এক_শহর_প্রেম💓 লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_১৩

0
713

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৩
সন্ধ্যার পর বাড়িতে প্রবেশ করার পর মাহির কর্ণকুহরে ভেসে এলো রূঢ়ভাষী কারও কন্ঠস্বর।

–তোমাকে বলা হয়েছিল সন্ধ্যার আগে ফিরবে। এখন সাতটার বেশি বাজে। কোথায় ছিলে?

মাহি বিরক্ত হলো। জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো না। নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালে আবারও সেই রূঢ় কন্ঠস্বর।

–তুমি কী আমাকে ইগনোর করছো? কথার জবাব না দিয়ে বে*য়াদবের মতো চলে যাচ্ছ কেনো?

মাহি থামলো। তাচ্ছিল্যতা ফুটে উঠে চোখে-মুখে। ব্যাগটা সোফাতে ফেলে নিজেও সেখানে গা এলিয়ে বসে। তারপর ফোন স্ক্রোল করতে করতে বলল,

–নেও গেলাম না! কী কী বলবে বলো। বসে আছি।

মহিলাটি ক্রুদ্ধ হলেন। ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন,
–দিন দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছ। তোমার ওই বে*য়াদব ভাইয়ের সান্নিধ্যে আরও বিগড়ে যাচ্ছ। মায়ের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটাও ভুলে যাচ্ছ।

মাহি ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–উঁহু। আমি কারও থেকে কোনো স্বভাব এডপ্ট করছি না বা করি নি। আমি এমনই। পরিবেশ আমায় বদলে দিয়েছে যেমনটা তুমি নিজেকে ক্লেইম করো। আর তোমার কোনো কাজে যেমন কারও কাছে কৈফিয়ত দেও না তেমনি আমিও বাধ্য না। থাকো না তুমি তোমার ফ্রেন্ডস নিয়ে। আমিও বেশ আছি।

মিসেস মনিকা অপ্রস্তুত ও বিরক্ত হলেন। বিরক্তি নিয়ে বললেন,
–তোমার সন্ধ্যায় আমার সাথে আমার ফ্রেন্ডের মেয়ের বার্থডে পার্টিতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তুমি এলেই এখন। বিকেলে এসে তোমাকে ফেসিয়াল, প্যানিকিউর, ম্যানিকিউর করতে হতো। যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হও।

মাহি ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তারপর হাই তুলে বলল,
–আই এম টায়ার্ড এনাফ মম। আমি যাবো না।

মিসেস মনিকা সন্দেহের স্বরে বললেন,
–কী করেছ তুমি এতোক্ষণ?

মাহি মিসেস মনিকাকে রাগাতে বলল,
–ফ্রেন্ডের মেসে গিয়েছিলাম তারপর ইয়াম্মি অনেক ডিশ দিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। বাঙালি খাবার। অসম্ভব মজা।

মিসেস মনিকা নাক ছিঁটকালেন। কিছু বলতে উদ্দ্যত হলে মাহি ব্যাগ নিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। মিসেস মনিকা মিস্টার আরসাদের স্টাডি রুমে গিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললেন,

–তোমার ছেলের কারণে আমার মেয়েটা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। ছেলেকে তো সব স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছ।

মিস্টার আরসাদ খুব মনোযোগ দিয়ে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের একটা নোবেল পড়ছেন। নোবেলের ভিতর উনি পুরো আসক্ত হয়ে গেছেন। মিসেস মনিকা স্বামীর মনোযোগ নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে পারলেন না বিধায় সে আরও রেগে গেলেন। রেগে গিয়ে মিস্টার আরসাদের হাত থেকে বইটা নিয়ে টেবিলে ধপাস করে ফেলে বললেন,

–তোমরা আমার কথায় গুরুত্ব দিচ্ছো না কেনো? আমি তোমাকে কিছু বলছি আরসাদ।

মিস্টার আরসাদ তাচ্ছিল্য হেসে বললেন,
–আমাদের বেডরুম আলাদা। এখন কী বাড়িটাও আলাদা করতে চাচ্ছো? না করতে চাইলে আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করো। আর আমার ছেলে শুধুমাত্র তোমার জন্যই আজ বাড়ি ছাড়া। আমার জীবনে গ্রহণ হয়ে এসেছ তুমি। এখন আমার এই খানিক শান্তিটাও নষ্ট করতে উঠে পরে লেগেছ। কী চাও বলতে পারো? সবকিছুতে তোমার অভিযোগ! তাহলে বুঝে নেও, আমাদের অভিযোগটাই তুমি।

