এক_শহর_প্রেম💓 লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_১৪

0
702

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
মারসাদ নিজেকে শান্ত করে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
–শফিক ভাইকে জানানো কী উচিত হবে? তাকে এসবে ইনভলভ করতে মন সায় দেয় না। তার মুভঅন করা উচিত। কিন্তু এসবে সে আদোও মুভঅন করতে পারবে কী?

আহনাফ মারসাদের পয়েন্টকে সমর্থন করলো না।
–শফিক ভাইয়ের প্রফেশনাল দিকটা দেখ। আপিলিকে সে পছন্দ করতো বা করে এটা তার পারসেনাল ইস্যু। উনার প্রফেশনাল স্ট্যাবেলিটি আমাদের কাজে লাগবে।

মারসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–দুই মাস সময় আছে। আগে রাদিব দেশে আসার প্রস্তুতি নিক। আমার আপিলির সাথে যা করেছে তার শাস্তি আমি চাইলেই ওর বোনের হাসবেন্ডকে বলে ওর বোনের সাথে করাতে পারি কিন্তু ওর বোনটাই একমাত্র আমার বোনের দুঃখ বুঝতো। তাই নিরপরাধ কেউ সাফার করুক চাই না।

………………

চার দিন পর আদিরা মারসাদের জন্য খাবার বাটিতে করে নিয়ে এসেছে। সে পটল, রসুনের ভর্তা ও ঢেঁড়শ ভাজি ও ডিম দিয়ে চিচিঙ্গা ভাজি করেছে। ভর্তা গুলোতে মরিচ দিয়েছে ইচ্ছে মতো। ভর্তার আইটেম গুলো আদিরা নিজে ট্রাই করে দেখেছে ঝাল বেশি। আদিরা নিজে নিজেই বলে,

–আরও খাবেন আমার হাতের রান্না? ইচ্ছামত খান। হুহ্।

টিউশন শেষে আদিরা মারসাদের হাতে বাটিটা দেয়। আদিরা কিছু বলে না দেওয়ার সময়। মারসাদ খুশি হয়ে ধন্যবাদ দেয়। হোস্টেলে গিয়ে খাবারগুলো টেস্ট করে রাহিন, মৃদুল, রবিনের অবস্থা ঝালে নাজেহাল। আহনাফ ও মারসাদ দম মেরে বসে আছে। মৃদুল হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

–আরও জ্বা*লা ওই মেয়েরে! ওই আদিরা তোকে সহ আমাদের মুখে আ*গুন দিয়ে দিবে। এই তোকে বলে দিচ্ছি, আদিরার পিছনে যাবি না। আল্লাহ্ গো! কী ঝাল!

রাহিন মৃদুলকে থা*প্পর দিয়ে বলে,
–আদিরা আপার কাছে আমি মাফ চামু মারসাদের হয়ে। ওর শোধ আমাদের উপর কেন ভাই!

মারসাদ গম্ভীর কন্ঠে বলল,
–তোদের খেতে বলি নি। এখন চুপ করে বসে থাক ঝাল কমে যাবে।

রবিন এতক্ষণ চুপই ছিল। এক প্রকার দম ধরে ছিল। এখন তার ঝাল কমেছে। এবার সে বলল,
–আদিরা হয়তো ঝাল অনেক পছন্দ করে। মেয়েরাতো এমনিতেই ঝালখোর হয়। আমাদেরই ভুল যে ভর্তা বেশি করে মেখেছিলাম। আর পটলের ভর্তাটা ঝাল হলেও খেতে ভালো লাগছিল।

মারসাদ রবিনের শেষোক্ত কথায় ভ্রুঁ কুঁচকালো অতঃপর সন্দিহান কন্ঠে সুধালো,

–পটল? ওটা পটলের ভর্তা ছিল? যেটা আমি বেশি করে নিয়েছি?

ওরা চারজন মারসাদের কথা শুনে ভ্যাবলার মতো মাথা নাড়ালো। মারসাদ চোখ মুখ কুঁচকে বলল,

–আমি ওকে মানা করেছিলাম। তাও সে পটল দিয়েছে।

আহনাফ পানি দিয়ে কুলি করে একটু দম নিয়ে বলল,
–আমরা না বললে তো তুই বুঝতিও না। কারণ তুই পটল লাস্ট কবে খেয়েছিস তোর নিজেরই হয়তো মনে নেই। মেয়ের দম আছে বলতে হবে! নাহলে তোকে পটল খাইয়েই ছাড়লো!

