নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ০২

0
1158

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ০২

আইরাত গিয়ে তার বাবা মায়ের ছবির সামনে দাঁড়ায়। একমনে ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর সেটা হাতে তুলে নেয়। ফুপিয়ে কান্না করতে লাগে।

আইরাত;; বেশ ভালোই তো আছো তোমরা। তাহলে কেন আমায় তোমাদের সাথে নিয়ে গেলে না। কেন অন্যদের ঘাড়ে আমাকে বোঝা বানিয়ে রেখে গেলে। আমি তো এমন কিছু চাই নি। এভাবে এতো কষ্ট পাওয়ার থেকে আমি মরেই গেতাম।

আইরাত তার বাবা-মায়ের ছবি টা বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছিল আর এমন বিলাপ পারছিলো। তখনই দরজাতে কারো কড়া নাড়ার শব্দ কানে আসে। আইরাত ভয় পেয়ে যায়। সে ভাবে হয়তো তার চাচি এসেছে। তাই হুড়মুড় করে নিজের চোখের সব পানি গুলো মুছে ফেলে আর ছবি টা হাত থেকে আগের জায়গা তেই রেখে দেয়। আইরাত স্বাভাবিক হয়ে দরজা খুলে দিয়ে অবাক হয়। কারণ তার চাচা ইকবাল সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে খাবারের প্লেট।

আইরাত;; চাচ্চু তুমি এতো রাতে?

ইকবাল;; এখন কি এখানেই দাড় করিয়ে রাখবি না ভেতরে আসতে দিবি?

আইরাত;; আরে না না ভেতরে এসো।

ইকবাল সাহেব ভেতরে এসে বিছানার এক পাশে বসে পরে। আইরাত এবার তার চাচ্চু কে বলে…

আইরাত;; তুমি এতো রাতে যে ঘুমাও নি।

ইকবাল;; তোর চাচি আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে ঠিকমতো। এটা ওটা নানা কথা মুখে লেগেই থাকে। আর তুই তো এসে কিছু খাস নি। আয় খেয়ে নে।

আইরাত;; না মানে চাচ্চু আসলে পেট ভরা আমার আর তুমি চলে যাও চাচি দেখলে বকবে।

ইকবাল;; রাখ তো তোর চাচির কথা। এদিকে আয়।

ইকবাল সাহেব জোর করেই আইরাত কে তার সামনে বসিয়ে দেয়। আইরাত মাথা নিচু করে বসে থাকে। ইকবাল সাহেব বেশ বুঝতে পারলেন যে কান্না করে বুক বাসিয়েছে আইরাত। আইরাত খাচ্ছে না দেখে ইকবাল সাহেব খাবার তুলে আইরাতের মুখের সামনে ধরে। আইরাত ওপরে তাকিয়ে দেখে তার চাচ্চু তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আইরাত ছলছল নয়নে তাকিয়ে থেকে খেয়ে ফেলে।

আইরাত;; চাচ্চু তোমাদের অনেক কষ্ট হয় আমার জন্য তাই না?

ইকবাল;; আমার অনেক আগে থেকেই ইচ্ছে ছিলো যে আমার একটা মেয়ে হবে। মেয়ের বাবা হবো আমি কিন্তু আল্লাহ রনিত কে দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে মনে হলো যে আল্লাহ আমার কথা শুনেছেন কীভাবে জানিস? তোকে দিয়ে। আর মেয়েদের জন্য বাবাদের কখনো কোন কষ্ট হয় না। হ্যাঁ তবে একজনের জন্য জীবন টা তেজপাতা হয়ে গেছে পুরো।

আইরাত;; কে?

ইকবাল;; কে আবার তোর চাচি।

এই বলেই আইরাতের চাচা আর সে ফিক করে হেসে দেয়। আর তখনই ফাটা গলায় কলি বেগমের আওয়াজ আসে।

ইকবাল;; ওইই তো শুরু হয়েছে। নাম নিলাম আর হাজির।

আইরাত;; আচ্ছা হয়েছে বুঝলাম, এবার তুমি যাও। নয়তো চাচি এখানে চলে আসবে। ঔষধ খেয়ে জলদি ঘুমিয়ে পরো।

ইকবাল;; হ্যাঁ আমি যাই। আর কাল কি তোর ভার্সিটি আছে?

