এক_শহর_প্রেম💓 লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_১৭

0
708

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
কেওক্রাডং পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় থরথর করে কাঁপছে রাদিব। সূর্য এখন ঠিক মাথার উপরে বরাবর। তপ্ত রোদ্দুরে স্বেদগ্রন্থি থেকে স্বেদকণা নিঃসৃত হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু একরাশ ভীতি যেনো আরও গ্রাস করে নিয়েছে। রাদিব আবারও শুনতে পায়,

“রাদিব! তোমাকে আমি নিয়ে যেতে এসেছি। চলো আমার সাথে!”

খুব পরিচিত মেয়েলি কন্ঠস্বরটি কিছু ধ্বনি অদূরে পাহাড়ের সাথে ঠেকে প্রতিফলিত হচ্ছে আবার কিছু হচ্ছে না। রাদিব কানে হাত দিয়ে হাপাচ্ছে। পাহাড়ের এক ঢাল নিচে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটেছে। রাদিব চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

–প্লিজ আমায় মাফ করে দেও মিলি। কেনো কাল থেকে আমাকে এভাবে ভয় দেখাচ্ছ? চলে যাও।

মারসাদ আবারও রেকর্ডারটা অন করে। রেকর্ড করা ভয়েসটা মিলিরই। মিলির সাথে যখন রাদিবের সম্পর্ক ভালো ছিল তখন হানিমুনে রাদিব ও মিলি বান্দরবানে এসেছিল। মারসাদ ও মাহিও সাথে এসেছিল। মিলি সেদিন পাহাড়ের উপর উঠে উপরোক্ত বাক্যটা চিৎকার করে বলেছিল। বলার উদ্দেশ্য ছিল বিশাল অন্তরিক্ষের হয়ে রাদিবের জন্য। মারসাদ সেটা রেকর্ড করে নিয়েছিল।

মারসাদ গতকাল রাতে কাউকে দিয়ে রাদিবের হোটেল রুমের দরজার নিচের সামান্য ফাঁকা অংশের মাধ্যমে বাহির থেকে এই রেকর্ডারটা অন করিয়েছিল। রাদিব তখনও ঘুমায় নি বলে কন্ঠস্বরটা শুনে খুব ভয় পেয়েছিল। মিলির ভয়েসের সেই রেকর্ডারের সাথে মিলির কান্নার একটা রেকর্ডও জুরে দেওয়া। যা মারসাদ মিলিকে রাগাতে রেকর্ড করেছিল আগে।

মারসাদ নিচে নেমে আহনাফদের কাছে আসে। আহনাফ বলে,
–কাজ হয়েছে?

মারসাদ বাঁকা হেসে বলে,
–রাদিব কাঁদছে। কাঁদুক। আরও মে*ন্টালি ট*র্চার করাবো। আপিলির সাথে তার কিছু ছবিতে র*ক্ত লাগিয়ে ওর কাছে পার্সেল যাবে। সাথে বাচ্চাদের কিছু খেলনা।

রাহিন এক্সসাইটেড হয়ে বলে,
–আরও দুইদিন থেকে যাই না? জা*নো*য়া*রটার করুণ পরিনতি দেখার জন্য চোখদুটি আমার অধীর আগ্রহে আছে।

মৃদুল বলে,
–এরপর কী হবে? এটুকুতে কী সে ট্র*মাতে যাবে?

মারসাদ বলে,
–আপিলি তার হানিমুনে যেসব শাড়ি পড়ে এই বান্দরবান ও পাহাড়ে বেরিয়েছিল তার সব আমি নিয়ে এসেছি। একটু পর একটা মেয়েকে হালকা আকাশি শাড়ি পড়ে চুল খোলা অবস্থায় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে দেখবে রাদিব। আবার সন্ধ্যায় কালো শাড়ির সাথে চুল খোলা মেয়েকেও দেখবে। ও যা খাবার অর্ডার দিবে তার বদলে ওর কাছে যাবে যা আপিলি তার হানিমুনে এসে খাবারের জন্য অর্ডার করেছিল। ওকে মানসিকভাবে এমনভাবে আঘাত করা হবে যে ও ভাবতে থাকবে ওর আশেপাশে আপিলির আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপিলির কান্নার রেকর্ডটাও আলাদা করে শোনানো হবে।

রাহিন মিনতি করে বলে,
–থেকে যাই আজ?

মারসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–না। ঝামেলা হবে। ঢাকায় গিয়ে রাদিবের বাড়িতেও যাবো। আর দুইদিন পর আপিলির মৃ*ত্যুবার্ষিকী।

ওরা আস্তে আস্তে পাহাড় থেকে নেমে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই অফিসার শফিকের অফিশিয়াল গাড়িতে করে ওরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে।

__________

পরেরদিন সকালে চেয়ারম্যান সাহেব আদিরার বাবাকে তার বাড়িতে ডাকায়। আদিরার বাবা গিয়ে সালাম দিলে চেয়ারম্যান সাহেব পান চিবুতে চিবুতে বলেন,

–তা আলেক ব্যাপারি? তোমার কর্জ জানি কতো বাকি?

আদিরার বাবা মিনমিন স্বরে বলেন,
–দুই লক্ষ টাকা চেয়ারম্যান সাব।

চেয়ারম্যান সাহেবের চোখ চিকচিক করে উঠে। সে ভনিতা করে বলেন,
–তা কবে পরিশোধ করবা? তোমার জন্য তো কর্জের সুদ ধরি নাই। তুমি গরিব মানুষ আর আমার দয়ার দিল! দুই বছর ধইরা এই কর্জ ঝুলতাছে। সুদ ধরলে এর দ্বিগুন দেওন লাগতো তোমার।

আদিরার বাবা গামছা দিয়া কপালের ঘাম মুছেন। চেয়ারম্যান সাহেব এবার নরম স্বরে বলেন,
–তুমি যদি চাও তয় তোমার একটা টাকাও দেওন লাগবো না!

আদিরার বাবা ভিষণ অবাক হলেন। চেয়ারম্যান সাহেব কারও দেনা মাফ করেন না। আর সুদ তো কড়ায়গণ্ডায় বুঝে নেন। তার বেলায় কেনো এর বৈপরীত্য দেখা গেলো তার বুঝে আসলো না। আদিরার বাবার কৌতুহল মিশ্রত চাহনি দেখে চেয়ারম্যান সাহেব পানের পিক ফেলে বলেন,

–তোমার মাইয়ার সাথে আমার সুপুত্র দেলোয়ারের বিয়া দিবা। দেলোয়ার তোমার মাইয়ারে খুবই পছন্দ করে। সেই তো তোমার মাইয়ারে বিয়ার কথা কইলো। এমনেও আমার তোমার মাইয়ারে নিয়া সমস্যা নাই। লক্ষি মাইয়া তোমার। তবে টাকা-পয়সা আসবো না এই একটু।

আদিরার বাবা দ্বিমনায় পরে গেলো। কী করবেন বুঝতে পারছেন না। আদিরার বাবাকে চুপ থাকতে দেখে চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,

–কী এমন ভাবো আলেক ব্যাপারি? লাভ কিন্তু তোমারই। মাইয়া তোমার সুখেও থাকবো।

আদিরার বাবা বললেন,
–আমি ওর মায়ের লগে একটু কথা কইয়া লই। তারপর আপনেরে জানামু নে। আইজকা তয় আসি।

চেয়ারম্যান সাহেব সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তার মতে এতো ভালো প্রস্তাবকে হেলাফেলা করাটা পছন্দ হয় নি। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,

–যাও তয়। জলদি জানাইয়ো।

আদিরার বাবা সালাম দিয়ে চলে আসলেন। বাড়িতে এসে সে চিন্তিত হয়ে ঘরের ভিতর বসে রইলেন। আদিরার মা স্বামীর জন্য পানি নিয়ে আসেন। স্বামীকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞাসা করেন,

–কী হইছে আপনের? এতো চিন্তিত লাগতেছে কেন?

