নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ০৭

0
994

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ০৭

সৌরভ স্কুটি টা নিয়ে সোজা উইন্সটোন হোটেলের সামনে এসে থামে। আইরাত স্কুটি থেকে দ্রুত নেমে গিয়ে ভেতরে চলে যায়। সে যেন এক প্রকার দৌড়ের ওপর আছে। সৌরভ আইরাতকে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই আইরাত দৌড়ে ভেতরে চলে যায়। আর এই যে সৌরভ আছে এই আইরাতকে বেশ পছন্দ করে কিন্তু বলে ওঠার সাহস তার হয় না। আইরাত যখন ভেতরে আসে তখন অবনি অর্ডার নিচ্ছিলো হুট করেই আইরাতকে ছুটে আসতে দেখে অবনি পুরো টাস্কি খেয়ে যায়। অবনি অর্ডার রেখে অবাক হয়ে ছুটে আইরাতের কাছে যায়।

অবনি;; আইরাত তুই, কোথায় ছিলি তুই। মানে কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছিলি। জানিস কত্তো চিন্তা করছিলো সবাই তোর জন্য। কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই?

আইরাত;; আরে আস্তে আস্তে, আর আমি ঠিক আছি। কিছু হয় নি।

অবনি;; কিন্তু গিয়েছিলি কোথায়?

আইরাত;; নিজেও জানি না।

অবনি;; মানে?

আইরাত;; কিছু না, আচ্ছা বাদ দে ওসব কথা৷ দিয়া এসেছিলো কি?

অবনি;; হ্যাঁ অনেক বার এসেছিলো। আর তুই প্রথমে বাড়িতে যাস নি কেন?

আইরাত;; বাড়িতে গেলে কপালে যে কি আছে আল্লাহ জানে। আচ্ছা শোন তুই দিয়া কে ফোন করে এখানে আসতে বল।

অবনি;; আচ্ছা।

অবনি ফোন করে দিয়া কে আইরাতের কথা বলে। দিয়ার মনে এবার যেন একটু শান্তি লাগে। কি যে একটা চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুড়ছিলো সে। যাই হোক দিয়া তার কিছুক্ষণ পর এসে পরে। দিয়া হোটেলের ভেতরে এসেই দেখেই আইরাত আর অবনি একটা টেবিলে বসে আছে। দিয়ার এখন যেমন রাগ লাগছে ঠিক তেমন কান্না পাচ্ছে। দিয়া গিয়ে টেবিলে আইরাতের সামনে বসে পরে। নিজে হাতে থাকা ব্যাগ টা ধিরিম করে টেবিলের ওপর রেখে বলে ওঠে….

দিয়া;; এই কি না মানে কি শুরু করেছিস তুই। বিয়ে বাড়ি থেকে কোথায় গিয়েছিলি?

আইরাত;; প্লিজ শান্ত হো। মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে আমার।

দিয়া;; কিন্তু গায়েব হয়ে গিয়েছিলি কোথায়?

অবনি;; আচ্ছা শোন তোরা কথা বল, মারামারি কর যা ইচ্ছে কর আমি একটু অর্ডার টা দিয়ে আসি আগে।

আইরাত;; যা।

অবনি সেখান থেকে চলে গেলে দিয়া যেন এবার আইরাত কে আরো বেশি আকড়ে ধরে।

দিয়া;; এই এবার বল কোথায় গিয়ছিলি না বলেই। তুই ভাবতে পারবি না কত্তো চিন্তা করেছি৷ ইকবাল আংকেল, আল্লাহ আংকেলের তো শরীর প্রায় খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। জানিস চিন্তায় চিন্তায় আংকেল আর আমি গিয়ে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে মিসিং কেস পর্যন্ত ফাইল করে এসেছি।

আইরাত;; কিইই?

দিয়া;; হ্যাঁ।

আইরাত;; ধুর।

দিয়া;; এখন কি বলবি যে এই পুরো একদিন কোথায় ছিলি তুই?

আইরাত;; আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর গেস্ট হাউজে।

দিয়া;; What..?!

আইরাত;; হ্যাঁ।

দিয়া;; ফাইজলামি করিস।

আইরাত;; দিয়া দেখ এখন আমি একদম মজা করার মুডে নেই। আর তা তুই আমাকে দেখেই বুঝতে পারছিস।

দিয়া;; মানে কি, কি বলিস। তুই আব্রাহাম চৌধুরীর গেস্ট হাউজে কীভাবে কি?

