্রাহামের টেবিলের ওপর রাখে। টেবিলের ওপর হাত দিয়ে কিছুটা ঝুকে রয়েছে আর রাগে লাল হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম একবার আইরাতের হাতের দিকে তাকায় আরেকবার আইরাতের দিকে।
আইরাত;; আমার রেসিগন্যাশন লেটার। আমি এই চাকরি ছাড়ছি।
আব্রাহাম;; তুমি হয়তো….
আইরাত;; রাখেন আপনার এক বছরের কমিটমেন্ট। আমি চাকরি করবো না মানে না শুনেছেন আপনি। And don’t you dare to stop me ok!
আব্রাহাম;; ন্যাহ, একদম না। আমি আটকাবো না তোমাকে যা ইচ্ছে করতে পারো।
আইরাত;; আপনি আমাকে আটকানোর কে হন? Who the hell are you?
আব্রাহাম;; আপাতত কেউই না কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ই হয়ে যাবো।
আইরাত;; হাহ, দিনের বেলা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন।
আব্রাহাম;; হয়েছে তোমার?
আইরাত;; হ্যাঁ এটাই বলতে এসেছিলাম আপনাকে আর এখন শেষও বলা তাই চলে যাচ্ছি।
আব্রাহাম;; আইরাত!
আইরাত এক ঝটকায় আব্রাহামের কেবিন থেকে চলে আসে। আব্রাহাম আটকায় না আইরাত রেগে মেগে চলে আসে। আইরাত চলে গেলে আব্রাহাম শুধু একটা দম ফেলে কেননা এমনটা হওয়ারই ছিলো। সাননে তাকিয়ে দেখে আইরাতের রেসিগন্যাশন লেটার টা। আব্রাহাম তুলে তা হাতে নিয়ে নেয়। তারপর লাইটার দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিমিষেই তা ছাইয়ে পরিনত হতে লাগে।
আব্রাহাম;; রাগ করবে সারাজীবন করে থাকো মানা নেই। রেগে থাকলেও আমার কাছেই থাকবে। যাই হয়ে যাক ছেড়ে যাবে না। আমি যেতে দিবোই না।
আগুনের আভাগুলো যেন আব্রাহামের চোখের মনি তে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠেছে।
।
।
আইরাত আর কাউকে কিছু না বলেই ভার্সিটি চলে গিয়েছে। নিজের ক্লাস রুমে চুপ করে এক জায়গায় বসে পরে। দিয়া আইরাতকে দেখে দ্রুত তার পাশে এসে বসে।
দিয়া;; কিরে এসেছিস আমি তো ভেবেছিলাম যে আসবি না!
আইরাত;; হ্যাঁ পড়া গুলো তুই পড়ে দিবি তাই তো!?
দিয়া;; আস্তে ভাই চেইতা যাইতেছিস ক্যান?
আইরাত;; ভালো লাগছে না রে কিছুই।
দিয়া;; আচ্ছা শোন আব্রাহাম ভাইয়ার সাথে তোর কি কিছু হয়েছে নাকি?
আইরাত;;
দিয়া;; কিরে বল!
আইরাত;; না কিছুই হয় নি। এমনি জাস্ট ভালো লাগছে না আমার।
দিয়া;; অফিসে যাস নি?
আইরাত;; আমি আর ওখানে যাবো না চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।
দিয়া;; বাড়িতে কেউ কিছু বলবে না?
আইরাত;; বললে বলুক। দরকার পরলে বাড়িও ছেড়ে দিবো। একদম একা হয়ে যাবো। কাউকে এখন আর ভালো লাগে না। আমার ওপর দিয়ে যে কি যাচ্ছে তা কেবল আমিই জানি।
দিয়া;; আমাকেও ছেড়ে দিবি 🙂?
আইরাত;; ঘোড়ার ডিম।
আইরাত আর দিয়া ক্লাস করে চলে গেলো। আইরাত ভার্সিটির গেটের বাইরে এসে চলে যেতে ধরবে তখনই নিজের ওরনাতে টান পরে। আইরাত ফট করে মাথা ঘুড়িয়ে পেছনে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার ওরনার এক পাশ ধরে রেখেছে। আইরাতের মেজাজ ৪৪০ হয়ে গেলো আব্রাহাম কে দেখে।
আইরাত;; আবার আপনি? এখানে কি করছেন?
