নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৪০

0
748

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪০

আজ সকাল থেকেই আব্রাহামের কোন খোঁজ নেই। মানে ক্ষনিকের জন্য গুম বলা যায় তাকে। আইরাত ফোনের ওপর ফোন করে যাচ্ছে, টেক্সট করে যাচ্ছে বাট নো রেসপন্স। এগুলো দেখে তো আইরাতের মাথা নষ্ট হবার মতো অবস্থা। আইরাত ভাবলো আব্রাহামের বাড়ি যাবে কি যাবে না। কিন্তু সেই চিন্তা পরক্ষণেই আবার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলো। কাল রাতে খুব কম কথা হয়েছিলো আব্রাহামের সাথে তার। আর আজ সকালেই সে গুম। এগুলো যেনো আর ভালো লাগছে না। তবে আইরাত ভাবলো যে অফিসে আছে আর হয়তো কোন ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং-এ আছে তাই ব্যাস্ত। আইরাত তার রুম থেকে বের হয়ে নিচে হলরুমে চলে গেলো। যেতেই দেখে রনিত বসে আছে। আইরাত যেই না রনিতের কাছে যেতে ধরবে তখনই আব্রাহামের ফোন। আব্রাহামের ফোন কল দেখে যেনো আইরাতের শান্তি লাগে। তবে ভেবে নেয় যে ফোন ধরতেই আচ্ছা মতো করে বকে দিবে।

আইরাত;; হ্যালো, এই কোথায় আপনি। সেই ভোর থেকে ফোন দিচ্ছি আপনার কাছে কিন্তু রিসিভ করার নাম নেই। মেসেজ দিয়ে পাচ্ছি না। কোথাও না। আপনি কোথায় ছিলেন?

আব্রাহাম;; আরে আস্তে আগে একটু দম নাও।

আইরাত;; ধুর।

আব্রাহাম;; আমি অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছি।

আইরাত;; তা কি এমন কাজ শুনি?

আব্রাহাম;; অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আইরাত;; আমার থেকেও বেশি?

আব্রাহাম;; তোমার জন্যই তো করা।

আইরাত;; মানে?

আব্রাহাম;; এতোকিছু তোমার না বুঝলেও চলবে।

আইরাত;; কিন্তু……

আব্রাহাম;; হে লিসেন, কিছুক্ষন পর একটা পার্সেল যাবে তোমার নামে ওকে তো সেটা পিক করে নিও।

আইরাত;; পার্সেল? কিন্তু কেনো? মানে পার্সেল কেনো?

আব্রাহাম;; সেটা এলেই বুঝতে পারবে। আর আমি এখন রাখছি ওকে পরে কথা বলি।

আইরাত;; আরে বাট হ্যালো, হ্যালো….

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। আইরাত একটা ভেংচি কেটে রনিতের কাছে চলে যায়।

আইরাত;; কিরে বিচ্ছু কি করিস?

রনিত;; জাম খাই। খাবে?

আইরাত;; না তুই ই খা।

রনিত;; আরে খাও না অনেক মজা।

আইরাত;; হুমম দেখে-শুনে খাস। জামাতে দাগ লাগাস না নইলে তোর মা তোকে সাবান ছাড়া ধুয়ে দিবে।

রনিত;; 🤐।

তখনই কলিংবেলে চাপ পরে, আইরাত গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দেখে ডেলিভারি বয় দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; জ্বি?

ডেলিভারি বয়;; জ্বি এখানে নুজাইফা বিনতে আইরাত নামে কেউ কি আছে?

আইরাত;; জ্বি আমিই আইরাত, বলুন।

ডেলিভারি বয়;; হ্যাঁ আসলে আপনার নামে একটা কুরিয়ার এসেছে।

আইরাত;; কিন্তু আমি তো কিছু অর্ডার করি নি।

ডেলিভারি বয়;; কিন্তু এটা আপনার নামেই এসেছে।

তখনই আইরাতের আব্রাহামের কথা মনে পরে।

আইরাত;; ওহহ হ্যাঁ হ্যাঁ, দিন।

ডেলিভারি বয়;; এখানে একটা সিগন্যাচার করে দিন।

ডেলিভারি বয় আইরাতের হাতে পার্সেল টা এগিয়ে দিয়ে একটা কাগজ দেয়। আইরাত তাতে সাইন করে দিলে সে চলে যায়। আইরাত দেখে বেশ বড়োসড়ো একটা পার্সেল। সে অনেক বেশি এক্সাইটেড এতে কি আছে তা দেখার জন্য।

রনিত;; আপু এতে কি আছে?

