নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ০৩

0
1000

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ০৩

আব্রাহাম আর আইরাতের চোখাচোখি হয়ে গেলে আইরাত পুরো স্ট্যাচু হয়ে যায়। দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই। শুধু আব্রাহাম হোশে আছে কিন্তু আইরাত যেন একটা ঘোড়ের ভেতরে আছে। আব্রাহাম ব্যাপার টা বুঝতে পেরে কিছুটা গলা খাকাড়ি দেয়, হাতের আঙুল দিয়ে নিজের কপালে কিছুটা স্লাইভ করে। বাকা হাসিটা যেন এবার গাঢ় হাসিতে পরিণত হয়েছে। সামনে তাকিয়ে দেখে আইরাত এখনো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। টাস্কি খেয়েছে নাকি। এবার আব্রাহাম জোরে কিছুটা কাশি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আর আইরাতেরও যেন এবার হুশ আসে। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলে৷ সামনে ঘুড়ে চোখের পাতা মিটমিট করে দ্রুত । ইচ্ছে করছে নিজের চুল গুলো নিজেই টেনে ছিড়ুক। লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছে নাকি সে। আইরাত হাত দিয়ে নিজেই নিজের মাথায় গাট্টা মারলো। আইরাত মাথা তুলে অবনির দিকে তাকায়। দেখে যে অবনি তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু জোড়া নাচাচ্ছে।

অবনি;; কি কি, এভাবে তাকিয়ে ছিলি কেন বল? খেলি তো ঝটকা!

আইরাত;; তোর মাথা। আমি আসলে, আমি

অবনি;; হ্যাঁ হ্যাঁ কি বল!

আইরাত;; ধুর কিছুই না, যা তো গিয়ে কাজ কর।

আইরাত অবনিকে উলটো ঝাড়ি দিয়ে হাতে একটা জুসের ট্রে নিয়ে সেখান থেকে এসে পরে। অবনি তো হেসে কুটি কুটি হচ্ছে। তবে আইরাত যখন থেকে আব্রাহাম কে দেখেছে তখন থেকেই তার কেমন যেন খটকা লাগছে। মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছে সে লোকটিকে কিন্তু ঠিক ভাবে খেয়াল করতে পারছে না।
আইরাত কাজ তো করছে কিন্তু মন তার কাজে নেয়। আর এইদিকে আব্রাহাম কোন না কোন ভাবে আইরাত কে দেখেই যাচ্ছে। আব্রাহাম বুঝতে পেরেছে যে আইরাত হয়তো তাকে নিয়ে কিছুটা সন্দেহের মাঝে হয়েছে। তাই তো আইরাতের এই চিন্তা মাখা মুখ টা নিতান্তই আব্রাহাম দেখে বেশ মজা পাচ্ছে। হাতের সব কাজ শেষ করে আইরাত একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলো। তখনই অবনি আসে।

অবনি;; আইরু বেবি হয়েছে কি তোর বল তো। সেই কখন থেকে দেখছি যে এভাবে মুখ লটকিয়ে আছিস। কি হয়েছে?

আইরাত;; আমার না কেমন যেন লাগছে।

অবনি;; কেমন?

আইরাত;; এই যে আব্রাহাম চৌধুরী আছে না..!

অবনি;; হুমম

আইরাত;; আমি সত্যি বলতে উনাকে এর আগে দেখি নি। কিন্তু তবুও কেন জানি তাকে দেখে মনে হচ্ছে যে আমি কোথায় যেন তাকে দেখেছি (কপাল কুচকে)

অবনি;; আরে শোন দেশে এমন কেউ নেই যে উনাকে চেনে না। উনার অনেক নাম দাম বুঝলি সো হয়তো দেখেছিস কোন না কোন ভাবে কিন্তু খেয়াল নেই।