মারসাদ হেসে উঠে। তার নিজের কাছেই মনে হচ্ছে আদিরা তার অনেক অভ্যাস ভবিষ্যতে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। মারসাদ হাত ধোয়ার জন্য উঠে তারপর হোস্টেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশপানে নজর রেখে স্বগোতক্তি করলো,

“মায়াবতী তার মায়ার জালে আমায় জড়িয়ে নিয়েছে যে রাগ হয় না তার দুষ্টুমিতে। এক বুক ভালোবাসার উপস্থিতি জানান দেয়। ভালোবাসি আমি তাকে। অজান্তেই হৃদকুটিরে সে নিজের জন্য ঘর বানিয়ে বসেছে।”

আচমকা আহনাফ এসে পেছোন থেকে মারসাদের কাঁধে হাত রেখে বলে,
–হলো তো সত্যি? তুই পারবিও না কিছু আমার থেকে লুকাতে। হাহ্।

দুই বেষ্টফ্রেন্ড হেসে উঠে। দূর আকাশে দুটি তারা হঠাৎ জ্বলজ্বল করে উঠে।

____
আদিরা সকাল থেকে ফুরফুরে মেজাজে আছে। মাহিদের সাথেও খুব উৎফুল্লতার সাথে কথা বলছে। সকাল থেকে রিন্তির মন খারাপ কারণ পরীক্ষার রেজাল্ট তার খারাপ হয়েছে। রিন্তিকে হাসাতে আদিরা বলে,

–একটা ঘটনা শুনবি? বেশি হাসবি না কিন্তু হ্যাঁ?

রিন্তি সম্মতিসূচক ইঙ্গিত করলে আদিরা বলে,
–আমার পড়ালেখা নিয়ে আমার মায়ে আগ্রহ বেশি ছোটো থেকে। মা নবম শ্রেণীর পর আর পড়তে পারেন নি বিয়ে হয়ে যাওয়াতে তাই তিনি আমাকে পড়াতে চান। আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি, তখন গণিতে আমি প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় ১০০ তে ২৯ পেয়েছিলাম। আমি মাকে জানাই নি তখন রেজাল্টের কথা। এর এক সপ্তাহ পর মায়ের সাথে রাস্তায় নাকি গনিতের স্যারের দেখা হয়েছিল। তখন স্যার আমার রেজাল্টটা মাকে বলে দিয়েছিল। ওই গণিতের স্যার আমার মায়েরও স্যার ছিলেন। এরপর বাড়িতে এসে আমার মা তো আমাকে চিৎকার করে ডাকে তারপর গণিতের নাম্বারের কথা জিজ্ঞেস করার পর আমি জবাব দেওয়ার আগেই সে ঝা*ড়ু নিয়ে আমাকে দৌঁড়ানি দিয়েছিল। এবাড়ি ওবাড়ি দৌঁড়ে আমি বাজারের কাছে ডেউয়া গাছটার কাছে লুকিয়েছিলাম। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বাড়িতে যেতেই সেদিন ভয় করতেছিল। পরে বাবার সাথে বাড়িতে ফিরেছিলাম। মা তখন চোখ গরম করে আমার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে ছিল। দুপুরের খাবারটাও খাইনি সেদিন জানো।

আদিরা বলার পর ওদের তিনজনের রিয়াকশন দেখতে তাকালো। দেখলো ওরা তিনজন হাসছে না বরং ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে। সাবিহা বলল,

–এটুকুই? আমার মা তো আমাকে বলেছিল বিয়ে দিয়ে দিবে ওটুকুন বয়সে। এসব কমন বিষয়। তাই হাসি পেলো না।

মাহি বলল,
–আমাকে আপিলি সবসময় সেভ করতো। আর আমি ফেল করি নি তবে প্লেস ছুটে গেলে ব-কা খেতে হতো।

আদিরা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বলল,
–রিন্তিকে হাসাতে বলেছিলাম কিন্তু রিন্তি তো সেই মুখ ভাড় করে বসে আছে।

আচমকা রিন্তি বলে,
–চল! কড়া বোম্বাই দিয়ে পানিপুরি খাই। সব ডিপ্রেশন বের হয়ে যাবে। আজ আমার তরফ থেকে ট্রিট। চল চল।

রিন্তি ওদের টেনে নিয়ে গেছে তারপর ঝাল ঝাল পানিপুরি খেয়ে চারজনেই নাকের জল, চোখের জল এক করছে। তাও ওরা খেয়েই চলেছে। মাহির ফর্সা মুখশ্রী পুরো লাল হয়ে গেছে। মাহি অর্ধেকে এসে আর খেতে পারছে না। মাহি একদম দম ধরে বসে আছে। আদিরারা নিজেদেরটা শেষ করে মাহির কাছে আসে। সাবিহা চোখ মুছতে মুছতে বলে,

–কীরে? তুই ঝাল খেতে পারিস না?

