এক_শহর_প্রেম💓 লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_১২

0
779

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১২
আদিরার মুখশ্রীর অভিব্যক্তি দেখে মাহি আলতো হাসে অতঃপর শান্ত কন্ঠে বলে,
–আমাদের মা এক না হলেও আপিলির, দাভাই ও আমার মধ্যে একে অপরের প্রতি ভালোবাসার কোনো পার্থক্য হয় নি। আচ্ছা, তোকে দাভাই পছন্দ করে এমন কিছু ডাইরেক্টলি বলেছে? যদি বলে থাকে তবে আমি অনেক অনেক খুশি। ফাইনালি দাভাই কাউকে নিজের মনে জায়গা দিয়েছে।

আদিরা মাহির উচ্ছাসিত মনোভাব দেখে হতাশ হলো। মাহিদের কাছে ব্যাপারটা যতোটা সহজ ও সাবলিল, আদিরার কাছে তা ততোটাই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। আদিরা মারসাদের বলা কথা মতো মিনারের কাছে গেলো। আদিরা ভেবেছিল যাবে না কিন্তু মারসাদের ভীতিপ্রদর্শন মূলক কথার বিপরীতে কিছু করতে সাহস পেলো না। সেখানে যাওয়ার পর বুঝা যাবে। আদিরা মিনারের কাছে গেলে দেখতে পায় মারসাদ ও তার বন্ধুরা হাসি-তামাশা করে আড্ডা দিচ্ছে। আদিরা কী করবে বুঝতে পারছে না। মারসাদদের সাথে সুমি, মৌমি ও রাত্রীকে দেখে মনে সাহস পেলো। নাহলে চার-পাঁচটা সিনিয়র ছেলের সাথে একা একটা জুনিয়র মেয়ে গিয়ে কথা বলাটা আদিরার নিজের কাছেই দৃষ্টিকটু লাগছিল। আদিরা ওদের কাছে গেলে। মৌমি উৎফুল্লিত কন্ঠে বলল,

–আরে আদিরা যে। কেমন আছো?

আদিরা বিনিময়ে মুচকি হেসে সেও কুশল বিনিময় করে। মারসাদ ঠোঁট চোখা করে কুটিল মুখাবয়বে আদিরার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেছে। আহনাফ ও মৃদুলরা পাশ থেকে মারসাদের কাঁধে হাত রেখে মারসাদের দৃষ্টি অনুসরণ করে। রিহান ফিসফিসিয়ে বলল,

–মামা, এই মেয়েরে আবার ডাকছিস নাকি? সে এখানে কেন আসছে?

আহনাফ বলল,
–হ্যাঁ। মারসাদ ওকে আসতে বলছে। চুপ থাক। দেখি মারসাদ কী বলে।

মারসাদ ওদের কথাবার্তা পাত্তা না দিয়ে ওদের থেকে সরে গিয়ে আদিরার সামনে যায়। তারপর পকেটে দুই হাত গুঁজে ঠোঁট কা*মড়ে আদিরাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মেয়েটার ভীত ও মায়াময় মুখশ্রী অনন্তকাল দেখতে ইচ্ছে করে। মারসাদ মৌমিদের ইশারায় আদিরার কাছ থেকে যেতে বলে। মারসাদ ঘার কাত করে আদিরাকে বলে,

–আই ওয়ান্না গিভ ইউ এ মিউচুয়াল প্রোপোজাল! এন্ড ইউ হ্যাভ টু এক্সেপ্ট ইট।

আদিরা ভড়কে যায়। আবার কিসের প্রোপোজাল দিবে? তাছাড়া প্রেমের প্রোপোজাল আদিরা এক্সেপ্ট করতে অপরাগ। মারসাদ আদিরাকে ভড়কে যেতে দেখে জোরালো হাসলো। তারপর রম্যস্বরে বলল,

–তোমাকে প্রেম করতে বলবো না। সো চিল। জাস্ট নাথিং বাট ফ্রেন্ডশিপ করতে হবে। তাও আমাদের সাথে। নিজেকে মডিফাই করতে হবে। মাহির সাথে ফ্রেন্ডশিপের পর তোমার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে লক্ষ্য করেছি। যেমন তোমার ভীত মুখশ্রীর আড়ালে প্রাণোচ্ছল হাসি। তুমি মেস ছেড়ে দিবে কয়েকমাস পর। মৌমিরা তোমাকে চারজনের রুম ম্যানেজ করে দিবে তুমি, মাহিসহ তোমাদের বাকি দুই ফ্রেন্ডকে। এতো জলদি চারজনের রুম পাওয়া যায় না তবে পেয়ে গেলে তোমরা থাকবে। তোমাকে গণরুমে উঠতে কখনওই বলবো না। এখন বলো? শর্ত মনজুর?