আইরাত;; হুমম হয়তো।

অবনি;; আচ্ছা শোন আমাকে মেনেজার ডাকছেন আমি যাই।

আইরাত;; হুমম।

অবনি সেখান থেকে চলে যায়। কিন্তু সেই একই সেন্দেহ যেন আইরাতের মনে রয়েই যায়। আব্রাহাম দূর থেকে হলেও আইরাত কে দেখছে বাকা চোখে। তখন আরেক জন ছেলে এসে আইরাতকে বলে যেন ড্রিং নিয়ে যায় তাদের কাছে। আইরাত কিছু বলে না শুধু মাথায় নাড়ায়। হাতে ড্রিং এর গ্লাস গুলো নিয়ে আইরাত ভেতরে যায়। গিয়ে দেখে সেখানে আব্রাহাম নেই। আইরাত কিছুটা দম ফেলে। গ্লাস গুলো হাত থেকে টেবিলের ওপর রেখে আইরাত যেই না পেছন ঘুড়ে চলে আসতে নিবে তখনই ফট করে আব্রাহাম তার সামনে এসে পরে। আইরাত এতে বেশ চমকে যায়, সাথে খানিক পরে যেতে ধরে। আব্রাহাম এক মূহুর্ত দেরি না করে খপ করে আইরাতের কোমর টেনে ধরে। আর তার আরেকটা হাত আব্রাহাম নিজের হাতের ভাজে নিয়ে নেয়। আকষ্মিক এমন কান্ডে আইরাতের চোখ গুলো রসগোল্লার মতো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। আইরাত তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম তার কোমরে হাত দিয়ে রেখেছে। মাথা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তো আছেই। আব্রাহামের এমন চাহনি আইরাতকে বেশ অস্বস্তি তে ফেলছে। আইরাত শুকনো কিছু ঢোক গিলে। আর তখনই আইরাতের ডাক পরে বাইরে তাকে খুজছে অনেক কাজ। সে ফট করে আব্রাহামের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে আসে। মাথা নিচু করে দ্রুত গতিতে চলে আসে। আব্রাহাম এক মনে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত চলে গেলে আব্রাহাম ড্রিং এর গ্লাস তুলে তাতে চুমুক দেয়। আইরাত অনেক ঘামছে। বাইরে আসতেই দেখে দিয়া আর তার জন্যই এতো ডাকাডাকি। দিয়া আইরাতকে দেখেই দ্রুত চলে যায়।

দিয়া;; এই কোথায় থাকিস তুই, এতো বার যে ফোন দিলাম..!

আইরাত;; আরে কাজ অনেক ছিলো রে ধরতে পারি নি সরি।

দিয়া;; আচ্ছা উনি কি এসেছেন রে?

আইরাত;; কে?

দিয়া;; আরে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী।

আইরাত;; হ্যাঁ (বিরক্তি নিয়ে)

দিয়া;; ধুর আগে কেন বলিস নি আল্লাহ আমি উনাকে দেখবো।

দিয়া দ্রুত ভেতরের দিক যেতে ধরে আর আইরাত তার হাত টেনে ধরে।

আইরাত;; এই থাম। এই তোরা কি রে বার বার দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিস একদম।

দিয়া;; আমার জন্ম জন্মাতরের ক্রাশ।

আইরাত;; কিন্তু আমার ভালো ঠেকছে না।

দিয়া;; মানে?

আইরাত;; দেখ আমি উনাকে এর আগে কখনোই দেখি নি কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে যে আমি উনাকে কোথাও দেখেছি।

দিয়া;; কবে দেখেছিলি?

আইরাত;; তোকে বললাম না যে সেইদিন বারে একটু আমার প্রব্লেম হয়েছিলো..!

দিয়া;; হ্যাঁ

আইরাত;; সেইদিনই, আমি লোকটার চেহারা দেখি নি। তবে আজ কেন যেন আব্রাহাম চৌধুরী কে চেনা চেনা লাগছে।

দিয়া;; ওয়েট..

আইরাত;; কি?

দিয়া;; তুই জানিস ওই বার টা কার?

আইরাত;; কার?

দিয়া;; আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা,, কিইইইইইই?

দিয়া;; জ্বি

আইরাত;; দাড়া দাড়া মানে…

দিয়া;; মানে হয়তো সেইদিন তুই উনাকেই দেখিছিস। সেইদিন বডি দেখেছিস আর আজ ফেইস।

এই কথা বলেই দিয়া খিলখিল করে হাসতে লাগলো। আর এদিকে আইরাত একটা ছোট খাটো শক খেলো। তার মাথায় এখন শুধু একটা কথায় ঘুড়ছে যে তাহলে সেইদিন যে তাকে একরাতের বউ হবার অফার করেছিলো সে আর কেউ না এই আব্রাহাম চৌধুরী ছিলো। আর একটু আগে যে পরে যাওয়া থেকে বাচিয়েছিলো সে ওই আব্রাহামই ছিলো। এটা ভাবতেই আইরাতের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আইরাত তার মুখটা বাংলার পাচ বানিয়ে রেখে দিয়েছে আর তার সামনে দিয়া হাসছে। এটা যেন আগুনে ঘি ঢালার সমান। আইরাত দিয়ার চুল টেনে ধরলো। দিয়া হাসা বাদ দিয়ে চিল্লাচ্ছে এখন। অবনি কাজ করে এদিকেই আসছিলো। এসেই দেখে আইরাত দিয়ার চুল টানছে। অবনি দ্রুত গিয়ে আইরাতকে দিয়ার কাছ থেকে সরিয়ে আনে।

অবনি;; তোরা বড়ো করে হবি?

