নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৬০

0
589

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬০

আইরাত তার আব্রাহাম কে দুহাত দিয়ে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে রেখেছে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদেই চলেছে। আব্রাহাম তাকে কিছু একটা বলতে গিয়েও আবার থেমে যায়। আইরাত যে এভাবে ঠিক কতোক্ষন আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে ছিলো তা তার
খেয়াল নেই। আইরাত একটু শান্ত হয়ে এলে হঠাৎ আব্রাহাম তাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আইরাত তার মাথা টা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম কিছুটা কপাল কুচকে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম আইরাত কে নিজের থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে কঠোর কন্ঠে বলে ওঠে…..

আব্রাহাম;; কি হচ্ছে এগুলো আর কে আপনি?

আইরাত;; আব..আব্রাহাম আপ আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না। আমি, আমি আইরাত আব্রাহাম। আমি আপনার আইরাত।

আব্রাহাম;; Ohh i see, তো আপনিই সেই আইরাত। আইরাত চৌধুরী গ্রুপের ওনার?!

আইরাত;; আব্রাহাম চৌধুরী গ্রুপের ওনার।

আব্রাহাম;; So how can i help you?

আইরাত;; মানে কি আব্রাহাম? আপনি কি বলছেন এইসব? আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না। আব্রাহাম প্লিজ এমন করবেন না। আপনি কেনো এগুলো বলছেন?

আব্রাহাম;; হুয়াট আমি কি করছি? করেছেন তো আপনি মানে চেনা নেই জানা নাই হুট করেই এভাবে অচেনা এক ছেলেকে এসে জড়িয়ে ধরেছেন। নূন্যতম ম্যানার্স নেই আপনার?

আইরাত;; এইসব কি যা তা বলছেন আপনি? আপনি আমাকে চিনতে পারছে না ? কি করে সম্ভব এটা। আব্রাহাম প্লিজ।

আব্রাহাম;; আমার নাম অর্নীল, আব্রাহাম না। যদিও অনেকে আব্রাহামও ডাকে।

আইরাত;; নাম চেঞ্জ করলেই সবকিছু চেঞ্জ হয় না।

আব্রাহাম;; ম্যানেজার আমাকে বলেছিলো আপনার কথা। বলতে গেলে আমার সামনে আপনার এক প্রকার প্রশংসার ঝুড়িই নিয়ে বসেছিলেন আমি তখন ভেবেছি আপনি বেশ বুঝমান একজন মেয়ে। But i was wrong আপনি তো পাগল মনে হচ্ছে। মানে আমি এর আগে কখনো আপনাকে দেখিও নি আর আপনি আজ কিনা??

আইরাত;; আপনি আব্রাহাম, আপনি আমার হাসব্যান্ড আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী। দুই বছর আগে আপনার একটা কার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। মনে আছে আপনার? আপনি কেনো আমাকে চিনতে পারছেন না?

আব্রাহাম;; চেনার প্রশ্নই আসে না। দেখুন আপনার হয়তো কোথাও কোন বিরাট ভুল হচ্ছে।

আইরাত;; না, আমি সবক্ষেত্রে ভুল হতে পারি কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে না। আমি ঠিকই আছি।

আব্রাহাম;; হে লিসেন আমি আপনাকে চিনি না আর এর আগে কখনো দেখিও নি ওকে।

আইরাত ঝট করে আব্রাহামের কাছে এসে পরে। আইরাত তার দু হাত দিয়ে আব্রাহামের দুই গালে ধরে।

আইরাত;; কেনো আব্রাহাম, কেনো আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না বলুন তো। আমি কি করেছি। আমি তো জানতাম যে আপনার কিছু হয় নি। পুলিশ রা তাদের কাজ প্রোপার ভাবে করতেই পারে নি। আপনি জানেন না, আপনার বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই যে আমি আপনাকে ছাড়া কি হালে থেকেছি, কিভাবে লাইফ লিড করেছি। আপনি এতো টা দিন কোথায় ছিলেন বলুন তো? কেনো আমার কাছে একটাবারের জন্যও আসেন নি? আপনি জানেন না যে আমি আপনাকে কত্তো জায়গায় খুজেছি, কত্তো ভাবেই না খুজেছি কিন্তু আমি পাই নি আপনাকে। আপনার দাদি আপনাকে ছাড়া যে কি হালে আছে তা আমি বলতে পারবো না। আর কাল, কাল যখন আমি আপনাকে কনসার্টে দেখি আমার নিজেরই তখন কোন সেন্স ছিলো না। আব্রাহাম প্লিজ আর দূরে দূরে থাকবেন না।