আব্রাহাম;; একটা বার বলো তো যে কি করতে হবে আমায় আমি তাই করবো। প্লিজ দূরে যেও না।
আইরাত;; এক কথা বারবার শুনতে মজা লাগে না।
আব্রাহাম;; আই এম সরি।
আইরাত;; সরি! সরি! সরি তাই না সরি! ওয়েট আপনার কে তো আমি……
আইরাত এই কথা বলেই তার আশে পাশে কি যেনো একটা খুজতে লাগলো। আর পেয়েও গেলো। আইরাত তার হাতে একটা বেশ বড়োসড়ো পাথর নিলো তারপর আব্রাহামের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। ঠাস করে গাড়ির সামনের দুই হ্যাডলাইট ভেঙে দিলো। তারপর আবার গাড়ির দুই পাশের দুই উইন্ডো গ্লাস ভেঙে দিলো। একদম ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায় দেখে যে আব্রাহাম কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে। আইরাত তার হাত থেকে পাথর টা ফেলে দিয়ে দুই হাত ঝেড়ে ঝেড়ে আব্রাহামের সামনে আসে। দুইভাত ভাজ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।
আইরাত;; আপনার সরি আপনাকেই মুবারাক। আই এম সরি!! ভুল হয়ে গেছে আর হবে না।
আব্রাহাম;;
আইরাত;; দেখুন তো আব্রাহাম কাচ গুলো আবার জোড়া লেগেছে কি না। দেখুন দেখুন। লেগেছে? লাগে নি তাই তো। ঠিক তেমন আমিও। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনি আমার সাথে ওইসব করেছেন। ভেঙে দিয়েছেন আপনি আমাকে। আমি আর জোড়া লাগবো না ঠিক এই কাচের মতো।
আব্রাহাম;; যা ইচ্ছে বলো, যা ইচ্ছে করো।
আইরাত;; ইচ্ছে তো করে আপনাকেও খুন করে ফেলতে কিন্তু পারি না।
আইরাত সেখান থেকে চলে আসতে নেয় আব্রাহাম তখন আইরাতের হাত ধরে থামিয়ে দেয়। আইরাত রাগি ভাবে একবার আব্রাহামের হাতের দিকে তাকায় আরেকবার আব্রাহামের দিকে তাকায়। এবার আইরাত তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আব্রাহামের গাড়ির কাছে এগিয়ে গিয়ে একটা কাচের টুকরো তুলে নেয় হাতে। তারপর আবার আব্রাহামের কাছে আসে। আব্রাহামের হাত টা নিজের হাতে তুলে নেয়। আইরাত আব্রাহামের দিকে আর আব্রাহাম আইরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে।
আইরাত;; সব মানুষের দুটো রুপ থাকে। মানুষ আর হিংস্র পশুর রুপ। সেইদিন রাতে আমি আপনার পশুর রুপ তো দেখে নিয়েছি কিন্তু আফসোস আমি আপনার মতো এতোটা পশু না। তাই আপনি দেখতে পারবেন না। আর এতোদিন আপনি তো আমার ভালোবাসা দেখেন নি তবে এখন আমার ঘৃণা ঠিকই দেখবেন।
এই বলেই আইরাত তার হাতে থাকা কাচের টুকরো টা দিয়ে আব্রাহামের হাতের তালুতে বেশ বড়ো একটা আচড় কাটে। মূহুর্তেই হাতের চামরার ভাজ গুলো কেটে গিয়ে রক্ত নেমে পরে।
