নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ০৬

0
999

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ০৬

ধীরে ধীরে রাত আরো গভীর হচ্ছে। রাত যতো গভীর হচ্ছে আইরাতের রাগ & চিন্তা ততোই বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে অচেনা অজানা একটা জায়গায় একটা অচেনা লোকের সাথে থাকার কোন মানেই হয় না। না জানি লোকটা কেমন। অবশ্যই বেশি একটা সুবিধের না। যার নমুনা সরুপ আইরাত সেইদিন বারে আব্রাহামের মুখে সেই কথা গুলো শুনেছে। সারা ঘরে পায়চারি করে যাচ্ছে৷ কোথাও একটা জায়গায় চুপ করে বসে থাকতে পারছে না আইরাত। এখান থেকে কীভাবে বের হবে তাই শুধু ভেবে চলেছে। যেন একটা খাচা তে একটা পাখি কে আটকে রাখা হয়েছে আর সেই পাখিটা এখান থেকে উড়াল দেবার জন্য উঠে পরে লেগেছে একদম। আব্রাহামের তখন চলে যাবার পর রুমে একটা মেয়ে এসেছিলো লিমা নামে। আইরাতের কি লাগে না লাগে সব জানতে এসেছিলো কিন্তু আইরাত কিছুই বলে না তাই তাকে চলে যেতে হয়েছে। এখন বাজছে রাত একটা। চোখে নেই ঘুম, মাথা চিন্তায় মগ্ন, মনে নেই শান্তি। টেবিলের ওপর পানি রাখা ছিলো আইরাত তাই গিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলে। রুমে এসি অন করা বাট ঘাম ঝড়ছে। আইরাত গিয়ে বিছানাতে বসে পরে। তখনই বাইরে থেকে কারো আওয়াজ আসে। দরজা খুলে কেউ ভেতরে এলো। আব্রাহাম ছাড়া আর কে হতে পারে। তবে এই মূহুর্তে আব্রাহাম কে দেখে আইরাতের মেজাজ চটকে গেলো। আব্রাহাম একদম তার নরমাল গেটাপে এখন। অফ হুয়াইট কালারের পেন্ট এন্ড সাদা ধবধবে কালারের একটা শার্ট যার হাতা ফোল্ড করা ব্যাস। আব্রাহাম খেয়াল করলো যে তাকে দেখা মাত্রই আইরাত নাক মুখ সব ফুলিয়ে অন্য দিকে ঘুড়ে তাকালো। আব্রাহাম ক্ষীণ হাসে, রাগ করাটাই স্বাভাবিক।

আব্রাহাম;; এতো রাগ করলে মাথা টা রাগে ফেটেই যাবে।

আইরাত;; _______________

আব্রাহাম;; লিমা কে দিয়ে খাবার পাঠিয়েছিলাম আমি, খাও নি কেন?

আইরাত;; _______________

আব্রাহাম;; ওহহ কথা বলবে না, আচ্ছা ওকে না বললে। ভেবেছিলাম যে এখান থেকে তোমার বের হবার জন্য কিছু কথা বলবো কিন্তু তুমি যখন কথাই বলবে না তখন কি আর করার ছেড়ে দাও…!

এবার আইরাত ফট করে মাথা ঘুড়ায় আব্রাহামের দিকে। দ্রুত বলে ওঠে…

আইরাত;; এই না না না আমি, আমি আসলে বলবো কথা। বলবো আমি। আপনি বলুন।

আব্রাহাম;; কি বলবো?

আইরাত;; আরে আমাকে কবে যেতে দিবেন এখান থেকে সেটা।

আব্রাহাম;; ওটা তো শুধু তোমার ভয়েস শোনার জন্য একটা ট্রিক ছিলো ব্যাস আর কিছুই না।

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

আইরাত;; অসহ্যকর একটা।

আব্রাহাম;; তো সহ্য করে নাও।

এবার আইরাত এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে পরে। রাগে বলে ওঠে…

আইরাত;; হয়েছে অনেক হয়েছে। আর না। কি ভাবেন টা কি আপনি হ্যাঁ। মানে যখন যা খুশি করলাম। দি গ্রেট বিজনেস টাইকুন & মাফিয়া আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী উনি তো সব করতে পারে তাই না। যার নাম শুনলে সবাই এক প্রকার গড়াগড়ি খায় সবাই পাগল ব্লা ব্লা ব্লা। এই নাম টা সেই প্রথম দিন থেকে শুনতে শুনতে কান গুলো আমার ঝালাপালা হয়ে গেছে। কিন্তু না আমি তেমন না। আপনি যেই হোন না কেন আমার কিছুই না তাতে। আমি শুধু এই টুকু চাই যে প্লিজ এখান থেকে আমায় যেতে দিন। কারণ কি? কেন আটকে রেখেছেন তা তো বলবেন। বলা নেই কওয়া নেই অযথা এভাবে আটকে রাখার মানে কি।

