#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৯
আইরাত;; আমি জানি না কিছুই। আমার জাস্ট ওই ছেলের সব ইনফরমেশন চাই তাও ১০ মিনিটের মাঝেই।
গার্ড;; জ্বি ম্যাম পেয়ে যাবেন শুধু কয়েক টা মিনিট সময় দিন।
আইরাত;; ফাস্ট।
এই বলেই আইরাত ফোন কেটে দেয়। চেয়ারে ধপ করে বসে পরে। হাত দিয়ে কপালের এক সাইডে স্লাইড করে যাচ্ছে সে। চিন্তায় আর ভালো লাগছে না কিছু। কাল সারাটা রাত আইরাত শুধু ঘরে পায়চারি করেই কাটিয়ে দিয়েছে। একবার ঘড়ির দিকে তাকায় তো আরেকবার নিজের দিকে। সে আসলে ঠিক আছে তো? নাকি তার কোন মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। আইরাত নিজেও সব বুঝে যে এখন যদি সে এতো গুলো বছর পর আবার আব্রাহামের ফিরে আসার কথা বলে তাহলে অবশ্যই কেউ তাকে বিশ্বাস করবে না। কারণ যে দুই বছরেরও বেশি হবে সময় আগে মারা গিয়েছে এত্তো গুলো দিন পর সেই আবার কি করে ফিরে আসবে তাও এমনভাবে। আইরাত অনেক ট্রাই করেছে বুঝার যে কোথাও না কোথাও সে নিজেই ভুল নয়তো কিন্তু না বারবার, লাগাতার আব্রাহামের ওই হাস্যজ্বল মুখখানা তার চোখের দেওয়ালে ভেসে ওঠেছে। আইরাত একটা ফোটা ঘুমায় নি রাতে। একটা মুহুর্তের জন্য চোখের পাতা লেগে আসি নি। কারণ এমন একটা কিছু সে দেখবে তার ধারনা দূর দূর পর্যন্ত তার ছিলো না। তবে ধারনা কে আজ সত্যি করে দিয়েছে। ঘুম হারাম, সারা রাত আব্রাহামের চিন্তায়ই মগ্ন ছিলো সে। কখন সকাল হবে আর কখন সে অফিসে ছুটে যাবে তাই ভেবে এসেছে। আর সকাল হতে না হতেই আইরাত এসে পরেছে আজ অফিসে। ইলা শুধু আইরাতের কান্ড দেখছিলো। মানলো যে আইরাত প্রায় উন্মাদ পাগল হয়ে গিয়েছিলো আব্রাহাম কে ছাড়া তবে সময়ের সাথে সাথে সে নিজেকেও এনাফ স্ট্রোং করে নিয়েছে। আইরাতের দ্বারা এতো বড়ো ভুল হবার কথা না আর ব্যাপার টা যখন আব্রাহামের তখন সেইক্ষেত্রে তো মোটেও না।
আর আইরাত অফিসে এসেই দ্রুত এক গার্ড কে ফোন করে আব্রাহামের সব ডিটেইলস বের করতে বলে।
আইরাতের এই মূহুর্তে প্রচুর কান্না পাচ্ছে। অবশেষে, অবশেষে সে তার আব্রাহাম কে খুঁজে পেয়েছে। আইরাত জানে যে মৃত্যু সবার জন্যই অবধারিত। যে একবার মরে যে কখনোই ফিরে আসে না কিন্তু যেখানে আব্রাহাম মরেই নি সেখানে তার না ফেরার প্রশ্নই আসে না। এত্তো গুলো বছর একটা জলজ্যান্ত লাশ, একটা কাঠের পুতুলের মতো থাকার পর অবশেষে আইরাত নিজের জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছে। এ যেনো কাঠ ফাটা রোদযুক্ত মরুভূমিতে একবিন্দু পানির সমান গুরুত্ব রাখে। আইরাত আগে পুরো পাগল না হলেও এখন মনে হয় সে সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাবে, খুশিতে। আব্রাহাম কে আইরাত আবার পেয়েছে। এটা উচ্চারণ করতেই যেনো বুকে একরাশ প্রশান্তি এসে নাড়া দেয়। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ছিলো আইরাত। মাথা টা ওপরের দিকে করে রেখেছে। এগুলো ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ টুপ করে এক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পরে চোখ দিয়ে। তখনই দরজাতে কড়া নাড়ে কেউ।
রাশেদ;; ম্যাম আসবো?
আইরাত;; এসো।
রাশেদ;; ম্যাম কিছু কি হয়েছে এতো জরুরি ভাবে ডেকেছেন যে?
