নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৩৯

0
766

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৯

আইরাত-আব্রাহামের রাগ গুষা যাই ছিলো সব শেষ। এতোকিছুর পর অবশেষে আইরাত তার আব্রাহাম কে মাফ করেই দিয়েছে। এখন সবকিছু ভালোই। দেখতে দেখতে মাঝখানে কেটে গেছে আরো বেশ কয়েক দিন। আইরাত আর আব্রাহামের মাঝে সারাদিন খুনশুটি লেগেই থাকে। আব্রাহামের পাগলামির মাঝে আইরাতের দিন কাটে। কি কি যে সাইকো মার্কা কাজ করে বসে। আর এর প্রভাব মাঝে মাঝে আইরাতের ওপরও পরে। এইতো কিছুদিন আগের কথা আইরাতের ফাইনাল এক্সাম ছিলো ভার্সিটিতে। এখন স্যার রা ছেলে-মেয়ে দের একসাথে সীট ফেলেছে। এক ব্রেঞ্চে দুইজন করে। একটা ছেলে আরেকটা মেয়ে। এটা শুনেই তো আব্রাহামের মাথা খারাপ। আইরাতের পাশে বসবে অন্য ছেলে এটা কি আদৌ সম্ভব। এর জন্য আব্রাহাম নিজে এক্সাম হলে গিয়ে আইরাতের সামনে এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলে বসে ছিলো। আর একটা মেয়ে কে আইরাতের পাশে বসিয়েছে। মানে দিয়াকেই বসিয়েছে আর কি। শুধু দিয়াকে আইরাতের পাশে বসায় নি। এমনকি আইরাত যেই রুমে বসে এক্সাম দিচ্ছিলো সেই রুমে অন্য কোন ছেলেকে ঢুকতেই দেয় নি। ছেলেদের অন্য রুমে স্যার দের বলে সিফট করে দিয়েছিলো। যত চুরাই বুদ্ধি ছিলো, যতো নকল করার বুদ্ধি ছিলো আব্রাহাম সব এক এক করে আইরাতকে শিখিয়ে দিচ্ছিলো কিন্তু অবশেষে আইরাতের ধমক আর ঝাড়ি খেয়ে সে চুপ হয়ে যায়। কারণ এক্সামের জন্য আইরাতের প্রিপারেশন এনাফ ভালো ছিলো। যতগুলো এক্সাম হয়েছে সবগুলোতেই আব্রাহাম তার অফিসে না গিয়ে আইরাতের সাথে তার এক্সাম হলে ছিলো। নিজে সাথে করে আইরাত কে ভার্সিটি নিয়ে গেছে আবার নিজের সাথে করে নিয়েও এসেছে। একসময় আইরাতের এক্সাম শেষ হয়ে যায়।

আব্রাহামের আইরাত কে নিয়েই হুট হাট প্ল্যান ছাড়া বের হয়ে পরা। লং ড্রাইভে চলে যাওয়া। টপ করেই আইরাতের বাড়িতে টপকে পরা, যদিও আইরাত আব্রাহাম কে মানা করেছে কিন্তু কথা শুনলে তো আব্রাহাম। আইরাতের চাচার সাথে আব্রাহামের সম্পর্ক কিছুটা ইঁদুর-বিড়াল। দুইজন দুইজনের পেছনে পরেই থাকে। আর আইরাতের চাচি তো আব্রাহামের সামনে চু পর্যন্ত করতে পারে না। আব্রাহাম কে দেখলেই কলির রিয়েকশন কিছুটা এমন হয় 🙂। আব্রাহাম আগে যেভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা অফিসে থাকতো এখন আর তেমন থাকে না। যতটুকু প্রয়োজন ততোটুকুই থাকে। আরে তার আইরাতকে টাইম যে দিতে হবে। গভীর রাত পর্যন্ত আইরাতের সাথে ফোনে কথা বলা আব্রাহামের। মাঝে মাঝে তো এমনও হয় যে আইরাত ফোন কানে রেখেই ঘুমিয়ে পরে। আর যখন পরেরদিন সকালে আইরাত ঘুম থেকে ওঠে তখনও দেখে যে আব্রাহাম ফোনের লাইনেই আছে। লাইন কাটে নি। এমনকি আইরাতের ঘুমও ভাঙে আব্রাহামের ডাকেই। আবার যখন আইরাতের মুড কোন কারণে খারাপ হয় তখনই আব্রাহাম হাজির হাতে এত্তোগুলো চকোলেট বা ফুচকা নিয়ে। মানে যা আইরাতের পছন্দ তা নিয়েই। ভার্সিটির কোন ছেলেই আইরাতের ধারে কাছে আসে না। সবাই আপু বলে ডাকে। এমনও হয় যে আইরাতের নিজের ক্লাসমেট রাই মাঝে মাঝে আব্রাহামের ভয়ে আইরাতকে আপু ডেকে ফেলে। আইরাতের আর বুঝতে অসুবিধে হয় না যে এটা আব্রাহাম ছাড়া আর কারোরই কাজ না।