আইরাত;; আরুশি আপু যাকে ভালোবাসে সে আর কেউ না আব্রাহাম চৌধুরীর ফ্রেন্ড লাগে। বিয়ে বাড়িতে যখন কারেন্ট চলে যায় তখন তারা আরুশি আপু কে নিয়ে যেতে এসেছিলো কিন্তু ভুলবশত আমাকে নিয়ে গেছে। তারপরও আরুশি আপু কে ভাগিয়ে নিয়ে গিয়ে উনার ফ্রেন্ডের সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আর আমাকে আটকে রেখেছিলো জানি না কি জন্য, কি কারণে। আর আজ সৌরভ না থাকলে আমার কী যে হতো। ও ডেলিভারি করতে গিয়েছিলো। ভাগ্য ভালো যে দেখা হয়ে যায় ওর সাথে আমার তারপর পালিয়ে এসে পরি।

আইরাতের এইসব কথা শুনে দিয়ার যেন এখানেই মাথা ঘুড়ে পরে যাবার উপক্রম। সব মাথার ওপর দিয়ে গেছে তার।

দিয়া;; মানে কি বলবো আমি। আমি কথা খুঁজে পাচ্ছি না এখন।

আইরাত;; আমি বাড়িতে কীভাবে যাবো সেই চিন্তায় মরে যাচ্ছি।

দিয়া;; শোন তুই তো আর এইসব ইচ্ছে করে করিস নি তাই না। নিঃশ্চিন্তে বাড়ি যা কিছু হলে আমি আছি তো।

আইরাত;; আচ্ছা শোন চাচ্চু তো আজ হোটেলে আসে নি। তুই বাড়ি গিয়ে চাচ্চু কে বলে দিস যে কাল থেকে আমি হোটেলে আসছি ওকে। আর আমি এখন বাড়ি গেলাম।

এই কথা বলেই আইরাত হোটেল থেকে বের হয়ে আসে। আর দিয়াও সোজা তার বাড়ি চলে যায়।


এদিকে আব্রাহাম বসে বসে তার মনিটর রুমে সব সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করছে। হলরুমের ক্যামেরা তে সব ধরা পরেছে। সেখানে আইরাতের সাথে একটা ছেলেকে দেখা গেছে অবশ্যই সেটা ওই ডেলিভারি বয় টা। তবে ফুটেজে আইরাতকে দেখে আব্রাহাম হাসবে না কাদবে সেটাই ভুলে গেছে। কেননা ফুটেজে শুধু দেখা যাচ্ছে যে আইরাত দৌড়াচ্ছে। সে শুধু তুমুল বেগে দৌড়ে হলরুম থেকে বের হয়ে গেলো। আব্রাহাম মনিটর রুম থেকে উঠে এসে হলরুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে অয়ন আর লিমা এখনো ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কে দেখে লিমা মাথা নিচু করে চলে গেলো। ওই যে কাচের টেবিল টা ভেংেছিলো সেটা পরিষ্কার করতে।

অয়ন;; আব. আব্রাহাম ভাই রা রাগ ক করিস না। আসলে আ আগে যদি জানতাম যে এ এমন কিছু একটা হবে তাহলে আমি বাইরে যেতামই না।

আব্রাহাম;; হে ডুড টেক এ চিল পিল। এতো ঘাবড়াচ্ছিস কেন। আইরাত একবার পালিয়ে গেছে আমি তাকে আরো দশ বার তুলে আনতে পারি। কিন্তু এখন আনবো না।

অয়ন;; যেই ছেলে মেয়েদের থেকে একশ হাত দূর থাকে সেই কিনা এখন একটা মেয়ে কে নিজের কাছে রাখতে চাইছে। আচ্ছা বেপার কি?

আব্রাহাম;; কিছু না। আর হ্যাঁ তুই কি এখানেই থাকবি?

অয়ন;; আরে না।

আব্রাহাম;; তাহলে একদম সবকিছু লক করে বের হয়ে পরিস৷ আর নিউ টেবিল & ফ্লাওয়ার ব্যাস দিয়ে যাবে।

আব্রাহাম এই বলেই বাইরে চলে আসতে নেয় তখনই আবার অয়ন বলে ওঠে…৷

অয়ন;; আব্রাহাম, মনে হয় না একটু একটু পাল্টাচ্ছিস তুই। মানে কিছু একটা চেঞ্জ হচ্ছে..!!