আইরাত;; আমি মরি আমার জ্বালায় আর ও হাসছে।

দিয়া;; তিনঘন্টা লাগিয়ে রেডি হয়ে এসেছিলান সব একদম জলে গেলো 😑।

আইরাত;; আয় সমুদ্র বানিয়ে দিচ্ছি।

অবনি;; এই না অনেক হয়েছে।

দিয়া;; এই তোর মাইর খাইয়া ক্ষিদা লাইগা গেছে। খাইতে দে।

আইরাত;; আনছি। খাই খাই কোম্পানি।

আইরাত সব চিন্তা মাথায় নিয়েই কাজ করতে লাগলো। আর এদিকে অবনি আর দিয়া গল্প করছে। বেশ সময় পর আইরাত দিয়ার জন্য খাবার এনে দিলো। আর তখনই মেনেজার আইরাতকে ডাক দিলো।

লতিফ;; আইরাত..!

আইরাত;; জ্বি,

লতিফ;; তোমার কাজ উনাদের অনেক ভালো লেগেছে।

আইরাত;; জ্বি।

লতিফ;; এবার যাও তাদের জন্য আরো কিছু নিয়ে ভেতরে যাও।

আইরাত;; আচ্ছা।

এই বলেই মেনেজার লতিফ চলে আসেন। আর আইরাত টেবিলের কাছে গিয়ে ট্রে তে করে কিছু লাইট খাবার নিয়ে যায়। আইরাত ট্রে তে খাবার নিচ্ছিলো তখনই দিয়া আসে।

দিয়া;; কিরে ওই লেট লতিফ কি বলে?

মেনেজার কিছুটা উল্টো স্বভাবের তো তাই সবাই তার নামের আগে লেট ব্যাবহার কিরে। লেট লতিফ। তবে তার অগোচরে।

আইরাত;; আইরাত, তোমার কাজ উনাদের খুব পছন্দ হয়েছে। এবার কিছু খাবার নিয়ে ভেতরে যাও (বেংগ করে)

দিয়া;; হাহাহাহা, আচ্ছা যা তুই।

আইরাত বিরক্তি সহিত একটা ক্ষীণ দম ছেড়ে ভেতরে চলে যায়। ভেতরে যাবার সময় আইরাত এক নজর ওপরে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম সুইমিং পুলের এক পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আইরাত দেখেই চোখ নামিয়ে ফেলে। আব্রাহাম দেখে যে আইরাত এদিকেই আসছে। আব্রাহাম দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। আইরাত গিয়ে আস্তে করে ট্রে টা রেখে আবার দ্রুত ঘুরে চলে আসতে নেয়। কিন্তু আব্রাহাম আর তা হতে দিলো কোথায়। আইরাতকে পেছন থেকে ডাক দেয়।

আব্রাহাম;; হেই গার্ল..!

আইরাত যাচ্ছিলো কিন্তু পা গুলো থেমে যায় আব্রাহামের ডাকে। চোখ মুখ কুচকে ফেলে, হাত টা মুঠি বদ্ধ করে ফেলে। আইরাত উলটো হয়েই দাঁড়িয়ে আছে দেখে আব্রাহাম নিজেই এগিয়ে গিয়ে আইরাতের পেছনে দাঁড়ায়। আব্রাহাম খানিক ঝুকে আইরাতের কানের কাছে বলে ওঠে..

আব্রাহাম;; ট্রেন ধরতে যাবে নাকি সবসময় এতো তাড়াহুড়ায় থাকো কেন..?!

আইরাত এবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়। স্বাভাবিক হয়ে পেছন ঘুড়ে। ঘুড়েই দেখে আব্রাহাম তার বেশ কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাপার টা বুঝতে পেরে আইরাত নিজেই দূরে এসে দাঁড়ায়।

আইরাত;; জ্বি?

আব্রাহাম;; মেক ওয়ান গ্লাস ড্রিং ফর মি।

আইরাত;; আব.. জ্বি আসলে তার জন্যে বাকিরা আছে। এটা আমার কাজ না।

আব্রাহাম;; বাকিরা কে কোথায় আছে তা দেখার বিষয় আমার না। আমি তোমায় বলেছি আর তুমিই করবে।

আইরাত;; __________________

আব্রাহাম;; দেরির কাজ আমার পছন্দ না মোটেও। (অন্যদিকে তাকিয়ে)

আইরাত বুঝলো যে তার আর কোন উপায় নেই। তাই সে বাধ্য হয়েই আবার টেবিলের কাছে চলে যায়। গিয়ে কোন কথা না বলে দ্রুত ড্রিং বানাতে থাকে। আর আব্রাহাম তার দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে তার কাছে আসে। আইরাতের পাশেই দাঁড়িয়ে পরে। আইরাত তা খেয়াল করেও আবার কাজ করতে থাকে। আব্রাহাম আইরাতকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্কেন করে যাচ্ছে যার ফলে আইরাতের প্রায় ধুকপুকানি শুরু করে দিয়েছে। প্রায় ১০-১২ মিনিট পর ড্রিং বানানো শেষ হয়। আইরাত চোখ নিচু নামিয়েই আব্রাহামের উদ্দেশ্যে বলে।

