#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৮
সুখ চিরস্থায়ী না। দুঃখ ও সুখ একে অপরের পরিপূরক। আদিরার গ্রাম থেকে ওর মা অনেক লুকিয়ে-চুরিয়ে আদিরাকে জানিয়েছে যে আদিরার খোঁজে দেলোয়ার ঢাকা যাচ্ছে। এতোদিন দেলোয়ার জানত না আদিরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। আদিরার গ্রামের শিক্ষকমন্ডলী ও আদিরার বাবা-মা গ্রামের আর কাউকে জানায়নি আদিরা ঠিক কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ইদের তিনদিন পর দেলোয়ারের কাছে উড়োচিঠির মাধ্যমে আদিরার ঠিকানা জানিয়েছে কেউ। যে চায়না আদিরার সুখ। দেলোয়ার খবর পাওয়া মাত্র আদিরাদের বাড়িতে এসে আদিরার বাবা-মাকে শাসিয়ে গিয়েছে। তাদের থেকে ফোনটাও কেড়ে নিয়েছে। আদিরার মা সন্ধ্যার সময় আদিরার স্কুলের শিক্ষকের বাড়িতে আদিরার ছোটো ভাই আহাদকে বাড়ির পেছোনের ক্ষেত পেরিয়ে পাঠিয়ে ফোন করিয়ে আদিরাকে জানায়।
খবরটা জানার পর আদিরা কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। এখন রাতের বেলা। আজকে রাতের টিউশনটা নেই তাই মেসেই আছে। এখন কী করবে সে ভাবতে পারছে না। দেলোয়ার যদি এসে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়! আদিরা চিন্তায় রীতিমত নাজেহাল অবস্থা। ঘড়ির দিকে সময় দেখল। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার বেশি বাজে। তার মানে মারসাদের টিউশন চলছে। টানা দুই ঘণ্টা দুইটা টিউশন আছে। দশটার আগ পর্যন্ত পড়াবে। আদিরা মারসাদকে এখন চিন্তায় ফেলতে চাইলো না। দশটার পর মারসাদ এমনেই ফোন করবে। তখন নাহয় বলবে।
_________
সাগর, সামিরা সহ সাগরের বন্ধুরা শ*য়*তা*নী হাসি হাসছে। সামিরা হাসতে হাসতে জিদ্দি স্বরে বলে,
–এবার মারসাদ ও আদিরা আলাদা হবেই। আদিরা তার নিজের জায়গা চিনতে পারবে। ওই মেয়ের জন্য আমাকে অনেকবার অপমানিত হতে হয়েছে। ওকে ওর যোগ্য শাস্তি না দিলে আমার শান্তি হতো না।
সাগর উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলে,
–কতো কষ্ট করে বাবুলকে দিয়ে এডমিশন অফিস থেকে আদিরার ডকুমেন্টের ছবি আনিয়েছি। উফ! কাজে দিলো আমাদের পরিকল্পনা। তুমি সামিরা আমাদের এই পরিকল্পনাটা দিয়েছ। তোমার কিছু একটা পাওনা রইল। কী নিবে বলো?
নিলয় ওদের সাথে বসে সবটাই শুনছে। নিলয় কিছু না করলেও সে যে ওদের দলেরই একজন। তার কিছুই করার নেই। সাগর এসব করার আগে নিলয়কে এবার কোনো কারণবশত জানায়নি। নিলয়কে না জানিয়ে সবকিছু করে এখন জয় উৎসবে ডেকেছে। নিলয় ঠোঁটের কোণে কৃতিম হাসি ফুটিয়ে রেখেছে। সাগরদের আরেক বন্ধু পরশ বলে,
–দেলোয়ার মনে হয় রাতের বাসে উঠবে। দেলোয়ারের নাকি রাত ১০টায় কাঠবাহী ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর আদিরার তো খবর জানার কথা না। ওর বাবা-মায়ের ফোন তো নিয়ে নিয়েছে। আর আদিরার বাবা-মা বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না।
সামিরা বাঁকা হেসে বলে,
–জানতে জানতে ওর জীবন শেষ। আর বাঁচতে পারবে না। দেলোয়ার ওকে এবার নিজের বাড়িতে নিয়ে বন্ধি করে রাখবে। আর মারসাদ! ওর ব্যাবস্থাও হচ্ছে। ওর সুইট কিউট দাদী! ওর দাদীকে আমার কাকিমনি মানে মারসাদের ফুপিআম্মু, আমার ও মারসাদের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে কালরাতে। আজকে মারসাদের সন্ধ্যার পর ওই বাড়িতে যাবার কথা। কাকিমনি মারসাদকে অনেক রিকুয়েস্ট করে এক ঘণ্টার জন্য যেতে রাজি করিয়েছে। একটু পর কাকিমনিকে ফোন করব।
সাগর বলে,
–ইশ! বেচারা মারসাদ! একদিকে নিজের বিয়ে আরেকদিকে প্রেমিকার বিয়ে! উভয়সংকটে পরেছে যে! এই আনন্দে বি*য়া*র চ্যালেঞ্জ হয়ে যাক।
সাগর সহ সবাই বি*য়া*রের ক্যান নিয়ে সেলিব্রেট করছে। নিলয়ও বিয়ারের ক্যান নিল। নিলয় সাগরকে জিজ্ঞাসা করল,
–এগুলো করে কী তুই ভিপি হতে পারবি? আর এটা তো জানা যে মারসাদ সামিরাকে কখনোই বিয়ে করবে না। এক আদিরা মারসাদকে তার দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। মারসাদের সাথে আদিরার পরিচয় মাত্র ৬ মাসের কিছু বেশি সময়। আমার মনে হয় না আদিরা….
