এক_শহর_প্রেম💓 লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_১৬

0
705

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
সময়ের পরিক্রমায় পেরিয়ে গেছে দুই মাসেরও বেশি সময়। প্রকৃতিতে এখন শ্রাবণ মাস চলছে। ভার্সিটিতে একটা সেমিস্টার শেষ করে ছুটি পেয়েছে তাই আদিরা তার গ্রামে চলে গেল। টিউশন দুটোর থেকে চার-পাঁচ দিনের মতো ছুটি নিয়েছে। পরে সেটা পুষিয়ে দিবে। সাতক্ষীরাতে পৌঁছে তার মায়ের মুখে অশ্রুসিক্ত হাসি দেখে দৌঁড়ে জড়িয়ে ধরে। আদিরার মা মেয়ের মুখে হাত দিয়ে বললেন,

–কেমন আছিসরে মা? কেমন শুকিয়ে গেছিস তুই? খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করতি না? মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে।

আদিরার মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। আদিরা ওর মায়ের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে,

–কেঁদো না তো। অনেকদিন পর দেখছো তাই এমন লাগছে। সেসব বাদ দাও আগে খেতে দাও। সেই কাল রাতের পর কিচ্ছু খাওয়া হয় নি। আর আনাস কই মা? আমার পুচকো দুষ্টুটাকে দেখছি না যে? আজ তো শুক্রবার।

আদিরার মা হেসে চোখের জল মুছে বলেন,
–কার কার আম বাগানে বাঁ*দরের মতো ঘুরছে কে জানে? আশ্বিনী আম বাগানে গেছে মনে হয়। তোর জন্য কাঁচা আম আনতে। তুই হাত-মুখ ধুয়ে আয় আমি ভাত বাড়ছি।

আদিরা ব্যাগ নিয়ে নিজের ঘরে যায়। এরপর ফ্রেশ হয়ে আসলে তার মা তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেন। আদিরার মা বহুদিন পর মেয়েকে নিজ হাতে খাইয়ে অনেক তৃপ্তি পেলো আর আদিরাও মায়ের হাতে খেয়ে।

……..

মারসাদরা পাঁচ জন আজ বান্দরবন যাচ্ছে। গোপনসূত্রে জানা গেছে রাদিব মানে মিলির হাসবেন্ড সপ্তাহখানেক যাবত বান্দরবনে গা ঢাকা দিয়েছে। সে ভারত থেকে মিয়ানমার গিয়েছে তারপর সেখান থেকে টোকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখন মারসাদরা সেখানে যাচ্ছে। ওরা যে যাচ্ছে তা ওরা পাঁচজন ছাড়া কেউ জানে না এবং ওরা কোনো পরিকল্পনা অফিসার শফিক ছাড়া কারও সাথে করে নি।
কয়েকদিন আগে রাত্রির কার সাথে রিলেশন সেটাও জানতে পেরেছে ওরা। প্রথম পরীক্ষার দিন রবিন রাত্রিকে দেখেছিল একাডেমিক ভবনের উত্তর পাশ দিয়ে একটা ছেলের বাহু জড়িয়ে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছিলো। রাত্রি ছেলেটাকে নিয়ে নিরিবিলি জায়গায় বসে ব্যাগ থেকে কী যেনো বের করে খাওয়াচ্ছিল। রবিন আড়াল থেকে লুকিয়ে ছেলেটার চেহারা দেখার চেষ্টা করছিল। দশ মিনিট পর যখন রাত্রি ও ছেলেটা উঠে দাঁড়ায় তখন রবিন ছেলেটার মুখের একপাশ দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। কারণ ছেলেটা সাগরের বন্ধু নিলয়। সেদিন সকালেও নিলয়কে একই রঙের শার্টে দেখেছিল আর সাগরদের সাথে কিছু কথা কাটাকাটিও হয়েছিল ওদের ভিপির পদ নিয়ে। মারসাদ ভিপির পদের জন্য দাঁড়াবে তা মারসাদ নিশ্চিত করেছিল। তখন থেকেই মারসাদ, আহনাফ, রাহিন, রবিন, মৃদুল, সুমি ও মৌমি রাত্রির সাথে কিছুই শেয়ার করে না ওদের ব্যাপারে। বান্দরবনোর জন্য রওনা হওয়ার আগে ওরা নিজেদের ব্যাবহার করা রেজিস্টারর্ড সিম কার্ড খুলে রেখেছে। আর ওরা কোনো বাসে করে যাচ্ছে না। যাচ্ছে অফিসার শফিকের অফিশিয়াল মাইক্রোতে করে।