আদিরার বাবা পানি ভর্তি গ্লাসটা এক শ্বাসে ফাঁকা করে স্ত্রীর হাতে দিয়ে বলেন,

–চেয়ারম্যান তার পোলার লগে আদিরার বিয়ার প্রস্তাব দিছে। সাথে কইছে আমার দুই লক্ষ টাকার কর্জ মাফ করে দিবো। কী করমু বুঝতেছি না। দুই বছর ধইরা কর্জ পরিশোধ করতে পারতেছি না।

আদিরার মা আঁতকে উঠেন। উনি কাল থেকে যেই ভয়ে ছিলেন তাই সত্য হতে চলেছে। আদিরার মা উৎকণ্ঠা নিয়ে বললেন,

–আপনে কী রাজি হয়ে গেছেন নাকি?

আদিরার বাবা হতাশ স্বরে বলেন,
–না। এখনও হই নাই কিন্তু ভালো প্রস্তাব। চেয়ারম্যান সাহেবের পোলার নিজেরই কাঠের কারবার। পোলা একটু উড়ন স্বভাবের কিন্তু বিয়ার পরে ঠিক হইয়া যাইবো। চেয়ারম্যান সাহেব আমাগো কতো সাহায্য করছে তুমি তো জানোই। সে সুদও ধরে নাই।

আদিরার মায়ের হাত-পা কাঁপতে থাকে। হাত থেকে খালি গ্লাসটা মাটিতে পরে ঝনঝন ঝংকার তুলে। তিনি দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে মেয়ের ঘরে যান। আদিরার বাবা জানেন তার স্ত্রী মেয়েকে পড়াতে চান কিন্তু এখন কিছু করার নেই তার হাতে।

আদিরার মা আদিরার ঘরে গিয়ে আদিরাকে শোয়া থেকে তুলে তড়িঘড়ি করে বলেন,
–আজকে রাতেই তুই ঢাকা চলে যাবি। এখানে তুই আসবি না। ব্যাগ গুছা জলদি।

আদিরা কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে তার মাকে জিজ্ঞেস করে,
–কেনো মা? কী হইছে? আমি পরশু যাবো তো। আজই কেনো?

আদিরার মা মেয়ের মুখখানি দুই হাতের আদলে আগলে নিয়ে বললেন,
–চেয়ারম্যান তার ছেলের সাথে তোর বিয়ের প্রস্তাব দিছে তোর বাপের কাছে। তোর বাপের সব কর্জ মাফ করে দিবে বিনিময়ে বলছে। তোর বাপে রাজি হয়ে যাইবোরে মা। তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাইবো ওই দেলোয়ারের ফাঁদে পরলে। আমি এখনি তোর গনিত স্যারেরে ফোন কইরা কমু যাতে একটা বাসের টিকেট কে*টে রাখে। তুই আজকেই ঢাকা চলে যাবি।

আদিরা হতভম্ব হয়ে যায়। ওই দেলোয়ারকে বিয়ে সে কখনওই করতে চায় না। শেষ পর্যন্ত তার বাবাকে টোপ হিসেবে ব্যাবহার করলো ওই দেলোয়ার! আদিরার চোখে নোনাজলেরা ভীড় করেছে। যেকোনো সময় স্রোতধারা হয়ে গড়িয়ে পরবে। আদিরার মা নিজের কোমড়ের কাছে গুজে রাখা ফোন নিয়ে আদিরার গনিত স্যারকে ফোন করে রাতের বেলার বাসের একটা টিকিট কাটতে বলেন। আদিরা ভীত হরিণির মতো কুঁকড়ে আছে। আসন্ন কি বিপদ আসতে চলেছে তার কিছুটা তার ধারণা আছে। আজকে সে ঢাকা চলে যেতে পারলে এই বিপদ টলানো গেলেও যেতে পারে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
আগামিকাল গল্প আসবে। তবে পরশুদিন আসবে না। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here