আব্রাহাম আইরাতের হাত দুটো নিজের গাল থেকে নামিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; দেখুন মিস. সরি মিসেস. আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে আমি আপনার হাসবেন্ড না। হ্যাঁ মানলাম আমার নামও আব্রাহাম কিন্তু এক নামে হাজার মানুষ থাকে। আর রইলো চেহারার কথা, পৃথিবীতে না একই রকম চেহারার মানুষ ৭ জন থাকে ওকে।

আইরাত;; ৭ জন কেনো ৭০০ মানুষ থাকলেও আমি আমার আব্রাহাম কে চিনতে কখনোই ভূল করবো না। আপনি আমার আব্রাহাম।

আব্রাহাম;; ও হ্যালো, সবকিছুর একটা লিমিট থাকে ওকে। এবার কিন্তু বেশ বারাবারি করে ফেলছেন আপনি। আমি যদি আগে জানতাম যে আপনি এমন আধাপাগল আর একটা পাগলের সাথে আজ আমার এপোয়েন্টমেন্ট আছে তাহলে আমি ম্যানেজার কে হ্যাঁ জীবনেও বলতাম না।

আইরাত;; কিন্তু আম…….

আব্রাহাম;; আমি আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল। প্রোফেশন সিংগিং এন্ড রোকস্টার। আমার ড্রিম এগুলো ওকে, আমার প্যাসান। আমি কোন আইরাত নামে কাউকে চিনি না। আপনার হাসব্যান্ডের সাথে আমার চেহরা মিলে যায় আর এটা পুরোপুরি একটা কাকতালীয় ব্যাপার ছাড়া কিছুই না। এতে এতো হাইপার হবার কি আছে। রিলেক্স ইয়ার।

আইরাত অবাক হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে আর আব্রাহাম পুরো একটা চিল মুডে কাচের একটা ডেস্কের ওপর থেকে এলকোহলের গ্লাস টা নিয়ে চুমুক দেয়। আইরাতের এবার রাগ লাগছে সে গিয়ে সোজা আব্রাহামের হাত ধরে থামিয়ে দেয়।

আইরাত;; মিথ্যা বলার আর জাগয়া খুঁজে পান না তাই না। আপনি আমাকে শিখাচ্ছেন। শুনুন আমি জানি আপনিই আব্রাহাম। অযথা আমাকে উলটা-পাল্টা বুঝানো বন্ধ করুন।

আইরাত যে আব্রাহামের হাত ধরে আছে তাতে আব্রাহাম তার দিকে এক ভ্রু উঁচু করে তাকায়। সে একবার আইরাতের দিকে আরেকবার নিজেদের হাতের দিলে তাকাচ্ছে। আইরাত এলকোহলের গ্লাস সহ আব্রাহামের হাত টা নিজের হাত দিয়ে থামিতে রেখেছে।

আব্রাহাম;; বাই দি ওয়ে একটা জিনিস আপনার পছন্দ হলো খুব। তা হচ্ছে আপনার চোখের পানি। আপনাকে কান্নারত অবস্থায় দারুণ মানায়। আই উইস আপনি আপনার সারাজীবন এই কান্না করতে করতেই কাটিয়ে দিবেন। আর হ্যাঁ নিজের চোখের পানি দিয়ে আমার গায়ের শার্ট টা খানিক ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য থেংক্স। আমি চাই যে মেয়েরা যেনো কিছু না কিছু একটা চিহ্ন আমাতে রেখে যায়।

আইরাত;; হুয়াট?

আব্রাহাম;; একচুয়ালি ইউ নো হুয়াট, আমি তোমার নামে অনেক কিছু শুনেছি। তুমি করেই বললাম এখন কেননা আপনি ডাক টা আমার সাথে যায় না। আর মেয়েদের বেলায় তো মোটেও না। আর মেয়েরা যখন একদম ইমোশনাল হয়ে আমার কাছে এসে নিজের মায়া কান্না শুরু করে দেয় না। আহা, কি যে ভালো লাগে।

আইরাত;; মেয়েদের ব্যাপারে অনেক এক্সপেরিয়েন্স আছে বুঝি?