আইরাত;; না নেই আর কাল সকাল সকাল উঠেই হোটেলে যেতে হবে।

ইকবাল;; আমাকে মাফ করিস রে মা। আমি ব্যার্থ। এই বয়সেই তোকে কাজ করতে হচ্ছে।

আইরাত;; ধুর চাচ্চু কি যে বলো না। বাদ দাও তো। আর তুমি যাও জলদি। শুভ রাত্রি।

ইকবাল সাহেব আইরাতকে কোন রকমে খাইয়ে জলদি বের হয়ে পরে। আর আইরাত ফ্রেশ হয়ে এসে একটু পড়তে বসে। তাকে সব দিক দিয়েই খেয়াল রাখতে হয়। এভাবেই আস্তে আস্তে গভীর রাত হয়ে যায়। আইরাত আর তার বিছানাতে যায় না পড়ার টেবিলেই পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে খেয়াল নেই তার। পরেরদিন সকালে খুব ভোরে ঘুম ভাংগে আইরাতের। টেবিলের পাশে থাকা জানালা দিয়ে রোদ মুখের ওপর পরছে। দিন খুব চড়া তাই সকাল সকাল রোদের প্রকোপ টাও বেড়ে যায়। আড়মোড়া ভেঙে উঠেই দেখে সে পড়ার টেবিলে। কাল রাত আর বিছানাতে ঘুমানো হয় নি, মনেই নেই। যাই হোক উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা রান্নাঘরে চলে যায়। গিয়েই রান্না শুরু করে দেয়। ইকবাল সাহেব এসেই দেখে আইরাত রান্না করছে।

ইকবাল;; শুভ সকাল মা।

আইরাত;; উঠে পরেছো চাচ্চু।

ইকবাল;; হ্যাঁ উঠলাম। তোর চাচি তো নাক ডেকে ঘুমায়।

আইরাত;; হাহাহা, আচ্ছা তুমি বসো আমি চা দিচ্ছি।

ইকবাল সাহেব বসে পরেন খবরের কাগজ হাতে নিয়ে। আইরাত এক কাপ গরম গরম চা বানিয়ে উনার সামনে দিয়ে আসে। তার কিছুক্ষন পর কলি বেগম উঠে নিচে দেখে যান আইরাত কে। আইরাতও চুপচাপ সব কাজ করে ফেলে এক ঘন্টার মাঝেই। সব শেষ করে নিজের জন্য একটা স্যান্ডউইচ বানিয়ে ফেলে। তারপর সেটা খেতে খেতে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে তার হোটেলের যে ড্রেস টা আছে সেটা পরে নেয়। ড্রেস টা লাল সাদার কম্বিনেশনে। সেই হোটেলে যারা কাজ করে তাদের সবাই কেই এই ড্রেস টা পরতে হয়। ফুল রেডি হয়ে তার চাচ্চু কে বলে বাসা থেকে হোটেলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরে আইরাত। তবে যাবার আগে রনিত আইরাতের জামা টেনে ধরে। আইরাত ঘুড়ে তাকায়…

আইরাত;; কি হয়েছে?

রনিত;; আমার জন্য চকোলেট আনবে তো?

আইরাত;; হ্যাঁ আনবো তো, এত্তো গুলা। (দুই হাত ছড়িয়ে)

রনিত;; আচ্ছা।

আইরাত;; আর শুন চাচ্চু কে দেখে রাখিস আর মায়ের কথা শুনিস তা না হলে পিঠের ছাল তুলে ফেলতে পারে বুঝলি।