যাত্রা বিরতিতে মারসাদ তন্দ্রাচ্ছন্ন স্বরে আহনাফকে ডেকে বলে,
–এই নতুন সিমগুলো তো তোর কাছে?

আহনাফ ঘুমোয়নি। সে বসেছে ড্রাইভারের পাশে। পকেট থেকে সিমকার্ড গুলো বের করে দেয়। মারসাদ একটা নিজের ফোনে ঢুকিয়ে রেখে দেয়।

সকাল ১০টার দিকে বান্দরবন পৌঁছানোর পর দুপুর বারোটার আগেই মি*লিটারি চেক পোস্ট পার করে। মারসাদকে যে খবর দিয়েছে রাদিব কোথায় আছে সে এটাও বলেছে যে রাদিবকে নাকি মারসাদের কোনো শত্রু নিজের পরিচিত রিসোর্টে লুকিয়ে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। মারসাদের কেনো যেনো মনে হচ্ছে সেটা সাগর। মারসাদরা শফিকের পরিচিত একটা রিসোর্টে উঠলো। এখন তারা আগে জানবে রাদিব কোন রিসোর্টে আছে। তা জানানোর দায়িত্বও শফিকের।

জার্নির ধকল পোষাতে ওরা সারাদিন ঘুমালো এরপর রাতে চেহারা আড়াল করে বাহিরের রেস্তোরায় খেতে বের হলো। মৃদুল বলে,

–কোথায় যে এই রাদিবের বা*চ্চা? সামনে পেলে সোজা পাহাড়ের পাদদেশে এক নিমিষেই ট্রান্সফার করে দিবো উপর থেকে।

মারসাদ কোনো কথা বলছে না। সে বেখেয়ালি ভাবে খাচ্ছে। আহনাফ মৃদুলকে বলে,
–আমরা কিছু করবো না। জাস্ট আগে রাদিবের ঠিকানা জানতে হবে। বাকিটা অন্যকেউ করবে।

রাফিন খেতে খেতে আশেপাশে দেখছিল। হঠাৎ কাউকে দেখে ওর কাশি উঠে যায়। রবিন দ্রুত ওকে পানি দিলো। রাফিন একদম সাইডের চেয়ারে বসেছিল। সে নিচু হয়ে ফ্লোরে বসে যায়। ব্যাক্তিটি কাশির শব্দে এদিকে তাকিয়ে চারজন মানুষ খাচ্ছে একটা টেবিলে দেখতে পেলো কিন্তু চেহারা দেখলো না। লোকটা সেটার তোয়াক্কা করলো না। সে বিল পরিশোধ করে রেস্তোরার বাহিরে চলে গেলো। লোকটাকে চলে যেতে দেখে রাফিন উঠে দাঁড়িয়ে পানি খেয়ে কোনোমতে ওদের বলে,

–রাদিব ছিলো ওটা। জলদি চল।

ওরা চারজন অবাক হয়ে গেলো। ওরা হুড়মুড় করে খাওয়া ছেড়ে উঠে রেস্তোরার বাহিরে চলে গেলো। বাহিরে এসে রাহিন দূরে একজন হেঁটে যাচ্ছে তা লক্ষ্য করে বলল,

–ওটাই মনে হচ্ছে। সাদা টিশার্ট পড়নে ছিল।

মারসাদ হুট করে মৃদুলকে বলে,
–মৃদুল তুই রাদিবের পেছোনে যা। মুখে মাস্ক আর চোখে চশমা ও মাথায় টুপি লাগানোতে চিনবে না। আর আমাকে ও আহনাফকে চেনার সম্ভাবনা থাকলেও তোদের গেটআপ চেঞ্জে চিনতে পারবে না।

মৃদুল কথাটা শোনামাত্র দৌঁড় দিলো। রাহিন হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
–এরপর কী করবো?