এক দমে এই কথা গুলো বলে আইরাত যেন ফুসছে। আব্রাহাম এতোক্ষণ এক নয়নে তাকিয়ে ছিলো আইরাতের দিকে। যেন আইরাতের বলা কথা গুলো সে এক কান দিয়ে শুনছে আরেক কান দিয়ে বের করছে। আইরাত রাগে আগুন আর আব্রাহাম বরফের মতো ঠান্ডা। কোন ভাবান্তর নেই তার মাঝে। আইরাত যখন কথা গুলো বলে থেমে গেলো তখন আব্রাহাম মেকি হেসে বলে…

আব্রাহাম;; শেষ..! মানে শেষ হয়েছে তোমার নাকি আরো আছে (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

আইরাত;; এতো গুলো কথা বললাম কানে যায় নি আপনার?

আব্রাহাম;; আমি মেয়েদের সাথে অহেতুক কথা বলি না।

আইরাত;; কিহ?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ, আর রাগলে যা লাগে না তোমায়। হায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়।

আইরাত;; দেখুন প্লিজ আমায় বাড়ি যেতে দিন।

আইরাত ধপ করে বিছানাতে বসে পরে। আব্রাহাম এতোক্ষোন দুইহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। আব্রাহাম বুঝলো যে আইরাতের এখন অনেক বেশি খারাপ লাগছে। তাই সে তার হাত দুটো পেন্টের দু পাশে থাকা পকেটে ঢুকিয়ে ধীর পায়ে আইরাতের দিকে এগোতে লাগলো।

আব্রাহাম;; আইরাত….

এই প্রথম যেন আব্রাহাম একটু সিরিয়াস হয়ে গম্ভীর মুখে আইরাতের নাম টা উচ্চারণ করলো। আইরাত মাথা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে যে আব্রাহাম তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত এক নজর দেখে সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে ফেলে। তবে এবার আব্রাহাম করলো উলটো কাজ। পকেট থেকে হাত দুটো বের করে আইরাতের দিকে হুট করে ঝুকে পরে। এমন কাজে আইরাত কপাল কুচকে আব্রাহামের দিকে তাকায়। কিন্তু আব্রাহামের নজর যেন আইরাতে স্থীর। আব্রাহাম আইরাতের দুপাশে হাত রেখে দেয়। নিজের হাত গুলোর ওপর ভর দিয়ে ক্রমশ আইরাতের দিকে ঝুকে পরছে। আইরাত চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। বুকের কাছে নিজের দুইহাত একসাথে গুটিয়ে রেখেছে ভয়েই। আইরাতের পেছনে বালিশ ছিলো। আইরাত এক সময় নিচু হতে হতে বালিশের ওপর শুয়েই পরে। আর আব্রাহাম তাকে তার দুই হাতের আবদ্ধে আটকে ফেলে। একদম ঝুকে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহামের সামনের চুল গুলো কপালে এসে পরেছে৷ নজর যেন আইরাতের ওপর থেকে সরছেই না,, একদম ধীর গলায় বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; আইরাত তুমি জানো না রেগে থাকলে তোমায় সেই সময় কি পরিমান ভালো লাগে। এক কথায় দারুন। আর এই সময় এমন খোলা এলোমেলো চুল,, অনেক তো কান্না করেছো যার ফলে নাক চোখ মুখে সবকিছুতে লাল আর সাদার এক প্রকার আভা ফুটে ওঠেছে। নেশা ধরিয়ে দিয়েছো আমায় তুমি। মনে হয় না যে এতোটা নেশা কখনো আমার মদ্যপান করেও হয়েছিলো। নেশাক্ত করে ফেলেছো তুমি আমায়। তুমি জানো না আইরাত এই অবস্থায় এখন তোমাকে ঠিক কতোটা আবেদনময়ী লাগছে, তুমি এলোমেলো করে দিচ্ছো আমায়, আমার মনেক।