এখনো আইরাত-আব্রাহাম একসাথে। একটা কফি শপের ভেতরে বসে আছে। আইরাত বসে বসে খাচ্ছে আর আব্রাহাম কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে। তারপর রেখে দেয়।

আইরাত;; কে ছিলো? (খেতে খেতে)

আব্রাহাম;; ছিলো কিছু ক্লাইন্ট।

আইরাত;; খাবেন?

আব্রাহাম;; আমি বার্গার খাই না। এতে অনেক ফ্যাট থাকে।

আইরাত;; এহহহ আসছে রে আমার The most health conscious man….

আব্রাহাম;; হ্যাঁ অবশ্যই, আমাকে ফিট থাকতে হয়। আমি কি তোমার মতো মোটা নাকি।

আইরাত;; হ্যাঁ? এই কি কি বললেন আপনি? আমি, আমি মোটা?

আব্রাহাম;; নিজেকে দেখেছো একবার গালের দিকে মাংস বেড়ে যাচ্ছে। কিছুটা ভুরিও তো বেড়েছে তোমার।

আব্রাহামের এমন কথা শুনে আইরাতের খাওয়াতে তালা লেগে গেলো। খাওয়া পুরো বন্ধই হয়ে গেলো তার। মুখে এক বাইট বার্গার রেখে আব্রাহামের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম তো ফাজলামি করছিলো কিন্তু আইরাতের এমন চেহারা দেখে হাসতে হাসতে শেষ। আব্রাহামের হাসি দেখে আইরাত রাগে শেষ। রাগে মুখে থাকা বার্গার টা আস্তে আস্তে চিবুচ্ছে আর আব্রাহামের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; হাহাহাহাহা 😆😆। আস্তে খাও।

আইরাত;; শালা খবিশ। আমি ৫৩ কেজি, হাইট ৫.৫ আর কতো লাগে। আমি নাকি মোটা। হ্যাঁ মানলাম আমার গালে একটু মাংস বেশি। কিন্তু এই গাল সরকারি না বুঝলেন। আমার গাল, আমার সম্পত্তি তাতে কার বাপের কি! আর এতোই মোটা লাগে তো যান না অন্য মেয়েদের কাছে যান এখানে কি করেন। যত্তসব।

আব্রাহাম;; হায়য়য়য়য়য়য়য়য়য়!! এই রাগের আগুনেই না আমি আব্রাহাম ঝলসে যাই।

আইরাত;; 😏

আব্রাহাম;; আরে বুঝো না কেনো মজা করছি। আর এছাড়াও আমার শুটকি মার্কা মানুষ পছন্দ না। আমার এইযে গোলুমোলু মানুষই পছন্দ।

আইরাত;; হুম হয়েছে এখন ভালো ছেলের মতো আরেকটা বার্গার অর্ডার দিন।

আব্রাহাম;; কি?

আইরাত;; শুনেন না 😠।

আব্রাহাম;; দিচ্ছি তো।

আব্রাহাম আরো একটা বার্গার অর্ডার দেয় সাথে একটা ক্যাপাচিনো তার নিজের জন্য। বার্গার এলে আইরাত খাওয়া শুরু করে। আব্রাহামও আইরাতকে দেখছে আর খাচ্ছে। তখনই একটা মেয়ে আসে। মুখে হ্যাভি মেকাপ, ওয়েস্টার্ন ড্রেসাপ পরা। হয়তো আব্রাহামেরই ভুল ছিলো যে সে ওই মেয়েটার চোখে পরেছে। বাপরে বাপ। নেকামোর একটা সীমা থাকে। মেয়েটা এসেই আব্রাহাম কে দেখে ছোট-খাটো একটা চিৎকার দিয়ে কিছুটা লাফিয়ে ওঠে। মানে তার সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যাবার মতো অবস্থা। হুমড়ি খেয়ে পরছে।