অয়নের কথায় আব্রাহাম তার পেছন ঘুড়ে তাকায়। অয়ন মাত্রই কি বললো তা একবার নিজেই চিন্তা করে ক্ষীণ হেসে বের হয়ে পরে। বাইরে এসে নিজের গাড়ি তে উঠে পরে। গাড়ি চালাচ্ছে আর আইরাতের কথায় ভাবছে৷ আইরাত কে সামনে পেলে কি করবে তাই ভাবছে। শাস্তি তো অবশ্যই দিবে। আব্রাহামের মতে আইরাত শাস্তির প্রাপ্ত। তবে শাস্তি টা হবে একটু ভিন্ন রকমের। আইরাতের বাড়ির এড্রেস আব্রাহাম বেশ ভালো করেই জানে। কিন্তু এখন যাবে না। এখন যদি সে আইরাতের সামনে পরে তাহলে আইরাত সেখানেই অজ্ঞান না হয়ে গেলেই হয়েছে। আব্রাহাম এটা ভাবতেই হেসে ওঠে। আব্রাহামের সামনে এখন শুধু আইরাতের সেই দৌড়ে পালিয়ে যাবার দৃশ্য টাই ভেসে ওঠছে। আব্রাহাম জোরেই হেসে দেয়। যেভাবে পালিয়েছে। আব্রাহাম ড্রাইভ করতে করতেই একটা হাইওয়ে-এর ওপরে এসে থেমে যায়৷ গাড়ির সামনের এক বাটনে চাপ দিতেই গাড়ির ওপরের ছাদ টা আপনা আপনি খুলে যায়। এখন গাড়ির ওপরে ফাকা। এখন আশে পাশে মানুষ জনও তেমন নেই। এতে অবশ্য ভালোই হয়েছে। নিয়তো অবস্থা টা এমন যে শান্তিতে বাইরেই বের হওয়া যায় না। বের হলেই সবাই ঝাপটে ধরে। আর কার ভালো লাগে যে নিজের পাশে রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা গার্ডস নিয়ে ঘুরতে। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির ডিকির ওপর উঠে বসে পরে৷ এখন কিছুটা বিকেল বেলার মতো। সূর্য হয়তো খানিক পরেই অস্তো যাবে৷ আব্রাহাম গাড়ির ওপরে বসে এক নয়নে সেই দূর পানে তাকিয়ে থাকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। আইরাতের মুখ টা কেন যে তার চোখের সামনে থেকে সরতেই চায় না সে জানে না। সেই প্রথম দিনের কথা গুলো ভাবছে। সেই বারের কথা গুলো। আসলে আব্রাহাম বেশ রেগে ছিলো সেইদিন। মূলত দু-দুটো জ্যান্ত মানুষকে মেরে রেখেই এসেছিলো। তবুও রাগ কমার নাম নেই যার ফলে তার সঙ্গী হয়েছিলো এলকোহল। বারে সব মেয়েরাই ওয়েস্টার্ন গেটাপে এসেছিলো। আর অবশ্যই সবাই সুবিধে বাদি ছিলো। অনেকে ভাবে যে শর্ট কাপড় পরলেই বা অতিমাত্রায় মর্ডান দেখালেই ছেলেরা তাদের পাল্লায় পরে যাবে। কিন্তু না আসলে এটা ভুল। এমন অনেকেই আছে যারা সুন্দর সভ্য কাউকে খুজে৷ আব্রাহাম এক রাশ রাগ নিয়ে বসে ছিলো। কিন্তু হুট করেই একটা মেয়ে আসে সেখানে। আইরাত। আব্রাহামের কেন জানি চোখ তাতেই আটকে গিয়েছিলো৷ বাকি সবার থেকে আলাদা ছিলো। না কোন ওয়েস্টার্ন, না কোন বেড সাইড। আর মূলত ক্ষেপানোর জন্যই আব্রাহাম সেইদিন আইরাতকে ওই কথাগুলো টা বলেছিলো। তাতে আইরাত যেমন রিয়েক্ট করেছে। আব্রাহাম এগুলো ভেবেই আবার হেসে ওঠে। আব্রাহাম আইরাতের সব কিছুরই খবর নিয়েছে। যখন শুনে যে আইরাত একটা ফাইভ স্টার হোটেলে কাজ করে তখন একটু খটকা লাগে। যে যেই মেয়ে ফাইভ স্টার হোটেলে কাজ করে সে বারে গিয়ে এমন করবে। কিন্তু সব ফাইভ স্টার হোটেলই যে একদম বারের মতো কালচারের থাকবে তা কিন্তু না।