আব্রাহামের এমন স্লো ভয়েসের কথা শুনে আইরাত কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলে। আইরাত খেয়াল করলো যে আব্রাহামের ওই চোখ দুটো আইরাতের সারামুখে বিচরণ করে চলেছে। কিন্তু এবার আইরাত থাকতে না পেরে জোরে কেদে দেয়। একদম ভেঁ ভেঁ করে কেদে দেয়। আব্রাহাম তো বোকা বনে গেলো আইরাতের এমন কান্ডে।

আইরাত;; দ দে দেখুন প্ল প্লিজ আমায় আপনি এই এইসব কথা বল বলবেন না। আমার খা খারাপ ল লাগে।

আইরাত তো একদম হিচকি তুলে কাদছে। আব্রাহাম এবার হেসে দেয় কিছুটা জোরেই। সে বুঝলো যে আইরাত খুব সাধারণ মেয়ে। তার জন্য এই সমস্ত কথা নয়। এই কথা গুলো আইরাতের সাথে যায় না। আর যদি কেউ তাকে এগুলো বলেও দিয়েছে তাহলে তার নমুনা এখন আব্রাহামের সামনেই রয়েছে।

আব্রাহাম;; হাহাহাহাহা,,, হেই রিলেক্স। ইট’স্ ওকে। আমি তো শুধু মজা করছিলাম। তোমার রিয়েকশন টা দেখার জন্য আর কিছুই না। ওকে সরি সরি, রেলি ভেরি সরি।

আইরাত নাক টানতে টানতে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম তার কাছ থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছে। আর হাসছে। আইরাত তার চোখ মুছতে মুছতে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম কোন রকমে তার হাসি কন্ট্রোল করে। আইরাতের এবার আবার প্রচুর রাগ হতে থাকে।

আইরাত;; বেটা খচ্চর, হারামী। আমার পক্ষে সম্ভব হলে তোরে এখনই উগান্ডা পাঠায় দিতাম। মেজাজ টা কি পরিমান যে খারাপ হইতাছে। (মনে মনে)

আব্রাহাম;; তাকিয়ে আছো কেন এভাবে?

আইরাত;; _________________

আব্রাহাম;; শেষ মানে গালি টালি সব দেওয়া শেষ নাকি আরো আছে।

আইরাত;; আমি গালি দেয় নি।

আব্রাহাম;; মুখ দেখে বুঝা যায় যে মনে মনে কিছু তো একটা বলছো। আচ্ছা যাই হোক এখন চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমাও। গুড নাইট উইথ সুইট ড্রিমস্ বেইব ।

আইরাত কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম ঠাস করে দরজা লাগিয়ে চলে যায়। আর আইরাত এবার সত্যি গা এলিয়ে দেয় বেডে। আর ভালো লাগে না।


পরেরদিন সকালে~~

ইকবাল;; নাহ, এভাবে আর হাতে হাত রেখে বসে থাকা যায় না। মেয়েটা কাল গায়েব হয়েছে এখনো আসার নাম নেই। গেলো কোথায়?

কলি;; যেখানে আছে যার সাথে আছে গিয়ে দেখো ভালোয় হয়তো আছে। (সবজি কাটতে কাটতে)

ইকবাল;; এইই তুমি একটা কথাও বলবে না। যা করছো তা করো তো চুপ করে। এখানে তোমার মাথা ঘামাতে হবে না।

কলি তার হাতে থাকা চাকু টা টেবিলের ওপর ঠাস করে ফেলে দিয়ে রাগে রান্নাঘরে চলে গেলেন। আর এদিকে ইকবাল শেষ। আজ ভার্সিটি ছিলো কিন্তু দিয়া যায় নি। ভার্সিটি না গিয়ে দিয়া সোজা তার চাচ্চুর হোটেলে চলে যায়। সেখানে অবনি আরো বাকি দের জিজ্ঞেস করে কিন্তু আইরাত কোথাও নেই৷ এই ঘটনা টা দিয়ার চাচ্চু ও জানেন। এবার কেন জানি দিয়ার নিজের কাছেই অপরাধী মনে হচ্ছে। তার জন্যই আইরাত হারিয়ে গেছে। অবশেষে আর না পেরে দিয়া আইরাতের বাসায় চলে যায়।

দিয়া;; আংকেল আইরু এসেছে বাসায়?

ইকবাল;; না রে মা ও আসে নি।

দিয়া;; ধুর কোথায় যে গেলো এই।

ইকবাল;; দিয়া এখন কি উচিত না পুলিশের কাছে যাওয়া?