আইরাত;; কিছু হয়েছে?? বলো যে কি হয়নি?
রাশেদ;; বুঝলাম না ম্যাম।
আইরাত;; আব্রাহামের কথা মনে পরে?
আইরাতের এমন প্রশ্নে রাশেদের মাথা টা আপনা আপনিই নিচে নেমে পরে। মুখ টা শুকিয়ে যায়।
রাশেদ;; ম্যাম গত ৬-৭ বছর যাবৎ স্যারের সাথে ছিলাম আমি। স্যার আমাকে অনেক উপকার করছেন যেগুলো হয়তো আমি সারাজীবনেও শোধ করতে পারবো না। আর ম্যাম কিছুদিন একটা বস্তু নিজের কাছে রাখলেও তার ওপর মায়া পরে যায় আর তো সেখানে এতো গুলো বছর। অনেক মনে পরে।
আইরাত;; আবার যদি আব্রাহাম আসে কেমন হবে?
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম??
আইরাত;; অর্নীল নামে কাউকে চেনো?
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম আসলে উনি তো সিংগার। সত্যি বলতে আমি কখনো উনাকে দেখি নি তবে নাম শুনেছি।
আইরাত;; হ্যাঁ আ………….
রোদেলা;; আসবো?
আইরাত;; আরে আসো।
রোদেলা;; আইরাত এগুলো কি?
আইরাত;; কি হলো?
রোদেলা;; কাল কনসার্টে?
আইরাত;; লেট মি এক্সপ্লেইন। রাশেদ তুমি তো এই অর্নীল কে কখনো দেখো নি রাইট। তো আজ দেখে নাও।
রোদেলা তার হাতে একটা ফোন নিয়ে ছিলো। তাতে আব্রাহামের ছবিই বের করা। রোদেলা তা রাশেদের দিকে ধরে। আর রাশেদ দেখেই হা হয়ে যায়।
আইরাত;; এবার বুঝতে পারলে কিছু। অর্নীল ই আব্রাহাম। কাল যখন রাশেদ তুমি আর রোদেলা এসে পরলে কনসার্ট থেকে তার বেশ কিছুক্ষন পরই স্টেজের ওপরে আব্রাহাম আসে। তোমরা তো অনেক আগেই এসে পরেছিলে। কিন্তু কাল সম্পূর্ণ কনসার্ট-স্টেজ আব্রাহামের ছিলো। আমি ভেঙে বলতে পারবো না তোমাদের যে কাল যখন আমি কনসার্টে আব্রাহামকে দেখি তো আমার অবস্থা কেমন ছিলো। এই আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আর আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল একই ব্যাক্তি। আব্রাহাম মরে নি। আব্রাহাম বেচে আছে। হয়তো এতোদিন আমাদের সবার কাছ থেকে দূরে ছিলো কিন্তু বেচে আছে সে। আব্রাহাম নিজের ন্যাম চেঞ্জ করেছে, ফ্রেম চেঞ্জ করেছে কিন্তু চেহারা না তা করে নি আর না ই অন্য কিছু। আমার গাঢ় বিশ্বাস সে আব্রাহাম আব্রাহাম আর আব্রাহাম ই।
রাশেদ আইরাতের কথায় একবার রোদেলার হাতে ফোনে থাকা আব্রাহামের ছবির দিকে তাকায় তো আরেকবার আইরাতের দিকে তাকায়। পরমুহূর্তেই রাশেদের বেশ জোরে সোরে কাশি উঠে যায়। কাশতে কাশতে রাশেদের খারাপ অবস্থা। বেশ বিষম খেয়েছে সে। আইরাত দ্রুত রাশেদের দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দেয়। পানি টা এক চুমুকেই শেষ করে রাশেদ কিছুটা শান্ত হয়ে বসে। সে যেনো এখন একটা ঘোরের মাঝে আছে। কিছুক্ষন পর রাশেদ বলে ওঠে….
রাশেদ;; কিন্তু ম্যাম এটা কি করে সম্ভব?
আইরাত;; আমি জানি না আমি শুধু এটা জানি যে আমার আব্রাহাম আছে ব্যাস।
রোদেলা;; কিন্তু স্যার যদি ঠিকঠাক ই থেকে থাকেন তাহলে এতো দিন আমাদের কারো কাছে এলেন না কেনো। কারো কাছে তো দূর সে তোমার কাছেও আসে নি কেনো?
আইরাত;; সেইসব উত্তরই জানার আছে উনার কাছ থেকে। এখনো আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বকি আছে।
হঠাৎ তাদের কথা বলার মাঝেই আইরাতের ফোন আসে, সে ধরে।
আইরাত;; হ্যালো?