আদিরা ঠোঁট ভিজিয়ে কাঁপা স্বরে বলে,
–কেমন শর্ত?

মারসাদ আদিরার দিকে ঝুঁকে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
–মন হারানোর শর্ত! এমন ভাবে হারাবে যে সামনের মানুষটার ভিতর তোমার জন্য এক শহর প্রেম দেখতে পাবে।

লজ্জায় আরক্তিম হলো মুখশ্রী। মারসাদের আর কোনো কথার তোয়াক্কা না করে দৌঁড়ে চলে গেলো আদিরা। মারসাদ ঠোঁট কা*মড়ে মাথা চুলকে হাসলো। কিছুটা দূরে মারসাদদের আড়াল হয়ে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে আদিরা বুকে হাত দিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে হাঁপাতে লাগলো। আদিরা নিজে নিজেই বলতে থাকে,

–আপনাতে মন হারানো বারণ। এখন যাও নিঃশ্বাস নিতে পারি কিন্তু তখন আমি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ম*রেই যাবো!

তখনই পাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ধ্বনিত হয়।
–কেনো? আমার দাভাই কী কার্বন ডাই অক্সাইড? যে ইনহেল করলে অক্সিজেন স্বল্পতায় প্রাণ হারাবি?

আদিরা চমকে পাশে তাকিয়ে দেখে মাহি দাঁত কে*লিয়ে হাসছে। মাহির সাথে সাবিহা ও রিন্তি। সাবিহা আদিরার পেছোনে গিয়ে কাঁধ জড়িয়ে বলে,

–ইশ! কেউ যদি আমাতেও মন হারাতো! তাহলে আমি এক লাফে তার প্রেমের সাগরে ডুব দিতাম। কিন্তু আফসোস! এই পো*ড়া কপালির ভাগ্য ফাঁকা শব্দে ঠনঠন করে।

রিন্তি সাবিহাকে পিঞ্চ করে বলে,
–তো আহিন কে? শুধু তোর মামাতো ভাই? যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক!

সাবিহা মুখ ঘুরিয়ে বলে,
–হুহ! একটা খারুস। আমি ওই আহিন বেটাকে বিয়ে টিয়ে করবো না। ছোটো থেকে জীবনটা তেজপাতা করে রেখেছে। বেটা নাকি এখানে জব ট্রান্সফার করবে। ভাবা যায় এসব অ*ত্যা*চার!

ওরা হেসে ফেলে। রিন্তি আদিরার হাতে খোঁচা দিয়ে বলল,
–কুছ তো হ্যায়! তেরি দিল পে ভি! হা?

আদিরা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
–মোটেও না। আমি এখানে পড়তে এসেছি। এসবে জড়াতে না। আর আমার মতো পরিবারের মেয়ের জন্য এসব বি*ষ সমতূল্য।

আদিরার মন খারাপ হচ্ছে দেখে মাহি চতুরতার সাথে বিষয়টা সামলে নিয়ে বলে,
–যখন হবে তখন দেখা যাবে। সময়ের সাথে কতোকিছুই তো বদলায়। এখন আমরা আজ আদুর হোস্টেলে যাবো। আজ আর ক্লাস নেই। আজ আদু আমাদের রান্না করে খাওয়াবে। আনন্দ হবে অনেক আজ।

সাবিহা ও রিন্তি আনন্দ প্রকাশ করে। আদিরার মুখ ভাড় হলো। লজ্জায় মুখ ছোট করে বলে,

–মেসে বেশি কিছু বাজার নেই। তোরা খেতে পারবি? মাছ-মাংস তো আনা হয় না।

রিন্তু আদিরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আদিরার গালে হাত দিয়ে বলে,
–আমি ও সাবিহা গণরুমে থাকি। সেখানে ক্যান্টিনের খাবার অতোটাও ভালো না। আর মাছ-মাংসের থেকে আমরা আজ অন্য কিছু খাবো। প্রতিদিন তেল মশলা কম দেওয়া মুরগির মাংস খেয়ে খেয়ে অতীষ্ঠ হয়ে গেছি।