দিয়া;; হ্যাঁ আংকেল চলুন। এভাবে আর হয় না। পুলিশ স্টেশনে চলুন।

কলি;; হ্যাঁ হ্যাঁ যাও যাও এইসব পুলিশ টুলিশের চক্করে গিয়ে পরো আবার যাও।

ইকবাল;; ভালো কথা মুখ দিয়ে না বের হলে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে রাখো।

এই কথা বলেই দিয়া আর ইকবাল সাহেব বের হয়ে পরেন। বেশ সময় পর পুলিশ স্টেশনে এসেও পরেন। তাড়াতাড়ি করে ভেতরে চলে যায় তারা। একজন অফিসার তাদের দেখেই বুঝতে পারেন যে তারা কি পরিমান চিন্তায় আছেন। তাদের বসতে বললে তারা বসে পরেন।

অফিসার;; জ্বি বলুন কীভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাদের..!

দিয়া;; স্যার একচুয়ালি আমার ফ্রেন্ড আইরাত। তাকে নিয়ে আমি একটা বিয়ে বাড়ির ফাংশনে গিয়েছিলাম। সবাই ছিলাম। আমার বোন অর্থাৎ যার বিয়ে সে আমি আর আইরাত একই রুমে ছিলাম কিন্তু সেখানে এক সময় হুট করেই পুরো ঘরের আলো চলে যায় আর আলো যখন আসে তখন আমরা কেউ আইরাতকে খুঁজে পাই না। আর এর পর থেকে আর দেখিও নি। গতকাল বিয়ে ছিলো আর আজ এত্তো সকাল হয়ে গিয়েছে তবুও আইরাত বাড়ি ফিরে নি। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

অফিসার;; হুমম মিসিং কেস। ২৪ ঘন্টা আই থিং হয় নি।

ইকবাল;; জ্বি অফিসার জানি ২৪ ঘন্টা হয় নি কিন্তু চিন্তা তো মাথা থেকে যায় না। আর এই ২৪ ঘন্টায় যদি কোন অঘটন ঘটে যায় তাহলে।

অফিসার;; জ্বি আপনারা একদম চিন্তা করবেন না। আমরা কেইস ফাইল করছি। খোজার কাজ এখন থেকেই শুরু করে দিচ্ছি। কোন খবর পেলে আমরা সাথে সাথেই আপনাদের ইনফর্ম করবো। এখন আপনারা বাড়িতে যান।

দিয়া আর ইকবাল সাহেব সেখান থেকে উঠে চলে যান। দিয়া প্রথমে ইকবাল সাহেব কে উনার বাড়িতে নামিয়ে দেয় তার পর নিজে বাসায় চলে আসে।


অয়নকে আজ আব্রাহাম তার গেস্ট হাউজে থেকে যেতে বলেছে এর কারণ অয়ন নিজেও জানে না। তবে শুধু থাকতে বলেছে। আব্রাহামের অফিসে কাজ আছে সেখানে না গেলেই নয় তাকে যেতেই হবে। আর বাসায় লিমা কেও রেখে গেছে আইরাতের দেখা শোনা জন্য। খুব সকালে আব্রাহাম মর্নিং ওয়ার্কে গিয়েছিলো। সেখান থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে আইরাতের রুমে গিয়ে কিছুটা উঁকি দিয়েছিলো। এলোমেলো ভাবে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে আইরাত। আব্রাহাম দেখে মুচকি হেসে আবার এসে পরে।

আব্রাহাম;; শোন এই রইলো চাবি। (একটা চাবি অয়নের দিকে হাল্কা ভাবে ঢিল দেয় আর অয়ন তা ধরে ফেলে)

অয়ন;; কিন্তু আমাকে কেন রেখে যাচ্ছিস ভাই?

আব্রাহাম;; কিছু না থাকতে বলছি তুই থাকবি। আর পেটুকমশাই আপনার চিন্তা করতে হবে না আমি বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে দিয়েছি। এসে পরবে কিছুক্ষনের মাঝেই।

অয়ন;; ওকে। তবে একটা কথা বল তো তুই কেন আটকে রেখেছিস মেয়েটাকে..!