রনিত;; আচ্ছা, তুমি যাও।

আইরাত রনিতের গালে একটা পাপ্পি দিয়েই চলে যায়।


মাঝরাতে বাড়ি ফিরেছে আব্রাহাম। কিছুটা ড্রাং অবস্থাতেই। তবে তার দাদির কাছে যেন ধরা না পরে তাই চুপি চুপি কোন কথা না বলেই সোজা নিজের রুমে এসে ঢুকেছে। এসে কোন রকমে জুতো গুলো খুলে সোজা বেডে গা এলিয়ে দিয়েছে। এমনকি এত্তো বেলা হয়েছে তাও উঠার নাম গন্ধ নেই তার। একটা গোল সাদা ধবধবে বেডের ওপর খালি শরীরে শুয়ে আছে আব্রাহাম। তখনই দরজার সামনে এসে কেউ একজন আব্রাহাম আব্রাহাম বলে ডাকতে থাকলো। আব্রাহামের ঘুম ভেংে গেলো, বুঝতে আর বাকি রইলো না যে ইনি তার দাদিমা। আব্রাহাম উঠে নিজের টি-শার্ট টা পরে নেয়। সামনে এসে পরা চুল গুলো হাত দিয়ে ঠেলে কোন রকমে পেছনে দেয়। তারপর গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সামনে কে আছে তাও দেখে না দরজা খুলে দিয়ে আবার এসে শুয়ে পরে। এতে ইলা আক্তার (দাদি) কপাল কুচকায়। বেশ গম্ভীর মুখ নিয়ে আব্রাহামের পাশে বসে পরে। দাদি বসতেই আব্রাহাম তার কোলে মাথা রেখে দেয়।

ইলা আক্তার;; কিরে কাল রাতে কখন ফিরেছিস?

আব্রাহাম;; অনেক তাড়াতাড়ি ই ফিরেছি দাদিমা। এসেই ঘুমিয়ে পরেছি।

আব্রাহামের কথায় তো দাদির রাগ চরমে পৌঁছে গেলো। তিনি সোজা আব্রাহামের কান ধরে উঠিয়ে ফেলে।

আব্রাহাম;; আহহ দাদিমা ছাড়ো লাগছে আমার।

ইলা আক্তার;; আমি শুধু তোর দাদি না তোর মায়েরও মা লাগি বুঝলি। তোর দাদিমা। আমাকে উলটা কথা বলা বন্ধ কর। মাঝরাতে বাড়ি ফিরেছিস। জানিস তোর জন্য বসে থাকতে থাকতে আমি নিজেই রাগ করে ঘরে চলে গিয়েছিলাম।

আব্রাহাম;; তোমাকে বারন করেছি না যে আমার জন্য তুমি জেগে থাকবে না। আমার ঠিক নেই কখন না কখন বাড়ি ফিরি।

ইলা আক্তার;; আচ্ছা হয়েছে সর।

আব্রাহামের দাদি উঠে এসে পরতে নেয় রুম থেকে কিন্তু আবার থেমে যায়।

ইলা আক্তার;; আব্রাহাম আজকে কি দিন তা কি তুই ভুলে গেছিস?

আব্রাহাম;; কি দিন দাদি?

ইলা আক্তার;; মনে নেই তোর?

আব্রাহাম;; না তো আজকে কি?

ইলা আক্তার;; ভুলে গেছিস তাই না। বাহ বাহ, আর কি কিছুই না শুয়ে থাক।

আব্রাহামের দাদি রেগে চলে আসতে নেয় তখনই আব্রাহাম দ্রুত গিয়ে তার দাদির হাত ধরে ফেলে।

ইলা আক্তার;; আবার কি হয়েছে?

আব্রাহাম;; Happy 79th marriage anniversary 🥀 দাদিমা।

ইলা আক্তার;; মনে আছে?

আব্রাহাম;; আমি কীভাবে ভুলি?

আব্রাহামের দাদির রাগ যেন পানি হয়ে গেলো। দিলেন এক গাল হেসে। আব্রাহামের কপালে চুমু খেয়ে দিলেন।

ইলা আক্তার;; জলদি নিচে নেমে আয়। আমি নাস্তা বানাচ্ছি।

আব্রাহাম;; ওকে।

আব্রাহামের দাদি রুম থেকে চলে গেলো। আব্রাহাম ফ্রেশ হতে যাবে ঠিক তখনই তার ফোনে ফোন আসে। দেখে রাশেদ অর্থাৎ আব্রাহামের সাথে যে কাজ করে তার ফোন। আব্রাহাম ফোন তুলে…

আব্রাহাম;; হ্যালো

রাশেদ;; স্যার আজ কি অফিসে আসবেন?

আব্রাহাম;; না ইচ্ছে নেই। আজ বাইরে বের হবো বাট অফিসে যাবো না। তুমি বাকি টা সামলে নিও।

রাশেদ;; জ্বি স্যার তবে এখানে একটা সমস্যা হয়েছে।

আব্রাহাম;; কি?

রাশেস;; স্যার আসলে হঠাৎ করেই অফিসের বেশ কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা তে প্রলেম হচ্ছে। ফুটেজ গুলো ক্লিয়ারলি আসছে না।

আব্রাহাম;; হুট করেই কেন এমন হলো?