আইরাত;; আপনি তো ঠিক এভাবেই আমার হাতও সেইদিন কেটে দিয়েছিলেন ছুরি দিয়ে তাই না। এটা তার জন্য।
আইরাত এটা বলেই আরেক টা টান দেয় কাচ দিয়ে আব্রাহামের হাতে।
আইরাত;; এটা মানুষ কে খুন করার জন্য। আমি জানি আপনি বিনা দোষে কাউকেই মারেন না কিন্তু তবুও এতোটা নির্মম এতোটা নির্দয় হবার জন্য।
আইরাত এটা বলেই আরেক টা ঘা বসিয়ে দেয় আব্রাহামের হাতে। তারপর লাগাতার একসাথে অনেক গুলো আচড় কাটেতে থাকে আব্রাহামের হাতে। আইরাতের হাতে যতো গুলো সহ্য হয় ঠিক ততগুলোই আচড় কেটে গেছে। একসময় আইরাত থেমে যায়।
আইরাত;; আর এগুলো ছিলো সেইদিন আমার ওপর ওমন ভাবে ঝাপিয়ে পরার জন্য। আমার ওপর বিশ্বাস না রাখার জন্য। আমার কথা একটা বার না শোনার জন্য।
আইরাতের নিজের চোখেও পানি চিকচিক করছে। সে তার হাত থেকে কাচের টুকরো টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে আব্রাহামের সামনে থেকে চলে আসে।
আইরাত যখন আচড় গুলো কাটছিলো আব্রাহামের হাতে আব্রাহাম তখন এক ধ্যানে আইরাতের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। এমনকি চোখের পলক অব্দি ফেলে নি। আসলে আইরাতের মাঝে একদিনেই তার প্রতি ঠিক কি পরিমান ঘৃণার জন্ম নিয়েছে আব্রাহাম তাই দেখছিলো। আইরাত রাগ করে এগুলো করলেও আব্রাহাম তার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়েই ছিলো। যেনো তার কোন ব্যাথাই লাগছে না এতে। আইরাত তার সামনে থেকে চলে আসলে আব্রাহাম সেখানে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। হাত টা কেটে একদম বলি দিয় ফেলেছে। অঝোরে রক্ত গড়িয়ে পরছে কিন্তু সেদিকে আব্রাহামের কোন খেয়ালই নেই। আইরাত চলে গেলে আব্রাহাম নিজেও সেখান থেকে চলে আসে। আব্রাহাম অফিসে চলে যায়। তার যে কাটা হাত টা আছে সেটা সে আর ব্যান্ডেজ করে নি। ভাবলেশহীন ভাবে অফিসের সবার সামনে দিয়ে এভাবে এসে পরেছে। সবাই তো পুরো তাজ্জব লেগে গেছে। সাথে ভয়ও পেয়েছে। সবাই ভেবেছে আব্রাহাম হয়তো কাউকে খুন করে এসেছে বা মেরে এসেছে। এটা রাশেদেরও চোখে পরে। আব্রাহাম কে কিছু জিজ্ঞেস করবে কিনা তাতেও ভয় পাচ্ছে। আব্রাহাম যখন কেবিনে চলে যায় তখন রাশেদ হাতে একটা মেডিসিনের বক্স এনে তার কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। রাশেদের আত্না আগেই কাপছে আব্রাহাম কে কিছু বলবে তো দূরে থাক। তবুও কাপা কাপা স্বরে বলে ওঠে….
রাশেদ;; স স স্যার, স্যার আসবো?
আব্রাহাম;;
রাশেদ;; স্যার স স, স্যার আসবো?