মাহি চুপ করে আছে। মুখ খুলছে না। রিন্তি আবারও একই প্রশ্ন করে মাহিকে আলতো ধা*ক্কা দিয়ে। মাহি এবার বলে,

–পরিমান মতো ঝাল খেতে পারি। আমি ও দাভাই পরিমানের বেশি ঝাল খেতেই পারি না। এজন্য আপিলি সবসময় ঝাল খাওয়ার কোনো চ্যালেঞ্জে জিতে যেতো।

আদিরার হঠাৎ টনক নড়ে। সে যে ভর্তার আইটেম গুলোতে বোম্বাই মরিচ দিয়েছে সাথে শুকনো মরিচও। আদিরার এবার অনুশোচনা হচ্ছে। আরেকটু কম ঝাল দিলেও পারতো। রিন্তিরা কথা বলে যাচ্ছে তাতে আদিরার মনোযোগ নেই। তার এখন খারাপ লাগছে নিজের কর্মের জন্য।

________

–আচ্ছা রাতপাখি? তোমার বন্ধু মারসাদ কী প্রেম-টেম করছে নাকি? ইদানীং কেমন চেঞ্জ দেখা যায় তার মধ্যে।

রাত্রি ফোনের অপরপাশের ব্যাক্তির কথা শুনে কিয়ৎক্ষণ ভাবলো। ভেবেও কোনো উত্তর না পেয়ে বলল,

–কই নাতো। মারসাদ কারও সাথে রিলেশনে নেই। কেনো তোমার মনে হলো?

–না ওই ফার্স্ট ইয়ারের একটা মেয়ের সাথে ঘনঘন দেখা যায়। আবার পোগ্রামে সামিরাকে ছাড়া ওই মেয়ের সাথে ডান্স করলো।

রাত্রি কথাটা শুনে হাসতে হাসতে বলল,
–আরেহ না। মেয়েটা মাহির ফ্রেন্ড। মারসাদ মেয়েটাকে সহজ-সরল দেখে ভাবলো সামিরার বদলে ওর সাথে ডান্স করবে। এক প্রকার র‍্যাগ বলতে পারো আরকি।

ফোনের অপরপাশের ব্যাক্তিটি সন্তুষ্ট হতে পারলো না। আবারও জিজ্ঞাসা করে,
–শুধু এটুকুই? তুমি শিউর কোনো রিলেশন নেই? হতেও পারে তুমি বাদে সবাই জানে।

রাত্রি হাসতে হাসতে বলল,
–তুমি বিশ্বাস করছো না আমাকে? ওয়ে আমি সুমি ও মৌমিকে জিজ্ঞাস করছি। তখন শুনে নিও।

রাত্রি ব্যালকনি থেকে রুমে গিয়ে সুমি ও মৌমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–এই মারসাদ নাকি আদিরার সাথে রিলেশনে আছে? তোরা জানিস কিছু?

সুমি ও মৌমি অবাক হয়। সুমি রাত্রির হাতে ফোন দেখে তার কাছে ব্যাপারটা খটকা লাগে। মৌমি কিছু বলতে নিচ্ছিলো তার আগেই সুমি হড়বড়িয়ে বলে,

–আরে না তো। ডান্স ওসব তো পোগ্রামের জন্য। মারসাদ কারও সাথে প্রেমের সম্পর্কে নেই। কেনো? হঠাৎ জানতে চাইলি? তুই তো সবই জানিস।

রাত্রি হাত নাড়িয়ে হেসে বলে,
–আরে না। এমনেই। বাদ দে।

এই বলে রাত্রি আবার ব্যালকনিতে চলে যায়। রাত্রি চলে গেলে মৌমি গিয়ে সুমিকে ধরে বলে,

–কী হলো? তুই কথাটা চেপে গেলি কেনো? আমরা তো ধারণা করছি যে মারসাদ আদিরাকে পছন্দ করে। তো রাত্রিকে বললি না কেনো?

সুমি মৌমির মাথায় ঠো*কা মে*রে বলে,
–আরে ব*লদি! আমরা যা ধারণা করছি তাতো রাত্রিরও ধারণা করার কথা। কিন্তু ও আমাদের সাথে থাকলেও ওর মন আমাদের সাথে থাকে না। ব্যাপারটা আমি অনেকদিন ধরে লক্ষ্য করছি। আর এখানে এসে জিজ্ঞেস করার সময়ও ওর হাতে ফোন ছিল। ফোনটা কিন্তু বিছানায় রাখে নি। আবার দেখলি চলে গেলো। তারমানে ফোনের অপরপাশে কেউ তো আছে যে মারসাদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে।

মৌমি হতবাক হয়ে বলল,
–কী সাংঘাতিক ভাবা যায়! মারসাদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে আমাদের সার্কেলের একজনকেই কাজে লাগাচ্ছে। কে হবে ওটা? আমাদের কাল সকালেই মারসাদকে আস্তে করে জানাতে হবে।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here