মারসাদ বাঁকা হেসে বলে,
–রিসোর্টের নামটা শফিক ভাইয়ের কাছে জানালে সে আমাদের রাদিবের মুভমেন্ট জানাবে। তারপর সুযোগ বুঝে সব। আমরা কালই ফিরে যাবো একটা কাজ করে। তবে আগে চট্টগ্রাম যাবো।

রাহিন অবাক হয়ে বলে,
–তাহলে কাজ করবে কে?

মারসাদ বাঁকা হেসে বলল,
–দেখতেই পাবি।

………..

আদিরা সকালবেলা ওর ভাইকে নিয়ে একটু বের হয়েছে। পথিমধ্যে চেয়ারম্যানের ছোটো ছেলে দেলোয়ার আদিরার পথ আগলে দাঁড়ায়। দেলোয়ারের দাঁতের ফাঁকে নিমের ডাল। সে আদিরাকে আপাদমস্তক স্ক্যান করে নিমের ডাল চাবানোর পিক ফেলে বলে,

–কীরে পাখি? তোরে মেলাদিন দেখি না। আজ কইলজাডা ঠান্ডা হইয়া গেলো। তা কেমন আছোছ?

আদিরা ওর ভাই আনাসের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। এই দেলোয়ারের স্বভাব ভালো না। রাস্তাঘাটে আদিরাকে বিশ্রি ভঙ্গিতে বিরক্ত করতো আগে। আদিরার এখান থেকে দূরে যাওয়ার এটাও একটা কারণ। আদিরা আনাসের হাত ধরে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় দেলোয়ার আদিরার ওড়না খপ করে ধরে। আদিরা ভয়ে জড়োসরো হয়ে যায়। চেয়ারম্যানের ছেলে বলে কথা বলাও দায়। আনাস দেলোয়ারের হাত থেকে আদিরার ওড়না ছুটিয়ে চোখ-মুখ কুঁচকে বলে,

–এই বাজে লোক! আপনে আমার আপার ওড়না ধরেন কেন? সাহস তো কম না আপনের।

দেলোয়ার খিটখিটিয়ে হাসে। তারপর আনাসের গাল রুক্ষভাবে টেনে বলে,
–তোর আপারে যেদিন বিয়া করে ঘরে তুলমু সেদিন দেখিস আমার সাহস। তুই তো হবি আমার পুচকে শা*লা।

আদিরা আর এক মূহুর্তও সেখানে দাঁড়ালো না। তার হাত-পা কাঁপছে। দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ির দিকে চলে যায়। আনাস তার বোনের সাথে চলতে থাকে। আনাস বাড়িতে গিয়ে তার মাকে ঘটনার বিশদ আলোচনা করলে আদিরার মা ভয় পেয়ে যান। আদিরার বাবা অনেক টাকার কর্জ আছে চেয়ারম্যানের কাছে। এখন যদি চেয়ারম্যান তার ব*খাটে ছেলের জন্য সেই কর্জ পরিশোধ হিসেবে আদিরাকে চায়! তিনি মেয়েকে বুকের সাথে আগলে বসে রইলেন। মেয়েকে বাঁচাতে সে দরকার পরলে মেয়ের থেকে দূরত্ব মেনে নিবেন।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,
দুঃখিত কালকে গল্প আসবে না। আমি একদিন গ্যাপ দিলে জানাই না তবে টানা তিন দিন দেওয়াতে আপনারা আগামীকাল অপেক্ষা করতে পারেন হয়তো। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here