আইরাত;; সেটা তোর জেনে কাজ নেই। জাম খাচ্ছিস চুপচাপ জাম খা।

রনিত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে আইরাতের দিকে। আইরাত তো ঢেংঢেং করে পার্সেল টা হাতে নিয়ে ওপরে তার রুমে চলে গেলো। গিয়েই দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানার ওপর ধপ করে বসে পরে। পার্সেল টা নিজের সামনে রেখে খুলতে থাকে। একসময় খোলা শেষ হলে আইরাত ভেতরে দেখে একটা স্কাই ব্লু আর হুয়াইট কালারের কম্বিনেশনে গাউন। অসম্ভব সুন্দর দেখতে। আইরাত তা নিয়ে দেখছিলো তখনই আব্রাহামের ফোন আসে। আইরাত তো না দেখেই ফোন রিসিভ করেছে। তাই গাউনের দিকে তাকিয়েই বলে ওঠে….

আইরাত;; হ্যালো

আব্রাহাম;; পছন্দ হয়েছে?

আব্রাহামের কন্ঠস্বর পেয়ে আইরাত হেসে দেয়।

আইরাত;; আপনি?

আব্রাহাম;; তো কে থাকবে? বলো পছন্দ হয়েছে?

আইরাত;; অনেক বেশি। অনেক সুন্দর গাউন টা।

আব্রাহাম;; আমি জানি আমার চয়েস তোমার থেকে অনেক ভালো।

আইরাত;; হ্যাঁ হয়েছে। কিন্তু এটা কেনো?

আব্রাহাম;; শুনো গাউন টা সুন্দর করে পরে চলে আসবে।

আইরাত;; কিন্তু কোথায়?

আব্রাহাম;; তোমার বাড়ির সামনে আব্দুল চাচা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুমি শুধু গাড়িতে উঠবে আর চলে আসবে।

আইরাত;; আরে বাবা কিন্তু আসবো কোথায়?

আব্রাহাম;; সেটা তো এলেই বুঝতে পারবে।

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম;; তবে একটা কথা!!

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; সেইদিন তো আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে। আজ প্লিজ এমন কিছু করো না। নয়তো উল্টা-পাল্টা কিছু করে না বসি আমি।

আইরাত;; আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম মানে??

আব্রাহাম;; এখন রাখলাম।

আইরাত আর কি বলবে আগেই ফোন কেটে দেয়। আব্রাহাম যে কি করছে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। যাই হোক আইরাত দ্রুত রেডি হয়ে নেয়। আব্রাহামের দেওয়া গাউন টা পরে নেয়। চুল গুলো খুলে দেয়, আর একদম হাল্কা কিছু অর্নামেন্টস।
পায়ে কিছুটা উঁচু জুতা পরেছে। হাতে স্টোনের ব্রেসলেট টা পরে নিচে নেমে আসে আইরাত। আইরাত বাইরে যেতে ধরবে তখনই কলি আসে…

কলি;; কিরে কোথাও যাচ্ছিস?

আইরাত;; হ্যাঁ চাচি একটু বাইরে যাচ্ছি। জলদি ফিরে আসবো।

কলি;; আচ্ছা।

আইরাত বাইরে এসেই দেখে একজন মাঝবয়স্ক লোক গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে উনার নাম আব্দুল রহমান। উনি আব্রাহামের সাথেই আছেন। একসময় আব্রাহামের বাবার ড্রাইভার ছিলেন। এখনো আব্রাহাম উনাকে নিজের সাথেই রেখে দিয়েছেন। আইরাতের বাইরে আসতেই উনি গাড়ির বাইরে বের হন।

আব্দুল;; আসুন ম্যাম, আব্রাহাম বাবা আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।

আইরাত;; আংকেল প্লিজ আপনি আমার বাবার বয়সী। ম্যাম না ডাকলেই ভালো লাগবে।

আব্দুল;; মা ডাকি?

আইরাত;; অবশ্যই 😊।

আইরাত গাড়িতে উঠে বসে। আইরাত শুধু গাড়ির উইন্ডো দিয়ে বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।

আইরাত;; আচ্ছা আংকেল আমরা কোথায় যাচ্ছি?