সামিরা নিলয়ের কথায় রেগে গিয়ে নিলয়কে থামিয়ে দিয়ে বলে,
–তোমার কথাতে মনে হচ্ছে তুমি মারসাদদের পক্ষে! কী হবে না হবে সেটা পরে। মারসাদের দাদী ও ফুপি মারসাদের জন্য অনেককিছু। তোমরা তা না জানলেও আমি জানি।
সাগর সামিরাকে থামাতে নিলয়কে বলে,
–শোন, তুই তো এখন বাড়িতে বাড়িতে থাকোস তাই তুই আসলে জানোসই না মারসাদ আদিরার জন্য কতোটা পজোসিভ। মনে আছে তোরা যে আদিরাকে লাইব্রেরি থেকে আনতে গেছিলি তখন মারসাদ ঝড়ের বেগে এসে আদিরাকে ছাড়িয়ে নেয়? আর পরশ দেখেছে, মারসাদ প্রতিদিন আদিরাকে টিউশনের জন্য নিয়ে যায় আর নিয়ে আসে।
নিলয় আর কিছু বলল না। নিলয় সবার আড়ালে রাত্রিকে ছোটো একটা টেক্সট করল,
“মারসাদক যেখানেই থাকুক ওকে জানাও আদিরার বিপদ।”
নিলয়ের এর বাইরে কিছু করার নাই। নিলয় এখন প্রকাশ্যে সাগরের বিরোধীতা করলে নিলয়ের পরিবার ও রাত্রির জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব পরতে পারে। সাগরের স্বভাব নিলয়ের সবটাই জানা।
_________
মারসাদ রাত সাড়ে আটটার পরের টিউশনটা আসর নামাজের পরে পড়িয়ে ফেলেছে। আর এখন সোয়া আটটা বাজে। মারসাদ স্টুডেন্ট পড়িয়ে এখন তার পিতৃলয়ে যাচ্ছে। মারসাদের দাদী জানিয়েছে, মিসেস মনিকা নাকি আজ তার ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছে মাহিকে নিয়ে। মাহি যেতে চায়নি কিন্তু ওর নানুর আবদারে গিয়েছে। মারসাদের নানুও মাহিকে অনেক আদর করে কিন্তু মিসেস মনিকা মারসাদের নানুকে খুব একটা কর্ণপাত করেন না।
উল্লেখ্য যে, মাহি সামিরাকে পছন্দ করেনা বলে মাহিকে ওর ফুপি ও দাদী বিষয়টা অবগত করায়নি।
মারসাদ ওর পিতৃলয়ে গিয়ে ওর দাদীর কাছে গিয়ে দাদীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–কেমন আছো সুইট কুইন? তোমার শরীর ভালো?
মারসাদের দাদী অভিমানী কন্ঠে বলেন,
–তোর আমার কথা কী মনে পরে? জানি পরে না। পরলে তুই ঠিকই আসতি আমার সাথে দেখা করতে।
মারসাদ ওর দাদীর গাল টেনে বলে,
–তোমাকে আমার অনেক অনেক মনে পরে গো। কিন্তু তোমার বউমা আমাকে একটুও পছন্দ করেনা যে! কিভাবে আসি বলো? তা ফুপি কই? আমাকে দেখবে বলে আসতে বললো আর সে নিজেই লাপাত্তা।
মারসাদের ফুপি ট্রেতে করে মারসাদের জন্য পুডিং ও ক্ষীরের পিঠা নিয়ে এসে ওর সামনে রেখে বলেন,
–নে শুরু কর। আরও কিছু বানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারলাম না। খেয়ে বলতো কেমন হয়েছে?