আব্রাহাম;; আরে ঠিক ভাবে খাও। মুখের সাইডে লাগাচ্ছো কেনো? এদিকে কাছে আসো দেখি।

আব্রাহাম হাতে টিস্যু নিয়ে আইরাতের ঠোঁটের সাইডে মুছে দিচ্ছিলো আলতো ভাবে। তখনই ওই মেয়েটি ছুটে আব্রাহামের কাছে আসে।

মেয়েটি;; ওহ গড ওহ গড ওহ গড। এই আমি কাকে দেখছি। আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী। আপিনিইইইইইই?
আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। স্যার আপনি জানেন না আমি আপনার কতো বড়ো ফ্যান। আর এভাবে নরমাল ভাবেই যে আপনাকে দেখতে পারবো আমি ভাবিই নি। আজ বুঝলাম যে আপনি হয়তো অনেক বড়ো একজন মানুষ কিন্তু অনেক ভালো। তাইতো এভাবে নরমাল ভাবে চলাচল করেন। স্যার আপনি তো আমার জন্ম-জন্মান্তরের ক্রাশ। বলতে গেলে আমার ভালোবাসা। আপনার যে ঠিক কতো গুলো ছবি আমার রুমে লাগানো তা আমি নিজেও জানি না।

মেয়েটি এসে তার নিজের মতো করেই এইগুলো বলে যাচ্ছে। আর আব্রাহাম তার মুখে হাত রেখে শুধু হুম হুম করে যাচ্ছে। আব্রাহাম কিছুটা বাকা চোখে আইরাতের দিকে তাকায়। দেখে যে আইরাত শান্ত ভাবেই বসে আছে। কিন্তু হুট করেই আইরাতের এতো শান্ত স্বভাব টা কেনো জানি আব্রাহামের হজম হচ্ছে না। তার মাঝেই মেয়েটা আবার বলে ওঠে…

মেয়ে;; স্যার স্যার আমার নাম জোতি। আমি কি আপনার সাথে জাস্ট একটা, জাস্ট একটা ছবি ক্লিক করতে পারি।

আব্রাহাম;; আব… ইয়াহ সিওর।

মেয়েটি আব্রাহামের কাছে গিয়ে তার সাথে একটা ছবি নেয়। (মেয়েটা এতো নির্লজ্জ কেন 🙄)

মেয়ে;; স্যার ছবিতেও আপনাকে দারুন লাগছে। স্যার স্যার একটা অটোগ্রাফ প্লিজ।

আব্রাহাম;; ওকে…

মেয়ে;; আমার হাতেই করে দিন।

মেয়েটা একটা জেল প্যান বের করে আব্রাহাম কে দেয়। আব্রাহামও অটোগ্রাফ দিয়ে দেয়। কি আর করার। সে আইরাতের দিকে তাকায় দেখে আইরাত আস্তে আস্তে মানে একদম আস্তে আস্তে বার্গার খাচ্ছে।

মেয়ে;; স্যার থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমার তো খুশিতে গড়াগড়ি খেতে মন চাইছে। ইশশশশ আপনার সাথে ছবিইইইইই।

আইরাত;; হ্যাঁ এখন ওই ছবিটা ফ্রেমে বাধিয়ে নিও তারপর দেওয়ালের সাথে সাথে নিজের সাথেও চিপকিয়ে নিও। আর হ্যাঁ হাতের যে ওই অটোগ্রাফ টা আছে না। এককাজ করো হাতের চামড়া খুলে সেটাকেও ফ্রেম করিয়ে নাও ঠিকআছে বইন 🙂🙂?

মেয়ে;; এ মানে…. স্যার উনি কে?

আইরাত হাসবে না কাদবে ভুলে গেছে।

আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন না আব্রাহাম জ্বি আমি আপিনার কে? বলুন।

আব্রাহাম;; মানে আসলে….

আইরাত;; আব্রাহাম জ্বি, আরে বলুন না আমি আপনার কে? বলুন, বলা তো উচিত তাই না। বলে ফেলুন বলে ফেলুন। আমি আপনার কে হই আব্রাহাম?

আব্রাহাম একদম স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড জবাব দিলো।

আব্রাহাম;; আমার বউ।

মেয়ে;; জ্বি??