রাশেদ;; স্যার মেনেজার বললো এই প্রব্লেম নাকি বেশ কিছুদিন যাবৎ ই হচ্ছে।

আব্রাহাম;; What the hell..! আর আজ তুমি আমায় বলছো। এতো ইরেস্পন্সিব্যাল কেন তোমরা।

রাশেস;; স্যার I swear আমি সবেমাত্র জানতে পারলান।

আব্রাহাম;; দেখো আজ ঠিক করতে পারো কিনা নয়তো আমি আগামীকাল দেখছি।

রাশেস;; ওকে স্যার।

এই বলেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নেয়। ব্রাউন কালার শার্ট আর ডেনিম পেন্ট পরে রেডি হয়ে নিচে চলে যায়। দুটো স্যান্ডউইচ খেয়ে কোন রকমে উঠে পরে। হ্যাভি খাবার সে টোটালি এভোয়েড করে। ড্রোইং রুমে বসে ছিলো তখনই ফোনে ফোন আসে।

কৌশল;; কেমন আছিস ডুড?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ ভালো আছি। তোর কি খবর?

কৌশল;; ভালো। কিরে তোকে তো কাল রাতে আর বারে খুঁজে পেলাম না।

বারের কথা তুলতেই আব্রাহামের সামনে আইরাতের মুখট আপনা আপনি ভেসে ওঠে।

আব্রাহাম;; না অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো আর ভালো লাগছিলো না তাই এসে পরেছি।

কৌশল;; ওহহ আচ্ছা। শোন

আব্রাহাম;; হুম

কৌশল;; চল আজ বাইরে কোথাও যাই। রহিত & অয়ন সবাই আছে।

আব্রাহাম;; কোথায় যাবি?

কৌশল;; ক্লাবে যাই চল। সেখানে মেয়েরাও আছে মজা হবে।

আব্রাহাম;; What nonsense..! আজকেও আবার। আমি ক্লাবে যাচ্ছি না তোরা গেলে যা।

কৌশল;; একদম না তোকে ছাড়া তো আড্ডা জমবেই না। আর ক্লাবে না তো কোথায়?

আব্রাহাম;; অন্য কোথাও। মানে ভালো একটা জায়গা তেও তো যাওয়া যায় নাকি।

কৌশল;; তাহলে “The Winston Hotel” – এ যাওয়া যায়।

আব্রাহাম;; এটা..

কৌশল;; এটা একটা ফাইভ স্টার হোটেল এন্ড অনেক ভালো। শান্ত ভদ্রনম্র একটা প্লেস।

আব্রাহাম;; তো যাওয়া যাক সেখানেই।

কৌশল;; ওকে ফাইন। আমি রহিত-অয়নের সাথে কথা বলছি আর হোটেলের মেনেজারের সাথেও।

আব্রাহাম;; ওকে।


আইরাত;; Ok two pizza”s, two orange juice and one pencake.. Anything else sir..?!

আইরাত একজন লোকের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে এসে পরে। সোজা কিচেনে চলে যায়। গিয়ে দেখে অবনি কাজ করছে। অবনি আইরাতের সাথে হোটেলে কাজ করে আর আইরাতেরও অনেক ভালো ফ্রেন্ড। প্রায় ২০ মিনিট পর আইরাত অর্ডার দেওয়া খাবার গুলো দিয়ে আসে। আইরাত সেখান থেকে এসে পরতে ধরেছিলো তখনই দিয়ার ডাকে থেমে যায়।

দিয়া;; আইরুউউউউউউউ..

আইরাত;; আরে দিয়া।

আইরাত হাত থেকে গ্লাপস গুলো খুলতে খুলতে দিয়ার দিকে এগিয়ে যায়।

আইরাত;; তুই এখানে এই সময়ে?

দিয়া;; হ্যাঁ আজ তো ভার্সিটি নেই তাই ভাবলাম তোর কাছে চলে আসি। আর চাচ্চুর সাথেও কিছু কথা ছিলো।

আইরাত;; তো কথা হয়েছে আংকেলের সাথে?

দিয়া;; না হয়নি এখনো তবে পরে বলে নেবো। আচ্ছা শোন না আমি না তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে এসে পরেছি কিছুই খায় নি। খুব ক্ষিদে পেয়েছে।

আইরাত;; আরে আগে বলবি তো আচ্ছা তুই টেবিলে বোস আমি আনছি খাবার আর কি খাবি বল?