আব্দুল;; মা আমি আসলে জানি না। আর জানলেও আব্রাহাম বাবা আমাকে বলতে মানা করেছে।

আইরাত;; এইটা কোন কথা।

আইরাত আবার মুখ ফুলিয়ে বসে পরে। কেউ কিছু বলবেই না যেহেতু তাহলে কি আর করার। দেখতে দেখতেই এক সময় একটা খোলা মেলা জায়গায় এসে গাড়ি থামে।

আব্দুল;; মা আমরা এসে গেছি।

আইরাত;; এখানেই?

আব্দুল;; হ্যাঁ।

আইরাত গাড়ি থেকে নেমে পরে আর আব্দুল রহমান গাড়ি নিয়েই চলে যায়। আইরাত এই জায়গা টা চিনে না। একদম অচেনা একটা জায়গা। আইরাত কপাল কুচকে কিছুটা সামনে এগিয়ে যায়। কোথাও কাউকে দেখতেও পারছে না। কিছুটা সামনে এগোলে আইরাতের চোখ গুলো আপনা আপনিই বড়ো হয়ে যায়। কেননা সামনে সুন্দর একটা পুকুর, তাতে আবার রয়েছে বেশ কিছু পদ্মফুল। সাদা ধবধবে পালকের পাতি হাসগুলো পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে এদিক থেকে সেদিকে। আবার মাঝে মাঝে পানিতে ডুব দিয়ে ওপরে উঠে আসছে। পুকুরের চারিপাশে রয়েছে সারি সারি গাছ। এখানে যতদূর চোখ যায় শুধু খোল আকাশ আর সবুজ ঘাস। রয়েছে মন-মুগ্ধকর খোলা বাতাস। আইরতের এখন মন চাইছে সব ছেড়ে ছুড়ে ছুটে যাক ওই দূর দিগন্তে। কি যে সুন্দর একটা জায়গা বলারও বাইরে। মুগ্ধ নয়নে আইরাত তাকিয়ে তাকিয়ে এইসব কিছু দেখছে। তখনই হঠাৎ আইরাতের মাথার ওপর দিয়ে অনেক গুলো ফুলের পাপড়ি ঝড়ে পরে৷ আইরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই ফুলগুলো কোথা থেকে এলো আবার। তবে নিজের অজান্তেই আইরাতের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে নিজের দুই দিকে তার দুইহাত মেলে দিয়েছে৷ এত্তোগুলো ফুলের পাপড়ি, সব আইরাতের ওপর পরেছে। আইরাত খিলখিল করে হেসে ওঠে। তখনই এক নেশাময় পুরুষালী কন্ঠে আইরাত তার পেছন ঘুড়ে তাকায়।

তাকিয়েই আইরাত অবাক। আব্রাহাম এক হাটু গেড়ে আইরাতের সামনে বসে আছে। হাতে একটা ফুলের বুকে আর রিং।

আব্রাহাম;; আমি ভাবতেই পারি না নিজেকে তোমায় ছাড়া। আমার অস্বস্তি তুমি। আইরাত আছে তো আব্রাহাম। আইরাত নেই, আব্রাহামও নেই। আইরাত আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এই কথা টা আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস অব্দি প্রতিদিন বলেই যাবো। আমার লাইফে আসা ফার্স্ট & লাস্ট মেয়ে তুমি। তুমিই প্রথম, তুমিই শেষ। না তোমার আগে কেউ ছিলো আর না ই তোমার পরে কেউ আসবে। আমি আমার জীবনের সূর্যদয় টা তোমার সাথে দেখতে চাই আর সাথে সূর্যাস্ত টাও। আমার জীবন তোমাতেই শুরু আর তোমাতেই শেষ 🥀। তুমি যদি একটু আমাকে কমও ভালোবাসো তাও সমস্যা নেই। আমার চলবে। কেননা আমার একার ভালোবাসাই আমাদের দুই জনের জন্য যথেষ্ট। আমি তোমার সাথে ছিলাম, আছি আর সবসময় থাকবো। তুমি শুধু আমার হাত শক্ত ভাবে ধরে রেখো?? আর আমাকে একটু নিজের বলে দাবি করো?? আর তুমি তো আমারই। আমি যেনো বলতে পারি যে “” না, সবাই এক না। সবাই এক হয় না। সবাই ছেড়ে যায় না। কেউ কেউ নিজের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি থেকে যায় “”। আমাদের দুইজনের শেষ বয়সে যখন আমরা ৬০-৬৫ বছরের বুড়ো-বুড়ি হয়ে যাবো তখনও যেনো এই আইরাত এই আব্রাহামেরই থাকে আর এই আব্রাহাম এই আইরাতের। বিকেলের শেষ বেলা টা যেনো আমার হাতে তোমার হাত আর আমার কাধে তোমার মাথা রেখেই শেষ হয়। আইরাত সবাই বলে আমি আমার ভালোবাসার জন্য মরতেও রাজি। কিন্তু আই এম সরি আমি তোমার জন্য মরতে রাজি না। কারণ আমি আমার জীবনটা তোমার সাথে কাটাতে চাই, তোমার নামে লিখে দিতে চাই। একসাথে বাচতে আমি তোমাকে নিয়ে। তো এতোকিছু যে পরিকল্পনা আছে আমার তোমাকে নিয়ে তা কি পূর্ণ করবে তুমি আমার সাথে?? চিরতরে হবে কি আমার? হবে এই আব্রাহামের আইরাত??