মিসেস মনিকা অপমানবোধ করে ধপাধপ পা ফেলে চলে গেলো। মিস্টার আরসাদ আবারও নোবেল পড়ায় মনোযোগ দিলেন। মনিকার রাগ ক্ষোভে তার কিছু যায় আসে না। নিজের বড়ো মেয়েকে তো একেবারের জন্য হারিয়েছেই এখন ছেলেও বাড়িছাড়া।

__________

পরেরদিন সন্ধ্যায় মারসাদ এসেছে আদিরাকে নিয়ে স্টুডেন্টের বাসায় যাবে বলে। আদিরা রাস্তায় এসে দেখে মারসাদ আজ একটা রিকশাও ঠিক করে নি। আর রাস্তাতে একটা রিকশাও নেই। আদিরা মারসাদের দিকে এগিয়ে গেলো। মারসাদ তখন সিগরেট ফুঁকছিল। আদিরাকে আসতে দেখে সিগরেটটা মাটিতে ফেলে দিয়ে পি*ষে ফেলল। আদিরা এসে আশেপাশে নজর বুলালো। মারসাদ সেটা লক্ষ্য করে বাঁকা হাসলো। তারপর কন্ঠস্বরে হতাশা এনে বলল,

–রিকশা দুইটা পেলাম না আজকে। একটা পেয়েছিলাম তাই ছেড়ে দিয়েছি। তুমি তো আর আমার সাথে এক রিকশায় যাবে না! চলো আজ হেঁটে হেঁটে যাই।

আদিরা রাজী হলো। তবে রাস্তা একটু শুনশান। রাতের বেলা ঝোঁপঝার থেকে কোনো শি*য়াল, কুকুর বেরিয়ে আসলে কী হবে সেটাই তাকে উদ্ধিগ্ন করে তুলছে। রিকশার সামনে দিয়ে প্রায়ই শি*য়াল দৌঁড়ে যায় এমন দেখা যায়।

আদিরা ও মারসাদ পাশাপাশি হেঁটে চলেছে। মারসাদ একটা ফাঁকা গলির ভিতর গিয়ে আদিরাকে বলল,

–ধরো, এখন তোমার সামনে ভূ*ত এসে হাজির হলো!

আদিরা মনোযোগ দিলো না। কারণ তার কাছে সবসময় ম্যাচ থাকে যা গ্রামে প্রচলিত। মারসাদ আদিরার অভিব্যক্তির পরিবর্তন না দেখে ভ্রুঁ কুঁচকালো। তারপর বলল,

–আচ্ছা। ভূ*ত বাদ দেও। কোনো শি*য়াল সামনে এসে হাজির হলো আর আশেপাশে আমাকে পেলে না। তখন?

আদিরা শি*য়াল খুব ভয় পায়। গ্রামে একবার তাকে শি*য়াল আক্রমন করেছিল কিন্তু কাম*ড় দেয় নি মানুষ চলে আসাতে। আদিরা ভয়ে ভয়ে বলল,

–কেনো আপনি কই যাবেন?

মারসাদের সামনে আদিরার মুখশ্রী আলোক স্বল্পতার কারণে দৃশ্যমান না হলেও কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারলো। মারসাদ ডোন্টকেয়ার ভাবে বলল,

–চলে গেলাম কোথাও একটা। তখন তোমার কী হবে? আর আজ তো রিকশাও পাবে না।

আদিরার শরীর ভয়ে কেঁপে উঠলো। মারসাদ এবার নিজের উদ্দেশ্য জাহির করলো।

–তুমি যদি আমার কথা মানো তবেই আমি কোথাও যাবো না।

আদিরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো কিন্তু তা মারসাদের দৃষ্টিগোচর হলো না। মারসাদ আদিরার নিরবতা দেখে মৌন সম্মতি বুঝে বলল,

–আমাকে তোমার হাতের রান্না খাওয়াতে হবে। ওইযে পেয়াজ, রসুন দিয়ে ভর্তা দেখলাম সেটা, আর ডিম ও চিচিঙ্গা দিয়ে ভাজি, ঢেঁড়স ভাজি। আর শোনো, আমার চিংড়িতে এলার্জি আর পটল আমি ডিসলাইক করি। তাই পটলের বদলে বেগুন দিতে পারো।

আদিরা হতবাক হয়ে গেলো। খাবারের জন্য লোকটা ওকে এখানে একা ফেলে চলে যাবে? আদিরা হড়বড়িয়ে বলল,

–কিন্তু ভাইয়া। এসব আমি কী করে বানাবো?