দিয়া;; পেস্ট্রি আর বারগার।

আইরাত;; জাস্ট গিভ মি টু মিনিট’স।

দিয়া বসে ছিলো। কিছুক্ষন পর আইরাত পেস্ট্রি আর বারগার নিয়ে আসে। দিয়ার পাশেই আইরাত বসে পরে। দিয়া কথা বলছে আর খাচ্ছে। খাওয়া শেষ হলেই দিয়ার চাচ্চু অর্থাৎ হোটেলের ওনার আসে। দিয়ার সাথে অনেক কথা হয়। দিয়ার চাচ্চু আইরাতকেও অনেক ভালো মেয়ে ভাবেন আর সম্পর্ক ভালো। আর এবার উনি বলে ওঠেন…

আফজাল শেখ;; আইরাত

আইরাত;; জ্বি আংকেল

আফজাল শেখ;; আইরাত আজ অনেক বেশি কাজ আছে আর অনেক ইম্পরট্যান্টও। ইন ফ্যাক্ট আমাদের হোটেলে আজ প্রথম তারা আসছেন। সন্ধ্যার পর আসবেন। আর আজ কিন্তু বেশি টাইম থাকতে হবে হোটেলে আর তোমরা যারা আছো সবাইকে সামলাতে হবে।

আইরাত;; আংকেল কারা আসবেন?

আফজাল শেখ;; মিস্টার আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী।

আফজাল শেখের কথা শুনেই দিয়ার কাশি উঠে পরে অনেক জোরে। আইরাত আমতা আমতা করে বলে ওঠে..

আইরাত;; আব.. আংকেল ইনি কে?

আইরাতের কথা শুনে দিয়ার আরো কাশি উঠে পরে, জীবন যায় যায় অবস্থা।

আইরাত;; আরে আস্তে তুই এভাবে কাশছিস কেন? পানি খা

আইরাত দিয়াকে পানি খাইয়ে দেয়। দিয়া কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলে ওঠে…

দিয়া;; চাচ্চু কি বলছো আব্রাহাম চৌধুরী আসবেন তোমার হোটেলে সত্যি। আমার তো দেখার জন্য মন আর মানছে না।

আইরাত;; কিন্তু উনি কে তাই তো জানি না।

দিয়া;; তুই কোন গ্রহে থাকিস বল তো। আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী কে তুই চিনিস না যেখানে সবাই তাকে দেখার জন্যে পাগল।

আইরাত;; হয়েছে একটু থাম। আমার দেখার এতো শখ নেই। আংকেন আপনি বলুন না কে?

আফজাল শেখ;; আইরাত উনি অনেক বড়ো একজন বিজনেসম্যান আর সাথে একজন আন্ডারগ্রাউন্ডের অনেক বড়ো মাফিয়া। তবে আমি আজ পর্যন্ত তাকে দেখি নি বিনা কারণে কারো ক্ষতি করতে। উনার ফ্রেন্ড ফোন করেছিলো ফুল হোটেল বুক করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় আসছেন তারা। একটা সফট্ পার্টির এরেঞ্জমেন্ট করা হবে। আর তোমাদের সবাইকে ভালোভাবে প্রেজেন্ট করতে হবে।

আইরাত;; আব..জ্বি আংকেল কোন চিন্তা করবেন না সব সামলে নিতে পারবো।

আফজাল শেখ;; তো এখন থেকেই সব শুরু করে দাও কেমন। দিয়া আসি।

দিয়া;; আচ্ছা চাচ্চু।

আফজাল শেখ সেখান থেকে এসে পরেন। দিয়া তো খুশিতে গদগদ হয়ে আছে৷ আইরাত তার দিকে তাকিয়ে দেখে দিয়া মনে মনে মনকলা খাচ্ছে। এটা দেখে আইরাত দিয়ার কাধে চিমটি কেটে দেয়।

দিয়া;; আউউউউউচ

আইরাত;; দিন দুপুরে সপ্ন দেখা অফ কর।

দিয়া;; আরে তুই কি বুঝবি। একবার তোর সামনে আসুক তুই নিজে যদি উনার ওপর ক্রাশ না খেয়েছিস তো আমি দিয়া নাম পালটে রাখবো। সব মেয়ের দিলের ধারকান উনি।

আইরাত;; তাহলে একটা নতুন নাম খুঁজে নে।

দিয়া এক প্রকার নাচছিলো কিন্তু আইরাতের কথা শুনে থেমে যায়।

দিয়া;; মানে?