আব্রাহাম এই কথা গুলো এক দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেছে। আইরাত ভাবেই নি যে আব্রাহাম তাকে এমন একটা সারপ্রাইজ দিবে। টুপ করেই আইরাতের চোখ দিয়ে এক বিন্দু পানি গড়িতে পরে। আব্রাহামের দিকে সেও ঘোর লাগা নয়নে তাকিয়ে আছে। আর আব্রাহাম, সে যেনো নিজের প্রশ্নের জবাব গুলো আইরাতের চোখে খুঁজে চলেছে। আইরাতের সারামুখে তার চোখ গুলো বিরচন করে চলেছে। আইরাত তার চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। তার চোখের দেওয়ালে সেইদিন সেই রিসোর্টের কথা টা ভেসে উঠলো। আব্রাহাম তাকে এভাবেই সেইদিন প্রোপজ করেছিলো। আইরাত তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো সেইদিন। আর এখন আইরাতের কাছে ক্লিয়ার হলো যে আব্রাহাম কেনো তাকে ফোন করে ফিরিয়ে দেবার কথা বলছিলো। সেইদিন যখন আব্রাহাম আইরাতকে প্রথম প্রোপজ করে তখন আইরাতের বেশ ভয় লেগেছিলো। অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে নিজের দুই পা পিছিয়ে নিয়েছিলো। আইরাত নিজের চোখ মেলে তাকায়। আব্রাহাম এখনো অধির আগ্রহে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো নিজের জবাব পাওয়ার বেকুল ইচ্ছে। আইরাত নিজের দাত দিয়ে ঠোঁট গুলো কামড়িয়ে ধরে কোন রকমে কান্না থামাচ্ছে। ভীষণ ইমোশন কাজ করছে নিজের মাঝে।

আব্রাহাম;; Airat Babygirl, Do you love me?!

আইরাত;; Yes, I do…

আইরাত তো সেইদিন নিজের দুই পা আব্রাহামের দিক থেকে পিছিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু আজ & এখন সে আব্রাহামের দিকে নিজের দুই পা এগিয়ে দিলো।

আব্রাহাম;; Will you marry me💍✨?

আইরাত;; YES….

আইরাত এক হাত দিয়ে নিজের চোখের পানি কোন রকমে মুছে ফেলে। আব্রাহাম ডায়মন্ড রিং টা আইরাতের হাতে পড়িয়ে দেয়। আইরাত ঝট করে আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম নিজেও আইরাতকে জড়িয়ে ধরে। একহাত আইরাতের কোমড়ে ধরে আরেক হাত আইরাতের মাথার পেছনে দিয়ে দেয়। আইরাতের মাথার ওপর আলতো করে চুমু একে দেয়। আর তখনই বেশ চিল্লা-পাল্লা করে চারদিক থেকে সবাই ছুটে আসে। সবাই বলতে অয়ন-দিয়া, রহিত-আরুশি, আর কৌশলও। আইরাত ওদের দেখে হেসে দেয়।

আইরাত;; এইইই তোরা সবাই এখানে??