আব্রাহাম;; থাকতে হয় মিসেস.আইরাত।

আইরাত;; আপনি এমন কেনো করছেন আমার সাথে? আপনার সবই মনে আছে আমি জানি। তবুও এমন কেনো করছেন আপনি?

আব্রাহাম;; আমি কি করেছি। আমি যতদূর জানি আমি তোমার সাথে এখনো তেমন কিছুই করি নি আইরাত। একবার করা শুরু করে দিলে থামা মুশকিল। তবে করেছো তো তুমি। এসেই সোজা আমাকে আষ্টেপৃষ্টে আকড়ে ধরেছো। জিনিস টা আমার কাছে Unexpected ছিলো। তবে Unexpected হলেও
I really like it…

আইরাত;; আব্রাহাম….

আব্রাহাম;; আমি তোমাকে চিনি না, আমদের এই প্রথম দেখা। আর আমি কারো হাসবেন্ড না। বিয়েই হলো না আর হাসবেন্ড।

আইরাত;; আব্রাহাম আপনি আমার কথা ট………..

আব্রাহাম;; Get lost…

আইরাত;; আব্রা……

আব্রাহাম;; I said get lost…

আইরাত আব্রাহামের দিকে এগিয়ে আসে।

আইরাত;; ফ্ল্যাট থেকে তাড়াতে পারলেন কিন্তু নিজের জীবন আর আপনার থেকে দূর কখনোই তাড়াতে পারবেন না। মনে রাখবেন। একবার হারিয়েছি আমি আর পারবো না। আর এবার যখন পেয়ে গেছি তো আমিও দেখবো মিস্টার আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী যে আপনি দূরে কি করে যান আমার থেকে। পাগলামি তো কেবল শুরু শেষ হতে অনেক দেরি।

এই বলেই আইরাত চলে আসতে নেয় কিন্তু আবারও থেমে যায়।

আইরাত;; ওহহ হ্যাঁ আরেকটা কথা। এই যে বাইরে যে আপনি Don’t Disturb এর লগো দিয়ে রেখেছেন না তা অতি দ্রুত সরিয়ে দিন। কেননা ডিস্টার্ব নিজেই এসে পরেছে আপনার লাইফে। তা আমি। আপনি তো আমার আব্রাহাম ই তাতে যতো যাই ই বলেন না কেনো। আর হ্যাঁ মেয়েরা না মেয়ে হবে শুধু। আর সেটাও এই আমিই।

এই বলেই আইরাত আব্রাহামের দিকে একটা সুক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার রুম ত্যাগ করে।

আব্রাহাম;; Attitude level high 🔥…!


আইরাত নিজের চোখে সানগ্লাস টা পরে দ্রুত পায়ে বাইরে এসে নিজের গাড়িতে উঠে পরে। বেশকিছু সময় পর নিজের অফিসেও চলে যায়। আইরাত যখন অফিসে ঢুকছিলো তখন তার মুখে ঝুলে ছিলো এক চিলতে হাসির ছাপ। সবাই কিছুটা অবাক ভাবেই আইরাতকে দেখছিলো। কেননা কেউ আইরাত কে কখনো হাসতে দেখেনি অর্থাৎ বিনা কারণে সে মোটেও হাসে না। আইরাত নিজের কেবিনে চলে যায় সোজা। তার কয়েক মিনিট পর কেবিনে রাশেদ আসে।

রাশেদ;; ম্যাম কি খবর? আব্রাহাম স্যার?

আইরাত;; কে বলেছে সে আব্রাহাম!

রাশেদ;; জ্বি??

আইরাত;; উনি তো আব্রাহাম নন উনি তো অর্নীল।

রাশেদ;; কিন্তু…৷

আইরাত;; এটা ওর কথা। এটা ওর মতামত। যখন তাকে এটা বলি যে সে আব্রহাম। তখন সে পরিষ্কার ভাবে সাফ মানা করে দেয় যে সে আব্রাহাম নয় বরং অর্নীল। আরো আমকে নানা কথা বলে।

রাশেদ;; তাহলে কি শুধু শুধু আমরা ভুল ভাবছি?