আইরাত;; মানে এই যে আমি কারো ওপর ক্রাশ ট্রাশ খাচ্ছি না। নজর ঠিক কর হারামী।

এই কথা বলেই আইরাত চলে যায় আর দিয়া তার পেছন পেছন।

হোটেল টা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। একদম ঝলমল করছে। সবকিছু অনেক নিট & ক্লিন। দেখতে দেখতে এক সময় সন্ধ্যা হয়ে আসে। আইরাতের বাসায় যেন প্রব্লেম না হয় তাই সে তার বাড়িতে ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছে তার চাচ্চু কে। সবকিছু সাদা আর গোল্ডেনের মাঝে সাজানো হয়েছে। একদিকে খাবার, আরেক দিকে এলকোহল আর সফট্ ড্রিং সাজানো। কাচের অনেক গুলো লম্বাটে গ্লাসে করে এলকোহল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওয়েটার রা। প্রায় তিন ঘন্টা পর সবকিছু রেডি হয়। এবার হোটেলের সব কর্মচারীদের এক সাথে দাড় করিয়ে সব কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসে।

আব্রাহাম রেডি হচ্ছে। একদম সিম্পলের মাঝেই সুন্দর লাগছে। ব্লেক রিপ প্যান্ট পরেছে আর ডার্ক ব্লেক শার্ট। আজ ওপরে কোন কোট বা জেকেট পরছে না শুধু ডার্ক শার্ট। শার্টের হাতা ফোল্ড করা আর হাতে গোল্ডেন কালারের ওয়াচ। আর সেটাও যেন জিম করা বডি তে একদম ফুটে ওঠেছে। চুল গুলো কিছু করে না নরমাল ভাবেই রয়েছে আর বাতাসে দুলছে। আব্রাহাম বাইরে এসে জুতো পরছে তখনই তার ফ্রেন্ডের কল আসে। আব্রাহাম তার দাদিকে বলে বের হয়ে আসে। বাইরে এসে গাড়িতে ওঠে পরে৷ আব্রাহামের ফোনে তার ফ্রেন্ড হোটেলের এড্রেস টা মেসেজ করে দিয়েছে। আব্রাহাম সেই এড্রেস অনুযায়ী ই চলে যায়। গিয়েই দেখে কৌশল, রহিত আর অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। এরা আব্রাহামের অনেক পুরনো ফ্রেন্ড আর অনেকটা ক্লোজও।

অয়ন;; ওই তো এসে গেছে মিস্টার চার্ম।

আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে পরে।

আব্রাহাম;; আমি কি দেরি করেছি?

রহিত;; একদম না।

আব্রাহাম;; ভেতরে যাওয়া যাক।

কৌশল;; হ্যাঁ চল।

আব্রাহামের ভেতরে গেতেই তাদের সবাই আন্তরিক ভাবে স্বাগতম জানায়। আব্রাহাম আর সাথে তার ফ্রেন্ড রা ভেতরে যায়। মেনেজার গিয়ে আব্রাহামের সাথে খুব বিনয়ের সাথে কথা বলে। আর হোটেলে যেই লেডিস স্টাফ গুলো ছিলো তারা নিজেদের চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে আব্রাহামকে। আব্রাহাম আর তার ফ্রেন্ড’রা গিয়ে একটা খোলা জায়গায় বসে পরে। এখানে খোলা আকাশ আছে। রাতের হাল্কা আলো আছে আর সাথে ওপরে অনেক গুলো সাদা লাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সামনেই একটা বড়ো সুইমিং পুল রয়েছে। ভেতরের লাইট গুলো সুইমিং পুলে ঝকঝক করছে। ফাইভ স্টার হোটেল আর তার সবকিছু হাইফাই ও বটে। আব্রাহাম সবার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর হাসছে। পার্টির মাধুর্য ধরে রাখার জন্য স্লো ভলিউমে একটা সফট্ মিউজিক বাজানো হচ্ছে। আব্রাহাম সহ বাকি সবার হাতেই রয়েছে এলকোহলের একটা গ্লাস। এতোক্ষন আইরাত আর অবনি কেউই ছিলো না এখানে। তারা কিচেনে রান্নার কাজে ব্যাস্ত। তখনই আরেকজন গিয়ে তাদের দ্রুত কিচেন থেকে গিয়ে বাইরের দিক টা সামলাতে বলে। আইরাত আগে গিয়ে নিজে একটু ঠিক ঠাক হয়ে নেয়। তারপর পরিপাটি হয়ে সুন্দর ভাবে নিজেকে গুছিয়ে হাতে একটা বিয়ারের পেগের ট্রে নিয়ে হলরুমে চলে যায়। আইরাত এক সাইডে টেবিলের পাশে গিয়ে হাত থেকে ট্রে টা রেখে দেয়। তার সাথে অবনি এসেছিলো তার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আইরাত তার পাশে তাকায়। দেখে অবনি চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে। আইরাত অবিনির নজর খেয়াল করে তার আরেক পাশে তাকায়। দেখে কিছুলোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত কৌশল, রহিত আর অয়ন কে দেখে আব্রাহাম কে আইরাতের চোখে পরে না। আইরাত বুঝে না যে অবনি এমন কি দেখে তাকিয়ে আছে। আইরাত অবনি কে ডাক দেয়। অবনির হোস আসে।