মাহি বলল,
–আর আমি মাছ খাই না। চিংড়ি, ইলিশ ও কিছু সামুদ্রিক মাছ ছাড়া বাকি মাছ আমি খাই না। আর মাংস তো প্রায়ই খাওয়া হয়। তাই তোকে সেন্টি খেতে হবে না। চল এখন।

আদিরা স্বস্থি পায় কিছুটা। মাহিদেরকে নিয়ে মেসে গেলে আদিরা চারজনের জন্য ও তার রাতের জন্য ভাত বসিয়ে দিয়ে। পটল কাঠিতে ঢুকিয়ে হালকা তেল মাখিয়ে ভাতের পাতিলের নিচে চুলার উপর রেখে দেয়। মেসে আসার সময় আরও কিছু সবজি ও ডিম কিনে এনেছিল। পেয়াজ, রসুন, মরিচ, কহি/চিচিঙ্গা ও ঢেঁড়স কেটে নেয়। মাহি এসব কাজে একদমই অপটু। মাহি বসে বসে আদিরার কাজ দেখছে। সাবিহা ও রিন্তি সবজি কাটতে আদিরাকে টুকটাক হেল্প করছে। ভাত হয়ে এলে কড়াইতে গ্রাম থেকে আনা চিংড়ি শুঁটকি টেলে নেয় তারপর শুকনো মরিচ কয়েকটা ভেজে নেয়। শুকনো মরিচের সাথে ভর্তার জন্য কিছু পেঁয়াজ, রসুন ও ধনিয়াপাতা গরম তেলে দিয়ে সাথে সাথে তুলে নেয়। এরপর ঢেঁড়শ ভাজি বসিয়ে দিয়ে লোহার হামালদিস্তাতে পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়াপাতা ভালো করে ছেঁচে তাতে লবন, মরিচ ও সরিষার তেল দিয়ে রসুনের ভর্তা বানায়। এরপর চিংড়ি শুঁটকি গুলো ভালো করে পিষে নেয় পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচ দিয়ে। পটল পোড়াগুলোকেও ভর্তা করে নেয়। ঢেঁড়স ভাজি হয়ে এলে ডিম দিয়ে কহি/চিচিঙ্গা ভাজি করে নেয়।

দেড় ঘন্টার মধ্যে সকল রান্না শেষ। মাহি অবাক হয়ে পুরোটা দেখেই গেলো। ভর্তার ঘ্রাণে ওর জিভে জল চলে এসেছে (আমার তো লিখতে গিয়েই)। তারপর ভর্তা গুলোকে একটা বাটিতে নিয়ে নেয় আর ভাজি গুলোকে আরেকটা বাটিতে। এখন খাবার প্লেটের সংকটে আদিরা মেসের ক্যান্টিনে গিয়ে তিনটা প্লেট ধার করে নিয়ে আসে। মাহি সামনে সাঁজানো খাবারের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে দেয়। আদিরার রান্না সেটাও উল্লেখ করে। মাহি, রিন্তি ও সাবিহা খাচ্ছে আর আদিরা অধীর আগ্রহে বসে আছে ওদের রেজাল্ট বলার আশায়। তার ছোটোবেলা থেকে অভ্যাস এটা। কিছু রান্না করে সবার কেমন লেগেছে তা জানতে চায়।

মাহি প্রতিটা আইটেম টেস্ট করে বলল,
–দাদী মাঝে মাঝে ভর্তা বানাতে বলে। যেমনঃ চিংড়ি, শিম ও বেগুনের। বাবারও ভর্তা অনেক পছন্দের। আমারও ভালোই লাগে। তোর বানানো ভর্তাও অনেক মজা হয়েছে। তুই খাচ্ছিস না কেনো? খা। সবগুলা রান্নাই অসাধারণ।

মাহির সাথে রিন্তি ও সাবিহাও তাল মিলায়। আদিরা খুশি মনে খাওয়া শুরু করে।

……….

এদিকে মারসাদ মাহির পোস্ট দেখে ভ্রুঁ উঁচালো। তারও খাবার গুলো টেস্ট করতে মন চাচ্ছে। কিন্তু কিভাবে সেটা ভাবতে ভাবতে মারসাদের মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here