গার্ড;; ম্যাম, উনার নাম আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল। তিনি গত সাড়ে তিন বছর যাবৎ ইন্ডাস্ট্রিতে কজ করছেন। অনেক পপুলার উনি। উনার নিজের আপন বলতে কাউকে পায় নি তেমন। আর উনি এই শহরেই থাকেন।
আইরাত;; সাড়ে তিন বছর?? আব্রাহামের এক্সিডেন্ট হয়েছে দুই বছর আর কয়েক মাস হবে কিন্তু সে সাড়ে তিন বছর যাবৎ ইন্ডাস্ট্রিতে। কীভাবে সম্ভব? (মনে মনে)
গার্ড;; ম্যাম
আইরাত;; হুমম। তার সাথে যে করেই হোক আমার দেখা করার ব্যাবস্থা করো।
গার্ড;; ম্যাম এপোয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
আইরাত;; তো নাও। তাতে কি হয়েছে। যা করতে হয় করো কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত তাড়াতাড়ি উনার সাথে আমার দেখা করার ব্যাবস্থা করো।
গার্ড;; জ্বি আচ্ছা।
আইরাত;; হুমম।
গার্ড;; ম্যাম!!
আইরাত;; হুয়াট?
গার্ড;; উনি একদম আমাদের আব্রাহাম স্যারের মতো দেখতে।
আইরাত;; হ্যাঁ।
আইরাত ফোন টা রেখে দেয়। সামনে তাকিয়ে দেখে রাশেদ আর রোদেলা ঠিক আগের মতো করেই অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আইরাত;; ভাবনা-চিন্তা শেষ হলো?
রাশেদ;; আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। সবকিছু কেমন যেনো মাথার ওপর দিয়ে যচ্ছে।
আইরাত;; লিসেন এই অর্নীল আর আব্রাহাম হুবাহু এক বা কপি ক্যাট দেখেই যে আমি এতো বিশ্বাস নিয়ে বলছি তা না। আমি আব্রাহাম কে হারে হারে চিনি। ওকে চিনতে কখনো আমার ভুল হতেই পারে না আমার।
এভাবেই সেই সময় টুকু কেটে গেলো। আইরাতের গার্ড রা আব্রাহামের সাথে আইরাতের একটা এপোয়েনেন্ট ফিক্স করে।
রাশেদ;; ম্যাম আপনার সাথে গার্ড…….
আইরাত;; কোন দরকার নেই আমি একাই যাবো।
আইরাত এই কথা বলেই বাইরে বের হয়ে পরে। গাড়ি ড্রাইভ করে প্রায় বেশ সময় পর একটা ফ্ল্যাটে এসে পরে। এটা অর্নীল ওরফে আব্রাহামের মেইন বাড়ি তো না শুধু ফ্ল্যাট। আইরাত সেখানে যেতেই বেশ কিছু মানুষ এগিয়ে আসে। আইরাত কে স্বাগত জানায়। আইরাত কোন রকমে সেগুলোতে এড়িয়ে গিয়ে সোজা ম্যানেজারের সাথে কথা বলে….
ম্যানেজার;; আসুন ম্যাম আসুন। আপনার জন্যই এতো অপেক্ষা।
আইরাত;; তো কোথায় উনি?
ম্যানেজার;; ম্যাম অর্নীল স্যার তো ভেতরে।
আইরাত;; দ্রুত উনার সাথে দেখা করতে হবে আমায়।
ম্যানেজার;; জ্বি ম্যাম আমরা জানি আর তাই তো এতো কিছু করা। আসুন।
আইরাত সেখান থেকে দ্রুত চলে গেলো। কেননা যখন তখন মিডিয়ার লোকজন সব এসে পরতে পারে এখানে। আর তাদের সামনে একবার পরলে আর রেহাই নেই। আইরাত আর ম্যানেজার লিফটে উঠে পরে। তারপর সোজা ১৩ নাম্বার ফ্লোরে এসে পরে।
ম্যানেজার;; এদিকে ম্যাম।
আইরাত ম্যানেজারের সাথে যাচ্ছে। ১৩ নাম্বার ফ্ল্যাটে একজন রেসিপশনিস্ট ছিলো তার সাথে ম্যানেজার কিছু কথা বলে।