আইরাত;; না রাশেদ, মোটেও না। আমার ভুল হতেই পারে না। সে আব্রাহাম। আমার কাছ থেকে বাচার জন্য সে এইসব বলছে। আর হ্যাঁ এখন শুধু দেখে যাও, আমি তো আব্রাহাম কে তার নিজের মুখে স্বীকার করিয়েই ছাড়বো যে ওই আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী। জেদ একবার যখন ধরেছি তো ধরেছিই।

রাশেদ;; কিন্তু স্যার আপনাকে চিনতে মানা করছেন কেনো? স্যার তো আপনাকে পাগলের মতো করে ভালোবাসে।

আইরাত;; জানি না রাশেদ, আমার এগুলো ভাবতে আর ভালো লাগে না। যাই হোক যে যেই ভাষার কথা বুঝে তার সাথে সেই ভাষাতেই কথা বলতে হয়। ত্যাড়া তো আব্রাহাম আগে থেকেই। একবার সোজা করেছিলাম এবার না হয় আবার করবো। রাশেদ?

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম!

আইরাত;; আরে পার্টি এরেঞ্জ করো ইয়ার। আর এর চিফ গেস্ট হবে আব্রাহাম ওপস সরি অর্নীল।

রাশেদ;; ম্যাম পার্টি মানে কেনো?

আইরাত;; এই ধরো খুশিতে।

যেই বলা সেই কাজ। রাশেদ সহ বাকি স্টাফ রা সবাই সবকিছু এরেঞ্জ করে ফেলে।


অন্যদিকে আব্রাহাম তার রুমে হাতে একটা বল নিয়ে দেওয়ালে জোরে জোরে মারছে সেই বল আবার আব্রাহামের দিকে ফিরে আসলে সে তা ক্যাচ ধরে ফেলছে। মুখে তার গম্ভীর ভাব, কপাল টুকু কুচকে রেখেছে। যেনো বেশ রেগে আছে। তখনই রুমে কেউ আসে। এসেই সোজা আব্রাহামের পেছনে কোমড়ে দুহাত রেখে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম বুঝলো যে এটা কে হতে পারে৷

আব্রাহাম;; কি চাই এখানে তোর?

রাত্রি;; রেগে আছিস?

আব্রাহাম;; না।

রাত্রি;; হয়েছে, আমি জানি। আমাকে শেখাস না।

আব্রাহাম;; কাজ থাকলে বল নয়তো বের হো।

রাত্রি;; এই এই কি বললি আমি বের হবো মানে। তুই বের হো।

আব্রাহাম;; ভালো লাগে না সবসময় ফাইজলামি রাত্রি।

সে খেয়াল করলো যে আব্রাহাম বল দিয়ে দেওয়ালে একটার পর একটা আঘাত করেই যাচ্ছে। রাত্রি এবার গিয়ে কোন কথা না বলে আব্রাহামের সামনে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম থেমে যায়। হাতে বল টা নিয়ে রাত্রির দিকে চোখ তুলে তাকায়।

রাত্রি;; কিছু বলছি আমি।

আব্রাহাম;; আমি কি বলেছি যে আমি বয়রা?

রাত্রি;; এমন করছিস কেনো? কিছু কি হয়েছে?

আব্রাহাম;; এদিকে আয়।

রাত্রি;; কি?

আব্রাহাম;; এদিকে আয়।

আব্রাহাম রাত্রির হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়।
(আর এই রাত্রির কাহিনী পরে জানতে পারবেন সবাই)

রাত্রি;; কি হয়েছে?

আব্রাহাম রাত্রির হাত ধরে…

আব্রাহাম;; একটা কাচা ঘা তে বারবার আঘাত করলে আঘাত টা কিন্তু কাচাই রইয়ে যায় ভালো হয় না। আর সেই ঘা তে কিছু কিছু মানুষ এসে স্যাভলনের মতো কাজ করে।

রাত্রি;; কি বলছিস এইসব কাচা ঘা, স্যাভলন কি? তোর হাত কোথাও কেটেছে নাকি?

আব্রাহাম;; আব্বে ঢাক্কান তুই বুঝবি না। ছাড় বাদ দে।

রাত্রি;; আচ্ছা শোন মা তোর জন্য কষা মাংস পাঠিয়েছে। খেয়ে নিস।

আব্রাহাম;; দেখেছিস আন্টি আমাকে কত্তো ভালোবাসে তোর মতো সবসময় পিছে লেগে থাকে না আমার।

রাত্রি;; কেনো যে পিছে লেগে থাকি তা তো তুই আর বুঝিস না।

আব্রাহাম;; আন্টির শরীর কেমন এখন?