দিয়া;; তো থাকবো না,, তুমি যে তলে তলে কত্তো বড়ো ট্যাম্পু চালাও, আহা।

অয়ন;; সিরিয়াসলি অনেক হ্যাপি হ্যাপি লাগছে। ওহ গড এক্সেপ্ট করে নিয়েছে। এখন তো আমার আর আইরাত নাম ধরে ডাকলে চলবে না। বউমনি বলে ডাকতে হবে।

আরুশি;; কংগ্রেচুলেশন গাইস। যাক তোরা এক হলি অবশেষে।

রহিত;; হুমম অনেক আগে থেকেই এক আছে।

কৌশল;; তোরা সবাই মিঙ্গেল ই থাক। একাই সিঙ্গেল আমি মরি 🙂। আমি মঙ্গল গ্রহে চইলা যাই। মিশন মঙ্গল।

কৌশলের কথায় সবাই হেসে উঠে।

আইরাত;; আছে আছে আমার কাছেও তোমার জোড়া আছে ভাই।

কৌশল;; ওমা তাই নাম কি গো 😃😃?

আইরাত;; অবনিইইইইই।

আব্রাহাম;; তাহলে এখানে সবাই বুক করা!

আইরাত;; আবার জিগায়। অবশ্যই।

এভাবেই চলতে থাকলো। বেশ সময় সবাই মিলে আড্ডা দেয়। তারপর রহিত-আরুশি, অয়ন-দিয়া আর কৌশল চলে যায়। কিন্তু আব্রাহাম আর আইরাত সেখানেই থেকে যায়। আব্রাহাম ঘাসের ওপর বসে আছে আর তার কোলেই হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে আইরাত। আইরাতের এক হাত আব্রাহামের আরেক হাতের ভাজে।

আইরাত;; আমরা কখন বাসায় যাবো?

আব্রাহাম;; মন তো চাইছে যে এখান থেকে তোমাকে সোজা আমার বাড়ি নিয়ে যাই।

আইরাত;; হেহেহেহেহে।

আব্রাহাম;; হুমমমম।

আইরাত;; আচ্ছা আব্রাহাম!?

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; আমার না কেনো জানি মনে হচ্ছে যে আমার চাচ্চু আমাদের ব্যাপার টা নিয়ে রাজি হবেন না।

আব্রাহাম;; হাহাহা, হাহাহা।

আইরাত;; আমি কোন জোক বলি নি। হাসছেন কেনো?

আব্রাহাম;; তোমার কি মনে হয় যে আমি কারো বলা-কওয়ার নিচে পরে থাকবো নাকি। ভাগিয়ে নিয়ে আসবো আমি তোমাকে। তোমার চাচা-চাচি রাজি থাকলেও এই বিয়ে হবে আর না থাকলেও এই বিয়ে তো হবেই৷ হাহ যেখানে আমি তোমার মতামত নিবো না বিয়ের জন্য সোজা তুলে এনে বিয়ে করে ফেলবো। সেখানে কিনা তোমার ওই খাড়ুস চাচা-চাচি,, হাসালে।

আইরাত;; ধুর, এভাবে বলতে হয় না।

আব্রাহাম;; আজ আমি তোমাদের বাসায় যাবো। সেখানে গিয়ে যতটুকু না বললেই নয় ততটুকুই বলবো। তারপর সম্পূর্ণ আমার ইচ্ছে বুঝেছো।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; এখন দাদির সাথে দেখা করে পরে তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসবো, চলো।

আইরাত;; আচ্ছা।

আব্রাহাম আর আইরাত চলে গেলো। আব্রাহাম আইরাতকে নিজের বাড়িতে যায়। সেখানে আইরাত আর ইলা বসে অনেক গল্প করে। ইলার যেন এই আধবয়সে একটা সঙ্গী হয়ে গেছে, সেটা আইরাত। তাকে পেলে আর কিছু লাগে না। যাই হোক প্রায় ঘন্টা একের মতো থেকে আইরাত চলে আসে। আব্রাহাম নিজে তাকে নিয়ে আসে। আব্রাহাম আর আইরাত যখন একসাথে আইরাতের বাসায় ঢুকে তখন আইরাতের চাচা-চাচি সবাই ড্রোইং রুমে বসে ছিলো। আব্রাহাম কাউকে কিছু না বলেই সোজা ইকবাল সাহেবের পাশে বসে পরে।