আব্রাহাম;; আসলে আমার ভালো লাগে বুঝলি। মেয়েটাকে দেখলেই নিজের অজান্তেই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়। মাতালের মতো লাগে নিজেকে ঠিক। আমি শুধু এটা চাই যে ও আমার সামনে থাকুক আমার কাছে থাকুক। আমি জানি না এটাকে ঠিক কি বলে বাট আই নিড হার বেডলি।

অয়ন;; হুম হুম ছোট বেলা খেয়েছি সুজি এখন একটু হলেও বুঝি।

আব্রাহাম;; চুপ কর। (মাথায় গাট্টা মেরে)

আব্রাহাম বাইরে এসে চোখে গ্লাসেস পরে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পরে। অয়ন সামনে টিভি অন করে তাতে মেচ দেখতে বসে। আর লিমা আইরাতের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। লিমা নক করবে দরজাতে তখনই দেখে যে দরজা তো বাইরে থেকে বন্ধ। লিমা দরজা খুলে ভেতরে যায় গিয়ে দেখে আইরাত উঠে বসে আছে।

লিমা;; গুড মর্নিং ম্যাম।

আইরাত একবার লিমার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়।

লিমা;; ম্যাম প্লিজ রেডি হয়ে নিন অনেক বেলা হয়েছে।

আইরাতের রাগ কমে নি। রাগ উঠলেও তা দেখায় না কারণ এরা সবাই আব্রাহামের কথায় কাজ করে। এদের ওপর রাগ দেখালেও লাভ হবে না। আইরাত এবার উঠে পরে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। চোখে মুখে ইচ্ছে মতো পানির ঝাপটা দেয়। আইরাত ফ্রেশ হচ্ছিলো তখনই আইরাতের মাথায় একটা কথা আসে যে ‘এতো বড়ো একটা হাইফাই গেস্ট হাউজ তাহলে তো অবশ্যই তাতে ক্যামেরা ফিট করা থাকবে’।

আইরাত ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে টাওয়াল নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে লিমা কে বলে ওঠে…

আইরাত;; লিমা…

লিমা;; জ্বি ম্যাম।

আইরাত;; তুমি এই গেস্ট হাউজে রোজ আসো মানে সবসময় কাজ করো কি?

লিনা;; না ম্যাম। যখন যখন আব্রাহাম স্যার এখানে আসেন বা থাকেন আমি শুধু তখনই আসি কাজ করতে। মাঝে মাঝে কাজের ফলে স্যার কে এখানেই থেকে যেতে হয় তখন আসি।

আইরাত;; আচ্ছা এখানে তো ক্যামেরা লাগানো আছে তাই না..!

লিমা;; অবশ্যই ম্যাম। প্রায় ২২-২৩ টা ক্যামেরা। তবে এটা স্যারের রুম এখানে স্যার থাকতো। আপনি আছেন তাই স্যার এখন এখানে নেই অন্য রুমে থাকে। যেহেতু এটা স্যারের রুম তাই এখানে এই রুমে কোন ক্যামেরা নেয়। নয়তো পুরো বাড়িতেই আছে।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা।

লিমা আইরাতের সাথে কথা বলছিলো তখনই বাইরে কারো কলিংবেল বাজানোর শব্দ আসে৷ লিমা আইরাতকে বলে সেখানে চলে যায়। আর আইরাত ভাবতে থাকে যে কি করে এখান থেকে পালানো যায়। লিমা গিয়ে মেইন দরজা খুলে দেয়৷ দেখে ডেলিভারি বয় এসেছে খাবার নিয়ে। প্রায় অনেক খাবার। লিমা গিয়ে সেগুলো আস্তে করে হাতে নিয়ে নেয়। সে একা নিতে পারবে না এতোগুলো দেখে ডেলিভারি বয় কে ভেতরে আসতে বলে। অয়ন টিভি দেখছিলো তখন লিমা গিয়ে অয়নের সামনে খাবার গুলো রাখে।

লিমা;; ভাইয়া আপনার খাবার।

লিমা আব্রাহাম বাদে বাকি সবাইকে ভাইয়া বলেই ডাকে৷

অয়ন;; হ্যাঁ, ওইযে আইরাত আছে সে কি উঠেছে?