আব্রাহাম;; এসো।
রাশেদ ভেতরে কেবিনে গিয়ে দেখে আব্রাহাম তার কাটা হাত টা নিচে রেখে দিয়ে আরেক হাতে নিজের কপাল চেপে ধরে রেখেছে। চোখ গুলো বন্ধ করে রেখেছে। খুব শান্তই লাগছে দেখে।
রাশেদ;; স্যার মানে আসলে বলছিলাম কি যে ব্লিডিং হচ্ছে আপনার হাত দিয়ে।
আব্রাহাম;;
রাশেদ;; স্যার পরে প্রব্লেম হবে দিন ব্যান্ডেজ করে দি।
আব্রাহাম;;
রাশেদ;; স্যার হাত কি করে কাটলো। স্যার অসুস্থ হয়ে পরবেন হাত টা দিন।
আব্রাহাম কিছু বলছে না দেখে রাশেদ আব্রাহামের হাত টা নিজের কাছে নিয়ে নেয়। ব্লাড গুলো ভালো ভাবে পরিষ্কার করে দেয়। আব্রাহাম নিজের চোখ বন্ধ করেই রেখেছে। আইরাতের বলা এক একটা কথা যেন তার কানে বাজছে। রাশেদ আব্রাহামের হাত টা ব্যান্ডেজ করে দিয়ে উঠে চলে যায়। এদিকে আব্রাহামের যেন শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে আইরাত কে ছাড়া। নিজেকে নিজেরই শুট করে দিতে ইচ্ছে করছে। আজ তার, একমাত্র তার দোষের ফলেই তার আইরাত আজ তাত থেকে এতো দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলেই তো আর চলবে না। এভাবে হাতে হাত রেখে দিলে হবে না। আইরাত অনেক রেগে আছে। কিছু তো করতেই হবে। আব্রাহাম রকিং চেয়ারে বসে বসে এগুলোই ভেবে চলেছে।
।
।
আইরাত তার বাসায় চলে যায়। গিয়ে দেখে তার চাচা-চাচি এসে পরেছে। আইরাতের চাচি কে দেখে আইরাতের রাগে আরো গা জ্বলে যাচ্ছে। এই মহিলা টার বেশি বুঝার ফল আজ এগুলো। আইরাত কাউকে কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে যেতে ধরলে আইরাতের চাচি ডাক দেয়….
কলি;; এসেছিস?
আইরাত;; কেনো বাসায় এসেছি দেখে কি তোমার সমস্যা হচ্ছে।
কলি;; এখনো রেগে আছিস?
আইরাত;; তুমি যা করেছো তার জন্য আমি একদম শেষ হয়ে গিয়েছি চাচি। একটা বার আমাকে জিজ্ঞেস তো করতে যে আমি আদৌ কাউকে পছন্দ করি কিনা, কাউকে ভালো লাগে কিনা বা এখনই আমি বিয়ে জন্য রেডি কিনা। না বলে কয়েই বিয়ে ঠিক করে নিয়েছিলে। বিয়ে কি আমাকে তো একদম তুলে দিতে চেয়েছিলে বিয়ে করিয়ে। আজ একমাত্র তোমার জন্য রকমাত্র তোমার জন্য আমার জীবনে আজ তুফান বইছে।
এই কথা বলেই আইরাত তার রুমে চলে যায়। কলি আর কি বলবে সে এখন বুঝতে পারছে যে আসলেই তার কাউকে না জানিয়েই এতো বড়ো একটা ডিসিশন নেওয়া উচিত হয় নি। কলিও সেখান থেকে চলে আসে। তবে এগুলো ইকবাল সাহেব দেখেন। বুঝতে পারলেন যে আইরাত হয়তো কোন ঝামেলায় আছে।
ওদিকে আব্রাহাম উঠে পরে লেগে গেলো আইরাতের রাগ ভাঙানোর জন্য। আইরাত যে তার হাত কেটে দিয়েছে তার দিকে তাকিয়ে নিজের আনমনেই হেসে ওঠে। সেও দেখবে যে আইরাত তার সাথে ঠিক কি কি করতে পারে। আব্রাহাম তো জীবনেও হাল ছারার পাত্র না। দেখা যাক শেষ কি হয়। আইরাত রাগ করতে করতে হেরে যায় নাকি আব্রাহাম তার রাগ ভাঙাতে ভাঙাতে হেরে যায়।
।
।
পরেরদিনও আইরাত তার কলেজে চলে যায়। এখন তার কাছে এই ভার্সিটি আর বাসায় ব্যাস এই দুটোই যাওয়ার জায়গা। ক্লাসে স্যার লেকচার দিচ্ছিলো আর আইরাত তা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। হঠাৎ এরই মাঝে আব্রাহাম তার ভারি ভারি কদম ফেলে ক্লাসে ভেতরে এসে পরে। স্যার আব্রাহাম কে দেখে চুপ হয়ে যায়। আর ক্লাসে সবাই হা। এভাবে হুট করেই আব্রাহাম কে দেখবে কেউ ভাবে নি। আইরাত মাথা তুলে দেখে আব্রাহাম এসেছে। আইরাত তো ভেবে পায় না যে এই এখানে এই সময়ে কি করছে। আর ক্লাসে মেয়েদের কথা না হয় না বলাই রইলো। আব্রাহাম যাতে আইরাতকে না দেখতে পায় এর জন্য সে তার মুখের সামনে একটা বড়ো বই ধরে। কিন্তু তখন আব্রাহাম বলে ওঠে….