ম্যানেজার;; ম্যাম আপনি ভেতরে যান। স্যার আপনাকে যেতে বলেছেন।
আইরাত আবার সেখান থেকে হাটা দেয়। ৪-৫ মিনিটের মতো হাটার পর একটা বেশ বড়ো সড়ো রুম আইরাতের চোখে পরে। আইরাত ওপরে তাকায়। ওপরে সুন্দর করে লিখা আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল। আইরাতের বুকে ১০১ টা হাতুড়ি পেটানো শুরু করে দিয়েছে। আইরাত আগে বুক ভরে একবার দম নিয়ে নেয়। কেমন যেনো লাগছে তার। আচ্ছা এই তো আব্রাহাম, আইরাতের সেই আব্রাহাম। তাহলে আইরাতের কেনো এমন লাগছে। এক অজানা ভয় এসে বুকে কড়া নাড়ছে। আইরাত দরজার দিকে হাত বাড়াবে কি বাড়াবে না তা নিয়ে দ্বিধায় পরে যায়। দরজার দিকে নিজের হাত বাড়িয়েও আবার তা গুটিয়ে নিয়েছে কয়েকবার। আইরাত এবার চোখ বন্ধ করে কিছুটা দম নেয় তার পর আবার দরজার দিকে ভালোভাবে তাকায়। কিন্তু এবার আইরাত একটা জিনিস লক্ষ করে আর তা হলো দরজার সাইডে একটা লগো দেওয়া
“” Don’t Disturb “” এটা দেখে আইরাত কিছুটা কপাল কুচকায়। মানে কি? এপোয়েন্টমেন্ট আছে জেনেও এমন লগো তাও সোজা দরজার বাইরে। আজব। সে যাই হোক আইরাত দরজা খোলে সোজা রুমের ভেতরে চলে যায়। দরজা খোলে ভেতরে যেতেই আইরাত তার চোখ গুলো একবার সম্পূর্ণ রুমে ঘুড়িয়ে নেয়। ঠিক আগের মতো সাদা-কালো সব জিনিস। আইরাত কয়েক কদম সামনে আসে রুমের আর তখনই দরজা টা আপনা আপনিই লেগে যায়। আইরাত একবার পেছন ঘুড়ে দেখে আরেকবার সামনে দেখে। রুমে কেউ নেই। তাহলে দেখা করতে বললো কার সাথে। আইরাত কিছুটা কপাল কুচকায়। আশে পাশে খুঁজছে কিন্তু যখন সে কাউকে পেলোই না তখন আইরাত ঘুড়ে চলে আসতে নেয়। যেই না আইরাত চলে আসতে নিবে তখনই কানে গাঢ় ভাবে কারো পিয়ানো বাজানোর শব্দ আসে। পিয়ানোর সাউন্ড টা এত্তো পরিমাণে সুইট যা বলার বাইরে। আইরাত পিয়ানোর সাউন্ড অনুসরণ করে সেদিকেই এগিয়ে যায়। কিছুদূর যেতেই আইরাত দেখে একটা রুম সেখানে অনেক বড়ো বড়ো পর্দা সেগুলো বাতাসে দুলছে। আর সেখান থেকে পিয়ানোর শব্দ ভেসে আসছে। আইরাত আস্তে আস্তে সেইদিক যেতে ধরবে কিন্তু তখনই টিউন চেঞ্জ হয়ে যায়। যেই পিয়ানোর সাউন্ড কিনা এত্তো সুইট ছিলো তা এখন
অগোছালো, কানের মাথা খেয়ে ফেলবে এমন কর্কশ শব্দ। আইরাত বেশ বিরক্তিবোধ করলো। আইরাত জানে যে এটা আব্রাহাম, আর সেই এমন করছে। আইরাতের বেশ রাগ উঠে গেলো।
আইরাত;; Is anyone here?
এবার আইরাতের কানে কারো হেটে আসার শব্দ আসে। যেই রুম থেকে পিয়ানোর সাউন্ড আসছিলো আইরাত সেদিকেই তাকিয়ে ছিলো। তখনই হুট করে আইরাতের পেছন থেকে এক গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসে।
আব্রাহাম;; Hay you, বিনা পারমিশনে ভেতরে আসার সাহস হলো কি করে?