লিমা;; জ্বি উনি উঠেছেন।

অয়ন;; হুমম ওকে সুন্দর করে খাবার গুলো আগে দিয়ে এসো যাও।

লিমা নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে তার হাতে কিছু খাবারের ঝোল লেগেছে আর এখানে সব এলোমেলো হয়ে আছে। কোনটা রেখে কোনটা করবে। তাই সে আর কোন উপায় না পেয়ে ডেলিভারি বয় কেই বলে যে ওপরে গিয়ে ডান দিকে একটা রুম পরবে সেখানে খাবার গুলো দিয়ে আসতে। ডেলিভারির ছেলেটা সেটাই করে। লিমা এইদিক টা সামিলাচ্ছে আর ছেলে টা ওপরে যাচ্ছে হাতে খাবার নিয়ে। আইরাত জানালার বড়ো পর্দা টা সরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। কারো দরজা খোলার শব্দে পেছনে ঘুড়ে তাকায়। আর পেছন ঘুড়ে তাকাতেই যেন আইরাত একটা ঝটকা খেলো। আর সাথে ওই ছেলেটাও। কেননা ছেলেটাকে আইরাত চেনে৷ ওর নাম সৌরভ। আইরাতের সাথেই তার হোটেলে কাজ করে। আইরাতের বেশ ভালো বন্ধু বলা যায়। আইরাত তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আর সাথে সৌরভও।

সৌরভ;; আইরাত তুমি। তুমি এখানে কি করছো?

আইরাত;; এ্যাহ, তুমি এখানে কি করে?

সৌরভ;; আরে আমি তো ডেলিভারি করতে এসেছিলাম। কিন্তু তুমি এখানে কি করে এলে?

আইরাত;; আমি আসি নি আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে।

সৌরভ আইরাতের হোটেলে কাজ করে ডেলিভারি বয় হিসেবে। তাদের হোটেল থেকে ডেলিভারি ও দেওয়া হয়। আর একসাথে কাজ করে বিধায় অবনি, আইরাত, আর এই সৌরভ বেশ ভালো বন্ধু। তবে এই রুমে এসে যে সৌরভ আইরাতকে দেখবে বা আইরাত এই মূহুর্তে সৌরভ কে দেখবে তা কেউ এক্সপেক্ট করেনি। অবশেষে আইরাত সৌরভ কে সবকিছুই খুলে বলে। সবকিছু শুনে সৌরভের মাথায় হাত।

সৌরভ;; আচ্ছা তো এই কাহিনী। তুমি জানো দিয়া সকাল থেকে কত্তো বার এসে তোমার খোঁজ করে গেছে হোটেলে৷ কিছু বলেও না জিজ্ঞেস করলে আর এখব সব ক্লিয়ার হলো আমার কাছে। সবাই কতো চিন্তায় আছে।

আইরাত;; থাকা টাই স্বাভাবিক।

সৌরভ;; এখন কি?

আইরাত;; সৌরভ প্লিজ হেল্প মি। ফেসে গেছি আমি। এখান থেকে বের করো আমায়। আমি শুধু বাড়ি যাবো। ওই আব্রাহাম কে দেখলেই আমার কলিজার পানি শুকিয়ে যায়। সিরিয়াসলি ভয় লাগে আমার অনেক৷ হেল্প মি

সৌরভ;; পালাতে হবে।

আইরাত;; হুম?

সৌরভ;; হ্যাঁ এছাড়া উপায় নেই। এখান থেকে বের হতে হলে পালিয়ে বের হতে হবে।

আইরাত;; কিন্তু কীভাবে?

আইরাত আর সৌরভ এই চিন্তা কিরছিলো যে এখান থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়। তখনই লিমা আসে রুমে। আর ওদিকে অয়নের ফোনে কল আসে রহিতের। আরুশির বাবা নাকি ঝামেলা করছে। রহিত ফোন দিয়ে অয়নের সাথে কথা বলতে থাকে। সে আব্রাহাম কেই ফোন দিতো কিন্তু আব্রাহাম এখন কনফারেন্স রুমে আছে তাই তাকে ফোন দিলে উলটো কতো গুলো ঝেড়ে দিবে। আর রহিতের মুখে সব শোনার পর তো অয়নের রাগ উঠে পরে একদম। অয়ন হলরুম থেকে বাইরে চলে যায় গিয়ে কথা বলতে থাকে। আর ওপরদিকে এভাবে হুট করেই লিমা রুমে এসেছে দেখে আইরাত আর সৌরভ দুজনেই চুপ মেরে যায়। আইরাত আর সৌরভকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কেউ কাউকে চিনেই না।

লিমা;; ম্যাম খেয়ে নিন।

আইরাত;; আব.. লিমা। আসলে ওয়াসরুমে না আমার কানের রিং টা হয়তো পরে গিয়েছে বুঝলে। রুমে খুঁজে পাচ্ছি না। তুমি কি একটু গিয়ে দেখবে প্লিজ??