মারসাদ আদিরার চালাকিতে বাঁকা হাসলো অতঃপর ফোনের নেট অন করে মাহির পোস্টটা দেখালো। তারপর চতুরতার সাথে বলল,

–এভাবে। যেভাবে তুমি মাহিদের জন্য বানিয়েছ। দরকার পরলে আমি বাজার করে দিবো। তাও তোমাকে রান্না করে দিতে হবে। বলো রাজী?

আদিরা কিছুটা বিরক্ত হলো। লোকটা তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে এমন এমন যুক্তি উপস্থাপন করে যে অপরপাশের মানুষ অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যায়।
আদিরাকে কিছু বলতে না শুনে উৎসুক মারসাদ বলে,

–কী হলো? কী ভাবছো? আমি কিন্তু সত্যি সত্যি এখান থেকে চলে যাবো। আর যাওয়ার আগে তোমাকে ধরে কয়েকটা চক্কর দেওয়াবো যাতে বুঝতে না পারো কোনদিকে যেতে হবে। আর ভাবো, শুনশান নিরিবিলি পথ। আশেপাশে ঘন ঝোপঝাড়। ঝিঝি পোকার শব্দ আবার ডোবা থেকে ব্যাঙের ডাক। মাঝে মাঝে শি*য়াল ও কু*কু*রের ডাক। ভাবতেই গা ছমছম করে উঠে না?

মারসাদের এমন ভাবে বলার ধরণে আদিরার গা আসলেই ছমছম করে উঠলো। আদিরা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,
–ভাইয়া প্লিজ এমন করবেন না। আপনিই বলেন? রান্না করে আনাটা কী সম্ভব? বাজে দেখায় তো।

মারসাদ চোখ ঘুরিয়ে বলে,
–কী সমস্যা? টিউশন শেষ হওয়ার পর বক্সটা আমাকে দিবে। তাহলেই হয়। তোমাকে কী ক্যাম্পাসে সবার সামনে খাবার দিয়ে প্রপোজ করতে বলছি?

আদিরা হতাশ হয়। অগ্যতা রাজী হয়। তবে তার মনেও কিছু কুটিল বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে। যা সে খাবারের সাথে করবে। লোকটা তখন নিশ্চয়ই আর এমন সব কথা বলবে না!

________

–রাদিব দুই মাস পর বাংলাদেশে আসবে। ওর বাবা-মা ওর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে।

ফোনের বিপরীত পাশের ব্যাক্তির কথা শুনে মারসাদের হাত রাগে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেলো। চোখের সাদা অংশ ক্রমশ লালাভ রঙ ধারণ করছে। অপরপাশ থেকে আবার বলে উঠে,

–তবে রাদিব সরাসরি ঢাকার এয়ারপোর্ট দিয়ে আসবে না এটা হান্ড্রেট পার্সেন্ট শিউর। আদৌ এয়ারপোর্ট দিয়ে আসবে কীনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। তবে কক্সবাজার যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সিলেটও যেতে পারে। সিলেটে এমপি রুহুল আমিনের আত্মীয় স্বজন বেশি। আমি তোমাকে জেনে তারপর জানাবো।

মারসাদ “হুম” বলে ফোন ডিসকানেক্ট করে দেয়। আহনাফ, রিহান, মৃদুল ও রবিন মারসাদের পাশে ও সামনে দাঁড়িয়ে বিষয়ে জানার জন্য উৎসুক হয়ে আছে। মারসাদ দেয়ালে সজোরে একটা ঘু*ষি দিয়ে উগ্র কন্ঠে বলল,

–ওই জা*নো-য়া*র দেশে আসছে। আবার নাকি বিয়েও করবে। আবার কোন মেয়ের জীবনটা নষ্ট করার পরিকল্পনা করছে আল্লাহ ভালো জানেন। এবার ওর শেষ দেখে ছাড়বো আমি। ওকে খু ন করে জেলে গেলেও আমার শান্তি। আআআহ!

মারসাদের চিৎকারে আহনাফ মারসাদের হাত চেপে ধরে আছে। রবিন বলে,
–আমাদের এয়ারপোর্ট গুলোতে নজর রাখতে হবে।

রিহান বলে,
–কিন্তু রাদিব যা চতুর! সে কী সরাসরি আসবে? আমার তো মনে হয় না।

মৃদুল বলে,
–শফিক ভাইকে খবর দে মারসাদ। প্রতিটা এয়ারপোর্ট ও ইমিগ্রেশন ট্রান্সপোর্টে সিভিল লোক লাগিয়ে দিবে। এবার ওই বা*স্টা-র্ডের ছাড় নেই।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,
কাল অসুস্থ হয়ে গেছিলাম সব ঝাল ঝাল পানিপুরি ও ভর্তা খাওয়ার কারণে। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here