মারসাদ হেসে একটা ক্ষীরের পিঠা নিয়ে বলে,
–তোমার বিয়ের আগে নাকি তুমি সারাদিন এটা ওটা এক্সপেরিমেন্ট করে আপিলিকে আর মাকে খাওয়াতে। মাঝে মাঝে দুই বছরের আমাকেও ছাড় দিতে না। তবে তোমার রান্না বেস্ট।
মারসাদের ফুপির মন আনন্দে পুলকিত হলো কিন্তু পরক্ষণেই আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘে আচ্ছাদিত মনের ভিতর। সে জানে মারসাদ সামিরাকে বিয়ে করতে রাজী হবে না কিন্তু ছোটো দেবর ও জায়ের অনুরোধে আর সামিরার ইমোশোনাল কান্ডে বলতে এসেছে।
মারসাদ ক্ষীরের পিঠা ও পুডিং কিছুটা খেয়ে বলে,
–অনেক অনেক মজা হয়েছে ফুপি। মাহিতো মিস করে গেলো। সে তো মিসেস মনিকা খানের সাথে গিয়েছে।
মারসাদের দাদী বলেন,
–হ্যাঁ রে। তোদের নানুরা আবদার করল। তুইও তো যেতে পারিস একটু। তোরও তো নানুবাড়ি ওটা।
মারসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–বাদ দাও। যাবো নাহয় একদিন। তা আমাকে দেখা শেষ? আমি কী এবার হোস্টেলে যেতে পারি? দেখো থেকে যেতে বলবে না একদম।
মারসাদের দাদী মারসাদের ফুপির দিকে তাকায়। মারসাদের ফুপি আমতা আমতা করে বলেন,
–তোকে কিছু বলার ছিল।
মারসাদ ওর দাদীর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
–বলো।
মারসাদের ফুপি জড়তার সাথে বলেন,
–আমি তোর আর সামিরার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
মারসাদ কথাটা শোনামাত্র ফট করে ছোখ খুলে এক ঝটকায় উঠে বসে অতঃপর কালক্ষেপণ না করে সুধায়,
–কী বললে তুমি? আবার বলো? আমি ভুল শুনলাম নাতো!
মারসাদের ফুপি তার মায়ের দিকে তাকিয়ে লম্বাশ্বাস ফেলে বলেন,
–সামিরার সাথে তোর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। তুই তো জানিস সামিরা…
মারসাদ ওর ফুপিকে হাতের ইশারায় থামিয়ে রেগে কাটকাট কন্ঠে বলে,
–আমার কিছু জানা নেই আর জানার আগ্রহও নেই। তোমার দেবরের মেয়েকে বলে দিবে, সে বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। তার নিজের যদি কোনো আত্মসম্মান থাকতো তবে তোমাকে দিয়ে এই প্রস্তাব পাঠাতে পারতো না। বেহায়াপনা ও নিলজ্জতার একটা সীমা থাকে। ওর সেটা নেই। সে অনেক আগে থেকেই জানে আমি তাকে পছন্দ করিনা। তারপরেও সে এমন এমন কাজ করে যে তোমার লেহাজ না করলে ওকে আমি কয়েকটা চ*ড়-থা*প্প*ড় মিনিটে মিনিটে দিতাম। আর ফুপি তুমিও ভবিষ্যতে তোমার দেবরের মেয়ের পক্ষে একটা শব্দও আমাকে বলবে না।
মারসাদ তার ফুপিকে কথাগুলো বলে এক মিনিটও সেখানে দাঁড়ায় না। বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে আসে। মারসাদের দাদী কয়েকবার ডেকেও সাড়া পেলো না। মারসাদের ফুপি তার মাকে বলেন,
–মা আমি জানতাম মারসাদ রাজী হবে না। সামিরার উগ্রতা আমারও পছন্দ না। নিজের মেয়ে হলে ঠিক সোজা করে ফেলতাম। কিন্তু সামিরার বাবা-মা যেনো মেয়ের এসব দেখেই না। একমাত্র মেয়ে তাদের। আমার দুই ছেলেকে আমি যতোটুকু পারি ঠিক রেখেছি।
মারসাদের দাদী ও ফুপি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এদিকে রাত্রি নিলয়ের মেসেজ দেখে মৌমি ও সুমির সাথে কথা বলে। তারপর সুমি মারসাদকে ফোন করে। মারসাদ তখন হাইওয়ের ধারে পথচারী হাঁটার স্থানে বসার জন্য বেঞ্চ আছে সেখানে একাকি বসে আছে। তার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে বলে নিরবতাতে রাগ কমানোতে প্রচেষ্টারত। দূরপাল্লার কিছু বাস-ট্রাক চলাচল দেখা যায়। সোডিয়াম লাইটের রশ্নিতে অন্ধকার অনেকটা কে*টে গেছে। মারসাদ সুমির ফোন রিসিভ করে আদিরার বিপদের কথা শোনে অস্থির হয়ে আদিরাকে ফোন করে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
আমার পরশু থেকে সেমিস্টার ফাইনাল। পরশুদিন একটা পরীক্ষা দিয়ে নেক্সট পর্ব দিবো। ২১, ২৫, ২৬, ২৭, ২৯ জুন পাঁচটা সাবজেক্টের পরীক্ষা। দোয়া করবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।