আব্রাহাম গাড়ির ডিকির ওপর থেকে নেমে পরে। বেশ গরম লাগছে এখন। সে তার ওপরের কোর্ট টা খুলে গাড়ির বেক সীটে রেখে দেয়। শার্টের হাটা গুলো ফোল্ড করে নেয়। পেন্টের পকেটে হাত দিয়ে দূর-দিশাতে তাকিয়ে থাকে৷ মন মাতানো বাতাস বইছে। আব্রাহামের চোখ গুলোতে সূর্যের আলো পরে যেন চিকচিক করছে।


আইরাত গিয়ে তার বাড়িতে পৌছায়। সাহস যেন আর ধরছে না। তবুও কোন রকমে বাড়ির সামনে গিয়ে দরজাতে কড়া নাড়তেই দরজা খুলে দেয় আইরাতের চাচিই। আইরাত কিছু না বলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে৷ আইরাতের চাচি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইকবাল সাহেব ছুটে আসে। এসেই আইরাতকে জড়িয়ে ধরে। আইরাতকে ভেতরে নিয়ে আসে।

ইকবাল;; এসেছিস মা তুই। কোথায় গিয়েছিলি বল। কতো চিন্তা কিরেছি জানিস।

আইরাত;; চাচ্চু আসলে..

ইকবাল;; তুই ছিলি কোথায়?

কলি;; কোন নাগরের সাথে ছিলি বলছিস না কেন?

ইকবাল;; আহা কলি থামবে।

আইরাত;; আমি কী করে বলবো চাচ্চু কে এখন। যে আব্রাহাম চৌধুরী কাছে ছিলাম আমি। আর উনি অনেক বড়ো একজন লোক। বললেই কি সবাই বিশ্বাস করবে আমায়। কি বলবো এখন? (মনে মনে)

ইকবাল;; আইরাত মা বল

আইরাত;; আস আসলে,, আসলে চাচ্চু মানে আমি না জানি না কোথায় নিয়ে গিয়েছিলো আমায়। বিয়ে বাড়িতে ছিলাম আর তখনই কেউ আমার মুখ চেপে নিয়ে যায়। আমি একটা রুমে ছিলাম। আজ উঠেই দেখি আমি ওখানে। আমি যেখানে ছিলাম সেখানে কাউকে খুঁজে পাই নি তাই সেখান থেকে এসে পরেছি।

ইকবাল;; আল্লাহ, মা তুই ঠিক আছিস তো। তোর কিছু হয় নি তো?

আইরাত;; হ্যাঁ চাচ্চু চিন্তা করো না ঠিক আছি আমি।

কলি;; এই মেয়ে এখানে থাকতে পারবে না।

ইকবাল;; মানে কি বলছো এইসব?

কলি;; ঠিকই বলছি। এই মেয়ে না জানি কার সাথে থেকে এসেছে। এখন এই বাড়িতে থাকবে না৷

ইকবাল;; কলি অনেক হয়েছে মুখ সামলে কথা বলো। আর শুনে রাখো আমার মেয়ে যদি এখানে থাকতে না পারে তাহলে এই বাড়িতে আমি নিজেও থাকবো না।

কলি;; কী? এই মেয়ের জন্য তুমি, তুমি নিজে বাড়ি ছেড়ে দিবে?

ইকবাল;; হ্যাঁ ছেড়ে দেবো। কম কথা শুনাও না তুমি। এটা যতোটা তোমার বাড়ি আইরাতেরও ততোটাই বাড়ি। এটা ভুলে যেয় না যে তুমি এখন যেই বাড়িতে থাকছো সেটা আমার বড়ো ভাই আইরাতের বাবার-ই বাড়ি। আর বাবার বাড়ি থেকে তুমি মেয়ে কে বের করে দিতে পারো না।

কলি;; কি এতো বড়ো কথা। এতো বড়ো কথা তুমি আমায় বলতে পারলে।

ইকবাল;; আইরাতকে তুমি যে কথা গুলো বলো তার এক আনাও আমি বলিনি ইলা। তাই এখন এটাই ভালো হবে যে তুমি নিজের মুখ টা বন্ধ রাখো৷ আইরাত মা তুই যা রুমে, যা হয়েছে হয়েছেই। আমি দিয়া কে বলে পুলিশ কেস তুলে নিবো। তুই তোর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে আমি খাবার পাঠিয়ে দেবো। তুই যা।