আইরাত;; আপনার ড্রিং তৈরি।

ব্যাস এই টুকু কথা বলেই আইরাত দ্রুত এসে পরে। যেন এখান থেকে এসে পরলেই সে প্রাণে বাচে। একটা বারও সে আব্রাহামের দিকে ঘুড়ে তাকায় না। আব্রাহাম বেশ বুঝতে পারছে আইরাতের অবস্থা টা। আইরাত চলে গেলে কৌশল আব্রাহামের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। কৌশল একবার আইরাতের যাবার দিকে আরেক বার আব্রাহামের দিকে তাকাচ্ছে। তখনই আব্রাহাম বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; এই মেয়েটার পুরো বায়ো ডাটা আমার চাই। (আইরাতের দিকে তাকিয়ে থেকেই)

কৌশল;; দশ মিনিটেই পেয়ে যাবি।

আব্রাহাম;; হুম।

এই বলেই আইরাতের বানানো ড্রিং টা হাতে তুলে নিয়ে আব্রাহাম চলে যায়।
আর আইরাত বড়ো বড়ো দম ছেড়ে বাইরে এসে পরে। বাইরে এসেই আগে ঢকঢক করে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নেয়। অবনি আর দিয়া তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখছে..

আইরাত;; আমি আর ভেতরে যাচ্ছি না। এই অবনি ওদের কিছু লাগলে তুই প্লিজ ভেতরে যাইস। আমি আর নেই।

দিয়া;; হয়েছে কি?

আইরাত;; আমার খুব আনইজি লাগে। উনার সামনে গেলে আপনা আপনিই হ্রদপিন্ড উঠা নামা করতে থাকে।

এভাবেই রাত কেটে যায়। প্রায় বারো টা বাজছে। পার্টি শেষ। আব্রাহাম আর তার ফ্রেন্ড রা চলে যাচ্ছে। হোটেলের ওনারের সাথে আব্রাহাম কথা বলে। এরেঞ্জমেন্ট অনেক ভালো ছিলো সবই অনেক ভালো ছিলো। কথা বলছে সবাই কিন্তু এদিকে আব্রাহামের দুই নয়ন আইরাতকে হন্ন হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কেননা এখানে সবাই থাকলেও আইরাত নেই। আর আব্রাহাম বেকুল হয়ে খুজছে। সবাই যখন চলে যাবে। তখন আব্রাহাম শেষ বারের মতো হোটেলের ভেতরে তাকায়। দেখে যে একটা মেয়ে আইরাতকে কিছুটা টেনেই এদিকে আনছে। মানে অবনি আইরাতকে আনছে। আইরাতকে দেখেই আব্রাহামের চোখ গুলো যেন জুড়িয়ে যায়। অবশেষে বিদায় নিয়ে সবাই চলে যায়। হোটেলের সব স্টাফ রা দাঁড়িয়ে আছে। আর তাদের মাঝে আইরাতও। বন্ধুদের কাছ থেকেও আব্রাহাম বিদায় নিয়ে নেয়। সে গিয়ে গাড়িতে উঠে পরে। তবে গাড়ি টা কিছুটা ঘুড়িয়ে আব্রাহাম ব্রেক করে আইরাতের সামনে থামে। আইরাত দাঁড়িয়ে ছিলো হুট করেই নিজের সামনে গাড়ির এভাবে ব্রেক কষতে দেখে আইরাত ভয় পেয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। কপাল কুচকে সামনে তাকায়। আব্রাহাম গাড়ির উইন্ডো টা খুলে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত সামনে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম। আব্রাহাম তার চোখে পরে থাকা গ্লাস টা কিছুটা নিচে নামিয়ে আইরাতের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; মিস আইরাত..! আই হোপ আমাদের খুব তাড়াতাড়িই আবারও দেখা হবে।

নিজের কথা শেষ হতেই গাড়ি সাই করে টান দিয়ে আব্রাহাম এসে পরে। আর আইরাত নিজের নাথা চুলকাচ্ছে। কিন্তু পরক্ষণেই আইরাতের মনে পরে যে আব্রাহাম তার নাম নিয়েছে। সে আইরাতের নাম কীভাবে জানলো। আইরাত তার চোখ গুলো সরু করে সোজা অবনির দিকে তাকায়। অবনি তো ভেবাচেকা খেয়ে যায় যে আইরাত তার দিকে তাকিয়ে আছে কেন। দিয়ার মতো তাকেও চুল টানা দিবে না তো। আইরাতের নজর দেখে অবনি তার দুইহাত নিজের মাথায় চেপে ধরে কাদো কাদো ফেইস বানিয়ে বলে…

অবনি;; দেখ বইন আমার চুল গুলা নষ্ট করিস না।

আইরাত;; নষ্ট করবো না যদি সত্যি বলিস।

অবনি;; কি?