রাত্রি;; আগে থেকে অনেক ভালো।

এভাবেই সেই সময় টুকু কেটে যায়। রাত্রি চলে যায়। সন্ধ্যার দিকে আব্রাহামের কাছে একটা ইনভিটেশন কার্ড আসে।

গার্ড;; ম্যা আই কাম ইন স্যার?

আব্রাহাম;; হুমম।

গার্ড;; স্যার আপনার জন্য এটা এসেছে।

আব্রাহামের দিকে একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে গার্ডটা চলে যায়। আব্রাহাম কার্ড টা খুলে। ওপরে সুন্দর করে লিখা “আব্রাহাম চৌধুরী গ্রুপ” আর তা থেকে একটা পার্টি এরেঞ্জ করা হয়েছে। সেখানে তাকে এস এ চিফ গেস্ট হিসেবে ডাকা হয়েছে। আব্রাহাম যেই না কার্ড টা ছুড়ে ফেলে দিতে যাবে তখনই আইরাতের ফোন। আব্রাহাম পিক করে।

আইরাত;; হ্যালোওওওওওও জামাইজান।

আব্রাহাম;; What the hell is this!?

আইরাত;; না না হেল না। আপনি আসবেন পার্টি তে।

আব্রাহাম;; যাবো না আমি।

আইরাত;; ভেবে দেখুন আপনি আসবেন নাকি আমি আপনার কাছে যাবো। আর হ্যাঁ আমি যদি আপনার কাছে আসি তাহলে কিন্তু তা বেশি একটা ভালো হবে না আপনার জন্য।

আব্রাহাম;; আমার পেছনে লাগতে না আসলেই ভালো হবে।

আইরাত;; আর যদি লাগি তো?

আব্রাহাম;; বরবাদ করে দেবো।

আইরাত;; অনেক আগেই হয়ে গেছি। তবে এবার যদি আপনার নিজ হাতে হই তাহলে আর ক্ষতি কি!

আব্রাহাম;; এতো বাঁকা স্বভাবের কেনো তুমি?

আইরাত;; আরে আপনার কাছ থেকেই তো শিখেছি।

আব্রাহাম;; ওকে ফাইন আসবো আমি।

আইরাত;; আহা, আসবো না এসে পরুন। ওয়েট করছি।

এই বলেই আইরাত ফোন কেটে দেয়। আর আব্রাহাম চোখ বন্ধ করে একটা ক্ষীন দম ছাড়ে। আর ওদিকে আইরাত পার্টির A-Z সব আব্রাহামের পছন্দ মতো করে সব। ব্যাসিক্যালি একটা টেস্ট করার জন্যই। আব্রাহাম ব্লেক কালারের পেন্ট, আর এশ কালারের শার্ট পরে তার ওপরে ব্রাউন কালারের জেকেট। ব্যাস সে রেডি। আব্রাহাম চলে যায় গাড়িতে করে। বেশ সময় পর সে আইরাতের অফিসে এসেও পরে। আব্রাহাম যখন আসে তখন দেখে অফিসের সামনে কমপক্ষে ৫০ জনের মতো ছিলো তাকে স্বাগত জানানোর জন্য। তবে আব্রাহাম কেনো জানি নিজেকে সবার সামনে খারাপ প্রমাণ করতে চাইছে। আব্রাহাম যখন দেখে যে এতো গুলো মানুষ তাকে স্বাগত জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে তখন আব্রাহাম ইচ্ছে করেই হাতে একটা স্যাম্পেনের বোতল নিয়ে নেয় যাতে সবাই ভাবে যে আব্রাহাম ড্রিং & ড্রাইভ করেছে। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে পরে। ওপরের জেকেট টা তার কাধে ঝুলানো, শার্টের হাতা গুলো ফোল্ড করা, চোখ থেকে চশমা টা খানিক নাকের ডগায় নামানো, ঠোঁটে বাকা হাসি আর হাতে স্যাম্পন। আব্রাহামের বাইরে নামতেই যেমন সবাই বড়ো সড়ো ক্রাশ খেলো তেমনই সবাই বেশ অবাক হলো। দু দুটো মানুষের মাঝে এতো টা মিল কি করে সম্ভব? সবার সাথে সাথে সেখানে রাশেদ নিজেও ছিলো আব্রাহাম কে স্বাগত জানানোর জন্য। কিন্তু আব্রাহামের এমন লুক দেখে রাশেদ যেনো এখানেই মাথা ঘুড়ে পরে যাবে এমন অবস্থা। আব্রাহাম বুঝলো যে সবাই তাকে তাদের চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে। কিন্তু রাশেদ অবাক হয়েই আব্রাহামের দিকে এক তোড়া ফুল নিয়ে এগিয়ে গেলো।

রাশেদ;; ওয়েলকাম ব্যাক স্যার।

আব্রাহাম;; হুয়াট?