আইরাত মাথা নিচু করেই সোজা তার রুমে চলে যায়। কলি এখনো আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত চলে গেলে ইকবাল সাহেব চোখ গরম করে কলির দিকে তাকায় কলি কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে যায়। আইরাত রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। খুব কষ্ট পেয়েছে সে তার চাচির কথায়। যদিও অভ্যস্ত এগুলো কথায়। কিন্তু খারাপ তো লাগে। ফ্লোরে বসে দুই হাটু ভাজ করে বসে কাদতে লাগলো। আইরাতের মনে এখন রাগ লাগছে অনেক ওই আব্রাহামের ওপর।

আইরাত;; শালা খবিশের বাচ্চা খবিশ তোরে একবার পাইয়া নেই এমন এক চটকানা মারমু না। সব তোর জন্যে শালা বদ একটা। পালোয়ান।

রাগে ফুসছে আইরাত। গায়ের জামা কাপড় নিয়েই ওয়াসরুমে চলে যায় আইরাত। তারপর শাওয়ার অন করে তার নিচে দাঁড়িয়ে পরে। রাগ কমানোর চেষ্টা।


তার মাঝখানে আরো পুরো একদিন চলে গেছে। আইরাত ভার্সিটিতে গিয়ে আবার হোটেলে কাজ করছে। বাড়িতে নিজের চাচি কে এক রকম ইগ্নোর করে চলে সে। যখন থেকে কাজে এসেছে তখন থেকে হোটেলের সব মেয়ে বা ছেলে একের পর এক আইরাতের কান মাথা সব খেয়ে যাচ্ছে৷ “” কোথায় ছিলি, খবর নেই কেনো, এই তুই নাকি গায়েব হয়ে গিয়েছিলি, কোথায় চলে গেছিস? “”। আরো না জানি কতো কি কি জিজ্ঞেস করছিলো। আইরাত শুধু এভোয়েড করছে সব। নিজের কাজ মনোযোগ দিয়ে করছে। কাজ করতে করতে এক সময় টাইম শেষ হয়ে যায়৷ কাজ শেষ আজ অনেক তাড়াতাড়ি ই। তবে আইরাত বেশ সময় যাবৎ আজ সৌরভ কে দেখছে না। ইন ফ্যাক্ট আজ সকাল থেকেই আইরাত সৌরভ কে দেখে নি। হোটেলের ড্রেস পরেছিলো আইরাত। অর্থাৎ নিজের জামার ওপর দিয়ে শুধু একটা এপ্রোন পরেছিলো। ড্রেসের পেছনের ফিতা খুলতে খুলতে আইরাত অবনির কাছে আসে।

অবনি;; কি কাজ শেষ হলো (ভ্রু নাচাতে নাচাতে)

আইরাত;; হ্যাঁ রে ভাই শেষ হলো। প্রচুর গরম লাগছে।

অবনি;; এখন তো বিকেল, মানে দেখ বাইরে৷

আইরাত;; বাইরে যে রোদ উফ।

অবনি;; তো প্ল্যান কি বাইরে যাবি না বাড়িতে?

আইরাত;; না রে বাড়ি যাবো। পরে আবার দেরি হলে বাড়ি মাথায় তুলে নিবে আমার গুনধর চাচি।

অবনি;; কি বলবে তখন?

আইরাত;; বলবে যে ””আইরায়ায়ায়ায়াত, কাজ নেই বাড়ির কাজ কর, এটা কর, ওটা কর। সারাদিন বাইরে তো থাকিসই ঘরের কিছু কাজ কর। রান্নাঘরে এসে আমার হেল্প কর, এই মেয়েএএএএএ”” (বেংগ করে)

এই কথা বলেই অবনি আর আইরাত হেসে দেয়। প্রচুর হাসি পাচ্ছে তাদের। তবে তাদের এই হাসিতে এক বালতি পানি ফেলে দিয়ে সেই একটা কুল এটিটিউড নিয়ে হোটেলের ভেতরে প্রবেশ করে আব্রাহাম 🙂।
আইরাত আর অবনি সেদিকে তাকায়। অবনি তো দেখে হায় হায় করছে খুশিতে। যেন এখানেই নাচানাচি শুরু করে দিবে। আর আইরাত, ওর তো বুকের ভেতরে কু ডাকছে। ঝটকা খেয়েছে সে। এই এখানে কি করছে। আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আইরাতের চোখ গুলো বড়ো আকার ধারণ করে। আব্রাহাম কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা আইরাত আর অবনির কাছে যায়৷

আব্রাহাম;; Hii girl’s,, what’s up!!