আইরাত;; উনি আমার নাম কীভাবে জানলেন?

অবনি;; আরে তা আমি কি করে জানবো?

আইরাত;; তাহলে তাকে আমার নাম কে বললো?

অবনি;; আরে যখন তোকে ডাকা হচ্ছিলো হয়তো তখন শুনেছে। এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে।

আইরাত;; হ্যাঁ তাও ঠিক (কিছুটা ভেবে)

অবনি;; হয়েছে মেরি মা। অনেক রাত হয়েছে পার্টিও শেষ। এবার তুই জলদি বাড়ি যা। নয়তো তোর যে মার্কামারা চাচি না সে তোর কিমা বানিয়ে দিবে।

আইরাত;; আসলেই।

আইরাত অবনির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে পরে। অনেক আগেই দিয়া সবাইকে বলে বাড়ি ফিরে গিয়েছে। আইরাত হোটেল থেকে বাড়ি ফেরার জন্য রওনা দেয়। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর বাড়ি এসেও পরে। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে এসেই দেখে হলরুমে তার চাচি বসে আছে। আইরাত ভয় পেয়ে যায় তার চাচি কে দেখে। সে ভেবেছিলো তার চাচি তাকে বকবে কিন্তু আইরাতের ধারণা ভুল প্রমাণ করে আইরাতের চাচি বলে ওঠে…

কলি;; সেখানে অনেক কাজ করেছিস, হয়তো খাওয়ার সময় টুকুও পাস নি। এই রইলো খাবার ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিস।

এই কথা বলেই আইরাতের চাচি উঠে চলে যায়। আইরাত অবাকই হয়। এই প্রথম তার চাচি তার সাথে ভালো ভাবে কথা বললো।

আইরাত ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে নেয়।


এভাবেই কেটে যায় মাঝখানে পুরো একদিন। আইরাত আজ ভার্সিটি গিয়েছে। দিনে তো কাজ করতে পারবে না। তাই তাকে রাতে কাজ টা করে দিতে হবে। দিয়া আর আইরাত একই ভার্সিটি তে আর দিয়ার চাচ্চু যেহেতু হোটেলের ওনার তাই তেমন কোন সমস্যা তেও আইরাতকে পরতে হয় না। এটা আইরাতের জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট।

.

আর অন্যদিকে আব্রাহাম তার অফিসে বসে বসে হাতে একটা গ্লোব ঘোড়াচ্ছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাশেদ অর্থাৎ যে আব্রাহামের সাথে কাজ করে। গতো ছয় বছর যাবৎ এই রাশেদ আব্রাহামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে৷ আর অফিসের মেনেজার দাঁড়িয়ে আছে। মেনেজার দরদর করে ঘেমে যাচ্ছে। কারণ অফিসের ক্যামেরার ফুটেজে বেশ কিছুদিন যাবৎ প্রব্লেম হচ্ছে। আজ আব্রাহাম সেগুলো চেক করতে বসেছে আর সব দেখে আব্রাহামের মাথা গরম। তবে আব্রাহামের মাঝে তেমন কোন হাব ভাব দেখা যাচ্ছে না। আর আব্রাহামের এই অতি শান্ত মোনভাব টাই যেন ওদের গায়ে কাটা দিয়ে দিচ্ছে।

আব্রাহাম;; মেনেজার

মেনেজার;; জ জ জ্বি স্যার

আব্রাহাম;; কবে থেকে প্রব্লেম হচ্ছে?

মেনেজার;; স্যার গত দুই দিন ধরে।

আব্রাহাম চোখ ঘুড়িয়ে রাশেদের দিকে তাকায়। এই যেন রাশেদের যায় যায় অবস্থা।

রাশেদ;; বিশ্বাস করুন স্যার, আমি কালই জানতে পেরেছি আর সাথে সাথেই আপনাকে বলেছি।

আব্রাহাম;; ব্যাস আমি কারো কৈফিয়ত শুনতে চাই না। ফুটেজ গুলো আমাকে দাও।

রাশেদ দ্রুত সব ক্যামেরার ফুটেজ গুলো আব্রাহামের সামনে রাখে। আব্রাহাম সেগুলো এক এক করে চেক করতে থাকলো। প্রথম দুট ফুটেজ কোন রকমে দেখা গেলেও তিন নাম্বার ফুটেজ থেকে শুরু করে একদম সাত নাম্বার ফুটেজ পর্যন্ত সব ঝাপসা। তবে আব্রাহাম ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতেই খেয়াল করে যে তিন নাম্বার ফুটেজের ঠিক ২ঃ৩৫ মিনিটে একটা লোক কালো কাপড়ে অফিসের ভেতরে যাচ্ছে। তাকে আরো কোন ফুটেজে দেখা যায় নি কারণ সব ঝাপসা তবে তাকেই আবার ঠিক ছয় নাম্বার ফুটেজে দেখা গেছে। আর তখন যে অফিস থেকে বের হচ্ছে। আব্রাহাম আরো একটু খেয়াল করতেই দেখে এই ফুটেজ গুলো অফিসের পাচ নাম্বার ফ্লোরের। ব্যাস আব্রাহামের যা বুঝার সে বুঝে গেলো।

আব্রাহাম;; রাশেদ..!