লিমা;; সিওর ম্যাম।

এই বলেই লিমা ওয়াসরুমে চলে যায়। আর আইরাত এই সুযোগেরই সুবিধা উঠায়। লিমা যেই না ওয়াসরুমের একদম ভেতরে চলে গিয়েছে। আইরাত তখনই দৌড়ে গিয়ে ওয়াসরুমের দরজা পেছন থেকে লাগিয়ে দেয়। মানে লিমা কে ওয়াসরুমের ভেতরে লক করে দেয়। লিমা এমন কান্ডে চমকে যায়। সে দ্রুত গিয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে। কিন্তু আইরাত তো আর দরজা খোলার পাত্রী না। আইরাত বড়ো বড়ো দম ছাড়ছে। সৌরভ বুঝতে পারে যে পালাতে হলে এখন এখান থেকেই পালাতে হবে। সৌরভ গিয়ে ওপর থেকে নিচের দিকে উকি দেয়। আইরাত বলে ওঠে…

আইরাত;; নিচে কেউ আছে?

সৌরভ;; না এখন নেই কিন্তু আমি যখন এসেছিলাম তখন একজন ছিলো নিচে।

আইরাত;; হয়তো আব্রাহামের কোন ফ্রেন্ড ছিলো যাই হোক এখন তো নেই নাকি?

সৌরভ;; না না নেই।

আইরাত;; আর দেরি কিসের ভাগোওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওও।

আইরাত একবার পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে লিমা এখনো ওয়াসরুমের ভেতরে থেকে চিল্লাছে। আইরাত সেদিকে তোয়াক্কা না করে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। আর আইরাতের পেছন পেছন সৌরভও। সৌরভ নিজের ব্যাগ টা হলরুম থেকে নিজের কাধে তুলে বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। আইরাত তো একদম দিন দুনিয়া ভুলে ওপরের রুম থেকে দৌড় দিয়েছে। অতঃপর আইরাত আর সৌরভ গেস্ট হাউজের বাইরে বের হয়ে পরে। সৌরভ নিজের স্কুটি দিয়ে ডেলিভারি করে। স্কূটি টা বাইরে দাড় করানো ছিলো। সৌরভ এসে সোজা নিজের স্কুটির ওপর বসে পরে আর তার পেছনে আইরাতও। আইরাতের বসা মাত্রই সৌরভ স্কুটি নিয়ে দ্রুত চলে যায়। এইতো যেভাবেই হোক যেমনই হোক আইরাত তো পালিয়ে গেলো আব্রাহামের কাছ থেকে 😆।

আইরাত চলে যাওয়ার আরো দশ মিনিট পর অয়নের ফোনে কথা বলা শেষ হয়। সে হলরুমে আসে। তবে এসেই অবাক হয় কেননা ওপরে রুম থেকে বিকট চিল্লানোর আওয়াজ আসছে। অয়নের কিছুটা ঘাবলা লাগলো। সে ছুটে ওপরে চলে যায়। গিয়েই অয়নের আক্কেলগুড়ুম। টেবিলের ওপর খাবারের মতো খাবার পরে আছে। রুমে আইরাত নেই আর ওয়াসরুম থেকে চিল্লাপাল্লার শব্দ। অয়ন গিয়ে দেখে দরজা পেছন থেকে বন্ধ ওয়াসরুমের। সে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই লিমা হুড়মুড় করে বাইরে বের হয়ে পরে। অয়ন অবাক।

অয়ন;; হয়েছে কি লিমা। আর আইরাত কোথায়?

লিমা;;আরে আমাকে ওয়াসরুমে বন্ধ করে রেখে ম্যাম চলে গেছে। হয়তো ম্যাম ওই ডেলিভারি বয় কে চিনতো। তাদের কথা গুলো শুনেছি আমি। (হাপাতে হাপাতে)

অয়ন;; কিইই পালিয়ে গেছে মানে। আব্রাহাম জানলে খুন করে ফেলবে আমায়। হায় আল্লাহ।

অয়ন আর লিমার কাপাকাপি শুরু হয়ে যায় আব্রাহামের কথা ভেবে ভেবে। কারণ আব্রাহাম অনেক কড়া ভাবে বারণ করে গিয়েছিলো যে আইরাত যেন কোন ভাবেই, ভুল করেও বাইরে বের না হয় কিন্তু আইরাত এখন শুধু বাইরে না বরং পালিয়ে গেছে। এখন কি হবে….!