আব্রাহাম;; প্রিয় চাচাজান, ওপস সরি শশুড়আব্বু বেশি না তবে তোমাকে জাস্ট এইটুকু কথা বলতে এসেছি যে আমি তোমার একমাত্র মেয়েকে খুব খুব জলদি বিয়ে করে নিজের সাথে নিয়ে যেতে চাই। সো আমি হচ্ছি তোমার একমাত্র মেয়ের জামাই বুঝলে। আইরাত আমার। তোমরা রাজি থাকলেও বিয়ে হবে আর না থাকলেও। যদি ভালোভাবে রাজি হয়ে যাও তাহলে ভালো আর না হলে বাকা পথ আমি অনেক ভালো জানি। এটাকে চাই তোমরা আমার মিষ্টি সুরে থ্রেইট ভাবো বা অন্য কিছু। তাড়াতাড়ি তোমার মেয়ের আমার সাথে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাও হবু শশুড় বাবাজী আর আম্মাজান।

আইরাতের বেশ হাসি পাচ্ছে। সে মুখ টিপে হাসছে আব্রাহামের এমন কথা শুনে। আর এছাড়াও এতোদিনে আব্রাহামের ব্যাপারে বেশ ধারনা হয়ে গেছে ইকবাল সাহেবের। আর যাই হোক আব্রাহাম আইরাতের জন্য বেস্ট। আইরাতের জন্য আব্রাহামের থেকে ভালো কোন ছেলে আর হয়ই না। আব্রাহাম এই বলেই উঠে গেলো। সবার সামনেই আব্রাহাম আইরাতের গালের পাশে নিজের হাত রেখে তার কপালে একটা গাঢ চুমু দিয়ে চলে যায়। আইরাত আর কি বলবে সেও নিজের রুমে ওপরে চলে যায়। ইকবাল সাহেব কিছুক্ষন ভাবলেন এই বিষয় টা নিয়ে। তিনি কলির দিকে তাকিয়ে দেখে কলি হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। কলি হঠাৎ করেই ইকবাল সাহেবের হাতে নিজের হাত রাখেন। ইকবাল সাহেব তার দিকে তাকালে কলি চোখের ইশারা দেয়। অর্থাৎ হ্যাঁ, বিয়ে টা হোক। ইকবাল সাহেব মুচকি হেসে উঠে বাইরের দিকে চলে আসে। দেখে আব্রাহাম গাড়ির দরজা খুলছে তখনই ইকবাল সাহেবের ডাক…..

ইকবাল;; আব্রাহাম…!

আব্রাহাম;; আরে শশুড়আব্বু, তুমি এখানে?

ইকবাল সাহেব কিছু না বলেই আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়। হুট করেই আব্রাহামের হাত টা নিজের হাতে তুলে নেয়। আব্রাহাম কিছু না বুঝে শুধু তাকিয়ে আছে। আর সে এখন একটু সিরিয়াস হয়।

ইকবাল;; আমার মেয়েটাকে সারাজীবন ভালোবাসায় আগলে রেখো বাবা।

এই বলেই ইকবাল সাহেব চলে যান। আব্রাহাম কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। তার মানে কি? মানে আইরাতের চাচা-চাচি রাজি। ওহ গড। সবাই রাজি হয়ে গেছে। আব্রাহাম হেসে ওঠে। আজ কারো খুশির কোন সীমাই নেই। একদম বাধভাঙ্গা খুশি। আব্রাহাম হঠাৎ ওপরের দিকে তাকায়। দেখে যে আইরাত তার রুমের করিডর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আর বাতাসে তার চুল গুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে চুমুর মতো কিছু একটা দেয়। আইরাত হেসে দেয়। তারপর আব্রাহাম তার গাড়ি নিয়ে চলে আসে, আর আইরাতও ভেতরে চলে যায়। সবাই খুশিতে দিশেহারা।





চলবে~~

{কাল আব্রাহাম-আইরাতের বিয়ে 🥳🥰। সবাইকে উড়া-ধুরা বিয়েতে চলে আসার অগ্রীম নিমন্ত্রণ থাকলো। তবে কেউ খালি হাতে আসবা না। পিলিজ একটু বেশি কইরা চোকলেট-আইসক্রিম নিয়ে আইসো সবাই হ্যাঁ, পিলিজ লাগে 😒। আর আমি নিজে আব্রাহাম-আইরাতের বিয়েতে যাবো “বিন বুলায় মেহমান” হইয়া 😅🤣।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here