রাশেদ;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম;; অফিসের ভেতর থেকে কারো বাইরে যাওয়া বা বাইরে থেকে কারো ভেতরে আসা টোটালি অফ করে দেও এখনই।

রাশেদ;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম;; মেনেজার

মেনেজার;; জ্বি স্যার

আব্রাহাম;; কেউ যেন কিছু ভুল করেও টের না পায়। সব যেন নরমাল লাগে ওকে।

মেনেজার;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম;; যেতে পারেন।

মেনেজার আর রাশেদ চলে গেলো। আব্রাহাম এক হাত তার মুখে ঠেকিয়ে সরু দৃষ্টিতে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে। অতঃপর আব্রাহাম তার গান টাতে সব বুলেট লোড করে জেকেটের পাশে নিয়ে নেয়।

অন্যদিকে আব্রাহামের বাড়িতে তার দাদি আছে। উনি বসে বসে টুকি টাকি কাজ করছেন। তখনই বাড়ির ভেতরে এক প্রমার দৌড়েই রহিত আসে আব্রাহামের বন্ধু। সে এসেই দেখে দাদি বসে আছে সোফাতে।
রহিত দ্রুত দাদির কাছে চলে যায়।

রহিত;; দাদি দাদি দাদি

ইলা;; আরে হয়েছে কি আস্তে আয়।

রহিত;; আস্তে আসার টাইম নেই দাদি। আপনি আগে বলুন আব্রাহাম কোথায়?

ইলা;; আব্রাহাম তো অফিসে। কিন্তু কেন হয়েছে কি?

রহিত;; ও অফিসে চলে গেছে?

ইলা;; হ্যাঁ

রহিত;; ওহ গড। দাদি হাতে একদম সময় নেয়। আমি যাই।

ইলা;; আরে আস্তে যা। আল্লহ হয়েছে এক একটা বাদরের হাড্ডি।

রহিত দৌড়ে আবার আব্রাহামের অফিসের দিকে রওনা দেয়।

আর ওদিকে আব্রাহাম অফিসের সোজা পাচ নাম্বার ফ্লোরে চলে যায়। আব্রাহাম যেদিক দিয়ে যাচ্ছে সবাই যেন সেদিকেই তাকিয়ে আছে। সবাই বুঝতে পারছে না যে আব্রাহাম এতো টা সিরিয়াস কেন আজ। সবাই আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু আব্রাহাম তাদের দিকে কিছুটা রাগি লুক দিতেই সবাই আবার আগের মতো কাজে লেগে পরে। আব্রাহাম লিফটে করে এক সময় পাচ নাম্বার ফ্লোরে চলে যায়। আব্রাহামের গেতেই সবাই দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম সবার দিকে এক নজর দেয়। অফিসে একটা সিস্টেম চালু করা আছে আর তা হচ্ছে অফিসের সবার কাছেই একটা করে আইডি কার্ড আছে। আর এখানে একটা কম্পিউটার আছে। তো যেই অফিসে আসুক না কেন সেই কম্পিউটারের সামনে নিজের আইডি কার্ড সো করতেই সবার প্রেজেন্টেশন আপনা আপনিই উঠে পরে। আব্রাহাম সবার দিকে তাকিয়ে বলে।

আব্রাহাম;; এই ফ্লোরে মোট কতোজন কর্মি কাজ করে?

আব্রাহামের প্রশ্নে একজন বলে ওঠে…

রাজু (কর্মি);; স্যার মোট ত্রিশ জন।

আব্রাহাম;; হুমম।

আব্রাহাম এবার অফিসের সেই এটেন্ডেন্স কম্পিউটারের দিকে যায়। গিয়ে সেটার পাসওয়ার্ড দিয়ে কম্পিউটার টা অন করে। আজকের সবার এটেন্ডেন্স চেক করে দেখে যে যেখানে মানুষ ৩০ জন সেখানে এটেন্ডেন্স ২৮ জন। দুইজন নেই। আব্রাহাম কপাল কুচকে তাকায়। তার সন্দেহ টা যেন বেশ বেড়ে যায়। তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে যায়। আব্রাহাম আরো চেক করে দেখে যে দুইজন নেই আর তাদের নাম সাগর & তাজিম।

আব্রাহাম;; এই তাজিম কে আর আসে নি কেন?