তিনঘন্টা পর আব্রাহাম অফিস থেকে গেস্ট হাউজে আসে। এসেই দেখে অয়ন চিন্তা নিয়ে মুখের ওপর হাত রেখে দিয়েছে আর তার পাশেই লিমা দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম বুঝতে পারে না কি হয়েছে। সে কপাল খানিক কুচকে অয়নের সামনে যায়।

আব্রাহাম;; কিরে কি হয়েছে, এই হাল কেন?

অয়ন;; আসলে মানে।

আব্রাহাম;; কি?

আব্রাহাম খেয়াল করে দেখলো যে লিমাও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম বাকা চোখে ওপরে আইরাতের রুমের দিকে তাকালো। খটকা তো লেগেছেই তার। আব্রাহাম আর এই দুইজন কে কিছু জিজ্ঞেস না করে দ্রুত পা ফেলে আইরাতের রুমে চলে যায়। গিয়েই দেখে আঅরাত নেয়। ব্যাস আর কি লাগে আব্রাহামের মাথায় আগুন লেগে গেছে। যেন কান দিয়ে ধুয়া বের হচ্ছে এমন। নিজের বাম হাত কোমড়ে দিয়ে ডান হাতের প্রথম দুই আঙুল দিয়ে নিজের কপালে স্লাইভ করতে লাগলো। চোখ বন্ধ করে রেখেছে। যেন রাগ টা কোন ভাবে দমানোর চেষ্টা। আব্রাহাম বুঝেছে যে আইরাত পালিয়ে গেছে। আব্রাহাম শান্ত ভংিতেই নিচে নেমে আসে। হলরুমে এসে দাড়িয়ে পরে। আব্রাহাম ভাবতে থাকে যে একা তো আইরাত পালাতে পারবে না।

আব্রাহাম;; একটা বাচ্চা মেয়ে পালিয়ে গেছে আর তোমরা দুই আহাম্মক কোথায় ছিলে?

লিমা;; স স স্যার আসলে ম্যাম আমাকে ওয়াসরুমে আটকে রেখে পেছন থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলো।

অয়ন;; রহিত ফোন দিয়েছিলো আরুশির বাবা ঝামেলা করছে তাই কথা বলতে বাইরে গিয়েছিলাম এসে দেখি এই অবস্থা।

আব্রাহাম নিচে তাকিয়ে দেখে ছোট টি-টেবিলের ওপর খাবারের বক্স। আব্রাহাম একটু খেয়াল করে দেখে খাবার টা একটা হোটেলের। নাম দি উইন্সটোন হোটেল। আব্রাহামের এতোক্ষনে মনে পরে যে এই হোটেলে তো আইরাত কাজ করে৷ আর আজ এই হোটেল থেকেই ডেলিভারি এসেছে। দুই জন লোক যেহেতু একই হোটেলে কাজ করে তাহলে অবশ্যই একে ওপর কে চিনে। লিমা কে আইরাত ওয়াসরুমে লক করে দেয় আর অয়ন ফোনে কথা বলার জন্য বাইরে যায়। দেটস্ ইট আব্রাহামের যা বুঝার সে তা বুঝে ফেলে। এতোক্ষণ শান্ত থাকার ভনিতা করলেও আব্রাহাম এখন আর শান্ত থাকতে পারলো না। রাগে মাথা চেপে ধরলো। রাগ সামলাতে না পেরে নিজের পাশেই থাকা কাচের টেবিলে সর্বোচ্চ শক্তি তে দিলো এক লাথি আর সাথে সাথেই টেবিল টা ভেংে চুরমার হয়ে নিচে পরে গেলো। একদম চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। অয়ন আর লিমা বেশ চমকে উঠে পিছিয়ে যায়। আর আইরাত সৌরভের সাথে এক সময় পৌছে যায় হোটেলে। আইরাত বাড়ি যাওয়ার আগে হোটেলে গিয়েছে। এদিক টা আগে সামলাতে হবে আর বাড়িতে গেলে যে আইরাতের কথা শুনতে হবে সেটা আইরাত জানে। তাই আগে এইদিক টা সামলে উঠে তারপর বাড়ি যাবে। এমনিতেও কথা শুনতে হবে ওমনিতেও কথা তাকে শুনতেই হবে। ঘেমে একাকার হয়ে গেছে সে। সৌরভের স্কুটি থেকে নেমেই ছুটে যায় ভেতরে। আর আব্রাহাম আরো একটু ক্লিয়ার হবার জন্য নিজের মনিটর রুমে গিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ গুলো দেখতে লাগলো।





চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here