অবনি;; আ আ আব,, আব্রাহাম স্যার। আপনিইইইইইইইইইইইইইইই এখানে। হায় আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।

আব্রাহাম;; তো এখন বিশ্বাস করে নাও বা নিজের গায়েই একটা চিমটি কেটে নাও।

আইরাত;; আমি, আমি যাই অবনি।

আইরাত তো এক প্রকার ভেবাচেকা খেয়ে গিয়েছিলো আব্রাহাম কে দেখে। সে বাচার জন্য ঘুড়ে দ্রুত চলে আসতে নিলেই আব্রাহাম খপ করে আইরাতের হাত ধরে ফেলে।
আইরাতের দিকে তাকিয়ে এক ভ্রু উঁচু করে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; মিস. আইরাত, আপনি আমার সাথে যাবেন এখন।

আইরাত;; কী মানে কি কোথায় যাবো আর কেন?

আব্রাহাম;; Just come with me babe…

আব্রাহাম অবনির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে বায় বলে আইরাতের হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসে। আর অবনি বোকার মতো এই দুইজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত নিজের হাত ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু আব্রাহাম যে শক্ত ভাবে হাত ধরেছে তার। তাতে হাত ভেংেই যাবে মনে হচ্ছে। আব্রাহাম কোন কথা না বলে আইরাতকে নিজের গাড়িতে তুলে দরজা লাগিয়ে দেয়৷ তারপর ওপর পাশ দিয়ে গিয়ে সেও নিজের গাড়িতে এসে বসে পরে৷ কোথায় যাচ্ছে এখন সে আইরাতকে নিয়ে জানে না। আইরাত অনেক চিল্লাচ্ছে। বারবার বলছে যে কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে৷ কিন্তু আব্রাহাম আইরাতের এই বকবকানি থেকে বাচার জন্য গাড়িতে ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে দেয়৷ আইরাত যেন এবার বিরক্তির শেষ সীমানায় পৌছে গেছে৷ আইরাত আরো জোরে চিল্লালে আব্রাহাম মিউজিকের ভলিউম আরো জোরে দিয়ে গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দেয়। দ্রুত যাচ্ছে, যেন বাতাসের গতীতে। আইরাত বুঝলো যে আব্রাহাম কে বলেও লাভ নেই৷ তাই চুপ হয়ে বসে পরে। প্রায় ২০ মিনিট পর আব্রাহাম গাড়ির ব্রেক কষে। আইরাত অবাক হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়৷ আব্রাহাম আরামছে সিটি বাজাতে বাজাতে গাড়ি থেকে নেমে পরে। আইরাতও দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে নেমে পরে৷ আব্রাহাম কিছু না বলেই গাড়ির ডিকি থেকে ‘হকি স্টিক’ বের করে৷ আইরাত বেশ অবাক হয়ে এগুলো দেখছে। আব্রাহাম হকি স্টিক কেন বের করলো তাও আবার গাড়ির ডিকি থেকে। আর এখন হকি স্টিক দিয়ে কি করবে। আব্রাহাম তার এক হাতে হকি স্টিক নিয়ে আরেক হাতে আইরাতের হাত ধরে নিয়ে যায়। আইরাত বুঝতে পারছে না যে আব্রাহাম আবার কোথায় যাচ্ছে তাকে৷ যেতে যেতেই আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে একটা ফাকা জায়গায় এসে পরে। আসলে এটা একটা খোলা মাঠ। তবে নিজের সামনে তাকাতেই আইরাতের চোখ গুলো যেন কপালে উঠে গেলো। আইরাত বুঝতে পারছে না যে এই এখানে কি করে এলো৷ আইরাত ফট করে মাথা ঘুড়িয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়৷ আইরাত দেখে আব্রাহামের কোন ভাবই নেই, সে ভাবলেশহীন ভাবে এক হাত পেন্টের পকেটে দিয়ে আরেক হাতে হকি স্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ আইরাত আবার সামনে তাকায়। বেশ ঘাবড়ে গেছে সে। আইরাত ভেবেই পাচ্ছে না যে এই কি করে এখানে এলো। এখন এই আব্রাহাম সাইকো আবার কি না কি করে বসে।





চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here