রাজু;; স্যার উনি অসুস্থ তাই কিছুদিন ছুটিতে আছেন।

আব্রাহাম;; আর এই সাগর?

রাজু;; স্যার উনি তো এসেছেন। নিজের কেবিনেই।

আব্রাহাম তার পাশে তাকিয়ে দেখে ওপরে লেখা সাগর শেখ অর্থাৎ এটাই সাগরের কেবিন।

আব্রাহাম;; সবাই যার যার কাজে যান।

সবাই যেন এতোক্ষন একটা পিপড়ের ঝাকের মতো দলা পাকিয়ে ছিলো। আব্রাহামের কথা শুনতেই সবাই ঝাক টা ভেংে যার যার কাজে চলে গেলো। আব্রাহাম কম্পিউটার টা লক করে সেই সাগরের কেবিনে চলে যায়। আর যা এক্সপেক্ট করেছিলো তাই হয়। সাগর তার কেবিনে নেই। আব্রাহাম দেখে এসে পরতে নেয়। কিন্তু একটা কন্ঠ শুনেই আব্রাহাম থেমে যায়।

সাগর;; হ্যাঁ হ্যাঁ হয়ে গেছে। এই অফিসের সব জায়গার পায়নি তবে এই ফ্লোরের সব ক্যামেরা তে আমি গন্ডগোল পাকিয়ে দিয়েছে। এই ফ্লোরেই পেয়েছি কারণ আমার কেবিন এখানে আর এখানেই আমি বেশি সময় থাকি। অন্য গুলোও করে নেবো। চিন্তা করিস না। টাকা গুলো রেডি রাখিস। আর সব গোপন তথ্যগুলো পেয়ে যাবি।

আব্রাহাম;; হেল্প লাগলে আমায় বলতে পারিস।

সাগর এতোক্ষণ ফোনে কথা বলছিলো তবে পেছন থেকে কারো ভারী গলার আওয়াজ পেয়েই সে তার পেছন ফিরে তাকায়। তাকিয়েই সাগরের কলিজার পানি শুকিয়ে যায়। কেননা পেছনে আব্রাহাম তার দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। সাগর ভাবতেও পারে নি যে সে এভাবে হাত নাতে ধরা পরে যাবে।

সাগরের চোখ গুলো বেরিয়ে আসার উপক্রম। তার হাত থেকে ফোন টা নিচে পরে যায়। সাগরের এমন ভয়ার্ত চেহারা দেখে আব্রহাম হেসে দিয়ে তার কাছে আসে।

আব্রাহাম;; কতো টাকা লাগবে। এক লাক্ষ, দু লাক্ষ, তিন লাক্ষ, এক কোটি, পাচ কোটি। কতো আমাকে বলতি তোর চাওয়ার থেকে দ্বিগুণ দিতাম। কিন্তু না উলটো পথ বেছেছিস তুই।

সাগর;; স স স্যার আ আ আসলে আ আমি, স্যার আমাকে মা মাফ করে দিন স্যার।

আব্রাহাম সাগরের কাধে নিজের হাত রাখে। সাগর চমকে যায়। আব্রাহাম সাগরের চারিপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; প্রথম দুটো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ মোটামুটি ক্লিয়ার। কিন্তু তিন নাম্বার থেকে প্রব্লেম শুরু হয়। আর তিন নাম্বারের ফুটেজে দূর্ভাগ্যবশত তোকে একটা কালো কাপড়ে দেখা যায়। আর তারপর কোন ফুটেজই নেই। তিন নাম্বারে তোকে অফিসের এই পাচ নাম্বার ফ্লোরে আসতে দেখা গিয়েছে। আর সাত নাম্বারে তোকে দেখা যায়। তখন তুই এখান থেকে বের হচ্ছিস। আর তার পরে তো কোন ফুটেজই নেই। সেখানে পাচ নাম্বার ফ্লোর টা দেখা গিয়েছে। সোজা এখানে চলে আসি। সবার এটেন্ডেন্স চেক করি দেখি দুইজন নেই। একজন অসুস্থ আর একজন চোর & বিশ্বাসঘাতক, তুই৷ আর যখন এখানে আসলাম তখন তো তুই নিজেই সব ক্লিয়ার করে দিয়েছিস। এভাবে তোকে ধরলাম।

সাগর;; স্যার মাফ করে দিন।

আব্রাহাম;; জানিস তো বাঘের গুহায় ঢুকলে দুটো জিনিস সবসময় মাথায় রাখতে হয়। ১. হয়তো নিজে বাঘ কে মেরে সেই বাঘের গুহা থেকে বের হতে হবে।
২. নয়তো নিজেকেই মরে যেতে হবে সেই বাঘের হাতে। নিজে মরো নয়তো মেরে ফেলো। মারতে তুই পারিস নি তাই এখন নিজে মর।