আইরাত ফট করে পেছন ঘুড়ে তাকায়। সে আব্রাহাম।
আব্রাহাম যে তাকে কোন কথা বলেছে সে দিকে আইরাতের কোন খেয়ালই নেই। আইরাত জোরে জোরে দম নিচ্ছে আর চোখে একরাশ পানির ফোটা নিয়ে জ্বলজ্বল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে মূহুর্তেই। এই যেনো টুপ করে পানি গড়িয়ে পরে এমন। আইরাত নিজের মন ভরে আব্রাহাম কে দেখছে। কত্তো গুলো বছর পর সে আব্রাহাম কে দেখছে। যাকে ছাড়া একটা মুহূর্ত ভাবতে পারতো না তাকে ছাড়া আজ কতো গুলো দিন পারি দিয়ে ফেলেছে সে। আইরাতের মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠেছে আর চোখে পানি চিকচিক করছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে। আইরাত কয়েক কদম এগিয়ে যায় আব্রাহামের দিকে। আইরাত তার হাত গুলো আব্রাহামের দিকে বাড়াতে নিয়েও থেমে যায়। কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না। আইরাতের সামনে আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। মানে এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না আইরাতের। আগের মতোই আছে আব্রাহাম একটুও পালটায় নি। হয়তো আগে থেকে আরো বেশিই এট্রাকটিভ হয়ে গেছে। কিন্তু আইরাতের তো জীবন যায় যায় অবস্থা আব্রাহাম কে দেখে। আইরাত তার হাত গুলো নিজের মুখে চেপে ধরে। প্রচুর কান্না পাচ্ছে তার। এই মূহুর্তে আইরাতের নিজের বুক ফেটে কান্না আসছে।
আব্রাহাম;; কি আশ্চর্য আপনি কে? আর এভাবে কাদছেন কেনো। আমি কিন্তু আপনার সাথে কোন ধরনের কোন অসভ্যতামি করি নি যে এভাবে মরা কান্না কাদছেন।
আব্রাহামের এই কথা বলা শেষ হতে না হতেই আইরাত আব্রাহামের ওপর এক প্রকার ঝাপিয়ে পরে। আব্রাহাম কে নিজের সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। একদম আব্রাহামের বুকের সাথে মিশে যায়। আইরাত আব্রাহামের গলা জড়িয়ে ধরে এবার পাগলের মতো হাউমাউ করে কেদে দেয়। তার কান্না করার বেগ এতো টাই যে সে কথা অব্দি বলতে পারছে না।
আব্রাহাম;; আরে আ………
আইরাত;; আব্রাহাম, আমিহ, আম আমি আ আপনার কা কাছে হাত জ জোর করছি। প প প্লিজ আপ আপনিহ আমাকে, আমাকে ছেড়ে আর আর কখনো দূরে চলে যবেন না। প্লিজ। আমি মরে হ, মরে যাবো। আমি ক কি ন নিয়ে য যে বেচে ছিলাম ত তা কেবল আম আমি ই জানি। আব্রাহাম আমিহ, আমিহ আপনাকে অ অন্নেক ভালোবাসি। আমি বুজাতে পা পারবো না। আমিহ, আমিহ আল্লাহ কে বলবো যে উনি যে যেনো আমার হায়াত নিয়ে আপনাকে দিয়ে দেন। তবুও আপনি আমার কাছে থাকুন। আমি ধ্বংস হয়ে গেছিলাম খুব কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছি আমি সব। একবার ভেঙে চুরমার হয়ে গেছিলাম উঠে দাঁড়িয়েছি খুব বেশি কষ্টে। আপনি প্লিজ আমার থেকে আর দূরে যাবেন না। কেননা, কেননা আমি আর ভাঙতে পারবো না। ভেঙে আবার উঠে দাঁড়ানোর মতো সেই শক্তি আমার মাঝে নেই। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি আব্রাহাম। আপনি আমার, শুনেছেন আপনি। আপনি আমার।
এই কথা বলেই আইরাত যেনো আবার পাগলের মতো করে বিলাপ পারা শুরু করে দিয়েছে। আইরাত আর থাকতে না পেরে এবার জোরে জোরে চিল্লিয়েই কান্না করা শুরু করে দেয়। হিচকি উঠে গিয়েছে। আব্রাহামের পরণের সাদা কালারের শার্টের কাধের অংশটা আইরাতের চোখের পানিতে ভিজে একদম লেগে ধরেছে। তবে আব্রাহাম ঠাই দাঁড়িয়েই আছে। কি করবে কি করবে না ভেবে পাচ্ছে না। আইরাত আরো শক্ত ভাবে আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে। এভাবে কিছুক্ষন থাকার পর আইরাত তার মাথা টা তুলে আব্রাহামের সামনে আনে। আব্রাহাম দেখে আইরাতের চেহারার নকশাই পুরো পালটে গেছে। চোখ মুখ সব ফুল চেহারাতে কেমন এক লাল আভা ফুটে ওঠেছে। আইরাত ছলছল চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থেকে। পরমুহূর্তেই আইরাত পাগলের মতো করে আব্রাহামের গালে, কপালে, নাকে, চোখে, মুখে চুমু খেতে শুরু করে দেয়। আব্রাহাম শুধু চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আইরাত আবারও আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে হিচকি তুলে কাদা শুরু করে দেয়।
।
।
।
।
চলবে~~