রাশেদ; আই মিন, ওয়েলকাম স্যার।

আব্রাহাম;; থ্যাংক্স।

আর বাকি সবাই কিছু বলবে তার আগেই আব্রাহাম চলে যায় ভেতরে। আশে পাশে আব্রাহামের অনেক গার্ড রা রয়েছে। যে জায়গায় পার্টি এরেঞ্জ করা হয়েছে সেখানে শুধু সাদা ধবধবে লাইট। সবকিছুই বেশ ক্লাসি। এখানে অনেক মানুষ রয়েছে। আব্রাহাম যেই না হলরুমে ঢুকে তার সাথে সাথেই সবার নজর আব্রাহামের দিকে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে একটা সফট মিউজিক চালু করা হয়েছে। অনেকেই এসে আব্রাহামের সাথে ছবি ক্লিক করছে আবার অটোগ্রাফ চাচ্ছে। তবে এতো সবকিছুর মাঝে আইরাত নেই। আব্রাহাম খেয়াল করলো যে কি রকম এক অদ্ভুত নজরে যেন সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। যাই হোক আব্রাহাম হেসে হেসে সবার সাথে টুকটাক কথা বলছিলো তখনই আইরাত ওপরের সিড়ি দিয়ে নিচে নামা শুরু করে দেয়। আব্রাহাম তার সরু দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত একটা ব্লেক কালারের ফুল হাতা ওয়ালা গাউন পরেছে। তবে তা বেকল্যাস। চুল গুলো হালকা ভাবে খোপার মতো করে ওপরে বাধা, চারিদিকে চুল গুলো কিছুটা ছড়িয়ে পরেছে। কানে সাদা স্টোনের দুল আর গলায় হালকার মাঝে একটা ন্যাকলেস। সিম্পলের মাঝেও দারুন ফুটে ওঠেছে। আইরাত হেটে এসে আব্রাহামের কাছে আসে। আব্রাহাম তার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকলে আইরাত আব্রাহামের সামনে তুরি বাজায়। আব্রাহামের হোস আসে।

আইরাত;; জামাইজান, আমাকে দেখে বুঝি হোস উড়ে গেছে?

আব্রাহাম;; হীরে থাকতে আমি কয়লার দিকে কেনো তাকাবো বলোত?

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা,,

আইরাত আব্রাহামের কাছে চলে যায় কিছুটা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আস্তে করে আব্রাহামের চোখে তার চোখগুলো রেখে বলে ওঠে….

আইরাত;; মনে রাখবেন কয়লার খনি থেকেই কিন্তু হীরের জন্ম।

আব্রাহাম;; এতো তেজ?

আইরাত এবার দূরে সরে আসে,

আইরাত;; তেজ না থাকলে আপনার সাথে পারবো কি করে বলুন। বাঘ যতোই গর্জন করুক না কেনো বাঘীনির কাছে সবসময় সে ভেজা বিড়াল বুঝলেন।

আব্রাহাম;; বাই দি ওয়ে পার্টির এরেঞ্জম্যান্ট করেন সুন্দর।

আইরাত;; থাংকু।

আব্রাহাম;; কি?

আইরাত;; আমি এভাবেই বলি।

আইরাত আর আব্রাহাম কথা বলছিলো আসলে কথা না এক প্রকার কথা কাটাকাটি ই করছিলো তখনই আব্রাহামের পাশ দিয়ে একটা মেয়ে হেটে যায়। যাওয়ার সময় সে আব্রাহাম কে খানিক হাত তুলে হাই দিয়ে যায়। আর আব্রাহামও হেসে তাকে হাই বলে। শুধু তাই না….

আব্রাহাম;; হে হাই বিউটিফুল।

আব্রাহাম তো এটা বলে দাঁড়িয়েই ছিলো কিন্তু আইরাত তো রাগে আগুন। তখনই হুট করে আইরাতের ডাক পরে তাই আইরাত চলে যায়। যাওয়ার আগে আব্রাহাম কে একটা রাগি লুক দিয়ে যায়। তবে এর পরেই বাধে আরেক গন্ডগোল।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here