আব্রাহাম;; হে ইউ গার্ল।
আইরাত কিছুটা ঘাবড়ে যায়।
আব্রাহাম;; Hay you Brown Bird…
আব্রাহামের এই কথায় সবাই সোজা আইরাতের দিকে তাকায়। আর এবার আইরাতের সন্দেহ স্পষ্ট হয়। কেননা আইরাত ব্রাউন কালারের গোল জামা পরে আছে। আইরাত আস্তে আস্তে মুখের সামনে থেকে বই নামিয়ে ফেলে।
আব্রাহাম;; হাই।
আইরাত;; 😡😡
আব্রাহাম;; কাম অন। চলে এসো।
আইরাত কোন রকমে নিজের রাগ টা কোন্ট্রল করে।
আব্রাহাম;; আরে চলে এসো তাড়াতাড়ি।
আইরাত;; আমার ক্লাস চলছে এখানে দেখতেই পারছেন 🙂।
আব্রাহাম;; সো হুয়াট, কাম।
আইরাত তাকিয়ে দেখে সে যে আব্রাহামের হাত কেটে দিয়েছিলো গতকাল তাতে আজ ব্যান্ডেজ করা। এরই মাঝে আব্রাহাম দ্রুত চলে আসে আইরাতের কাছে। তারপর আইরাতের হাত ধরে তাকে ক্লাসের সবার সামনে দিয়ে নিয়ে এসে পরে। আইরাত তার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আব্রাহাম ছাড়লে তো। আব্রাহাম আইরাতকে ক্যান্টিনে নিয়ে আসে ভার্সিটির। আইরাত এবার দাঁড়িয়ে পরে। কি যে রাগ লাগছে তার। আইরাত তার পাশে তাকিয়ে দেখে টেবিলে পানি রাখা। আইরাত সেই পানি নিয়ে সোজা আব্রাহামের মুখে ছুড়ে মারে। আব্রাহাম তার চোখ বন্ধ করে ফেলে তারপর আবার আইরাতের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; শেষ? মানে পানি শেষ নাকি রাগ শেষ কোনটা? আরো পানি লাগবে আরো ছিটা মারবে বলো আমাকে আমি এনে দিই।
আইরাত;; আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াহহহহহহহহহহহহহহ!!
আইরাত নিজের দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে রাগে দেয় এক চিল্লানি। সে আর পারছে না রাগ আটকাতে। রাগে এখন কেদেই না দেয়। আব্রাহামের দিকে তাকালে আব্রাহাম তাকে একটা মেকি হাসি দেয়। আইরাত আব্রাহামের কলার খামছে ধরে…
আইরাত;; কি তামাশা শুরু করেছেন এগুলো? সারারাত বাইরে ঝড়ের মাঝে দাড় করিয়ে রাখলাম, চাকরি ছেড়ে দিলাম, আপনার হাত টা পর্যন্ত কেটে দিলাম এতোখানি, মুখে পানি আর কতো মারবো তারপরও শিক্ষা হন না আপনি। এভাবে ভার্সিটির সবার সামনে দিয়ে টেনে নিয়ে আসার কোন মানে হয়। বিরক্তিকর।
এই কথা বলেই আইরাত চলে আসতে ধরে আর আব্রাহাম তার বাহু খামছে ধরে সোজা নিজের গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দেয়। তারপর চলে যায়। আর আইরাত যে এদিকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে গলা ফাটাচ্ছে তার দিকে কোন খেয়ালই নেই আব্রাহামের।
।
।
।
।
চলবে