আইরাত;; বুঝি না আজ সকাল থেকে সবাই এমন কেন করছে। আরে ভাই এটা একটা হোটেল এখানে নানা ধরণের মানুষ আসে তো এভাবে চোখ ফাটিয়ে দেখার কি আছে বুঝি না। প্লিজ একটু কোন্ট্রল কর।

অবনি;; নিজের সামনে এমন হ্যান্ডসাম আর ডেসিং মানুষ থাকলে নিজেকে কোন্ট্রল করা বড়ো দায়।

আইরাত;; এহহহ মরন, কোন্ট্রল করা দায় (বেংগ করে) চুপ করে কাজ কর।

আইরাত বেংগ করে কথা বলছিলো আর অবনি আইরাতের এইসব কান্ড দেখে হাসছে। আব্রাহাম কথা বলতে বলতে হুট করেই আরেক দিকে তাকায় আর সে আইরাতকে দেখে। তবে আইরাতের পেছন দিক টা দেখে সে, আইরাতের চেহারা টা এখনো আব্রাহাম দেখে নি। কিন্তু তবুও আব্রাহামের কেমন খটকা লাগে। কপাল কুচকে তাকিয়ে থাকে আব্রাহাম। তার ফ্রেন্ড দের বলে আব্রাহাম সেখান থেকে এসে কয়েক কদম এগিয়ে যায়। আব্রাহাম আরো গভীর দৃষ্টিতে দেখছে তার সামনে থাকা মেয়ে টিকে। সে চেনে মেয়ে টাকে তার মন বলছে। আব্রাহাম তার হাতে থাকা গ্লাসের ভেতরের এলকোহল টা চুমুক দিচ্ছে আর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। আর এটা অবনি খেয়াল করে।

অবনি;; আহাম..আহাম

আইরাত;; গলাতে ব্যাঙ আটকে গিয়েছি কি?

অবনি;; আরে তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; কি, কে তাকিয়ে আছে?

অবনি;; আরে ওইযে উনি।

আইরাত;; আরে কে?

অবনি;; আব্রাহাম চৌধুরী। (এক্সসাইটেড হয়ে)

আইরাত;; এই কে রে এই আব্রাহাম চৌধুরী। আমিও দেখি তো। কোথাকার কে!

এই বলেই আইরাত তার পেছনে ফিরে তাকায়। দেখে যে আব্রাহাম তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আইরাত আর আব্রাহামের পুরো চোখাচোখি হয়ে যায়। আব্রাহামের দিকে তাকাতেই আইরাতের বুক টা কেমন ধুক করে ওঠে। কিন্তু আব্রাহাম এবার এক ভ্রু উচু করে বাকা হেসে আইরাতের দিকে তাকায়। কেননা সে আইরাতকে চিনতে পেরেছে। কাল রাতের বারের সেই মেয়েটা। আইরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আব্রাহামের দিকে। কেননা সে তো গতকাল আব্রাহাম কে দেখতেই পায় নি তবুও কেমন যেন চেনা চেনা লেগছে। আর আব্রাহামের মুখে ঝুলছে বাকা হাসি।




চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here