সাগর;; স্যার মাফ করে দিন। আর এমন হবে না। স্যার প্লিজ এবারের মতো মাফ করুন। স্যার ক্ষমা করুন।

সাগর আব্রাহামের ভয়ে এগুলোই প্রলাপ বকছিলো। আর আব্রাহাম সাগরের পাশে ঘুরছিলো। এক সময় আব্রাহামের চোখ গুলো রক্তচক্ষু হয়ে যায়। আর আব্রাহাম সাগরের পেছনে দাঁড়িয়ে তার দিকে রাগি ভাবে তাকায়। সাগরের কথা বলার মাঝেই আব্রাহাম আকষ্মিক ভাবে সাগরের ঘাড় ধরে ঠিক তার উল্টো দিকে জোরে ঘুড়িয়ে দেয়। ঘাড় মটকে দিয়েছে সাগরের। সাগর বেচারা টু শব্দ করার সময় টুকু পায় না। আর সেটা এতোই জোরে লেগেছে যে মূহুর্তেই সাগরের নাক, কান দিয়ে রক্ত বের হয়ে এসেছে। সাগরের নিথর দেহ টা নিচে গড়িয়ে পরে।

আব্রাহাম;; ‘নিঃশ্বব্দ’ জিনিস টা খুব ভয়ংকর হয় আর নিঃশ্বব্দে করা কাজও।

এই বলেই আব্রাহাম কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। বের হবার সময় সবার উদ্দেশ্যে বলে যায়।

আব্রাহাম;; কেউ সাগরের কেবিনে যাবে না।

কোন দিকে না তাকিয়ে আব্রাহাম সোজা চলে যায়। আর রাশদ কে ফোন দেয়।

আব্রাহাম;; রাশেদ..!

রাশেদ;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম;; Come to the 5th floor and take him away…

রাশেদ;; জ্বি স্যার।


আব্রাহাম সেখান থেকে গিয়ে সোজা নিজের কেবিনে যায়। আর তখন রহিত হাপিয়ে হাপিয়ে আব্রাহামের কাছে আসে। আব্রাহাম তাকে দেখে বলে ওঠে।

আব্রাহাম;; কিরে পেছনে কি পাগল কুকুর পরেছে নাকি?!

রহিত;; না তার থেকেও বেশি।

আব্রাহাম;; আগে পানি খা।

আব্রাহাম রহিতের দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দেয়। রহিত কিছুটা পানি খেয়ে শান্ত হয়।

আব্রাহাম;; এবার কি হয়েছে বল।

রহিত;; আরুশির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। কিছু কর

আব্রাহাম;; মানে তুই আরুশির সাথে কথা বলিস নি।

রহিত;; বলেছি। আরুশি ভালোবাসে আমায় কিন্তু ওর ওই খাড়ুস মার্কা বাপ মানে না।

আব্রাহাম;; ওর বাবার সাথে কথা বলিস নি তুই?

রহিত;; একবার না দুইবার না তিন তিন বার বলেছি। মানে না।

আব্রাহাম;; বুঝি না সব লাভ স্টোরিতে বাপেরা কেন জানে দুশমান হয়ে দাঁড়ায়।

রহিত;; কিছু কর ভাই আজ ওর বিয়ে।

আব্রাহাম;; আরে যাব মিয়া-বিবি রাজি তো কেয়া কারেগা কাজি। বিয়ে হলে আরুশির তোর সাথেই হবে। মেয়ে ভালোবাসে ছেলে ভালোবাসে বাপ মানবে না কেন। কি কমতি আছে তোর। বিয়ে হবে আর তোর সাথেই হবে। চিন্তা করিস না আমি আছি। আর চল। অয়ন কে ফোন কর দ্রুত।

আসলে রহিত আরুশি নামে মেয়ে কে ভালোবাসে। মেয়েও বাসে তবে বাপ রাজি না। আর আজ জোর করে আরুশির বিয়ে দিচ্ছে অন্য ছেলের সাথে। রহিত আর কোন উপায় না পেয়ে আব্রাহামের কাছে এসেছে। আর আব্রাহাম থাকতে তো এমন কিছু হবে না।
রহিত অয়ন কে ফোন দেয়। তার বিশ মিনিট পর অয়ন এসে পরে। আব্রাহাম রাশেদ কে বলে অফিস থেকে বের হয়ে পরে। অয়ন, রহিত আর আব্রাহাম অফিস থেকে বের হয়ে আব্রাহামের গেস্ট হাউজ “” গ্রিনসিটি”” তে চলে যায়। তবে এবার হয় আরেক বড়ো ঝামেলা তাও আবার আইরাতকে নিয়ে।




চলবে~

.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here