আব্রাহাম;; জ্বি, আমার বউ উনি।

মেয়ে;; ওহহ আচ্ছা না মানে আচ্ছা ঠিকআছে আমি এবার তাহলে যাই।

এই বলেই মেয়েটি সেখান থেকে কেটে পরে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায় দেখে যে সে আইরাত না তো রাগে একটা আগুনের গোলা। মানে একটা আগুনের গোলা কে আব্রাহাম তার পাশে নিয়ে বসে আছে। সেই মেয়েটা এসে এখন এমন একটা কিছু করবে তা আব্রাহাম ভাবেই নি। আইরাতের মাথা-মুথা তো রাগে ফেটে যাচ্ছে। আব্রাহাম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত উঠে রাগে চলে যায় সেখান থেকে।

আব্রাহাম;; আবার চেইতা গেছে। আরে আল্লাহ 😑।

আব্রাহাম সবসময় নিজের সাথে দুই একটা গার্ড নিয়েই বাইরে বের হয়। তবে তারা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো। আব্রাহাম তাদের বিল পে করতে বলে নিজে দ্রুত আরাতের পেছন পেছন চলে যায়। আইরাত কে পেছন থেকে অনেক ডাক দেয় কিন্তু আইরাত শোনে না। এবার আব্রাহাম কিছুটা দৌড়ে গিয়েই আইরাতের একদম সামনে এসে পরে। হাত ধরে থামিয়ে দেয় তাকে।

আব্রাহাম;; কি হয়েছে?

আইরাত;; 🥺🥺।

আব্রাহাম;; আরেএএএ কাদছো কেন?

আইরাত;; 😔😔

আব্রাহাম;; জানপাখি কি হয়েছে কাদছো কেনো?

আইরাত;; ওই মাইয়া এতো লুইচ্চা কেন। আপনার দিকে নজর দিবো কেন। কীভাবে আপনার ওপর হুমড়ি খেয়ে পরছিলো। কীভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে আপনাকে দেখছিলো 😭।

আইরাত সত্যি কেদে দিয়েছে। আব্রাহাম বুঝলো যে এগুলো আইরাতের রাগ যা কান্নায় পরিনত হয়েছে। আব্রাহাম মুচকি হেসে আইরাতকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। আইরাত আব্রাহামের বুকে মুখ গুজে দিয়ে এক রকম চিল্লাচ্ছে। আব্রাহামের বুক থেকে উঠে আসতে চাইলে আব্রাহাম তাকে আরো জোরে চেপে ধরে নিজের সাথে। আব্রাহামের এই মূহুর্তে প্রচুর হাসি পাচ্ছে।

আইরাত;; শুনেন আপনি আমার তো তাই না, আপনাকে অন্য মেয়ে কেনো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে। আপনি আমার তো। এর পর থেকে আমি আপনাকে বোরকা পরে বাইরে নিয়ে আসবো।

আব্রাহাম;; কিইইইই?

আইরাত;; হ্যাঁ সত্যি। আর এখন ছাড়ুন আমাকে। আমি ওই মেয়ের কাছে যাবো। তারপর এই কুত্তির মাথার সব চুল টেনে টেনে ছিড়বো। ছবি ক্লিক করা একদম ঘুচিয়ে দিবো। লুচ্ছি বেডি। ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন।

আব্রাহাম;; আরে বাবা আমি কি চলে গিয়েছি নাকি। আমি তো আছি তাই না। আমি তো তোমারই। কেউ নিবে না আমাকে তোমার কাছ থেকে। এমন করে না। এমন পাগলামি করে না বেবিগার্ল।

আইরাত;; এহহহ এক সাইকো-পাগলে আমায় বুঝ দিচ্ছে যে আমি যেনো এমন পাগলামি না করি। হায়রে।

আব্রাহাম;; আচ্ছা চলো।

আইরাত;; কোথায়?

আব্রাহাম;; একটু আগে যেই কথা বলছি তা সত্যি করবো।

আইরাত;; মানে?

আব্রাহাম;; বিয়ে করবো বিয়ে, বিয়ে।

আইরাত আব্রাহামের কাছে গিয়ে দাত কটমট করতে করতে বলে ওঠে…

আইরাত;; আমি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাবো হাহ্।

এই কথা বলেই আইরাত চলে আসে। তার মানে এখনো রেগে আছে। আব্রাহাম আবার চলে যায় আইরাত আইরাত করতে করতে। রাগ যে ভাঙাতে হবে। গোধূলির লগ্ন। সূর্য অস্ত যায় যায় ভাব। একদিকে সূর্য ডুবছে আরেক দিকে এই দুই লাভ বার্ড নিজেদের খুনশুটি করতে করতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে 🍂।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here